দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কয়েকটি ছোটদল আওয়ামী লীগের আশীর্বাদে নিবন্ধন পেয়েছিল। বর্তমানে এসব দলের তেমন কোনো কার্যক্রম চোখে পড়ছে না। অভিযোগ রয়েছে, বিএনপি-জামায়াতকে ঠেকানোর জন্য এ ধরনের রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কোনঠাসা হয়ে পড়ে এ দলগুলো।
নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুসারে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিবন্ধন পায় পাঁচটি রাজনৈতিক দল। যার মধ্যে রয়েছে- তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ), ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ (আপেল), বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-বাংলাদেশ জাসদ (মটরগাড়ি), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম (নোঙ্গর) ও বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি (বিএসপি) (একতারা)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব দল কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা ঢাকা ব্যবহার করলেও বেশির ভাগ ঠিকানা আসলে দলীয় নেতাদের বাসায়। তাদের দলে দু-একজন নেতা ছাড়া কোনো কর্মীও নেই। দুয়েকটি দল কিছু সামাজিক কার্যক্রম চালালেও সাংগঠনিক বিস্তার বা বিকাশ নেই তাদের। আওয়ামী লীগের উপর ভর করে চলা এসব দলের অনেকেই নিবন্ধন হারানোর ভয়ে রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর রহমান বলেন, এই মুহুর্তে আমাদের দলীয় কোনো কার্যক্রম নেই। আপাতত আমরা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছি। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছি, পর্যবেক্ষণ করছি।
নিবন্ধন হারানোর কোনো ঝুঁকি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলীয় কার্যক্রম না থাকলে নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকি অবশ্যই আছে।
আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা বলা কঠিন। এটি সময় বলে দেবে। বর্তমানে নির্বাচনে যাওয়ার ঢিলেঢালা প্রস্তুতি রয়েছে। সব দলেরই এমন অবস্থা হওয়ার কথা।
সারাদেশে দলের কমিটি নিয়ে তৃণমূলের এ নেতা বলেন, আমাদের কমিটি তো সারাদেশেই এক সময় ছিল, বর্তমানে কমিটি কী অবস্থায় আছে সেটা বলা কঠিন। তবে রাজনৈতিক কার্যক্রম যখন আবার শুরু হবে, তখন বলা যাবে আমাদের কমিটির অবস্থা। মেজর (অব.) ডা. শেখ হাবিবুর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১৭ আসনে তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ছিলেন।
দলের কার্যক্রম নিয়ে ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের মহাসচিব মো. রেহান আফজাল রাহবার বলেন, গণসচেতনতার মাধ্যমে দেশ ও জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করার জন্য সারাদেশে দলের পক্ষ থেকে কর্যাক্রম চালানো হচ্ছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন-বিএনএম এর চেয়ারম্যান শাহ্ মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, আমাদের দলের নেতাকর্মীদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। এখন অবস্থা একটু পর্যবেক্ষণ করছি। পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে আমরা নেতাকর্মীদের ডাকবো। কোনো প্রতিকূল অবস্থার যেন সৃষ্টি না হয় সেভাবে যোগাযোগ রক্ষা করছি। আমাদের গুলশানের অফিস ছেড়ে দিয়েছি। অন্য জায়গায় অফিস খুঁজছি।
নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকিতে আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেখানে স্বৈরচার আওয়ামী লীগের নিবন্ধন এখনও বাতিল হয়নি, সেখানে আমাদের নিবন্ধন হারানো ঝুঁকি থাকবে কেন? আমরা এই স্বৈরচারের বিরোদ্ধে আন্দোলন করেছি।
নিবন্ধন হারানোর কোনো ঝুঁকি আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এমন প্রত্যাশা করি না। এরপরেও কেউ যদি মনে করে আমি সঠিক কথা বলতে গিয়ে, সবার অধিকার স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে, সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকতে গিয়ে কারও গায়ে লাগে তাহলে যা পদেক্ষেপ নেয়ার সেটাই নেবে। কিন্ত এটিতো গণতান্ত্রিক পদ্ধতি নয়, আমি যেই কথা বলছি সেটা আপনার ভালো লাগছে না তাই বন্ধ করে দেবেন সেটা হতে পারে না। সবার কথা বলা ও শুনতে পারাটাই গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। আগামী নির্বাচনে ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশ অংশ গ্রহণ করবে বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি (বিএসপি) চেয়ারম্যান শাহাজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ বলেন, আমরা সাংগঠনিকভাবে কাজ করছি। সংগঠনগুছানোর কাজ চলমান রয়েছে। সারাদেশে আমাদের কমিটি নেই, যেসব জায়গায় কমিটি নেই তা নিয়েও কাজ চলছে। আমরা এদেশে স্বাধীনতা ও সহাবস্থানে বিশ্বাসী।