আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর
নয়াদিগন্ত:
বিএনপি-জামায়াতের ঐক্যে ফাটল ধরাতে তৎপর আ’লীগ
বিএনপি-জামায়াতের ঐক্যে ফাটল ধরানোর জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় থাকতে মাঠের প্রধানবিরোধী দল বিএনপিকে পাত্তা না দিয়ে উল্টো দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ শীর্ষ নেতাদের নিয়ে হাসি-ঠাট্টায় মশগুল থাকতো আওয়ামী লীগ। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন স্বৈরসরকারের ভয়াবহ পতনের পর দলটির অবস্থান যখন শূন্যতে নেমে এসেছে ঠিক তখনই বিএনপির সাথে তার রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠ মিত্র ও দুঃসময়ের সহযোগী জামায়াতের মধ্যে কিভাবে ফাটল ধরানো যায় সেই ছক কষছে আওয়ামী লীগ। এজন্য বিদেশে পালিয়ে যাওয়া ও আত্মগোপনে থাকা নেতারা ইনিয়ে বিনিয়ে বিএনপির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রতি অনুসমর্থন জানাচ্ছেন এবং প্রতিবেশী দেশ ভারতের সহায়তায় বিএনপির সাথে সখ্য গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা তদবির করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
বিএনপি-জামায়াতের আদর্শিক অবস্থান দুই মেরুতে হলেও ১৯৯৯ সালে চার দলীয় জোট গড়ে ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়লাভের মাধ্যমে তারা সরকার গঠন করে। এরপর ১/১১ থেকে শুরু করে গত ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিএনপি-জামায়াত ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। ওই সময় থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটে ভাঙন সৃষ্টির একটা প্রচেষ্টা ছিল আওয়ামী লীগের। ওই সময় সফল না হলেও গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের নজিরবিহীন পতনের পর থেকে সেই ভাঙনের ষড়যন্ত্র আবারো শুরু করেছে বলে নির্ভরযোগ্য রাজনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
গত ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা-মন্ত্রী ও এমপিদের সবাই আত্মগোপনে চলে যান। খোদ আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাসহ আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশির ভাগই এখন প্রতিবেশী দেশ ভারতে অবস্থান করছেন। এ দিকে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সরকার গঠনের পর থেকেই বিএনপি নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা নিয়ে চাপ তৈরি করছে। অপর দিকে জামায়াত ইসলামী সংস্কার কাজের জন্য সরকারকে একটি যৌক্তিক সময় দিতে চায়। এ নিয়ে মূলত বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে মন কষাকষি শুরু হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিনের মাথায় এসে বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব কিছুটা বাড়া-কমার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। তাদের মতে, অতীতে বিএনপি-জামায়াত ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলেও অনুকূল পরিবেশ পেয়ে তাদের আদর্শ প্রচারে বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। এই প্রতিযোগিতার মাঝখানে সুযোগ নিতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আদর্শিক দ্বন্দ্বের সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে এ দেশে পুনর্বাসন হওয়ার পথ খুঁজছে। এর মধ্যস্থতাকারী হিসেবে লড়ছে প্রতিবেশী দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা।
প্রথম আলো:
ব্যাংক থেকে লুট করা টাকা এখন খেলাপির খাতায়
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে একাধিক ব্যাংক দখল করে রীতিমতো অর্থ লুট করা হয়। এর বাইরে অন্য সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে নিয়মের বাইরে নামে-বেনামে ঋণের নামে অর্থ বের করে নেওয়া হয়। ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাংক বরং এ কাজে সহায়তা করেছে। অনেক ক্ষেত্রে আড়াল করে রেখেছে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ। এসব ঋণের বিপরীতে নেই পর্যাপ্ত জামানতও।
