বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে বলে সামাজিক মাধ্যমে ‘খবর’ চাউর হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) নকিব আশরাফ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে লেখা হয়, হাসনাতকে সন্ধ্যা ৬ টায় গ্রেফতার করে ঢাকা সেনানিবাসে এনে দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ড. আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে চারজন উপদেষ্টা এবং ঢাবির তিন জামায়াতপন্থী শিক্ষক মিলে সেনাপ্রধানের কাছে হাসানাতের মুক্তির বিষয়ে করজোড়ে অনুরোধ করে মুক্ত করে আনে।
তার এই দাবির পক্ষে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের আদলে ফটোকার্ড তৈরি করেও প্রচার করা হয়। তবে এই তথ্য সম্পূর্ণ ভুয়া বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীন ফ্যাক্টচেকার রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানার টিম তাদের অনুসন্ধানের পর জানায়, সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সেনাবাহিনীর হাতে গতকাল সন্ধ্যায় গ্রেফতার হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি সঠিক নয় বরং সে সময় হাসনাত কুমিল্লার দেবিদ্বারে একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সকাল থেকে কুমিল্লাতেই অবস্থান করছিলেন তিনি।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধান আরও বলছে, ফেসবুকের ওই দাবির কতিপয় পোস্টে একটি ব্লগপোস্টের লিংক সূত্র হিসেবে দেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে sadhinbangladeshnews247 নামের ব্লগস্পটের বিনামূল্যের ডোমেইনের এই সাইটটি একটি ভুঁইফোঁড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়। সাইটে হাসনাতের গ্রেফতারের কথিত দাবির বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল। কথিত এই সংবাদে দাবি করা হয়, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতা ও আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহকে আজ (২ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৭টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অপারেশনের মাধ্যমে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি ব্যক্তিগত বাসায় বৈঠকের সময় তাকে আটক করা হয়।’
কথিত এই সংবাদে হাসনাতের গ্রেফতার হওয়ার খবর শুনে আন্দোলনকারীদের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে বলেও দাবি করা হয়েছে। এমনকি, আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলমের বরাত দিয়ে দাবি করা হয়েছে, ‘এই অন্যায় গ্রেফতার আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। আমরা হাসনাতের মুক্তির দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেব।’
দাবিটির বিষয়ে অনুসন্ধানে কী-ওয়ার্ড সার্চ করে একটি জাতীয় দৈনিকের ওয়েবসাইটে ২ জানুয়ারি রাতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার অর্থাৎ ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলা সদরের একটি রেস্তোরাঁয় জাতীয় নাগরিক কমিটি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এ সময় তিনি বক্তব্যও দেন।
এর আগে সকালে দেবীদ্বার সরকারি রেয়াজ উদ্দিন পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত অবসরপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আবদুস সবুর ও সহকারী শিক্ষক জামাল মোহাম্মদ কবিরকে দেওয়া এক বিদায়ী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে হাসনাত আবদুল্লাহ বক্তব্য দেন।
দেশের মূলধারার একাধিক সংবাদমাধ্যমে একই তথ্য এবং সন্ধ্যার এই অনুষ্ঠানে হাসনাতের উপস্থিতির ছবি দেখতে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। কুমিল্লার স্থানীয় দৈনিক কুমিল্লার কাগজের ইউটিউব চ্যানেলে সন্ধ্যার ওই অনুষ্ঠানে হাসনাতের দেওয়া বক্তব্যের ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে।
তাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাসনাত আবদুল্লাহকে সেনাবাহিনী গ্রেফতার করেছে বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা ভুয়া বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এ বিষয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছে, এমন দাবির সত্যতা নেই।
পরবর্তী অনুসন্ধানে দেশ টিভির ফেসবুক পেজ এবং ওয়েবসাইটে ওই দাবিতে কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ডের অস্তিত্ব মেলেনি। তবে, দেশ টিভির ফেসবুক পেজে সমজাতীয় এবং হাসনাতের একই ছবি ব্যবহার করে গতকাল (২ জানুয়ারি) সকালে একটি পোস্ট করা হয়। এতে বলা হয়, ‘হাসনাত আবদুল্লাহসহ তিনজনের ফেসবুক আইডি নষ্ট।
মূলত এই বাক্য সম্পাদনা করে ‘তিনজনের ফেসবুক আইডি নষ্ট’-এর জায়গায় ‘সেনাবাহিনীর হেফাজতে’ বাক্য প্রতিস্থাপন করে নকল ফটোকার্ড বানিয়ে প্রচার করা হচ্ছে।