ঢাকা ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::

গণত্রাণ কার্যক্রমে মানুষের ঢল

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর:

যুপান্তর:

গণত্রাণ কার্যক্রমে মানুষের ঢল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে স্বেচ্ছাশ্রম
দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যাকবলিতদের জন্য আয়োজিত ‘গণত্রাণ’ কার্যক্রমে মানুষের ঢল নেমেছে। শুক্রবার নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলে দলে আসেন। ত্রাণ সংগ্রহ করে মাঠপর্যায়ে পৌঁছাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দেশের বন্যা পরিস্থিতিতে বুধবার গণত্রাণ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সরেজমিন শুক্রবার বিকালে দেখা যায়, ঢাবির টিএসসির প্রবেশপথে একের পর এক ট্রাক, বাইক, রিকশা, প্রাইভেটকার জড়ো হচ্ছে। আর এসব যানবাহনে যে যার সাধ্যমতো সাহায্য নিয়ে আসছেন। গাড়িগুলো থামার সঙ্গে সঙ্গেই নামানো হচ্ছে শুকনো খাবার, খেজুর, ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, খাবার পানিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। এসব সংগ্রহ করে ভেতরের ক্যাফেটেরিয়া, অডিটরিয়াম আর গেমস রুমে জড়ো করা হচ্ছে। টিএসসির গেট থেকে ভেতরের রুমে ত্রাণসামগ্রী প্যাকেট করছে আলাদা আলাদা গ্রুপ। কথা হয় ত্রাণ দিতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও কর কমিশনার মোনালিসা শাহরিন সুস্মিতার সঙ্গে।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা আমার নেই। ফলে এখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শামিল হতে কিছু সাহায্য নিয়ে এসেছি। এসএ ট্রেডলিং নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগের সাইফুল ইসলাম পলাশ বলেন, আমি মিরপুর থেকে এসেছি। আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নই। তার পরও আমার সামর্থ্য অনুযায়ী পাঁচটি কাপড় নিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছি।

এদিকে শিক্ষার্থীরা সাহায্য সংগ্রহ করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন বুথ তৈরি করেন যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। টিএসসির প্রধান প্রবেশপথের পাশেই একটি বুথে নগদ টাকা সংগ্রহ করছেন কয়েকজন। তারই পাশে আরেকটি বুথে কাপড় সংগ্রহ করছেন আরেক দল শিক্ষার্থী। রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মিনার হোসেন বলেন, আমার পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ও কাপড় সংগ্রহ করে এখানে দিয়েছি। ১২ হাজার টাকা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন আগেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজপথে ছিলাম। ফলে তাদের ওপর আস্থা আছে। অন্যদিকে টিএসসি বাদেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল, বিভাগের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের মতো করে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। শুক্রবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের সামনে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি বক্স ও প্লাকার্ড নিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। এসএম হলের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম নওশাদ বলেন, আমাদের হলে বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাহায্য সংগ্রহ করেছি

নয়াদিগন্ত:

দিশেহারা বন্যার্ত মানুষ
– ১৭ জনের মৃত্যু, ক্ষতিগ্রস্ত ৪৫ লাখ
– প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা
– উদ্ধার তৎপরতায় সেনা মোতায়েন
– ১১ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন
– পদ্মা ও গড়াই নদীর পানিও বাড়ছে

বন্যায় বিধ্বস্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ ১২ জেলায় বিপর্যয়ের কবলে লাখ লাখ পানিবন্দী মানুষ। খাদ্য, খাবার পানি ও আশ্রয়ের অভাবে দুর্গত মানুষ এখন দিশেহারা। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে অন্যান্য সূত্রে মৃতের সংখ্যা কয়েক শতাধিক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৫০ লাখ মানুষ। এ দিকে টানা ভারীবর্ষণ ও উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলের পানিতে সৃষ্ট উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণতৎপরতা জোরদার হয়েছে। গতকাল অনেক এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বানের পানি কমতে শুরু করেছে। সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোনো কোনো স্থানে পানি কিছুটা কমলেও ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লায় বন্যাপরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। গোমতি নদীর বাঁধ ভেঙে ছয় লাখ মানুষ নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বানের পানি বঙ্গোপসাগরমুখী হওয়ায় কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুরসহ এখনো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার, ত্রাণতৎপরতা, চিকিৎসা ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের উপদেষ্টারা দুর্গত এলাকায় যাচ্ছেন এবং ত্রাণতৎপরতায় যোগ দিচ্ছেন।

