ঢাকা ০৪:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বন্যায় ২৩ প্রাণহানি

এখনও স্বজনের খোঁজে মানুষ

  • লিমন হোসেন
  • আপডেট সময় ০৭:৪৯:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪
  • 42

আজকে প্রত্রিকাগুলো

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর:

সমকাল:

এখনও স্বজনের খোঁজে মানুষ
ফেনী পলিটেকনিক কলেজ থেকে হাঁটুপানি মাড়িয়ে আধা কিলোমিটার সামনে গেলেই কোমরপানি। সেখান থেকে ছাগলনাইয়া ১১ কিলোমিটার দূরে। ওই সড়কে ধীরে ধীরে সামনে পানি ডিঙিয়ে এগোচ্ছেন আম্বিয়া খাতুন রত্না। কিছুদূর হাঁটতেই হঠাৎ বুকপানি। এর পর থমকে দাঁড়ান তিনি। অথৈ পানির দিকে তাকিয়ে আছেন দীর্ঘক্ষণ। হঠাৎ কেঁদে উঠলেন। বন্যায় বিপন্ন স্বজনের খোঁজে আসা রত্না থাকেন ফেনী সদর উপেজলার বিজয়সিং এলাকায় স্বামীর বাড়িতে। তাঁর বাবার বাড়ি ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর ইউনিয়নের পূর্বশিলুয়া গ্রামে। সেখানে তাঁর ভাইবোনসহ পরিবারের ২২ সদস্যের সঙ্গে এক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ নেই। প্রতিবার ফোন করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাচ্ছেন। তাই অজানা এক ভয় চেপে ধরেছে রত্নাকে। মিনিটে মিনিটে ফোন দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবারই হচ্ছেন হতাশ। দু’দিন ধরে ছাগলনাইয়া প্রবেশমুখের সড়কে এসে বাবার বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে পানির ভয়ে প্রতিবারই ফিরে যাচ্ছেন। চিন্তিত রত্নার অসহায় চোখ জোড়া বলে দেয়, ভাইবোনের সঙ্গে কথা বলার জন্য কতটা উদ্‌গ্রীব। মরে গেছে, নাকি বেঁচে আছে– তাও জানেন না।

রত্নার মতো এমন শত শত স্বজন গতকাল সোমবার ফেনী পলিটেকনিক কলেজের সামনের সড়কে ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফেনী শহরে পানি কমে বিদ্যুৎ-মোবাইল নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হলেও ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া এখনও বিচ্ছিন্ন। কূলকিনারাহীন পানিতে ভাসছে এ তিন উপজেলা। ইঞ্জিনচালিত ট্রলার সংকটের কারণে সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না। সামান্য কিছু ট্রলারে প্রতিদিন কিছু মানুষকে উদ্ধার করা হচ্ছে। তবে পানিবন্দি দুর্বিষহ জীবন থেকে ফেরার চেয়ে নিখোঁজের সংখ্যাই বেশি। যারা ফিরছেন তারা বলছেন, লাখ লাখ মানুষকে ভয়াবহ বিপদ থেকে উদ্ধার করা জরুরি। পানিবন্দি জীবন থেকে ফিরে আসা কেউ কেউ লাশ ভাসতে দেখেছেন; আবার কেউ দেখেছেন মানুষের ক্ষুধার কষ্ট। শিশুর আহাজারির কথা শোনাতে শোনাতে শহরে ফিরে আসা অনেকের চোখ ভিজে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আপনজন হারানোর শঙ্কায় সময় গুনছেন দূরে থাকা মানুষ। জীবিকার তাগিদে নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্য স্থানে থাকা মানুষ ভিড় করছেন স্বজনের খোঁজে। আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছেন প্রতিটি ক্ষণ। বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বন্যার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনী সদর উপজেলা থেকে শুরু করে ছয় উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি। খাবার আর পানি নিয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বানভাসিদের সহায়তায় ছুটে যাচ্ছে মানুষ। ত্রাণ হিসেবে যে সুপেয় পানি জেলায় পৌঁছাচ্ছে, তাতে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। গতকাল ফেনীমুখী ত্রাণের গাড়ির স্রোত দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার অংশে ৮০ কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। এতে অন্যান্য গাড়ির সঙ্গে আটকে ছিল ত্রাণবাহী গাড়িও।

এদিকে ফেনী শহরে পানি কমে এলেও পাশের জেলা নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। হু হু করে বাড়ছে পানি। গতকাল বিভিন্ন এলাকায় পানির উচ্চতা বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা ও বৃষ্টির পানির চাপে গতকাল ধসে পড়েছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর স্লুইসগেট (রেগুলেটর)। পরে সেটি পুরোপুরি ধসে ছোট ফেনী নদীতে বিলীন হয়ে যায়। নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই বন্যার পানি বেড়েছে। এসব উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণই এখন পর্যন্ত পৌঁছেনি। ফলে এলাকার বন্যার্ত মানুষ সীমাহীন কষ্টে দিন যাপন করছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে এক সপ্তাহ ধরে যে ভয়াবহ বন্যা চলছে, তাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এখন ২৩। আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪-এ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বলেন, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তিন হাজার ৮৩৪ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ জন এবং ২৮ হাজার ৯০৭টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে ৬৪৫টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।

বনিক বার্তা:

জ্বালানি তেলের দাম কবে কমাবে অন্তর্বর্তী সরকার?
বিপিসির প্রক্ষেপণ ছিল ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১২২ ডলার এখন গড় দাম ৮০ ডলারের আশপাশে
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি গড় মূল্য প্রাক্কলন করেছিল প্রায় ১২২ ডলার। যদিও বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যটির গড় মূল্য এখন ৮০ ডলারের আশপাশে। সামনে তা আরো কমার পূর্বাভাস রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে নিম্নমুখী থাকলেও দেশের বাজারে এখনো দাম কমানো হয়নি জ্বালানি তেলের। উল্টো বিপিসির কর্মকর্তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে এ দর পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে লোকসানে পড়বে সংস্থাটি।

এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বিপিসির প্রাক্কলনের চেয়ে অনেক কম। ফলে পণ্যটি আমদানিতে বিপিসির খরচও অনেক কম। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিপিসি ভোক্তার কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহের পরিবর্তে মুনাফায় মনোযোগ দিচ্ছে বেশি। তাদের লাভ-লোকসানের প্রাক্কলন নিয়েও রয়েছে অস্বচ্ছতার অভিযোগ। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে বিগত সরকারের আমলের এ চর্চা থেকে বেরিয়ে জনসাধারণের জন্য সুলভে জ্বালানি তেল প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা।

গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) সংশোধিত বাজেটে বিপিসি জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি আমদানি মূল্য প্রাক্কলন

করেছিল ১২৮ ডলার ৩৪ সেন্ট। যদিও অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত হিসাবে দেখা গেছে, ব্যারেলপ্রতি আমদানিতে সংস্থাটির খরচ পড়েছে গড়ে ১০৩ ডলারের কিছু বেশি। এ সময় জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসি নিট মুনাফা করেছে ৩ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি মূল্য (সিঅ্যান্ডএফ) প্রাক্কলন করা হয়েছে ১২১ ডলার ৯১ সেন্ট। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির প্রধান দুই বাজার আদর্শ ব্রেন্ট ও ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) বর্তমানে কেনাবেচা হচ্ছে যথাক্রমে ৮১ ডলার ১৯ সেন্ট ও ৭৭ ডলার ১৫ সেন্টে। আর পরিশোধিত জ্বালানি তেলের (গ্যাস অয়েল) ব্যারেলপ্রতি দাম এখন ১১৬ ডলার। এ সময় সংস্থাটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ কমেছে আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৭ শতাংশের বেশি।

যদিও বিপিসির দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে এখন যে দামে জ্বালানি তেল বিক্রি হচ্ছে, তাতে সংস্থাটি ব্রেক ইভেনেও (যেখানে মোট ব্যয় ও আয় সমান) নেই। দাম এ পর্যায়ে স্থিতিশীল থাকলে আগামী অর্থবছরে বিপিসির কিছুটা লোকসানও হতে পারে।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের (পরিশোধিত ও অপরিশোধিত) বর্তমানে যে দাম রয়েছে, এই দাম স্থিতিশীল থাকলে ফর্মুলা অনুযায়ী বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রি করলে তাতে অর্থবছর শেষে বিপিসির কিছুটা লোকসান হবে।’ জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপাতত যে দাম রয়েছে, সেটি বিদ্যমান থাকবে। বিপিসির কাছ থেকে জ্বালানি বিভাগ একটা মতামত নেয়। নিয়ম অনুযায়ী আমরা সেটি দিয়ে যাব। এরপর সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটিই হবে।’

যদিও বিপিসির এ দাবির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রতি অর্থবছর বিপুল পরিমাণ লোকসানের কথা বিপিসির বাজেটে উল্লেখ করা হয়। এসব হিসাবের ভেতর বিভিন্ন খরচ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে যোগ করা হলে তা ভোক্তার ওপর গিয়ে পড়ে। বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও ৩ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বিপিসি। অথচ ওই অর্থবছরে লোকসানের প্রাক্কলন ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এর আগে জ্বালানি তেল বিক্রিতে বিপিসির ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসানের প্রাক্কলন ছিল ৭ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। অথচ অর্থবছর শেষে হিসাবে দেখা গেছে বিপিসি ৪ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা লাভ করেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৫ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা লোকসানের প্রাক্কলন করেছে বিপিসি। যদিও বাস্তব চিত্র তাদের এ প্রাক্কলনের সম্পূর্ণ বিপরীত।

বিপিসির জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় মোট ১০ ধরনের খরচ ধরা হয়। রিফাইনারি থেকে ভোক্তা পর্যায়ে এ তেল পৌঁছতে বিপিসির উন্নয়ন তহবিল, বিপণন প্রতিষ্ঠানকারীর মার্জিন, পরিবহন তহবিল, ডিলার এজেন্ট কমিশনসহ নানা খরচ রয়েছে। এর সঙ্গে বড় আকারের মুনাফা মার্জিনও যোগ করে বিপিসি। সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স ও আনুষঙ্গিক ব্যয় জ্বালানি তেলের ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেয়ার পরও এ মুনাফার মার্জিন কতটা যুক্তিসংগত ও নৈতিক সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জ্বালানিসংশ্লিষ্টরা।

মানবজমিন:

কী ঘটেছিল সচিবালয়ে
রোববার দিনভর দেশবাসীর চোখ ছিল সচিবালয়ে। আনসার সদস্যদের অবস্থানে অবরুদ্ধ ছিল প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয়। অনেকটা দাবি মেনে নেয়ার পরও রাত অবধি গড়ায় আনসারদের কর্মসূচি। তারা অবস্থান না ছাড়ায় তৈরি হয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সচিবালয়ের শ’ শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে আটকা পড়েন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। আনসারের মহাপরিচালকও অবরুদ্ধ ছিলেন সচিবালয়ে। রাতে শিক্ষার্থীদের শক্ত প্রতিরোধে আনসাররা সচিবালয় এলাকা ছাড়েন। তার আগে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আনসারদের পিটুনির শিকার হন প্রতিবাদী ছাত্র-জনতা। প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে যাওয়া আনসারদের কেউ কেউ জীবন রক্ষায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সচিবালয়ে।

