যারা দেশে থেকে শেখ হাসিনা সরকারের গুম, খুন, নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাদের ‘আসল বীরশ্রেষ্ঠ’ বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী। প্রায় এক দশক নির্বাসনে থাকার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিগত সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন, নির্বাচনে জালিয়াতি ও কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদেশে যারা সোচ্চার ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম সাংবাদিক মুশফিক। দীর্ঘ ৯ বছর পর বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) দেশে ফেরেন তিনি।
দেশের মাটিতে পা দিয়েই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে সিজদা দিতে দেখা যায়।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবে তার সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সেখানে বন্ধু, সহকর্মী ও ভক্তদের ফুলেল শুভেচ্ছা আর ভালোবাসায় সিক্ত হন তিনি।
অনুষ্ঠানে মুশফিক বলেন, ‘১৫ বছর প্রতিনিয়ত মানুষকে ভয়ের মধ্যে আটকে রাখা হয়েছিল। ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে সেই ভয় দূর হয়েছে। যে পরিবার তাদের সন্তান হারিয়েছে, এই বিপ্লবে তাদের ত্যাগই সবচেয়ে বেশি। তাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।
তবে এখনো ভাবা যাবে না সব কিছু অর্জন হয়ে গেছে। এখনো শেখ হাসিনার দোসররা বিভিন্ন জায়গায় দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সাহসে শেখ হাসিনা বলতে পারছেন, চট করে তিনি চলে আসবেন। তিনি আরো বলেন, খেয়াল রাখতে হবে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মারা যেন আবার কোনো নেতৃত্বে না চলে যায়। পাশের দেশে বসে এখনো ষড়যন্ত্র করে চলেছে।
অনুষ্ঠানে ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মুশফিককে গণতন্ত্রের সত্যিকারের নায়ক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুশফিক আমাদের কাছে, এই দেশের মানুষ ও গণতন্ত্রকামী মানুষের কাছে হিরো হিসেবে থাকবেন। আমরা যখন কথা বলতে পারিনি, তখন মুশফিক আমেরিকা এবং ইউরোপে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এমন সন্তান বাংলার ঘরে ঘরে জন্ম নেওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, ‘মুশফিক ও তার সঙ্গীরা ফ্যাসিবাদী হাসিনার অত্যাচার ও নির্যাতনের কারণে দেশে থাকতে পারেননি। তারা লড়াই করেছেন বাইরে গিয়ে। আর আমরা দেশের ভেতর থেকে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি এবং বিজয় অর্জন করেছি ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। এই বিজয় তখনই সুসংহত হবে, যদি আমরা এটাকে ধরে রাখতে পারি।’
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন সরকারি কর্মকর্তা সমিতির নেতা ড. নেয়ামত উল্যাহ, বাংলাদেশ হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দচন্দ্র প্রমাণিক, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সৈয়দ আবদাল আহমেদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সাবেক সভাপতি এলাহী নেওয়াজ খান সাজু, কবি আব্দুল হাই সিকদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি সভাপতি শহিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক খুরশিদ আলম।