ঢাকা ০৪:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

৫০০ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ

  • লিমন হোসেন
  • আপডেট সময় ০৭:৫১:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪
  • 72

আজকের প্রত্রিকাগুলো

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর

যুগান্তর:

৫০০ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ

কাগজে মজুত বাস্তবে নেই

কাগজে-কলমে ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের ইউরিয়া সারের মজুত থাকলেও এর অস্তিত্ব মেলেনি গুদামে। পরিবহণ ঠিকাদার, বাফার গুদাম ইনচার্জ ও বিসিআইসির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নানা কৌশলে ৯১ হাজার ৬৯৭ টন সার আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে পরিবহণ ঠিকাদার ৬৬ হাজার টন ইউরিয়া গায়েব করেছেন। গুদামে পৌঁছে না দিয়েই সরবরাহ দেখিয়েছেন খাতা-কলমে।

এছাড়া পটুয়াখালীর বাফার গুদাম ইনচার্জ সাদা কাগজে রিসিভ দেখিয়ে লোপাট করেন ২৩৮৭ টন সার। খোদ যমুনা সার কারখানার গুদাম থেকে গায়েব হয়েছে ১৯ হাজার টন সার। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে ভয়ংকর দুর্নীতির এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু তাই নয়, এসব অনিয়মের ওপর সরকারের নিরীক্ষা অফিসও তদন্ত করেছে। সেখানেও সার আত্মসাতের একই চিত্র পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান রোববার যুগান্তরকে জানান, বাফার গুদামে যে পরিমাণ সারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি সেটিই তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মামলা করা ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) পাঠানো হয়েছে। দুদকের তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের দুর্নীতির একটি ছোট দৃষ্টান্ত মাত্র।

দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী যে বিকাশ ঘটেছিল এ প্রতিষ্ঠানের একাংশ জড়িয়ে পড়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা যারা এর সঙ্গে জড়িত শুধু তারাই নন, বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের সুরক্ষা ছাড়া এ সিস্টেম্যাটিক দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি হয়েছে তা নয়, লাভবান হয়েছে যারা সুরক্ষা দিয়েছেন, ওইসব প্রভাবশালী মহলও। প্রত্যাশা করব-এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সুশাসন ও দুর্নীতি মুক্ত করার একটি বিশাল সুযোগ হয়েছে এই নতুন বাংলাদেশে। এখন এ ধরনের ঘটনায় কিছু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারলে ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা হিসাবে থাকবে।

বিসিআইসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরবরাহ পরিবহণ ঠিকাদার যে ৬৬ হাজার টন সার আত্মসাৎ করেছে, সে ব্যাপারে মেসার্স নবাব অ্যান্ড কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। আর যমুনা সার কারখানার গুদাম থেকে আত্মসাতের ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত চলছে। একইভাবে পটুয়াখালী বাফার গুদাম ইনচার্জের কাছে আত্মসাতের ঘটনার জবাব চাওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে ইউরিয়া সারের মোট চাহিদা ২৭ লাখ টন, টিএসপি সার ৭ লাখ ৫০ হাজার টন, ডিএপি সার ১৫ লাখ টন এবং এমওপি সারের চাহিদা সাড়ে ৯ লাখ টন। কিন্তু বিপুল পরিমাণ সার আমদানি-পরিবহণ ও গুদামজাতকরণ নিয়ে প্রতিবছরই ঘটছে নানা অনিয়ম। অথচ এই সার আমদানি করতে সরকারকে গুনতে হয় কয়েক মিলিয়ন ডলার। বর্তমান ডলার সংকটের কারণে সার আমদানিও ব্যাহত হচ্ছে।

বিসিআইসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তি মোতাবেক ২০২২ সালে পরিবহণ ঠিকাদার মের্সাস নবাব অ্যান্ড কোম্পানি ৪ হাজার ৪৮২ টন ইউরিয়া সার গুদামে সরবরাহ না করে তা আত্মসাৎ করে। এই সার পরবর্তী বছরেও সরবরাহ করেনি। একইভাবে পৃথক লট থেকে ৬১ হাজার ৭২৬ টন ইউরিয়া সার গুদামে সরবরাহ করেনি একই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস নবাব অ্যান্ড কোম্পানি।

গুদামে সার সরবরাহ নিয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিসিআইসির চুক্তি ছিল। চুক্তির ক্লজ নং-৪(এ) অনুযায়ী পরিবহণ ঠিকাদার পুরো কার্গো খালাসের জন্য পর্যাপ্ত বার্জ বা কোস্টার মোতায়েন করা এবং ৫০ দিনের মধ্যে ব্যাগযুক্ত সার গোডাউন বা কারখানায় পৌঁছে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি এই সার গুদামে পৌঁছায়নি। যার বাজারের তৎকালীন মূল্য অনুযায়ী পৌনে তিনশ কোটি টাকা। এই আত্মসাতের ঘটনার ব্যাপারে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো সুষ্ঠু জবাব মেলেনি।

নায়াদিগন্ত:

বাধা নয়, কাজ করতে দিন

কবে নির্বাচন সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের ‘গণতন্ত্রহীনতায়’ দেশের যে পরিস্থিতি হয়েছিল, তা থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে তার সরকার প্রস্তুত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফল ধরে রাখতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি বলেছেন, রাতারাতি এ অবস্থা থেকে উত্তরণ কঠিন। দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে হয়েছে। বর্তমান সরকারের দুই সপ্তাহ শেষে জনগণের যে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে, তা অনুপ্রেরণামূলক।
এ অবস্থায় সরকারকে ‘জিম্মি করে’ দাবি আদায়ের চেষ্টা না করারও অনুরোধ করেন তিনি।

দায়িত্ব নেয়ার ১৭ দিনের মাথায় রোববার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তার এই ভাষণ রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতাকে স্মরণ করে এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ভাষণ শুরু করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট শপথ নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর এখন বিভিন্ন পক্ষ নানা দাবি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।

এভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজে বাধা না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে।
‘গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখকষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটি আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসঙ্গতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করব।
‘কিন্তু আমাদেরকে ঘেরাও করে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না।’
ঘেরাও কর্মসূচি ও সমাবেশের মতো যেসব কর্মসূচি চলছে, তা বন্ধে সবার সহযোগিতা চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সবাই মিলে তাদের বোঝান তারা যেন এ সময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।’

বিগত সরকারের সময়ে ‘দলীয়করণের ফলে হওয়া বৈষম্য দূরীকরণ’ এবং প্রশাসনে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতেও সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, দায়িত্ব গ্রহণ করেই আমাদেরকে আইনশৃঙ্খলা অঙ্গনে অস্থির পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থনে দেশপ্রেমিক সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজে যোগ দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকার প্রশাসনে চরম দলীয়করণ করার ফলে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘ দিন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
‘আমরা ইতোমধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আরম্ভ করেছি। তবে প্রশাসনকে গতিশীল রাখতে এবং একই সাথে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সময় প্রয়োজন। সে জন্য সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন জনগণের আস্থা ফিরে পায় সেটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দিনের গণতন্ত্রহীনতা, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য পর্বতসম চ্যালেঞ্জ রেখে গিয়েছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আমরা প্রস্তুত। আজ আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করতে আপনাদের সামনে এসেছি। শুধু আমি বলব, আপনাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
কবে নির্বাচন সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত : নির্বাচন কখন হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘কখন নির্বাচন হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগে সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগত সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব। যাতে হঠাৎ করে এ প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যেকোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।’

দৈনিক সংগ্রাম:

আনসার-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে সচিবালয় রণক্ষেত্র

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা। এ সময় তারা ছাত্রদেরকে লক্ষ্য করে গুলী ছোড়ে। একপর্যায়ে ছাত্ররা সংঘবদ্ধ হয়ে এগিয়ে এলে উভয় পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আনসার সদস্যরা ছাত্রদের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। সচিবালয়সহ আশপাশের এলাকা এ সময় রনক্ষেত্রে পরিনত হয়। আনসার সদস্যদের হামলায় অর্ধশত ছাত্র কমবেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার রাত ৯টার পর এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে তাদের সাথে এসে যোগ দেয় সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষ চলছে বলে জানা গেছে। গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। আনসাররা তাদের অপকর্মের জন্য ছাত্রদের উদ্দেশে হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করার খবর পাওয়া গেছে। সংক্ষুব্দদের হাত থেকে বাঁচতে আনসার সদস্যরা শার্ট খুলে খালি গায়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

