ঢাকা ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

পদ্মার চরে বিষ ফাঁদ পেতে নির্বিচারে অতিথি পাখি হত্যার অভিযোগ

পদ্মার চরে বিষ ফাঁদ পেতে নির্বিচারে অতিথি পাখি হত্যার অভিযোগ

প্রতিবছরের মতো এবারও রাজশাহীর পদ্মা নদীর অববাহিকা অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর। এই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। তবে স্থানীয় শিকারিদের তাণ্ডব এই সৌন্দর্যকে বিপন্ন করে তুলছে। বিষটোপের ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করায় নৈসর্গিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নির্বিচার শিকার চলতে থাকায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে।

জানা যায়, পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে অনেক প্রজাতির পাখি নির্দিষ্ট সময়ে শীতপ্রধান দেশ থেকে ছুটে আসে এই দেশে। একটু উষ্ণতা, আশ্রয় ও খাবারের জন্য পাড়ি দেয় হাজার মাইল পথ। অথচ রাজশাহী শহর সংলগ্ন পদ্মার চরসমূহে একশ্রেণির পাখি শিকারি আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব পাখি শিকার করছেন। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালেও চরে তাদের বিষ মাখানো খাবার খেয়ে শতাধিক পাখির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব পাখি নানা দামে কৌশলে বিক্রি করছে শিকারিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী নগরীর তালাইমারি পদ্মার চর থেকে টি-বাধ এলাকা পর্যন্ত অন্তত ৮টি গ্রুপ পাখি শিকার করে। তারা বিশেষ এক জাতের বিষ মাছের সঙ্গে মিশিয়ে রাতের আধাঁরে টোপ হিসেবে নির্দিষ্ট স্থানে দিয়ে আসে। পরে সেই খাবার খেয়ে পাখি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেগুলো তারা ধরে জবাই করে বিক্রি করছেন। আবার, অনেক সময় পাখিগুলো ধরা পড়ার আগেই মারা যাচ্ছে। পরে রাজশাহীর বেশ কিছু বাজারে কৌশলে এসব পাখি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালেও রাজশাহীর টি-বাধ এলাকার চরে মরা ও জবাই করা পাখি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এসময় তারা চখাচখি নামে অন্তত ১০টি পাখি মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। তবে স্থানীয়দের আসতে দেখে পালিয়ে যায় পাখি শিকারীরা।

রাজশাহীর টি-বাধ এলাকার বাসিন্দা নিয়ামত আলী বলেন, ভোর রাতে কিছু মানুষ চরে গিয়ে বিষ দেওয়া মাছ ফেলে আসে। সকালে পাখিরা খেয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকলে তারা সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে জবাই করে বিক্রি করে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি পাখি মেরে নিয়ে যায় শিকারীরা। এছাড়াও তাড়াহুড়ার কারণে ১০ থেকে ১৫টি পড়ে থাকে।

পাখি প্রেমী ও গবেষকদের মতে, আমাদের দেশে যেসব অতিথি পাখি আসে সেগুলো আমাদের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অথচ কিছু অসাধু চক্র ফাঁদ পেতে এদের হত্যা করে। রাজশাহীতেও অতিথি পাখি শিকার হচ্ছে। এতে আগের মত আর পাখি দেখা যায় না। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, পদ্মার চরে শিকারিরা পাখি শিকার করছে বলে জেনেছি। ফলে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

পাঁচে পাঁচ হার শাকিব খানের ঢাকা ক্যাপিটালসের

পদ্মার চরে বিষ ফাঁদ পেতে নির্বিচারে অতিথি পাখি হত্যার অভিযোগ

আপডেট সময় ০৭:৫৪:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২৫

প্রতিবছরের মতো এবারও রাজশাহীর পদ্মা নদীর অববাহিকা অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর। এই মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিনই ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। তবে স্থানীয় শিকারিদের তাণ্ডব এই সৌন্দর্যকে বিপন্ন করে তুলছে। বিষটোপের ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করায় নৈসর্গিক পরিবেশ হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নির্বিচার শিকার চলতে থাকায় পরিযায়ী পাখির সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে।

জানা যায়, পৃথিবীতে প্রায় পাঁচ হাজার প্রজাতির পাখির মধ্যে অনেক প্রজাতির পাখি নির্দিষ্ট সময়ে শীতপ্রধান দেশ থেকে ছুটে আসে এই দেশে। একটু উষ্ণতা, আশ্রয় ও খাবারের জন্য পাড়ি দেয় হাজার মাইল পথ। অথচ রাজশাহী শহর সংলগ্ন পদ্মার চরসমূহে একশ্রেণির পাখি শিকারি আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে এসব পাখি শিকার করছেন। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) সকালেও চরে তাদের বিষ মাখানো খাবার খেয়ে শতাধিক পাখির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এসব পাখি নানা দামে কৌশলে বিক্রি করছে শিকারিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজশাহী নগরীর তালাইমারি পদ্মার চর থেকে টি-বাধ এলাকা পর্যন্ত অন্তত ৮টি গ্রুপ পাখি শিকার করে। তারা বিশেষ এক জাতের বিষ মাছের সঙ্গে মিশিয়ে রাতের আধাঁরে টোপ হিসেবে নির্দিষ্ট স্থানে দিয়ে আসে। পরে সেই খাবার খেয়ে পাখি অসুস্থ হয়ে পড়লে সেগুলো তারা ধরে জবাই করে বিক্রি করছেন। আবার, অনেক সময় পাখিগুলো ধরা পড়ার আগেই মারা যাচ্ছে। পরে রাজশাহীর বেশ কিছু বাজারে কৌশলে এসব পাখি আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, বৃহস্পতিবার সকালেও রাজশাহীর টি-বাধ এলাকার চরে মরা ও জবাই করা পাখি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এসময় তারা চখাচখি নামে অন্তত ১০টি পাখি মৃত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন। তবে স্থানীয়দের আসতে দেখে পালিয়ে যায় পাখি শিকারীরা।

রাজশাহীর টি-বাধ এলাকার বাসিন্দা নিয়ামত আলী বলেন, ভোর রাতে কিছু মানুষ চরে গিয়ে বিষ দেওয়া মাছ ফেলে আসে। সকালে পাখিরা খেয়ে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকলে তারা সেগুলো কুড়িয়ে নিয়ে জবাই করে বিক্রি করে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন অন্তত ৫০ থেকে ৬০টি পাখি মেরে নিয়ে যায় শিকারীরা। এছাড়াও তাড়াহুড়ার কারণে ১০ থেকে ১৫টি পড়ে থাকে।

পাখি প্রেমী ও গবেষকদের মতে, আমাদের দেশে যেসব অতিথি পাখি আসে সেগুলো আমাদের পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অথচ কিছু অসাধু চক্র ফাঁদ পেতে এদের হত্যা করে। রাজশাহীতেও অতিথি পাখি শিকার হচ্ছে। এতে আগের মত আর পাখি দেখা যায় না। ফলে পরিবেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীর বন্যপ্রাণী পরিদর্শক মো. জাহাঙ্গীর কবির বলেন, পদ্মার চরে শিকারিরা পাখি শিকার করছে বলে জেনেছি। ফলে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।