কবি নজরুল সরকারি কলেজে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের দাবি এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনের গুরুত্ব সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। একই সঙ্গে তারা সরকারের প্রতি শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি পূরণের আহ্বান জানিয়েছেন।
ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইরফান আহমদ ফাহিমের বক্তব্য:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইরফান আহমদ ফাহিম ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, “ছাত্র সংসদ শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হওয়ার জায়গা নয়, এটি তাদের অধিকারের প্রতীকও। আমরা ছাত্রদল হিসেবে বরাবরই এই দাবির পক্ষে ছিলাম, এখনও আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব।” তিনি আরও জানান, “কেন্দ্রীয় সংসদের দিকনির্দেশনায় আমরা কলেজ প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে ছাত্রদের স্বার্থ রক্ষায় এগিয়ে যাব।”
ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ইরফান বলেন, “আমরা জানি, পদবঞ্চিত অনেক নেতা-কর্মী ক্ষুব্ধ। তবে ছাত্রদল একটি বৃহৎ সংগঠন, এখানে অনেক যোগ্য নেতা রয়েছে, কিন্তু সবার মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়। এর ফলে কিছু নেতাকর্মী তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে, যা আমরা বুঝতে পারি।”আমরা তাদের সাথে আলোচনা করবো এবং তারা আমার ভাই তাদের সাথে বসবো।
অন্য ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে তিনি জানান, “পাঁচ আগস্টের পর থেকে আমরা অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য ও সামাজিক অভিমতে একত্রে কাজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”
এছাড়া, ৭ কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের বিষয়ে ইরফান বলেন, “এটি শিক্ষার্থীদের দাবী। সাত কলেজের ছাত্ররা দীর্ঘদিন ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছে। শিক্ষার্থীদের সাথে আমরা আলাপ আলোচনা করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো। ছাত্রদল সবসময় ন্যায্য সকল আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।”
ছাত্রশিবিরের সভাপতি বায়জিদ মাহমুদের বক্তব্য:
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কবি নজরুল কলেজ শাখার সভাপতি বায়জিদ মাহমুদ জানান, “ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এবং বৈধ দাবী। ছাত্রশিবির এই দাবির পক্ষে কলেজ প্রশাসনের নিকট স্মারকলিপি জমা দিয়েছ। আমরা আশাবাদী যে, এই দাবিটি শীঘ্রই মেনে নেওয়া হবে।”
এছাড়া বায়জিদ মাহমুদ বলেন, “আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রস্তুত আছে, গত ০৯ ডিসেম্বর ছাত্রশিবিরের কয়েকজন নেতাকর্মী কলেজ প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছিলেন এবং তাদের নাম মিডিয়াতে এসেছে। তবে, সাংগঠনিক নির্দেশনা অনুযায়ী আমাদের পূর্ণাঙ্গ কমিটির সবাইকে উপস্থাপন করা হবে।”
৭ কলেজের আন্দোলন সম্পর্কে বায়জিদ মাহমুদ বলেন, “বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির পক্ষে ছিলো। আমরা ৭ কলেজের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি এবং এ আন্দোলনে ভবিষ্যতেও থাকবো।”
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি রাশেদুল ইসলামের বক্তব্য:
ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কবি নজরুল সরকারি কলেজ শাখার সভাপতি রাশেদুল ইসলাম জানান, “সাত কলেজের আন্দোলন শুরু থেকেই আমাদের সংগঠনের অগ্রাধিকারে ছিল। আমরা এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছি এবং ভবিষ্যতেও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একযোগভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাব।”
তিনি আরও বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন সবসময় ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে আসছে এবং কাজ করে যাবে। আমাদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে আমরা আন্দোলনকে আরও শক্তিশালী করতে কাজ করছি।”
এছাড়া, রাশেদুল ইসলাম বলেন, “সরকার যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেয়, তবে আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে। আমাদের নেতৃবৃন্দ শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে এবং প্রয়োজনে মাঠে নামবে।”
সাত কলেজের বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর:
৭ কলেজের আন্দোলন বাংলাদেশে শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক দাবিতে পরিণত হয়েছে। ছাত্ররা দাবি করছে, কলেজগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা এবং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এগুলোকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন। ছাত্রদল, ছাত্রশিবির এবং ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা এই আন্দোলনকে শক্তিশালী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং শিক্ষার্থীদের সকল ন্যায্য দাবি পূরণের জন্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সমাপনী মন্তব্য:
এভাবে, কবি নজরুল সরকারি কলেজের ছাত্র সংগঠনগুলো একত্রে সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর এবং ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। তারা সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ জানিয়েছে, এবং তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখার সংকল্প ব্যক্ত করেছে।