ঢাকা ১১:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
হারুনের দালানের খনি

বাংলাদেশ ব্যাংক চালিয়েছেন সালমান ও এস আলম

  • লিমন হোসেন
  • আপডেট সময় ০৭:৪৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪
  • 68

আজকের প্রত্রিকা গুলো

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর

কালবেলা:

বাংলাদেশ ব্যাংক চালিয়েছেন সালমান ও এস আলম
দেশের আর্থিক খাতের মূল নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রা সরবরাহ, মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বৈদেশিক মুদ্রার বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও বাংলাদেশ ব্যাংকের। গত ১৫ বছর এই সংস্থাটিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ, নির্বাহী পরিচালকদের পদায়ন থেকে শুরু করে সবরকম নীতিমালা প্রণয়ন প্রভাবশালী এ দুই ব্যবসায়ীর ইশারায়।

এ ক্ষেত্রে আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী ছিলেন তাদের সহায়ক। এক কথায় দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় মাফিয়াদের হাতে। আর সুযোগ বুঝে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা নামে-বেনামে বের করে নিয়েছেন তারা। এর বড় অংশই বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছেন আলোচিত এই ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে নৌপথে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন সালমান এফ রহমান।

বিগত সরকারের সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা মূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ডক্টর জাহিদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর দেশের ব্যাংক খাতে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক তার দায় এড়াতে পারে না। বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার জারি করে অনিয়ম-দুর্নীতির বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি চেষ্টা করত হয়তো অনেক অনিয়ম ঠেকাতে পারত। আবার অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো রাজনৈতিক প্রভাব বা হস্তক্ষেপের কারণে অনিয়ম ঠেকাতে ব্যর্থ হতো। তার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনিয়ম ঠেকাতে চেয়েছিলেন কি না—সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’

জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর শুরু হয় ব্যাংক দখল ও লুটপাটের ধারা। আওয়ামী লীগ শাসনামলের শুরুতে ২০০৯ সালের ১ মে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. আতিউর রহমান। দায়িত্বের প্রথম মেয়াদে তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও দ্বিতীয় মেয়াদে সমালোচনার মুখে পড়েন এই অর্থনীতিবিদ।

বিশেষ করে গণমাধ্যমে অতিপ্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের কারণে বিতর্কিত হন তিনি। এসএমই ঋণ বিতরণের নামে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহর নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ বাদ দিয়ে তার এসব সফরে ব্যাংকগুলোকে গেট, পোস্টার, ফেস্টুন তৈরিতে বাধ্যও করেছেন তিনি। সে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারে ঢুকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নেয় হ্যাকাররা। ভয়াবহ ওই ঘটনা সরকারের কাছ থেকে ২৪ দিন লুকিয়ে রাখেন গভর্নর। এর জেরে ওই বছরের ১৫ মার্চ গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন।

দেশরুপান্তর:

হারুনের দালানের খনি
পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হারুন অর রশীদ ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার। এর আগে ছিলেন ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন। চাকরির জীবনে তাকে পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি। যেখানে হাত দিয়েছেন ‘সোনা’ ফলেছে। তার বিত্তীয় সাফল্য সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। সম্পদে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর, আশুলিয়া ও কক্সবাজারের টেকনাফে অঢেল সম্পদের মালিক তিনি। বেশ কয়েকটি হোটেল ও রিসোর্টের কর্ণধার তিনি।

আশুলিয়ার নন্দন পার্কেও তার শেয়ার আছে। কিশোরগঞ্জে বেনামে প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের মালিক। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের আশকারায় হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। সিনিয়র অফিসারদের পাত্তা দিতেন না। উত্তরায় কয়েকটি স্থানে সরেজমিন গিয়ে তার সম্পদের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। কিছু সম্পদ আত্মীয়ের নামে কিনেছেন তিনি। কিছু সম্পদ দখল করার অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সুপারিশে তার স্ত্রীর নামে থাকা ১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা আটকে গেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে, নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ব্যাংকের হিসাব শাখায়। ৫ আগস্টের পর থেকে হারুনের খোঁজ মিলছে না। তার বিরুদ্ধে ঢাকায় বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা হয়েছে।

এদিকে গতকাল হারুন ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই নিষেধাজ্ঞা দেন

সরেজমিন উত্তরা : গত রবিবার দুপুরে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের ২৬/এফ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকাটি খুব নিরিবিলি। লেকের পাড়ে ১০ কাঠার ওপর নির্মিত আটতলা বাড়ির টপ ফ্লোরে সপরিবারে বাস করছিলেন ডিআইজি হারুন। বাড়িটির মালিক তিনি। চতুর্থতলা পর্যন্ত ভারতের একটি কোম্পানিকে ভাড়া দেওয়া। পঞ্চমতলায় থাকেন গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী। ষষ্ঠতলায় থাকেন কাস্টমসের এক কর্মকর্তা। সপ্তমতলাটি ডুপ্লেক্স। বাসাটি ইউরোপের আদলে সাজানো। সরঞ্জামাদি সব বিদেশি।

নাম প্রকাশ না করে ভবনের একজন নিরাপত্তাকর্মী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সর্বশেষ তিনি ৩ আগস্ট সকালে বাসা থেকে বের হন। ওইদিন তার স্ত্রী ও দুই সন্তান অন্য কোথাও চলে গেছেন। তারা আর আসেননি। হারুন অর রশীদ যখন বাসায় আসতেন তখন কঠোর নিরাপত্তার বলয় থাকত। বাসার আশপাশে সাদা পোশাকধারী পুলিশ থাকত। নায়ক-নায়িকারা নিয়মিত আসত।

তার বাসাটি মার্বেল পাথরের। সরকার পতনের দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে ৪০-৫০ জন যুবক বাড়ির সামনে এসে হারুন স্যারকে খুঁজতে থাকে। তারা জোর করে বাসায় ঢোকে। যুবকরা আমাদের মারধর করে। তারা সাততলায় গিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে টাকা-পয়সা লুট করে। তবে মালামাল ভাঙচুর করেনি। ৯ আগস্ট যুবকরা আবারও হামলা চালিয়ে লুটপাট করলেও ভাঙচুর করেনি। গত শুক্রবার আবার এলে আমরা প্রতিবাদ করি। তারা আমাদের মারধর করে। কয়েকজন ভাড়াটিয়াকেও মারধর করা হয়।’

প্রথম আলো:

ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতা
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ১১ জেলায় চলমান বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা—এই চার জেলার বানভাসি মানুষ বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এসব জেলায় পানি নামছে ধীরগতিতে।

বন্যাকবলিত মানুষের অভিযোগ, সড়কের পাশের বাড়িঘর ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মানুষজন একাধিকবার ত্রাণ পাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ যাচ্ছে না। মূলত ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার কারণে দুর্গতদের সবার কাছে সমানভাবে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। এ জন্য ত্রাণ বিতরণে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সহায়তা চেয়েছেন বন্যাকবলিত ব্যক্তিরা। আর স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বন্যার্ত মানুষের বিপরীতে বরাদ্দকৃত ত্রাণের পরিমাণ কম।

লক্ষ্মীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি জেড এম ফারুকী ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি কামাল হোসেনের মতে, সবাই উঁচু সড়ক ধরে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। যে যাঁর মতো করে ত্রাণ দিচ্ছেন। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বানভাসি মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছায়নি। ত্রাণ বিতরণে প্রশাসনের সমন্বয়ের তাগিদ দেন তাঁরা।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে চলমান বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বন্যায় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজারসহ ১১টি জেলার ৫৬ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য এসব জেলায় ৩ কোটি ৫২ লাখ নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও গোখাদ্যের জন্য ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কালের কন্ঠ:

বিএনপি চায় রোডম্যাপ তাড়া নেই জামায়াতের
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, ওই ভাষণ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীর মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে দুই দলের মধ্যে মতের মিল থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে তাদের দুই ধরনের বক্তব্য উঠে এসেছে।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় গত সোমবার বিএনপির পক্ষ থেকে এক ধরনের আক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনামুখর না হলেও তাদের প্রত্যাশা যে পূরণ হয়নি, নেতাদের বক্তব্যে সেটি স্পষ্ট।

অন্যদিকে জামায়াত প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। সরকারকে সময় দিতে চায় দলটি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে আন্দোলনে ছিল বিএনপি ও জামায়াত। এবারও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দুই দলের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ ছিল।

তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি স্পর্শকাতর ইস্যুতে দুই দলের মধ্যে এক ধরনের টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।
আবার জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করতে চাইলেও জামায়াতের মধ্যে তাড়া দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে দুই দলের মধ্যে যোগাযোগ অনেকটা সীমিত হয়ে আসছে বলেও ধারণা দিয়েছেন অনেকে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।

৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর গত রবিবার জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।
পরে সোমবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। তবে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে রোডম্যাপ না থাকায় নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি বলে মনে করেন তিনি।

‘কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়’—জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যের জবাবে সোমবার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘এখনো একটা জিনিস ধোঁয়াশা, যেটা আমার পরিষ্কার হয়নি।

