আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে ১৮ বছরের ক্রিকেট ক্যারিয়ার ইতি টেনেছেন তামিম ইকবাল। এর মধ্যে দিয়ে সমাপ্ত হলো জাতীয় দলে খেলার অধ্যায়। ২০০৭ সালে হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে অভিষেক হয়েছিল তার। বিদায়ী ম্যাচও ছিল ওয়ানডে। ২০২৩ সালে মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে নিজের সবশেষ ম্যাচটি খেলেছেন দেশসেরা ওপেনার।
তিন সংস্করণ মিলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৮৭ ম্যাচে ৪৪৮ ইনিংসে ১৫১৯২ রান করেছেন তামিম। তাকে ছাড়িয়ে গেছেন শুধু মুশফিকুর রহিম। ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ রিয়াদদের সঙ্গেই প্রায় পুরো সময়টা কেটেছে তার। তামিমের বিদায়ে আবেগ তাড়িত করেছে সতীর্থদেরও।
তামিমের অর্জনকে সম্মান এবং বিদায়কে সাধুবাদ জানিয়ে একটি ছবির ক্যাপশনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মাহমুদউল্লাহ লিখেছেন, ‘তামিম, দীর্ঘ ও চমৎকার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে তোমার অসাধারণ অর্জনগুলোর জন্য অনেক অভিনন্দন। তুমি অনেক কিছু অর্জন করেছ এবং বাংলাদেশের দলের জন্য অসামান্য অবদান রেখেছ।’
মাহমুদউল্লাহ আরও লেখেন, ‘আমার মনে হয়, এটি ছিল আমাদের শেষবারের মতো বাংলাদেশের হয়ে একসঙ্গে ব্যাটিং। তোমার সঙ্গে খেলতে পারা এবং মাঠের ভেতরে ও বাইরে এত স্মৃতি ভাগাভাগি করতে পারা সত্যিই অনেক আনন্দের ছিল। আমি তোমার অবসরজীবনের জন্য শুভকামনা জানাই এবং ভবিষ্যতের সকল কাজে সাফল্য কামনা করি। তোমার রেখে যাওয়া ঐতিহ্য চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
মুশফিক স্মরণ করলেন ব্যান্ডেজ নিয়ে এশিয়া কাপে তামিমের সেই ব্যাটিং। ২০১৮ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আরও সুরাঙ্গা লাকমলের বাউন্সের বল হুক করতে গিয়ে বল লাগে তামিমের আঙুল ও কবজিতে। ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠেন তিনি। মাঠ থেকে ওঠে সোজা ড্রেসিংরুমে চলে যান। পরে সেখান থেকে হাসপাতালে স্ক্যান করার পর জানা যায় চিড় ধরেছে কবজিতে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে ফিরে দলের প্রয়োজনে একহাতে করেছিলেন ব্যাটিং।
সেই স্মৃতি উল্লেখ করে মুশফিক ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তোমার অবসর উপলক্ষে আমি জানাতে চাই, তোমার অর্জনগুলো নিয়ে আমি কতটা গর্বিত, তামিম। দোস্ত, তুমি বাংলাদেশের ক্রিকেটের একজন অসাধারণ প্রতিনিধি ছিলে এবং বিশ্বমানের একজন ব্যাটার। দুবাইয়ের সেই জুটি আমার সারা জীবন মনে থাকবে, বিশেষ করে যখন তুমি চোট পাওয়া আঙুল নিয়েও ব্যাটিং করেছিলে। এটি তোমার দেশের প্রতি নিবেদন ও খেলাটার প্রতি ভালোবাসা স্পষ্ট করে। হ্যাপি রিটায়ারমেন্ট, দোস্ত। তোমাকে মাঠে খুব মিস করব, তবে ক্রিকেটের মাধ্যমে একজন দুর্দান্ত বন্ধুকে পাওয়ার জন্য আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ।’
বেশ কিছু ম্যাচে ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী ছিলেন সৌম্য সরকার। তিনিও একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘নতুন শুরুর জন্য এবং সারা জীবনের অমূল্য স্মৃতিগুলোর জন্য শুভেচ্ছা। অবসর কোনো শেষ নয়, বরং এটি এক নতুন সুন্দর অধ্যায়ের সূচনা। সামনের যাত্রাটা উপভোগ করুন। হ্যাপি রিটায়ারমেন্ট, ভাই। মাঠে তোমার অভাব অনুভব করব।’
ক্যারিয়ারের শুরুতে তামিম ওপেনিং করেছিলেন শাহরিয়ার নাফীসের সঙ্গেও। বাংলাদেশ দলের সাবেক এই ক্রিকেটার লিখেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তোমার অবদান বাংলাদেশ সব সময় মনে রাখবে তামিম ইকবাল।’
তামিমের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ছবি পোস্ট করে তরুণ ক্রিকেটার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ফেসবুকে লেখেন, ‘তামিম ইকবাল, বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক সত্যিকারের কিংবদন্তি, আজ খেলাটিকে বিদায় জানালেন। মাঠের ভেতরে এবং বাইরে তার অবদান চিরকাল আমাদের হৃদয়ে অমর হয়ে থাকবে। তিনি একজন অগ্রদূত, একজন লড়াকু যোদ্ধা এবং আমাদের ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। খেলার বাইরেও, তার সৌজন্যতা আমার ব্যক্তিজীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে, এর জন্য আমি চিরকাল কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ তামিম ভাই, অসংখ্য স্মৃতি আর অনুপ্রেরণার জন্য। জীবনের এই নতুন অধ্যায়ে আপনার জন্য রইল অনেক শুভকামনা।’