সরকার বদলের পর এখন ব্যাংকঋণের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসছে। জানা যাচ্ছে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মালিকানা বদল হওয়া ইসলামী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি। আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠ শিল্পগোষ্ঠী বেক্সিমকো, এস আলম, বসুন্ধরা গ্রুপসহ আরও অনেকের ঋণও খেলাপি হয়ে পড়েছে। ফলে গত জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সব মিলিয়ে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা। এতে সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
আলোচ্য সময়ে সরকারি ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ যত বেড়েছে, তার চেয়ে বেশি বেড়েছে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ। যেমন সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৩ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা, আর বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৯ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এত দিন এসব খেলাপি ঋণ লুকানো ছিল, যে ক্ষতি হয়েছে, তা গোপন করা ছিল। ২০১৯ সালে আজব এক নীতিমালা করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষায়ও প্রকৃত চিত্র বের হয়নি। আন্তর্জাতিক নীতি মেনে চললে প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসবে।’
সেলিম আর এফ হোসেন আরও বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দুর্বল ব্যাংক নিরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি ব্যাংকের নিজ উদ্যোগে এমন নিরীক্ষা করা উচিত। এতে প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসবে। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নিতে হবে।’
বাংলাদেশ প্রতিদিন:
নির্বাচনি ট্রেনের যাত্রা শুরু, দ্রুত রোডম্যাপ
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছি। কয়েক দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে যাবে। তার পর থেকে নির্বাচন আয়োজনের সমস্ত দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে। নির্বাচনের ট্রেন যাত্রা করেছে। এটা আর থামবে না। কিন্তু যেতে যেতে আমাদের অনেক কাজ সেরে ফেলতে হবে। এ ট্রেন শেষ স্টেশনে কখন পৌঁছাবে সেটা নির্ভর করবে কত তাড়াতাড়ি আমরা তার জন্য রেললাইনগুলো বসিয়ে দিতে পারি, আর তা হবে রাজনৈতিক দলসমূহের ঐকমত্যের মাধ্যমে।অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন অতিক্রম উপলক্ষে গতকাল জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। ভাষণের শুরুতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফ্যাসিবাদবিরোধী গণ অভ্যুত্থানে নিহত সব শহীদ, আহত ও অংশগ্রহণকারীদের স্মরণ করেন। তিনি প্রতিটি হত্যার বিচার করার অঙ্গীকার করেন। পাশাপাশি গত ১৫ বছরে হওয়া সব অপকর্মের বিচার করার কথাও বলেন। পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরত চাইবেন বলেও তিনি জানান। নির্বাচন ছাড়া আরও গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্য গঠনের জন্য অতিরিক্ত সময় প্রয়োজন হতে পারে জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সংস্কারের জন্য নির্বাচন কয়েক মাস বিলম্বিতও করা যেতে পারে। আমরা মনে করি না যে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিলেই নির্বাচন আয়োজনে আমাদের দায়িত্ব শেষ। রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংস্কার আমাদের এ সরকারের অন্যতম অঙ্গীকার। এজন্য গঠিত কমিশনগুলোর কাছে আপনারা মতামত দিন, সংস্কার পাশ কাটিয়ে যাবেন না। আমরা যেন এমন একটি নির্বাচনব্যবস্থা সৃষ্টি করতে পারি যা যুগ যুগ ধরে অনুসরণ করা হবে। নির্বাচনি সংস্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে খুব দ্রুত আপনারা নির্বাচনের রোডম্যাপ পেয়ে যাবেন।
কালের কন্ঠ:
শিল্প জোন হলমার্ক গ্রুপ এখন ধ্বংসস্তূপ সব যন্ত্রপাতি লুট