নয়াদিগন্ত:

অফশোর ব্যাংকিং থেকে এস আলম হাতিয়ে নিয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা
এস আলমের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নগদ এলসির মাধ্যমে পণ্য আনা হয়েছে। পণ্য বিক্রিও করা হয়েছে। কিন্তু এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের টাকা ফেরত না দিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। বাধ্য হয়ে ইসলামী ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে এলসির দায় পরিশোধ করেছে। আর এজন্য এস আলমের নামে বাধ্যতামূলক ঋণ সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব ঋণের অর্থ সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে ফেরত দেয়ার কথা। কিন্তু এক বছরের মধ্যে ফেরত দেয়া হয়নি। বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আরো এক বছরের সময় দেয়া হয়েছে। দুই বছরও পার হয়ে গেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা পরিপালন করা হয়নি। এভাবে পণ্য আমদানির দায় পরিশোধ না করায় এস আলমের নামে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব ঋণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাও মানা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় রয়েছে, দেশের বাইরে থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত এনে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ দিতে পারবে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বিদেশী ৬টি ব্যাংক থেকে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত এসেছে মাত্র ৮ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় মাত্র ৯৬০ কোটি টাকা। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করেছে ১৭৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এই টাকার ১৮ হাজার কোটি টাকাই নিয়েছে এস আলম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে ঋণ বিতরণ করতে পারবে ২৫ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ। ওই হিসেবে ইসলামী ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করতে পারে ১৫ কোটি ২৪ লাখ সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, যা স্থানীয় মুদ্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ দিয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, পণ্য আমদানির সময় ইউপাস পদ্ধতিতে আমদানি করা হয়। পণ্য দেশে আসার পর বৈদেশিক মুদ্রায় তা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু পণ্য দেশে আসার পর এস আলম এলসির দায় পরিশোধ না করেই ওই পণ্য বিক্রি করে দিয়েছে। অর্থ পরিশোধ না করায় এস আলমের নামে বাধ্যতামূলক ঋণ সৃষ্টি করেছে ইসলামী ব্যাংক। অপর দিকে বিদেশী ব্যাংকের মাধ্যমে পুনঃঅর্থায়নের মাধ্যমে এলসি খোলা হয়েছিল। যেমন, বিদেশ থেকে কোনো পণ্য আমদানি করা হলো। ওই পণ্যের বিপরীতে বিদেশী কোনো ব্যাংক তিন মাসের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেয়া হলো।

তিন মাসের মধ্যে গ্রাহক তা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু এস আলম পণ্য দেশে এনে তা বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু বিদেশী ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি। আবার দেশীয় কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলেছিল এস আলম। পণ্য দেশে আসার পর এস আলম তা বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু ওই ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি। এস আলমের দেশীয় ব্যাংকের ঋণও বাজার থেকে ডলার কিনে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। এভাবে ইসলামী ব্যাংকের নামে ১৮ হাজার কোটি টাকা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার দায় সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এ কাজে সরাসরি সহযোগিতা করেছিল এস আলমের পিএস আকিজ উদ্দিন, মিফতা উদ্দিন ও হাবিবুর রহমান। বর্তমানে হাবিবুর রহমানকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে অবৈধভাবে ডিএমডি পদে পদোন্নতি দিয়ে এসআইবিএল থেকে অর্থ বের করার হাতিয়ার বানানো হয়েছে।

যুগান্তর:

মানুষের প্রতি চরম ক্ষোভ ছিল শেখ হাসিনার
পতন নিয়ে রিমান্ডপ্রাপ্তদের মন্তব্য
ছাত্র-জনতার আন্দোলন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা অনেক পরামর্শ দিয়েছিলাম। তিনি আমাদের কোনো কথাই শোনেননি। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা তাকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছি। ছাত্র-জনতার দাবি মেনে নিতে বলেছি। উনি আমাদের কোনো কথায় কর্ণপাত করেননি।

 

তিনি পুলিশ, আনসার, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন।’ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে রিমান্ডে থাকা আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা এসব কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কারণ জানতে চাইলে তারা ডিবি কর্মকর্তাদের বলেন, ‘জয়কালে ক্ষয় নাই মরণ কালে ওষুধ নাই’-এ প্রবাদটি শেখ হাসিনার জন্য সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কারণ গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সবই তার পক্ষে গিয়েছে। আর এবার ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে তিনি যত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সবই তার বিপক্ষে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ডিবিকে বলেছেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার কারণে এ দেশের মানুষের প্রতি চরম ক্ষোভ ছিল শেখ হাসিনার। তাই তার আচার-আচরণ এমন ছিল যে, দেশের মানুষ মরুক বা বাঁচুক এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। উনি চেয়েছিলেন শুধু ক্ষমতা। আজীবন ক্ষমতায় থাকার লোভ তাকে পেয়ে বসেছিল। এই মানসিকতাই তার জন্য কাল হয়েছে।

ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম ৫ বছর আমি মন্ত্রী ছিলাম। পরের ১০-১১ বছরে আমরা সরকারে ছিলাম না। তবে ১৪ দলে জোটের শরিক ছিলাম। জোটের শরিক হিসাবে আমরা শেখ হাসিনাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছি। ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে বলেছি। যেসব পুলিশ সদস্য ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। টাকা পাচারকারীদের ধরতে বলেছিলাম। উনি চীন সফরে যাওয়ার আগেও বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম।

আমাদের কোনো পরামর্শই কানে নেননি। ইনু ডিবিকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সে কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। অথচ কোটার বিরোধিতা করে। তাহলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করে রাস্তায় নামুক।’ এভাবে তার কথা বলা ঠিক হয়নি। ইনু আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলন দমনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘তাদের দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট।’ এই মন্তব্যটি ছাত্র-জনতার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।

গুম-খুনসহ অনেক স্পর্শকাতর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, আমি নিজ উদ্যোগে কিছুই করিনি। আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমি সেভাবেই কাজ করেছি। আমার কাছে নির্দেশনা আসত একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে। কিছু কিছু বিষয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নির্দেশনা দিতেন।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সব দোষ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মেয়ের জামাই তারেক সাঈদের। ওই সময় র‌্যাব-১১ এর কমান্ডিং অফিসার ছিলেন তারেক সাঈদ। মন্ত্রীর মেয়ের জামাই হওয়ার কারণে ওই সময় তার ওপর কেউ কথা বলতে পারতেন না। জিয়াউল আহসান বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে একসঙ্গে সাতজন নিখোঁজ হওয়ার পরপরই তাদের খুঁজে বের করতে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) মোখলেসুর রহমান। প্রথমদিকে র‌্যাব-১১-এর কয়েকজন আমার কাছে সাত খুনের বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু তারেক সাঈদ স্বীকার করেননি। জিয়াউল আহসান ডিবিকে জানান, আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানকে সুবিধা দিতেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশেই বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

রিমান্ডে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জিয়াউল আহসানের পরামর্শেই ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে জিয়াউল আহসান জানান, পলক নিজের ইচ্ছাতেই ইন্টারনেট বন্ধ করেছিলেন। আন্দোলনে পুলিশ এবং আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত অন্য বাহিনীর কিছু সদস্যের বাড়াবাড়ি ছিল বলে জানিয়েছেন জিয়া। তিনি বলেন, এত দ্রুত যে সরকারের পতন হয়ে যাবে তা শেখ হাসিনা বুঝতে পারেননি। আমি নিজেও বুঝতে পারিনি।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মাইনুল হাসান বলেন, ডিবি হেফাজতে যারা আছেন তারা একেকজন একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা রিমান্ডে আছেন, হত্যার ক্ষেত্রে তাদের কেউ নির্দেশদাতা, কেউ পরামর্শদাতা, কেউ অর্থ বিনিয়োগকারী, কেউ ইন্ধনদাতা। আমরা মূলত হত্যা মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তবে প্রসঙ্গক্রমে আরও অনেক বিষয় চলে আসছে। ওইসব বিষয় আমাদের গোয়েন্দারা নোট করে রাখছেন। মানি লন্ডারিংসহ আর্থিক যেসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় উঠে আসছে সেগুলো নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

মানবজমিন:

গুলিতে হাত-পা হারিয়ে স্বপ্ন ভেঙেছে ওদের
চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ আতিকুল ইসলামের। গুলিবিদ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের বেডে। ৫ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেমে গুলিবিদ্ধ হন আতিকুল। বর্তমানে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) ক্যাজুয়ালিটি-২ এর জি-৩১ নম্বর বেডে ভর্তি রয়েছেন তিনি। জীবন বাঁচিয়ে রাখতে কাটতে হয়েছে তার ক্ষতিগ্রস্ত হাত। আতিকুল একটি ফ্যাশন হাউজের বিক্রয়কর্মী ছিলেন। স্বপ্ন ছিল বিদেশ যাওয়ার। কিন্তু হাত কাটার পর সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। আবার কখনো কখনো দুশ্চিন্তার ছাপ সরিয়ে আন্দোলন সফল হওয়ায় আতিকুলের মুখে ফুটে উঠছে হাসি।