গোমতি নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ হাজার পরিবার : হাবিবুর রহমান চৌধুরী কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে বুড়িচং উপজেলার সাত ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গোমতির বাঁধ ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। ৬০ হাজার পরিবার বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় এ ঘটনা ঘটে। ভাঙন এলাকার পাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতে বাঁধ ভাঙার কারণে অধিকাংশ লোকজন ঘরবাড়িতে আটকা পড়েছে। জেলা সদরের সাথে উপজেলা সদরের প্রধান সড়কের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান। জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে ওই স্থানের নিচ দিয়ে পানি বের হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজন বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু রাত পৌনে ১২টার দিকে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। শুক্রবার সকালে প্রায় ৬০ ফুটের মতো বাঁধ ভেঙে যায়, তবে পানি বের হওয়ার সাথে সাথে ভাঙার পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
তিনি আরো বলেন, পানি এখনো বিপদসীমার ওপরে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় ছিল ১৩৪ সেন্টিমিটার উপরে, শুক্রবার সকালে বিপদসীমার ১২৯ সেন্টিমিটার ওপরে।

বুড়িচং উপজেলার প্লাবিত গ্রামগুলো হলো বুড়বুড়িয়া, খাড়াতাইয়া, নানুয়ার বাজার, কিং বাজেহুরা, মিথিলাপুর, শিকারপুর, মহিষমারা, ইছাপুরা, পয়াত, গাজীপুর, কণ্ঠনগর, মাওরা, গোপীনাথপুর, জগৎপুর ও গোসাইপুর।
মহিষমারা উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে তিন শতাধিক মানুষ আশ্রয় নেন। স্কুলটির নিচতলা পানিতে ডুবে যায়। রোটারিয়ান আবদুল্লাহিল বাকী তার সাথে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে স্পিডবোটের মাধ্যমে আটকা পড়া লোকজনকে উদ্ধারের কাজ করছেন। বুড়বুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী গোলাম কিবরিয়া জানান, তার বাড়িঘর সব পানিতে তলিয়ে গেছে।
বাঁধ ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত দুই লক্ষাধিক মানুষ
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়ায় গোমতীর বাঁধ ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। ভাঙা অংশ দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এতে বুড়িচং উপজেলার সাথে আদর্শ সদর উপজেলার একাংশ, ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বুড়িচং উপজেলার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন।

বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে আছে
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে অবিরাম বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৬টি ইউনিয়নের ২৯১টি গ্রামের মধ্যে প্রায় ২৫০টি গ্রামের তিন লক্ষাধিক মানুষের বাড়িঘর পানিতে ভেসে গিয়ে বন্যা আক্রান্ত হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘর, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে তারা আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী বাঙ্গড্ডা, রায়কোট উত্তর, দক্ষিণ ইউনিয়ন, মৌকরা, ঢালুয়া, বক্সগঞ্জ, সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের মানুষ বন্যাকবলিত অবস্থায় রয়েছেন। এ ছাড়া আদ্রা, উত্তর দক্ষিণ, জোড্ডা পূর্ব, পশ্চিম, দৌলখাঁড়, হেসাখাল, পেড়িয়া, মক্রবপুর ইউনিয়নের শতকরা ৮০ ভাগ গ্রাম বন্যাকবলিত অবস্থায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এ পর্যন্ত মাছ ধরতে গিয়ে বন্যায় পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে নাঙ্গলকোট পৌরসভার দাউদপুর গ্রামের কেরামত আলী (৪৫) নিহত হয়েছেন।

