বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বোঝাতে হবে কীভাবে নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্র পাকিস্তানকে দ্বিখণ্ডিত করার অন্তর্নিহিত ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ১৯৭১ সালে ভারত করেছিল। শুধু বাংলাদেশের মানুষের জন্য নয়, নিজের সেভেন সিস্টার্সকে সেভ করার জন্য ভারত মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা যে যার জায়গা থেকে শিক্ষাবিদ, সিভিল সোসাইটির অংশ, রাজনীতিবিদ ও ধর্মীয় যারা আছেন, আমরা একাত্তর ও তার পরবর্তী সময় ভারতের যে ভূমিকা সেসবের মধ্যে কোনগুলো ভারতের এবং কোনগুলো আমাদের স্বার্থে ছিল এগুলো যাতে আমরা আমাদের লেখা, কথা ও চিন্তায় তুলে ধরি।
রোববার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড মাঠে আয়োজিত এক গোল টেবিল বৈঠকে তিনি সব কথা বলেন।
ভারতের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আধিপত্য প্রতিরোধ, চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সমস্যার সমাধান এবং বৈষম্যহীন কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম মহানগর শাখা।
সারজিস আলম বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ ভারতকে বাংলাদেশের মনিবের কাতারে নিয়ে গেছে। নিজেরা স্বেচ্ছায় দাসত্ব বরণ করেছে। শুধু নিজেদের ক্ষমতাকে নিরাপদ করার জন্য। তাদের কাছে দেশ, দেশের সার্বভৌমত্বের চেয়ে ক্ষমতার মূল্য বেশি ছিল। যে কোনো মূল্যে তারা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল, যার একটি প্রমাণ খুনি শেখ হাসিনা তার একটি অডিও রেকর্ডে নিজেই দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেছেন, আমার বিরুদ্ধে যেহেতু ২২৭টি খুনের মামলা করা হয়েছে সেহেতু ২২৭টি খুন করাই যায়। অর্থাৎ এ রক্তপিপাসু খুনির খুনের পিপাসা এখনও শেষ হয়নি।
ভারত একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের যুদ্ধ হিসেবে হাজির করানোর চেষ্টা করছে অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ‘বিগত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ভারত এনে দিয়েছে। গত কিছুদিন আগে ১৬ ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ও রাষ্ট্রপতি ফেসবুক এবং টুইটার পোস্টে আমরা দেখেছি। তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধ হিসেবে প্রেজেন্ট করছে। তারা ভেতরে ভেতরে যেটা বিশ্বাস করতো এতদিন পর এসে সেটা প্রকাশ করছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের ওপরে এ বিশ্বাসটাকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
সারজিস বলেন, ‘বর্তমান যে তরুণ প্রজন্ম, এ প্রজন্মের বিবেক বেঁচে দেওয়া প্রজন্ম নয়। দলান্ধ কোনো প্রজন্ম নয়। আপনি যদি সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকেন, যুক্তি দিয়ে তাকে প্রাসঙ্গিকতা বুঝাতে পারেন এ প্রজন্ম আপনার জন্য রক্ত দেবে, জীবন দেবে। আবার আপনি যদি লুটপাট, চাঁদাবাজি ক্ষমতার অপব্যবহার এসব শুরু করেন এ প্রজন্ম আপনাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের এ নেতা বলেন, ‘১৯৭২ সালের শুরুর দিকে ভারতের সৈন্যরা আমার দেশ লুটপাট করেছিল। আমার দেশের যখন যে ঘরে ঢুকার ইচ্ছে হয়েছে ঢুকেছে, আমার যে মা-বোনকে ছুঁয়ে দেখার ইচ্ছে হয়েছে ছুঁয়ে দেখেছে, সম্ভ্রমহানি করেছে। এ কথাগুলো বাংলাদেশের মানুষের সামনে আসা উচিত। তখনই আমরা এ রেজিমটা ধীরে ধীরে ভাঙতে পারব।
ভারতের উদ্দেশ্যে সারজিস বলেন, ‘যে খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশের মানুষ উৎখাত করে বিতাড়িত করেছে, তাকে আশ্রয় দিয়ে পুরো বাংলাদেশের মানুষের অনুভূতির বিপক্ষে আপনারা অবস্থান করছেন। এটা আপনাদের পররাষ্ট্রনীতির অনেক বড় একটি দুর্বলতা। খুনি শেখ হাসিনার জায়গা ওই বিচারের মঞ্চ। সেখানে পাঠানোর জন্য আপনারা ব্যবস্থা নিন।