তিনি মানবজমিনকে বলেন, নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। এরপর একটি ফ্যাশন হাউজের বিক্রয়কর্মী ছিলাম। ৫ই আগস্ট উত্তরা আজমপুরে আন্দোলনে নেমে গুলিবিদ্ধ হই। বিকাল ৪টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। ডান হাতের কনুইয়ের উপরে গুলি লাগে। হাতের রক্তনালী ছিঁড়ে গেছে। গুলি হাতের ভেতর থেকে যায়। এর পর প্রথমে হৃদরোগ হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। সেখান থেকে পঙ্গু হাসপাতালে। তিনি বলেন, ৭ই আগস্ট রাতে আমার হাত কেটে ফেলতে হয়। চিকিৎসকরা বলেন, হাত বাঁচাতে হলে নিজে বাঁচবো না, একটা সময় হাতে ইনফেকশন হয়ে যাবে। আমার পিতা আলাল উদ্দিনের ফার্নিচারের দোকান আছে। পরিবারের সবাই আজমপুরে থাকে। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। ছয় ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। তিনি বলেন, ছাত্ররা আমার ভাই, ভাইদের জন্য আন্দোলনে নেমেছিলাম। দেশের জন্য আমার শরীরের অঙ্গ দিয়েছি, এটা নিয়ে আমি গর্বিত। তবে শরীরের প্রতিটি অঙ্গই গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে তো দুশ্চিন্তা হয় মাঝে মাঝে। জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল, কিন্তু এখন কোনো স্বপ্ন দেখছি না। জীবনটা এখন আর আগের মতো নেই, নতুন করে স্বপ্ন সাজাতে হবে। আগে স্বপ্ন ছিল বিদেশ যাওয়ার সেটি তো আর হলো না।
শুধু আতিকুল নয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে। গুলির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হওয়ায় কাটতে হয়েছে অনেকের হাত-পা। কারও পায়ে আবার লাগানো হয়েছে রড। পঙ্গু হাসপাতালের তথ্য মতে, ছাত্র আন্দোলনে আহত ১১২ জন ভর্তি রয়েছেন। এরমধ্যে ৫২ জন শিক্ষার্থী। আহত ২১ জনের হাত-পা কাটা হয়েছে। এরমধ্যে ১৭ জনের পা কেটে ফেলা হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। হাসপাতালটিতে এ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ৭০০ জন। গতকাল সরজমিন দেখা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ছাত্র ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অনেকে পঙ্গু হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তায়। কারও রড লাগানো, কারও হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ। চিকিৎসক-নার্সরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। স্বজনদেরও রয়েছে সারিয়ে তোলার প্রচেষ্টা।

বনিক বার্তা:

সারের চাহিদা প্রায় ৬৯ লাখ টন, দেশে মজুদ ১৮ লাখ টন

দেশে চলতি অর্থবছরে সারের মোট চাহিদা হতে পারে প্রায় ৬৯ লাখ টন। বাংলাদেশে সারের মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের সরকারি গুদামগুলোয় সারের মজুদ আছে প্রায় ১৮ লাখ টন। এ মজুদ দেশের আসন্ন প্রয়োজনও তাৎক্ষণিকভাবে মেটাতে পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।

তাদের ভাষ্যমতে, দুই মাসের মধ্যে শুরু হচ্ছে বোরো ও রবি মৌসুম। দেশে সবচেয়ে বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী মৌসুমটিতে সারসহ চাষাবাদের প্রয়োজনীয় উপকরণের চাহিদাও থাকে সবচেয়ে বেশি। দেশে মোট রাসায়নিক সারের ৭০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহৃত হয় শুধু বোরো ও রবি মৌসুমে। যদিও এবার গ্যাস সংকটে সারের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আমদানিতে জটিলতা তৈরি করেছে ডলার সংকট। ফলে আসন্ন রবি ও বোরো মৌসুমে সারের প্রয়োজনীয় জোগান নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টন। চলতি অর্থবছরে এ চাহিদার পরিমাণ কিছুটা বেড়ে প্রায় ৬৯ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। যদিও এর বিপরীতে সরকারি গুদামগুলোয় সারের মজুদ আছে মাত্র ১৭ দশমিক ৭৪ লাখ টন। দেশে সারের মোট চাহিদার চার-পঞ্চমাংশ পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। এবার বেসরকারি উদ্যোগে সাড়ে নয় লাখ টন সার আমদানির কথা আছে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে সার আমদানি করা যায়নি। আবার দেশের পাঁচটি ইউরিয়া সার কারখানার মধ্যে তিনটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে গ্যাসের অভাবে।

উৎপাদন ও আমদানি নিয়ে সৃষ্ট সংকটে ইউরিয়াসহ প্রয়োজনীয় সার সরবরাহ নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় সার আমদানি ও উৎপাদন উভয় দিকেই সংকট থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সাম্প্রতিক বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে বোরো উৎপাদনে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু এলসি জটিলতায় সার আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রেশনিং করে হলেও গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে সার কারখানাগুলোকে পুরোদমে উৎপাদনে নিয়ে আসা প্রয়োজন। একই সঙ্গে যাবতীয় প্রক্রিয়াগত জটিলতা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করে প্রয়োজনমতো আমদানির মাধ্যমে সারের পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করতে হবে।

যদিও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি আমন মৌসুমে সার নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। বোরো মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় আছে এখনো। এর মধ্যেই সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো নিয়মিত প্রক্রিয়ায় সার ব্যবস্থাপনার কাজ চলমান রয়েছে। আমদানির কাজও চলমান রয়েছে।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে ব্যবহৃত সারের মধ্যে প্রধান হচ্ছে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাইঅ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি)। চলতি অর্থবছরে এ চারটি সারের মোট চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৯ লাখ টন। আর সাড়ে নয় লাখ টন সার আসবে বেসরকারি উদ্যোগে। এছাড়া বোরনসহ অন্যান্য সার মিলিয়ে মোট চাহিদা দাঁড়াতে পারে প্রায় ৬৯ লাখ টনে। আর চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত সরকারের কাছে মজুদ রয়েছে ১৭ দশমিক ৭৪ লাখ টন। এর মধ্যে ২৭ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদার বিপরীতে মজুদ রয়েছে ছয় লাখ টন। সাড়ে সাত লাখ টন টিএসপির বিপরীতে মজুদ রয়েছে ৩ দশমিক ২৫ লাখ টন। ১৫ লাখ টন ডিএসপির চাহিদা থাকলেও মজুদ রয়েছে ৪ দশমিক ১৪ লাখ টন। এমওপির চাহিদা নির্ধারণ হয়েছে সাড়ে নয় লাখ টন। আর মজুদ রয়েছে ৪ দশমিক ৩১ লাখ টন।

সমকাল:

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে নতুন জীবনযুদ্ধ
ফেনীর ছাগলনাইয়ার শিলুয়া গ্রামের বেলাল হোসেনের ঘরে গত বুধবার রাতে হু হু করে পানি ঢোকে। জীবন বাঁচাতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেন স্থানীয় একটি স্কুল ভবনের দোতলায়। গতকাল মঙ্গলবার থেকে পানি নামতে থাকায় বাসায় ফিরে দেখেন, তাঁর ঘর লন্ডভন্ড। ঘরে থাকার মতো অবস্থা নেই। প্রিয় আঙিনা ছেড়ে তিনি আবার ছোটেন স্কুল ভবনে। বেলালের পুকুরের সব মাছও ভেসে গেছে। ছোট্ট মুরগির খামার ছিল, তাও বানের তোড়ে হাওয়া। এখন কী করবেন, দিশাহীন তিনি। বেলালের আশা, সরকার দ্রুত সহায়তার হাত বাড়াবে।

ছাগলনাইয়া শহরের মাইলের মাথার পূর্বপাড়ে একটি মহল্লায় সড়কের ধারে বাস করে ২০টি পরিবার। গত বৃহস্পতিবার পরিবারগুলো আশ্রয় নেয় বাশার সিটি আশ্রয়কেন্দ্রে। গতকাল ওই এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। ঘর থেকে পানি সরলেও সবকিছু তছনছ। গতকাল দেখা গেছে, দীর্ঘদিনের সাজানো ঘরের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে অনেকেই কাঁদছেন। মহল্লার বাসিন্দা মোস্তাফা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের সব শেষ। কীভাবে ঘর ঠিক করব? জীবনটা বড় কঠিন হয়ে গেল। মাথার ওপর ঋণের বোঝা। কীভাবে তা শোধ করব?’

