ঢাকা ০৭:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাঙামাটিতে ৪০ বছর আগের ৪৫০ বাঙালি হত্যার বিচার এখনও হয়নি

  • লিমন হোসেন
  • আপডেট সময় ০৫:০৫:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 22

রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার ভূষণছড়া গ্রামে ১৯৮৪ সালের ৩১ মে দুর্গম পাহাড়ি জনপদে নৃশংস এক গণহত্যার ঘটনা ঘটে। এর জন্য দায়ী করা হয় জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সশস্ত্র শাখা শান্তি বাহিনীকে।

গ্রামবাসী ও নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে জানা যায়,পিসিজেএসএস শান্তি বাহিনীর তৎকালীন সামরিক শাখার প্রধান মেজর রাজেশ ওরফে মনি স্বপন দেওয়ানের নেতৃত্বে ১২৫ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপ গভীর রাতে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলে। ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে নারী-শিশুসহ সাড়ে চারশ নিরীহ বাঙালিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ফিরে যায় তারা।

এ ঘটনায় আর আহত হয় প্রায় এক হাজার বাঙালি। ঘুমের মধ্যেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় দেড় শতাধিক পরিবার। স্থানীয় বিভিন্ন মহলের দাবি, ভূষণছড়া গণহত্যার ঘটনা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে বর্বরতম হত্যাকাণ্ড। কিন্তু সরকারি সেন্সরশিপের কারণে সেই সময় দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় এই ঘটনার কোনো রিপোর্ট হয়নি। বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি অশান্ত হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে তৎকালীন সরকার গণহত্যার সংবাদ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

কিন্তু ঘটনার ৪০ বছর ৪ মাস পেড়িয়ে গেলেও ৪৫০ বাঙালি হত্যার বিচার এখনও হয়নি।

গণহত্যায় নিজের ১২ জন আত্মীয়কে হারিয়েছেন এমন দাবি করে আব্দুল হাই নামে এক বৃদ্ধ বলেন, ভূষণছড়া হত্যাকাণ্ডের পর শান্তিবাহিনীর যেসব সন্ত্রাসী ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল সরকার তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে জমি, রেশন, ঘরবাড়ি, চাকরি ও ব্যাংকঋণ দিয়ে নানাভাবে পুনর্বাসিত করেছে। কিন্তু আমরা হতাহত পরিবারগুলো আজ পর্যন্ত কিছু পাইনি। নিহতদের লাশ যে গণকবরে দাফন করা হয়েছিল সেই গণকবরও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তত্কালীন ভিডিপি কমান্ডার আব্দুল হামিদ জানায় , সেদিন ঘটনার পর গ্রামের মানুষ মামলা করতে বরকল থানায় গিয়েছিল। কিন্তু মামলা না নিয়ে জিডি নিয়েছিল। প্রশাসন আমাদের দুই একর করে জমিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মামলা না করতে বলেছিল। কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত কোনো কথা রাখেনি।

আবারও পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে চলছে সংঘাত। বুধবার খাগড়াছড়ির নিউজিল্যান্ড এলাকায় গণপিটুনিতে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি লারমা স্কয়ারের দিকে যাওয়ার সময় পাহাড়ীরা বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে লারমা স্কয়ারে দোকানপাট ও বসত বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে পুড়ে যায় অন্তত ৫০/৬০টি দোকান। নিহত হয় তিনজন।

আজ রাঙামাটিতেও এ সহিংসতার উত্তাপ ছড়িয়েছে পড়েছে। শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ির ও দীঘিনালার সংঘর্ষের প্রতিবাদে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ করে পাহাড়ি ছাত্র-জনতা। পরে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাঙামাটি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

