আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর
প্রথম আলো:
ভারী বর্ষণে ডুবল কক্সবাজার, নিহত ৭
রেকর্ড বৃষ্টিপাত
২৫ হাজার পর্যটক আটকা। পাহাড় নিধন, সড়কের নালা-নর্দমা ভরাট জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ।
পর্যটন রাজধানীখ্যাত কক্সবাজারে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টি লেগে থাকে। শহরের বেশ কিছু স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বৃষ্টি থেমে গেলে জমে থাকা পানি নদী কিংবা সাগরে নেমে যায়। দূর হয় জলাবদ্ধতা। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া টানা বর্ষণে পুরো শহর ডুবে যায়। এ বৃষ্টি চলে গতকাল শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত। ৩৬ ঘণ্টার এ বৃষ্টিতে শহরের প্রধান তিনটি সড়ক এবং অলিগলির অন্তত ৪৫টি উপসড়ক হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। হাজারো দোকান–ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-অফিস, ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়।
পাহাড়ধসের ঘটনায় দুই পরিবারের পাঁচ শিশুসহ ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ভূমিধসের ঝুঁকিতে আছে অন্তত এক লাখ মানুষ। এ ছাড়া কলাতলী পয়েন্টে গতকাল বিকেলে মাছ ধরার ট্রলারডুবির ঘটনায় এক জেলের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় লাইফগার্ডের সদস্যদের চেষ্টায় প্রাণে রক্ষা পান ওই ট্রলারে থাকা ২১ জন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, গত ২১ আগস্ট ফেনীতে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি হয়। ওই দিন ২৪ ঘণ্টায় ৩১২ মিলিমিটার বৃষ্টির সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরার রেকর্ড বৃষ্টি যোগ হয়। ফলে ওই এলাকায় তিন যুগের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। বৃহস্পতিবার বেলা তিনটা থেকে গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে, যা ওই অঞ্চলে ১৯৪৮ সালের পর সর্বোচ্চ রেকর্ড। বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছিল শ্রীমঙ্গলে ১৯৮১ সালের ১৮ জুলাই, ৫২০ মিলিমিটার।
১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে কক্সবাজারে ৮৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। পরে আরও ১০-১২টি ঘূর্ণিঝড়ের সময়ও শহরের সৈকত সড়কে পানি ওঠেনি। কিন্তু বৃহস্পতি ও শুক্রবারের বর্ষণ সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। এমন পরিস্থিতির জন্য পরিবেশকর্মী, ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা তিনটি কারণকে দায়ী করছেন।
১. শহরের অভ্যন্তরে ১০-১২টি পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি তৈরির হিড়িক। পাহাড় কাটার মাটি বৃষ্টির পানির সঙ্গে নেমে সড়কের দুই পাশের নালা ভরাট করে ফেলে। কিন্তু পাহাড় নিধন বন্ধ হয় না।
নয়াদিগন্ত:
ড. ইউনূসের মেগাফোন কূটনীতিতে বিস্মিত বিরক্ত ভারত
ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক গণ-আন্দোলন ও বিক্ষোভের মুখে দীর্ঘ ১৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগে বাধ্য হয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর দায়িত্ব নেয় ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। হাসিনা সরকার ভারতের মদদপুষ্ট ও তাদের স্বার্থরক্ষাকারী হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ছিল। ফলে এদেশের সাধারণ মানুষের প্রচণ্ড ভারতবিদ্বেষী মনোভাব তৈরি হয়। অন্তর্বর্তী সরকারও ভারতের সাথে বাংলাদেশের করা বিভিন্ন চুক্তি ক্ষতিয়ে দেখবে বলে ঘোষণা করেছে এবং অমীমাংসিত অনেক বিষয় দ্রুত নিষ্পত্তির তাগাদা দিয়ে আসছে। এতে দৃশ্যত বাংলাদেশ ভারত সম্পর্কে তিক্ততার সৃষ্টি হয়েছে। ভারত একদিকে তাদের দেশে হাসিনার অবস্থান নিয়ে বিরক্তিকর অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকার ভারতকে অবাক করেছে।
বিবিসির আনবারাসান এথিরাজন জানার চেষ্টা করেছেন, এই দুই দেশের সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।
