আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর:
মানবজমিন:
জামায়াত নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে
দেড় দশক পর প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাচ্ছে জামায়াত। দলটির কার্যালয় এরইমধ্যে খুলে দেয়া হয়েছে। যদিও রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন না করে সামাজিক কার্যক্রমে মনোযোগ দিয়েছে তারা। ৫ই আগস্টের নাটকীয় পরিবর্তনের পর জামায়াত বৈঠক করেছে প্রেসিডেন্ট, প্রধান উপদেষ্টা এবং সেনাপ্রধানের সঙ্গে। যদিও কাগজে-কলমে দলটি এখনো নিষিদ্ধ। তবে শেষ পর্যন্ত জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার হচ্ছে। সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে দুই-একদিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। নিষিদ্ধের আদেশ এবং নিবন্ধনের বিষয়টি ফয়সালার জন্য জামায়াত এরইমধ্যে শিশির মনিরকে আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে। যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী মানবজমিনকে বলেন, জামায়াত নিষিদ্ধের নির্বাহী আদেশটি ন্যায্যতার ভিত্তিতে দেয়া হয়নি। আমরা আশা করি খুব দ্রুতই ওই আদেশ প্রত্যাহার করে নেয়া হবে।
সম্প্রতি এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমানও আশা প্রকাশ করেন দ্রুত জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহার করা হবে।
তিনি বলেন, কোটা বিরোধী আন্দোলন থেকে জনগণের দৃষ্টি ফেরাতেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও এক সংবাদ সম্মেলনে দলটি নিষিদ্ধের আদেশ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গত পহেলা আগস্ট জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮ (১) ধারায় জামায়াত, ছাত্রশিবিরসহ তাদের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকে নিষিদ্ধ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। সে সময় জামায়াত তীব্র কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। পরে ৫ই আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান।
নয়াদিগন্ত:
জাতির পাশে ঢাবি শিক্ষার্থীরা
গণ-অভ্যুত্থান থেকে প্রলয়ঙ্করী বন্যা
সম্প্রীতি দেশে গণ-অভ্যুত্থান সফল করেছেন দেশের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাধারণ জনতা। এ অভ্যুত্থানে ঝরেছে হাজারো মানুষের তাজা রক্ত। হাসপাতালগুলোতে এখনো আহতরা আহাজারি করছে। বলা যায়, জুলাই বিপ্লবের কঠিন ধাক্কায় কাহিল জনগণ। সেই ধাক্কা না সামলাতেই বন্যার মতো ভয়াবহ দুর্যোগের কবলে বাংলাদেশ। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১৩টি জেলা এখন ভয়াবহ বন্যার কবলে রয়েছে। এই দুর্যোগে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ১৮ জন, আটকা পড়ে আছে অর্ধকোটি মানুষ। জুলাই বিপ্লবের পর ভয়াবহ বন্যার মোকাবেলা কার্যক্রমকে নাম দেয়া হয়েছে আগস্ট বিপ্লব। দুই বিপ্লবেই বুক চিতিয়ে লড়ে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা। বন্যার্তদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্লাটফর্মে হাজারো ঢাবি শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাঁধে কাঁধ রেখে দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
গত বুধবার রাতে ভারত ত্রিপুরায় ডুম্বুর বাঁধ খুলে দেয়ায় আকস্মিক বন্যাকবলিত হয় দেশের ১৩ জেলা। কোনো জায়গায় বিল্ডিংয়ের দোতলা পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। দুর্যোগকালীন সময়ে বসে নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্য সন্তানরা। বন্যার্তদের সহায়তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির ডাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে রাজধানী ঢাকার নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ যে যার সাধ্যমতো দিয়ে যাচ্ছেন ত্রাণসামগ্রী। ত্রাণসামগ্রীর হিসাব রাখা থেকে মজুদ করা এবং বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে পৌঁছে দেয়ার কাজে মনপ্রাণ লাগিয়ে পরিশ্রম করছে তারা। আবাসিক হলগুলোর প্রতিটি রুমে রুমে গিয়ে তোলা হয়েছে নগদ টাকা ও শুকনো খাবার, কাপড় চোপড়, স্যানিটারি ন্যাপকিন, ওষুধসহ জরুরি সামগ্রী। প্রতিটি বিভাগেও তোলা হচ্ছে নগদ টাকা, জরুরি ত্রাণসামগ্রী। ত্রাণ সংগ্রহ, সংরক্ষণে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্টেজে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন। টিএসসি এলাকায় যানজট এড়ানো এবং ত্রাণসামগ্রীর গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো গাড়ি যাতে টিএসসির ভেতরে ঢুকতে না পারে, সে জন্য ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষার্থীরা। আবার কেউ ত্রাণের গাড়িগুলো থেকে ত্রাণসমাগ্রী নামিয়ে বহন করে ক্যাফেটোরিয়া বা গেমসরুমে পৌঁছে দিচ্ছেন। কেউবা দান করা টাকার খেয়াল রাখছেন, আবার কেউ বহন করা মালগুলো স্তূপাকারে সাজিয়ে রাখছেন। আবার সেসব ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে টিমের সাথে বন্যাদুর্গত এলাকায় যাচ্ছে অনেকে। এই অপূর্ব দৃশ্য দেখে মনে হচ্ছে এ যেন নতুন এক বাংলাদেশ। এমন বাংলাদেশ এর আগে কেউ কখনো দেখেনি। শিক্ষার্থীরা বলছে, আমরা সম্মিলিত হয়ে স্বৈরাচারকে হটিয়েছি, সম্মিলিত এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভয়াবহ এই বন্যাদুর্যোগকেও আমরা জয় করতে পারব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালযয়ের সমাজবিভাগের শিক্ষার্থী হারুন ইসলাম বলেন, গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচিতে টিএসসিতে উপচে পড়া ভিড় দেখে মনে হচ্ছে- এটিই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ কখনো হারবে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অকাতরে পরিশ্রম করছেন। ৬ বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৬০ বছর বয়সী বৃদ্ধ এসেছেন বন্যাকবলিত মানুষের সেবায় বস্তাভর্তি ত্রাণ নিয়ে। এভাবেই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সবাই মিলে একতার বাংলাদেশ গড়ে তুলব। গণত্রাণ সংগ্রহ কর্মসূচির স্বেচ্ছাসেবক বলেন, দেশ ও দশের ক্রান্তিলগ্নে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঐক্যবদ্ধ থেকে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দিন-রাত পরিশ্রম করছে। দেশের এ রকম পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল, প্রতিটি বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে নগদ অর্থ, শুকনা কাপড় কালেক্ট, তাদের জন্য ওষুধ ও শুকনা খাবার পানির ব্যবস্থা করছে। আবার টিম গঠন করে সেই ত্রাণসামগ্রী দুর্গতদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে পাশাপাশি বিভিন্ন বোট বা নৌকার মাধ্যমে তাদেরকে উদ্ধার করছে।
প্রথম আলো:
১০ লাখ পরিবার পানিবন্দী
পানি কমতে শুরু করেছে। অনেক এলাকা এখনো বিচ্ছিন্ন। আটকা রয়েছেন লাখো মানুষ।
বৃষ্টি কমে আসায় দেশে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। অনেক জায়গায় পানি নামতে শুরু করেছে। তবে ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লার অনেক উপজেলায় পরিস্থিতি এখনো খারাপ। এর মধ্যে ফেনীর গ্রামাঞ্চলে অন্তত এক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে আটকে আছেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফেনীর বন্যাকবলিত এলাকায় মুঠোফোন নেটওয়ার্ক ভালোভাবে কাজ করছিল না। ফলে সেখানকার প্রকৃত পরিস্থিতি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণাও পাওয়া যায়নি। সরকারি হিসাবে, বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবন্দী প্রায় ১০ লাখ পরিবার।
বন্যাকবলিত এলাকাগুলোতে শুকনা খাবার ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। অনেক জায়গায় স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণ নিয়ে পৌঁছাতে পারছেন না।
সরকারি হিসাবে, গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বন্যায় দেশে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৫ জন, কুমিল্লায় ৪, নোয়াখালীতে ৩, কক্সবাজারে ৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, ফেনীতে ১ ও লক্ষ্মীপুরে ১ জন মারা গেছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০ আগস্ট থেকে গতকাল পর্যন্ত দেশের ১১টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। সেগুলো হলো ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজার। এসব জেলার ৭৭টি উপজেলা আক্রান্ত হয়েছে। মোট ৯ লাখ ৭৯ হাজার ৯০১টি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৫০ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩০। চিকিৎসাসেবায় চালু রয়েছে ৭৬৯টি মেডিকেল টিম।
মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়িতে বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রমে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট ও কন্টিনজেন্ট নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এবার যেসব জেলায় বন্যার ভয়াবহতা বেশি, তার একটি ফেনী। ফেনী সদর উপজেলার ১০ নম্বর ছনুয়া ইউনিয়নের উত্তর টংগিরপাড় হাজিবাড়ি এলাকায় এক পরিবারের সাতজন চার দিন ধরে আটকে আছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। কোনো নৌকাও উদ্ধারে যেতে পারছে না। ওই পরিবারের একজন সদস্য পেশায় শিক্ষক ফারজানা আক্তার আছেন চট্টগ্রাম নগরে। তিনি প্রথম আলোকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রাম জেলার উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের চারটি দল ফেনীতে গতকাল উদ্ধার কার্যক্রম চালিয়ে ২৭ জনকে উদ্ধার করে। স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা মনে করছেন, অন্তত এক লাখ মানুষ এখনো তাঁদের বাড়িঘরে আটকে আছেন।
ফেনী জেলার ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী, পরশুরাম, ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী—এ ছয় উপজেলা পুরোপুরি বন্যাকবলিত। স্থানীয় স্কুল-কলেজ, মসজিদ ও মন্দিরের ভবনে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। সেখানে সুপেয় পানি ও খাবারের সংকট আরও প্রকট হয়েছে।
চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া ত্রাণবাহী ট্রাক ও উদ্ধারের কাজে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবীরা প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে পৌঁছাতে পারছেন না। রাস্তার ধারের গ্রামগুলোতে তাঁরা ত্রাণ দিচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছেন, গতকাল সকাল সাতটা থেকে বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন গ্রামের অন্তত ৭০ জনকে তাঁরা উদ্ধার করেছেন।
গত বুধবার সন্ধ্যা থেকে ফেনীতে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। তবে গত তিন দিন বৃষ্টি না হওয়ায় ফেনী সদরের কিছু এলাকায় পানি নেমেছে।
ইত্তেফাক:
বন্যায় এখনো বিদ্যুৎহীন সোয়া ৯ লাখ গ্রাহক
