ঢাকা ০৯:১৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় নোসক শিবিরের সহযোগিতা Logo এআই হ্যাকাথন ২০২৫: রুয়েটের ‘বুরাক’ টিমের চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন Logo আমিরাতে আইপিএলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, পিএসএল পেল অগ্রাধিকার Logo আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ Logo রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে জবি শিক্ষার্থী ৩ দিনের রিমান্ডে Logo আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে জয়পুরহাটে বিক্ষোভ Logo ভারতের ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান Logo মোটরসাইকেল জব্দ করায় থানায় হামলা, ছাত্রদলের ৯ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Logo নোবিপ্রবিতে ভর্তিচ্ছু সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ও খাবারের ব্যবস্থা করেছে ছাত্রদল Logo আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে মৌলভীবাজারে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ

ফেরত আনা না পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে চুপ থাকতে হবে: ড. ইউনূস

  • নিজস্ব সংবাদ :
  • আপডেট সময় ০৩:১৮:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • 106

বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়াকে “অবান্ধব” বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেছেন ড. ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে পিটিআই।

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ অনুরোধ না করা পর্যন্ত ভারত যদি হাসিনাকে নিজের দেশে রাখতে চায়, তাহলে তাকে (হাসিনাকে) মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে।‘

এ সময় তিনি শেখ হাসিনা ছাড়া সবাইকে ইসলামপন্থি হিসেবে তুলে ধরার জন্য তিনি ভারতের সমালোচনাও করেন।

ড. ইউনূস বলেন, “ভারতে তার (শেখ হাসিনার) অবস্থান করায় কেউ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। কারণ আমরা তাকে বিচার করার জন্য ফেরত আনার চেষ্টা করতে চাই। সে ভারতে অবস্থান করছে কিন্তু মাঝে মাঝে আবার সে কথা বলছে, যা সমস্যাযুক্ত। তার ভারতে বসে কথা বলাটা আর কেউই পছন্দ করছে না।“

এই মন্তব্যের মাধ্যমে ড. ইউনূস স্পষ্টতই গত ১৩ আগস্ট হাসিনার বক্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন। সে বক্তব্যে শেখ হাসিনা ‘ন্যায়বিচার’ দাবি করেছিলেন এবং বলেছিলেন, সাম্প্রতিক ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’, হত্যা ও ভাঙচুরের সাথে জড়িতদের অবশ্যই তদন্ত, চিহ্নিত এবং শাস্তি দিতে হবে।

সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমরা বেশ দৃঢ়ভাবে বলেছি যে– তার চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের প্রতি অবন্ধুসুলভ অঙ্গভঙ্গি; তাকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি যে স্বাভাবিক নিয়মেই ভারতে গেছেন তা নয়। জনগণের অভ্যুত্থান এবং জনরোষের কারণে তিনি পালিয়ে গেছেন।’

ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘তাকে (শেখ হাসিনা) ফিরিয়ে আনতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে না। সে যে ধরনের নৃশংসতা করেছে, তাকে এখানে সবার সামনে বিচার করতে হবে।”

সাক্ষাৎকারে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়েও আলোচনা করেন ড. ইউনূস। ভারতের সাথে সুসম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন তিনি। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ‘শুধুমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, নয়াদিল্লিকে এই ধারণা ত্যাগ করতে হবে।‘

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার উপায় হচ্ছে ভারতের তাদের নিজেদের আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসা। এটি হলো– বাংলাদেশে সবাই ইসলামপন্থি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইসলামপন্থি এবং বাকি সবাই ইসলামপন্থি এবং এই দেশকে তারা আফগানিস্তানে পরিণত করবে। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে। এই আখ্যানে ভারত বিমোহিত। ভারতকে এই আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তাদের আরেকটি প্রতিবেশী।’

বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত হামলার সাম্প্রতিক ঘটনা এবং ভারত এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের কথা উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, এটা একটা অজুহাত মাত্র। তিনি বলেন, “সংখ্যালঘুদের অবস্থাকে এত বড় আকারে চিত্রিত করার চেষ্টা করার বিষয়টি একটি অজুহাত মাত্র।“

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নের উপায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ড. ইউনূস বলেন, উভয় দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং এটি (দুই দেশের সম্পর্ক) বর্তমানে নিচের দিকে যাচ্ছে। আমাদের এই সম্পর্ক উন্নত করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যা এখন নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।’

গত মাসের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই ভারতে রয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার দায়িত্ব নেয়।

ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের কূটনৈতিক পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ। এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে যে তিনি ভারতে আর থাকতে পারবেন কিনা এবং তাকে সম্ভাব্য প্রত্যর্পণের মুখোমুখি হতে হবে কিনা।

এসবের মধ্যেই রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়ায় শেখ হাসিনাকে চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ড. ইউনূস।

জনপ্রিয় সংবাদ

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় নোসক শিবিরের সহযোগিতা

ফেরত আনা না পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে চুপ থাকতে হবে: ড. ইউনূস

আপডেট সময় ০৩:১৮:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে প্রত্যর্পণ না হওয়া পর্যন্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালিন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এছাড়া ভারতে অবস্থান করে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়াকে “অবান্ধব” বলে অভিহিত করেছেন তিনি।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় বার্তাসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব মন্তব্য করেছেন ড. ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করেছে পিটিআই।

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে বাংলাদেশ অনুরোধ না করা পর্যন্ত ভারত যদি হাসিনাকে নিজের দেশে রাখতে চায়, তাহলে তাকে (হাসিনাকে) মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে হবে।‘

এ সময় তিনি শেখ হাসিনা ছাড়া সবাইকে ইসলামপন্থি হিসেবে তুলে ধরার জন্য তিনি ভারতের সমালোচনাও করেন।

ড. ইউনূস বলেন, “ভারতে তার (শেখ হাসিনার) অবস্থান করায় কেউ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। কারণ আমরা তাকে বিচার করার জন্য ফেরত আনার চেষ্টা করতে চাই। সে ভারতে অবস্থান করছে কিন্তু মাঝে মাঝে আবার সে কথা বলছে, যা সমস্যাযুক্ত। তার ভারতে বসে কথা বলাটা আর কেউই পছন্দ করছে না।“

এই মন্তব্যের মাধ্যমে ড. ইউনূস স্পষ্টতই গত ১৩ আগস্ট হাসিনার বক্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন। সে বক্তব্যে শেখ হাসিনা ‘ন্যায়বিচার’ দাবি করেছিলেন এবং বলেছিলেন, সাম্প্রতিক ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’, হত্যা ও ভাঙচুরের সাথে জড়িতদের অবশ্যই তদন্ত, চিহ্নিত এবং শাস্তি দিতে হবে।

সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমরা বেশ দৃঢ়ভাবে বলেছি যে– তার চুপ থাকা উচিত। এটি আমাদের প্রতি অবন্ধুসুলভ অঙ্গভঙ্গি; তাকে সেখানে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে এবং সেখান থেকে তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি যে স্বাভাবিক নিয়মেই ভারতে গেছেন তা নয়। জনগণের অভ্যুত্থান এবং জনরোষের কারণে তিনি পালিয়ে গেছেন।’

ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘তাকে (শেখ হাসিনা) ফিরিয়ে আনতে হবে, তা না হলে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকবে না। সে যে ধরনের নৃশংসতা করেছে, তাকে এখানে সবার সামনে বিচার করতে হবে।”

সাক্ষাৎকারে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়েও আলোচনা করেন ড. ইউনূস। ভারতের সাথে সুসম্পর্কের আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করেন তিনি। কিন্তু তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, ‘শুধুমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, নয়াদিল্লিকে এই ধারণা ত্যাগ করতে হবে।‘

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার উপায় হচ্ছে ভারতের তাদের নিজেদের আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসা। এটি হলো– বাংলাদেশে সবাই ইসলামপন্থি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ইসলামপন্থি এবং বাকি সবাই ইসলামপন্থি এবং এই দেশকে তারা আফগানিস্তানে পরিণত করবে। আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিরাপদ থাকবে। এই আখ্যানে ভারত বিমোহিত। ভারতকে এই আখ্যান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও তাদের আরেকটি প্রতিবেশী।’

বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর কথিত হামলার সাম্প্রতিক ঘটনা এবং ভারত এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশের কথা উল্লেখ করে ইউনূস বলেন, এটা একটা অজুহাত মাত্র। তিনি বলেন, “সংখ্যালঘুদের অবস্থাকে এত বড় আকারে চিত্রিত করার চেষ্টা করার বিষয়টি একটি অজুহাত মাত্র।“

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নের উপায় সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ড. ইউনূস বলেন, উভয় দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে এবং এটি (দুই দেশের সম্পর্ক) বর্তমানে নিচের দিকে যাচ্ছে। আমাদের এই সম্পর্ক উন্নত করতে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, যা এখন নিম্ন পর্যায়ে রয়েছে।’

গত মাসের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকেই ভারতে রয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতের পর ৮ আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালিন সরকার দায়িত্ব নেয়।

ইতিমধ্যেই শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের কূটনৈতিক পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেছে বাংলাদেশ। এরপর থেকেই প্রশ্ন উঠেছে যে তিনি ভারতে আর থাকতে পারবেন কিনা এবং তাকে সম্ভাব্য প্রত্যর্পণের মুখোমুখি হতে হবে কিনা।

এসবের মধ্যেই রাজনৈতিক বিবৃতি দেওয়ায় শেখ হাসিনাকে চুপ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন ড. ইউনূস।