ঢাকা ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে নোয়াখালীর বন্যা

স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে নোয়াখালীর বন্যা। টানা ১৯ দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী গ্রামের গৃহিণী আয়েশা আক্তার। গতকাল শনিবার সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখেন এখনো উঠানে হাঁটুর ওপরে পানি। বসতঘর থেকেও পানি নামেনি। দুই দিন আগে পানি যা দেখেছেন, আজও তেমন দেখেছেন। পানি যেন কমছেই না। শুধু আয়েশাই নন, নোয়াখালীর বন্যাকবলিত আটটি উপজেলার হাজার হাজার পরিবারের দুশ্চিন্তা এখন একটাই, কবে বন্যার পানি কমবে। কবে তারা বাড়ি ফিরে যাবেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার বন্যাকবলিত আটটি উপজেলায় এখনো প্রায় ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যা গত সপ্তাহে ছিল ২০ লাখ ২২ হাজারের বেশি। বন্যার পানি না কমার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে অনেক মানুষ এখনো বাড়ি ফিরতে পারছেন না। জেলার আটটি উপজেলার ৬৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ৭৯ হাজার ৬৬৯ জন মানুষ রয়েছে। এই সংখ্যা গত সপ্তাহে ছিল ২ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি। গত দুই দিনে বন্যার পানি তেমন একটা কমেনি। সব উপজেলাতেই পানি অনেকটাই স্থির হয়ে আছে।

জেলার শহর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, দত্তেরহাট, সদর উপজেলার কাদিরহানিফ, নেয়াজপুর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, এলাকাগুলোতে বন্যার পানি অনেকটাই স্থির হয়ে আছে। শহরের বিশ্বনাথ এলাকায় ছাগলমারা খাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খালের পানিতে কোনো প্রবাহ নেই। বন্যার পানি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে আশপাশের বাসাবাড়ির আঙিনায়। মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে চলাচল করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, প্রেসক্লাব, জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণ এখনো জলমগ্ন। এতে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সদর উপজেলার চর মটুয়া থেকে আসা সিদ্দিক উল্যাহ বলেন, দুই সপ্তাহ আগেও তিনি আদালতের সামনে পানি দেখে গেছেন। আজও দেখছেন একই পরিস্থিতি।

পানি জমে থাকায় শহরের পৌর বাজারের ভেতরের অনেক দোকান গত ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। একইভাবে শহরের গণপূর্ত ভবন এলাকায় তরকারি ও মাছ, মুরগির বাজারও দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্ধ। এতে ক্রেতা-বিক্রেতারা সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। পানি জমে থাকা ব্যবসায়ীদের আয়রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে।

শহরের সুলতান কলোনি এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, তাদের কলোনির ভেতরের প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এখনো বন্যার পানি। গত কয়েক দিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রথম দিকে পানি কমার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু গত দুই দিন পানি একটুও কমেনি। এ পরিস্থিতিতে চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, খালগুলো দিয়ে পানি না নামার কারণে বর্তমানে বন্যার পানি স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোও বাড়ি ফিরতে পারছে না। আবার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে ক্ষতির পরিমাণও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উত্তরণে তিনি শিগগিরই পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ডেকে পরামর্শ সভা করবেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশ–ওয়েস্ট ইন্ডিজসহ আজ টিভিতে যা দেখবেন

স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে নোয়াখালীর বন্যা

আপডেট সময় ০৪:০৭:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে নোয়াখালীর বন্যা। টানা ১৯ দিন ধরে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার জিরতলী গ্রামের গৃহিণী আয়েশা আক্তার। গতকাল শনিবার সকালে বাড়িতে গিয়ে দেখেন এখনো উঠানে হাঁটুর ওপরে পানি। বসতঘর থেকেও পানি নামেনি। দুই দিন আগে পানি যা দেখেছেন, আজও তেমন দেখেছেন। পানি যেন কমছেই না। শুধু আয়েশাই নন, নোয়াখালীর বন্যাকবলিত আটটি উপজেলার হাজার হাজার পরিবারের দুশ্চিন্তা এখন একটাই, কবে বন্যার পানি কমবে। কবে তারা বাড়ি ফিরে যাবেন।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার বন্যাকবলিত আটটি উপজেলায় এখনো প্রায় ১৩ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। যা গত সপ্তাহে ছিল ২০ লাখ ২২ হাজারের বেশি। বন্যার পানি না কমার কারণে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো থেকে অনেক মানুষ এখনো বাড়ি ফিরতে পারছেন না। জেলার আটটি উপজেলার ৬৪৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখনো ৭৯ হাজার ৬৬৯ জন মানুষ রয়েছে। এই সংখ্যা গত সপ্তাহে ছিল ২ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি। গত দুই দিনে বন্যার পানি তেমন একটা কমেনি। সব উপজেলাতেই পানি অনেকটাই স্থির হয়ে আছে।

জেলার শহর মাইজদীর লক্ষ্মীনারায়ণপুর, দত্তেরহাট, সদর উপজেলার কাদিরহানিফ, নেয়াজপুর এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, এলাকাগুলোতে বন্যার পানি অনেকটাই স্থির হয়ে আছে। শহরের বিশ্বনাথ এলাকায় ছাগলমারা খাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খালের পানিতে কোনো প্রবাহ নেই। বন্যার পানি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করেছে আশপাশের বাসাবাড়ির আঙিনায়। মানুষ চরম ভোগান্তির মধ্য দিয়ে চলাচল করছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, প্রেসক্লাব, জেলা জজ আদালত প্রাঙ্গণ এখনো জলমগ্ন। এতে আদালতে আসা বিচারপ্রার্থীরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সদর উপজেলার চর মটুয়া থেকে আসা সিদ্দিক উল্যাহ বলেন, দুই সপ্তাহ আগেও তিনি আদালতের সামনে পানি দেখে গেছেন। আজও দেখছেন একই পরিস্থিতি।

পানি জমে থাকায় শহরের পৌর বাজারের ভেতরের অনেক দোকান গত ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। একইভাবে শহরের গণপূর্ত ভবন এলাকায় তরকারি ও মাছ, মুরগির বাজারও দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে বন্ধ। এতে ক্রেতা-বিক্রেতারা সীমাহীন ভোগান্তির মধ্যে রয়েছেন। পানি জমে থাকা ব্যবসায়ীদের আয়রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে।

শহরের সুলতান কলোনি এলাকার বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, তাদের কলোনির ভেতরের প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় এখনো বন্যার পানি। গত কয়েক দিন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় প্রথম দিকে পানি কমার প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু গত দুই দিন পানি একটুও কমেনি। এ পরিস্থিতিতে চলাচলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, খালগুলো দিয়ে পানি না নামার কারণে বর্তমানে বন্যার পানি স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নেওয়া পরিবারগুলোও বাড়ি ফিরতে পারছে না। আবার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার কারণে ক্ষতির পরিমাণও বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির উত্তরণে তিনি শিগগিরই পানি উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ বিভাগীয় কর্মকর্তাদের ডেকে পরামর্শ সভা করবেন।