সাভারের হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর সড়কের তেঁতুলঝোড়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের পাশ দিয়ে বাঁ দিকের রাস্তায় ১০০ গজ সামনে এগোলেই দেখা যায় হলমার্ক গ্রুপের বিভিন্ন পরিত্যক্ত শিল্প-কারখানা। ১৩৭ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত হলমার্ক গ্রুপের বিশাল এই শিল্পপার্কে ৪৩টি কারখানায় প্রায় ৪০ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। ছিল মসজিদ, বিশ্রামাগার, ফায়ার সার্ভিস, আনসার ক্যাম্পসহ উন্নত জাতের গাভি পালনের শেড। সব মিলিয়ে পুরো এলাকাটি জমজমাট ছিল।
মাঝেমধ্যে শ্রমিকদের জন্য আয়োজন করা হতো পিকনিক ও বিনোদনের, যা এখন কেবলই স্মৃতি।
পুরো এলাকা ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর এলাকার শহীদ রফিক সেতুর বাঁ পাশে বেশ কয়েকটি নির্মীয়মাণ ভবন পরিত্যক্ত অবস্থায় আছে। এর কোনোটির একতলা থেকে চারতলা পর্যন্ত ছাদ ঢালাই হয়েছে। দুটি ভবনের শুধু পিলার পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে।
ভবনগুলোর পশ্চিম পাশ দিয়েই বয়ে গেছে ধলেশ্বরী নদী। সব কটি ভবনেই শেওলা ধরেছে। ভবনগুলোতে মাদকসেবী ও ভবঘুরেদের দেখা যায়।
এখানকার কারখানাগুলোতে কোনো মেশিনপত্র নেই।কোথাও কোথাও মাটির সঙ্গে মিশে গেছে ভবন। অনেক ভবন ভেঙে রিকশা ও গাড়ির গ্যারেজসহ ভাঙ্গারির দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তবে সেখানে দায়িত্বরত নিরাপত্তা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে কোনো কিছু জানা সম্ভব হয়নি। আগে হলমার্ক শিল্পপার্কের মূল ফটক এবং চতুর্দিকে নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকলেও বর্তমানে সব কিছু উন্মুক্ত। ভেতরে গড়ে উঠেছে কয়েকটি দোকানও।
বেশ কয়েকটি ভবনের মধ্যে সাধারণ মানুষ বসবাস করলেও বেশির ভাগ ভবনই ব্যবহার অনুপযোগী। বেহাত হওয়ার পথে হলমার্কের অনেক জমিজমা। বেশির ভাগ কারখানার যন্ত্রপাতি চুরি করে বিক্রি করার পাশাপাশি রাতের আঁধারে প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় কারখানার লোহার শেডগুলো কেটে কেজি দরে বিক্রি করা হয়েছে। প্রথমে বাধা দিতে গিয়ে হলমার্কের একজন নিরাপত্তা কর্মী খুন হলে পরে ভয়ে কেউ আর এ বিষয়ে কথা বলত না।
যুগান্তর:
ট্রাইব্যুনালে শিবিরের সাত কর্মীর অভিযোগ
বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের ৭ নেতাকর্মীকে গুম, নির্যাতন ও পঙ্গু করার ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন শাখায় পৃথকভাবে সাতটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। ভুক্তভোগী নেতাকর্মীদের মধ্যে ছয়জন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত ছিলেন। সাতজনের মধ্যে একজন এখনো গুম থাকায় তার পক্ষে স্বজনরা অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৫৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করেনি প্রসিকিউশন।
ট্রাইব্যুনালে অভিযোগকারীরা হলেন-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিবিরের কর্মী মো. জনি ইসলাম, চট্টগ্রামের বাঁশখালী থানার শিবিরকর্মী মো. আবদুল করিম, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার শিবিরের কর্মী মো. সাইফুল ইসলাম, ঢাকার ভাটারা থানা শাখা শিবিরের তৎকালীন সভাপতি মো. নুরুল আমিন, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার একটি ইউনিয়নের তৎকালীন শিবির সভাপতি মো. কামারুজ্জামান। এ তালিকায় আরও আছেন-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মো. আলমগীর হোসেন ও নোয়াখালীর মো. দেলোয়ার হোসেন।
দৈনিক সংগ্রাম:
আজ ট্রাইব্যুনালে তোলা হচ্ছে হেভিওয়েট ১৪ আসামীকে
স্টাফ রিপোর্টার : জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৪ জন হেভিওয়েট আসামীকে হাজির করা হবে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক ১০ মন্ত্রী, দুই উপদেষ্টা, অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি ও সাবেক এক সচিব রয়েছেন।
তারা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, জুনায়েদ আহমেদ পলক, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, তৌফিক এলাহি, আ. রাজ্জাক, শাহজাহান খান, কামাল আহমেদ মজুমদার, গোলাম দস্তগীর গাজী, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
গতকাল রোববার ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তোলা হবে। বর্তমানে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে এরা সবাই কারাগারে রয়েছেন।
