ঢাকা ০৭:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১১ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo কড়া নিরাপত্তায় আজ মেহজাবীনের গায়েহলুদ Logo ইলন মাস্ককে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ প্রধান উপদেষ্টার Logo ডিসেম্বরকে সামনে রেখে সংসদ নির্বাচনের তফসিল: ইসি Logo ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ ঘোষণা Logo ধর্ষকদের শাস্তির হবে প্রকাশ্য মৃত্যুদন্ড: পাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা Logo ডাঃ লেলিনের অপসারণ ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ Logo ‘জুলাই-আগস্টের চেতনাকে ধারণ করে পুলিশ বাহিনীর গৌরব সমুন্নত রাখতে হবে’স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Logo টস জিতে ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান Logo ভারতকে হারালে ১ কোটি রুপি পুরস্কার পাবেন রিজওয়ানরা, প্রতিশ্রুতি গভর্নরের Logo উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহিদ দিবস ২০২৫ পালিত

গুলশান-বনানীর ময়লার ব্যবসা দখল বিএনপির

বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁর বর্জ্য সংগ্রহের নামে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে অর্থ লুটপাটের একটি চক্র গড়ে উঠেছিল বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে। এই চক্রে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা ছিলেন। বর্জ্য সংগ্রহ বা ময়লা–বাণিজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা উঠত ঢাকা উত্তর সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান ও বনানী নিয়ে এই ওয়ার্ড।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে গুলশান ও বনানী এলাকার ময়লা–বাণিজ্যে হাতবদল হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের জায়গায় এখন ময়লা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। আগে সেখানে ওয়ার্ডে ময়লা সংগ্রহের কাজ করা ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের ৩১টিরই মালিক ছিলেন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের পদধারী নেতারা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা আত্মগোপনে আছেন। গুলশান–বনানীর ময়লা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে মাসে তারা তুলতেন অন্তত তিন কোটি টাকা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গুলশান-বনানীর ময়লা বাণিজ্যের মূল নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আলীম নকী। তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার (কাউন্সিলর) ছিলেন। তার অধীন বনানীতে (১-২৮ নম্বর সড়ক) ময়লা সংগ্রহের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুল মমিনকে। তার সঙ্গে আছেন বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক শাহজাহান সরকার।

অন্যদিকে গুলশান–১ ও ২ নম্বরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুবদলের স্থানীয় নেতা হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আনোয়ার ওরফে দাদা আনোয়ারকে। তার সঙ্গে আছেন গুলশান থানা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল জলিল। আবার জলিলের সঙ্গে কাজ করছেন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মোহাম্মদ স্বপন ও লিটন (স্থানীয়ভাবে পান লিটন নামে পরিচিত)।

গুলশান ও বনানীতে আগে ময়লা সংগ্রহের কাজ করত এমন সাতটি প্রতিষ্ঠানের (ময়লা সংগ্রহে ভ্যান সরবরাহ করা) মালিকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ভয়ে তাদের কেউ নাম পরিচয় উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। শুধু এটুকু বলেছেন, ৫ আগস্টের পর তাদের ভ্যানকর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা সংগ্রহ করতে গেলে বিএনপির ওই নেতারা বাধা দিয়েছেন। তাদের ভ্যানগুলোও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব ভ্যান দিয়েই ময়লা সংগ্রহের কাজ চলছে বিএনপি নেতাদের তত্ত্বাবধানে।

সাধারণত মাসের ৪-৫ তারিখ থেকে বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহের বিল ওঠানো শুরু হয়। তবে ৫ আগস্টের পর ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর সুপারভাইজাররা টাকা তুলতে গেলে তাদের মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কয়েকজন সুপারভাইজারকে ডেকে টাকা তুলতে নিষেধ করা হয়েছে। অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতে গিয়ে আগের সুপারভাইজারদের টাকা দিতে মানা করার তথ্যও পাওয়া গেছে।

বনানী থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক (আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা) নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সুপারভাইজার বিল তুলতে গিয়েছিলেন। তাকে মারধর করে হুমকি দেওয়া হয়েছে, আর যেন বিল তুলতে না যান। এমনকি মামলা করারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

গুলশান ও বনানীর রেস্তোরাঁ মালিকেরা বলছেন, তাদের কাছ থেকে চার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত ময়লার বিল নেওয়া হয়। বাংলাদেশ হোটেল-রেস্তোরাঁ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, গুলশান–বনানীতে শতাধিক রেস্তোরাঁ আছে। গড়ে ৪ হাজার টাকা ধরে ১০০টি রেস্তোরাঁ থেকে মাসে ৪ লাখ টাকা বিল ওঠে।

গুলশান-২ নম্বর এলাকায় একই কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, ‘৭ আগস্ট পর্যন্ত আমার লোকেরা কাজ করেছে। কিন্তু পরের দিন কাজ করতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। যারা বাধা দিয়েছেন, তারা বিএনপির নেতা দাদা আনোয়ারের নাম বলে গেছেন। সেদিনের পর থেকে আমার লোকেরা ভয়ে আর কাজ করতে যায় না।’

ময়লা–বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আবদুল আলীম নকী বলেন, ‘আমি যখন কাউন্সিলর ছিলাম, তখন যাদের অনুমতি দিয়েছিলাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরদিনই তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ভ্যানগাড়িসহ কাজ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের আগে যারা কাজটি করতেন, তারাই এখন দখলে নিয়েছেন। এতে আমার কোনো ভূমিকা নেই। কাউকে জায়গায় দাড়িয়ে থেকে দখল করে দিয়েছি, বুঝিয়ে দিয়েছি, এমন কোনো ঘটনা আমি করিনি।’