কালের কন্ঠ:

দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
টানা বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে আকস্মিক বন্যায় দেশের ১১ জেলা কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। সরকারি হিসাবে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮ জন। মারা গেছে ২০ জন।
কুমিল্লা ও দাউদকান্দি : কুমিল্লা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলার ১৭ উপজেলার মধ্যে ১৪টির পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আট লাখ ২৪ হাজারের বেশি। জেলার বুড়িচং উপজেলায় এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।

আক্রান্ত অনেক মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেনি।

বন্যাকবলিত বেশির ভাগ এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অনেকে পানির মধ্যে বসবাস করছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে বিপাকে পড়েছে মানুষ। দুর্গতদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে।

এমনকি অনেক এলাকায় চার-পাঁচ দিনেও কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি। এত দিনেও সরকারি-বেসরকারি সাহায্য নিয়ে যায়নি কেউ। অনাহারে দিন কাটছে অনেকের। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আক্রান্ত এলাকার জনজীবন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গতকাল পানি কমেছে দুই উপজেলায়ই। কসবায় কিছু সড়কে পানি থাকলেও বেশির ভাগ জায়গার বাড়িঘর থেকে পানি সরে গেছে। আখাউড়ায় বন্যার পানি না থাকলেও কিছু বাড়িতে জলাবদ্ধতা রয়েছে। এদিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল বিকেল থেকে যাত্রী পারাপার শুরু হয়েছে।

মৌলভীবাজার : গতকাল বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মনু নদে পানি অনেকটাই কমে গেছে। তবে কদমহাটা মনু নদের ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকছে। বন্যাকবলিত গ্রামগুলোর বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি কিছুটা নামলেও ফসলি জমি থেকে এখনো পানি নামেনি। নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে।

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : মিরসরাইয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই লাখের বেশি মানুষ। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফেনী নদীর পানি বাড়ায় গত বুধবার থেকে এখানকার ১৬৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে গতকাল সকাল থেকে কিছু কিছু এলাকায় পানি কমেছে।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে নতুন করে পানির চাপ বাড়ছে। এর আগে গত শনিবার নোয়াখালীর পানির চাপ আসা শুরু করে লক্ষ্মীপুরে। এর সঙ্গে যোগ হয় রাতের ভারি বৃষ্টি। ফলে জেলার বেশ কিছু এলাকায় বেড়েছে পানি। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।

ফেনী : ফেনীতে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। শহরের এসএসকে রোড, ট্রাংক রোডসহ যেসব সড়ক তিন-চার ফুট পানির নিচে ছিল, সেগুলোতেও পানির পরিমাণ দু-এক ফুট কমেছে। তবে এখনো জেলার সব জায়গায় ত্রাণ সহায়তা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেকের। ছাগলনাইয়া উপজেলা থেকে জেলা শহরে অফিসে এসেছেন কবির হোসেন। তিনি জানান, এখনো তাঁর পরিবারসহ বেশ কয়েকটি পরিবার পুরোপুরি পানিবন্দি। কোনো রকম ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না তাঁরা। অনেক কষ্টে একটি নৌকায় করে শহরে এসেছেন। বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীকে ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলেও কেউ যায়নি বলে অভিযোগ কবির হোসেনের।

হবিগঞ্জ : খোয়াই নদের বাল্লা পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপরে হলেও শায়েস্তাগঞ্জ ও মাছুলিয়া পয়েন্টে পানি এখন বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। কুশিয়ারা ও কালনী কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। নদীর পানির পাশাপাশি বন্যাকবলিত জেলার ছয়টি উপজেলার অবস্থা উন্নতি হয়েছে। সরকারিভাবে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হলেও বেশির বাগ মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। জেলার পাঁচ উপজেলার ১৮ হাজার ২৪০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

নোয়াখালী : বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও বর্ষণ অব্যাহত থাকায় মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এদিকে সেনবাগ উপজেলায় পানিতে ডুবে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে সেনবাগ উপজেলার বীরকোর্ট এলাকায় আবদুর রহমান (২) নামের একটি শিশু ঘরের সামনে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে।

দেশের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান। নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্যায় আক্রান্ত জেলা ছিল ১১টি। এগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। বন্যায় এসব জেলার ৭৩টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৪৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা। ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮ জন। ম†ত্যু হয়েছে ২০ জনের। নিখোঁজ রয়েছে দুজন।

প্রথম আলো:

রূপকথার মতো এক জয়

এটা ছিল সবচেয়ে ভালো সময়, সবচেয়ে খারাপ সময়ও…চার্লস ডিকেন্সের আ টেল অব টু সিটিজ বইয়ের শুরুটা কালজয়ী সাহিত্যের চিরন্তন রূপ নিয়ে নেওয়ার আদর্শ উদাহরণ হিসেবে কীভাবে ফিরে ফিরে আসে! ১৬৫ বছর আগে প্রকাশিত সেই উপন্যাসের শুরুর কথাটা কি এই বাংলাদেশের সঙ্গেও মিলে যায় না!

গত কিছুদিনের বাংলাদেশও তো একই সঙ্গে সবচেয়ে ভালো সময় আর সবচেয়ে খারাপ সময়ের বৈপরীত্যময় এক গল্প। অশান্তি, অনিশ্চয়তা, মৃত্যুর মিছিল, গণজাগরণ, নতুন সূর্যোদয়—অভূতপূর্ব এক ডামাডোলের মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে পাকিস্তানে খেলতে যাচ্ছে, তা হয়তো খেয়ালই করেননি অনেকে। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্ট শুরু হয়ে যাওয়ার পরও না। দুনিয়া উল্টে গেলেও ক্রিকেট দেখতে হবে, এমন মানুষজনও ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান করে পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ার পর ‘কী হবে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে’ মনে করে হয়তো পরের দুই দিন এ নিয়ে আর তেমন আগ্রহ বোধ করেননি। পাকিস্তানের কোনো কোনো সাবেক ক্রিকেটার যে বৃষ্টি ছাড়া এই টেস্টে বাংলাদেশকে বাঁচার আর কোনো উপায় দেখেননি, এতে রাগ করাটাও অন্যায় হবে। টেস্ট ইতিহাসেই তো ৬ বা এর চেয়ে কম উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করা কোনো দলের হেরে যাওয়ার ঘটনা একটির বেশি দেখেনি। তার ওপর পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগের ১৩টি টেস্টের একটিতেও যেখানে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। হার বাঁচাতে পেরেছে মাত্র একটি টেস্টেই। এই রানের বোঝা নিয়ে বাংলাদেশ এখানে আর কী-ইবা করবে!

যা করেছে, তা এখন ঢুকে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট–রূপকথায়। পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় সেশনেই খেলা শেষ। মাঠ থেকে বিজয়ীর বেশে বেরোচ্ছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। অবিশ্বাস্যই বলতে হবে, যাঁরা ব্যাট করতে নামার আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে প্রথম জয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে ১০ উইকেটে প্রথম জয়ের গৌরবও। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানের লিড নেওয়ার পরও যা কল্পনা করা একটু কঠিনই ছিল। উইকেট এমনই ব্যাটিংবান্ধব যে তা নিয়ে পাকিস্তান দল তৃতীয় দিন থেকেই ঘ্যানঘ্যান করতে শুরু করেছে। এই উইকেটে পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসেও নিশ্চয়ই বড় রান করবে। বাংলাদেশ যা আশা করতে পারে, তা বড়জোর ড্র। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা বরং চোখ রাঙাচ্ছিল, অবিশ্বাস্য কিছু করে শেষ পর্যন্ত হেরে না বসে!