এর আগে ২৭ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল তাদের হাজির করার আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
মানবজমিন:
আহতদের অনেকেই পাননি সরকারি অর্থ, নিঃস্ব পরিবার
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৩৬ দিনের ওই আন্দোলনে নিহত হন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ। গুলিবিদ্ধ ও হামলায় আহত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি। এদের মধ্যে এখনো অনেকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন। আর এই আহত রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হাসপাতালে পরে থাকায় ধার-দেনার পাশাপাশি শেষ সম্বল ভিটের জমি পর্যন্ত বিক্রি করে দিয়েছেন অনেকে। উপরন্তু সরকারি সহায়তা না পাওয়া ও বেসরকারিভাবে সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা- ব্যক্তিদের হাসপাতালে প্রবেশে বাধা দেয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন জুলাই বিপ্লবে আহতদের পরিবার।
গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরস্থ পঙ্গু হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতদের জন্য ডেডিকেটেড তিনতলার বি-ওয়ার্ডের ৪৮টি বেডের প্রায় প্রতিটিতেই রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাদের মধ্যে বি-৩৯ নম্বর বেডে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মো. তানভীর। গত ১৯শে জুলাই রাজধানীর রামপুরা এলাকায় বাম পায়ে গুলিবিদ্ধ হন ১৮ বছর বয়সী এই তরুণ। তানভীরের মা পারভিন বেগম বলেন, আমাদের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে। আমার তিন ছেলে আর এক মেয়ে। তানভীর সবার বড়। ৭/৮ বছর আগে ওর বাবা আমাদের ছেড়ে আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। সেই থেকে ওদের নিয়ে আমার লড়াই চলছে। আমার নিজেরও কিডনির সমস্যা। একটা কিডনি কেটে ফেলতে হয়েছে। অন্য ছেলেমেয়েদের নিয়ে আমি গ্রামে থাকলেও সংসারের হাল ধরতে তানভীরকে ঢাকায় পাঠিয়েছিলাম। আমি সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলের যেই ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়েছিলাম, তিনিই তানভীরকে একটি কাজে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। সবকিছু ভালোই চলছিল। ও ঢাকার রামপুরা এলাকায় মেস বাসায় থাকতো। গত ১৯শে জুলাই ওর বন্ধুরা আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, আমার ছেলের নাকি আন্দোলনে গিয়ে পায়ে গুলি লেগেছে। আমি জমি বিক্রি করে টাকা এনে ওই প্রাইভেট হাসপাতালের বিল দিয়ে তানভীরকে পঙ্গুতে নিয়ে আসি। তিনি বলেন, গত ২৫শে আগস্ট আমার বড় ছেলেকে এই হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতাল থেকে বিনা খরচে রোগীর চিকিৎসা করালেও আমাদের খরচ কেউ দেয় না। প্রতিদিন এই হাসপাতালে আমার এক হাজার টাকা খরচ হচ্ছে।
তানভীরের পাশেই এই ওয়ার্ডের বি-৩৮ নম্বর বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন মো. গোলাম মোস্তফা। দুই মেয়ে ও এক সন্তানের এই জনক গত ১৯শে জুলাই রামপুরা-বনশ্রী এলাকায় ডান হাতে ও ডান পায়ে গুলিবিদ্ধ হন। গোলাম মোস্তফা বলেন, আন্দোলনে গিয়ে গুলি লাগার পর আমাকে প্রথমে এই পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এখান থেকে আবার জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ২৩শে জুলাই আবার এখানে এসে ভর্তি হই। তিনি বলেন, আমি পেশায় একজন রিকশাচালক ছিলাম। আমার ১৬ বছরের একটি মেয়ে, ৭ বছরের একটি ছেলে ও দুগ্ধপোষ্য একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। আমি গুলি খেয়ে হাসপাতালের বিছানায়। এখন পর্যন্ত সরকারি- বেসরকারি কোনো সহায়তা পাইনি। এ পর্যন্ত আমি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ঋণগ্রস্ত হয়েছি। এখন আর কেউ টাকাও ধার দেয় না। একদিন ঘরে চাল থাকে তো দুইদিন থাকে না।
সমকাল:
নির্বাচন নিয়ে কথা বলুন, সংস্কার পাশ কাটাবেন না