শেখ হাসিনার শাসনামলে দুই দেশের কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বেশ ঘনিষ্ঠ ছিল। তার ক্ষমতায় থাকার সময়টি ভারতের নিরাপত্তার জন্যও সুবিধাজনক ছিল। কারণ শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পরিচালিত কিছু ভারতবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে দমন করেছিলেন এবং সীমান্ত নিয়ে কিছু বিরোধও নিষ্পত্তি করেছিলেন। কিন্তু বর্তমানে ভারতে হাসিনার অবস্থান নেয়া এবং তিনি সেখানে কত দিন থাকবেন সে বিষয়েও কোনো স্পষ্ট ধারণা না থাকায় দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক ভালো রাখার প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে। বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে ওঠে ড. ইউনূসের গত সপ্তাহের এক সাক্ষাৎকারে।
কলের কন্ঠ:
ভারতে ইলিশ পাঠাতে পারব না
আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ইলিশ মাছ পাঠানো হবে না বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, ‘এবারের দুর্গোৎসবে বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ অন্য নাগরিকরা যেন ইলিশ খেতে পারে, সেটি নিশ্চিত করা হবে। ভারতের চেয়ে দেশের জনগণকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।’
গতকাল শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ-১৮-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, ‘আমরাও দুর্গোৎসব পালন করি। আমাদের জনগণও এটি উপভোগ (খেতে) করবে। আমরা ক্ষমা চাচ্ছি, কিন্তু আমরা ভারতে কোনো ইলিশ পাঠাতে পারব না। এটি দামি মাছ।
আমরা দেখেছি, আমাদের দেশের মানুষই ইলিশ খেতে পারেন না। কারণ সব ভারতে পাঠানো হয়। যেগুলো থাকে, সেগুলো অনেক দামে খেতে হয়।’
দুর্গাপূজার সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার হাজার টন ইলিশ ভারতে পাঠাতেন, এই উদ্যোগের সমালোচনা করে মৎস্য উপদেষ্টা বলেন, ‘ভারতে মাছ পাঠানোর কোনো প্রয়োজনীয়তা ছিল না।
ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কথা বলে তাঁর মাছ পাঠানো ঠিক হয়নি। তিনি বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজনীয়তাকে উপেক্ষা করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ইলিশ নিয়ে ভারতের কোনো ইস্যু সৃষ্টি করার দরকার নেই। যদি তারা বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়, তাহলে তাদের তিস্তার পানি বণ্টনের সমস্যার সমাধান করা উচিত।
যুগান্তর:
পিতাপুত্রের টাকা পাচার
পাচারের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানের তালিকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে * বকেয়া রপ্তানি আয় দেশে না আনলে ব্যবসা চালানো কঠিন হবে এমন বার্তা যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে
রপ্তানি ও আমদানির নামে ২৫৫ কোটি ডলার এখন পর্যন্ত দেশে আসেনি বলে প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে। এ অর্থের বড় অংশ একাধিক কোম্পানির বিনিয়োগকারী পিতাপুত্র সম্মিলিতভাবে পাচার করেছেন। দেশে পিতার কোম্পানি থেকে পণ্য রপ্তানি হয়েছে বিদেশে পুত্রের কোম্পানিতে। একইভাবে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির জন্য দেশ থেকে টাকা পাঠানো হয়েছে পুত্রের কোম্পানিতে। কিন্তু টাকা বা পণ্য কোনোটাই দেশে আসেনি। মেয়াদ শেষে অতিরিক্ত সময়ের পরও এসব অর্থ দেশে আনা হয়নি। এসবের সঙ্গে জড়িত ৪৫ জন উদ্যোক্তাকে শনাক্ত করা হয়েছে। রপ্তানি আয় দেশে আনেনি-এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সিআইডিকে দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকা ধরে সিআইডি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
এভাবে দেশ থেকে রপ্তানির নামে প্রায় ৬৫ কোটি ডলার পাচার করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে আসেনি, কিন্তু সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণে আছে-এমন প্রায় ৮২ কোটি ডলারের পণ্য দেশে আনা হয়নি। তামাদি রপ্তানি আয় রয়েছে ১০০ কোটি ডলারের বেশি, যা দেশে আনা হয়নি। এছাড়া বেক্সিমকো আনেনি প্রায় ৮ কোটি ডলার। রপ্তানি পণ্যের এসব বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। এ ধরনের বৈদেশিক মুদ্রা দেশে আনার জন্য জোর তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সিআইডি। তারা ইতোমধ্যে রপ্তানির মূল্য দেশে না আনার দায়ে ৪৫ জন উদ্যোক্তাকে শনাক্ত করেছেন। রপ্তানির মূল্য দেশের আনার জন্য এদের ওপর প্রবল চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। রপ্তানি আয় দেশে না আনলে নতুন এলসি খোলা কঠিন হবে-এমন বার্তাও দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
দেশ থেকে বেক্সিমকো গ্রুপটির যে কোম্পানির পণ্য রপ্তানি করা হতো, এর মালিক সালমান এফ রহমান। অন্যদিকে যুক্তরাজ্যের যে কোম্পানিতে পণ্য রপ্তানি করা হতো, তার মালিক সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমান। অর্থাৎ বাংলাদেশে পিতার মালিকানাধীন কোম্পানিতে উৎপাদিত পণ্য লন্ডনে ছেলের মালিকানাধীন কোম্পানিতে রপ্তানি করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়ায় যেসব পণ্য রপ্তানি হয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেগুলোর মূল্য দেশে আসেনি। এভাবে পাচারের ক্ষেত্রে অর্থের পরিমাণ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত হয়েছে প্রায় আট কোটি (৭ কোটি ৯৮ লাখ) ডলার। গ্রুপটি এভাবে টেক্সটাইল সামগ্রী ও ফার্মা সামগ্রী রপ্তানির মাধ্যমেই বেশির ভাগ অর্থ পাচার করেছে। এভাবে রপ্তানি আয় দেশে না আনার পরিমাণ কয়েক হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে, যা নিয়ে তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে যা শনাক্ত হয়েছে, এর পরিমাণই প্রায় হাজার কোটি টাকা। জনতা ব্যাংকের মাধ্যমেই গ্রুপটি মোটা অঙ্কের অর্থ পাচার করেছে। এছাড়া এবি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক থেকেও অর্থ পাচার করা হয়েছে।
মানবজমিন:
কাজে ফিরতে চান শ্রমিকরা, উস্কানিতে তৃতীয় পক্ষ
বেতন বৃদ্ধি, বকেয়া পরিশোধ, টিফিন, ছুটি বৃদ্ধি, মাতৃকালীন সময়ে ভারী কাজ না করা, কোম্পানির লভ্যাংশের অংশ প্রদানসহ বেশ কিছু দাবি নিয়ে গত দুই সপ্তাহ ধরে সাভার ও আশুলিয়ায় আন্দোলন করছেন পোশাক শ্রমিকরা। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের সব দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসের পরও থামছে না শ্রমিকদের এই আন্দোলন। কারখানা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণ শ্রমিকরা আন্দোলন চান না। তারা তাদের দৈনন্দিন কাজে ফিরতে চান। কিন্তু বহিরাগত একটি পক্ষ দেশের শিল্পখাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য তাদের উস্কানি দিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছে। যার জেরে শুধু আশুলিয়াতেই ৮৬টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে আরও ১৩৩টি পোশাক কারখানায়।
গতকাল সরজমিন আশুলিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের জামগড়া, কাঠগড়া, বেরণ, ছয়তলা, নরসিংহপুর, নিশ্চিন্তপুর, জিরাবো এলাকার শারমিন, হা-মীম, এ.এম ডিজাইন, এনভয় গার্মেন্টস, সেতারা, স্টারলিংকটালিক, মন্ডল নীটওয়্যারস লিমিটেড, সিগমা ফ্যাশনস লিমিটেড, ক্রশওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, জিন্স প্রোডিউসার লিমিটেড, অরুনিমা স্পোর্টসওয়্যার লিমিটেড এবং ডিএমসি এ্যাপারেলস লিমিটেড, এস এম নীটওয়্যারস লিমিটেড, আগামী এ্যাপারেলস লিমিটেড, মানতা এ্যাপারেলস লিমিটেডসহ প্রায় বেশির ভাগ পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে। কিছু কারখানার গেটে ছুটির নোটিশ টানানো রয়েছে। কিছু কারখানার গেটের সামনে আবার বড় সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ‘কারখানা বন্ধ’। কয়েকদিনের চলা আন্দোলনে পুরো এলাকা আতঙ্কের নগরীতে পরিণত হয়েছে। ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই তার ভবনের সামনে বড় বড় অক্ষরে লিখে রেখেছেন ‘এটা পোশাক কারখানা না’। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও এলাকাটিতে টহল জোরদার করেছে।
দৈনিক সংগ্রাম:
নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই——–অধ্যাপক মুজিব
রাজশাহী ব্যুরো : গতকাল শুক্রবার রাজশাহী মহানগর শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের আয়োজনে নগরীতে শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারের অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, পুলিশ চলে শ্রমিকদের টাকায়, জনগণের টাকায়। জনগণের টাকায় প্রতিপালিত পুলিশ জনগণের ওপর গুলী করে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করেছে। এর চাইতে জঘন্য কাজ আর ইতিহাসে হতে পারে না। অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, বর্তমান সরকারকে একটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। এই নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। নির্বাচনের জন্য খুব বেশী সময় নেওয়া উচিত নয়; আবার তাড়াহুড়া করাও উচিত না। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আওয়ামী লীগ তাদের দলীয় লোকদের বসিয়েছে। যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই ওই সব প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ লোক বসাতে হবে। পুলিশে হোক, বিজিবিতে হোক, আরমিতে হোক, যেকোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, যেকোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে যেখানে যাকে বসিয়েছে এই দলীয় লোকগুলো সরিয়ে সেখানে নিরেপেক্ষ লোক বসাতে হবে। এর জন্য যে সময় দরকার সে সময় আমাদের দিতে হবে।
বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন রাজশাহী মহানগরের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সামাদের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর ড: মাওলানা কেরামত আলী ও বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহসভাপতি মজিবুর রহমান ভুঁইয়া, হড়গ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের রাজশাহী মহানগরের সহসভাপতি আফাজ উদ্দিন সরকার, কুতুব উদ্দিন প্রমুখ
বনিক বার্তা:
প্রাথমিক জ্বালানির সরবরাহ ঠিক রাখাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
দেশে প্রতি বছর জ্বালানি আমদানি করতে হয় অন্তত ১৩ বিলিয়ন ডলারের। এর অর্ধেকের কাছাকাছি বা ৬ বিলিয়ন ডলারের জ্বালানির প্রয়োজন পড়ে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে। সামনের দিনগুলোয় এ ব্যয় আরো বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। যদিও এজন্য প্রয়োজনীয় ডলারের সংস্থান করা যাচ্ছে না। প্রয়োজনমতো কয়লা, এলএনজি ও ফার্নেস অয়েল আমদানি করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদন। ঘন ঘন লোডশেডিং হচ্ছে সারা দেশে। শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন খাতেও এর প্রভাব বাড়ছে। গ্যাস সংকটে ব্যাপক মাত্রায় বিঘ্নিত হচ্ছে সার উৎপাদন। জ্বালানি খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল করতে অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন প্রাথমিক জ্বালানির (জ্বালানি তেল, গ্যাস ও কয়লা) সরবরাহ ঠিক রাখা।
দেশে প্রাথমিক জ্বালানির সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় বিদ্যুৎ খাতে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে খাতটির পরিকল্পনাগুলো আবর্তিত হয়েছে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) হিসাব অনুযায়ী, দেশে গ্যাস, কয়লা, ফার্নেস অয়েল, ডিজেল ও এলএনজি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতা এখন ২৫ হাজার ৭৩৮ মেগাওয়াট। এর সিংহভাগই তৈরি হয়েছে গত দেড় দশকে। উৎপাদন সক্ষমতায় জোর দেয়া হলেও উপেক্ষিত থেকেছে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর প্রয়োজনীয় জ্বালানি সংস্থানের বিষয়টি। কিন্তু এসব কেন্দ্র চালানোর জন্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ ও অবকাঠামো সক্ষমতা গড়ে তোলা যায়নি। মহাপরিকল্পনাগুলো সাজানো হয়েছে আমদানীকৃত জ্বালানির ওপর ভিত্তি করে।
কালবেলা:
রাউজানে এমপির ত্রাসে বিভীষিকার দুই যুগ
চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলা। অনেকের কাছেই এটি ভয়ংকর এক জনপদের নাম। দুই যুগ ধরে সেখানে ঘটেছে একের পর এক গা শিউরে ওঠার মতো ভয়ংকর অপরাধ। হাজার হাজার মানুষকে নির্মম অত্যাচার, নিপীড়ন, গুম-খুন, হামলা-মামলা, জমি দখল, ধর্ষণ, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, যৌন নিপীড়নসহ এমন কোনো ঘৃণ্য কাজ নেই, যা হয়নি এই উপজেলায়। শুধু সাধারণ মানুষ নয়, বিএনপি-জামায়াতসহ প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক কর্মী, মুনিরিয়া যুব তাবলিগ কমিটির ভক্ত থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও নির্যাতিত হয়েছেন। হত্যা ও গুমের শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ভাঙচুর করা হয়েছে বাড়িঘর, মসজিদ, মন্দির, মাজার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবুও প্রতিবাদ দূরের কথা, মুখ খুলতেও সাহস পায়নি কেউ। কারণ, সব অপরাধের মূল হোতা ছিলেন ওই এলাকার সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী। দীর্ঘ ২৪ বছর রাউজানে ত্রাসের রাজত্ব চলেছে তার। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর একে একে মুখ খুলতে শুরু করেছে রাউজানের নির্যাতিত মানুষ।
গুম, খুন ও নির্যাতনের অভিযোগে এখন পর্যন্ত রাউজান ও চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন থানায় তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়েছে। চট্টগ্রাম-৬ আসনের সাবেক এই সংসদ সদস্য ভারতে পালাতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার আখাউড়া সীমান্তে বিজিবির কাছে ধরা পড়েছেন।
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ফজলে করিম চৌধুরী ২০১৯ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রকাশিত রাজাকার তালিকায় থাকা একেএম ফজলুল কবির চৌধুরীর সন্তান। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে আওয়ামী লীগের বিরোধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিপি) কর্মী ছিলেন তিনি। ১৯৯৪ সালে এনডিপির শীর্ষ নেতার সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন ফজলে করিম। সেই সূত্র ধরে এনডিপির আলোচিত ক্যাডার এসকান্দরসহ ৪০ থেকে ৪৫ জনকে নিয়ে এনডিপি থেকে পদত্যাগ করেন। পরে নিকটাত্মীয় সাবের হোসেন চৌধুরীর মাধ্যমে রাউজানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। এমনকি ১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলটির মনোনয়নও বাগিয়ে নেন। তবে সেবার বিপুল ভোটে হেরে যান। এরপর ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাচাতো ভাই বিএনপি নেতা গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ৭ হাজার ৩২৯ ভোটে হারিয়ে চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান) আসনের এমপি নির্বাচিত হন ফজলে করিম চৌধুরী। ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে এমপি হন তিনি।
দেশ রুপান্তর:
শতকোটির অ্যাডহক নিয়োগ
ক্ষমতায় আসার এক বছরের মাথায় দলীয় চিকিৎসকদের পুনর্বাসনে নামে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১০ ও ২০১১ সালে দুই ধাপে ৪ হাজার ১৩৭ জন চিকিৎসককে চুক্তি ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়ন্ত্রণে ছিল আওয়ামী লীগের সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং স্বাচিপ-অধ্যুষিত বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)।
এই নিয়োগ দিতে গিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রথম শ্রেণির (নন-ক্যাডার মেডিকেল) কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা, ২০১০ প্রণয়ন করে। ১৯৯৪ সালের নিয়োগ-সংক্রান্ত বিধিমালায় বলা ছিল, ওই বছরের পর আর অ্যাডহক চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া যাবে না।
তখন স্বাচিপের তালিকার চিকিৎসকরাই ‘লিস্টার’ পরীক্ষায় বসেন ও উত্তীর্ণ হন। বিএমএ ও স্বাচিপের চার শীর্ষ নেতা নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করেন। মূলত তাদের তালিকার চিকিৎসকরাই পরীক্ষা দেন, পাস করেন ও চাকরি পান। ওই চারজন খুবই প্রভাবশালী ছিলেন।