চতুর্থ দিনের খেলা শেষে ৯৪ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ দল থেকে যখন সরাসরিই জয়ের স্বপ্ন দেখার ঘোষণা, সেটিকে বলতে হয় বলেই বলা মনে করার কারণ ছিল। এই উইকেটে আরও ৯ উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে অলআউট করাই কঠিন। তা করা গেলেও জয়ের যে লক্ষ্য সামনে থাকবে, তা করার সময় থাকবে নাকি! এসব মনে রাখলে কাল পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনের বোলিং পারফরম্যান্সকে বলতে হয় তর্কযোগ্যভাবে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা। সকালেও উইকেট থেকে এমন কিছু সাহায্য পাননি পেসাররা। তারপরও তুলে নিয়েছেন ২ উইকেট। পঞ্চম দিনের উইকেট স্পিনারদের একটু-আধটু সাহায্য তো করবেই। মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান মিলে ৭ উইকেট তুলে নেওয়ায় সেটির যত না ভূমিকা, তার চেয়ে অনেক বেশি দুজনের বুদ্ধিদীপ্ত দারুণ বোলিংয়ের।

সাকিব আল হাসান এই টেস্ট ম্যাচটা কখনো ভুলবেন না। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কত কিছুর মধ্য দিয়েই না গেছেন। সাফল্য-ব্যর্থতা-বিতর্ক-চাপ…কিন্তু কোনো দিন নিশ্চয়ই কল্পনাও করেননি, একদিন কোনো একটা টেস্ট ম্যাচ খেলার সময় তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হবে। এখানেই ক্যারিয়ারের শেষ কি না, উঠে যাবে এই প্রশ্নও। এসব মাথায় নিয়েও যে বোলিংটা করেছেন, তা সম্ভবত শুধু সাকিবের পক্ষেই সম্ভব। ১১.৫ ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়ে মিরাজের ৪ উইকেটও যেটির পাশে একটু ম্লান হয়ে যায়।

সবার মনে ফিরে ফিরে আসবে। তবে উজ্জীবনী মন্ত্রে বোলারদের বলীয়ান করে তোলা ওই ব্যাটিং পারফরম্যান্সই গড়ে দিয়েছে স্মরণীয় এই জয়ের ভিত্তি। চার ফিফটি আর এক সেঞ্চুরির বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। সেই চার হাফ সেঞ্চুরির দুটি আবার ৯৭ ও ৭৭ রানের। আর সেঞ্চুরিটি তো প্রায় ডাবল-ই। ম্যাচসেরা হিসেবে মুশফিকুর রহিমের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই ছিল না। অধুনা বাজবলের ঝনঝনানি যতই তীব্র হয়ে বাজুক না কেন, শতাব্দীপ্রাচীন টেস্ট ব্যাটিংয়ের প্রথাগত রূপ কখনোই মিথ্যা হয়ে যাওয়ার নয়। মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে সব সময়ই মূর্ত সেই আদর্শ টেস্ট ব্যাটিং। প্রায় পৌনে ৯ ঘণ্টায় ৩৪১ বল খেলে ১৯১ রানের ইনিংসটি যেটির সর্বশেষ উদাহরণ।

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম বলে এমনিতেই এই জয়ের আলাদা মহিমা। তা আরও বেড়ে যাচ্ছে ২১ বছর আগের সেই দুঃস্বপ্নের কারণে। ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টের শেষ দিনে (আসলে যা চতুর্থ দিন) বাংলাদেশ মাঠে নেমেছিল জয়ের স্বপ্ন নিয়ে। এবার রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চেয়েও বেশি রঙিন ছিল সেই স্বপ্ন। জয়ের জন্য পাকিস্তানের লাগে ১১৩ রান, হাতে ৪ উইকেট। বিতর্কিত আম্পায়ারিং আর ইনজামামের অতিমানবীয় এক ইনিংস মিলিয়ে সেই টেস্টে হেরে যাওয়া শোকের চাদরে ঢেকে দিয়েছিল দেশকে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আক্ষেপের নাম হয়ে থাকা সেই মুলতান টেস্টের স্মৃতি মনে আছে এই দলের অনেকেরই। তাঁরা তখন স্কুলছাত্র। মুলতান-দুঃখকে কবর দিতে পারার তৃপ্তি মিলিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে এই জয়ের আনন্দ আরও বাঁধনহারা হওয়াটাই স্বাভাবিক!

মানবজমিন:

পানি কমছে ফুটছে ক্ষত
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও অতি ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। স্বস্তি ফিরছে আতঙ্কে দিন পার করা বন্যার্ত এলাকার বাসিন্দাদের। তবে পানি যত কমছে ততই দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষত। সর্বনাশা বন্যায় ধ্বংস হয়েছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি থেকে শুরু করে সব কিছু। পানি নামার পর যখন সড়ক দৃশ্যমান হয় তখন দেখা যায় প্রতিটি সড়কই প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বেশির ভাগ পিচঢালা সড়ক ভেঙে গেছে, স্রোতে ভেঙে গেছে সড়কের বিভিন্ন অংশ। যেগুলো নতুন করে সংস্কার করা ছাড়া কোনো যানবাহন চলার উপায় নেই। ফেনীর সব উপজেলা থেকেই পানি নামছে। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি থেকে ক্রমেই উন্নতির দিকে যাচ্ছে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। তবে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

নতুন করে কোনো জেলা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল বলেন, বন্যার কবলে পড়েছে ১১ জেলার ৭৩ উপজেলা, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৪৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা। এ পর্যন্ত ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮ জন। মারা গেছেন ১৮ জন। গতকাল পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, সদরের যে সব এলাকা থেকে পানি নেমেছে সেসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। অনেকে অনেকদিন পর স্বজনের সন্ধান পেয়েছেন। সেখানে দেখা যায় প্রায় সব সড়কই বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত। কোনো সড়কই ঠিক নেই। যার কারণে পানি কমলেও ত্রাণবাহী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। আবু বকর নামে পরশুরামের এক বাসিন্দা বলেন, অনেকদিন পর পরিবারের খোঁজ পেয়েছি। এলাকার মানুষের তীব্র খাদ্য সংকট রয়েছে। অনেকে দীর্ঘ সময় না খেয়ে আছেন। পরশুরামের আরেক বাসিন্দা বলেন, এলাকায় খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। এদিকে পানি কমেছে ফুলগাজী, ছাগলনাইয়াও। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, পানি কমলেও এখানে খাদ্যের সংকট রয়েছে। সদরে যত পানি নামছে ততই দৃশ্যমান হচ্ছে সড়ক ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি। ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্রোতে ভেঙে গেছে সড়ক। এদিকে সোনাগাজী ও দাগনভূঞা পানি কমলেও সেটি অনেক কম। এ দুই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি। এখনো দুর্গম অনেক এলাকায় পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। তাই মানবেতর জীবন পার করছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। তাছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছালেও নৌকার স্বল্পতার কারণে সেগুলো দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছানো যাচ্ছে না। গতকাল সকাল ৯টায় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশে তেমন বৃষ্টি হয়নি। এতে উজানের নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। ফলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে কোনো কোনো স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে। আবহাওয়া সংস্থার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর কাছাকাছি উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা নেই।

বন্যার পানিতে ডুবে গেছে কুমিল্লার আরও একটি উপজেলা। গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বেশির ভাগ গ্রাম ডুবে যায়। শনিবার বিকাল থেকে পানি আসতে শুরু করলেও সন্ধ্যায় ডুবে যায় উপজেলার মানুষের বাড়িঘর। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২২শে আগস্ট রাতে গোমতীর বুড়িচং উপজেলার বুরবুড়িয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। রাতেই প্লাবিত হয় বুড়িচং উপজেলা। এতে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয় উপজেলা জুড়ে। শনিবার সেই পানি প্রবেশ করে পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায়। এ ছাড়া সকালে ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় ঘুংঘুর নদীর বাঁধ ভেঙে উপজেলায় পানি ঢুকতে থাকে। এখন পর্যন্ত ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চার ইউনিয়নের ২৩ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে বন্যার আরও অবনতি হয়েছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে থাকা জেলার ৫টি উপজেলার বেশির ভাগ এলাকার মানুষ। পানিবন্দি অন্তত ৮ লাখ বাসিন্দা। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চারদিকে এখন বানভাসি মানুষের হাহাকার। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে ত্রাণ ও সুপেয় পানির সংকট। স্থানীয় এলাকাবাসী ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ২০ বছরের পর এত পানি আর জলাবদ্ধতা দেখেনি লক্ষ্মীপুরের মানুষ। গত দুইদিন ধরে ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যার পানি রহমতখালী ও ডাকাতিয়া খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়ছে। বিশেষ করে ৫টি উপজেলা, চারটি পৌরসভা ও সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের মান্দারী, চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, বাঙ্গাখাঁ, লাহারকান্দি ও উত্তর জয়পুরসহ ৪০টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রায় চার থেকে ৬ ফুট পানিতে ডুবে আছে জনপদ। এতে করে সরকারি হিসেবে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা আরও বেশি। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই শিশু সন্তান নিয়ে ছুটছেন আত্মীয়স্বজন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলোতে। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। শুক্রবার বিকাল থেকে জেলার অনেক এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, শনিবার পর্যন্ত সাড়ে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তবে সে সংখ্যা আরও বাড়বে। পাশাপাশি ১৮৫টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও ৬৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদের উদ্ধারে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ৫৭৬ টন চাল, নগদ প্রায় ১১ লাখ টাকা, শিশু ও গো-খাদ্যের বরাদ্দ পাওয়া যায়। সেগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হচ্ছে। আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সবাই মিলে এই দূর্যোগ মোকাবিলা করা হবে।

