ঢাকা ০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩০ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাতিরঝিলে নারী সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার, জয়ের উস্কানিমূলক পোস্ট

রাজধানীর হাতিরঝিলের লেক থেকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জি-টিভির সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর (৩২) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতে রাহনুমাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাহানুমা সারাহ জি-টিভির নিউজরুম এডিটর হিসেবে কাজ করতেন। তিনি কল্যাণপুরে থাকতেন বলে জানা গেছে। সারাহ নোয়াখালী সোনাইমুড়ী উপজেলার ইসলামবাগ কৃষ্ণপুর গ্রামের বখতিয়ার শিকদারের মেয়ে।

এদিকে সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তিনি এই স্ট্যাটাস দেন।

যেখানে জয় লিখেছেন, ‘রহমুনা সারা গাজী টিভির নিউজরুম সম্পাদককে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ঢাকা শহরের হাতিরঝিল লেক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আরেকটি নৃশংস হামলা। গাজী টিভি একটি ধর্মনিরপেক্ষ নিউজ চ্যানেল গোলাম দস্তগীর গাজীর সম্প্রতি গ্রেপ্তার।’

তবে জয়ের এ পোস্টকে অনেকেই উস্কানিমূলক হিসেবে দাবি করছেন। বেশিরভাগাই বিষয়টি গুজব ও ভুল তথ্য হিসেবে মন্তব্য করছেন।

শফিউল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, ‘আমি জিটিভিতে কর্মরত। আমাদের অফিসে রাজনৈতিক কারণে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের নিউজরুম এডিটর সারাহ’র মৃত্যু নিয়ে মিথ্যাচার বন্ধ করুন প্লিজ। সারাহ’র ফেসবুক পোস্ট দেখে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে এটা সুইসাইড হতে পারে! পুলিশ তদন্ত করার আগে আপনি কীভাবে সিউর হলেন তাকে হত্যা করা হয়েছে?’

উল্লেখ্য, সারাহ রাহনুমা মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট করেছিলেন। যেখানে তিনি লেখেন- ‘জীবন্মৃত হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো।’

একই সময় ফাহিম ফয়সাল নামে এক যুবককে ট্যাগ করে তিনি আরও একটি পোস্ট দেন। যেখানে তিনি লেখেন, ‘তোমার মতো বন্ধু পেয়ে ভালো লাগল। আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। আশা করি, শিগগিরই তোমার সব স্বপ্ন পূরণ হবে। আমাদের অনেক পরিকল্পনা ছিল। দুঃখিত, পরিকল্পনাগুলো পূরণ করতে পারছি না। তোমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত করুক।’

ওই পোস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কপালে পতাকা বাঁধা কয়েকটি ছবিও পোস্ট করেছেন সারাহ।

জানা গেছে, সাংবাদিক সারাহ বিবাহিত। তার স্বামী সায়েদ শুভ্র। স্ত্রীর মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সম্পর্কের মাধ্যমে সাত বছর পূর্বে আমরা পরিবারকে না জানিয়ে বিবাহ করেছিলাম। গতকাল সারাহ অফিসে গিয়ে রাতে আর বাসায় না ফিরে এক ব্যক্তিকে দিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসা ভাড়ার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরে আমি তাকে ফোন করে বলি রাতে তো তুমি বাসায় আসতে, তাহলে অন্যকে দিয়ে কেন টাকা পাঠিয়ে দিয়েছো? তখন সে- ‘আমি ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন রেখে দেয়। পরে রাত ৩টার দিকে খবর পাই সে হাতিরঝিল লেকের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে। পরে ঢামেক এসে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।’

স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়াও হয়নি। তবে বেশ কিছুদিন আগ থেকে আমার স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চাচ্ছে। আমরা দুজনই কাজী অফিসে গিয়ে ডিভোর্স দিয়ে আসব। দেশের এই পরিস্থিতিতে আর কাজী অফিসে যাওয়া হয়নি।’

রাহানুমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া পথচারী সাগর জানান, ওই নারীকে ঝিলের পানিতে ডুবতে দেখেন তিনি। এরপর তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান ওই নারী আর বেঁচে নেই।

জনপ্রিয় সংবাদ

দেশে থেকে যারা প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারাই আসল বীরশ্রেষ্ঠ: মুশফিক

