বিশ্বকাপে পাকিস্তানের একেবারে ল্যাজেগোবরে দশা। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে অভিযান শুরু করলেও, পরের চার ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পথে বাবররা। এই পরিস্থিতি একে অপরকে দোষারোপের পালা চলছে। সেই সময়েই পদত্যাগ করে বিতর্ক বাড়ালেন ইনজামাম।
চলতি বিশ্বকাপে বাবর আজমদের খারাপ পারফরম্যান্সের জেরে পাকিস্তান ক্রিকেটের অন্দরের কঙ্কালসার চেহারাটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে। পিসিবি-র পিঠ বাঁচানোর খেলা, প্লেয়ার-নির্বাচকদের উপর দোষ চাপানো- এই সবের মাঝেই বিতর্কের আগুনে ঘি ঢেলে প্রধান নির্বাচকের পদ থেকে সরে দাঁড়ালেন ইনজামাম উল হক। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান জাকা আশরাফের কাছে তিনি নিজের পদত্যাগপত্র পাঠি দিয়েছেন।
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের একেবারে ল্যাজেগোবরে দশা। প্রথম দুই ম্যাচ জিতে অভিযান শুরু করলেও, পরের চার ম্যাচ হেরে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার পথে বাবররা। এই পরিস্থিতি পিসিবি দলে ব্যর্থতার যাবতীয় দায় নিজেদের উপর থেকে সরিয়ে পাক অধিনায়ক এবং প্রধান নির্বাচকের ঘাড়েই চাপিয়েছিলেন।
এক বিবৃতিতে পিসিবি লিখেছিল, ‘২০২৩ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের দল গঠনের জন্য অধিনায়ক বাবর আজম এবং প্রধান নির্বাচক ইনজামাম-উল-হককে পূর্ণ স্বাধীনতা এবং সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। বিশ্বকাপে দলের পারফরম্যান্সের উপর ভিত্তি করে পাকিস্তান ক্রিকেটের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড। এটা সম্ভবত হজম করতে পারেননি প্রাক্তন পাক অধিনায়ক ইনজামাম। তার উপর আবার তাঁর বিরুদ্ধে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। তার পরেই সোমবার ৩০ অক্টোবর নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেন ইনজামাম।
সূত্রের খবর অনুসারে, ইনজামাম এমন একটি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যেটির মালিক ক্রিকেটারদের এক এজেন্ট। ফলে ক্রিকেটারদের নির্বাচনে সেই ব্যক্তির হাত থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। রবিবারই ইনজামামের কীর্তি প্রকাশ্যে এসেছিল। যদিও জিও নিউজ অনুসারে ইনজামাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘লোকেরা গবেষণা ছাড়াই কথা বলে। আমার উপর প্রশ্ন তোলা হয়েছিল, তাই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে আমার পদত্যাগ করাই ভালো।’
জিও নিউজের তরফে জানানো হয়েছে, একটি প্লেয়ার্স ম্যানেজমেন্ট সংস্থা পিসিবি-র সঙ্গে সংযুক্ত রয়েছে, যেখানে ইনজামামও অংশীদার বলে জানা গিয়েছে। এই সংবাদমাধ্যমের দাবি, ‘বেশ কিছু শীর্ষ খেলোয়াড়ের এজেন্ট এই কোম্পানি। যেমন- মহম্মদ রিজওয়ান (যিনি একজন অংশীদারও) এবং বাবর আজম, শাহিন শাহ আফ্রিদি।’
বিশেষত, গত কয়েক দিনে পাক বোর্ডের সঙ্গে ক্রিকেটারদের বার্ষিক চুক্তি ঘিরে বিতর্ক যেখানে তুঙ্গে, সেখানে এই খবর নিয়ে হইহই পড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, প্রধান নির্বাচক এমন একটি কোম্পানির অংশীদার, যাদের সঙ্গে খেলোয়াড়দের চুক্তি রয়েছে। ইনজামামের দাবি, ‘সকলে খোঁজখবর ছাড়াই বিবৃতি দিচ্ছে। আমি পিসিবি-কে তদন্ত করতে বলেছি। প্লেয়ার-এজেন্ট কোম্পানির সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই।’
জানা গিয়েছে, পাক বোর্ডের দফতরে সোমবার ডাকা হয়েছিল প্রাক্তন অধিনায়ককে। সেখানে জাকা আশরফের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়। তার পরেই মুখ্য নির্বাচকের পদ থেকে সরে দাঁড়ান ইনজামাম। পাক বোর্ডের তরফে জানা গিয়েছে, বিশ্বকাপের দল নির্বাচনে সেই সংস্থার কোনও হাত রয়েছে কি না, তা জানতে পাঁচ সদস্যের একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা আগামী দিনে বিষয়টি তদন্ত করে দেখে বোর্ডকে জানাবে। তবে পিসিবি কর্তৃক প্রধান নির্বাচক হিসাবে ইনজামামের চুক্তি বাতিল করা বোর্ডের জন্য উল্লেখযোগ্য ভাবে আর্থিক বোঝা তৈরি হতে পারে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম থেকে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে, বোর্ড ইনজামামকে প্রায় পাকিস্তানী মুদ্রায় প্রায় ১৫ মিলিয়নের মতো বড় অঙ্কে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এটি মাসিক ২.৫ মিলিয়ন টাকা বেতনের সমান।