সমকাল:

গত ১৫ বছরের সব অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল, জমা দেওয়ার নির্দেশ
বেসামরিক জনগণকে গত ১৫ বছরে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ফয়সল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যেসব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বেসামরিক জনগণকে দেওয়া হয়েছে তাদের প্রদান করা লাইসেন্স স্থগিত করা হলো।

এতে আরও বলা হয়, তাদের আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

কালবেলা:

এস আলম সপরিবারে ছাড়েন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব
ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এসব সুবিধা দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থ পাচারের পথ সহজ করা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জবাবদিহি এড়াতে এমন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী এই পরিবারটি যেদিন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন, ঠিক সেইদিনই বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়েছিলেন। নাগরিকত্ব ত্যাগ ও স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ বাংলাদেশে জটিল প্রক্রিয়া হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই দিন সন্ধ্যায় অতি গোপনে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই কাজটি করা হয়। নাগরিকত্ব ত্যাগ ও আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করতে হলে পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হলেও কীভাবে একই দিনে দুটি কাজ সম্পন্ন হলো, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইনজ্ঞরা।

এস আলম পরিবারকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতির নথিতে স্বাক্ষর করেন মো. খায়রুল আলম শেখ। তিনি বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনপত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম এবং আসাদুল আলম মাহির বাংলাদেশে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের এই সুবিধা অর্জনের সুযোগ বা প্রয়োজন নেই। নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বলেই তারা স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিলেও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে এস আলম পরিবারের সদস্যরা জনপ্রতি বিনিয়োগ দেখিয়েছেন মাত্র ৭৫ হাজার ডলার

বাংলাদেশ প্রতিদিন:

কবিরের যত কুকীর্তি,পানির সব টাকা পকেটে
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাকালে কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রভাব খাটানো থেকে শুরু করে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। সরকার ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী আমলা হওয়ায় সেসময় তাকে নিয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতেন না। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে থাকাকালে তার পছন্দের ব্যক্তিরা ছাড়া কেউই ঠিকাদারি কাজ পেতেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন প্রকল্প, নদী খনন, ব্রিজ নির্মাণ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, বাঁকা অংশ সোজাকরণ এবং বেড়িবাঁধে রাস্তা পাকাকরণসহ সব কাজের বেশির ভাগ টাকা গেছে কবির বিন আনোয়ারের পকেটে। ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে অনেকের মতো আত্মগোপনে রয়েছেন কবির বিন আনোয়ারও। এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জে দুই বিএনপি কর্মী ও একজন যুবদল নেতা হত্যার ঘটনায় তিন মামলায় আসামিও হয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র জানায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব থাকাকালে কবির বিন আনোয়ার কক্সবাজারের প্যাঁচার দ্বীপে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নজিরবিহীন প্রতারণা করেছেন। সাগরের উপকূল এলাকার ভাঙন রোধে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জরুরি কাজের আবেদন নিয়ে তিনি নিজের রিসোর্ট রক্ষা করেছেন। এর ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জরুরি বরাদ্দের এই প্রকল্প আবেদন অনুযায়ী স্থানীয় অধিবাসীদের কোনো কাজে আসেনি। গতকাল সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। সংস্থাটির দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলের পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডলের সই করা এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, কবির বিন আনোয়ার ১৯৮৫ ব্যাচে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

গত বছর ৩ জানুয়ারি কবির বিন আনোয়ারকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ওই পদে তিনি ছিলেন মাত্র ১৯ দিন। এরপর তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, কবির বিন আনোয়ার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব থাকাবস্থায় ২০২০ সালে ফেনী জেলায় টেকসই মুহুরী বাঁধ ও নদী ড্রেজিংসহ বন্যা প্রতিরোধে ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন প্রকল্প নামে ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে নদী খনন, ব্রিজ নির্মাণ, মুহুরী নদীর বাংলাদেশ (ফেনী) অংশে ৯২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ, বাঁকা অংশ সোজাকরণ, লুফ, বেড়িবাঁধে রাস্তা পাকাকরণসহ সব কাজের জন্য বরাদ্দ নেওয়া হয় ৩৫০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্পের কাজ নিজের পছন্দের লোকদের দেন কবির বিন আনোয়ার। কাজ ঠিকমতো না করেই টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। সূত্র জানায়, তৎকালীন পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের নির্দেশে রামু উপজেলার রেজু খালের মোহনা এবং প্যাঁচার দ্বীপে সাগরের উপকূল ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও টিউবের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জরুরি এই কাজের দৈর্ঘ্য ৩৩০ মিটার। ব্যয় হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। কবির বিন আনোয়ার জোরপূর্বক গরিব কৃষকের জমি দখল করে সেখানে তার রিসোর্টের রাস্তা বানান। রিসোর্টটির নাম ‘লাইট হাউজ’। কক্সবাজার গেলে তিনি সেখানেই থাকতেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

দিনাজপুরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

৫০০ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ

আপডেট সময় ০৭:৫১:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৪

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর

যুগান্তর:

৫০০ কোটি টাকার সার আত্মসাৎ

কাগজে মজুত বাস্তবে নেই

কাগজে-কলমে ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের ইউরিয়া সারের মজুত থাকলেও এর অস্তিত্ব মেলেনি গুদামে। পরিবহণ ঠিকাদার, বাফার গুদাম ইনচার্জ ও বিসিআইসির কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারী নানা কৌশলে ৯১ হাজার ৬৯৭ টন সার আত্মসাৎ করেছে। এর মধ্যে পরিবহণ ঠিকাদার ৬৬ হাজার টন ইউরিয়া গায়েব করেছেন। গুদামে পৌঁছে না দিয়েই সরবরাহ দেখিয়েছেন খাতা-কলমে।

এছাড়া পটুয়াখালীর বাফার গুদাম ইনচার্জ সাদা কাগজে রিসিভ দেখিয়ে লোপাট করেন ২৩৮৭ টন সার। খোদ যমুনা সার কারখানার গুদাম থেকে গায়েব হয়েছে ১৯ হাজার টন সার। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসে ভয়ংকর দুর্নীতির এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য। শুধু তাই নয়, এসব অনিয়মের ওপর সরকারের নিরীক্ষা অফিসও তদন্ত করেছে। সেখানেও সার আত্মসাতের একই চিত্র পাওয়া গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিসিআইসির চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান রোববার যুগান্তরকে জানান, বাফার গুদামে যে পরিমাণ সারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি সেটিই তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মামলা করা ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) পাঠানো হয়েছে। দুদকের তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে জানান, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের দুর্নীতির একটি ছোট দৃষ্টান্ত মাত্র।

দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী যে বিকাশ ঘটেছিল এ প্রতিষ্ঠানের একাংশ জড়িয়ে পড়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা যারা এর সঙ্গে জড়িত শুধু তারাই নন, বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলের সুরক্ষা ছাড়া এ সিস্টেম্যাটিক দুর্নীতি করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি হয়েছে তা নয়, লাভবান হয়েছে যারা সুরক্ষা দিয়েছেন, ওইসব প্রভাবশালী মহলও। প্রত্যাশা করব-এ ঘটনায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। সুশাসন ও দুর্নীতি মুক্ত করার একটি বিশাল সুযোগ হয়েছে এই নতুন বাংলাদেশে। এখন এ ধরনের ঘটনায় কিছু দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে পারলে ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা হিসাবে থাকবে।

বিসিআইসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সরবরাহ পরিবহণ ঠিকাদার যে ৬৬ হাজার টন সার আত্মসাৎ করেছে, সে ব্যাপারে মেসার্স নবাব অ্যান্ড কোম্পানির বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। আর যমুনা সার কারখানার গুদাম থেকে আত্মসাতের ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত চলছে। একইভাবে পটুয়াখালী বাফার গুদাম ইনচার্জের কাছে আত্মসাতের ঘটনার জবাব চাওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশে ইউরিয়া সারের মোট চাহিদা ২৭ লাখ টন, টিএসপি সার ৭ লাখ ৫০ হাজার টন, ডিএপি সার ১৫ লাখ টন এবং এমওপি সারের চাহিদা সাড়ে ৯ লাখ টন। কিন্তু বিপুল পরিমাণ সার আমদানি-পরিবহণ ও গুদামজাতকরণ নিয়ে প্রতিবছরই ঘটছে নানা অনিয়ম। অথচ এই সার আমদানি করতে সরকারকে গুনতে হয় কয়েক মিলিয়ন ডলার। বর্তমান ডলার সংকটের কারণে সার আমদানিও ব্যাহত হচ্ছে।

বিসিআইসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চুক্তি মোতাবেক ২০২২ সালে পরিবহণ ঠিকাদার মের্সাস নবাব অ্যান্ড কোম্পানি ৪ হাজার ৪৮২ টন ইউরিয়া সার গুদামে সরবরাহ না করে তা আত্মসাৎ করে। এই সার পরবর্তী বছরেও সরবরাহ করেনি। একইভাবে পৃথক লট থেকে ৬১ হাজার ৭২৬ টন ইউরিয়া সার গুদামে সরবরাহ করেনি একই সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস নবাব অ্যান্ড কোম্পানি।

গুদামে সার সরবরাহ নিয়ে উক্ত প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে বিসিআইসির চুক্তি ছিল। চুক্তির ক্লজ নং-৪(এ) অনুযায়ী পরিবহণ ঠিকাদার পুরো কার্গো খালাসের জন্য পর্যাপ্ত বার্জ বা কোস্টার মোতায়েন করা এবং ৫০ দিনের মধ্যে ব্যাগযুক্ত সার গোডাউন বা কারখানায় পৌঁছে দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি এই সার গুদামে পৌঁছায়নি। যার বাজারের তৎকালীন মূল্য অনুযায়ী পৌনে তিনশ কোটি টাকা। এই আত্মসাতের ঘটনার ব্যাপারে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো সুষ্ঠু জবাব মেলেনি।

নায়াদিগন্ত:

বাধা নয়, কাজ করতে দিন

কবে নির্বাচন সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত
দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের ‘গণতন্ত্রহীনতায়’ দেশের যে পরিস্থিতি হয়েছিল, তা থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণে তার সরকার প্রস্তুত। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ফল ধরে রাখতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি বলেছেন, রাতারাতি এ অবস্থা থেকে উত্তরণ কঠিন। দেশ পুনর্গঠনের কাজে হাত দিতে হয়েছে। বর্তমান সরকারের দুই সপ্তাহ শেষে জনগণের যে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে, তা অনুপ্রেরণামূলক।
এ অবস্থায় সরকারকে ‘জিম্মি করে’ দাবি আদায়ের চেষ্টা না করারও অনুরোধ করেন তিনি।

দায়িত্ব নেয়ার ১৭ দিনের মাথায় রোববার জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তার এই ভাষণ রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যমে একযোগে প্রচার করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দাবিতে আন্দোলনে নিহত ছাত্র-জনতাকে স্মরণ করে এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ভাষণ শুরু করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট শপথ নেয় ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিজয়ের পর এখন বিভিন্ন পক্ষ নানা দাবি নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সচিবালয় ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে।

এভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজে বাধা না দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একটা বিশেষ ব্যাপারে আমরা আপনাদের সহযোগিতা চাচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে প্রতিদিন সচিবালয়ে, আমার অফিসের আশপাশে, শহরের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশ করা হচ্ছে।
‘গত ১৬ বছরের অনেক দুঃখকষ্ট আপনাদের জমা আছে। সেটি আমরা বুঝি। আমাদের যদি কাজ করতে না দেন, তাহলে এই দুঃখ ঘোচানোর সব পথ বন্ধ হয়ে থাকবে।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের কাজ করতে দিন। আপনাদের যা চাওয়া তা লিখিতভাবে আমাদের দিয়ে যান। আমরা আপনাদের বিপক্ষ দল নই। আইনসঙ্গতভাবে যা কিছু করার আছে আমরা অবশ্যই তা করব।
‘কিন্তু আমাদেরকে ঘেরাও করে এই গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোকে আমাদের কাজে বাধা দেবেন না।’
ঘেরাও কর্মসূচি ও সমাবেশের মতো যেসব কর্মসূচি চলছে, তা বন্ধে সবার সহযোগিতা চেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘সবাই মিলে তাদের বোঝান তারা যেন এ সময়ে তাদের অভিযোগের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য আমাদের দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা না দেন।’

বিগত সরকারের সময়ে ‘দলীয়করণের ফলে হওয়া বৈষম্য দূরীকরণ’ এবং প্রশাসনে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতেও সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানান তিনি।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আপনারা লক্ষ্য করেছেন, দায়িত্ব গ্রহণ করেই আমাদেরকে আইনশৃঙ্খলা অঙ্গনে অস্থির পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়েছে। আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থনে দেশপ্রেমিক সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজে যোগ দিয়েছে। ফ্যাসিবাদী সরকার প্রশাসনে চরম দলীয়করণ করার ফলে বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী দীর্ঘ দিন বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
‘আমরা ইতোমধ্যে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আরম্ভ করেছি। তবে প্রশাসনকে গতিশীল রাখতে এবং একই সাথে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সময় প্রয়োজন। সে জন্য সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি।’
প্রশাসনের সব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো যেন জনগণের আস্থা ফিরে পায় সেটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ দিনের গণতন্ত্রহীনতা, ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের জন্য পর্বতসম চ্যালেঞ্জ রেখে গিয়েছে। কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণে আমরা প্রস্তুত। আজ আমি সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করতে আপনাদের সামনে এসেছি। শুধু আমি বলব, আপনাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে।
কবে নির্বাচন সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত : নির্বাচন কখন হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘কখন নির্বাচন হবে, সেটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আমাদের সিদ্ধান্ত নয়। দেশবাসীকে ঠিক করতে হবে আপনারা কখন আমাদের ছেড়ে দেবেন।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের আহ্বানে এসেছি। তারা আমাদের প্রাথমিক নিয়োগকর্তা। দেশের আপামর জনসাধারণ আমাদের নিয়োগে সমর্থন করেছে। আমরা ক্রমাগত সবাইকে বিষয়টি স্মরণ করিয়ে যাব। যাতে হঠাৎ করে এ প্রশ্ন উত্থাপিত না হয় আমরা কখন যাব। তারা যখন বলবে আমরা চলে যাব।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সংস্কারের অংশ হিসেবে নির্বাচন কমিশনকেও সংস্কার করব। কমিশনকে যেকোনো সময় আদর্শ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রাখব।’

দৈনিক সংগ্রাম:

আনসার-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে সচিবালয় রণক্ষেত্র

স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর সচিবালয় এলাকায় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে আন্দোলনরত আনসার সদস্যরা। এ সময় তারা ছাত্রদেরকে লক্ষ্য করে গুলী ছোড়ে। একপর্যায়ে ছাত্ররা সংঘবদ্ধ হয়ে এগিয়ে এলে উভয় পক্ষে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আনসার সদস্যরা ছাত্রদের ওপর ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে। সচিবালয়সহ আশপাশের এলাকা এ সময় রনক্ষেত্রে পরিনত হয়। আনসার সদস্যদের হামলায় অর্ধশত ছাত্র কমবেশি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার রাত ৯টার পর এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে তাদের সাথে এসে যোগ দেয় সেনাবাহিনীর সদস্যরাও। গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে সংঘর্ষ চলছে বলে জানা গেছে। গোটা এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। আনসাররা তাদের অপকর্মের জন্য ছাত্রদের উদ্দেশে হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনা করার খবর পাওয়া গেছে। সংক্ষুব্দদের হাত থেকে বাঁচতে আনসার সদস্যরা শার্ট খুলে খালি গায়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।

কালের কন্ঠ:

দুর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট
টানা বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে আকস্মিক বন্যায় দেশের ১১ জেলা কমবেশি প্লাবিত হয়েছে। সরকারি হিসাবে ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮ জন। মারা গেছে ২০ জন।
কুমিল্লা ও দাউদকান্দি : কুমিল্লা জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, জেলার ১৭ উপজেলার মধ্যে ১৪টির পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা আট লাখ ২৪ হাজারের বেশি। জেলার বুড়িচং উপজেলায় এখনো লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। উপজেলার বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।