তড়িঘড়ি নির্বাচনের চেয়ে টেকসই সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে নির্বাচন কয়েক মাস পেছালেও ধৈর্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যে সংস্কারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা হবে। নির্বাচন কবে– প্রশ্ন সরকারের মনেও সারাক্ষণ রয়েছে। কয়েক দিনের মধ্যেই গঠন হবে নির্বাচন কমিশন। তাদের ওপর বর্তাবে নির্বাচনের দায়িত্ব।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গঠিত সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে গতকাল রোববার জাতির উদ্দেশে ৩৪ মিনিটের ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করেন, আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংকটে পড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
তিনি ঘোষণা করেন, শুধু জুলাই গণহত্যা নয়, বিচার হবে গত সাড়ে ১৫ বছরের সব অপকর্মের। আন্তর্জাতিক আদালতেও হবে গণহত্যার বিচার। ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে।
হাজার প্রাণের বিনিময়ে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনের পতন হয়। ইস্তফা দিয়ে ভারতে পালান শেখ হাসিনা। এর তিন দিন পর গঠিত সরকার রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি কমিশন গঠন করে।
কালবেলা:
বাংলাদেশের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক চায় ভারত
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত একটি স্থিতিশীল, ইতিবাচক ও গঠনমূলক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা। গতকাল রোববার ঢাকায় সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ আয়োজিত বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনে (বঙ্গোপসাগর সংলাপ) ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি এ কথা বলেন।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের গুরুত্ব তুলে ধরে হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভারত দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করে এবং বিশ্বাস করে যে, এ দুই দেশের শান্তি, নিরাপত্তা, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধি পরস্পরের সঙ্গে জড়িত। বহুমুখী সম্পর্কের প্রতিফলন হিসেবে প্রণয় ভার্মা বাণিজ্য, পরিবহন ও জ্বালানি সংযোগ এবং মানুষেমানুষে সম্পৃক্ততার ক্রমাগত অগ্রগতির ওপর জোর দেন।
বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে গুরুত্ব দেন হাইকমিশনার। সম্প্রতি ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে নেপাল থেকে বাংলাদেশে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সঞ্চালনের সূচনা ও পেট্রাপোল-বেনাপোল সমন্বিত চেকপোস্টের অবকাঠামো বিবর্ধনকে দ্বিপক্ষীয় বিনিময়ের ক্ষেত্রে অব্যাহত অগ্রগতির উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রণয় ভার্মা বিমসটেককে আঞ্চলিক একীকরণ পরিকল্পনার ক্ষেত্রে একটি নোঙর হিসেবে বর্ণনা করেন। তিনি শান্তি, নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য যৌথ আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে এবং অংশীদারত্বের মাধ্যমে উভয়পক্ষের সাধারণ জনগণের উপকার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
দেশরুপান্ত:
পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহায়তা দেবে যুক্তরাজ্য
বাংলাদেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় ঢাকাকে তার সরকার পূর্ণ সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী ক্যাথরিন ওয়েস্ট। তিনি আরও বলেন, ‘আপনাকে জানানো গুরুত্বপূর্ণ যে, আপনি আমাদের সমর্থন পেয়েছেন।’
গতকাল রবিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এসব কথা বলেন ব্রিটিশ প্রতিমন্ত্রী। খবর বাসসের
প্রতিমন্ত্রী ক্যাথরিন বলেন, শেখ হাসিনার প্রায় ১৬ বছরের শাসনামলে বিদেশে পাচার হওয়া কয়েক বিলিয়ন ডলার ফেরত আনার জন্য ঢাকার প্রচেষ্টায় যুক্তরাজ্য তার সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে।
ড. ইউনূস তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ, অলিগার্ক ও আমলাদের পাচার করা অর্থ ফেরত আনা অন্তর্বর্তী সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তিনি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে বছরে ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশে পাচার হয়েছে।