বন্যায় এখনো দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৯ জেলার মোট ৯ লাখ ২৪ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। ফেনীতে বন্ধ রয়েছে ১৭টি সাবস্টেশন। গতকাল শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত এ পরিস্থিতির তথ্য জানিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, শুক্রবারের চেয়ে শনিবার বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হয়েছে। বন্যায় ফেনীর ১৭টি সাবস্টেশনের সবগুলোই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। জেলার ৪ লাখ ৪২ হাজার ৪৬ গ্রাহকের মধ্যে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৪৬ গ্রাহকই বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন। অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত জেলার মধ্যে রয়েছে কুমিল্লা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। এই জেলাগুলোতে কোনো সাবস্টেশন বন্ধ না হলেও ৯০৫টি ১১ কেভি ফিডারের (ডিস্ট্রবিউশন লাইন পয়েন্ট, যা সাবস্টেশন থেকে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে) মধ্যে ১০৭টি বন্ধ করা হয়েছে।
গতকাল বিকাল পর্যন্ত নোয়াখালীতে ২ লাখ ১৮ হাজার ৫০০, কুমিল্লায় ১ লাখ ৫২ হাজার, চট্টগ্রামে ৭৮ হাজার এবং লক্ষ্মীপুরে ১৫ হাজার গ্রাহক বিদ্যুত্হীন।
কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি গেট খোলা টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই হ্রদের পানি বেড়ে যাওয়ায় কাপ্তাই বাঁধের ১৬টি জলকপাট শনিবার রাত ১০টায় খুলে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে গেইটগুলো ৬ ইঞ্চি খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। পরবর্তী সময়ে প্রয়োজন হলে গেইট খোলার পরিমাণ ৬ ইঞ্চির বেশি করা হতে পারে। গতকাল শনিবার বিকালে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে ভাটি অঞ্চলে জরুরি সতর্কবার্তা দিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার বিকাল পর্যন্ত হ্রদে পানির পরিমাপ ১০৭.৬৬ এমএসএল (মিন সি লেভেল)। যেখানে সর্বোচ্চ পানি ধারণক্ষমতা ১০৯ এমএসএল। পানি নিষ্কাশনের জন্য সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টার মধ্যে প্রতিটি গেটে ছয় ইঞ্চি খুলে দেওয়া হবে। এতে প্রতি সেকেন্ডে ৯ হাজার কিউসেক পানি নিষ্কাশন হবে। বৃষ্টি বা ঢলের কারণে হ্রদে পানি আরও বেড়ে গেলে গেটের খোলা অংশের পরিমাণ বাড়ানো হবে।
কাপ্তাই জল বিদ্যুৎকেন্দ্রের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে হ্রদে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পানি আছে। ফলে কেন্দ্রের পাঁচটি ইউনিটে সর্বোচ্চ ২১৯ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতি ইউনিটের মাধ্যমে ৩২ হাজার সিএফএস পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে। কাপ্তাই বাঁধের গেইট খুলে দিলেও আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, পানি নিয়ন্ত্রিতভাবে ছাড়া হবে। এতে কর্ণফুলী নদীতে স্রোত বাড়লেও বন্যার আশঙ্কা নেই। তবে নদী তীরবর্তী কিছু নিচু ফসলি জমি প্লাবিত এবং চন্দ্রঘোনা ফেরি পারাপার বিঘ্নিত হতে পারে।
ফেনীতে মোবাইল টাওয়ার সচলে বিনা মূল্যে ডিজেল দেওয়ার নির্দেশ
ফেনী জেলার মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার সচল রাখতে মোবাইল অপারেটরদের জেনারেটরগুলোর ডিজেল ফ্রি করার নির্দেশ দিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম। গতকাল বিটিআরসিকে (বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন) তিনি এ নির্দেশনা দেন। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। উপদেষ্টা বলেন, বিদ্যুৎ না থাকায় ফেনী জেলার ৭৮টি মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ার সচল রাখতে প্রচুর ডিজেলের প্রয়োজন হচ্ছে। বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতিতে মোবাইল নেটওয়ার্ক টাওয়ারগুলো সচল রাখা অত্যন্ত জরুরি।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি ঘণ্টায় পোর্টেবল জেনারেটরে (পিজি) (৭৫ কেভি) ডিজেল ব্যবহৃত হয় ২ দশমিক ৩ লিটার এবং জেনারেটর (ডিজি) (৩০ কেভি) ডিজেল ব্যবহৃত হয় ৪ দশমিক ৪ লিটার। এই হিসাবে ৭৮টি জেনারেটরে প্রতিদিন ৬ হাজার ৫৫২ লিটার ডিজেল ব্যবহৃত হয়। যার মূল্য ৭ লাখ ১৪ হাজার ১৬৮ টাকা। ৭ দিনে দরকার হবে ৪৫ হাজার ৮৬৪ লিটার, যার মূল্য ৪৯ লাখ ৯৯ হাজার ১৭৬ টাকা। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টার নির্দেশনায় বিটিআরসির ফান্ড থেকে এই টাকা দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।
কালের কন্ঠ:
এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বন্যা মোকাবেলা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এই মুহূর্তে বন্যা মোকাবেলাকে সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার উল্লেখ করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও দেশবাসীকে বন্যা মোকাবেলায় সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এ আহবান জানান।
গতকাল শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এনজিও প্রতিনিধিরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন। উপকূল ও দুর্গত এলাকায় কর্মরত ৪৪টি এনজিওর কর্তাব্যক্তিরা বৈঠকে অংশ নেন।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম বাসসকে এ তথ্য জানান।
শফিকুল আলম জানান, প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ‘সরকার এই মুহূর্তে বন্যা মোকাবেলাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমাদের অব্যশ্যই এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। সবাই মিলে এ দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে।