ফেনী শহরের পানি নেমেছে দু’দিন আগে। ডুবে ছিল ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজীর বিস্তীর্ণ জনপদ। এখনও পানিবন্দি ফেনীর অন্য উপজেলার কিছু এলাকা। কিছু এলাকায় পানি নেমে যাওয়ায় এক সপ্তাহ পর ভেসে উঠতে শুরু করেছে ডুবে থাকা বাড়িঘর। গতকাল অনেকে ঘরের অবস্থা দেখতে পথে নামেন। তবে নিজের ঘরের চেহারা দেখে সবার হৃদয়ে হয়েছে রক্তক্ষরণ। পানির স্রোতে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় সবকিছু। তাই এখনও আশ্রয়কেন্দ্রেই কাটছে অনেকের দিন। যারা ছাড়ছেন, তারা ভাঙা ঘর মেরামতের কঠিন লড়াইয়ে নেমেছেন। এ লড়াই কবে শেষ হবে, তাও জানেন না কেউ। এ যেন এক অনিশ্চয়তাকে পেছনে ফেলে আরেক দুর্গম পথে পা বাড়ানো।

পানি সরে যাওয়ার পর জমাটবদ্ধ কাদা জানান দিচ্ছে বন্যার চিহ্ন। সড়কের কোথাও কোথাও বড় গর্ত। আশপাশের এলাকা ও সব উপজেলার সঙ্গে ফেনী জেলার সড়ক যোগাযোগ গতকাল কিছুটা চালু হলেও যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। ফেনী শহর ছাড়া উপজেলা এখনও বিদ্যুৎহীন; মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কেও এখনও ফেরেনি সবাই। এতে অনেকে নিতে পারছেন না স্বজনের খোঁজ।
কুমিল্লায় গোমতীতে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। ১৪ উপজেলায় এখনও ১১ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। বন্যাকবলিত প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার, পোশাক, জরুরি ওষুধের সংকট।

নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি কোথাও উন্নতি, আবার কোথাও অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে মাইজদীসহ সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে। জেলার অনেক এলাকায় ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে জানান বাসিন্দারা। সেনবাগ, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিলে বন্যা কার্যত অপরিবর্তিত রয়েছে। বেগমগঞ্জে সোমবার আলাদা ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুই লাইনম্যান জাকির হোসেন (২৮) ও মো. ইব্রাহিম (২৮) এবং বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির আহমেদ (১৬)।

জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, এখনও বিভিন্ন উপজেলায় ২০ লাখ ৩৬ হাজার ৭০০ মানুষ পানিবন্দি। দুর্গত এলাকায় বানভাসি মানুষের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং সংগঠন রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ডায়রিয়া প্রতিরোধক ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করছে। দুর্গম এলাকায় অতিরিক্ত পানি ও ত্রাণ বহন করে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবহন না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।

নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরের লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। জেলার রহমতখালী খাল, ভুলুয়া খাল ও ওয়াপদা খাল হয়ে ব্যাপকভাবে পানি ঢুকছে। বাড়ছে নদী-খালের পানির উচ্চতা। গতকাল দুপুরেও পানি বাড়ছিল বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। সোমবারের তুলনায় গতকাল ৩০ হাজারের বেশি পরিবার পানির বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছে। তবে বন্যায় মৃত ব্যক্তির সংখ্যা চারজন বেড়ে ২৭ জন হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানান, এখন পর্যন্ত ১১ জেলার ৭৪ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত। জেলাগুলো হলো– ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট। এখনও ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে।
এদিকে গতকাল ফেনীর ছাগলনাইয়ায় বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি পশ্চিম ছাগলনাইয়ার দুটি গ্রামে ১১০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার ও পানি বিতরণ করেন। এ ছাড়া পৌর শহরে একটি মেডিকেল ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি। ফুলগাজীর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন এবং ত্রাণ বিতরণ করেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান।

বাংলাদেশ প্রতিদিন:

ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন লড়াই
আকস্মিক বন্যায় বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। অনেকেরই ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। সহায়সম্বল হারিয়ে অসহায় তুলনামূলক সচ্ছলরাও। বন্যার পানি নামতে শুরু করায় জেগে উঠছে ক্ষত। বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন অনেকে। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি তারা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, দেশে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৭ জন। গতকাল সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টিই আছে। ১১ জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন। পানিবন্দি পরিবার ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি। ৭৪ উপজেলা বন্যা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৫৪১টি। এদিকে কুমিল্লা প্রতিনিধি দুর্গত এলাকার বানভাসিদের বরাতে জানিয়েছেন- ‘যাদের বাড়ি সড়কের পাশে তারা একাধিকবার সহায়তা পাচ্ছেন। প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে কেউ যাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতি বন্যাদুর্গত প্রতিটি এলাকার চিত্র।’ অপরদিকে ফেনীসহ অন্যান্য প্রতিনিধিও দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে একই খবর জানিয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত বহু স্থানে ত্রাণ পৌঁছেনি বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।

সচিবালয়ে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বন্যায় মোট ২৭ জন মারা গেছে উল্লেখ করে বলেন, এর মধ্যে কুমিল্লায় ১০ জন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে পাঁচজন, খাগড়াছড়িতে একজন, নোয়াখালীতে পাঁচজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন এবং কক্সবাজারে তিনজন মারা গেছেন। এ সময় ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে চলমান ভয়াবহ বন্যার মধ্যেই ভারত যে ফারাক্কা ব্যারাজের ১০৯টি গেট খুলে দিয়েছে, তাতে এখন পর্যন্ত নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। ত্রাণ বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার সবাইকে সমন্বিত করে ত্রাণের কাজ করছে। যে স্থান থেকে পানি নেমে যাচ্ছে সেখানে যে সব জায়গায় ত্রাণ পরিবহন করা যায় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আরও দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে। এখন পর্যন্ত দূরবর্তী সব উপজেলায় ত্রাণ পৌঁছানো গেছে। উপজেলা স্তরে ত্রাণ মজুত করা গেছে এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা গেছে। ক্রমান্বয়ে এগুলো ধারাবাহিকভাবে হচ্ছে। ফারুক-ই-আজম বলেন, দুর্গম এলাকা এখন আর নেই। সব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছাতে পেরেছি। অধিকাংশ এলাকায় পানি নেমে যাচ্ছে। যেসব এলাকায় নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে সেগুলোর পানি দ্রুত নেমে যাবে বলে আশা করছি। ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারব। জনগণের স্বেচ্ছাসেবা ও মানুষের উদ্যম আমাদের শক্তি জোগাচ্ছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

হারুনের দালানের খনি

বাংলাদেশ ব্যাংক চালিয়েছেন সালমান ও এস আলম

আপডেট সময় ০৭:৪৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৪

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর

কালবেলা:

বাংলাদেশ ব্যাংক চালিয়েছেন সালমান ও এস আলম
দেশের আর্থিক খাতের মূল নিয়ন্ত্রক কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রা সরবরাহ, মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বৈদেশিক মুদ্রার বাজার নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বও বাংলাদেশ ব্যাংকের। গত ১৫ বছর এই সংস্থাটিতে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ, নির্বাহী পরিচালকদের পদায়ন থেকে শুরু করে সবরকম নীতিমালা প্রণয়ন প্রভাবশালী এ দুই ব্যবসায়ীর ইশারায়।

এ ক্ষেত্রে আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী ছিলেন তাদের সহায়ক। এক কথায় দেশের আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় মাফিয়াদের হাতে। আর সুযোগ বুঝে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা নামে-বেনামে বের করে নিয়েছেন তারা। এর বড় অংশই বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গা ঢাকা দিয়েছেন আলোচিত এই ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে নৌপথে পালাতে গিয়ে ধরা পড়েছেন সালমান এফ রহমান।

বিগত সরকারের সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা মূল্যায়ন করে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ডক্টর জাহিদ হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘গত কয়েক বছর দেশের ব্যাংক খাতে যে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক তার দায় এড়াতে পারে না। বিভিন্ন সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক সার্কুলার জারি করে অনিয়ম-দুর্নীতির বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। এটা খুবই দুঃখজনক। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি চেষ্টা করত হয়তো অনেক অনিয়ম ঠেকাতে পারত। আবার অনেক ক্ষেত্রেই হয়তো রাজনৈতিক প্রভাব বা হস্তক্ষেপের কারণে অনিয়ম ঠেকাতে ব্যর্থ হতো। তার পরও বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা অনিয়ম ঠেকাতে চেয়েছিলেন কি না—সেটা গুরুত্বপূর্ণ।’

জানা গেছে, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর শুরু হয় ব্যাংক দখল ও লুটপাটের ধারা। আওয়ামী লীগ শাসনামলের শুরুতে ২০০৯ সালের ১ মে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন ড. আতিউর রহমান। দায়িত্বের প্রথম মেয়াদে তেমন কোনো অভিযোগ না থাকলেও দ্বিতীয় মেয়াদে সমালোচনার মুখে পড়েন এই অর্থনীতিবিদ।

বিশেষ করে গণমাধ্যমে অতিপ্রচারের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণের কারণে বিতর্কিত হন তিনি। এসএমই ঋণ বিতরণের নামে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহর নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল কাজ বাদ দিয়ে তার এসব সফরে ব্যাংকগুলোকে গেট, পোস্টার, ফেস্টুন তৈরিতে বাধ্যও করেছেন তিনি। সে সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সার্ভারে ঢুকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার চুরি করে নেয় হ্যাকাররা। ভয়াবহ ওই ঘটনা সরকারের কাছ থেকে ২৪ দিন লুকিয়ে রাখেন গভর্নর। এর জেরে ওই বছরের ১৫ মার্চ গভর্নর আতিউর রহমান পদত্যাগ করেন।