ভয়াবহ বন্যায় রোপা আমন, আউশ ধান, আমন বীজতলা ও শাকসবজির ক্ষেত ডুবে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে কয়েক শ’ মাছের প্রজেক্ট ভেসে গিয়ে কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। মৎস্যচাষিদের চোখে-মুখে কান্নার রোল বিরাজ করছে।
গত বৃহস্পতিবার বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ছিল সর্বোচ্চ ভয়াবহ দিন। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বন্যাদুর্গত এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে পানি ওঠায় কোমর সমান পানি ভেঙে মানুষজনকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতে যুদ্ধ করতে হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে কেউ নৌকায় করে, আবার কেউ কোমর সমান পানি মাড়িয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছান। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুও আশ্রয় নিতে দেখা যায়। উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, উপজেলা জামায়াতে ইসলামী, উপজেলা বিএনপি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশ্রয়কেন্দ্রের মাঠে পানি ওঠায় বন্যাদুর্গতের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

প্রথম আলো:

মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, এখন পর্যন্ত ৭৫৭
ছাত্র–জনতার আন্দোলন

গুলি, সংঘাত ও সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থী, নারী, শিশু, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।

আহমদুল হাসান, ঢাকা

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়া আরও একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

নিহত শিক্ষার্থীর নাম মো. সুমন মিয়া। তিনি নরসিংদীর মাধবদী এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়তেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে সুমন নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। আন্দোলন চলাকালে গত ২০ জুলাই মাধবদী এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর পেটে গুলি লেগেছিল। সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকায় আনা হয়। এক মাসের বেশি সময় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো যায়নি।

এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুলি, সংঘর্ষ ও বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় গত ১৬ জুলাই থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে কমপক্ষে ৭৫৭ জনের মৃত্যু হলো। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে

দৈনিক সংগ্রাম:

শহীদদের রক্তের বিনিময়ে দেশে একটি ইনসাফপূর্ণ সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে ———-ডা. শফিকুর রহমান
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এক ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় হয়েছে। দেশের মানুষ মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস ফেলছে। সরকারের দীর্ঘ অপশাসনে দেশের মানুষ ক্লান্ত ছিল। আজ তারা মুক্তি পেয়েছে। এই মুক্তির পেছনে দেশের তরুণ সমাজ দ্বিধাহীন চিত্তে রক্ত ঢেলে দিয়েছে। জীবনকে মূল্যহীন করে দেশের জন্য লড়ছে। তাদের মূল্য আমরা দিতে পারবো না। তবে তাদের রক্তের বিনিময়েই এই দেশে একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। যেখানে প্রত্যেকের অধিকার স্বীকার করা হবে। যেখানে কোনো হাহাকার থাকবে না। শোষণ থাকবে না। দুর্নীতি, লুটপাটের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না।

গতকাল শুক্রবার সকালে নরসিংদীতে স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাহাদাত বরণকারী নরসিংদীর ১৯ শহীদ পরিবারের সম্মানে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। নরসিংদী জেলা জামায়াত আয়োজিত জেলা আমীর মাওলানা মোছলেহুদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার, নরসিংদী জেলা সেক্রটারি অধ্যাপক মকবুল হোসেন, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামি ছাত্রশিবির নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম, শহর শাখার সভাপতি রুহুল আমিন প্রমুখ।

আমীরে জামায়াত বলেন, যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, এই তরুণদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। যে মা-বাবা এই তরুণদের জন্ম দিয়েছেন তারাও সৌভাগ্যবান। তাদের কারণেই আজ দেশের পটপরিবর্তন হয়েছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করব। এখন এসেছি, পরেও আমরা তাদের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই সোচ্চার। আজকে বিপ্লবোত্তর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ষড়যন্ত্র হচ্ছে দেশের বিরুদ্ধে। দেশের তরুণদের অর্জিত বিপ্লবের বিরুদ্ধে। জনগণকে সজাগ থেকে অর্জিত বিপ্লর সুফল না পাওয়া পর্যন্ত যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বানভাসি মানুষের জন্য তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের পানিতে আজকে আমরা ডুবে মরতেছি। হু হু করে পানি বাড়ছে। বানভাসীদের রক্ষায় প্রত্যেককেই মানবিকতার দিক থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।

মানবজমিন:

৪ঠা আগস্ট রাতেই হাসিনা বুঝতে পারেন সময় শেষ
শেখ হাসিনা কখন, কীভাবে পদত্যাগ করেন তা নিয়ে অন্তহীন জল্পনা-কল্পনা। সরকারের তরফে এখনো কিছু বলা হয়নি। শেখ হাসিনাও নিশ্চুপ। তবে নানা সূত্রে জানা যায়, ৪ঠা আগস্ট রাতেই শেখ হাসিনা জানতে পারেন- ছাত্র আন্দোলন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো অবস্থাতেই পদত্যাগে রাজি হচ্ছিলেন না। বরং তিনি আরও কড়া অ্যাকশনের পক্ষে অনড় ছিলেন। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছিল। কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকায় ফেরা ছোটবোন শেখ রেহানাও তাকে বোঝাতে ব্যর্থ তখন। একপর্যায়ে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে। শুরুতে জয় ছিলেন ক্ষিপ্ত, উত্তেজিত।

তার জবাব ছিল ‘আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। আপনাদেরকে কীভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তা ভুলে গেছেন।’ নিরাপত্তাবাহিনীর অনড় ভূমিকায় শেষ পর্যন্ত জয় তার মা শেখ হাসিনার পদত্যাগের পক্ষে সায় দেন। উপায়ান্তর না দেখে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় চিন্তা বাদ দিয়ে অবশেষে পদত্যাগে রাজি হন।
সূত্র বলছে, ৪ঠা আগস্ট রাতেই শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। কিন্তু তিনি তা মানতে রাজি ছিলেন না। দফায় দফায় বৈঠক, আলোচনা, পদত্যাগে সম্মতি আদায় এবং সর্বশেষ পদত্যাগপত্র প্রস্তুতিতে দ্রুত সময় ফুরিয়ে যায়। পরিস্থিতির বিষয়ে শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল মর্মে অভিযোগ উঠেছে। এর জন্য বিভিন্ন মাধ্যম নানাজনের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুলছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের পেছনে ৪ জনের একটি চক্র বা ‘গ্যাং অব ফোর’- দায়ী বলে আওয়ামী লীগের এক নেতার বরাতে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম রিপোর্ট করেছে। যা নিয়ে ঢাকায় রীতিমতো তোলপাড় চলছে। তাছাড়া বার্তা সংস্থা এএফপি’র বরাতে তাৎক্ষণিক দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর রটে ৫ই আগস্ট আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভারতের আগরতলা গেছেন, পরে দিল্লি। দেশ ছাড়ার আগে হাসিনা একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই সুযোগ পাননি। ওইদিন সকালে ছোটবোনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে বঙ্গভবনে গিয়ে পদত্যাগ করেন বলেও খবর রটে। এসব খবরের সত্যতা নিশ্চিতে অবিরাম চেষ্টা চলছে। যদিও এখনো ধোঁয়াশা কাটছে না। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ৩ সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চলেছে। মানবজমিনের অনুসন্ধান বলছে, শেখ হাসিনাকে ধারাবাহিকভাবে দেশের অবস্থা সম্পর্কে নানাভাবে জানানো হচ্ছিল। তিনি কারও কথাই কানে তুলছিলেন না।

বনিক র্বাতা:

