প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুসের উদ্দেশ্যে খোলা চিঠি লিখেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাইয়ুম মাসুদ।
তিনি সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে উল্লেখ করেন, গত মাসে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মোহাম্মদ ইউসুস তরুণদের উদ্দেশ্যে বলেছিল তাকে মাসে একটি করে চিঠি দেওয়ার জন্য। একজন নাগরিক হিসেবে তার কাছে একটি খোলা চিঠি লিখলাম।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে তার দাবিসমূহ হলো:
১. মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আপনার উপদেষ্টা পরিষদে শিক্ষিত অভিজ্ঞ তরুণদেরকে অন্তর্ভুক্ত করুন যাদের রয়েছে এই শহীদদের রক্তের প্রতি ডেডিকেশন এবং দেশপ্রেম। উপদেষ্টাদের নির্দিষ্ট সময় পরপর পারফরমেন্স ইভিলুয়েশনের ব্যবস্থা করুন এবং সেই ইভিলুয়েশনে যারাই নিম্নগামী হবে তাদেরকে বাদ দিয়ে দিন।
২. শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারে আপনি কোন কমিশন গঠনের ঘোষণা দেননি এবং বলতে পারি শিক্ষা সংস্কারের কোনো উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয়নি। শিক্ষা কার্যক্রমে চলছে বেহাল দশা। আপনার প্রশাসন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসক হিসেবে যাদেরকে নিয়োগ দিচ্ছে তাদের ক্রিডেন্সিয়াল যথেষ্ট ভালো কিন্তু তাদের নিয়োগের প্রক্রিয়াটি মোটেই ট্রান্সপারেন্ট নয়। এটি অনেকটাই চলছে আগের মত করে যেখানে রয়েছে লবিং, স্বজনপ্রীতি এবং ব্যক্তিগত পছন্দ। অথচ আমরা চেয়েছিলাম একটি সুন্দর এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে উপযুক্ত ব্যক্তিটি নির্বাচিত হবে এবং পরবর্তী প্রশাসন এই প্রক্রিয়াটিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করবে। একটি নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশিরভাগ উপাচার্য নিয়োগের ঘটনাটিও যথেষ্ট দৃষ্টিকটু এবং বৈষম্য বলেই জনমনে পরিলক্ষিত হচ্ছে।
৩. অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রমে আমরা অনেকটাই খুশি এবং এখানে যথেষ্ট যোগ্য ব্যক্তির অবস্থান আছে বলে মনে হচ্ছে। তাদের সাম্প্রতিক বিভিন্ন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে আমরা আশা করছি এই খাতে শীঘ্রই সুশাসন ফিরে আসবে।
৪. দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান বাড়ানোর কোন উদ্যোগ কিংবা পরিকল্পনা চোখে পড়েনি এ ব্যাপারে আপনাকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। মানুষের পেট যখন ভরা থাকবে তখন মানুষ অপরাজনীতির চিন্তা মাথা থেকে সরিয়ে দেবে।
৫. আপনাদের মত প্রকাশের প্রতি সমর্থনকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। মানুষকে মত প্রকাশ করার সুযোগ করে দিতে হবে। মিডিয়া গুলোকে দায়িত্বশীল ভাবে গড়ে তুলতে হবে। দীর্ঘ অনেক বছর পর বাংলাদেশের মানুষ মন খুলে কথা বলতে পারছে, প্রতিবাদ করতে পারছে, হাসতে পারছে, যে কোন জায়গায় যেতে পারছে, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে পারছে এজন্য আপনাদেরকে আরো বেশি ভূমিকা পালন করতে হবে।
৬. দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সাধারণ মানুষ একেবারেই খুশি নই। আমরা জানি এ ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে কিন্তু আমরা মনে করি আপনাদের এই বিষয়ে অনেক গাফিলতিও রয়েছে। দুর্বলতা গুলো খুঁজে বের করে জনমনে শান্তি নিয়ে আসার জন্য আপনাদেরকে আরো কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। বিগত সময়ের অপরাধীদেরকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থেকে অবশ্যই বের হতে হবে। সর্বোত্তই আইনের শাসন কায়েমের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
আজকে অনেক কিছু বলে ফেললাম আগামি মাসে আবারো আপনার কাছে খোলা চিঠি লিখব। তরুণদের প্রতি আপনার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। আমরা সাধারণ মানুষ আপনাদেরকে সময় দিতে চাই, বিশ্বাস করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি আপনারা একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার জন্য উপযুক্ত কাজগুলো করে যাবেন।