‘বাস্তবতা থেকে আমি মুক্তি চাই। বাস্তবতার বেড়াজালে আর আটকে থাকতে চাই না। আমার লাশ পোস্টমর্টেম না করার জন্য অনুরোধ রইলো।’ এই সুইসাইড নোট লিখে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) নিজ বাসা মানিকগঞ্জে তিনি আত্নহত্যা করেন। তার বাবা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থী আদনান ফেরদৌস বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়ণরত। তিনি প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে নিয়মিত ক্লাস করেন। সবশেষ তিনি ওই বর্ষের পরীক্ষার ফর্মও পূরণ করেন। তবে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত থাকায় বিভাগে পড়াশুনা ছেড়ে দেশের বাহিরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার কথা ভেবে ৪/৫মাস আগ থেকে তিনি নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন। পরে গতকাল একটি সুইসাইড নোট লিখে নিজ বাড়িতে গলায় রশি দিয়ে তিনি আত্মহনন করেন।
সুইসাইড নোটে আদনান লেখেন, ‘খুব সম্ভবত এই পৃথিবীতে আজকে আমার শেষ দিন। সবকিছু কেমন যেন অসহনীয় হয়ে উঠছে। মনে হয় কোন কিছুর অভিশাপে অভিশপ্ত হয়ে আছি। অনেক চেষ্টা করেও অভিশাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারলাম না। ছোটবেলা থেকেই নিজেকে কখনোই গুছিয়ে উপস্থাপন করতে পারিনি। আজকেও হয়তো গুছিয়ে কিছু লিখতে পারবো না। শুধু দিনশেষে এইটুকুই উপলব্ধি করতে পারলাম মানুষ হিসেবে আমি ব্যর্থ। এই ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছি অতল এক গহ্বরে।’
তিনি আরও লিখেন, আমি নিজে মানুষ হিসেবে কেমন তা জানি না। হয়তো অনেক খারাপ নয়তো ভালো। তবে একটা বিষয় একেবারে শিউর যে আমি আমার আশেপাশের সবার জন্য একটা বোঝা।
সবশেষে এইটাই উপলব্ধি করতে পারলাম, কারও সমস্যার কারণ বা সবার বোঝা হয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে মৃত্যুই অনেক ভালো। জানি না মৃত্যু আমাকে সাদরে গ্রহণ করবে কিনা, তবুও আমি আশাবাদী। এই ছোট্ট জীবনে যদি আমার আচরনে বা ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন আশা করি। সবাই ভালো থাকবেন। ওহ সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কথা “আমার মৃত্যুর জন্য আমি নিজেই দায়ী এই বাস্তবতা আমার দরকার নাই।
এ বিষয়ে আদনানের বাবা ইসমাইল হোসেন বলেন, আদনান দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তার চিকিৎসাও চলছিলো। কিন্তু গতকাল হঠাৎ সে দুনিয়া থেকে চলে গিয়েছে। এসময় তিনি সকলের নিকট সন্তানের জন্য দোয়া কামনা করেন।
আদনানের অকাল মৃত্যুতে বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, আদনান অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হওয়ার পর থেকে তার বাবার অনুরোধে আমি তাকে কাউন্সিলিং করতাম। আজ হঠাৎ তার মৃত্যু সংবাদে আমরা ট্যুরিজম পরিবার খুবই মর্মাহত। তার রুহের মাগফেরাত কামনা করি।