ওবায়দুল কাদের পলাতক নাকি সেনা হেফাজতে?
তীব্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। সেদিনই দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যান দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিরা গা ঢাকা দেন। কেউ কেউ আশ্রয় নেন সেনা হেফাজতে। সম্প্রতি বিগত সরকারের প্রভাবশালী নীতিনির্ধারকদের কয়েকজন গ্রেফতার হলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কি সেনা হেফাজতে নাকি আত্মগোপনে রয়েছেন, সে বিষয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

 

আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির আগে-পরে দলটির বেশকিছু দায়িত্বশীল নেতা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যান। এর মধ্যে একটি অংশ ভারতে অবস্থান করছেন। আবার কেউ কেউ সিঙ্গাপুর, কানাডাসহ পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তবে ভারতে অবস্থানরত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভারতে বা অন্য কোনো দেশে যেতে পারেননি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যতম প্রভাবশালীদের একজন ছিলেন ওবায়দুল কাদের। হয়েছেন টানা তিন মেয়াদে দলটির সাধারণ সম্পাদক। সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের মতো দপ্তরও সামলেছেন তিনি। তবে বিভিন্ন সময়ে তার নানা মন্তব্য বিরোধীদের পাশাপাশি নিজ দলের কর্মী ও জনসাধারণের মধ্যে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এসব কারণে নিজ দলের নেতাকর্মীদের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সেনা হেফাজতে নেয়াসংক্রান্ত বিষয়ে ১৩ আগস্ট রাজশাহী সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘কারো যদি জীবন বিপন্ন হয়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, অবশ্যই আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের প্রতি যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, অবশ্যই তারা শাস্তির আওতায় যাবেন। কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইব না যে বিচারবহির্ভূত কোনো কাজ হোক, হামলা হোক। তাদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক, যে ধর্মের হোক, সেটা আমরা করব।’

এ নিয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) ১৮ আগস্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রাণ রক্ষার্থে রাজনৈতিক নেতা, বিচারক, পুলিশ সদস্যসহ মোট ৬২৬ নাগরিক বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেন। এর মধ্যে ৬১৫ জন স্ব-উদ্যোগে সেনানিবাস ছাড়েন। চারজনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়। সাতজন সেনানিবাসে অবস্থান করছেন। সেখানে ওবায়দুল কাদের কিংবা অন্য কে কে আশ্রয় নিয়েছেন, সেটি সেনা সদর স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।

সমকাল:

ডুবন্ত জনপদে স্বজনের সন্ধানে
সম্পদ, স্বপ্ন– সবকিছু তলিয়ে রয়েছে, ভেসেও গেছে বহু। কারও সঙ্গে নেই যোগাযোগ। বিভীষিকার রাত পেরিয়ে গতকাল শুক্রবার উঁকি দেয় সূর্য। দিনভর থেমে থেমে ছিল রোদ। সেই আলোতেই ভেসে ওঠে বিস্তীর্ণ ডুবন্ত জনপদ। যতদূর চোখ যায় বসতভিটার কোনো অস্তিত্ব নেই।

স্মরণকালের ভয়াবহ বানের তোড়ে ফেনীর লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন। তাদের চোখেমুখে এখনও সেই রাতের ভয়াবহতা। ধু-ধু জলের প্রান্তরে এখন শুধুই ক্ষুধা, কান্না, আহাজারি আর আর্তনাদ। চারদিকে মানুষের বাঁচার অদম্য আকুতি। কেউ টিনের চালে, গাছে কিংবা ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়ার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। আটকে পড়াদের উদ্ধারে যাবে, সে উপায় হাতে নেই স্বজনের। খোঁজ না পাওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। পানির তোড়ে সেসব এলাকায় যাওয়া যেমন ঝুঁকির, তেমনি মিলছে না উপযুক্ত বাহন। ফলে আফসোস, আক্ষেপ ও ক্ষোভের শেষ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক কিংবা ইন্টারনেট সব যোগাযোগই বিচ্ছিন্ন দুর্গত অঞ্চলে। বাঁচা-মরার খবর পাওয়াও এখন হয়ে উঠেছে দুষ্কর। সেই সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণ নিয়েও রয়েছে ক্ষোভ।

