আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর
প্রথম আলো:
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে বছরে ৬৬ কোটি টাকা লোকসান
আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি
● উৎক্ষেপণের আগেই বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ফ্রিকোয়েন্সি সমন্বয় করা দরকার ছিল। তা করা হয়নি।
● এখন পর্যন্ত নিরীক্ষার আওতায় আসা কোনো অর্থবছরেই বিএসসিএল লাভ করতে পারেনি।
স্যাটেলাইটটির পরিচালনাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএসসিএলকে কৌশলে লাভজনক দেখানো হচ্ছে। আয়-ব্যয়ের তথ্য নিয়ে লুকোচুরি করা হতো।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের আয়ের চেয়ে ব্যয় অনেক বেশি। ফলে লোকসানে আছে স্যাটেলাইটটির পরিচালনাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিএল)। যদিও ‘কৌশলে’ তারা নিজেদের লাভজনক দেখাচ্ছে।
বিএসসিএলের সর্বশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন (২০২১-২২) অনুযায়ী, কোম্পানিটির মুনাফা ৮৫ কোটি টাকা। যদিও মুনাফার এই হিসাব করার ক্ষেত্রে স্যাটেলাইটের অবচয় বা ডেপ্রিসিয়েশন ধরা হয়নি। অবচয় ধরা হলে মুনাফার বদলে লোকসান দাঁড়াবে প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরেও প্রায় সমপরিমাণ লোকসান ছিল।
লাভ-লোকসানের হিসাবের ক্ষেত্রে সম্পদের স্থায়িত্বের বিপরীতে বছর বছর অবচয় দেখাতে হয়। ধরা যাক, একটি গাড়ির দাম ১০ লাখ টাকা। এটি ব্যবহার করা যাবে ১০ বছর। তাহলে বছরে গাড়িটির অবচয় দাঁড়াবে ১ লাখ টাকা।
কালের কন্ঠ:
অর্থ লোপাটে বাপ-বেটার মহারেকর্ড
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিসসহ বেশ কয়েকটি দপ্তরে নিয়োগ বাণিজ্যে ঘুষ হিসেবে বস্তায় বস্তায় টাকা নিতেন তিনি। দেশ থেকে পাচার করেছেন হাজার হাজার কোটি টাকা।
আসাদুজ্জামান খান, তাঁর পরিবার এবং সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিরুদ্ধে নামে-বেনামে বিপুল অঙ্কের অর্থ সঞ্চয় ও পাচারের তথ্য মিলছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিতর্কিত ভূমিকা রাখার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে হত্যার অভিযোগসহ বিভিন্ন অভিযোগে বেশ কয়েকটি মামলা করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র বলছে, সাবেক এই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দুর্নীতির সব ধরনের তথ্য অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত ১৫ আগস্ট দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম জানান।
অভিযোগের অনুসন্ধানের জন্য দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশ সদর দপ্তর ও অপরাধ তদন্ত বিভাগও (সিআইডি) তাঁর দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক অনুসন্ধানে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক তথ্য বেরিয়ে আসছে। তিনি মাফিয়াদের গডফাদার ছিলেন।
নয়াদিগন্ত:
সীমান্তে আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণ : যুদ্ধের আশঙ্কা
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মির সশস্ত্র ক্যাডাররা। এখন বুথিডাং-এর মতো শহরসহ বাংলাদেশের সীমান্তঘেঁষা অঞ্চলগুলোতে ছড়িয়ে আছে তারা। বঙ্গোপসাগরের উপকূলরেখার গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো যেমন কিয়াউক ফিউ, সিটওয়েকে হুমকি দিতে দেখা যায় তাদের। আরাকান আর্মির এ ধরনের তৎপরতা ভূকৌশলগতভাবে এই এলাকায় বিশাল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। শ্রীলঙ্কা গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ ধরনের বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন সম্ভবত একটি গেম চেঞ্জার। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হাসিনার অ-হস্তক্ষেপ নীতি পরিত্যাগ করে ঢাকার নতুন শাসন ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়া সময়ের ব্যাপার। পশ্চিমা স্বার্থের অত্যন্ত কৌশলগত ককপিট হিসেবে বঙ্গোপসাগরের উপকূলরেখা বরাবর রাখাইনে প্রোটো-রাষ্ট্র তৈরি করা একটি স্বতন্ত্র সম্ভাবনা।