’
ড. ইউনূস বন্যা মোকাবেলায় উদ্ধার কার্যক্রম, ত্রাণ বিতরণসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, ‘বন্যা মোকাবেলায় সরকার, এনজিওসহ যাঁরা যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের সবার মধ্যে সমন্বয় বাড়াতে হবে। সম্ভব হলে জেলা পর্যায়েও বন্যা মোকাবেলার কাজ সমন্বিতভাবে করতে হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘কোটি কোটি মানুষ বন্যায় উদ্ধার কার্যক্রম ও ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে আসছে। তাদের মহৎ উৎসাহের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।
যুগান্তর:
সম্পদের পাহাড় গড়েছেন আছাদুজ্জামান মিয়া
গাড়ি, বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট-কী নেই ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার। রীতিমতো গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। শুধু নিজের নামেই নয়; স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে এবং শ্যালক-শ্যালিকার নামেও গড়েছেন বিপুল সম্পত্তি।
অভিযোগ রয়েছে-ডিএমপিতে ঘুস এবং বদলি বাণিজ্যে গড়ে তুলেছেন এসব সম্পদ। তার বিপুল সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুকক)। যুগান্তরের অনুসন্ধানেও এসব সম্পদের সত্যতা মিলেছে। রাজধানীর অভিজাত এলাকা সিদ্ধেশ্বরীর ভিকারুননিসা স্কুলের পাশেই রূপায়ণ স্বপ্ন নিলয়। ৫৫/১ হোল্ডিংয়ে আলিশান এ ভবনটি ১১ তলা। এখানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বর্গফিটের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে আছাদুজ্জামানের মেয়ে আয়েশা সিদ্দিকার নামে।
শুক্রবার দুপুরে সেখানে গেলে নিরাপত্তা ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ যুগান্তরকে বলেন, আমি মাস দেড়েক আগে এখানে চাকরি নিয়েছি। এই ভবনে ১৩০টি ফ্ল্যাট। তাই সব ফ্ল্যাট মালিককে ভালোভাবে চিনি না। বাড়ির ম্যানেজার সোহেল পারভেজ বিস্তারিত বলতে পারবেন। সোহেল পারভেজ জানান, আয়েশা সিদ্দিকার নামে এখানে একটি ফ্ল্যাট আছে। তবে তিনি কখনো এখানে আসেন না। এটি ভাড়া দেওয়া আছে।
ধানমন্ডি ১২/এ নম্বর রোডের ৬৯ নম্বর বাড়িতে রয়েছে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। শুক্রবার দুপুরে ওই বাড়িতে যাওয়া হলে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি মেলেনি। তবে নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাড়ির একজন নিরাপত্তাকর্মী জানান, ধানমন্ডির ১২-এ রোডের ৬৯ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলার পুরো ফ্লোরটি সাবেক ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া কিনেছেন। তবে এটি তার শ্যালকের নামে।
ওই ভবনের তৃতীয় তলার ফ্ল্যাটটি চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সাবেক কমিশনার ইকবাল বাহারের। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি কৃষ্ণপদ রায় বলেন, ইকবাল বাহার হলেন আছাদুজ্জামান মিয়ার খুবই ঘনিষ্ঠ। তাই তারা দুজন একই ভবনে থাকতেন। আমিও একাধিকবার সেখানে গিয়েছি। আছাদুজ্জামান মিয়া কমিশনার থাকা অবস্থায় ওই ভবনে থাকতেন।
শুক্রবার বেলা আড়াইটায় ইস্কাটন গার্ডেন ১৩/এ প্রিয়নীড়ে গিয়ে জানা যায়, সেখানে আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বিস্তারিত জানতে চাইলে নিরাপত্তাকর্মী আব্দুস সালাম ও শাহ আলম যুগান্তরকে বলেন, আমরা এখানে নতুন এসেছি, তাই তেমন কিছু জানি না। ভবনের ম্যানেজার আজাদ আহমেদ জানান, ১৪ তলা এই ভবনে ৪০টি ফ্ল্যাট আছে। বেশিরভাগ ফ্ল্যাটই ২১৩৩ বর্গফুটের। ভবনের ১১ তলায় আছাদুজ্জমানের স্ত্রী আফরোজা জামানের একটি ফ্ল্যাট আছে। তবে সেখানে তিনি থাকেন না। ফ্ল্যাটটি ভাড়া দেওয়া আছে। অভ্যর্থনাকারী আবু বকর প্রতি মাসে ভাড়া তুলে আছাদুজ্জামানের কাছে দিয়ে আসেন। ভাড়া বকেয়া পড়লে বা কোনো সমস্যা হলে আমি নিজে স্যারের সঙ্গে (আছাদুজ্জমান) যোগাযোগ করি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিকুঞ্জ-১ এর ৮/এ রোডের ৬ নম্বর বাড়িটি আছাদুজ্জামানের ছোট ছেলে আসিফ মাহাদীনের নামে। শুক্রবার বিকালে সেখানে যাওয়া হলে বাড়িটি ভেতর থেকে বন্ধ পাওয়া যায়। বেশ কয়েকবার কলিংবেল টিপেও সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে পাশের চার নম্বর বাড়ির গাড়িচালকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল এই প্রতিবেদকের।
ওই গাড়িচালক জানান, ‘আছাদুজ্জামান মিয়া সপরিবারে এই বাড়িতে থাকতেন। সরকার পতনের পর তিনি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। সম্প্রতি বাসার নেমপ্লেট খুলে রাখা হয়েছে। এই বাড়িটির মূল্য ১০ কোটি টাকার বেশি।’ কথা বলার একপর্যায়ে ৬ নম্বর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় একটি গাড়ি। তখন ওই গাড়িচালক বলেন, ওই দেখেন আছাদুজ্জামানের গাড়িচালক এসেছেন। পরে তিনি জানান, ‘তার নাম ফারুক। তিনি আছাদুজ্জামানের ছেলে মাহাদীনের গাড়ি চালান। আগে এই বাড়িতে সপরিবারে আছাদুজ্জামান মিয়া থাকতেন। এখন কেউ থাকেন না।’
এরই মধ্যে ভেতর থেকে উঁকি দেন এক ব্যক্তি। তিনি জানান, তার নাম রিয়াজুল। তিনিও একজন গাড়িচালক। বাড়িতে কে আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে শুধু আমি, দু-একজন কেয়ারটেকার এবং স্যারের (আছাদুজ্জামান মিয়া) স্ত্রী আফরোজা জামান থাকেন।’ আফরোজা জামানের সঙ্গে দেখা করা যাবে কিনা-জানতে চাইলে বলেন, ‘আপনি একটু দাঁড়ান। আমি উনার অনুমতি নিয়ে আসি।’ বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি এসে জানান, ‘ম্যাডাম কোনো কথা বলবেন না।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের ১ নম্বর রোডের ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠার ওপর ৬ তলাবিশিষ্ট আলিশান একটি বাড়ি আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে। ওই বাড়িতে পরিচালিত হচ্ছে রিভেরিফ নামের একটি স্কুল। শুক্রবার বিকালে সেখানে গেলে স্কুলটি বন্ধ পাওয়া যায়। বাইরে থেকে নক করার পর বেরিয়ে আসেন এক ব্যক্তি।