আবার পালানোর পথে কেউ কেউ আটক হন পুলিশের হাতে। এমন ৩৯০ জন আনসার সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মামলা হয়েছে ৪০০০ জনের বিরুদ্ধে।
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে রোববার সকাল ৭টার পর থেকেই সচিবালয়ের চারপাশ ঘিরে অবস্থান নেন কয়েক হাজার আনসার সদস্য। জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় তারা অবস্থান নেন। নিজেদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া আনসার সদস্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন। তারা সবাই বাহিনীর পোশাক পরে নিজেদের আইডি কার্ড ঝুলিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দেন। অনেকে ব্যাগে করে অতিরিক্ত কাপড়, খাবারও নিয়ে এসেছিলেন।
আনসারদের অবস্থানের মধ্যেই সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা-সচিব এবং কর্মকর্তা কর্মচারীরা ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় সচিবালয়ের ৫টি প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ জোরদার করেন আনসার সদস্যরা।

দুপুরের পর সচিবালয়ে কাউকে প্রবেশ করতে বা বের হতে দিচ্ছিলেন না আনসার সদস্যরা। দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর দপ্তরে আনসারের ডিজিসহ আনসার প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। বৈঠকে ৩ মাসের রেস্ট প্রথা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া দাবি দাওয়া পূরণের বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে অংশ নেয়া আনসার সদস্যরা গণমাধ্যমের সামনে দাবি পূরণের আশ্বাস পাওয়ার কথা জানান। একই সঙ্গে কর্মসূচি প্রত্যাহার করার কথা বলেন। কিন্তু বাইরে থাকা আনসার সদস্যরা জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনঢ় থাকেন। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। আনসার সদস্যরা অবস্থানে অনঢ়। রাত ৮টায় পরিস্থিতি নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ৫ উপদেষ্টাকে নিয়ে ফের বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

নয়াদিগন্ত:

ফারাক্কার ১০৯ গেট খুলে দিলো ভারত
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মাঝে মরণফাঁদ ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দিয়েছে ভারত। প্রবল বৃষ্টির কারণে দেশটির বিহার ও ঝাড়খন্ড রাজ্যে বন্যা ও পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই বাঁধ খুলে দেয়া হয় বলে জানানো হয়েছে। এর ফলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুর্শিদাবাদসহ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ দিকে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্টি হওয়া বন্যা পরিস্থিতি ও ভূমিধসের বিষয়ে বাংলাদেশকে আগেই তথ্য জানিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে ভারত। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্প সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ বলছে, বিহার ও ঝাড়খন্ডে বিপুল বৃষ্টি হওয়ায় ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে পানির চাপ সামলাতে ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে এক দিনেই বাংলাদেশে ১১ লাখ কিউসেক পানি ঢুকবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পে যে পরিমাণ পানি আসছে, সেই পরিমাণ পানি ছাড়া হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ এলাকায় পানি বিপদসীমার ৭৭ দশমিক ৩৪ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধে পানির অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। পানির চাপ বাড়ায় তা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা বলেছেন, পানি না ছাড়া হলে ফারাক্কা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেশটির এই সংবাদমাধ্যম বলেছে, ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় দৈনন্দিন পানি ছাড়ার পরিমাণ বাড়ছে। এ দিকে এই পানি ছাড়ার ফলে গঙ্গা থেকে পানি ঢুকছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। বিহার, ঝাড়খন্ডসহ গঙ্গার উচ্চ অববাহিকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ায় গঙ্গায় হু হু করে পানি বাড়ছে। ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিবেশী দুই রাজ্য বিহার, ঝাড়খন্ডে বন্যা দেখা দেয়ায় ফারাক্কা বাঁধে পানির চাপ রয়েছে। তবে নেপালের পাহাড় থেকে এখনো কোনো পানি নেমে না আসায় কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ এলাকায় বিপদসীমা থেকে ৭৭ দশমিক ৩৪ মিটার ওপরে পানি প্রবাহিত হওয়ায় শনিবার গেট খুলতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফিডার ক্যানেলে পানির পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধের অবস্থান। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ১৯৬২ সালে এই বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই বাঁধের কাজ শেষ হয় ১৯৭০ সালে। ফারাক্কা বাঁধের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। পদ্মায় প্রতি তিন ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে পানি। গতকাল সোমবার ফারাক্কার ১০৯টি গেট খোলার কথা বলা হলেও গত রোববার থেকেই পানি বাড়ছে বলে পাউবোর উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগ জানিয়েছে। এ দিকে রাজশাহীর বড়কুঠি পয়েন্টে এখন পদ্মার পানি বিপদসীমার ১ দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ খুলে দেয়ায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে উত্তরাঞ্চলে।

পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাংখা এলাকা দিয়ে ভারতের গঙ্গা নদী পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই পয়েন্টে সোমবার ভোর ৬টা ও সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ২০ দশমিক ৪৮ মিটার। বেলা ৩টায় তা হয় ২০ দশমিক ৫০ মিটার। পাংশায় পদ্মার পানির বিপদসীমা ২২ দশমিক ৫ মিটার। পাংশার ভাটিতে রাজশাহী নগরীর বড়কুটি পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। সোমবার ভোর ৬টায় এখানে পানির উচ্চতা ১৬ দশমিক ২৭ মিটার। সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা আরো এক সেন্টিমিটার বেশি পাওয়া যায়। বেলা ৩টায় পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৬ দশমিক ৩০ মিটার।

বড়কুঠির আরো ভাটিতে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় পদ্মার পানির বিপদসীমা ১৬ দশমিক ৯২ মিটার। সোমবার সকাল ৬টায় এখানে পানির উচ্চতা ১৫ দশমিক ৫ মিটার এবং সকাল ৯টা ও বেলা ৩টায় পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ১৫ দশমিক ৬ মিটার। এখন রাজশাহীর বড়কুঠি পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমার ১ দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, সাধারণত ১০ দিনের জন্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে পদ্মাসহ অন্যান্য নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে না। তবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না পানি বাড়ার কারণে। রোববার দুপুর থেকেই পানি বাড়ছে। আরো দু-তিন দিন পার হলে বোঝা যাবে প্রকৃত অবস্থা।

প্রথম আলো:

জ্বালানি তেলের মূল্য বকেয়া পড়েছে ৪৮ কোটি ডলার

জ্বালানি তেলের বিল পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। চাইলেও ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। বকেয়া বাড়তে থাকায় তেলের জাহাজ পাঠাতে চাইছে না কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ের পর আসছে কোনো কোনো জাহাজ। বিল পরিশোধে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর চাপ বাড়ছে বিপিসির ওপর।

বিপিসি সূত্র বলছে, ২২ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৪৭ কোটি ৬১ লাখ ডলার বকেয়া জমেছে বিপিসির। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বকেয়া সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি ভিটলের, তারা পাবে ১৮ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। সোনালী ব্যাংক থেকে তাদের একটি বিল পরিশোধে ইতিমধ্যে ১১০ দিন বিলম্ব হয়েছে। ৯৪ দিন, ৮৫ দিন বিলম্ব হওয়া বিলও আছে কোনো কোনো সংস্থার।

বিপিসির দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তি অনুসারে বিলম্বের জন্য বছরে এখন সাড়ে ৬ শতাংশ

যুগান্তর:

কবির বিন আনোয়ার মদ পান করতেন অফিসে /নিজের প্রমোদতরিতে সময় কাটাতেন বসেই
নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা দাবি করতেন কবির বিন আনোয়ার। অথচ প্রাচ্যের এই অক্সফোর্ডখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়াই করেননি। হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ও ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। দীর্ঘ চাকরি জীবনে ছিলেন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একচ্ছত্র অধিপতি হিসাবে পরিচিতি পেলেও দাপট ছিল সব মন্ত্রণালয়েই। যা বলতেন তাই আদায় করে নিতেন।

মায়ের নামে ‘ইসাবেলা ফাউন্ডেশন’ খুলে নীরব চাঁদাবাজি আর ঘুস বাণিজ্যের হাট বসিয়েছিলেন। বিদেশি সাহায্যের নামে শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে এই ফাউন্ডেশনের নামে। দীর্ঘদিন পর দুর্নীতি দমন কমিশন তার ও পরিবারের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ-পদবি না থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্য একটি দপ্তরে কর্মরত এক নারীকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে পোস্টিং দিয়ে নিজের কাছে রাখেন। ওই নারী পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সময়ে একজন ক্যাডার কর্মকর্তার স্ত্রী ছিলেন। লায়লা সানজিদা নামের ওই নারীকে ‘অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার’ পদ দিয়ে বছরের পর বছর নিজের দপ্তরে সংযুক্ত রাখেন, যা ছিল নজিরবিহীন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ‘তূর্য’ নামে একটি প্রমোদতরি নির্মাণ করেন কবির বিন আনোয়ার। সময় পেলেই সব আয়োজন নিয়ে রাজা-বাদশাহর মতো এই প্রমোদতরিতে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন অবলীয়ায়। আর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রী থাকলেও কাউকেই তিনি পাত্তা দিতেন না। তার পিতা আনোয়ার হোসেন ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সভাপতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। পিতার পরিচয়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন ছিলেন কবির বিন আনোয়ার।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যুগ্মসচিব হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক থাকাবস্থায় তার ক্ষমতা প্রকট হতে থাকে। ওই বছরের ৭ এপ্রিল অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে ওইদিনই তাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক করে পদায়ন করা হয়। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত টানা ৬ বছরেরও বেশি সময় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।

ওই বছরের ২২ মার্চ অতিরিক্ত সচিব থাকাবস্থায়ই কবির বিন আনোয়ারকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) করা হয়। এটা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই দাপটেই তিনি ড্যামকেয়ার অবস্থায় ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রীকেও তিনি তোয়াক্কা করতেন না। একা যা সিদ্ধান্ত নিতেন তাই বাস্তবায়ন হতো এখানে।

কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী চাকরি হারানোর ভয়ে কথা বলতে পারতেন না। এভাবে নিজের ইচ্ছামতো প্রকল্প ভাগিয়েছেন সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে। আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে যে কজন আমলা থেকে শত শত কোটি টাকা ভাগিয়ে নিয়েছেন তার মধ্যে কবির বিন আনোয়ার অন্যতম।

কামারখন্দ গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ক্ষমতার দাপটে গ্রামের বাড়ির মানুষের যে ক্ষতি করেছেন তিনি তা কোনো শত্রুও করবে না। কী ক্ষতি করেছে জানতে চাইলে ইমাম হোসেন নামে একজন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী ড্রেজিংয়ের নামে শত শত বিঘা জমিতে নদীর পানি মিশ্রিত বালি ফেলে শেষ করে দিয়েছেন। তার দাপটেই ঠিকাদাররা এই কাজ করেছে। এলাকাবাসী বাধা দিলে পুলিশ ডেকে শত শত মানুষকে এলাকাছাড়া করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। তার এই কাণ্ডে কয়েকশ বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে গেছে।’