আক্রান্ত অনেক মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে পারেনি।

বন্যাকবলিত বেশির ভাগ এলাকায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অনেকে পানির মধ্যে বসবাস করছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে বিপাকে পড়েছে মানুষ। দুর্গতদের অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ত্রাণ সরবরাহ করা হচ্ছে।

এমনকি অনেক এলাকায় চার-পাঁচ দিনেও কোনো ত্রাণ পৌঁছেনি। এত দিনেও সরকারি-বেসরকারি সাহায্য নিয়ে যায়নি কেউ। অনাহারে দিন কাটছে অনেকের। সব মিলিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে আক্রান্ত এলাকার জনজীবন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : কসবা ও আখাউড়া উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। গতকাল পানি কমেছে দুই উপজেলায়ই। কসবায় কিছু সড়কে পানি থাকলেও বেশির ভাগ জায়গার বাড়িঘর থেকে পানি সরে গেছে। আখাউড়ায় বন্যার পানি না থাকলেও কিছু বাড়িতে জলাবদ্ধতা রয়েছে। এদিকে আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে গতকাল বিকেল থেকে যাত্রী পারাপার শুরু হয়েছে।

মৌলভীবাজার : গতকাল বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মনু নদে পানি অনেকটাই কমে গেছে। তবে কদমহাটা মনু নদের ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকছে। বন্যাকবলিত গ্রামগুলোর বাড়িঘর, রাস্তাঘাট থেকে পানি কিছুটা নামলেও ফসলি জমি থেকে এখনো পানি নামেনি। নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দি মানুষের খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে।

মিরসরাই (চট্টগ্রাম) : মিরসরাইয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দুই লাখের বেশি মানুষ। টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফেনী নদীর পানি বাড়ায় গত বুধবার থেকে এখানকার ১৬৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে গতকাল সকাল থেকে কিছু কিছু এলাকায় পানি কমেছে।
লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে নতুন করে পানির চাপ বাড়ছে। এর আগে গত শনিবার নোয়াখালীর পানির চাপ আসা শুরু করে লক্ষ্মীপুরে। এর সঙ্গে যোগ হয় রাতের ভারি বৃষ্টি। ফলে জেলার বেশ কিছু এলাকায় বেড়েছে পানি। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।

ফেনী : ফেনীতে কমতে শুরু করেছে বন্যার পানি। শহরের এসএসকে রোড, ট্রাংক রোডসহ যেসব সড়ক তিন-চার ফুট পানির নিচে ছিল, সেগুলোতেও পানির পরিমাণ দু-এক ফুট কমেছে। তবে এখনো জেলার সব জায়গায় ত্রাণ সহায়তা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ অনেকের। ছাগলনাইয়া উপজেলা থেকে জেলা শহরে অফিসে এসেছেন কবির হোসেন। তিনি জানান, এখনো তাঁর পরিবারসহ বেশ কয়েকটি পরিবার পুরোপুরি পানিবন্দি। কোনো রকম ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছেন না তাঁরা। অনেক কষ্টে একটি নৌকায় করে শহরে এসেছেন। বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবীকে ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করলেও কেউ যায়নি বলে অভিযোগ কবির হোসেনের।

হবিগঞ্জ : খোয়াই নদের বাল্লা পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ওপরে হলেও শায়েস্তাগঞ্জ ও মাছুলিয়া পয়েন্টে পানি এখন বিপৎসীমার অনেক নিচে রয়েছে। কুশিয়ারা ও কালনী কুশিয়ারা নদীর পানি কমলেও এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে। নদীর পানির পাশাপাশি বন্যাকবলিত জেলার ছয়টি উপজেলার অবস্থা উন্নতি হয়েছে। সরকারিভাবে আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হলেও বেশির বাগ মানুষ বাড়ি ফিরে যাচ্ছে। জেলার পাঁচ উপজেলার ১৮ হাজার ২৪০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে।

নোয়াখালী : বন্যার পানি নামতে শুরু করলেও বর্ষণ অব্যাহত থাকায় মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। এদিকে সেনবাগ উপজেলায় পানিতে ডুবে একটি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এদিকে সেনবাগ উপজেলার বীরকোর্ট এলাকায় আবদুর রহমান (২) নামের একটি শিশু ঘরের সামনে বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে।

দেশের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান। নতুন করে কোনো এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি। গতকাল সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বন্যায় আক্রান্ত জেলা ছিল ১১টি। এগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। বন্যায় এসব জেলার ৭৩টি উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৪৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা। ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮ জন। ম†ত্যু হয়েছে ২০ জনের। নিখোঁজ রয়েছে দুজন।

প্রথম আলো:

রূপকথার মতো এক জয়

এটা ছিল সবচেয়ে ভালো সময়, সবচেয়ে খারাপ সময়ও…চার্লস ডিকেন্সের আ টেল অব টু সিটিজ বইয়ের শুরুটা কালজয়ী সাহিত্যের চিরন্তন রূপ নিয়ে নেওয়ার আদর্শ উদাহরণ হিসেবে কীভাবে ফিরে ফিরে আসে! ১৬৫ বছর আগে প্রকাশিত সেই উপন্যাসের শুরুর কথাটা কি এই বাংলাদেশের সঙ্গেও মিলে যায় না!

গত কিছুদিনের বাংলাদেশও তো একই সঙ্গে সবচেয়ে ভালো সময় আর সবচেয়ে খারাপ সময়ের বৈপরীত্যময় এক গল্প। অশান্তি, অনিশ্চয়তা, মৃত্যুর মিছিল, গণজাগরণ, নতুন সূর্যোদয়—অভূতপূর্ব এক ডামাডোলের মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যে পাকিস্তানে খেলতে যাচ্ছে, তা হয়তো খেয়ালই করেননি অনেকে। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্ট শুরু হয়ে যাওয়ার পরও না। দুনিয়া উল্টে গেলেও ক্রিকেট দেখতে হবে, এমন মানুষজনও ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান করে পাকিস্তান প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে দেওয়ার পর ‘কী হবে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে’ মনে করে হয়তো পরের দুই দিন এ নিয়ে আর তেমন আগ্রহ বোধ করেননি। পাকিস্তানের কোনো কোনো সাবেক ক্রিকেটার যে বৃষ্টি ছাড়া এই টেস্টে বাংলাদেশকে বাঁচার আর কোনো উপায় দেখেননি, এতে রাগ করাটাও অন্যায় হবে। টেস্ট ইতিহাসেই তো ৬ বা এর চেয়ে কম উইকেট হারিয়ে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করা কোনো দলের হেরে যাওয়ার ঘটনা একটির বেশি দেখেনি। তার ওপর পাকিস্তানের বিপক্ষে এর আগের ১৩টি টেস্টের একটিতেও যেখানে জিততে পারেনি বাংলাদেশ। হার বাঁচাতে পেরেছে মাত্র একটি টেস্টেই। এই রানের বোঝা নিয়ে বাংলাদেশ এখানে আর কী-ইবা করবে!

যা করেছে, তা এখন ঢুকে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট–রূপকথায়। পঞ্চম দিনের দ্বিতীয় সেশনেই খেলা শেষ। মাঠ থেকে বিজয়ীর বেশে বেরোচ্ছেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার। অবিশ্বাস্যই বলতে হবে, যাঁরা ব্যাট করতে নামার আগেই নিশ্চিত হয়ে গেছে বাংলাদেশের জয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে প্রথম জয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে ১০ উইকেটে প্রথম জয়ের গৌরবও। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে ১১৭ রানের লিড নেওয়ার পরও যা কল্পনা করা একটু কঠিনই ছিল। উইকেট এমনই ব্যাটিংবান্ধব যে তা নিয়ে পাকিস্তান দল তৃতীয় দিন থেকেই ঘ্যানঘ্যান করতে শুরু করেছে। এই উইকেটে পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসেও নিশ্চয়ই বড় রান করবে। বাংলাদেশ যা আশা করতে পারে, তা বড়জোর ড্র। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা বরং চোখ রাঙাচ্ছিল, অবিশ্বাস্য কিছু করে শেষ পর্যন্ত হেরে না বসে!

চতুর্থ দিনের খেলা শেষে ৯৪ রানে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ দল থেকে যখন সরাসরিই জয়ের স্বপ্ন দেখার ঘোষণা, সেটিকে বলতে হয় বলেই বলা মনে করার কারণ ছিল। এই উইকেটে আরও ৯ উইকেট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে অলআউট করাই কঠিন। তা করা গেলেও জয়ের যে লক্ষ্য সামনে থাকবে, তা করার সময় থাকবে নাকি! এসব মনে রাখলে কাল পঞ্চম দিনের প্রথম সেশনের বোলিং পারফরম্যান্সকে বলতে হয় তর্কযোগ্যভাবে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা। সকালেও উইকেট থেকে এমন কিছু সাহায্য পাননি পেসাররা। তারপরও তুলে নিয়েছেন ২ উইকেট। পঞ্চম দিনের উইকেট স্পিনারদের একটু-আধটু সাহায্য তো করবেই। মেহেদী হাসান মিরাজ ও সাকিব আল হাসান মিলে ৭ উইকেট তুলে নেওয়ায় সেটির যত না ভূমিকা, তার চেয়ে অনেক বেশি দুজনের বুদ্ধিদীপ্ত দারুণ বোলিংয়ের।

সাকিব আল হাসান এই টেস্ট ম্যাচটা কখনো ভুলবেন না। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে কত কিছুর মধ্য দিয়েই না গেছেন। সাফল্য-ব্যর্থতা-বিতর্ক-চাপ…কিন্তু কোনো দিন নিশ্চয়ই কল্পনাও করেননি, একদিন কোনো একটা টেস্ট ম্যাচ খেলার সময় তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হবে। এখানেই ক্যারিয়ারের শেষ কি না, উঠে যাবে এই প্রশ্নও। এসব মাথায় নিয়েও যে বোলিংটা করেছেন, তা সম্ভবত শুধু সাকিবের পক্ষেই সম্ভব। ১১.৫ ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়ে মিরাজের ৪ উইকেটও যেটির পাশে একটু ম্লান হয়ে যায়।

সবার মনে ফিরে ফিরে আসবে। তবে উজ্জীবনী মন্ত্রে বোলারদের বলীয়ান করে তোলা ওই ব্যাটিং পারফরম্যান্সই গড়ে দিয়েছে স্মরণীয় এই জয়ের ভিত্তি। চার ফিফটি আর এক সেঞ্চুরির বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। সেই চার হাফ সেঞ্চুরির দুটি আবার ৯৭ ও ৭৭ রানের। আর সেঞ্চুরিটি তো প্রায় ডাবল-ই। ম্যাচসেরা হিসেবে মুশফিকুর রহিমের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বীই ছিল না। অধুনা বাজবলের ঝনঝনানি যতই তীব্র হয়ে বাজুক না কেন, শতাব্দীপ্রাচীন টেস্ট ব্যাটিংয়ের প্রথাগত রূপ কখনোই মিথ্যা হয়ে যাওয়ার নয়। মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে সব সময়ই মূর্ত সেই আদর্শ টেস্ট ব্যাটিং। প্রায় পৌনে ৯ ঘণ্টায় ৩৪১ বল খেলে ১৯১ রানের ইনিংসটি যেটির সর্বশেষ উদাহরণ।

পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম বলে এমনিতেই এই জয়ের আলাদা মহিমা। তা আরও বেড়ে যাচ্ছে ২১ বছর আগের সেই দুঃস্বপ্নের কারণে। ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টের শেষ দিনে (আসলে যা চতুর্থ দিন) বাংলাদেশ মাঠে নেমেছিল জয়ের স্বপ্ন নিয়ে। এবার রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চেয়েও বেশি রঙিন ছিল সেই স্বপ্ন। জয়ের জন্য পাকিস্তানের লাগে ১১৩ রান, হাতে ৪ উইকেট। বিতর্কিত আম্পায়ারিং আর ইনজামামের অতিমানবীয় এক ইনিংস মিলিয়ে সেই টেস্টে হেরে যাওয়া শোকের চাদরে ঢেকে দিয়েছিল দেশকে। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আক্ষেপের নাম হয়ে থাকা সেই মুলতান টেস্টের স্মৃতি মনে আছে এই দলের অনেকেরই। তাঁরা তখন স্কুলছাত্র। মুলতান-দুঃখকে কবর দিতে পারার তৃপ্তি মিলিয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে এই জয়ের আনন্দ আরও বাঁধনহারা হওয়াটাই স্বাভাবিক!

মানবজমিন:

পানি কমছে ফুটছে ক্ষত
উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও অতি ভারী বর্ষণে সৃষ্ট বন্যার পানি নামতে শুরু করেছে। স্বস্তি ফিরছে আতঙ্কে দিন পার করা বন্যার্ত এলাকার বাসিন্দাদের। তবে পানি যত কমছে ততই দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষত। সর্বনাশা বন্যায় ধ্বংস হয়েছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলি জমি থেকে শুরু করে সব কিছু। পানি নামার পর যখন সড়ক দৃশ্যমান হয় তখন দেখা যায় প্রতিটি সড়কই প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। বেশির ভাগ পিচঢালা সড়ক ভেঙে গেছে, স্রোতে ভেঙে গেছে সড়কের বিভিন্ন অংশ। যেগুলো নতুন করে সংস্কার করা ছাড়া কোনো যানবাহন চলার উপায় নেই। ফেনীর সব উপজেলা থেকেই পানি নামছে। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি থেকে ক্রমেই উন্নতির দিকে যাচ্ছে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। তবে বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে।

নতুন করে কোনো জেলা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল বলেন, বন্যার কবলে পড়েছে ১১ জেলার ৭৩ উপজেলা, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৪৫টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা। এ পর্যন্ত ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮ জন। মারা গেছেন ১৮ জন। গতকাল পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়া, সদরের যে সব এলাকা থেকে পানি নেমেছে সেসব এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। অনেকে অনেকদিন পর স্বজনের সন্ধান পেয়েছেন। সেখানে দেখা যায় প্রায় সব সড়কই বড় ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত। কোনো সড়কই ঠিক নেই। যার কারণে পানি কমলেও ত্রাণবাহী যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। আবু বকর নামে পরশুরামের এক বাসিন্দা বলেন, অনেকদিন পর পরিবারের খোঁজ পেয়েছি। এলাকার মানুষের তীব্র খাদ্য সংকট রয়েছে। অনেকে দীর্ঘ সময় না খেয়ে আছেন। পরশুরামের আরেক বাসিন্দা বলেন, এলাকায় খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। এদিকে পানি কমেছে ফুলগাজী, ছাগলনাইয়াও। সেখানকার বাসিন্দারা জানান, পানি কমলেও এখানে খাদ্যের সংকট রয়েছে। সদরে যত পানি নামছে ততই দৃশ্যমান হচ্ছে সড়ক ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি। ঢাকা চট্টগ্রাম হাইওয়ের বিভিন্ন স্থানে মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্রোতে ভেঙে গেছে সড়ক। এদিকে সোনাগাজী ও দাগনভূঞা পানি কমলেও সেটি অনেক কম। এ দুই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি। এখনো দুর্গম অনেক এলাকায় পৌঁছায়নি ত্রাণ সহায়তা। তাই মানবেতর জীবন পার করছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। তাছাড়া জেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছালেও নৌকার স্বল্পতার কারণে সেগুলো দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছানো যাচ্ছে না। গতকাল সকাল ৯টায় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বুলেটিনে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতীয় ত্রিপুরা সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরা প্রদেশে তেমন বৃষ্টি হয়নি। এতে উজানের নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। ফলে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি অব্যাহত আছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে কোনো কোনো স্থানে স্থিতিশীল থাকতে পারে। আবহাওয়া সংস্থার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও এর কাছাকাছি উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা নেই।

বন্যার পানিতে ডুবে গেছে কুমিল্লার আরও একটি উপজেলা। গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বেশির ভাগ গ্রাম ডুবে যায়। শনিবার বিকাল থেকে পানি আসতে শুরু করলেও সন্ধ্যায় ডুবে যায় উপজেলার মানুষের বাড়িঘর। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২২শে আগস্ট রাতে গোমতীর বুড়িচং উপজেলার বুরবুড়িয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। রাতেই প্লাবিত হয় বুড়িচং উপজেলা। এতে আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি হয় উপজেলা জুড়ে। শনিবার সেই পানি প্রবেশ করে পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায়। এ ছাড়া সকালে ব্রাহ্মণপাড়া এলাকায় ঘুংঘুর নদীর বাঁধ ভেঙে উপজেলায় পানি ঢুকতে থাকে। এখন পর্যন্ত ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চার ইউনিয়নের ২৩ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে বন্যার আরও অবনতি হয়েছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে থাকা জেলার ৫টি উপজেলার বেশির ভাগ এলাকার মানুষ। পানিবন্দি অন্তত ৮ লাখ বাসিন্দা। প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। চারদিকে এখন বানভাসি মানুষের হাহাকার। এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে ত্রাণ ও সুপেয় পানির সংকট। স্থানীয় এলাকাবাসী ও জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত ২০ বছরের পর এত পানি আর জলাবদ্ধতা দেখেনি লক্ষ্মীপুরের মানুষ। গত দুইদিন ধরে ফেনী ও নোয়াখালীর বন্যার পানি রহমতখালী ও ডাকাতিয়া খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরে ঢুকে পড়ছে। বিশেষ করে ৫টি উপজেলা, চারটি পৌরসভা ও সদর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের মান্দারী, চন্দ্রগঞ্জ, চরশাহী, দিঘলী, বাঙ্গাখাঁ, লাহারকান্দি ও উত্তর জয়পুরসহ ৪০টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রায় চার থেকে ৬ ফুট পানিতে ডুবে আছে জনপদ। এতে করে সরকারি হিসেবে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা আরও বেশি। ঘরবাড়ি ছেড়ে অনেকেই শিশু সন্তান নিয়ে ছুটছেন আত্মীয়স্বজন ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রগুলোতে। এখন পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। শুক্রবার বিকাল থেকে জেলার অনেক এলাকা বিদ্যুৎবিহীন হয়ে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, শনিবার পর্যন্ত সাড়ে ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। তবে সে সংখ্যা আরও বাড়বে। পাশাপাশি ১৮৫টি আশ্রয়ণ কেন্দ্র ও ৬৬টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ২০ হাজারের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদের উদ্ধারে কাজ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ৫৭৬ টন চাল, নগদ প্রায় ১১ লাখ টাকা, শিশু ও গো-খাদ্যের বরাদ্দ পাওয়া যায়। সেগুলো উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের দেয়া হচ্ছে। আরও বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সবাই মিলে এই দূর্যোগ মোকাবিলা করা হবে।

সমকাল:

গত ১৫ বছরের সব অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল, জমা দেওয়ার নির্দেশ
বেসামরিক জনগণকে গত ১৫ বছরে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার ফয়সল হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিগত ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত যেসব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বেসামরিক জনগণকে দেওয়া হয়েছে তাদের প্রদান করা লাইসেন্স স্থগিত করা হলো।

এতে আরও বলা হয়, তাদের আগামী ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

কালবেলা:

এস আলম সপরিবারে ছাড়েন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব
ব্যাংকিং খাতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর সপরিবারে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বহুল আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলম। ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশি পাসপোর্ট প্রত্যাহার করেন এস আলম, তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন এবং তাদের তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম ও আসাদুল আলম মাহির। একই দিন বিদেশি নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের (পারমানেন্ট রেসিডেন্সিয়াল) অনুমোদন পায় পরিবারটি। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে এসব সুবিধা দিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অর্থ পাচারের পথ সহজ করা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে জবাবদিহি এড়াতে এমন কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রভাবশালী এই পরিবারটি যেদিন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন, ঠিক সেইদিনই বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের অনুমতি পেয়েছিলেন। নাগরিকত্ব ত্যাগ ও স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ বাংলাদেশে জটিল প্রক্রিয়া হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে একই দিন সন্ধ্যায় অতি গোপনে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এই কাজটি করা হয়। নাগরিকত্ব ত্যাগ ও আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করতে হলে পুলিশের বিশেষ শাখার ছাড়পত্রসহ বিভিন্ন দপ্তরের অনুমতি প্রয়োজন হলেও কীভাবে একই দিনে দুটি কাজ সম্পন্ন হলো, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আইনজ্ঞরা।

এস আলম পরিবারকে স্থায়ী বসবাসের অনুমতির নথিতে স্বাক্ষর করেন মো. খায়রুল আলম শেখ। তিনি বর্তমানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

স্থায়ীভাবে বসবাসের আবেদনপত্র অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর এস আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীন, তিন ছেলে আহসানুল আলম, আশরাফুল আলম এবং আসাদুল আলম মাহির বাংলাদেশে স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন। বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের এই সুবিধা অর্জনের সুযোগ বা প্রয়োজন নেই। নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছিলেন বলেই তারা স্থায়ী আবাসিক সুবিধা গ্রহণ করেন।

নথিপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা ঋণ নিলেও স্থায়ী বসবাসের সুযোগ পেতে এস আলম পরিবারের সদস্যরা জনপ্রতি বিনিয়োগ দেখিয়েছেন মাত্র ৭৫ হাজার ডলার

বাংলাদেশ প্রতিদিন:

কবিরের যত কুকীর্তি,পানির সব টাকা পকেটে
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকাকালে কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার প্রভাব খাটানো থেকে শুরু করে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। সরকার ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালী আমলা হওয়ায় সেসময় তাকে নিয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পেতেন না। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের দায়িত্বে থাকাকালে তার পছন্দের ব্যক্তিরা ছাড়া কেউই ঠিকাদারি কাজ পেতেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন, সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন প্রকল্প, নদী খনন, ব্রিজ নির্মাণ, বেড়িবাঁধ নির্মাণ, বাঁকা অংশ সোজাকরণ এবং বেড়িবাঁধে রাস্তা পাকাকরণসহ সব কাজের বেশির ভাগ টাকা গেছে কবির বিন আনোয়ারের পকেটে। ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে অনেকের মতো আত্মগোপনে রয়েছেন কবির বিন আনোয়ারও। এরই মধ্যে সিরাজগঞ্জে দুই বিএনপি কর্মী ও একজন যুবদল নেতা হত্যার ঘটনায় তিন মামলায় আসামিও হয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র জানায়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব থাকাকালে কবির বিন আনোয়ার কক্সবাজারের প্যাঁচার দ্বীপে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নজিরবিহীন প্রতারণা করেছেন। সাগরের উপকূল এলাকার ভাঙন রোধে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জরুরি কাজের আবেদন নিয়ে তিনি নিজের রিসোর্ট রক্ষা করেছেন। এর ফলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জরুরি বরাদ্দের এই প্রকল্প আবেদন অনুযায়ী স্থানীয় অধিবাসীদের কোনো কাজে আসেনি। গতকাল সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক। সংস্থাটির দৈনিক ও সাম্প্রতিক অভিযোগ সেলের পরিচালক উত্তম কুমার মন্ডলের সই করা এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়, কবির বিন আনোয়ারের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে নিজ নামে এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, কবির বিন আনোয়ার ১৯৮৫ ব্যাচে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।

গত বছর ৩ জানুয়ারি কবির বিন আনোয়ারকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। তবে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ওই পদে তিনি ছিলেন মাত্র ১৯ দিন। এরপর তাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা করা হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, কবির বিন আনোয়ার পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব থাকাবস্থায় ২০২০ সালে ফেনী জেলায় টেকসই মুহুরী বাঁধ ও নদী ড্রেজিংসহ বন্যা প্রতিরোধে ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্প নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন প্রকল্প নামে ৮২৫ কোটি টাকার প্রকল্পটিতে নদী খনন, ব্রিজ নির্মাণ, মুহুরী নদীর বাংলাদেশ (ফেনী) অংশে ৯২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ, বাঁকা অংশ সোজাকরণ, লুফ, বেড়িবাঁধে রাস্তা পাকাকরণসহ সব কাজের জন্য বরাদ্দ নেওয়া হয় ৩৫০ কোটি টাকা। কিন্তু প্রকল্পের কাজ নিজের পছন্দের লোকদের দেন কবির বিন আনোয়ার। কাজ ঠিকমতো না করেই টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। সূত্র জানায়, তৎকালীন পানিসম্পদ সচিব কবির বিন আনোয়ারের নির্দেশে রামু উপজেলার রেজু খালের মোহনা এবং প্যাঁচার দ্বীপে সাগরের উপকূল ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও টিউবের প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জরুরি এই কাজের দৈর্ঘ্য ৩৩০ মিটার। ব্যয় হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। কবির বিন আনোয়ার জোরপূর্বক গরিব কৃষকের জমি দখল করে সেখানে তার রিসোর্টের রাস্তা বানান। রিসোর্টটির নাম ‘লাইট হাউজ’। কক্সবাজার গেলে তিনি সেখানেই থাকতেন।