তিনি যুগান্তরকে জানান, তার নাম রমজান আলী। তিনি এখানকার সিকিউরিটি ইনচার্জ। বাড়িটির বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানাতে না পারলেও বলেন, শুনেছি এই বাড়িটি ডিএমপির সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জমান মিয়ার স্ত্রীর নামে। তিনি বলেন, আমি আগে ধানমন্ডি ১২ নম্বরে লেকহেড গ্রামার স্কুলের কেয়ারটেকার ছিলাম। ওই রোডে আছাদুজ্জামান মিয়া থাকতেন। প্রায়ই লেকহেড গ্রামার স্কুলে এসে তিনি (আছাদুজ্জামান) ঝামেলা করতেন। পরে সেটি (স্কুল) বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আমি এখানে এসে চাকরি নিই। স্থানীয় মোহাম্মদ আলী জানান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এই বাড়িটির বাজার মূল্য প্রায় ৫০ কোটি টাকা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পূর্বাচলের নিউ টাউনের ১ নম্বর সেক্টরের ৪০৬/বি নম্বর রোডে ১০ কাঠা জমি রয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে। ওই জমিতে গাড়ি রাখার শেড বানিয়ে রাখা হয়েছে। পূর্বাচলের এই প্লটের প্রতি কাঠা জমির মূল্য এক কোটি টাকারও বেশি। পূর্বাচলের সেক্টর ৪, রোড ১০৮-এ ৫৩ নম্বর প্লটটি আছাদুজ্জামানের স্ত্রীর নামে ছিল। ৫ কাঠার এই প্লটটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আফতাবনগরে ৩ নম্বর সেক্টরে রয়েছে ২১ কাঠা জমি। সেখানে নিজের নামে ১০ কাঠা ও আত্মীয়স্বজনদের নামে রয়েছে বাকি ১১ কাঠা জমি।
সূত্র জানায়, আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে ঢাকা ছাড়াও ফরিদপুর ও নারায়ণগঞ্জে বিপুল সম্পদ রয়েছে। ২০১৮ সালে তিনি রাজউক থেকে বিশেষ কোটায় একটি প্লট বরাদ্দ পান। অথচ রাজউকের নীতিমালা অনুযায়ী, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের প্লট বরাদ্দ পাওয়ার সুযোগ নেই।
বনিক বার্তা:
বানোয়াট পরিসংখ্যানের প্রধান পরিকল্পনাকারী লোটাস কামাল
সরকারি পরিসংখ্যান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পরও দেশে আশানুরূপ কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়ায় অর্থনীতির মূল সূচকগুলো হয় প্রশ্নবিদ্ধ। ২০১৪ সালে পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামাল দায়িত্ব নেয়ার পর পরিসংখ্যান বিভ্রাট আরো প্রকট হয়। মূল্যস্ফীতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ডাটা প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে পাঁচ-ছয়জনের একটি সিন্ডিকেট। অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকের তথ্য ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানোর অভিযোগ ওঠে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গেও বাড়তে থাকে পরিসংখ্যানগত পার্থক্য। এ প্রবণতা অব্যাহত ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের পরবর্তী সময়েও। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যেই কেবল সাড়ে ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বেশি দেখানো হয়েছিল। এসব বানোয়াট পরিসংখ্যানের প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে মনে করা হয় লোটাস কামাল তথা তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামালকে।
আ হ ম মুস্তফা কামাল ১৯৭০ সালে পুরো পাকিস্তানের চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। এর আগে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৭ সালে কমার্সে স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ সালে অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। আইন শাস্ত্রেও রয়েছে তার স্নাতক ডিগ্রি। মেধার স্বীকৃতি হিসেবে শিক্ষাজীবনেই তিনি ‘লোটাস’ উপাধি পেয়েছিলেন। তবে তার এ জ্ঞানকে ভালো কাজে ব্যবহার হয়নি বলে মনে করেন অনেকেই। ২০১৮ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আবারো ক্ষমতায় এলে মিথ্যা তথ্য তৈরির পুরস্কার হিসেবে পরিকল্পনামন্ত্রী লোটাস কামালকে ২০১৯ সালে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বে বসান শেখ হাসিনা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক অর্থনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল দেশের পরিসংখ্যান, যা পরিচালিত হতো শীর্ষ পর্যায় থেকে। ফলে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রেখে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধি দেখানো হতো। কিন্তু সামষ্টিক তথ্যের সঙ্গে যার কোনো মিল ছিল না। মূলত রাজনৈতিক কারণে পদ্ধতিগত পরিবর্তন এনে সরবরাহ করা হয় বিকৃত পরিসংখ্যান। এসব ভুল তথ্যের ভিত্তিতে নীতি নির্ধারণের কারণেই ধাক্কা লেগেছে দেশের অর্থনীতিতে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিসংখ্যানগত পারফরম্যান্স বিবেচনায় স্কোর প্রকাশ করে থাকে বিশ্বব্যাংক। ২৫টি সূচক বিবেচনায় এমন তালিকা তৈরি হয়। ২০১৪ সালে প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিক্যাল ক্যাপাসিটি ইন্ডিকেটরে বাংলাদেশের স্কোর ছিল একশর মধ্যে ৮০। কিন্তু এরপর থেকে তা ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকে। ২০১৮ সালে সে স্কোর দ্রুত হ্রাস পেয়ে ৬২-তে নেমে যায়। ২০২০ সালে নেমে আসে ৬০-এ, যেখানে দক্ষিণ এশিয়ার গড় স্কোর ছিল ৬৯। সে সময় মেথডোলজি বা পদ্ধতিগত সূচকে সবচেয়ে বড় পতনের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। এক্ষেত্রে ২০১৪ সালের ৭০ স্কোর থেকে ২০২০ সালে তা অর্ধেকের বেশি কমে ৩০-এ নেমে আসে।