সরকারি কর্মকর্তা হলেও তিনি সিরাজগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতেন। তার সিরাজগঞ্জে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে চলাচল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন নেতাকর্মীকে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাছে টানতেন। তাদের মাধ্যমে নানারকম অপরাজনীতি সংঘটিত করতেন। ক্ষমতায় থাকাবস্থায় সংঘর্ষ ও হানাহানির মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন এই আমলা।

বাংলাদেশ প্রতিদিন:

রূপগঞ্জে গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে আগুন
নিখোঁজ ১৭৬, উদ্ধার ১৪
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী এলাকায় সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর মালিকানাধীন গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে দ্বিতীয়বারের মতো আগুনের ঘটনা ঘটল। রবিবার (২৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফ্যাক্টরির ভিতরে থাকা ছয় তলা বিশিষ্ট ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটে। ২১ ঘণ্টা পর গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ফ্যাক্টরিতে থাকা মালামাল আনতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭৬ জন নিখোঁজ বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। স্বজনরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের কাছে নিখোঁজদের নাম-ঠিকানা দিয়েছেন। স্থানীয় সূত্র মতে, আগুন লাগা ৬ তলা ভবনের ভিতরে লুটপাট নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ সময় এক পক্ষ ভবন ত্যাগ করলে ভবনের প্রবেশ গেট বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে ভবনে আগুন লেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন গাজীর খাদুন এলাকার টায়ার ফ্যাক্টরি ও কর্ণগোপ এলাকার পাইপ ও ট্যাংক ফ্যাক্টরি আগুনে পুড়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীরের মালিকানাধীন রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার কারখানা ও কর্ণগোপ এলাকায় গাজী পাইপ এবং ট্যাংক কারখানা রয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ লোকজন রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার কারখানা ও কর্ণগোপ এলাকায় গাজী পাইপ এবং ট্যাংক কারখানায় ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে ওই দুটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে রূপগঞ্জের নবকিশোলয় হাইস্কুলের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোমান মিয়া হত্যা মামলার আসামি গোলাম দস্তগীর গাজীকে ঢাকার শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার এবং নারায়ণগঞ্জ আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করার পর আদালত ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর রবিবার সন্ধ্যার দিকে কয়েক শ’ লোক রূপসী গাজী টায়ার কারখানায় ঢুকে পড়ে। করা হয় ভাঙচুর। স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাধা উপেক্ষা করে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানোর একপর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারখানার ভিতরের ৬তলা ভবনে ঢুকে পড়ে কয়েক শ’ লোক। ওই ভবনে কেমিক্যাল ও টায়ার তৈরির কাঁচামাল ছিল। ভবনের ভিতরে লুটপাট নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে হাতাহাতি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি পক্ষ ভবন ত্যাগ করলে ভবনের প্রবেশ গেট বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে ভবনে আগুন লেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ৬০ থেকে ৮০ ফুট উঁচুতে উঠে যায় আগুনের লেলিহান শিখা। এ সময় ভবনের ভিতর আটকে পড়া অনেকেই ফোন করে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানায় বলে বেশ কয়েকজন স্বজন দাবি করেছেন। খবর পেয়ে ঢাকার ফুলবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিস, ডেমরা ফায়ার সার্ভিস, কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিস, আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিসসহ ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

কালের কন্ঠ:

আওয়ামী লীগ আমলে হাজার কোটি টাকার মালিক

আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে সোনা চোরাকারবারের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তাঁরা। চুরির সোনায় ভাগ্য বদলে এঁরা রীতিমতো মাফিয়া হয়ে ওঠেন। এঁদের একজন দিলীপ কুমার আগরওয়াল, যিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। আরেকজন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি এনামুল হক দোলন।

সোনা চোরাচালানের টাকায় নামে-বেনামে তাঁরা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। চোরাচালানের অর্থে এলাকায় গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। তাঁদের চোরাচালান ও বিলাসী জীবনযাপনের কথা স্থানীয় লোকজন জানলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় কেউ। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় দায়মুক্তি পেয়েছেন কেউ কেউ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈধ উপায়ে সোনা আমদানির সুযোগ থাকলেও অতিমুনাফার লোভে চোরাচালানের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন দোলন-দীলিপ। তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় আকাশ, স্থল ও সমুদ্র—তিন পথেই হয় সোনা চোরাচালান। হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারেও সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল এই চক্র। নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ি) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহীমও ছিলেন এই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য।

তাঁর মাধ্যমেই দোলন-দীলিপ সিন্ডিকেটকে সরাসরি মদদ দিতেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ শীর্ষস্থানীয় একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এই সিন্ডিকেট থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন। সম্পৃক্ততা ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তাব্যক্তিদেরও।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দিলীপ কুমার আগরওয়ালের আকাশচুম্বী উত্থানের নেপথ্যে আছে ভয়ংকর চোরাকারবার ও প্রতারণার গল্প। একসময়ের সামান্য ঠিকাদার দুই দশকের ব্যবধানে হয়ে উঠেছেন বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি)।

তাঁর পৈতৃক নিবাস চুয়াডাঙ্গায় সরেজমিনে অনুসন্ধানকালেও নানা অবিশ্বাস্য কাহিনি বেরিয়ে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও দিলীপের রাতারাতি বিত্তশালী বনে যাওয়ার ঘটনাকে রীতিমতো আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়া বলেই মনে করছে।
নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, কাগজে-কলমে দিলীপ কুমার আগরওয়ালের বার্ষিক আয় চার কোটি চার লাখ ৩৯ হাজার ৮৫৪ টাকা। তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় তিন কোটি ৫৭ লাখ ১২ হাজার ৩৮২ টাকা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সোনা ও নকল হীরা বিক্রি করে দিলীপ কুমারের বার্ষিক আয় আরো কয়েক গুণ, যা দিয়ে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।

৩০ নভেম্বর ২০২৩ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দিলীপ কুমারের নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ প্রায় ১৩ কোটি ছয় লাখ ৬৮ হাজার ৭০৪ টাকা রয়েছে। অস্থাবর সম্পদ রয়েছে মোট ১৯১ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৩৪ টাকার। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪৯ কোটি ৭৯ লাখ ২১ হাজার ৩১১ টাকার অস্থাবর সম্পদ। তাঁর স্ত্রীর কাছে নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ অন্যান্য বিনিয়োগ রয়েছে ২০ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার ২৩২ টাকা। তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৩৫ কোটি দুই লাখ ৬০ হাজার ৪৮২ টাকা। এ ছাড়া তাঁদের কাছে নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ অন্যান্য বিনিয়োগ রয়েছে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা।

তথ্য সূত্র বলছে, ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গায় স্থাবর সম্পদ রয়েছে দিলীপ কুমারের। কৃষিজমি রয়েছে পাঁচ একরের বেশি, যার মূল্য সাত কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ৮৭৪ টাকা। অকৃষি জমি রয়েছে এক একরের বেশি, যার মূল্য ৮০ লাখ ৩৫ হাজার ৮০০ টাকা। দালান রয়েছে ৯৪ হাজার ৮৪৯ বর্গফুট, যার মূল্য ৩০ কোটি ৪৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৮৮ টাকা। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ২,৫২৬ বর্গফুট, যার মূল্য ৭৫ লাখ সাত হাজার ৮০০ টাকা। স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ রয়েছে মোট ৩৯ কোটি ৪৯ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬২ টাকার। অভিযোগ রয়েছে, পাচার করা টাকায় ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় খুলেছেন একাধিক জুয়েলারি শোরুম।

কালবেলা:

পুলিশের সেই শিবলী নোমান হাজার কোটির মালিক
এস এম শিবলী নোমান। পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার। বরাবরই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে তাকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করেননি সেখানেও। দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বনে গেছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। গাজীপুর ১০০ বিঘা জমিতে মেসার্স এন এ এগ্রো, গোপালগঞ্জে ৪০০ বিঘা জমিতে সর্দার এগ্রো এবং রাজধানীর খিলক্ষেতে অটো হ্যাভেন নামে গাড়ির শোরুমের মালিক শিবলী নোমান। এ ছাড়া আছে ডুপ্লেক্সসহ একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট। তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকারও অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শিবলী নোমান গাজীপুর ও নিজ এলাকা গোপালগঞ্জে সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তুলেছেন। গোপালগঞ্জে ৪০০ বিঘা জমিতে সর্দার এগ্রো নামে একটি ফার্ম গড়ে তুলেছেন। এই ফার্মে কাজ করেন অর্ধ শতাধিক শ্রমিক। সেখানে ৫টি পুকুর আছে শিবলীর। শেওড়াবাড়ী এলাকায় অবস্থিত ফার্মের উত্তর পাশে প্রথম পুকুরের আয়তন ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ, দ্বিতীয়টির ৭১ দশমিক ১০ শতাংশ, তৃতীয়টির ৯৩ শতাংশ আর চতুর্থটির আয়তন ৬৬ শতাংশ । বিশালাকৃতির আরেকটি পুকুরের আয়তন ২ একর ৮৬ শতাংশ। এ ছাড়া ফার্মের দুপাশের জলাভূমিতে বিপুল পরিমাণ জায়গা কিনেছেন সাবেক এই অতিরিক্ত উপকমিশনার। এর মধ্যে উত্তর পাশে কেনা জলাভূমির আয়তন ৯ একর ৮৪ শতাংশ। আর দক্ষিণ পাশের আয়তন ১২ একর ৪০ শতাংশ ।

জানা গেছে, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার অবসরে যাওয়ার আগে অবৈধ আয়ের টাকা বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি গাজীপুর মহানগরের ২২৭/১ পাজুলিয়া অঞ্চলে ১০০ বিঘা জমি কিনে সে জমিতে মেসার্স এন এ এগ্রো নামে একটি ফার্ম গড়ে তুলেছেন। রাজধানীর খিলক্ষেতে অটো হ্যাভেন নামের গাড়ির শোরুমের মালিক শিবলী নোমান। বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি গাড়ির শোরুমটি শিবলী নোমান নিজেই দেখাশোনা করেন। তবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে। এ ছাড়া স্ত্রীর নামেও আছে অনেক সম্পদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলা নিয়ে বাণিজ্যে বেশ পটু ছিলেন শিবলী নোমান। টাকা দিলেই ছোট মামলাকে বড় করতে বিভিন্ন ধারা যুক্ত করে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করতেন। আবার টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে নাম কেটে দিতেন অনেকের। প্রভাব খাটিয়ে চাকরিতে নিয়োগের সুপারিশ করতেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকরি এবং পদোন্নতির ব্যবস্থা করা ছিল তার মূল কাজ। বিভিন্ন পদে পদোন্নতির জন্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নিতেন। এ ছাড়া কনস্টেবল, এসআই নিয়োগে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন তিনি।

অভিযোগ আছে, ক্ষমতার অপব্যবহার শত বছরের পুরোনো বলাকইড় আজাহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম বদলে নিজের মা-বাবার নাম দেন। বিষয়টি প্রচারের জন্য আশপাশের গ্রামের লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ান।

দেশ রুপান্তর:

স্বাস্থ্য ছিল স্বাচিপে বন্দি
আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া। তিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে প্রভাব খাটিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক পদ বাগিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই পদে আসীন হওয়ার পর নিয়োগ-বাণিজ্য, যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হন। তার অনিয়ম, দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে গেলে সে খবর একসময় স্বাস্থ্য খাত পেরিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পৌঁছায়। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলে। বাধ্য হয়ে সরকার তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

স্বাচিপের আরেক প্রভাবশালী নেতা অধ্যাপক ডা. সভাপতি জামাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে গত ২৭ জুন রাতে রাতে দলবল নিয়ে রাজধানী উত্তরার শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ দখল করতে যান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধার মুখে ব্যর্থ হন। শুধু এই দুজন চিকিৎসক নেতাই নন, স্বাচিপের এমন আরও অনেক নেতাই ছিলেন, যারা নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিলেন স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামল ২০০৯ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে দিনে দিনে স্বাস্থ্য খাতের সব প্রতিষ্ঠানে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান করেন স্বাচিপ নেতারা। গেল ১৫ বছরের বেশি সময় স্বাস্থ্য খাত নিয়ন্ত্রণ করেছেন তারা। স্বাস্থ্য খাতের সরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, কেনাকাটা, বিদেশ সফর, প্রশিক্ষণসহ সব ক্ষেত্রেই স্বাচিপের হস্তক্ষেপ ছিল অতিমাত্রায়। এমনকি তাদের থাবা বিস্তৃত ছিল বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতেও। সরকার স্বাস্থ্য খাত পরিচালনা করলেও স্বাচিপ নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ছিল দুরূহ। এক কথায় স্বাস্থ্য খাত ছিল স্বাচিপ নেতাদের হাতের মুঠোয়। তবে সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বিরোধ এবং আমলাদের প্রভাব বাড়ায় ২০১৮ সালের পর থেকে স্বাস্থ্য খাতে স্বাচিপের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কমতে থাকে। ফলে স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও মালামাল ক্রয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বাচিপের আধিপত্য খর্ব হয়।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি হাসপাতালের শীর্ষ পদগুলোয় নিজেদের পছন্দের লোক বসাতে স্বাচিপ নেতাদের হস্তক্ষেপ ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ক্ষেত্রে মেধা বা যোগ্যতা যাচাই করা হয়নি বরং বিবেচনা করা হতো যে প্রতিষ্ঠানের হাল ধরবেন তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন কি না বা স্বাচিপের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না অথবা স্বাচিপ বা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতাদের তদবির ছিল কি না। নিয়োগ ও তদবিরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় স্বাচিপ ও বিএমএ নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করে। স্বাস্থ্য খাতের প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরাই এই দুই শীর্ষ সংগঠনের নেতাদের দাপটের কাছে অসহায় ছিলেন। বিএমএ চিকিৎসকদের সংগঠন হলেও তা পুরোপুরি আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি একটি হাসপাতালের পরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিয়োগ কিংবা পদোন্নতির বিষয় এলে ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো। প্রতিটি নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বাচিপ ও বিএমএ তালিকা দিয়ে জোরালো তদবির চালাত। তাদের তালিকার বাইরে কাউকে নিয়োগ দেওয়া সমস্যা ছিল। এক গ্রুপ যে তালিকা দিত, অন্য গ্রুপ তা মানত না। এ নিয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকের কাছে নালিশ জানালে তিনি নিজেই অসহায়ত্বের কথা জানাতেন।’

চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ পর্যন্ত সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) অন্য যেকোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উপাচার্যরা নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাদের সবাই স্বাচিপ, বিএমএ বা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ সময় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার কিংবা অন্য কোনো শীর্ষ পদে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। এমনকি নির্দলীয় চিকিৎসকদেরও এসব পদে বসার নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। একইভাবে ২০০৯ সালের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যে সাতজন মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করেন, তারাও স্বাচিপ কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও সিভিল সার্জন হিসেবে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের ৯০ শতাংশ স্বাচিপের সদস্য কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি-ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যন্ত রাজনীতির কালো ছায়া ছড়িয়ে পড়েছিল।

স্বাচিপের বর্তমান কমিটিতে থাকা একাধিক নেতার বিরুদ্ধে বড় বড় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ডা. সোহেল মাহমুদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা এবং ধর্ষণের শিকার এক নারীর স্বাস্থ্য প্রতিবেদন পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সহসভাপতি ডা. আবু রায়হান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. জাবেদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যের কেনাকাটায় দুর্নীতি এবং বদলি-বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। ডা. জাবেদ হাসপাতালের বদলি-বাণিজ্য চালাতে একটা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন।

স্বাস্থ্য খাতের রাজনীতিকীকরণের বড় প্রমাণ মেলে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের নিয়োগ বাতিল করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ ও কর্মজীবনের স্বাচিপের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ড্যাবের চিকিৎসকদের আন্দোলনের মুখে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিয়া এবং দুই অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ ও অধ্যাপক কামরুল হাসান মিলনকে। এর মধ্যে কামরুল হাসান স্বাচিপের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং অন্য দুজনও স্বাচিপের সক্রিয় নেতা।

স্বাচিপের একজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, তাদের তালিকাভুক্ত সদস্য ১৫ হাজার। তবে ২৫ হাজারের বেশি চিকিৎসক স্বাচিপের সঙ্গে জড়িত। কারণ ২০১৫ সালের পর নতুন করে সদস্য করা হয়নি কাউকে। ২০২২ সালে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির কথা ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করায় তা আর করা সম্ভব হয়নি।

স্বাচিপের সবচেয়ে প্রভাবশালী চিকিৎসকদের তালিকায় আছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. রুহুল হক, অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. বদিউজ্জামান ডাবলু, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন চৌধুরী ও অধ্যাপক কামরুল হাসান মিলন। এর মধ্যে অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান সংগঠনে সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৩-১৪ সাল পর্যন্ত মহাসচিব এবং ২০১৫-২২ সাল পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেন।

সংগঠনটির আরেক প্রভাবশালী নেতা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। তিনি ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর তার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের আমল থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে স্বাচিপ। স্বাচিপ সভাপতি হিসেবে ভূমিকার কারণেই তিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তার আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাপক হারে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি নিয়ম না মেনে অসংখ্য নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের অনুমোদন দেন, বাড়িয়েছেন মেডিকেলের আসন। গণমাধ্যমে তার স্ত্রী ও সন্তানের অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল।

স্বাচিপের আরেক প্রভাবশালী নেতা অধ্যাপক এমএ আজিজ ২০১৪ থেকে ২০০২২ সাল পর্যন্ত সংগঠনটির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে স্বাচিপে তার অনুসারীর সংখ্যা বেশি।

জানা গেছে, ২০০৩ সালে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হককে স্বাচিপের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। এ কারণে তখন সংগঠনে মহাসচিবসহ অন্যান্য পদে নির্বাচন হয়। ওই সময় মহাসচিব পদে আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, তৎকালীন মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বিএমএর যুগ্ম মহাসচিব ডা. এমএ আজিজ ও ইউনুস আলী সরকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ইকবাল আর্সলান বিজয়ী হন। পরে অধ্যাপক রুহুল হক ও অধ্যাপক ইকবাল আর্সলানের নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রায় ১১ বছর দায়িত্ব পালন করে। মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে কমিটি গঠন না করায় চিকিৎসক মহলে নতুন নেতৃত্বের সংকট দেখা দেয়। এরপর ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার নির্দেশে স্বাচিপের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সালান এবং মহাসচিব হিসেবে অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ নির্বাচিত হন। এই কমিটি ২০২২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

দিনাজপুরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

বন্যায় ২৩ প্রাণহানি

এখনও স্বজনের খোঁজে মানুষ

আপডেট সময় ০৭:৪৯:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০২৪

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর:

সমকাল:

এখনও স্বজনের খোঁজে মানুষ
ফেনী পলিটেকনিক কলেজ থেকে হাঁটুপানি মাড়িয়ে আধা কিলোমিটার সামনে গেলেই কোমরপানি। সেখান থেকে ছাগলনাইয়া ১১ কিলোমিটার দূরে। ওই সড়কে ধীরে ধীরে সামনে পানি ডিঙিয়ে এগোচ্ছেন আম্বিয়া খাতুন রত্না। কিছুদূর হাঁটতেই হঠাৎ বুকপানি। এর পর থমকে দাঁড়ান তিনি। অথৈ পানির দিকে তাকিয়ে আছেন দীর্ঘক্ষণ। হঠাৎ কেঁদে উঠলেন। বন্যায় বিপন্ন স্বজনের খোঁজে আসা রত্না থাকেন ফেনী সদর উপেজলার বিজয়সিং এলাকায় স্বামীর বাড়িতে। তাঁর বাবার বাড়ি ছাগলনাইয়ার পাঠাননগর ইউনিয়নের পূর্বশিলুয়া গ্রামে। সেখানে তাঁর ভাইবোনসহ পরিবারের ২২ সদস্যের সঙ্গে এক সপ্তাহ ধরে যোগাযোগ নেই। প্রতিবার ফোন করে সংযোগ বিচ্ছিন্ন পাচ্ছেন। তাই অজানা এক ভয় চেপে ধরেছে রত্নাকে। মিনিটে মিনিটে ফোন দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিবারই হচ্ছেন হতাশ। দু’দিন ধরে ছাগলনাইয়া প্রবেশমুখের সড়কে এসে বাবার বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে পানির ভয়ে প্রতিবারই ফিরে যাচ্ছেন। চিন্তিত রত্নার অসহায় চোখ জোড়া বলে দেয়, ভাইবোনের সঙ্গে কথা বলার জন্য কতটা উদ্‌গ্রীব। মরে গেছে, নাকি বেঁচে আছে– তাও জানেন না।

রত্নার মতো এমন শত শত স্বজন গতকাল সোমবার ফেনী পলিটেকনিক কলেজের সামনের সড়কে ঠাঁই দাঁড়িয়ে ছিলেন। ফেনী শহরে পানি কমে বিদ্যুৎ-মোবাইল নেটওয়ার্ক স্বাভাবিক হলেও ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া এখনও বিচ্ছিন্ন। কূলকিনারাহীন পানিতে ভাসছে এ তিন উপজেলা। ইঞ্জিনচালিত ট্রলার সংকটের কারণে সেখানে যাওয়া যাচ্ছে না। সামান্য কিছু ট্রলারে প্রতিদিন কিছু মানুষকে উদ্ধার করা হচ্ছে। তবে পানিবন্দি দুর্বিষহ জীবন থেকে ফেরার চেয়ে নিখোঁজের সংখ্যাই বেশি। যারা ফিরছেন তারা বলছেন, লাখ লাখ মানুষকে ভয়াবহ বিপদ থেকে উদ্ধার করা জরুরি। পানিবন্দি জীবন থেকে ফিরে আসা কেউ কেউ লাশ ভাসতে দেখেছেন; আবার কেউ দেখেছেন মানুষের ক্ষুধার কষ্ট। শিশুর আহাজারির কথা শোনাতে শোনাতে শহরে ফিরে আসা অনেকের চোখ ভিজে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে আপনজন হারানোর শঙ্কায় সময় গুনছেন দূরে থাকা মানুষ। জীবিকার তাগিদে নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্য স্থানে থাকা মানুষ ভিড় করছেন স্বজনের খোঁজে। আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় কাটাচ্ছেন প্রতিটি ক্ষণ। বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে কাজ করছে সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, র‍্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বন্যার সুযোগে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ফেনী সদর উপজেলা থেকে শুরু করে ছয় উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ এখনও পানিবন্দি। খাবার আর পানি নিয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বানভাসিদের সহায়তায় ছুটে যাচ্ছে মানুষ। ত্রাণ হিসেবে যে সুপেয় পানি জেলায় পৌঁছাচ্ছে, তাতে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। গতকাল ফেনীমুখী ত্রাণের গাড়ির স্রোত দেখা গেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার অংশে ৮০ কিলোমিটারের বেশি এলাকাজুড়ে তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। এতে অন্যান্য গাড়ির সঙ্গে আটকে ছিল ত্রাণবাহী গাড়িও।

এদিকে ফেনী শহরে পানি কমে এলেও পাশের জেলা নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। হু হু করে বাড়ছে পানি। গতকাল বিভিন্ন এলাকায় পানির উচ্চতা বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বন্যা ও বৃষ্টির পানির চাপে গতকাল ধসে পড়েছে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর স্লুইসগেট (রেগুলেটর)। পরে সেটি পুরোপুরি ধসে ছোট ফেনী নদীতে বিলীন হয়ে যায়। নোয়াখালীর ৯টি উপজেলার মধ্যে আটটিতেই বন্যার পানি বেড়েছে। এসব উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় সরকারি-বেসরকারি কোনো ত্রাণই এখন পর্যন্ত পৌঁছেনি। ফলে এলাকার বন্যার্ত মানুষ সীমাহীন কষ্টে দিন যাপন করছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে এক সপ্তাহ ধরে যে ভয়াবহ বন্যা চলছে, তাতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে এখন ২৩। আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৭ লাখ ১ হাজার ২০৪-এ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বলেন, ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে ১২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৮টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তিন হাজার ৮৩৪ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৫২৩ জন এবং ২৮ হাজার ৯০৭টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসাসেবা দিতে ৬৪৫টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে।

বনিক বার্তা:

জ্বালানি তেলের দাম কবে কমাবে অন্তর্বর্তী সরকার?
বিপিসির প্রক্ষেপণ ছিল ব্যারেলপ্রতি প্রায় ১২২ ডলার এখন গড় দাম ৮০ ডলারের আশপাশে
চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি গড় মূল্য প্রাক্কলন করেছিল প্রায় ১২২ ডলার। যদিও বিশ্ববাজারে জ্বালানি পণ্যটির গড় মূল্য এখন ৮০ ডলারের আশপাশে। সামনে তা আরো কমার পূর্বাভাস রয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে নিম্নমুখী থাকলেও দেশের বাজারে এখনো দাম কমানো হয়নি জ্বালানি তেলের। উল্টো বিপিসির কর্মকর্তাদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে এ দর পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে লোকসানে পড়বে সংস্থাটি।

এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির দাম বিপিসির প্রাক্কলনের চেয়ে অনেক কম। ফলে পণ্যটি আমদানিতে বিপিসির খরচও অনেক কম। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিপিসি ভোক্তার কাছে সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহের পরিবর্তে মুনাফায় মনোযোগ দিচ্ছে বেশি। তাদের লাভ-লোকসানের প্রাক্কলন নিয়েও রয়েছে অস্বচ্ছতার অভিযোগ। অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে বিগত সরকারের আমলের এ চর্চা থেকে বেরিয়ে জনসাধারণের জন্য সুলভে জ্বালানি তেল প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা।

গত অর্থবছরের (২০২৩-২৪) সংশোধিত বাজেটে বিপিসি জ্বালানি তেলের ব্যারেলপ্রতি আমদানি মূল্য প্রাক্কলন

করেছিল ১২৮ ডলার ৩৪ সেন্ট। যদিও অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত হিসাবে দেখা গেছে, ব্যারেলপ্রতি আমদানিতে সংস্থাটির খরচ পড়েছে গড়ে ১০৩ ডলারের কিছু বেশি। এ সময় জ্বালানি তেল বিক্রি করে বিপিসি নিট মুনাফা করেছে ৩ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে ব্যারেলপ্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের আমদানি মূল্য (সিঅ্যান্ডএফ) প্রাক্কলন করা হয়েছে ১২১ ডলার ৯১ সেন্ট। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটির প্রধান দুই বাজার আদর্শ ব্রেন্ট ও ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (ডব্লিউটিআই) বর্তমানে কেনাবেচা হচ্ছে যথাক্রমে ৮১ ডলার ১৯ সেন্ট ও ৭৭ ডলার ১৫ সেন্টে। আর পরিশোধিত জ্বালানি তেলের (গ্যাস অয়েল) ব্যারেলপ্রতি দাম এখন ১১৬ ডলার। এ সময় সংস্থাটির অপরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানিতে খরচ কমেছে আগের অর্থবছরের তুলনায় ১৭ শতাংশের বেশি।

যদিও বিপিসির দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে এখন যে দামে জ্বালানি তেল বিক্রি হচ্ছে, তাতে সংস্থাটি ব্রেক ইভেনেও (যেখানে মোট ব্যয় ও আয় সমান) নেই। দাম এ পর্যায়ে স্থিতিশীল থাকলে আগামী অর্থবছরে বিপিসির কিছুটা লোকসানও হতে পারে।

সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের (পরিশোধিত ও অপরিশোধিত) বর্তমানে যে দাম রয়েছে, এই দাম স্থিতিশীল থাকলে ফর্মুলা অনুযায়ী বাজারে জ্বালানি তেল বিক্রি করলে তাতে অর্থবছর শেষে বিপিসির কিছুটা লোকসান হবে।’ জ্বালানি তেলের দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আপাতত যে দাম রয়েছে, সেটি বিদ্যমান থাকবে। বিপিসির কাছ থেকে জ্বালানি বিভাগ একটা মতামত নেয়। নিয়ম অনুযায়ী আমরা সেটি দিয়ে যাব। এরপর সরকার যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটিই হবে।’

যদিও বিপিসির এ দাবির সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি তেল আমদানিতে প্রতি অর্থবছর বিপুল পরিমাণ লোকসানের কথা বিপিসির বাজেটে উল্লেখ করা হয়। এসব হিসাবের ভেতর বিভিন্ন খরচ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে জ্বালানি তেলের দামের সঙ্গে যোগ করা হলে তা ভোক্তার ওপর গিয়ে পড়ে। বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরেও ৩ হাজার ৮৪১ কোটি টাকা মুনাফা করেছে বিপিসি। অথচ ওই অর্থবছরে লোকসানের প্রাক্কলন ছিল ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এর আগে জ্বালানি তেল বিক্রিতে বিপিসির ২০২২-২৩ অর্থবছরে লোকসানের প্রাক্কলন ছিল ৭ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। অথচ অর্থবছর শেষে হিসাবে দেখা গেছে বিপিসি ৪ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা লাভ করেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৫ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা লোকসানের প্রাক্কলন করেছে বিপিসি। যদিও বাস্তব চিত্র তাদের এ প্রাক্কলনের সম্পূর্ণ বিপরীত।

বিপিসির জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় মোট ১০ ধরনের খরচ ধরা হয়। রিফাইনারি থেকে ভোক্তা পর্যায়ে এ তেল পৌঁছতে বিপিসির উন্নয়ন তহবিল, বিপণন প্রতিষ্ঠানকারীর মার্জিন, পরিবহন তহবিল, ডিলার এজেন্ট কমিশনসহ নানা খরচ রয়েছে। এর সঙ্গে বড় আকারের মুনাফা মার্জিনও যোগ করে বিপিসি। সরকারের ভ্যাট-ট্যাক্স ও আনুষঙ্গিক ব্যয় জ্বালানি তেলের ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেয়ার পরও এ মুনাফার মার্জিন কতটা যুক্তিসংগত ও নৈতিক সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন জ্বালানিসংশ্লিষ্টরা।

মানবজমিন:

কী ঘটেছিল সচিবালয়ে
রোববার দিনভর দেশবাসীর চোখ ছিল সচিবালয়ে। আনসার সদস্যদের অবস্থানে অবরুদ্ধ ছিল প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয়। অনেকটা দাবি মেনে নেয়ার পরও রাত অবধি গড়ায় আনসারদের কর্মসূচি। তারা অবস্থান না ছাড়ায় তৈরি হয় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। সচিবালয়ের শ’ শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে আটকা পড়েন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা। আনসারের মহাপরিচালকও অবরুদ্ধ ছিলেন সচিবালয়ে। রাতে শিক্ষার্থীদের শক্ত প্রতিরোধে আনসাররা সচিবালয় এলাকা ছাড়েন। তার আগে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। আনসারদের পিটুনির শিকার হন প্রতিবাদী ছাত্র-জনতা। প্রতিরোধের মুখে পালিয়ে যাওয়া আনসারদের কেউ কেউ জীবন রক্ষায় আশ্রয় নিয়েছিলেন সচিবালয়ে।

আবার পালানোর পথে কেউ কেউ আটক হন পুলিশের হাতে। এমন ৩৯০ জন আনসার সদস্যকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। মামলা হয়েছে ৪০০০ জনের বিরুদ্ধে।
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে রোববার সকাল ৭টার পর থেকেই সচিবালয়ের চারপাশ ঘিরে অবস্থান নেন কয়েক হাজার আনসার সদস্য। জাতীয় প্রেস ক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় তারা অবস্থান নেন। নিজেদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেয়া আনসার সদস্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসেন। তারা সবাই বাহিনীর পোশাক পরে নিজেদের আইডি কার্ড ঝুলিয়ে কর্মসূচিতে যোগ দেন। অনেকে ব্যাগে করে অতিরিক্ত কাপড়, খাবারও নিয়ে এসেছিলেন।
আনসারদের অবস্থানের মধ্যেই সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা-সচিব এবং কর্মকর্তা কর্মচারীরা ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় সচিবালয়ের ৫টি প্রবেশদ্বারে নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিল পুলিশ, বিজিবি, সেনাবাহিনীসহ একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সচিবালয়ের সামনে বিক্ষোভ জোরদার করেন আনসার সদস্যরা।

দুপুরের পর সচিবালয়ে কাউকে প্রবেশ করতে বা বের হতে দিচ্ছিলেন না আনসার সদস্যরা। দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর দপ্তরে আনসারের ডিজিসহ আনসার প্রতিনিধি দলের বৈঠক হয়। বৈঠকে ৩ মাসের রেস্ট প্রথা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া দাবি দাওয়া পূরণের বিষয়ে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠকে অংশ নেয়া আনসার সদস্যরা গণমাধ্যমের সামনে দাবি পূরণের আশ্বাস পাওয়ার কথা জানান। একই সঙ্গে কর্মসূচি প্রত্যাহার করার কথা বলেন। কিন্তু বাইরে থাকা আনসার সদস্যরা জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে অনঢ় থাকেন। বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে। আনসার সদস্যরা অবস্থানে অনঢ়। রাত ৮টায় পরিস্থিতি নিয়ে দ্বিতীয় দফায় ৫ উপদেষ্টাকে নিয়ে ফের বৈঠকে বসেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

নয়াদিগন্ত:

ফারাক্কার ১০৯ গেট খুলে দিলো ভারত
বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি জেলায় ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির মাঝে মরণফাঁদ ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দিয়েছে ভারত। প্রবল বৃষ্টির কারণে দেশটির বিহার ও ঝাড়খন্ড রাজ্যে বন্যা ও পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই বাঁধ খুলে দেয়া হয় বলে জানানো হয়েছে। এর ফলে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুর্শিদাবাদসহ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ দিকে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্টি হওয়া বন্যা পরিস্থিতি ও ভূমিধসের বিষয়ে বাংলাদেশকে আগেই তথ্য জানিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছে ভারত। ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্প সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ বলছে, বিহার ও ঝাড়খন্ডে বিপুল বৃষ্টি হওয়ায় ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারণে পানির চাপ সামলাতে ফারাক্কা বাঁধের সব গেট খুলে দেয়া হয়েছে। ফলে এক দিনেই বাংলাদেশে ১১ লাখ কিউসেক পানি ঢুকবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পে যে পরিমাণ পানি আসছে, সেই পরিমাণ পানি ছাড়া হয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ এলাকায় পানি বিপদসীমার ৭৭ দশমিক ৩৪ মিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধে পানির অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়েছে। পানির চাপ বাড়ায় তা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। কর্মকর্তারা বলেছেন, পানি না ছাড়া হলে ফারাক্কা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

দেশটির এই সংবাদমাধ্যম বলেছে, ফারাক্কা বাঁধ প্রকল্পের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় দৈনন্দিন পানি ছাড়ার পরিমাণ বাড়ছে। এ দিকে এই পানি ছাড়ার ফলে গঙ্গা থেকে পানি ঢুকছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকায়। বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। বিহার, ঝাড়খন্ডসহ গঙ্গার উচ্চ অববাহিকায় ব্যাপক বৃষ্টিপাত হওয়ায় গঙ্গায় হু হু করে পানি বাড়ছে। ফারাক্কা বাঁধের গেট খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ী ও মানিকগঞ্জসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফারাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিবেশী দুই রাজ্য বিহার, ঝাড়খন্ডে বন্যা দেখা দেয়ায় ফারাক্কা বাঁধে পানির চাপ রয়েছে। তবে নেপালের পাহাড় থেকে এখনো কোনো পানি নেমে না আসায় কিছুটা স্বস্তি রয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ এলাকায় বিপদসীমা থেকে ৭৭ দশমিক ৩৪ মিটার ওপরে পানি প্রবাহিত হওয়ায় শনিবার গেট খুলতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফিডার ক্যানেলে পানির পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুর্শিদাবাদ জেলায় গঙ্গা নদীর ওপর ফারাক্কা বাঁধের অবস্থান। বাংলাদেশের সীমান্ত থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে ১৯৬২ সালে এই বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই বাঁধের কাজ শেষ হয় ১৯৭০ সালে। ফারাক্কা বাঁধের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল।

রাজশাহী ব্যুরো জানায়, ফারাক্কা বাঁধের ১০৯টি গেট খুলে দেয়ায় বাংলাদেশের নদ-নদীতে পানি বাড়তে শুরু করেছে। পদ্মায় প্রতি তিন ঘণ্টায় ১ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে পানি। গতকাল সোমবার ফারাক্কার ১০৯টি গেট খোলার কথা বলা হলেও গত রোববার থেকেই পানি বাড়ছে বলে পাউবোর উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগ জানিয়েছে। এ দিকে রাজশাহীর বড়কুঠি পয়েন্টে এখন পদ্মার পানি বিপদসীমার ১ দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধ খুলে দেয়ায় বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে উত্তরাঞ্চলে।

পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের তথ্যানুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার পাংখা এলাকা দিয়ে ভারতের গঙ্গা নদী পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এই পয়েন্টে সোমবার ভোর ৬টা ও সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ২০ দশমিক ৪৮ মিটার। বেলা ৩টায় তা হয় ২০ দশমিক ৫০ মিটার। পাংশায় পদ্মার পানির বিপদসীমা ২২ দশমিক ৫ মিটার। পাংশার ভাটিতে রাজশাহী নগরীর বড়কুটি পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানির বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। সোমবার ভোর ৬টায় এখানে পানির উচ্চতা ১৬ দশমিক ২৭ মিটার। সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা আরো এক সেন্টিমিটার বেশি পাওয়া যায়। বেলা ৩টায় পানির উচ্চতা পাওয়া যায় ১৬ দশমিক ৩০ মিটার।

বড়কুঠির আরো ভাটিতে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সারদায় পদ্মার পানির বিপদসীমা ১৬ দশমিক ৯২ মিটার। সোমবার সকাল ৬টায় এখানে পানির উচ্চতা ১৫ দশমিক ৫ মিটার এবং সকাল ৯টা ও বেলা ৩টায় পানির উচ্চতা পাওয়া গেছে ১৫ দশমিক ৬ মিটার। এখন রাজশাহীর বড়কুঠি পয়েন্টে পদ্মার পানি বিপদসীমার ১ দশমিক ৭৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলীয় পানিবিজ্ঞান পরিমাপ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, সাধারণত ১০ দিনের জন্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে পদ্মাসহ অন্যান্য নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে না। তবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না পানি বাড়ার কারণে। রোববার দুপুর থেকেই পানি বাড়ছে। আরো দু-তিন দিন পার হলে বোঝা যাবে প্রকৃত অবস্থা।

প্রথম আলো:

জ্বালানি তেলের মূল্য বকেয়া পড়েছে ৪৮ কোটি ডলার

জ্বালানি তেলের বিল পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। চাইলেও ব্যাংক থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। বকেয়া বাড়তে থাকায় তেলের জাহাজ পাঠাতে চাইছে না কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান। নির্ধারিত সময়ের পর আসছে কোনো কোনো জাহাজ। বিল পরিশোধে জ্বালানি তেল সরবরাহকারী বিদেশি কোম্পানিগুলোর চাপ বাড়ছে বিপিসির ওপর।

বিপিসি সূত্র বলছে, ২২ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৪৭ কোটি ৬১ লাখ ডলার বকেয়া জমেছে বিপিসির। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বকেয়া সিঙ্গাপুরভিত্তিক কোম্পানি ভিটলের, তারা পাবে ১৮ কোটি ৫৬ লাখ ডলার। সোনালী ব্যাংক থেকে তাদের একটি বিল পরিশোধে ইতিমধ্যে ১১০ দিন বিলম্ব হয়েছে। ৯৪ দিন, ৮৫ দিন বিলম্ব হওয়া বিলও আছে কোনো কোনো সংস্থার।

বিপিসির দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, চুক্তি অনুসারে বিলম্বের জন্য বছরে এখন সাড়ে ৬ শতাংশ

যুগান্তর:

কবির বিন আনোয়ার মদ পান করতেন অফিসে /নিজের প্রমোদতরিতে সময় কাটাতেন বসেই
নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা দাবি করতেন কবির বিন আনোয়ার। অথচ প্রাচ্যের এই অক্সফোর্ডখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি লেখাপড়াই করেননি। হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ ও ঢাকা কলেজের ছাত্র ছিলেন তিনি। দীর্ঘ চাকরি জীবনে ছিলেন প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে একচ্ছত্র অধিপতি হিসাবে পরিচিতি পেলেও দাপট ছিল সব মন্ত্রণালয়েই। যা বলতেন তাই আদায় করে নিতেন।

মায়ের নামে ‘ইসাবেলা ফাউন্ডেশন’ খুলে নীরব চাঁদাবাজি আর ঘুস বাণিজ্যের হাট বসিয়েছিলেন। বিদেশি সাহায্যের নামে শত শত কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে এই ফাউন্ডেশনের নামে। দীর্ঘদিন পর দুর্নীতি দমন কমিশন তার ও পরিবারের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পদ-পদবি না থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের অন্য একটি দপ্তরে কর্মরত এক নারীকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে পোস্টিং দিয়ে নিজের কাছে রাখেন। ওই নারী পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সময়ে একজন ক্যাডার কর্মকর্তার স্ত্রী ছিলেন। লায়লা সানজিদা নামের ওই নারীকে ‘অ্যাসাইনমেন্ট অফিসার’ পদ দিয়ে বছরের পর বছর নিজের দপ্তরে সংযুক্ত রাখেন, যা ছিল নজিরবিহীন।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ‘তূর্য’ নামে একটি প্রমোদতরি নির্মাণ করেন কবির বিন আনোয়ার। সময় পেলেই সব আয়োজন নিয়ে রাজা-বাদশাহর মতো এই প্রমোদতরিতে চড়ে ঘুরে বেড়াতেন অবলীয়ায়। আর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রী থাকলেও কাউকেই তিনি পাত্তা দিতেন না। তার পিতা আনোয়ার হোসেন ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের প্রথম সভাপতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। পিতার পরিচয়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজন ছিলেন কবির বিন আনোয়ার।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৫ সালের ৫ এপ্রিল পর্যন্ত যুগ্মসচিব হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক থাকাবস্থায় তার ক্ষমতা প্রকট হতে থাকে। ওই বছরের ৭ এপ্রিল অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি নিয়ে ওইদিনই তাকে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক করে পদায়ন করা হয়। ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ পর্যন্ত টানা ৬ বছরেরও বেশি সময় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।

ওই বছরের ২২ মার্চ অতিরিক্ত সচিব থাকাবস্থায়ই কবির বিন আনোয়ারকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব (চলতি দায়িত্ব) করা হয়। এটা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এই দাপটেই তিনি ড্যামকেয়ার অবস্থায় ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আর উপমন্ত্রীকেও তিনি তোয়াক্কা করতেন না। একা যা সিদ্ধান্ত নিতেন তাই বাস্তবায়ন হতো এখানে।

কবির বিন আনোয়ারের সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকায় প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী চাকরি হারানোর ভয়ে কথা বলতে পারতেন না। এভাবে নিজের ইচ্ছামতো প্রকল্প ভাগিয়েছেন সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে। আওয়ামী লীগের তকমা লাগিয়ে যে কজন আমলা থেকে শত শত কোটি টাকা ভাগিয়ে নিয়েছেন তার মধ্যে কবির বিন আনোয়ার অন্যতম।

কামারখন্দ গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েকজন জানিয়েছেন, ক্ষমতার দাপটে গ্রামের বাড়ির মানুষের যে ক্ষতি করেছেন তিনি তা কোনো শত্রুও করবে না। কী ক্ষতি করেছে জানতে চাইলে ইমাম হোসেন নামে একজন বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদী ড্রেজিংয়ের নামে শত শত বিঘা জমিতে নদীর পানি মিশ্রিত বালি ফেলে শেষ করে দিয়েছেন। তার দাপটেই ঠিকাদাররা এই কাজ করেছে। এলাকাবাসী বাধা দিলে পুলিশ ডেকে শত শত মানুষকে এলাকাছাড়া করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। তার এই কাণ্ডে কয়েকশ বিঘা জমি অনাবাদি হয়ে গেছে।’

সরকারি কর্মকর্তা হলেও তিনি সিরাজগঞ্জের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতেন। তার সিরাজগঞ্জে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করে চলাচল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। বিভিন্ন নেতাকর্মীকে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কাছে টানতেন। তাদের মাধ্যমে নানারকম অপরাজনীতি সংঘটিত করতেন। ক্ষমতায় থাকাবস্থায় সংঘর্ষ ও হানাহানির মতো ঘটনাও ঘটিয়েছেন এই আমলা।

বাংলাদেশ প্রতিদিন:

রূপগঞ্জে গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে আগুন
নিখোঁজ ১৭৬, উদ্ধার ১৪
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী এলাকায় সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর মালিকানাধীন গাজী টায়ার ফ্যাক্টরিতে দ্বিতীয়বারের মতো আগুনের ঘটনা ঘটল। রবিবার (২৫ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফ্যাক্টরির ভিতরে থাকা ছয় তলা বিশিষ্ট ভবনে আগুনের ঘটনা ঘটে। ২১ ঘণ্টা পর গতকাল সন্ধ্যা ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। ফ্যাক্টরিতে থাকা মালামাল আনতে গিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭৬ জন নিখোঁজ বলে দাবি করেছেন স্বজনরা। স্বজনরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের কাছে নিখোঁজদের নাম-ঠিকানা দিয়েছেন। স্থানীয় সূত্র মতে, আগুন লাগা ৬ তলা ভবনের ভিতরে লুটপাট নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ সময় এক পক্ষ ভবন ত্যাগ করলে ভবনের প্রবেশ গেট বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে ভবনে আগুন লেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

এর আগে ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন গাজীর খাদুন এলাকার টায়ার ফ্যাক্টরি ও কর্ণগোপ এলাকার পাইপ ও ট্যাংক ফ্যাক্টরি আগুনে পুড়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী এবং সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীরের মালিকানাধীন রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার কারখানা ও কর্ণগোপ এলাকায় গাজী পাইপ এবং ট্যাংক কারখানা রয়েছে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিক্ষুব্ধ লোকজন রূপসী এলাকায় গাজী টায়ার কারখানা ও কর্ণগোপ এলাকায় গাজী পাইপ এবং ট্যাংক কারখানায় ভাঙচুর করে। এক পর্যায়ে ওই দুটি কারখানায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

এদিকে রূপগঞ্জের নবকিশোলয় হাইস্কুলের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী রোমান মিয়া হত্যা মামলার আসামি গোলাম দস্তগীর গাজীকে ঢাকার শান্তিনগর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার এবং নারায়ণগঞ্জ আদালতে ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করার পর আদালত ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর রবিবার সন্ধ্যার দিকে কয়েক শ’ লোক রূপসী গাজী টায়ার কারখানায় ঢুকে পড়ে। করা হয় ভাঙচুর। স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাধা উপেক্ষা করে লুটপাট ও ভাঙচুর চালানোর একপর্যায়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে কারখানার ভিতরের ৬তলা ভবনে ঢুকে পড়ে কয়েক শ’ লোক। ওই ভবনে কেমিক্যাল ও টায়ার তৈরির কাঁচামাল ছিল। ভবনের ভিতরে লুটপাট নিয়ে দুই পক্ষের মাঝে হাতাহাতি ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি পক্ষ ভবন ত্যাগ করলে ভবনের প্রবেশ গেট বন্ধ হয়ে যায়। একপর্যায়ে ভবনে আগুন লেগে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ৬০ থেকে ৮০ ফুট উঁচুতে উঠে যায় আগুনের লেলিহান শিখা। এ সময় ভবনের ভিতর আটকে পড়া অনেকেই ফোন করে বাঁচানোর জন্য আকুতি জানায় বলে বেশ কয়েকজন স্বজন দাবি করেছেন। খবর পেয়ে ঢাকার ফুলবাড়িয়া ফায়ার সার্ভিস, ডেমরা ফায়ার সার্ভিস, কাঞ্চন ফায়ার সার্ভিস, আড়াইহাজার ফায়ার সার্ভিসসহ ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা।

কালের কন্ঠ:

আওয়ামী লীগ আমলে হাজার কোটি টাকার মালিক

আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে সোনা চোরাকারবারের বিশাল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন তাঁরা। চুরির সোনায় ভাগ্য বদলে এঁরা রীতিমতো মাফিয়া হয়ে ওঠেন। এঁদের একজন দিলীপ কুমার আগরওয়াল, যিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য। আরেকজন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) বহিষ্কৃত সাবেক সভাপতি এনামুল হক দোলন।

সোনা চোরাচালানের টাকায় নামে-বেনামে তাঁরা হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। চোরাচালানের অর্থে এলাকায় গড়েছেন অবৈধ সম্পদের পাহাড়। তাঁদের চোরাচালান ও বিলাসী জীবনযাপনের কথা স্থানীয় লোকজন জানলেও আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও ভয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় কেউ। দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উঠলেও শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় দায়মুক্তি পেয়েছেন কেউ কেউ।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বৈধ উপায়ে সোনা আমদানির সুযোগ থাকলেও অতিমুনাফার লোভে চোরাচালানের সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন দোলন-দীলিপ। তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় আকাশ, স্থল ও সমুদ্র—তিন পথেই হয় সোনা চোরাচালান। হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে অর্থপাচারেও সরাসরি সম্পৃক্ত ছিল এই চক্র। নোয়াখালী-১ (চাটখিল-সোনাইমুড়ি) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এইচ এম ইব্রাহীমও ছিলেন এই সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্য।

তাঁর মাধ্যমেই দোলন-দীলিপ সিন্ডিকেটকে সরাসরি মদদ দিতেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ শীর্ষস্থানীয় একাধিক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এই সিন্ডিকেট থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিতেন। সম্পৃক্ততা ছিল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তাব্যক্তিদেরও।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দিলীপ কুমার আগরওয়ালের আকাশচুম্বী উত্থানের নেপথ্যে আছে ভয়ংকর চোরাকারবার ও প্রতারণার গল্প। একসময়ের সামান্য ঠিকাদার দুই দশকের ব্যবধানে হয়ে উঠেছেন বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি (সিআইপি)।

তাঁর পৈতৃক নিবাস চুয়াডাঙ্গায় সরেজমিনে অনুসন্ধানকালেও নানা অবিশ্বাস্য কাহিনি বেরিয়ে এসেছে। স্থানীয় বাসিন্দারাও দিলীপের রাতারাতি বিত্তশালী বনে যাওয়ার ঘটনাকে রীতিমতো আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়া বলেই মনে করছে।
নথি পর্যালোচনায় দেখা যায়, কাগজে-কলমে দিলীপ কুমার আগরওয়ালের বার্ষিক আয় চার কোটি চার লাখ ৩৯ হাজার ৮৫৪ টাকা। তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয় তিন কোটি ৫৭ লাখ ১২ হাজার ৩৮২ টাকা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সোনা ও নকল হীরা বিক্রি করে দিলীপ কুমারের বার্ষিক আয় আরো কয়েক গুণ, যা দিয়ে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।

৩০ নভেম্বর ২০২৩ সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দিলীপ কুমারের নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ প্রায় ১৩ কোটি ছয় লাখ ৬৮ হাজার ৭০৪ টাকা রয়েছে। অস্থাবর সম্পদ রয়েছে মোট ১৯১ কোটি ৯৮ লাখ ৮০ হাজার ৭৩৪ টাকার। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪৯ কোটি ৭৯ লাখ ২১ হাজার ৩১১ টাকার অস্থাবর সম্পদ। তাঁর স্ত্রীর কাছে নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ অন্যান্য বিনিয়োগ রয়েছে ২০ কোটি ৭১ লাখ ৯০ হাজার ২৩২ টাকা। তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৩৫ কোটি দুই লাখ ৬০ হাজার ৪৮২ টাকা। এ ছাড়া তাঁদের কাছে নগদ ও বৈদেশিক মুদ্রাসহ অন্যান্য বিনিয়োগ রয়েছে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা।

তথ্য সূত্র বলছে, ঢাকা ও চুয়াডাঙ্গায় স্থাবর সম্পদ রয়েছে দিলীপ কুমারের। কৃষিজমি রয়েছে পাঁচ একরের বেশি, যার মূল্য সাত কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার ৮৭৪ টাকা। অকৃষি জমি রয়েছে এক একরের বেশি, যার মূল্য ৮০ লাখ ৩৫ হাজার ৮০০ টাকা। দালান রয়েছে ৯৪ হাজার ৮৪৯ বর্গফুট, যার মূল্য ৩০ কোটি ৪৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৮৮ টাকা। বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট ২,৫২৬ বর্গফুট, যার মূল্য ৭৫ লাখ সাত হাজার ৮০০ টাকা। স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ রয়েছে মোট ৩৯ কোটি ৪৯ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬২ টাকার। অভিযোগ রয়েছে, পাচার করা টাকায় ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায় খুলেছেন একাধিক জুয়েলারি শোরুম।

কালবেলা:

পুলিশের সেই শিবলী নোমান হাজার কোটির মালিক
এস এম শিবলী নোমান। পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার। বরাবরই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠলে তাকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করেননি সেখানেও। দুর্নীতি, ঘুষবাণিজ্য ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে বনে গেছেন হাজার কোটি টাকার মালিক। গাজীপুর ১০০ বিঘা জমিতে মেসার্স এন এ এগ্রো, গোপালগঞ্জে ৪০০ বিঘা জমিতে সর্দার এগ্রো এবং রাজধানীর খিলক্ষেতে অটো হ্যাভেন নামে গাড়ির শোরুমের মালিক শিবলী নোমান। এ ছাড়া আছে ডুপ্লেক্সসহ একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট। তার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাকারবারিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকারও অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার এস এম শিবলী নোমান গাজীপুর ও নিজ এলাকা গোপালগঞ্জে সম্পত্তির পাহাড় গড়ে তুলেছেন। গোপালগঞ্জে ৪০০ বিঘা জমিতে সর্দার এগ্রো নামে একটি ফার্ম গড়ে তুলেছেন। এই ফার্মে কাজ করেন অর্ধ শতাধিক শ্রমিক। সেখানে ৫টি পুকুর আছে শিবলীর। শেওড়াবাড়ী এলাকায় অবস্থিত ফার্মের উত্তর পাশে প্রথম পুকুরের আয়তন ৩৬ দশমিক ১০ শতাংশ, দ্বিতীয়টির ৭১ দশমিক ১০ শতাংশ, তৃতীয়টির ৯৩ শতাংশ আর চতুর্থটির আয়তন ৬৬ শতাংশ । বিশালাকৃতির আরেকটি পুকুরের আয়তন ২ একর ৮৬ শতাংশ। এ ছাড়া ফার্মের দুপাশের জলাভূমিতে বিপুল পরিমাণ জায়গা কিনেছেন সাবেক এই অতিরিক্ত উপকমিশনার। এর মধ্যে উত্তর পাশে কেনা জলাভূমির আয়তন ৯ একর ৮৪ শতাংশ। আর দক্ষিণ পাশের আয়তন ১২ একর ৪০ শতাংশ ।

জানা গেছে, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার অবসরে যাওয়ার আগে অবৈধ আয়ের টাকা বিভিন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। তিনি গাজীপুর মহানগরের ২২৭/১ পাজুলিয়া অঞ্চলে ১০০ বিঘা জমি কিনে সে জমিতে মেসার্স এন এ এগ্রো নামে একটি ফার্ম গড়ে তুলেছেন। রাজধানীর খিলক্ষেতে অটো হ্যাভেন নামের গাড়ির শোরুমের মালিক শিবলী নোমান। বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি গাড়ির শোরুমটি শিবলী নোমান নিজেই দেখাশোনা করেন। তবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে। এ ছাড়া স্ত্রীর নামেও আছে অনেক সম্পদ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মামলা নিয়ে বাণিজ্যে বেশ পটু ছিলেন শিবলী নোমান। টাকা দিলেই ছোট মামলাকে বড় করতে বিভিন্ন ধারা যুক্ত করে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করতেন। আবার টাকার বিনিময়ে মামলা থেকে নাম কেটে দিতেন অনেকের। প্রভাব খাটিয়ে চাকরিতে নিয়োগের সুপারিশ করতেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে পুলিশে চাকরি এবং পদোন্নতির ব্যবস্থা করা ছিল তার মূল কাজ। বিভিন্ন পদে পদোন্নতির জন্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা নিতেন। এ ছাড়া কনস্টেবল, এসআই নিয়োগে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ নিতেন তিনি।

অভিযোগ আছে, ক্ষমতার অপব্যবহার শত বছরের পুরোনো বলাকইড় আজাহারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম বদলে নিজের মা-বাবার নাম দেন। বিষয়টি প্রচারের জন্য আশপাশের গ্রামের লোকজনকে দাওয়াত করে খাওয়ান।

দেশ রুপান্তর:

স্বাস্থ্য ছিল স্বাচিপে বন্দি
আওয়ামী লীগপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া। তিনি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে প্রভাব খাটিয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের পরিচালক পদ বাগিয়ে নেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই পদে আসীন হওয়ার পর নিয়োগ-বাণিজ্য, যন্ত্রপাতি ক্রয়সহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার মালিক হন। তার অনিয়ম, দুর্নীতির মাত্রা বেড়ে গেলে সে খবর একসময় স্বাস্থ্য খাত পেরিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পৌঁছায়। দুদকের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এসব অভিযোগের সত্যতাও মিলে। বাধ্য হয়ে সরকার তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

স্বাচিপের আরেক প্রভাবশালী নেতা অধ্যাপক ডা. সভাপতি জামাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে গত ২৭ জুন রাতে রাতে দলবল নিয়ে রাজধানী উত্তরার শহীদ ক্যাপ্টেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ দখল করতে যান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধার মুখে ব্যর্থ হন। শুধু এই দুজন চিকিৎসক নেতাই নন, স্বাচিপের এমন আরও অনেক নেতাই ছিলেন, যারা নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছিলেন স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামল ২০০৯ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে দিনে দিনে স্বাস্থ্য খাতের সব প্রতিষ্ঠানে একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান করেন স্বাচিপ নেতারা। গেল ১৫ বছরের বেশি সময় স্বাস্থ্য খাত নিয়ন্ত্রণ করেছেন তারা। স্বাস্থ্য খাতের সরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি, কেনাকাটা, বিদেশ সফর, প্রশিক্ষণসহ সব ক্ষেত্রেই স্বাচিপের হস্তক্ষেপ ছিল অতিমাত্রায়। এমনকি তাদের থাবা বিস্তৃত ছিল বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তিতেও। সরকার স্বাস্থ্য খাত পরিচালনা করলেও স্বাচিপ নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ছিল দুরূহ। এক কথায় স্বাস্থ্য খাত ছিল স্বাচিপ নেতাদের হাতের মুঠোয়। তবে সংগঠনের নেতাদের মধ্যে বিরোধ এবং আমলাদের প্রভাব বাড়ায় ২০১৮ সালের পর থেকে স্বাস্থ্য খাতে স্বাচিপের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই কমতে থাকে। ফলে স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ও মালামাল ক্রয়সহ অন্যান্য ক্ষেত্রে স্বাচিপের আধিপত্য খর্ব হয়।

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে শুরু করে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি হাসপাতালের শীর্ষ পদগুলোয় নিজেদের পছন্দের লোক বসাতে স্বাচিপ নেতাদের হস্তক্ষেপ ছিল চোখে পড়ার মতো। এ ক্ষেত্রে মেধা বা যোগ্যতা যাচাই করা হয়নি বরং বিবেচনা করা হতো যে প্রতিষ্ঠানের হাল ধরবেন তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন কি না বা স্বাচিপের সঙ্গে সম্পৃক্ত কি না অথবা স্বাচিপ বা বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) নেতাদের তদবির ছিল কি না। নিয়োগ ও তদবিরকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময় স্বাচিপ ও বিএমএ নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব তীব্র আকার ধারণ করে। স্বাস্থ্য খাতের প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিরাই এই দুই শীর্ষ সংগঠনের নেতাদের দাপটের কাছে অসহায় ছিলেন। বিএমএ চিকিৎসকদের সংগঠন হলেও তা পুরোপুরি আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে ছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি একটি হাসপাতালের পরিচালক দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘নিয়োগ কিংবা পদোন্নতির বিষয় এলে ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো। প্রতিটি নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে স্বাচিপ ও বিএমএ তালিকা দিয়ে জোরালো তদবির চালাত। তাদের তালিকার বাইরে কাউকে নিয়োগ দেওয়া সমস্যা ছিল। এক গ্রুপ যে তালিকা দিত, অন্য গ্রুপ তা মানত না। এ নিয়ে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিকের কাছে নালিশ জানালে তিনি নিজেই অসহায়ত্বের কথা জানাতেন।’

চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগ পর্যন্ত সময়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) অন্য যেকোনো মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে উপাচার্যরা নিয়োগ পেয়েছিলেন, তাদের সবাই স্বাচিপ, বিএমএ বা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এ সময় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার কিংবা অন্য কোনো শীর্ষ পদে বিএনপিপন্থি চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। এমনকি নির্দলীয় চিকিৎসকদেরও এসব পদে বসার নজির খুঁজে পাওয়া যায় না। একইভাবে ২০০৯ সালের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যে সাতজন মহাপরিচালক দায়িত্ব পালন করেন, তারাও স্বাচিপ কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। দেশের সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও সিভিল সার্জন হিসেবে যারা নিয়োগ পেয়েছেন, তাদের ৯০ শতাংশ স্বাচিপের সদস্য কিংবা আওয়ামী লীগের রাজনীতি-ঘনিষ্ঠ ছিলেন। এমনকি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যন্ত রাজনীতির কালো ছায়া ছড়িয়ে পড়েছিল।

স্বাচিপের বর্তমান কমিটিতে থাকা একাধিক নেতার বিরুদ্ধে বড় বড় অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কমিটির যুগ্ম মহাসচিব ডা. সোহেল মাহমুদের বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা এবং ধর্ষণের শিকার এক নারীর স্বাস্থ্য প্রতিবেদন পাল্টে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। সহসভাপতি ডা. আবু রায়হান ও সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. মো. জাবেদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যের কেনাকাটায় দুর্নীতি এবং বদলি-বাণিজ্যের অভিযোগ ছিল। ডা. জাবেদ হাসপাতালের বদলি-বাণিজ্য চালাতে একটা সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন।

স্বাস্থ্য খাতের রাজনীতিকীকরণের বড় প্রমাণ মেলে শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলমের নিয়োগ বাতিল করেছে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার। তিনি ছাত্রজীবনে ছাত্রলীগ ও কর্মজীবনের স্বাচিপের রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ড্যাবের চিকিৎসকদের আন্দোলনের মুখে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক টিটো মিয়া এবং দুই অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক বায়েজিদ খুরশীদ রিয়াজ ও অধ্যাপক কামরুল হাসান মিলনকে। এর মধ্যে কামরুল হাসান স্বাচিপের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং অন্য দুজনও স্বাচিপের সক্রিয় নেতা।

স্বাচিপের একজন নেতা দেশ রূপান্তরকে বলেন, তাদের তালিকাভুক্ত সদস্য ১৫ হাজার। তবে ২৫ হাজারের বেশি চিকিৎসক স্বাচিপের সঙ্গে জড়িত। কারণ ২০১৫ সালের পর নতুন করে সদস্য করা হয়নি কাউকে। ২০২২ সালে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্তির কথা ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করায় তা আর করা সম্ভব হয়নি।

স্বাচিপের সবচেয়ে প্রভাবশালী চিকিৎসকদের তালিকায় আছেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. রুহুল হক, অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান, অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ, অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া, অধ্যাপক ডা. বদিউজ্জামান ডাবলু, অধ্যাপক জামাল উদ্দিন চৌধুরী ও অধ্যাপক কামরুল হাসান মিলন। এর মধ্যে অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান সংগঠনে সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০০৩-১৪ সাল পর্যন্ত মহাসচিব এবং ২০১৫-২২ সাল পর্যন্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করেন।

সংগঠনটির আরেক প্রভাবশালী নেতা সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক। তিনি ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর তার নেতৃত্বে বিএনপি সরকারের আমল থেকেই সক্রিয় হয়ে ওঠে স্বাচিপ। স্বাচিপ সভাপতি হিসেবে ভূমিকার কারণেই তিনি আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তার আমলে রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাপক হারে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি নিয়ম না মেনে অসংখ্য নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের অনুমোদন দেন, বাড়িয়েছেন মেডিকেলের আসন। গণমাধ্যমে তার স্ত্রী ও সন্তানের অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির বিষয়ে একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল।

স্বাচিপের আরেক প্রভাবশালী নেতা অধ্যাপক এমএ আজিজ ২০১৪ থেকে ২০০২২ সাল পর্যন্ত সংগঠনটির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে স্বাচিপে তার অনুসারীর সংখ্যা বেশি।

জানা গেছে, ২০০৩ সালে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হককে স্বাচিপের সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা। এ কারণে তখন সংগঠনে মহাসচিবসহ অন্যান্য পদে নির্বাচন হয়। ওই সময় মহাসচিব পদে আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু, তৎকালীন মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বিএমএর যুগ্ম মহাসচিব ডা. এমএ আজিজ ও ইউনুস আলী সরকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ইকবাল আর্সলান বিজয়ী হন। পরে অধ্যাপক রুহুল হক ও অধ্যাপক ইকবাল আর্সলানের নেতৃত্বাধীন কমিটি প্রায় ১১ বছর দায়িত্ব পালন করে। মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে কমিটি গঠন না করায় চিকিৎসক মহলে নতুন নেতৃত্বের সংকট দেখা দেয়। এরপর ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার নির্দেশে স্বাচিপের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি হিসেবে অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সালান এবং মহাসচিব হিসেবে অধ্যাপক ডা. এমএ আজিজ নির্বাচিত হন। এই কমিটি ২০২২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করে।