ইসরায়েলে ওয়েস্ট নাইল ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত ৭০

রাঙামাটিতে ৪০ বছর আগের ৪৫০ বাঙালি হত্যার বিচার এখনও হয়নি

আপডেট সময় ০৫:০৫:২৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

রাঙ্গামাটি জেলার বরকল উপজেলার ভূষণছড়া গ্রামে ১৯৮৪ সালের ৩১ মে দুর্গম পাহাড়ি জনপদে নৃশংস এক গণহত্যার ঘটনা ঘটে। এর জন্য দায়ী করা হয় জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সশস্ত্র শাখা শান্তি বাহিনীকে।

গ্রামবাসী ও নিরাপত্তা বাহিনী সূত্রে জানা যায়,পিসিজেএসএস শান্তি বাহিনীর তৎকালীন সামরিক শাখার প্রধান মেজর রাজেশ ওরফে মনি স্বপন দেওয়ানের নেতৃত্বে ১২৫ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপ গভীর রাতে পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলে। ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত মাত্র চার ঘণ্টার মধ্যে নারী-শিশুসহ সাড়ে চারশ নিরীহ বাঙালিকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ফিরে যায় তারা।

এ ঘটনায় আর আহত হয় প্রায় এক হাজার বাঙালি। ঘুমের মধ্যেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় দেড় শতাধিক পরিবার। স্থানীয় বিভিন্ন মহলের দাবি, ভূষণছড়া গণহত্যার ঘটনা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের ইতিহাসে বর্বরতম হত্যাকাণ্ড। কিন্তু সরকারি সেন্সরশিপের কারণে সেই সময় দেশি-বিদেশি মিডিয়ায় এই ঘটনার কোনো রিপোর্ট হয়নি। বিষয়টি ব্যাপকভাবে প্রচারিত হলে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি অশান্ত হতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকে তৎকালীন সরকার গণহত্যার সংবাদ প্রচারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

কিন্তু ঘটনার ৪০ বছর ৪ মাস পেড়িয়ে গেলেও ৪৫০ বাঙালি হত্যার বিচার এখনও হয়নি।

গণহত্যায় নিজের ১২ জন আত্মীয়কে হারিয়েছেন এমন দাবি করে আব্দুল হাই নামে এক বৃদ্ধ বলেন, ভূষণছড়া হত্যাকাণ্ডের পর শান্তিবাহিনীর যেসব সন্ত্রাসী ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল সরকার তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে জমি, রেশন, ঘরবাড়ি, চাকরি ও ব্যাংকঋণ দিয়ে নানাভাবে পুনর্বাসিত করেছে। কিন্তু আমরা হতাহত পরিবারগুলো আজ পর্যন্ত কিছু পাইনি। নিহতদের লাশ যে গণকবরে দাফন করা হয়েছিল সেই গণকবরও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তত্কালীন ভিডিপি কমান্ডার আব্দুল হামিদ জানায় , সেদিন ঘটনার পর গ্রামের মানুষ মামলা করতে বরকল থানায় গিয়েছিল। কিন্তু মামলা না নিয়ে জিডি নিয়েছিল। প্রশাসন আমাদের দুই একর করে জমিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মামলা না করতে বলেছিল। কিন্তু তারা আজ পর্যন্ত কোনো কথা রাখেনি।

আবারও পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে চলছে সংঘাত। বুধবার খাগড়াছড়ির নিউজিল্যান্ড এলাকায় গণপিটুনিতে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি লারমা স্কয়ারের দিকে যাওয়ার সময় পাহাড়ীরা বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে লারমা স্কয়ারে দোকানপাট ও বসত বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে পুড়ে যায় অন্তত ৫০/৬০টি দোকান। নিহত হয় তিনজন।

আজ রাঙামাটিতেও এ সহিংসতার উত্তাপ ছড়িয়েছে পড়েছে। শুক্রবার সকালে খাগড়াছড়ির ও দীঘিনালার সংঘর্ষের প্রতিবাদে রাঙামাটিতে বিক্ষোভ করে পাহাড়ি ছাত্র-জনতা। পরে পাহাড়ি-বাঙালিদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এমন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাঙামাটি পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।