ঢাকা ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo রুয়েটে টেন্ডার কার্যক্রম নিয়ে অপপ্রচারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিবাদ ও আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা Logo রাজধানীতে যেসব স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসবে Logo দুপুরে মধ্যে যেসব জায়গায় ৮০ কিমি বেগে ঝড় হতে পারে Logo দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা না ছাড়ার ঘোষণা জবি শিক্ষার্থীদের Logo গাজায় ইসরায়েলি বর্বর হামলায় নিহত আরও ২০ ফিলিস্তিনি Logo ‘বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত এ বাড়ি থেকে যাব না’ Logo কুড়িগ্রামে সীমান্তে বজ্রপাতে বিজিবির সদস্যের মৃত্যু Logo উপদেষ্টা মাহফুজকে মানসিক কাউন্সেলিং করার পরামর্শ জবি ছাত্রদল সদস্য সচিবের Logo টিভিতে যে খেলো দেখবেন আজ Logo উপদেষ্টা মাহফুজকে লক্ষ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান, বোতল নিক্ষেপ

সাগরে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা

  • ফখরুল ইসলাম
  • আপডেট সময় ০১:৩৭:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
  • 109

সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ২২ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ হচ্ছে। রোববার (১৩ অক্টোবর) থেকে রোববার (৩ নভেম্বর) পর্যন্ত এ মোট ২২ দিন মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষে ইতোমধ্যে পোস্টারিং, ব্যানার, সচেতনতামূলক সভা ও মাইকিংয়ের কাজ সমাপ্ত করেছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা।

তিনি জানান, অবরোধ চলাকালীন সময় দু-একজন জেলের নিয়ম ভাঙার প্রবণতা থাকে সেক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং করেছি তারা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, কলাপাড়া উপজেলায় নিবন্ধনধারী জেলেদের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০৫ জন। অবরোধ চলাকালীন সময় এই জেলেদের জন্য বরাদ্দ সরকার প্রদত্ত ২৫কেজি চাল ইতোমধ্যে ইউনিয়ন ও পৌরসভায় পৌঁছে গেছে। শীঘ্রই এ চাল যথাযথভাবে জেলেদের মাঝে বণ্টন করা হবে। নিষেধাজ্ঞা পালনে উপজেলার মৎস্য বন্দর আলিপুর-মহিপুরের জেলেরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

জেলেরা জানায়, বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়াতে জেলেরা পড়বেন অস্তিত্ব সংকটে। একদিকে বছরে দুই বার নিষেধাজ্ঞা। অপরদিকে এই বছর ভরা মৌসুমেও সাগরে মাছের আকাল পড়েছে। ঋণের বোঝা এবং ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে জেলেরা রয়েছে চরম বিপাকে। ফলে পেশা বদলের উপক্রম এখানকার জেলেদের। দীর্ঘদিন কর্মহীন সময় পার করবেন তারা। তবে সরকার এই ২২ দিনের অবরোধের জন্য জেলে প্রতি ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেছে তা নামে মাত্র প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।

জেলে সোবহান জানান, ছেলে মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এনজিওর ঋণ নিয়ে মানষিক দুশ্চিন্তায় আমার চোখে ঘুম আসে না। আর মহাজনের দাদনের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব। এখন হতাশা হয়ে গিয়েছি। ২২ দিনের অবরোধে মাত্র ২৫ কেজি চাল যা দিয়ে এই কয়দিন সংসার চলে?

মাঝি রফিক জানান, ট্রলারে কাজ করে গত বছর ৬০ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে, তা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আবার ২২ দিনের অবরোধ আসলে এই ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা বোঝা আরও বেড়ে যাবে।

অনেক জেলে অভিযোগ করে বলেন, অবরোধকালীন প্রতি বছর ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় মাছ ধরলেও কোনো ভূমিকা দেখা যায়না প্রশাসনের। তা না হলে আমাদের জালে চাহিদানুযায়ী মাছ ধরা পড়ত। সরকার দু’বছরের স্থলে বছরে একবারসহ ভারতের সময়সীমার সঙ্গে যেনো নিষেধাজ্ঞা (অবরোধ) দেওয়া হয়।

বাবা-মায়ের দোয়া ফিস পান্না হাওলাদার জানান, পটুয়াখালীর সবচেয়ে বড় দুটি মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর। এখান থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ চালান হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে গত কয়েক বছর ধরে বছরে দুবার নিষেধাজ্ঞা, বৈরী আবহাওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে এই পেশা এখন হুমকির মুখে।

ট্রলারের মালিক কামাল জানান, জমিজমা বিক্রি করে দুইটা ট্রলার তৈরি করেছি। এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি। বর্তমানে এই ট্রলার বিক্রি করে মানুষের ধারদেনা দিয়েছি। এখন মাছের ব্যবসা ছেড়ে নিজের অল্প কিছু জমি আছে তাতে কৃষিকাজ করি।

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

রুয়েটে টেন্ডার কার্যক্রম নিয়ে অপপ্রচারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতিবাদ ও আইনি পদক্ষেপের ঘোষণা

সাগরে মাছ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা

আপডেট সময় ০১:৩৭:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪

সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণ এবং টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য ২২ দিন সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ হচ্ছে। রোববার (১৩ অক্টোবর) থেকে রোববার (৩ নভেম্বর) পর্যন্ত এ মোট ২২ দিন মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার লক্ষে ইতোমধ্যে পোস্টারিং, ব্যানার, সচেতনতামূলক সভা ও মাইকিংয়ের কাজ সমাপ্ত করেছে বলে জানিয়েছেন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা।

তিনি জানান, অবরোধ চলাকালীন সময় দু-একজন জেলের নিয়ম ভাঙার প্রবণতা থাকে সেক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে মিটিং করেছি তারা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।

উপজেলা মৎস্য অফিসের তথ্যমতে, কলাপাড়া উপজেলায় নিবন্ধনধারী জেলেদের সংখ্যা ১৮ হাজার ৩০৫ জন। অবরোধ চলাকালীন সময় এই জেলেদের জন্য বরাদ্দ সরকার প্রদত্ত ২৫কেজি চাল ইতোমধ্যে ইউনিয়ন ও পৌরসভায় পৌঁছে গেছে। শীঘ্রই এ চাল যথাযথভাবে জেলেদের মাঝে বণ্টন করা হবে। নিষেধাজ্ঞা পালনে উপজেলার মৎস্য বন্দর আলিপুর-মহিপুরের জেলেরা প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে।

জেলেরা জানায়, বঙ্গোপসাগর তৎসংলগ্ন সমুদ্রে মাছ শিকারের নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়াতে জেলেরা পড়বেন অস্তিত্ব সংকটে। একদিকে বছরে দুই বার নিষেধাজ্ঞা। অপরদিকে এই বছর ভরা মৌসুমেও সাগরে মাছের আকাল পড়েছে। ঋণের বোঝা এবং ধার দেনায় জর্জরিত হয়ে জেলেরা রয়েছে চরম বিপাকে। ফলে পেশা বদলের উপক্রম এখানকার জেলেদের। দীর্ঘদিন কর্মহীন সময় পার করবেন তারা। তবে সরকার এই ২২ দিনের অবরোধের জন্য জেলে প্রতি ২৫ কেজি করে চাল বরাদ্দ করেছে তা নামে মাত্র প্রহসন ছাড়া কিছুই নয়।

জেলে সোবহান জানান, ছেলে মেয়েদের নিয়ে সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। এনজিওর ঋণ নিয়ে মানষিক দুশ্চিন্তায় আমার চোখে ঘুম আসে না। আর মহাজনের দাদনের টাকা কীভাবে পরিশোধ করব। এখন হতাশা হয়ে গিয়েছি। ২২ দিনের অবরোধে মাত্র ২৫ কেজি চাল যা দিয়ে এই কয়দিন সংসার চলে?

মাঝি রফিক জানান, ট্রলারে কাজ করে গত বছর ৬০ হাজার টাকা ঋণ হয়েছে, তা এখনো পরিশোধ করতে পারিনি। আবার ২২ দিনের অবরোধ আসলে এই ঋণ পরিশোধ তো দূরের কথা বোঝা আরও বেড়ে যাবে।

অনেক জেলে অভিযোগ করে বলেন, অবরোধকালীন প্রতি বছর ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমানায় মাছ ধরলেও কোনো ভূমিকা দেখা যায়না প্রশাসনের। তা না হলে আমাদের জালে চাহিদানুযায়ী মাছ ধরা পড়ত। সরকার দু’বছরের স্থলে বছরে একবারসহ ভারতের সময়সীমার সঙ্গে যেনো নিষেধাজ্ঞা (অবরোধ) দেওয়া হয়।

বাবা-মায়ের দোয়া ফিস পান্না হাওলাদার জানান, পটুয়াখালীর সবচেয়ে বড় দুটি মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহিপুর। এখান থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ চালান হয় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে গত কয়েক বছর ধরে বছরে দুবার নিষেধাজ্ঞা, বৈরী আবহাওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামবৃদ্ধি। সব মিলিয়ে এই পেশা এখন হুমকির মুখে।

ট্রলারের মালিক কামাল জানান, জমিজমা বিক্রি করে দুইটা ট্রলার তৈরি করেছি। এখন পর্যন্ত লাভের মুখ দেখিনি। বর্তমানে এই ট্রলার বিক্রি করে মানুষের ধারদেনা দিয়েছি। এখন মাছের ব্যবসা ছেড়ে নিজের অল্প কিছু জমি আছে তাতে কৃষিকাজ করি।