দেশরুপান্তর:

হারুনের দালানের খনি
পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হারুন অর রশীদ ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার। এর আগে ছিলেন ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান। গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার ছিলেন। চাকরির জীবনে তাকে পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি। যেখানে হাত দিয়েছেন ‘সোনা’ ফলেছে। তার বিত্তীয় সাফল্য সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। সম্পদে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদকেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি। রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর, আশুলিয়া ও কক্সবাজারের টেকনাফে অঢেল সম্পদের মালিক তিনি। বেশ কয়েকটি হোটেল ও রিসোর্টের কর্ণধার তিনি।

আশুলিয়ার নন্দন পার্কেও তার শেয়ার আছে। কিশোরগঞ্জে বেনামে প্রেসিডেন্ট রিসোর্টের মালিক। সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের আশকারায় হয়ে ওঠেন বেপরোয়া। সিনিয়র অফিসারদের পাত্তা দিতেন না। উত্তরায় কয়েকটি স্থানে সরেজমিন গিয়ে তার সম্পদের বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেছে। কিছু সম্পদ আত্মীয়ের নামে কিনেছেন তিনি। কিছু সম্পদ দখল করার অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) সুপারিশে তার স্ত্রীর নামে থাকা ১ হাজার ৫৩২ কোটি টাকা আটকে গেছে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তার সম্পদের অনুসন্ধান শুরু করেছে, নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ব্যাংকের হিসাব শাখায়। ৫ আগস্টের পর থেকে হারুনের খোঁজ মিলছে না। তার বিরুদ্ধে ঢাকায় বেশ কয়েকটি হত্যা মামলা হয়েছে।

এদিকে গতকাল হারুন ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুদকে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই নিষেধাজ্ঞা দেন

সরেজমিন উত্তরা : গত রবিবার দুপুরে উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর রোডের ২৬/এফ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, এলাকাটি খুব নিরিবিলি। লেকের পাড়ে ১০ কাঠার ওপর নির্মিত আটতলা বাড়ির টপ ফ্লোরে সপরিবারে বাস করছিলেন ডিআইজি হারুন। বাড়িটির মালিক তিনি। চতুর্থতলা পর্যন্ত ভারতের একটি কোম্পানিকে ভাড়া দেওয়া। পঞ্চমতলায় থাকেন গাজীপুরের এক ব্যবসায়ী। ষষ্ঠতলায় থাকেন কাস্টমসের এক কর্মকর্তা। সপ্তমতলাটি ডুপ্লেক্স। বাসাটি ইউরোপের আদলে সাজানো। সরঞ্জামাদি সব বিদেশি।

নাম প্রকাশ না করে ভবনের একজন নিরাপত্তাকর্মী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘সর্বশেষ তিনি ৩ আগস্ট সকালে বাসা থেকে বের হন। ওইদিন তার স্ত্রী ও দুই সন্তান অন্য কোথাও চলে গেছেন। তারা আর আসেননি। হারুন অর রশীদ যখন বাসায় আসতেন তখন কঠোর নিরাপত্তার বলয় থাকত। বাসার আশপাশে সাদা পোশাকধারী পুলিশ থাকত। নায়ক-নায়িকারা নিয়মিত আসত।

তার বাসাটি মার্বেল পাথরের। সরকার পতনের দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে ৪০-৫০ জন যুবক বাড়ির সামনে এসে হারুন স্যারকে খুঁজতে থাকে। তারা জোর করে বাসায় ঢোকে। যুবকরা আমাদের মারধর করে। তারা সাততলায় গিয়ে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে টাকা-পয়সা লুট করে। তবে মালামাল ভাঙচুর করেনি। ৯ আগস্ট যুবকরা আবারও হামলা চালিয়ে লুটপাট করলেও ভাঙচুর করেনি। গত শুক্রবার আবার এলে আমরা প্রতিবাদ করি। তারা আমাদের মারধর করে। কয়েকজন ভাড়াটিয়াকেও মারধর করা হয়।’

প্রথম আলো:

ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতা
এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ১১ জেলায় চলমান বন্যায় মানুষের দুর্ভোগ ক্রমেই বাড়ছে। ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও কুমিল্লা—এই চার জেলার বানভাসি মানুষ বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এসব জেলায় পানি নামছে ধীরগতিতে।

বন্যাকবলিত মানুষের অভিযোগ, সড়কের পাশের বাড়িঘর ও আশ্রয়কেন্দ্রগুলোর মানুষজন একাধিকবার ত্রাণ পাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যাপ্ত ত্রাণ যাচ্ছে না। মূলত ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতার কারণে দুর্গতদের সবার কাছে সমানভাবে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। এ জন্য ত্রাণ বিতরণে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারের সহায়তা চেয়েছেন বন্যাকবলিত ব্যক্তিরা। আর স্থানীয় প্রশাসন বলছে, বন্যার্ত মানুষের বিপরীতে বরাদ্দকৃত ত্রাণের পরিমাণ কম।

লক্ষ্মীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি জেড এম ফারুকী ও সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সভাপতি কামাল হোসেনের মতে, সবাই উঁচু সড়ক ধরে ত্রাণ পৌঁছে দিচ্ছেন। যে যাঁর মতো করে ত্রাণ দিচ্ছেন। এতে প্রত্যন্ত অঞ্চলে বানভাসি মানুষের হাতে ত্রাণ পৌঁছায়নি। ত্রাণ বিতরণে প্রশাসনের সমন্বয়ের তাগিদ দেন তাঁরা।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে চলমান বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, বন্যায় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর, কক্সবাজারসহ ১১টি জেলার ৫৬ লাখের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুদ রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণের জন্য এসব জেলায় ৩ কোটি ৫২ লাখ নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ২০ হাজার ৬৫০ মেট্রিক টন চাল, ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার ও গোখাদ্যের জন্য ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কালের কন্ঠ:

বিএনপি চায় রোডম্যাপ তাড়া নেই জামায়াতের
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতির উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছেন, ওই ভাষণ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক মিত্র জামায়াতে ইসলামীর মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে দুই দলের মধ্যে মতের মিল থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে তাদের দুই ধরনের বক্তব্য উঠে এসেছে।

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ না থাকায় গত সোমবার বিএনপির পক্ষ থেকে এক ধরনের আক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনামুখর না হলেও তাদের প্রত্যাশা যে পূরণ হয়নি, নেতাদের বক্তব্যে সেটি স্পষ্ট।

অন্যদিকে জামায়াত প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। সরকারকে সময় দিতে চায় দলটি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে আন্দোলনে ছিল বিএনপি ও জামায়াত। এবারও ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দুই দলের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ ছিল।

তবে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর একটি স্পর্শকাতর ইস্যুতে দুই দলের মধ্যে এক ধরনের টানাপড়েন তৈরি হয়েছে।
আবার জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করতে চাইলেও জামায়াতের মধ্যে তাড়া দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে দুই দলের মধ্যে যোগাযোগ অনেকটা সীমিত হয়ে আসছে বলেও ধারণা দিয়েছেন অনেকে।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।

৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেওয়ার দুই সপ্তাহের বেশি সময় পর গত রবিবার জাতির উদ্দেশে প্রথম ভাষণ দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে বিচার বিভাগ, পুলিশ, প্রশাসন, নির্বাচন কমিশন, অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন খাতে সংস্কারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।
পরে সোমবার এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে হলে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। তবে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে রোডম্যাপ না থাকায় নির্বাচন কবে হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি বলে মনে করেন তিনি।

‘কখন নির্বাচন হবে সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, আমাদের সিদ্ধান্ত নয়’—জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এমন বক্তব্যের জবাবে সোমবার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, ‘এখনো একটা জিনিস ধোঁয়াশা, যেটা আমার পরিষ্কার হয়নি।

নয়াদিগন্ত:

অফশোর ব্যাংকিং থেকে এস আলম হাতিয়ে নিয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা
এস আলমের প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে নগদ এলসির মাধ্যমে পণ্য আনা হয়েছে। পণ্য বিক্রিও করা হয়েছে। কিন্তু এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের টাকা ফেরত না দিয়ে বিদেশে পাচার করেছে। বাধ্য হয়ে ইসলামী ব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনে এলসির দায় পরিশোধ করেছে। আর এজন্য এস আলমের নামে বাধ্যতামূলক ঋণ সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব ঋণের অর্থ সর্বোচ্চ এক বছরের মধ্যে ফেরত দেয়ার কথা। কিন্তু এক বছরের মধ্যে ফেরত দেয়া হয়নি। বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আরো এক বছরের সময় দেয়া হয়েছে। দুই বছরও পার হয়ে গেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা পরিপালন করা হয়নি। এভাবে পণ্য আমদানির দায় পরিশোধ না করায় এস আলমের নামে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব ঋণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনাও মানা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় রয়েছে, দেশের বাইরে থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত এনে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ দিতে পারবে। কিন্তু ইসলামী ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বিদেশী ৬টি ব্যাংক থেকে অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত এসেছে মাত্র ৮ কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় মাত্র ৯৬০ কোটি টাকা। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করেছে ১৭৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। এই টাকার ১৮ হাজার কোটি টাকাই নিয়েছে এস আলম।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আগের নির্দেশনায় বলা হয়েছিল অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে ঋণ বিতরণ করতে পারবে ২৫ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রার সমপরিমাণ। ওই হিসেবে ইসলামী ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ করতে পারে ১৫ কোটি ২৪ লাখ সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা, যা স্থানীয় মুদ্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। কিন্তু ইসলামী ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ দিয়েছে ২১ হাজার কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মানা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, পণ্য আমদানির সময় ইউপাস পদ্ধতিতে আমদানি করা হয়। পণ্য দেশে আসার পর বৈদেশিক মুদ্রায় তা পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু পণ্য দেশে আসার পর এস আলম এলসির দায় পরিশোধ না করেই ওই পণ্য বিক্রি করে দিয়েছে। অর্থ পরিশোধ না করায় এস আলমের নামে বাধ্যতামূলক ঋণ সৃষ্টি করেছে ইসলামী ব্যাংক। অপর দিকে বিদেশী ব্যাংকের মাধ্যমে পুনঃঅর্থায়নের মাধ্যমে এলসি খোলা হয়েছিল। যেমন, বিদেশ থেকে কোনো পণ্য আমদানি করা হলো। ওই পণ্যের বিপরীতে বিদেশী কোনো ব্যাংক তিন মাসের জন্য বৈদেশিক মুদ্রায় ঋণ দেয়া হলো।

তিন মাসের মধ্যে গ্রাহক তা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু এস আলম পণ্য দেশে এনে তা বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু বিদেশী ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি। আবার দেশীয় কোনো ব্যাংকের মাধ্যমে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলেছিল এস আলম। পণ্য দেশে আসার পর এস আলম তা বিক্রি করে দিয়েছে। কিন্তু ওই ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেনি। এস আলমের দেশীয় ব্যাংকের ঋণও বাজার থেকে ডলার কিনে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। এভাবে ইসলামী ব্যাংকের নামে ১৮ হাজার কোটি টাকা সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার দায় সৃষ্টি করা হয়েছে। আর এ কাজে সরাসরি সহযোগিতা করেছিল এস আলমের পিএস আকিজ উদ্দিন, মিফতা উদ্দিন ও হাবিবুর রহমান। বর্তমানে হাবিবুর রহমানকে সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকে অবৈধভাবে ডিএমডি পদে পদোন্নতি দিয়ে এসআইবিএল থেকে অর্থ বের করার হাতিয়ার বানানো হয়েছে।

যুগান্তর:

মানুষের প্রতি চরম ক্ষোভ ছিল শেখ হাসিনার
পতন নিয়ে রিমান্ডপ্রাপ্তদের মন্তব্য
ছাত্র-জনতার আন্দোলন কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমরা অনেক পরামর্শ দিয়েছিলাম। তিনি আমাদের কোনো কথাই শোনেননি। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কথা তাকে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছি। ছাত্র-জনতার দাবি মেনে নিতে বলেছি। উনি আমাদের কোনো কথায় কর্ণপাত করেননি।

 

তিনি পুলিশ, আনসার, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর ওপর নির্ভর করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন।’ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) হেফাজতে রিমান্ডে থাকা আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা এসব কথা বলেছেন। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কারণ জানতে চাইলে তারা ডিবি কর্মকর্তাদের বলেন, ‘জয়কালে ক্ষয় নাই মরণ কালে ওষুধ নাই’-এ প্রবাদটি শেখ হাসিনার জন্য সত্য প্রমাণিত হয়েছে। কারণ গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা যতগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সবই তার পক্ষে গিয়েছে। আর এবার ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে তিনি যত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সবই তার বিপক্ষে গিয়েছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন ডিবিকে বলেছেন, ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার কারণে এ দেশের মানুষের প্রতি চরম ক্ষোভ ছিল শেখ হাসিনার। তাই তার আচার-আচরণ এমন ছিল যে, দেশের মানুষ মরুক বা বাঁচুক এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। উনি চেয়েছিলেন শুধু ক্ষমতা। আজীবন ক্ষমতায় থাকার লোভ তাকে পেয়ে বসেছিল। এই মানসিকতাই তার জন্য কাল হয়েছে।

ডিবি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ১৪ দলের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের প্রথম ৫ বছর আমি মন্ত্রী ছিলাম। পরের ১০-১১ বছরে আমরা সরকারে ছিলাম না। তবে ১৪ দলে জোটের শরিক ছিলাম। জোটের শরিক হিসাবে আমরা শেখ হাসিনাকে অনেক পরামর্শ দিয়েছি। ছাত্রদের দাবি মেনে নিতে বলেছি। যেসব পুলিশ সদস্য ছাত্রদের ওপর গুলি চালিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। টাকা পাচারকারীদের ধরতে বলেছিলাম। উনি চীন সফরে যাওয়ার আগেও বেশকিছু পরামর্শ দিয়েছিলাম।

আমাদের কোনো পরামর্শই কানে নেননি। ইনু ডিবিকে বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সে কোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। অথচ কোটার বিরোধিতা করে। তাহলে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিল করে রাস্তায় নামুক।’ এভাবে তার কথা বলা ঠিক হয়নি। ইনু আরও বলেন, ছাত্র আন্দোলন দমনের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘তাদের দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট।’ এই মন্তব্যটি ছাত্র-জনতার ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল।

গুম-খুনসহ অনেক স্পর্শকাতর বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানকে। ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, আমি নিজ উদ্যোগে কিছুই করিনি। আমাকে যেভাবে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে আমি সেভাবেই কাজ করেছি। আমার কাছে নির্দেশনা আসত একেবারে শীর্ষ পর্যায় থেকে। কিছু কিছু বিষয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নির্দেশনা দিতেন।

নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ ক্ষেত্রে সব দোষ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মেয়ের জামাই তারেক সাঈদের। ওই সময় র‌্যাব-১১ এর কমান্ডিং অফিসার ছিলেন তারেক সাঈদ। মন্ত্রীর মেয়ের জামাই হওয়ার কারণে ওই সময় তার ওপর কেউ কথা বলতে পারতেন না। জিয়াউল আহসান বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে একসঙ্গে সাতজন নিখোঁজ হওয়ার পরপরই তাদের খুঁজে বের করতে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন তৎকালীন র‌্যাব মহাপরিচালক (ডিজি) মোখলেসুর রহমান। প্রথমদিকে র‌্যাব-১১-এর কয়েকজন আমার কাছে সাত খুনের বিষয়টি স্বীকার করেন। কিন্তু তারেক সাঈদ স্বীকার করেননি। জিয়াউল আহসান ডিবিকে জানান, আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানকে সুবিধা দিতেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশেই বহুল আলোচিত সাত খুনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।

রিমান্ডে ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে সাবেক তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জানান, ছাত্র আন্দোলন চলাকালে জিয়াউল আহসানের পরামর্শেই ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে জিয়াউল আহসান জানান, পলক নিজের ইচ্ছাতেই ইন্টারনেট বন্ধ করেছিলেন। আন্দোলনে পুলিশ এবং আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত অন্য বাহিনীর কিছু সদস্যের বাড়াবাড়ি ছিল বলে জানিয়েছেন জিয়া। তিনি বলেন, এত দ্রুত যে সরকারের পতন হয়ে যাবে তা শেখ হাসিনা বুঝতে পারেননি। আমি নিজেও বুঝতে পারিনি।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মাইনুল হাসান বলেন, ডিবি হেফাজতে যারা আছেন তারা একেকজন একেক ধরনের তথ্য দিচ্ছেন। তাদের দেওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা হচ্ছে। তিনি বলেন, যারা রিমান্ডে আছেন, হত্যার ক্ষেত্রে তাদের কেউ নির্দেশদাতা, কেউ পরামর্শদাতা, কেউ অর্থ বিনিয়োগকারী, কেউ ইন্ধনদাতা। আমরা মূলত হত্যা মামলায় তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। তবে প্রসঙ্গক্রমে আরও অনেক বিষয় চলে আসছে। ওইসব বিষয় আমাদের গোয়েন্দারা নোট করে রাখছেন। মানি লন্ডারিংসহ আর্থিক যেসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয় উঠে আসছে সেগুলো নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।

মানবজমিন:

গুলিতে হাত-পা হারিয়ে স্বপ্ন ভেঙেছে ওদের
চোখে-মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ আতিকুল ইসলামের। গুলিবিদ্ধ হয়ে কাতরাচ্ছেন হাসপাতালের বেডে। ৫ই আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেমে গুলিবিদ্ধ হন আতিকুল। বর্তমানে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) ক্যাজুয়ালিটি-২ এর জি-৩১ নম্বর বেডে ভর্তি রয়েছেন তিনি। জীবন বাঁচিয়ে রাখতে কাটতে হয়েছে তার ক্ষতিগ্রস্ত হাত। আতিকুল একটি ফ্যাশন হাউজের বিক্রয়কর্মী ছিলেন। স্বপ্ন ছিল বিদেশ যাওয়ার। কিন্তু হাত কাটার পর সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন কিনা তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। আবার কখনো কখনো দুশ্চিন্তার ছাপ সরিয়ে আন্দোলন সফল হওয়ায় আতিকুলের মুখে ফুটে উঠছে হাসি।

তিনি মানবজমিনকে বলেন, নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। এরপর একটি ফ্যাশন হাউজের বিক্রয়কর্মী ছিলাম। ৫ই আগস্ট উত্তরা আজমপুরে আন্দোলনে নেমে গুলিবিদ্ধ হই। বিকাল ৪টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। ডান হাতের কনুইয়ের উপরে গুলি লাগে। হাতের রক্তনালী ছিঁড়ে গেছে। গুলি হাতের ভেতর থেকে যায়। এর পর প্রথমে হৃদরোগ হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। সেখান থেকে পঙ্গু হাসপাতালে। তিনি বলেন, ৭ই আগস্ট রাতে আমার হাত কেটে ফেলতে হয়। চিকিৎসকরা বলেন, হাত বাঁচাতে হলে নিজে বাঁচবো না, একটা সময় হাতে ইনফেকশন হয়ে যাবে। আমার পিতা আলাল উদ্দিনের ফার্নিচারের দোকান আছে। পরিবারের সবাই আজমপুরে থাকে। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ। ছয় ভাইবোনের মধ্যে আমি সবার ছোট। তিনি বলেন, ছাত্ররা আমার ভাই, ভাইদের জন্য আন্দোলনে নেমেছিলাম। দেশের জন্য আমার শরীরের অঙ্গ দিয়েছি, এটা নিয়ে আমি গর্বিত। তবে শরীরের প্রতিটি অঙ্গই গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে তো দুশ্চিন্তা হয় মাঝে মাঝে। জীবনে অনেক স্বপ্ন ছিল, কিন্তু এখন কোনো স্বপ্ন দেখছি না। জীবনটা এখন আর আগের মতো নেই, নতুন করে স্বপ্ন সাজাতে হবে। আগে স্বপ্ন ছিল বিদেশ যাওয়ার সেটি তো আর হলো না।
শুধু আতিকুল নয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন অনেকে। গুলির আঘাতে ছিন্নভিন্ন হওয়ায় কাটতে হয়েছে অনেকের হাত-পা। কারও পায়ে আবার লাগানো হয়েছে রড। পঙ্গু হাসপাতালের তথ্য মতে, ছাত্র আন্দোলনে আহত ১১২ জন ভর্তি রয়েছেন। এরমধ্যে ৫২ জন শিক্ষার্থী। আহত ২১ জনের হাত-পা কাটা হয়েছে। এরমধ্যে ১৭ জনের পা কেটে ফেলা হয়েছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের। হাসপাতালটিতে এ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছেন ৭০০ জন। গতকাল সরজমিন দেখা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ছাত্র ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ চিকিৎসাধীন রয়েছেন। অনেকে পঙ্গু হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা নিয়ে দুশ্চিন্তায়। কারও রড লাগানো, কারও হাতে-পায়ে ব্যান্ডেজ। চিকিৎসক-নার্সরা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। স্বজনদেরও রয়েছে সারিয়ে তোলার প্রচেষ্টা।

বনিক বার্তা:

সারের চাহিদা প্রায় ৬৯ লাখ টন, দেশে মজুদ ১৮ লাখ টন

দেশে চলতি অর্থবছরে সারের মোট চাহিদা হতে পারে প্রায় ৬৯ লাখ টন। বাংলাদেশে সারের মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশই পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের সরকারি গুদামগুলোয় সারের মজুদ আছে প্রায় ১৮ লাখ টন। এ মজুদ দেশের আসন্ন প্রয়োজনও তাৎক্ষণিকভাবে মেটাতে পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন কৃষিবিদরা।

তাদের ভাষ্যমতে, দুই মাসের মধ্যে শুরু হচ্ছে বোরো ও রবি মৌসুম। দেশে সবচেয়ে বেশি খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী মৌসুমটিতে সারসহ চাষাবাদের প্রয়োজনীয় উপকরণের চাহিদাও থাকে সবচেয়ে বেশি। দেশে মোট রাসায়নিক সারের ৭০ শতাংশেরও বেশি ব্যবহৃত হয় শুধু বোরো ও রবি মৌসুমে। যদিও এবার গ্যাস সংকটে সারের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। আমদানিতে জটিলতা তৈরি করেছে ডলার সংকট। ফলে আসন্ন রবি ও বোরো মৌসুমে সারের প্রয়োজনীয় জোগান নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬৮ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ টন। চলতি অর্থবছরে এ চাহিদার পরিমাণ কিছুটা বেড়ে প্রায় ৬৯ লাখ টনে দাঁড়াতে পারে। যদিও এর বিপরীতে সরকারি গুদামগুলোয় সারের মজুদ আছে মাত্র ১৭ দশমিক ৭৪ লাখ টন। দেশে সারের মোট চাহিদার চার-পঞ্চমাংশ পূরণ হয় আমদানির মাধ্যমে। এবার বেসরকারি উদ্যোগে সাড়ে নয় লাখ টন সার আমদানির কথা আছে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে এখনো পর্যাপ্ত পরিমাণে সার আমদানি করা যায়নি। আবার দেশের পাঁচটি ইউরিয়া সার কারখানার মধ্যে তিনটির উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে গ্যাসের অভাবে।

উৎপাদন ও আমদানি নিয়ে সৃষ্ট সংকটে ইউরিয়াসহ প্রয়োজনীয় সার সরবরাহ নিয়ে একধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় সার আমদানি ও উৎপাদন উভয় দিকেই সংকট থাকায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, সাম্প্রতিক বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে বোরো উৎপাদনে আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু এলসি জটিলতায় সার আমদানি কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রেশনিং করে হলেও গ্যাস সরবরাহের মাধ্যমে সার কারখানাগুলোকে পুরোদমে উৎপাদনে নিয়ে আসা প্রয়োজন। একই সঙ্গে যাবতীয় প্রক্রিয়াগত জটিলতা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধান করে প্রয়োজনমতো আমদানির মাধ্যমে সারের পর্যাপ্ত জোগান নিশ্চিত করতে হবে।

যদিও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি আমন মৌসুমে সার নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। বোরো মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার সময় আছে এখনো। এর মধ্যেই সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. নূরুন্নাহার চৌধুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো নিয়মিত প্রক্রিয়ায় সার ব্যবস্থাপনার কাজ চলমান রয়েছে। আমদানির কাজও চলমান রয়েছে।’

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে ব্যবহৃত সারের মধ্যে প্রধান হচ্ছে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট (টিএসপি), ডাইঅ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) ও মিউরেট অব পটাশ (এমওপি)। চলতি অর্থবছরে এ চারটি সারের মোট চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৯ লাখ টন। আর সাড়ে নয় লাখ টন সার আসবে বেসরকারি উদ্যোগে। এছাড়া বোরনসহ অন্যান্য সার মিলিয়ে মোট চাহিদা দাঁড়াতে পারে প্রায় ৬৯ লাখ টনে। আর চাহিদার বিপরীতে এখন পর্যন্ত সরকারের কাছে মজুদ রয়েছে ১৭ দশমিক ৭৪ লাখ টন। এর মধ্যে ২৭ লাখ টন ইউরিয়া সারের চাহিদার বিপরীতে মজুদ রয়েছে ছয় লাখ টন। সাড়ে সাত লাখ টন টিএসপির বিপরীতে মজুদ রয়েছে ৩ দশমিক ২৫ লাখ টন। ১৫ লাখ টন ডিএসপির চাহিদা থাকলেও মজুদ রয়েছে ৪ দশমিক ১৪ লাখ টন। এমওপির চাহিদা নির্ধারণ হয়েছে সাড়ে নয় লাখ টন। আর মজুদ রয়েছে ৪ দশমিক ৩১ লাখ টন।

সমকাল:

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ফিরে নতুন জীবনযুদ্ধ
ফেনীর ছাগলনাইয়ার শিলুয়া গ্রামের বেলাল হোসেনের ঘরে গত বুধবার রাতে হু হু করে পানি ঢোকে। জীবন বাঁচাতে স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে আশ্রয় নেন স্থানীয় একটি স্কুল ভবনের দোতলায়। গতকাল মঙ্গলবার থেকে পানি নামতে থাকায় বাসায় ফিরে দেখেন, তাঁর ঘর লন্ডভন্ড। ঘরে থাকার মতো অবস্থা নেই। প্রিয় আঙিনা ছেড়ে তিনি আবার ছোটেন স্কুল ভবনে। বেলালের পুকুরের সব মাছও ভেসে গেছে। ছোট্ট মুরগির খামার ছিল, তাও বানের তোড়ে হাওয়া। এখন কী করবেন, দিশাহীন তিনি। বেলালের আশা, সরকার দ্রুত সহায়তার হাত বাড়াবে।

ছাগলনাইয়া শহরের মাইলের মাথার পূর্বপাড়ে একটি মহল্লায় সড়কের ধারে বাস করে ২০টি পরিবার। গত বৃহস্পতিবার পরিবারগুলো আশ্রয় নেয় বাশার সিটি আশ্রয়কেন্দ্রে। গতকাল ওই এলাকা থেকে পানি নেমে গেছে। ঘর থেকে পানি সরলেও সবকিছু তছনছ। গতকাল দেখা গেছে, দীর্ঘদিনের সাজানো ঘরের ধ্বংসযজ্ঞ দেখে অনেকেই কাঁদছেন। মহল্লার বাসিন্দা মোস্তাফা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমাদের সব শেষ। কীভাবে ঘর ঠিক করব? জীবনটা বড় কঠিন হয়ে গেল। মাথার ওপর ঋণের বোঝা। কীভাবে তা শোধ করব?’

ফেনী শহরের পানি নেমেছে দু’দিন আগে। ডুবে ছিল ছাগলনাইয়া, পরশুরাম ও ফুলগাজীর বিস্তীর্ণ জনপদ। এখনও পানিবন্দি ফেনীর অন্য উপজেলার কিছু এলাকা। কিছু এলাকায় পানি নেমে যাওয়ায় এক সপ্তাহ পর ভেসে উঠতে শুরু করেছে ডুবে থাকা বাড়িঘর। গতকাল অনেকে ঘরের অবস্থা দেখতে পথে নামেন। তবে নিজের ঘরের চেহারা দেখে সবার হৃদয়ে হয়েছে রক্তক্ষরণ। পানির স্রোতে নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় সবকিছু। তাই এখনও আশ্রয়কেন্দ্রেই কাটছে অনেকের দিন। যারা ছাড়ছেন, তারা ভাঙা ঘর মেরামতের কঠিন লড়াইয়ে নেমেছেন। এ লড়াই কবে শেষ হবে, তাও জানেন না কেউ। এ যেন এক অনিশ্চয়তাকে পেছনে ফেলে আরেক দুর্গম পথে পা বাড়ানো।

পানি সরে যাওয়ার পর জমাটবদ্ধ কাদা জানান দিচ্ছে বন্যার চিহ্ন। সড়কের কোথাও কোথাও বড় গর্ত। আশপাশের এলাকা ও সব উপজেলার সঙ্গে ফেনী জেলার সড়ক যোগাযোগ গতকাল কিছুটা চালু হলেও যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। ফেনী শহর ছাড়া উপজেলা এখনও বিদ্যুৎহীন; মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কেও এখনও ফেরেনি সবাই। এতে অনেকে নিতে পারছেন না স্বজনের খোঁজ।
কুমিল্লায় গোমতীতে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত আছে। ১৪ উপজেলায় এখনও ১১ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি। বন্যাকবলিত প্রত্যন্ত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি, শুকনা খাবার, পোশাক, জরুরি ওষুধের সংকট।

নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি কোথাও উন্নতি, আবার কোথাও অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে মাইজদীসহ সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি খারাপের দিকে। জেলার অনেক এলাকায় ঠিকমতো ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না বলে জানান বাসিন্দারা। সেনবাগ, কবিরহাট ও কোম্পানীগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চাটখিলে বন্যা কার্যত অপরিবর্তিত রয়েছে। বেগমগঞ্জে সোমবার আলাদা ঘটনায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। তারা হলেন নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির দুই লাইনম্যান জাকির হোসেন (২৮) ও মো. ইব্রাহিম (২৮) এবং বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের দশম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির আহমেদ (১৬)।

জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, এখনও বিভিন্ন উপজেলায় ২০ লাখ ৩৬ হাজার ৭০০ মানুষ পানিবন্দি। দুর্গত এলাকায় বানভাসি মানুষের জন্য সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা এবং সংগঠন রান্না করা খাবার, শুকনো খাবার, বিশুদ্ধ পানি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, ডায়রিয়া প্রতিরোধক ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করছে। দুর্গম এলাকায় অতিরিক্ত পানি ও ত্রাণ বহন করে নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবহন না থাকায় সমস্যা হচ্ছে।

নোয়াখালীর বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরের লোকালয়ে ঢুকে পড়ায় পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। জেলার রহমতখালী খাল, ভুলুয়া খাল ও ওয়াপদা খাল হয়ে ব্যাপকভাবে পানি ঢুকছে। বাড়ছে নদী-খালের পানির উচ্চতা। গতকাল দুপুরেও পানি বাড়ছিল বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত থাকায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা কমে আসছে। সোমবারের তুলনায় গতকাল ৩০ হাজারের বেশি পরিবার পানির বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়েছে। তবে বন্যায় মৃত ব্যক্তির সংখ্যা চারজন বেড়ে ২৭ জন হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা জানান, এখন পর্যন্ত ১১ জেলার ৭৪ উপজেলা বন্যায় প্লাবিত। জেলাগুলো হলো– ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লক্ষ্মীপুর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেট। এখনও ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে।
এদিকে গতকাল ফেনীর ছাগলনাইয়ায় বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি পশ্চিম ছাগলনাইয়ার দুটি গ্রামে ১১০ পরিবারের মধ্যে শুকনো খাবার ও পানি বিতরণ করেন। এ ছাড়া পৌর শহরে একটি মেডিকেল ক্যাম্প পরিদর্শন করেন তিনি। ফুলগাজীর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন এবং ত্রাণ বিতরণ করেন নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান।

বাংলাদেশ প্রতিদিন:

ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন লড়াই
আকস্মিক বন্যায় বিপর্যয়কর অবস্থায় পড়েছে বিপুলসংখ্যক মানুষ। অনেকেরই ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। সহায়সম্বল হারিয়ে অসহায় তুলনামূলক সচ্ছলরাও। বন্যার পানি নামতে শুরু করায় জেগে উঠছে ক্ষত। বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন অনেকে। কিন্তু ঘুরে দাঁড়ানোর কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি তারা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেছেন, দেশে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২৭ জন। গতকাল সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। ত্রাণ উপদেষ্টা বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টিই আছে। ১১ জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৩৭৫ জন। পানিবন্দি পরিবার ১২ লাখ ৭ হাজার ৪২৯টি। ৭৪ উপজেলা বন্যা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন/পৌরসভা ৫৪১টি। এদিকে কুমিল্লা প্রতিনিধি দুর্গত এলাকার বানভাসিদের বরাতে জানিয়েছেন- ‘যাদের বাড়ি সড়কের পাশে তারা একাধিকবার সহায়তা পাচ্ছেন। প্রত্যন্ত এলাকায় ত্রাণ নিয়ে কেউ যাচ্ছেন না। এমন পরিস্থিতি বন্যাদুর্গত প্রতিটি এলাকার চিত্র।’ অপরদিকে ফেনীসহ অন্যান্য প্রতিনিধিও দুর্গতদের সঙ্গে কথা বলে একই খবর জানিয়েছেন। গতকাল পর্যন্ত বহু স্থানে ত্রাণ পৌঁছেনি বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।

সচিবালয়ে উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বন্যায় মোট ২৭ জন মারা গেছে উল্লেখ করে বলেন, এর মধ্যে কুমিল্লায় ১০ জন, ফেনীতে একজন, চট্টগ্রামে পাঁচজন, খাগড়াছড়িতে একজন, নোয়াখালীতে পাঁচজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, লক্ষ্মীপুরে একজন এবং কক্সবাজারে তিনজন মারা গেছেন। এ সময় ফারাক্কা ব্যারাজ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশে চলমান ভয়াবহ বন্যার মধ্যেই ভারত যে ফারাক্কা ব্যারাজের ১০৯টি গেট খুলে দিয়েছে, তাতে এখন পর্যন্ত নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হয়নি। ত্রাণ বিতরণের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার সবাইকে সমন্বিত করে ত্রাণের কাজ করছে। যে স্থান থেকে পানি নেমে যাচ্ছে সেখানে যে সব জায়গায় ত্রাণ পরিবহন করা যায় সেই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আরও দুর্গম এলাকায় সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনী হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে। এখন পর্যন্ত দূরবর্তী সব উপজেলায় ত্রাণ পৌঁছানো গেছে। উপজেলা স্তরে ত্রাণ মজুত করা গেছে এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা গেছে। ক্রমান্বয়ে এগুলো ধারাবাহিকভাবে হচ্ছে। ফারুক-ই-আজম বলেন, দুর্গম এলাকা এখন আর নেই। সব জায়গায় ত্রাণ পৌঁছাতে পেরেছি। অধিকাংশ এলাকায় পানি নেমে যাচ্ছে। যেসব এলাকায় নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে সেগুলোর পানি দ্রুত নেমে যাবে বলে আশা করছি। ত্রাণ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারব। জনগণের স্বেচ্ছাসেবা ও মানুষের উদ্যম আমাদের শক্তি জোগাচ্ছে।