মাদক মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতার ভূরিভোজে অংশ নেওয়া পুলিশ সুপার (এসপি) ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) ছবি তুলতে গিয়ে পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।এতে আহত হয়েছেন ১২ জন।
মঙ্গলবার (০৭ জানুয়ারি) রাতে লালমনিরহাট সদর উপজেলার মোস্তাফি এলাকার একটি কোল্ডস্টোরেজে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও ডিবি ওসি ফিরোজ হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যে তদন্ত কমিটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই কোল্ডস্টোরেজের মালিক চিহ্নিত মাদককারবারি, একাধিক মামলার আসামি আওয়ামী লীগ নেতা আখের উদ্দিন। কোল্ডস্টোরেজে তিনি ভূরিভোজের আয়োজন করলে তাতে অংশ নেন লালমনিরহাটের এসপি তরিকুল ইসলাম, ডিবি ওসি ফিরোজ হোসেন ও সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের। খবর পেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে ছবি তোলেন এবং জানতে চান মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার না করে তার প্রতিষ্ঠানে দাওয়াত খাচ্ছেন কেন? এ সময় ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশ তাদের আটক করে এবং মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
পরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভের সৃষ্টি হয় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ জনতার মাঝে। আটকদের ছাড়াতে তারা লালমনিরহাট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদ জানালে পুলিশের লাঠিচার্জের শিকার হন। লাঠিচার্জে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সাত্তার, যুবদল নেতা হাবিবুর রহমান নয়ন ও ছাত্রদল নেতা বিপ্লব হোসেনসহ ১২ জন আহত হন। তাদের লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পরে সদর থানার ওসি ও ডিবির ওসির প্রত্যাহারের দাবিতে রাত ১১টা থেকে ৫ ঘণ্টাব্যাপী লালমনিরহাট-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী। এতে সড়কে যানবাহন আকটা পরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে সেনাবাহিনী এসে ঘটনার বিচারের আশ্বাস দিলে রাত ৪টায় অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।
গোকুন্ডা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাজু জানায়, ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হওয়া সমস্যা শুনে আমরা সেখানে গেলে পুলিশ আমাদের সঙ্গে উগ্র আচরণ করে এবং লাঠিচার্জ করে। পুলিশের নির্যাতনে কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এমন নির্যাতন পুলিশের মাঝে আওয়ামী লীগের চরিত্র ফুটে তুলেছে বলেও দাবি করেন তিনি।
এ বিষয়ে মন্তব্য নিতে সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও ডিবি পুলিশের ওসি ফিরোজ হোসেনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে এসপি তরিকুল ইসলাম বলেন, মুন্সীগঞ্জ থেকে আগত পূর্বপরিচিতের দাওয়াতে আমরা একটি কোল্ডস্টোরেজে গিয়েছিলাম। হঠাৎ তিন যুবক ছবি তোলায় তাদের আটক করে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে বিএনপির নেতাকর্মী ও লোকজন মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে কয়েকজন আহত হয়েছেন।
এসপি বলেন, আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। ওই ঘটনায় সদর থানার ওসি আব্দুল কাদের ও ডিবি ওসি ফিরোজ হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।