সমকাল:
আইএমএফের কাছে আরও ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ চায় বাংলাদেশ
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আরও ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চাইবে বাংলাদেশ। আইএমএফের চলমান ৪ দশমিক ৭০ বিলিয়ন ডলার ঋণের চতুর্থ কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত পূরণের অগ্রগতি মূল্যায়নে সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে আসবে। বাংলাদেশ তখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যমান ঋণের আওতায় অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ চাইবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা সমকালকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আইএমএফের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিয়ত নানা প্রয়োজনে যোগাযোগ আছে। আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা সংস্কার চায়। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের পর নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার এরই মধ্যে বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এসব সংস্কারকে সমর্থন করতে আইএমএফ নিশ্চয় সহযোগিতা করবে। আগামী অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় আইএমএফের বার্ষিক সভায় অতিরিক্ত ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের আশা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর আহসান এইচ মনসুর ব্লুমবার্গকে বলেন, বাংলাদেশ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে গেছে। এটি কাটিয়ে উঠতে ঋণের প্রয়োজন। বকেয়া ঋণ মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক থেকেও ডলার কেনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বাজেট সহায়তার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কাছে অতিরিক্ত দেড় বিলিয়ন ডলার এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) কাছে আরও ১ বিলিয়ন ডলার করে চাওয়া হয়েছে।
রিজার্ভ সংকট মেটাতে বাংলাদেশ দেশীয় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে নিয়মিতভাবে ডলার কিনছে। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর এরই মধ্যে অন্তত ২০ কোটি ডলার কিনেছে বলে জানা গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য, দেশীয় ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রতি মাসে ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার কেনা। রপ্তানিতে কিছুটা চাপ থাকলেও অর্থ পাচার বন্ধ বা সংকুচিত হওয়া এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্সের অর্থ বৃদ্ধি পাওয়ায় এমন লক্ষ্য পূরণ সম্ভব হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংকট সামাল দিতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নানা সংস্কারের শর্তে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। আইএমএফের এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে বেশ কিছু শর্ত প্রতিপালন করতে হচ্ছে। ঋণচুক্তির অন্য অনেক শর্ত পরিপালন করলেও নির্দিষ্ট সময় অন্তর রিজার্ভ-সংক্রান্ত শর্ত পরিপালন করতে পারছে না বাংলাদেশ। তার পরও ইতোমধ্যে তিন কিস্তিতে প্রায় ২ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার বা ২৩০ কোটি ৮২ লাখ ডলার ছাড় করেছে আইএমএফ। ২০২৬ সাল পর্যন্ত মোট সাতটি কিস্তিতে ঋণের পুরো অর্থ ছাড় করার চুক্তি রয়েছে।
সর্বশেষ গত ২৭ জুন তৃতীয় কিস্তিতে ১১৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ছাড় করে আইএমএফ। যদিও সম্পাদিত ঋণচুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড়ের পর পরবর্তী ছয়টি কিস্তিতে সমান ৭০ কোটি ৩৯ লাখ ৫৫ হাজার ডলার পাওয়ার কথা ছিল। তবে রিজার্ভ সংকটের কারণে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ কিস্তির অঙ্ক বাড়িয়ে প্রায় ১১৫ কোটি ডলার করে ছাড়ের প্রস্তাব করা হয়। আইএমএফ তা অনুমোদন করে। ফলে আগামী ডিসেম্বরে আরও প্রায় ১১৫ কোটি ডলার ছাড়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
কালবেলা:
বিচারপতি মানিকের দখলে ৯০০ কোটি টাকার জমি
যত বিতর্কিত কাণ্ড
১.যাকে খুশি আদালতে ডেকে করতেন অপমান,২. বিজনেস ক্লাসে বসতে না পেরে বিমানে তুলকালাম,৩.সালাম না দেওয়ায় ট্রাফিক কর্তাদের আদালতে তলব,৪.২১ জন সিনিয়রকে ডিঙিয়ে পদোন্নতি,৫.সরকারি বাড়িতে থেকে ভাড়া না দেওয়া,৬.লন্ডনে বাড়ি কিনে আয়ের উৎস দেখাতে না পারা ৭.টকশোতে উপস্থাপিকার সঙ্গে অশোভন আচরণ
বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে সমালোচিত হয়েছেন বারবার। বিচারপতির আসনে বসে যখন যাকে খুশি আদালতে ডেকে অপমান-অপদস্থ করা, বিজনেস ক্লাসে বসতে না পেরে বিমানের ভেতর তুলকালাম, রাস্তায় সালাম না দেওয়ায় ট্রাফিক পুলিশকে আদালতে তলব, ২১ জন সিনিয়রকে ডিঙিয়ে পদোন্নতি, সরকারি বাড়িতে থেকে ভাড়া না দেওয়া, লন্ডনে বাড়ি কিনে আয়ের উৎস দেখাতে না পারা এবং সর্বশেষ টকশোতে গিয়ে উপস্থাপিকার সঙ্গে অশোভন আচরণসহ নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। এখানেই শেষ নয়, দখলবাজিতেও পিছিয়ে ছিলেন না সাবেক এই বিচারপতি। রাজধানীর বারিধারায় দুস্থ সাংবাদিকদের নামে ওয়াকফ করা প্রায় ৯০০ কোটি টাকার ৫ একর জমি দখল করেছেন তিনি। এরপর ডেভেলপার কোম্পানিকে দিয়ে গড়েছেন সাতটি আটতলা ভবন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর প্রতিবেশী দেশে পালাতে গিয়ে গত শুক্রবার রাতে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) হাতে ধরা পড়ে আরেকবার আলোচনায় এসেছেন সাবেক বিচারপতি মানিক।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুস্থ ও অসহায় সাংবাদিকদের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৯৮ সালে জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার (জার) নামে একটি সংস্থাকে ঢাকার বারিধারায় ১০ একর জমি লিজ দেয় সরকার। এরপর ২৭ বছর পার হলেও সাংবাদিকরা জমির দখল পাননি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই ওই জমিতে নজর পড়ে সুপ্রিম কোর্টের সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের। প্রভাব খাটিয়ে সেখান থেকে ৫ একর জমি দখলে নেন তিনি। নথিপত্র অনুযায়ী, ১৮৮৫ সাল থেকে আইন উদ্দিন হায়দার ও ফয়জুন্নেছা ওয়াকফ এস্টেটের মালিকানাধীন হলেও ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি দেখান মানিক। এরপর ‘অ্যাডভান্স ডেভেলপমেন্ট’ নামের একটি কোম্পানিকে দিয়ে সেখানে তৈরি করেন ৮ তলাবিশিষ্ট সাতটি ভবন। সব মিলিয়ে তৈরি হয় শতাধিক ফ্ল্যাট।
দেশ রুপান্তর:
কারফিউতে বিপদে ৮১% ইন্টারনেট বন্ধে ৭১
জুলাই মাস উত্তপ্ত ছিল ছাত্র আন্দোলনে। মধ্য জুলাই থেকে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার কারফিউ জারি করে, বন্ধ করে দেয় ইন্টারনেট। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ার আগে তার সরকারের এমন জনস্বার্থবিরোধী নানা পদক্ষেপে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে সাধারণ মানুষ।
আওয়ামী লীগ সরকারের ওইসব পদক্ষেপে দেশের মানুষ কী ধরনের ক্ষতিতে পড়েছে, তা নিয়ে গত ২১ আগস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম (ডব্লিউএফপি)। বাংলাদেশ বিষয়ে করা ডব্লিউএফপির ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, গত জুলাই মাসে কারফিউ জারির কারণে ৮১ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার চরম বিপাকে পড়তে হয়েছিল। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৭১ শতাংশ পরিবার। কয়েক বছর ধরে করোনা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে নিম্ন আয়ের বিপুলসংখ্যক মানুষকে ঋণ করে খাবার জোগাড় করতে হচ্ছে। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে সরকারের পদক্ষেপে মানুষ আরও চাপে পড়েছে। ঋণ করে খাবার কেনা মানুষের সংখ্যা আরও বেড়েছে।
ডব্লিউএফপি জানিয়েছে, বিগত সরকারের পদক্ষেপে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দেশের ৪৮ শতাংশ মানুষকে ঋণ করে খাবার খেতে হচ্ছে। গত ডিসেম্বর ঋণ করে খাবার কেনা মানুষের সংখ্যা ছিল ৪০ শতাংশ।
জাতিসংঘের এ সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জুলাই মাসে বাংলাদেশের নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশব্যাপী অস্থিরতা, ইন্টারনেট বন্ধ থাকা এবং সর্বশেষ কারফিউর কারণে তারা এ ধরনের ক্ষতির শিকার হন। কারণ বাড়ি থেকে পেশা চালানো যায় না। জুলাই মাসে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা গড়ে দ্বিগুণ ছিল। জরিপ করা পরিবারের প্রায় অর্ধেককেই ঋণ করে খাবার কিনতে হয়েছিল বলে জানিয়েছে ডব্লিউএফপি।
ডব্লিউএফপি এ জরিপটি খুব দ্রুত চালিয়েছে বলে উল্লেখ করেছে তাদের প্রতিবেদনে। টেলিফোনে এ জরিপ চালানো ২৭০টি পরিবারের মধ্যে, ৪৪ শতাংশের পেশা দৈনিক শ্রমিক (কৃষি এবং অকৃষি উভয়), রাজমিস্ত্রি, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, পোশাকশ্রমিক, ছোট খুচরা বিক্রেতা, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইত্যাদি।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি আরও কয়েক মাস থাকতে পারে। খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ঠেকাতে বর্তমান সরকার যে পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা ইতিবাচক।
গত মাসে ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে কারফিউ জারির কারণে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের বিপদই ছিল নজিরবিহীন। ডব্লিউএফপির প্রতিবেদন বলছে, এ সময় ৪৫ শতাংশ নিম্ন আয়ের পরিবার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে।
জুলাই মাসে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনার একটি ছিল ৫ দিন ইন্টারনেট বন্ধ থাকার বিষয়টি। এ কারণে ৭১ শতাংশ মানুষ বিপাকে পড়েছে। কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় ৫২ শতাংশ চরম খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় পড়েছে। ভয়ে বাজারেই যেতে পারেনি ৫৪ শতাংশ পরিবার।
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে কিছু ভালো কাজের উদাহরণ থাকলেও শেষ কয়েক বছরে আর্থিক খাতে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছিল বেশি। চর দখলের মতো ব্যাংক দখল করায় ব্যাংক খাতের অনিয়ম, লুটপাট হয়েছে বহু গুণ। দেখা দিয়েছিল তারল্যসংকট। মুদ্রা পাচারের মতো বড় ঘটনাও ঘটেছে। শেষে দেখা দিয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও রিজার্ভসংকট। ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ নেমে আসে ১২ বিলিয়ন ডলারে, মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশে, খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৪ শতাংশের বেশি হয়েছে।