সূত্র- প্রথম আলো

জনপ্রিয় সংবাদ

কড়া নিরাপত্তায় আজ মেহজাবীনের গায়েহলুদ

গুলশান-বনানীর ময়লার ব্যবসা দখল বিএনপির

আপডেট সময় ০৩:৩৩:৩৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০২৪

বাসাবাড়ি ও রেস্তোরাঁর বর্জ্য সংগ্রহের নামে রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে অর্থ লুটপাটের একটি চক্র গড়ে উঠেছিল বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে। এই চক্রে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা–কর্মীরা ছিলেন। বর্জ্য সংগ্রহ বা ময়লা–বাণিজ্য থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা উঠত ঢাকা উত্তর সিটির ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশান ও বনানী নিয়ে এই ওয়ার্ড।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে গুলশান ও বনানী এলাকার ময়লা–বাণিজ্যে হাতবদল হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের জায়গায় এখন ময়লা-বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিএনপির স্থানীয় নেতারা। আগে সেখানে ওয়ার্ডে ময়লা সংগ্রহের কাজ করা ৩৮টি প্রতিষ্ঠানের ৩১টিরই মালিক ছিলেন আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী বিভিন্ন সংগঠনের পদধারী নেতারা। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারা আত্মগোপনে আছেন। গুলশান–বনানীর ময়লা বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করে মাসে তারা তুলতেন অন্তত তিন কোটি টাকা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্জ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গুলশান-বনানীর ময়লা বাণিজ্যের মূল নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল আলীম নকী। তিনি অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার (কাউন্সিলর) ছিলেন। তার অধীন বনানীতে (১-২৮ নম্বর সড়ক) ময়লা সংগ্রহের কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুল মমিনকে। তার সঙ্গে আছেন বনানী থানা যুবদলের আহ্বায়ক শাহজাহান সরকার।

অন্যদিকে গুলশান–১ ও ২ নম্বরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে যুবদলের স্থানীয় নেতা হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদ আনোয়ার ওরফে দাদা আনোয়ারকে। তার সঙ্গে আছেন গুলশান থানা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল জলিল। আবার জলিলের সঙ্গে কাজ করছেন যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মোহাম্মদ স্বপন ও লিটন (স্থানীয়ভাবে পান লিটন নামে পরিচিত)।

গুলশান ও বনানীতে আগে ময়লা সংগ্রহের কাজ করত এমন সাতটি প্রতিষ্ঠানের (ময়লা সংগ্রহে ভ্যান সরবরাহ করা) মালিকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে ভয়ে তাদের কেউ নাম পরিচয় উল্লেখ করে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। শুধু এটুকু বলেছেন, ৫ আগস্টের পর তাদের ভ্যানকর্মীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে ময়লা সংগ্রহ করতে গেলে বিএনপির ওই নেতারা বাধা দিয়েছেন। তাদের ভ্যানগুলোও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব ভ্যান দিয়েই ময়লা সংগ্রহের কাজ চলছে বিএনপি নেতাদের তত্ত্বাবধানে।

সাধারণত মাসের ৪-৫ তারিখ থেকে বাসাবাড়ির ময়লা সংগ্রহের বিল ওঠানো শুরু হয়। তবে ৫ আগস্টের পর ভ্যান সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোর সুপারভাইজাররা টাকা তুলতে গেলে তাদের মারধর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া কয়েকজন সুপারভাইজারকে ডেকে টাকা তুলতে নিষেধ করা হয়েছে। অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতে গিয়ে আগের সুপারভাইজারদের টাকা দিতে মানা করার তথ্যও পাওয়া গেছে।

বনানী থেকে বর্জ্য সংগ্রহের কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক (আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা) নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, সুপারভাইজার বিল তুলতে গিয়েছিলেন। তাকে মারধর করে হুমকি দেওয়া হয়েছে, আর যেন বিল তুলতে না যান। এমনকি মামলা করারও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

গুলশান ও বনানীর রেস্তোরাঁ মালিকেরা বলছেন, তাদের কাছ থেকে চার থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত ময়লার বিল নেওয়া হয়। বাংলাদেশ হোটেল-রেস্তোরাঁ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, গুলশান–বনানীতে শতাধিক রেস্তোরাঁ আছে। গড়ে ৪ হাজার টাকা ধরে ১০০টি রেস্তোরাঁ থেকে মাসে ৪ লাখ টাকা বিল ওঠে।

গুলশান-২ নম্বর এলাকায় একই কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক বলেন, ‘৭ আগস্ট পর্যন্ত আমার লোকেরা কাজ করেছে। কিন্তু পরের দিন কাজ করতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। যারা বাধা দিয়েছেন, তারা বিএনপির নেতা দাদা আনোয়ারের নাম বলে গেছেন। সেদিনের পর থেকে আমার লোকেরা ভয়ে আর কাজ করতে যায় না।’

ময়লা–বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আবদুল আলীম নকী বলেন, ‘আমি যখন কাউন্সিলর ছিলাম, তখন যাদের অনুমতি দিয়েছিলাম, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরদিনই তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ভ্যানগাড়িসহ কাজ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাস্তবতা হচ্ছে, আওয়ামী লীগের আগে যারা কাজটি করতেন, তারাই এখন দখলে নিয়েছেন। এতে আমার কোনো ভূমিকা নেই। কাউকে জায়গায় দাড়িয়ে থেকে দখল করে দিয়েছি, বুঝিয়ে দিয়েছি, এমন কোনো ঘটনা আমি করিনি।’

সূত্র- প্রথম আলো