বাংলাদেশ এরই মধ্যে রাখাইনের তিনটি এলাকাকে নিরাপদ করার জন্য রেডক্রসের আন্তর্জাতিক কমিটির সমর্থনে একটি প্রস্তাব দিয়েছে, যেখানে জনসংখ্যার ৩৫% রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের বাসস্থান সেখানে সহিংসতার কারণে বাস্তুচ্যুত লোকদের অন্যত্র স্থানান্তর করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে (প্রায় এক মিলিয়ন মানুষ) এবং তা হতে পারে জাতিসঙ্ঘের মতো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার তত্ত্বাবধানে। মিয়ানমারের অন্যতম শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি এই ধারণার বিরোধী। রাখাইনের উত্তরে, আরাকান আর্মি ইতোমধ্যে একটি জটিল ত্রিমুখী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে যাতে রোহিঙ্গা মুসলিমরাও জড়িত। আরাকান আর্মির লক্ষ্য বৌদ্ধ জনগোষ্ঠীর জন্য একটি স্বায়ত্তশাসিত ছিটমহল তৈরি করা যা রাখাইনের জনসংখ্যার ৬৫% নিয়ে গঠিত।
আরাকান আর্মি বর্তমানে কেন্দ্র ও উত্তরে ৯টি টাউনশিপ এবং সেই সাথে বাংলাদেশ সীমান্তের অনেক অংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি শিগগরিই আরাকান রাজ্যের রাজধানী সিটওয়ে এবং সামরিক বাহিনীর আঞ্চলিক কমান্ড সদর দফতরকে আরো দক্ষিণে নিয়ে যেতে পারে। রাখাইন জনগণের মধ্যে আরাকান আর্মি অত্যন্ত জনপ্রিয়। মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বৌদ্ধ রাখাইনে একটি নৃশংস যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে যেখানে বহিরাগত শক্তি জড়িত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত।
এক বিবৃতিতে, ব্রাসেলস-ভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ মে মাসে অনুমান করে বলেছে যে, বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরগুলো থেকে, ‘সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজার হাজার যোদ্ধা সীমান্ত পেরিয়ে মিয়ানমারে প্রবেশ করেছে… (এবং) নিয়োগ অভিযান নাটকীয়ভাবে বেড়েছে। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে… বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো এটি বন্ধ করতে খুব কমই কাজ করেছে।’ এটা অবশ্য শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার সময়।
আরাকান কৌশলগত দিক থেকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। তেল এবং গ্যাস পাইপলাইনগুলো কিয়াউক ফিউ থেকে চীনের ইউনান প্রদেশ পর্যন্ত গেছে। কিয়াউক ফিউ চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা, যেখানে গভীর সমুদ্র বন্দর সম্প্রসারণ ও আরো কিছু ক্ষেত্রে বিনিয়োগের প্রস্তাব রয়েছে। সিটওয়েতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ভারতের কালাদান প্রকল্পের সাফল্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যা মিয়ানমার হয়ে মিজোরামের সাথে কলকাতাকে সংযুক্ত করতে চায়।
যুগান্তর:
ব্যাংক ঋণের ২ হাজার কোটি টাকা লোপাট
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দ্বৈত নাগরিক মোহাম্মেদ আদনান ইমাম। নজিরবিহীন দুর্নীতির অভিযোগে চরম বিতর্কিত এনআরবিসি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান তিনি।
‘রেমিট্যান্স যোদ্ধা’ হিসাবে তাকে সিআইপি মর্যাদা দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আর্থিক খাতের লুটেরাদের অন্দর মহলে ‘হোয়াইট কলার ক্রিমিনাল’ হিসাবে পরিচিত এই আদনান মাত্র ৩ বছরেই বিভিন্ন ব্যাংক থেকে দুই হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। কাগুজে কোম্পানি খুলে শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পাচার করেছেন বিদেশে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, শ্বশুরবাড়ির গৃহকর্মীকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাজিয়ে জালজালিয়াতির মাধ্যমে খোলা ‘টিএসএন ট্রেড অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড কোম্পানি’ নামে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ তুলে আত্মসাৎ করেছেন আদনান। আর ১২০ কোটি টাকার সরকারি কাজের বিপরীতে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ তুলে পাচার করেছেন বিদেশে।