হাতিরঝিলে নারী সাংবাদিকের মরদেহ উদ্ধার, জয়ের উস্কানিমূলক পোস্ট

আপডেট সময় ০৩:৪৩:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪

রাজধানীর হাতিরঝিলের লেক থেকে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল জি-টিভির সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর (৩২) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) রাতে রাহনুমাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রাহানুমা সারাহ জি-টিভির নিউজরুম এডিটর হিসেবে কাজ করতেন। তিনি কল্যাণপুরে থাকতেন বলে জানা গেছে। সারাহ নোয়াখালী সোনাইমুড়ী উপজেলার ইসলামবাগ কৃষ্ণপুর গ্রামের বখতিয়ার শিকদারের মেয়ে।

এদিকে সাংবাদিক রাহানুমা সারাহর মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট দিয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার সকাল ১০টা ২০ মিনিটে তিনি এই স্ট্যাটাস দেন।

যেখানে জয় লিখেছেন, ‘রহমুনা সারা গাজী টিভির নিউজরুম সম্পাদককে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ঢাকা শহরের হাতিরঝিল লেক থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতার উপর আরেকটি নৃশংস হামলা। গাজী টিভি একটি ধর্মনিরপেক্ষ নিউজ চ্যানেল গোলাম দস্তগীর গাজীর সম্প্রতি গ্রেপ্তার।’

তবে জয়ের এ পোস্টকে অনেকেই উস্কানিমূলক হিসেবে দাবি করছেন। বেশিরভাগাই বিষয়টি গুজব ও ভুল তথ্য হিসেবে মন্তব্য করছেন।

শফিউল ইসলাম নামের একজন লিখেছেন, ‘আমি জিটিভিতে কর্মরত। আমাদের অফিসে রাজনৈতিক কারণে কোনো সমস্যা নেই। আমাদের নিউজরুম এডিটর সারাহ’র মৃত্যু নিয়ে মিথ্যাচার বন্ধ করুন প্লিজ। সারাহ’র ফেসবুক পোস্ট দেখে যতটুকু বোঝা যাচ্ছে এটা সুইসাইড হতে পারে! পুলিশ তদন্ত করার আগে আপনি কীভাবে সিউর হলেন তাকে হত্যা করা হয়েছে?’

উল্লেখ্য, সারাহ রাহনুমা মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে নিজের ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট করেছিলেন। যেখানে তিনি লেখেন- ‘জীবন্মৃত হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই ভালো।’

একই সময় ফাহিম ফয়সাল নামে এক যুবককে ট্যাগ করে তিনি আরও একটি পোস্ট দেন। যেখানে তিনি লেখেন, ‘তোমার মতো বন্ধু পেয়ে ভালো লাগল। আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুন। আশা করি, শিগগিরই তোমার সব স্বপ্ন পূরণ হবে। আমাদের অনেক পরিকল্পনা ছিল। দুঃখিত, পরিকল্পনাগুলো পূরণ করতে পারছি না। তোমার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত করুক।’

ওই পোস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কপালে পতাকা বাঁধা কয়েকটি ছবিও পোস্ট করেছেন সারাহ।

জানা গেছে, সাংবাদিক সারাহ বিবাহিত। তার স্বামী সায়েদ শুভ্র। স্ত্রীর মৃত্যু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সম্পর্কের মাধ্যমে সাত বছর পূর্বে আমরা পরিবারকে না জানিয়ে বিবাহ করেছিলাম। গতকাল সারাহ অফিসে গিয়ে রাতে আর বাসায় না ফিরে এক ব্যক্তিকে দিয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাসা ভাড়ার টাকা পাঠিয়ে দিয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরে আমি তাকে ফোন করে বলি রাতে তো তুমি বাসায় আসতে, তাহলে অন্যকে দিয়ে কেন টাকা পাঠিয়ে দিয়েছো? তখন সে- ‘আমি ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন রেখে দেয়। পরে রাত ৩টার দিকে খবর পাই সে হাতিরঝিল লেকের পানিতে ঝাঁপ দিয়েছে। পরে ঢামেক এসে তাকে মৃত অবস্থায় দেখতে পাই।’

স্বামী-স্ত্রী সম্পর্কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে কোনো ঝগড়াও হয়নি। তবে বেশ কিছুদিন আগ থেকে আমার স্ত্রী বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে চাচ্ছে। আমরা দুজনই কাজী অফিসে গিয়ে ডিভোর্স দিয়ে আসব। দেশের এই পরিস্থিতিতে আর কাজী অফিসে যাওয়া হয়নি।’

রাহানুমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া পথচারী সাগর জানান, ওই নারীকে ঝিলের পানিতে ডুবতে দেখেন তিনি। এরপর তাকে দ্রুত উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান ওই নারী আর বেঁচে নেই।