ঢাকা ০৩:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫.৩ ব্যত্যয় না করার আহবান Logo শপথ নিয়েছেন হাইকোর্টের নবনিযুক্ত ২৫ বিচারপতি Logo বিমানবন্দরে বিদেশি নারীর লাগেজ থেকে ১৩০ কোটি টাকার মাদক জব্দ Logo ডাকসু নির্বাচনে মোতায়েন করা হবে সেনাবাহিনী Logo জুলাই গণহত্যা:আজ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ৯ম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ Logo তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে রিভিউ শুনানি চলছে Logo কমেতে শুরু করেছে কাঁচামরিচের দাম Logo হাসনাতকে ‘ফকিন্নির বাচ্চা’বলে ছাত্রলীগ-সংশ্লিষ্টতা তুলে যা শেয়ার করলেন রুমিন ফারহানা Logo গাজায় ইসরায়েলি হামলা চলছেই একদিনে নিহত আরও ৮৬ ফিলিস্তিনি Logo জবিতে ক্লাস ও পরীক্ষা মনিটরিং সিস্টেম চালু হবে ১ সেপ্টেম্বর

সংখ্যালঘুদের ওপর বেশিরভাগ হামলাই রাজনৈতিক: পুলিশের অনুসন্ধান

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর যেসব আক্রমণ হয়েছে প্রকৃতপক্ষে সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ছিল বলে উঠে এসেছে পুলিশের এক প্রতিবেদনে।

শনিবার (১১ জানুয়ারী) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে পুলিশ।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের যেকোনও সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতি শূন্য সহিষ্ণু নীতি গ্রহণ করেছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রেস উইং আরও জানায়, এসব হামলার শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে সরকার।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ ও লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে মানবাধিকার সমুন্নত রাখাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে- বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মোট ১ হাজার ৭৬৯টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন, সম্পদ ও উপাসনালয়ের ওপর ২ হাজার ১০টি ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ-হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তৈরি করা অভিযোগের তালিকা সংগ্রহ করেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যারা এই সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু বলে দাবি করা হচ্ছে, পুলিশ সেসব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে। পুলিশ ঐক্য পরিষদের তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকটি স্থান, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে গিয়ে তদন্ত করেছে।

পুলিশের ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগীদের পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার অনুরোধ করা হয়েছে এবং ভুক্তভোগীদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে সাধারণ ডায়েরি, নিয়মিত মামলা এবং অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

১ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে, পুলিশ এখন পর্যন্ত ৬২টি মামলার প্রাথমিক তথ্য নির্ধারণ করে মামলা দায়ের করেছে। তদন্তের ভিত্তিতে অন্তত ৩৫ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হামলাগুলো সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না—বরং সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে ১ হাজার ২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ২০টি ঘটনা সাম্প্রদায়িক ছিল। কমপক্ষে ১৬১টি অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, মোট অভিযোগের ৮২.৮ শতাংশ বা ১,৪৫২টি ঘটনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঘটেছে, যেদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। পরিষদের তথ্যমতে, ৪ আগস্ট ৬৫টি এবং ৬ আগস্ট ৭০টি ঘটনা ঘটেছে। ঐক্য পরিষদের হিসাবের বাইরে পুলিশ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ১৩৪টি অভিযোগ পেয়েছে।

পুলিশ এসব অভিযোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে অন্তত ৫৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৬৫ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে মোট ১১৫টি মামলা দায়ের হয়েছে এবং অন্তত ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রেস উইং জানায়, পুলিশ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করেছে। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ এলে পুলিশ সদরদপ্তরের একটি ফোকাল পয়েন্ট সেই অভিযোগ পর্যালোচনা করছে। প্রতিটি অভিযোগ নিরসনে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫.৩ ব্যত্যয় না করার আহবান

সংখ্যালঘুদের ওপর বেশিরভাগ হামলাই রাজনৈতিক: পুলিশের অনুসন্ধান

আপডেট সময় ০৬:৩৯:০২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর যেসব আক্রমণ হয়েছে প্রকৃতপক্ষে সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত ছিল বলে উঠে এসেছে পুলিশের এক প্রতিবেদনে।

শনিবার (১১ জানুয়ারী) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে পুলিশ।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকার দেশের যেকোনও সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতি শূন্য সহিষ্ণু নীতি গ্রহণ করেছে। অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রেস উইং আরও জানায়, এসব হামলার শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে সরকার।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্ম, বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ ও লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে মানবাধিকার সমুন্নত রাখাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ দাবি করেছে- বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মোট ১ হাজার ৭৬৯টি সাম্প্রদায়িক হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলা, ভাঙচুর এবং লুটপাটের মধ্যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জীবন, সম্পদ ও উপাসনালয়ের ওপর ২ হাজার ১০টি ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

বাংলাদেশ পুলিশ-হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তৈরি করা অভিযোগের তালিকা সংগ্রহ করেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের যারা এই সহিংসতার লক্ষ্যবস্তু বলে দাবি করা হচ্ছে, পুলিশ সেসব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছে। পুলিশ ঐক্য পরিষদের তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেকটি স্থান, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির কাছে গিয়ে তদন্ত করেছে।

পুলিশের ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ভুক্তভোগীদের পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করার অনুরোধ করা হয়েছে এবং ভুক্তভোগীদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। তদন্তের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে সাধারণ ডায়েরি, নিয়মিত মামলা এবং অন্যান্য আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

১ হাজার ৭৬৯টি অভিযোগের মধ্যে, পুলিশ এখন পর্যন্ত ৬২টি মামলার প্রাথমিক তথ্য নির্ধারণ করে মামলা দায়ের করেছে। তদন্তের ভিত্তিতে অন্তত ৩৫ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হামলাগুলো সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল না—বরং সেগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।

পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে ১ হাজার ২৩৪টি ঘটনা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ২০টি ঘটনা সাম্প্রদায়িক ছিল। কমপক্ষে ১৬১টি অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের হিসাব অনুযায়ী, মোট অভিযোগের ৮২.৮ শতাংশ বা ১,৪৫২টি ঘটনা ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ঘটেছে, যেদিন শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। পরিষদের তথ্যমতে, ৪ আগস্ট ৬৫টি এবং ৬ আগস্ট ৭০টি ঘটনা ঘটেছে। ঐক্য পরিষদের হিসাবের বাইরে পুলিশ ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ১৩৪টি অভিযোগ পেয়েছে।

পুলিশ এসব অভিযোগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই অভিযোগগুলোর ভিত্তিতে অন্তত ৫৩টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় মোট ৬৫ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৪ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক হামলার অভিযোগে মোট ১১৫টি মামলা দায়ের হয়েছে এবং অন্তত ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

প্রেস উইং জানায়, পুলিশ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ গ্রহণের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর চালু করেছে। তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কোনো সাম্প্রদায়িক সহিংসতার অভিযোগ এলে পুলিশ সদরদপ্তরের একটি ফোকাল পয়েন্ট সেই অভিযোগ পর্যালোচনা করছে। প্রতিটি অভিযোগ নিরসনে পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে।