ঢাকা ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মুক্তির পর নড়েচড়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ড

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৩:২৯:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 52

এক সময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঁপাতেন সুইডেন আসলাম। তার ভয়ে ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার লোকজন ছিল তটস্থ। একটি মাত্র মামলার জামিন নেওয়া বাকি থাকলেও ইচ্ছা করে তাও নেননি। রাজনৈতিক পটপরির্বতন হওয়ার পর এ মাসের শুরুর দিকে তিনি জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। প্রায় ২৮ বছর পর কারাগারের বাইরে পা দিলেন সুইডেন আসলাম।

একইভাবে কারাগার থেকে বের হয়ে এসেছেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস। এই দুই সন্ত্রাসীর মতো বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী মুক্ত হওয়ার পর নড়েচড়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ড। উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ডে।

ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুনাখুনির ঘটনা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে। সন্ত্রাসীরা কারাগার থেকে বের হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই নিয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের শীর্ষ কর্তারা কয়েক দফা বৈঠক করে মাঠ পর্যায়ের কর্তাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘যে কোনো অপরাধীর বিরুদ্ধে আমরা সতর্ক আছি। কারাগার থেকে যারা জামিন নিয়ে বের হয়ে গেছে, তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। কেউ বা কোনো মহল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোরভাবে তাদের দমন করা হবে।’

নাম প্রকাশ না করে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ইচ্ছা করে কারাগার থেকে বের হননি। নানা কৌশলে কারাগারে থেকে গেছেন। কিন্তু দেশের পটপরিবর্তনের পরই কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী বের হন। আরও অনেকেই বের হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। যারা বের হয়ে এসেছেন তারা এলাকার আধিপত্য নিতে চেষ্টাও করছেন।’ এ বিষয়ে ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের বিশেষ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, অপরাধীদের মামলা, জামিন, গ্রেপ্তার ও সামগ্রিক কার্যক্রমের ওপর পুলিশের বিশেষ শাখাসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সব সময় নজরদারি করে আসছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে। তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা খুব সহজেই বের হয়ে আসছেন। বের হওয়ার পর তাদের ওপর কোনো নজরদারি নেই বললেই চলে। তারপরও আমরা সতর্ক আছি।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকাণ্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তাদের সঙ্গে মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, কিলার আব্বাস, সুইডেন আসলাম ও ইমনের ভালো যোগাযোগ আছে। তারা আবারও আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছেন। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে আটক ছিলেন হেলাল। তার বিরুদ্ধে অন্তত এক ডজন মামলা রয়েছে। সব মামলায় জামিন হওয়ার পর তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে। এই তালিকায় সুইডেন আসলামের নাম ছিল না। তাদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথমে কারাগার থেকে মুক্ত হন কিলার আব্বাস। এরপর পিচ্চি হেলাল, সুইডেন আসলাম, হাজারীবাগ এলাকার সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছেন। যারা বের হয়েছেন তারাও নতুন মেরূকরণে নেমেছেন। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম ১৯৮৬ সালে অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২০ বছর ধরে কারাগারে আটক ছিলেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি।

মিরপুরের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। যে কোনো সময় তিনিও মুক্ত হবেন। মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৬ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। তারও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। তিনিও যে কোনো সময় কারাগার থেকে বের হয়ে যেতে পারেন। মগবাজার এলাকার সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্য ফ্রিডম সোহেলও কারামুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা বলেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা আছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন মেরূকরণের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। তাদের কর্মকান্ড সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হচ্ছে।

সূত্র- দেশ রুপান্তর

জনপ্রিয় সংবাদ

দিনাজপুরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

শীর্ষ সন্ত্রাসীদের মুক্তির পর নড়েচড়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ড

আপডেট সময় ০৩:২৯:৪৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এক সময় ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ড কাঁপাতেন সুইডেন আসলাম। তার ভয়ে ব্যবসায়ীসহ নানা পেশার লোকজন ছিল তটস্থ। একটি মাত্র মামলার জামিন নেওয়া বাকি থাকলেও ইচ্ছা করে তাও নেননি। রাজনৈতিক পটপরির্বতন হওয়ার পর এ মাসের শুরুর দিকে তিনি জামিন নিয়ে কারাগার থেকে বেরিয়ে আসেন। প্রায় ২৮ বছর পর কারাগারের বাইরে পা দিলেন সুইডেন আসলাম।

একইভাবে কারাগার থেকে বের হয়ে এসেছেন আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস। এই দুই সন্ত্রাসীর মতো বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী মুক্ত হওয়ার পর নড়েচড়ে উঠেছে আন্ডারওয়ার্ল্ড। উত্তপ্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে পুরো আন্ডারওয়ার্ল্ডে।

ইতিমধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে খুনাখুনির ঘটনা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। পাড়া-মহল্লায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা বেড়েছে। সন্ত্রাসীরা কারাগার থেকে বের হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যেও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এই নিয়ে পুলিশ ও র‌্যাবের শীর্ষ কর্তারা কয়েক দফা বৈঠক করে মাঠ পর্যায়ের কর্তাদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।

জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘যে কোনো অপরাধীর বিরুদ্ধে আমরা সতর্ক আছি। কারাগার থেকে যারা জামিন নিয়ে বের হয়ে গেছে, তাদের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। কেউ বা কোনো মহল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করলে কঠোরভাবে তাদের দমন করা হবে।’

নাম প্রকাশ না করে পুলিশ সদর দপ্তরের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, গত ১৬ বছর ধরে আন্ডারওয়ার্ল্ডের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা ইচ্ছা করে কারাগার থেকে বের হননি। নানা কৌশলে কারাগারে থেকে গেছেন। কিন্তু দেশের পটপরিবর্তনের পরই কয়েকজন শীর্ষ সন্ত্রাসী বের হন। আরও অনেকেই বের হওয়ার চেষ্টা করছেন বলে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। যারা বের হয়ে এসেছেন তারা এলাকার আধিপত্য নিতে চেষ্টাও করছেন।’ এ বিষয়ে ইতিমধ্যে পুলিশের সব ইউনিট প্রধানদের বিশেষ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, অপরাধীদের মামলা, জামিন, গ্রেপ্তার ও সামগ্রিক কার্যক্রমের ওপর পুলিশের বিশেষ শাখাসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সব সময় নজরদারি করে আসছিল। কিন্তু সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে। তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা তৈরি হয়। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা খুব সহজেই বের হয়ে আসছেন। বের হওয়ার পর তাদের ওপর কোনো নজরদারি নেই বললেই চলে। তারপরও আমরা সতর্ক আছি।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৩ সালে মালিবাগের সানরাইজ হোটেলে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) দুই সদস্যকে হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান দুবাইয়ে আত্মগোপন করে আছেন। টিপু হত্যাকাণ্ডের পর তিনি আলোচনায় এসেছিলেন। দুবাইয়ে থাকলেও ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডে সবচেয়ে বেশি প্রভাব তার। জিসানের সহযোগী জাফর আহমেদ মানিক ওরফে ফ্রিডম মানিক ভারতে পালিয়ে আছেন। কিন্তু দেশে তার দখলবাজি, টেন্ডার বাণিজ্য ও চাঁদাবাজিতে নিয়ন্ত্রণ এখনো আছে। মোল্লা মাসুদ ও সুব্রত বাইন ভারতে থেকে সক্রিয় আছেন। তাদের সঙ্গে মোহাম্মদপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল, কিলার আব্বাস, সুইডেন আসলাম ও ইমনের ভালো যোগাযোগ আছে। তারা আবারও আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ নিতে চাচ্ছেন। প্রায় ২০ বছর ধরে কারাগারে আটক ছিলেন হেলাল। তার বিরুদ্ধে অন্তত এক ডজন মামলা রয়েছে। সব মামলায় জামিন হওয়ার পর তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর পুলিশ সদর দপ্তর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরিয়ে দিতে পুরস্কার ঘোষণা করে। এই তালিকায় সুইডেন আসলামের নাম ছিল না। তাদের মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রথমে কারাগার থেকে মুক্ত হন কিলার আব্বাস। এরপর পিচ্চি হেলাল, সুইডেন আসলাম, হাজারীবাগ এলাকার সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমন, খন্দকার নাঈম আহমেদ ওরফে টিটন ও খোরশেদ আলম ওরফে রাসু ওরফে ফ্রিডম রাসু।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, দেশের বাইরে থাকা সন্ত্রাসীরা নিজেদের সহযোগীদের মাধ্যমে নতুন করে আধিপত্য বিস্তারের জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন। এমনকি কারাগারে থাকা সন্ত্রাসীরাও সহযোগীদের নানা বিষয়ে বার্তা দিচ্ছেন। যারা বের হয়েছেন তারাও নতুন মেরূকরণে নেমেছেন। যে কারণে সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সব ইউনিট, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলার এসপিদের বিশেষ বার্তা পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসীদের বিষয়ে নতুন করে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কারাগার কর্তৃপক্ষকেও হাজতি ও বন্দি সন্ত্রাসীদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী সুইডেন আসলাম ১৯৮৬ সালে অপরাধ জগতে যুক্ত হন। ওই বছর পূর্ব রাজাবাজারে স্কুলের সামনে কিশোর শাকিলকে গুলি করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। তারপর থেকে তার বিরুদ্ধে একের পর এক হত্যাকাণ্ডসহ নানা অপরাধের তথ্য বের হয়ে আসে। এরই মধ্যে নিজেকে রক্ষা করতে সুইডেন চলে যান। বছর পাঁচেক ওই দেশে থেকে আবার ফিরে আসেন দেশে। তারপর সুইডেন শব্দটি নামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। মিরপুর ও কাফরুল এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার আব্বাস ২০ বছর ধরে কারাগারে আটক ছিলেন। ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিউটন হত্যা মামলায় ফাঁসির আদেশ হলেও উচ্চ আদালতে খালাস পেয়েছেন তিনি।

মিরপুরের আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী হাবিবুর রহমান তাজ ১৩ বছর ধরে কারাগারে আটক আছেন। যে কোনো সময় তিনিও মুক্ত হবেন। মতিঝিলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার দুই কর্মকর্তাকে হত্যা করেন শীর্ষ সন্ত্রাসী ঈদুল। প্রায় ১৬ বছর ধরে কাশিমপুর কারাগারে আটক আছেন তিনি। তারও প্রায় সব মামলার জামিন হয়ে গেছে। তিনিও যে কোনো সময় কারাগার থেকে বের হয়ে যেতে পারেন। মগবাজার এলাকার সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্য ফ্রিডম সোহেলও কারামুক্ত হওয়ার চেষ্টা করছেন।

পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তা বলেন, আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীরা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন। পুরস্কার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর মধ্যে ১৩ জন বিদেশে আত্মগোপন করে আছেন। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি করা আছে। আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন মেরূকরণের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। তাদের কর্মকান্ড সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হচ্ছে।

সূত্র- দেশ রুপান্তর