অভিযোগ আছে, আদনান ইমামের এই লুটপাটের সহযোগী ছিলেন-এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমাল, ইউসিবি ও পদ্মা ব্যাংকের কয়েকজন প্রভাবশালী। এরা মিলে মূলত ব্যাংক ও শেয়ার বাজারে লুটপাট এবং বিদেশে অর্থ পাচারের শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিল। এই সিন্ডিকেটের হাত ধরে দুবাই ও যুক্তরাজ্যে খোলা বহু কোম্পানির মাধ্যমে বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী, এমপি, আমলা ও পুলিশ কর্মকর্তা বিপুল টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে উল্লিখিত তথ্য পাওয়া গেছে।
মানবজমিনের শেষের পাতার খবর:
আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন অগ্রহণযোগ্য হবে না
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের অনেকেই পালিয়ে গেছেন। নেতৃত্ব দেয়ার মতো কাউকে এখন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ ছাড়া জাতীয় নির্বাচন হলে তা অগ্রহণযোগ্য হবে না। আমি-ডামি, একতরফা ও মধ্যরাতের নির্বাচন করে নির্বাচনব্যবস্থাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে ‘গণতন্ত্র সুরক্ষায় রাষ্ট্র মেরামত এবং জাতীয় নির্বাচন’ শীর্ষক ছায়া সংসদ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
সুজন সম্পাদক বলেন, বর্তমান সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছিল রুটিন সরকার। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পনেরো-ষোলো বছরের জঞ্জাল দূর করতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। তারপরেও জাতীয় নির্বাচন বিলম্বিত হলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা কমতে পারে। গত তিনটি নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, প্রশাসন, রিটার্নিং অফিসার, পোলিং অফিসারসহ নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত প্রায় সবাই অপরাধী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। কমিশন নির্বাচনব্যবস্থাকে বিভিন্ন অজুহাতে দলীয়করণ করে সংবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছে। আদালতের নির্দেশ অমান্য করেছে। অতি-উৎসাহী হয়ে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেছে। তাই নির্বাচনী অপরাধে অভিযুক্ত সবাইকে বিচারের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা উচিত। এ সময় তিনি গত ডামি নির্বাচনে অভিযুক্ত সবার বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য সমতল ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে পারেনি। সে সময় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে সরকারের রূপরেখা বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি কথিত দলকে নিবন্ধন দিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি কীভাবে দিনের ভোট রাতে হয়েছিল। মৃত মানুষ ভোট দিয়েছে। বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিরাও ভোট দিয়েছে। কোথাও কোথাও শতভাগ ভোট পড়েছে। শিশুরাও ভোট দিয়েছে। আমি আর ডামি প্রার্থীর নির্বাচন হয়েছিল। ৮ থেকে ১০ শতাংশ ভোট পড়লেও ভোটের সংখ্যা বাড়িয়ে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ দেখানো হয়েছিল। ছায়া সংসদে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকদের পরাজিত করে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিতার্কিকরা বিজয়ী হন।
কালবেলা:
বিএনপি-জামায়াত এখন দুই মেরুতে
রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে মতের মিল থাকলেও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা ইস্যুতে বড় দুই রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। সম্প্রতি তৃণমূল থেকে শুরু করে দল দুটির শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য ও কথাবার্তায়ও নানা বিষয়ে বৈরীভাব স্পষ্ট হয়েছে। যেটি প্রকাশ্যে আসে গত আগস্টের মাঝামাঝি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নির্বাচন আয়োজনে সময় দেওয়া নিয়ে শীর্ষ নেতাদের বাহাস চলছে। তাদের বক্তব্যেই তা ফুটে উঠছে। মূলত ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে বড় দুই দলই যার যার অবস্থান থেকে তৎপরতা চালাচ্ছে।
ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর গত ৮ আগস্ট রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি উঠেছে সর্বস্তরে। শুরুতে সরকারকে তিন মাসের সময় দেওয়ার কথা বললেও পরে দলটির নেতারা জাতীয় নির্বাচনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘যৌক্তিক’ সময় দেওয়ার কথা জানান। তবে বিএনপির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সঙ্গী জামায়াতে ইসলামী তাড়াহুড়ো না করে টেকসই সংস্কারের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পর্যাপ্ত সময় দিতে চায়। এসব ছাড়াও এখন আরও কিছু ভিন্ন ইস্যু এতেযোগ হয়েছে। অবশ্য দুই দলের মাঝে আর রাজনৈতিক জোট নেই। অনেকেই বলছেন, এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে। দীর্ঘদিন একসঙ্গে আন্দোলন করা দল দুটি এখন যেন মুখোমুখি অবস্থানে। এ ছাড়া পটপরিবর্তনের পর রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা বিভিন্ন বক্তব্য দিচ্ছেন, তা পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের কৌশল নিয়েছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছেড়ে কথা বললেও একেবারে চুপ থাকছেন না দল দুটির নেতারা।
এদিকে ছাত্র-জনতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে দেশের মৌলিক ছয়টি খাতে কাঠামোগত সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত বুধবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে এ পদক্ষেপের কথা জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সংবিধান, নির্বাচন, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কারে কমিশন গঠনের ঘোষণা দেন তিনি।
সমকাল:
অর্থনীতিতে সহযোগিতা ভূরাজনীতিতে সমর্থন
গণঅভ্যুত্থানে হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের প্রতি ওয়াশিংটনের ভূরাজনৈতিক সমর্থনের জানান দিতেই উচ্চ পর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় এসেছে। পাশাপাশি অর্থনৈতিক দিক থেকেও ঢাকার প্রতি উদার হতে চায় ওয়াশিংটন। এরই মধ্যে গতকাল শনিবার মার্কিন অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে দেশটির বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ঢাকায় পা রেখেছেন।
গতকাল ঢাকায় পৌঁছানোর পর মার্কিন প্রতিনিধি দলটি বাংলাদেশি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠক নিয়ে মার্কিন দূতাবাস জানায়, জ্বালানি নিরাপত্তা থেকে শুরু করে ডেটা সেন্টার এবং পরিবহন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। সঠিক অর্থনৈতিক সংস্কার হলে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
দীর্ঘ এক দশকের বেশি সময় ঢাকা ও ওয়াশিংটনের মধ্যে চলছিল সম্পর্কের টানাপোড়েন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ‘বয়সসীমা’ প্রসঙ্গটি সামনে এনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ছেঁটে ফেলা হয়। এর পর তাঁকে অপসারণের মামলাটি উচ্চ আদালতে গড়ালে সেখানেও জিততে পারেননি ড. ইউনূস। তাঁকে যাতে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরানো না হয়, সে সময় শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তবে সে অনুরোধ রাখেননি শেখ হাসিনা। তখন থেকেই দুই দেশের মধ্যে দেখা দেয় শীতল সম্পর্ক।
বিশেষ করে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের আগে থেকেই দু’দেশের বৈরিতা সামনে চলে আসে।