আর্থিক খাতের এমন ভঙ্গুর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে গড়ে দশটি পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবার পর্যাপ্ত খাবারের সামর্থ্য রাখে না বলে জানিয়েছে ডব্লিউএফপির এই প্রতিবেদন। জরিপে প্রায় দশটি নিম্ন আয়ের পরিবারের মধ্যে পাঁচটি একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিল বলেও উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ প্রতিদিন:
লড়াই বানভাসি মানুষের
♦ ফেনীতে কোথাও উন্নতি কোথাও অবনতি ♦ পানি কমছে হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, খাগড়াছড়িতে ♦ অনেক জায়গায় পৌঁছায়নি ত্রাণ ♦ ১১ জেলায় ক্ষতিগ্রস্ত ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ জন ♦ আশ্রয় কেন্দ্রে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ জন ♦ কাজ করছে ৭০ মেডিকেল টিম ♦ চলছে উদ্ধার তৎপরতাদেশে চলমান বন্যায় ১১ জেলায় এখন পর্যন্ত ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১৮ জন। ৩ হাজার ৫২৭ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ জন। মজুত আছে পর্যাপ্ত ত্রাণ। দুর্গত এলাকায় কাজ করছে ৭০টি মেডিকেল টিম। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস, ছাত্র সমাজ ও বিজিবি চালাচ্ছে উদ্ধার তৎপরতা। বন্যা-পরবর্তী সময়ে রোগ-ব্যাধি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য রয়েছে পূর্ব প্রস্তুতি। গতকাল সচিবালয়ে চলমান বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান। বন্যা পরিস্থিতির ক্রম উন্নতি হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ত্রাণসচিব কামরুল হাসান বলেন, এখন পর্যন্ত বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা ১১টিই আছে। ?এসব জেলায় মোট ক্ষতিগ্রস্ত লোকসংখ্যা ৪৯ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৯ জন। এ ছাড়া চট্টগ্রামে পাঁচ, কুমিল্লায় চার, নোয়াখালী ও কক্সবাজারে তিনজন করে এবং ফেনী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন করে মোট ১৮ জন মারা যান। সচিব বলেন, এ পর্যন্ত ৩ হাজার ৫২৭টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৮ মানুষ এবং ২১ হাজার ৬৯৫টি গবাদি পশু আশ্রয় নিয়েছে। ত্রাণ কার্যক্রমের বিষয়ে সচিব বলেন, বন্যাদুর্গত ১১ জেলায় মোট ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণের চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২০ হাজার ১৫০ টন। শুকনা ও অন্যান্য খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১৫ হাজার পিস। শিশুর খাদ্য কেনার জন্য ৩৫ লাখ এবং গো-খাদ্য কেনার জন্য ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। দেশের সব জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী মজুত রয়েছে জানিয়ে সচিব বলেন, বন্যাকবলিত জেলার জেলা প্রশাসকদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, মেডিকেল টিম ও অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে একসঙ্গে কাজ করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৪ ঘণ্টায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হবে জানিয়ে সচিব বলেন, আবহাওয়া সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস নেই। এ সময়ে মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু, খোয়াই ও ধলাই নদী সংলগ্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, একই সঙ্গে আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে এবং তৎসংলগ্ন উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের আভাস নেই। এ সময়ে এই অঞ্চলের ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার মুহুরী, ফেনী, গোমতী ও হালদা নদী সংলগ্ন এলাকায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চিকিৎসাসেবা নিয়ে কামরুল হাসান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোতে চিকিৎসাসেবা দিতে ৭০টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। ফেনীতে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত করা হয়েছে। সেনাবাহিনী ও জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসকরা সেখানে সেবা দিচ্ছেন।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে সার্বক্ষণিক কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। তথ্য ও সহযোগিতার জন্য ০২-৫৫১০১১১৫ নম্বর চালু রয়েছে। ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও লক্ষ্মীপুর জেলার বন্যা উপদ্রুত এলাকায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ছাত্র সমাজ ও বিজিবি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত রয়েছে? বলেও জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সচিব। তিনি আরও বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বন্যা উপদ্রুত এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। উপদেষ্টা বর্তমানে ফেনীতে অবস্থান করছেন। ফেনী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে একটি ভি-স্যাট চালু করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সচিব। তিনি বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ের মানুষ কিংবা গবাদি পশুর রোগ-ব্যাধি যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সেজন্য আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি রয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে, তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে।