জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ১৭ জন সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন। বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির কনফারেঞ্চ রুমে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে সমন্বয়করা জানান, নয় দফার উপর ভিত্তি করে কোটা সংস্কার আন্দোলন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। গত ৫ আগস্টের গণ অভ্যুত্থানের পর একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায়, যে নয় দফার উপর ভিত্তি করে সাধারণ মানুষ জীবন বাজি রেখে আন্দোলন করেছেন, সে নয় দফার অন্তর্ভূক্ত দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার এবং আহত ও ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপুরণের দাবিগুলোতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক প্রকার নিশ্চুপ রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বর্তমানে একটি সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠনের মত ভূমিকা পালন করছে।
তারা জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের সর্বস্তরের আন্দোলনকারীদের একই ব্যানারে অন্তর্ভূক্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একইসঙ্গে এ ব্যানার এখনো বজায় থাকা আন্দোলনে সর্বপেশার, সর্বস্তরের এবং সর্বদলের মানুষের অংশ গ্রহণের ইতিহাসকে ম্লান করে দিচ্ছে।
তারা আরও জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এ বিষয়গুলোতে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার যত দ্রুত সম্ভব বিলুপ্ত করে দিতে হবে। এর পাশাপাশি ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাবি’র কতিপয় সমন্বয়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয় পর্যায়ে তুলে ধরতে অক্ষমতা, সহযোদ্ধাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ ও গত ১৮ সেপ্টেম্বর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সন্ত্রাসী শামীম মোল্লার গণধোলাই এবং পরবর্তীতে পুলিশী হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনায় ভিডিও ফুটেজের ভিত্তিতে সমন্বয়ক কমিটির একাধিক সমন্বয়কের নাম উঠে আসলেও সে ব্যপারে ব্যানার কোনো ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে আসতে না পারায় আমরা সমন্বয়ক পর্ষদের ১৭ জন পদত্যাগ করছি।
পদত্যাগকৃত সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়করা হলেন, আব্দুর রশিদ জিতু, রুদ্র মুহাম্মদ সফিউল্লাহ, হাসিব জামান, জাহিদুল ইসলাম ইমন, জাহিদুল ইসলাম, ফাহমিদা ফাইজা, রোকাইয়া জান্নাত ঝলক, মিশু খাতুন, রাফিদ হাসান রাজন, হাসানুর রহমান সুমন, আব্দুল হাই স্বপন, নাসিম আল তারিক, ঐন্দ্রিলা মজুমদার, জিয়া উদ্দিন আয়ান, তানজিম আহমেদ, জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি ও সাইদুল ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, মূলত আমাদের পদত্যাগ করার কারণ দুটি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাবি’র কতিপয় সমন্বয়কের বিতর্কিত কার্যক্রম ও ব্যক্তিগত প্রভাব খাটিয়ে নিজ স্বার্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সরকারি দলের মত আচরণ ও গণ অভ্যুত্থানের স্পিরিটবিরোধী কর্মকাণ্ড।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্টের দ্বিতীয় স্বাধীনতা সর্বস্তরের, সর্বপেশার, ও সর্বমতের। কোনো একজন বা দুইজন কিংবা কোনো একটি মত এ আন্দোলনের একক কৃতিত্ত্বধারী নয়। একইসঙ্গে সহস্রাধিক শহিদ ও আহতদের রক্ত ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিসর্জনের মাধ্যমে অর্জিত এ নতুন বাংলাদেশ শুধু একটি গোষ্ঠীর নয় বরং সবার। গণ মানুষের মেহনত, ঘাম ও রক্তের ফসল এ দ্বিতীয় স্বাধীনতাকে সমুন্নত করতে এবং এর স্পিরিটকে লালন করতে যার যার জায়গা থেকে আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা চালিয়ে যাবো।
এর আগে, গত ২ অক্টোবর প্লাটফর্মের কতিপয় ব্যক্তিবর্গ ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করছে অভিযোগ এনে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে পদত্যাগ করেন আরেক সমন্বয়ক হাসিব জামান। এছাড়া অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সমন্বয়ক লাবিব আহসান এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সমন্বয়ক পরিচয় ব্যাবহার করে ব্যাক্তিগত প্রভাব খাটানোর দায়ে নাজমুল ইসলাম লিমনকে সহ-সমন্বয়ক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।