ফেনীর ফুলগাজীর নতুন মুন্সিরহাট ইউনিয়নের জগতপুর গ্রাম থেকে নৌকায় পাঁচজনকে উদ্ধার করে শহরে এনেছেন খালেদুর রহমান। তাঁর চোখেমুখে উদ্বেগ। মানুষের কষ্ট দেখে আসা যুবক বলেন, পানি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে দু-একটা বাসার ছাদ ও টিনের চাল থেকে ভেসে আসছে কান্না-চিৎকার। কিন্তু তাদের উদ্ধার করার মতো নৌযান নেই। ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না দেখে নিজেকে ধরে রাখা কঠিন।
সাজানো আবাস এখন রীতিমতো মৃত্যুপুরী। কত প্রাণহানি, কত দেহ ভেসে গেছে, তার ইয়ত্তা নেই। মারা গেলেও তো কবর দেওয়া যাচ্ছে না।

রাতভর উদ্ধারের অভিজ্ঞতার বিষয়ে খালেদুর বলেন, যে ধ্বংসলীলা, চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া উপায় নেই। দৃষ্টিসীমায় অসহায় মানুষ, কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘নেই’ হয়ে যাচ্ছে। দু’দিন আটকে আছে। ক্ষুধায় শিশুরা কাঁদছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কিন্তু চিকিৎসা বা সহায়তা করার কোনো পরিস্থিতি নেই। চারদিকে পানি। অথচ খাবার পানি নেই এক ফোঁটা। এ মুহূর্তে ত্রাণের চেয়ে যে কোনো উপায়ে মানুষগুলোকে উদ্ধার দরকার।

বন্যা যে এমন প্রলয়ঙ্করী হবে, তা কল্পনাও করেনি ফেনীর মানুষ। সম্পদ যা যাওয়ার গেছে। এখন জেলার চার উপজেলার ৪ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচানো নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়। উজানে অতি ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক এ বন্যায় ফেনীর মতো দেশের অন্তত ১১ জেলা প্লাবিত হয়েছে। ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ, নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। মোবাইল নেটওয়ার্কও বিচ্ছিন্ন।

গতকাল সন্ধ্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, বিভিন্ন জেলায় বন্যায় এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৩ ও নারী ২ জন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় ৪ জন করে, কক্সবাজারে ৩ এবং ফেনী, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে একজন করে রয়েছে।

বন্যা আক্রান্ত ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারের ৭৭ উপজেলা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন-পৌরসভা ৫৮৯টি। মোট ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯। দুর্গতদের জন্য ৩ হাজার ১৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং সেখানে মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৩০ জন ও ১৮ হাজার ৯৬টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ধীরগতিতে। দুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৫২ লাখ নগদ টাকা, ২০ হাজার ১৫০ টন চাল ও ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

কালবেলা:

ওষুধ কোম্পানির ফাঁদে চিকিৎসা গবেষণা
ওষুধের বাজার ধরতে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এখন আর কমিশন বা দামি উপহার দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না। চিকিৎসকদের নামে গবেষণাপত্র তৈরি ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করে দেওয়ার ফাঁদে ফেলছে তারা। অর্থের বিনিময়ে এসব কাজ করে দিতে গড়ে উঠেছে কিছু প্রতিষ্ঠানও। এতে গবেষণায় ন্যূনতম সম্পৃক্ত না হয়ে, গবেষণা সম্পর্কে না জেনেই কিছু চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ ও গবেষক বনে যাচ্ছেন। এ ধরনের অনৈতিক চর্চার কারণে দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা গবেষণা কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশি চিকিৎসকদের গবেষণাকর্মের গ্রহণযোগ্যতা কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কয়েকজন অধ্যাপক কালবেলাকে জানান, কয়েকটি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি মূলত চিকিৎসকদের এ ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে। এসব ওষুধ কোম্পানির সহযোগিতা এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের মেডিকেল ও পাবলিক হেলথ শিক্ষার্থীদের টাকার বিনিময়ে গবেষণার নামে কপি পেস্ট সুবিধা দিতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রমিস, রাইটিং এক্সপার্ট কনসালট্যান্সি ফার্ম, ‘রিসার্চ একাডেমি’ ‘দ্য স্পিয়ার’ ইত্যাদি। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের মোবাইল, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইমেইলে নিয়মিত বিজ্ঞাপন পাঠানো হয়।

বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির এ ধরনের প্রবণতার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, দেশি ওষুধ কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন ব্যবস্থার কারণে বেশ কিছু বিদেশি কোম্পানিকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দেশীয় কোম্পানির মতো তৈজসপত্র, বিমান টিকিট, নগদ টাকা বা যে কোনো উপহার দিতে পারে না; কিন্তু গবেষণায় ব্যয় করতে পারে। যেহেতু এদেশীয় চিকিৎসকরা নগদ কমিশন বা উপহার ছাড়া ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লেখেন না, তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বহুজাতিকরা এই কৌশল অবলম্বন করছে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানির এ ধরনের সুবিধা দেওয়া এবং চিকিৎসকদের নেওয়া এক ধরনের অপরাধ। তবে এটা এড়ানো কঠিন নয়। মনে রাখতে হবে, যে কোনো গবেষণামূলক ডিগ্রি দেওয়া হয় একজন সুপারভাইজারের সুপারিশে। কারণ গবেষণা করা হয় সুপারভাইজারের অধীনে। সুপারভাইজার হিসেবে যিনি থাকেন তিনি সহজেই শিক্ষার্থীর জালিয়াতি শনাক্ত করতে পারেন, যদি তিনি আন্তরিক হন। তাই এ ধরনের অপরাধ প্রবণতার দায় অধ্যাপকরাও এড়াতে পারেন না।’

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা বলেন, এভাবে থিসিস লেখানো বা প্রকাশ করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আমরা জেনেছি, সম্প্রতি কিছু চিকিৎসক ও কিছু একাডেমিশিয়ান এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। এ কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষাগুলোতে রিসার্চ পেপার ও থিসিস পেপার কঠোরভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এই অনৈতিক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় পাস করবেন, একাডেমিশিয়ানরা পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চিকিৎসক, গবেষক ও গবেষণা মান হারাবে।’

অধ্যাপক রেজা চিকিৎসকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে গবেষণাপত্রের সংখ্যার চেয়ে মানের দিকে গুরুত্ব প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানকালে হাতে আসা ‘প্রমিস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তারা রিসার্চ, ট্রেনিং ও কনসালট্যান্সি সার্ভিস দেয়। এর মধ্যে বিশেষভাবে কেস রিপোর্ট, অরিজিনাল আর্টিক্যাল, রিভিউ আর্টিকেল, থিসিস পেপার, প্রটোকল সিনপসিস, পিএইচডি সাপোর্ট, র-ডাটা এন্ট্রি, রাইটিং সাপোর্ট, পাবলিকেশন সাপোর্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে প্রমিস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মো. জিয়াউদ্দিন মানিক বলেন, তারা শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাপত্র তৈরি ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের ব্যবস্থা করে দেন। এর বিনিময়ে কত টাকা নেওয়া হবে, তা বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে।

দেশরুপান্তর:

মসজিদে আশ্রয় দুর্গত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত গ্রাম চান্দেরবাগ। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী এ গ্রামে বসবাস ২৩০-২৫০ জন মানুষের, যাদের মধ্যে শুধু দুটি পরিবারের সদস্যরা মুসলমান। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পুরো গ্রামটি ডুবে যায়। আশপাশে আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় গ্রামটির হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পাশের পিপড্ডা গ্রামের মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে দূরে হওয়ায় চান্দেরবাগ গ্রামের বাসিন্দারা উন্নয়ন থেকে অনেকটা অবহেলিত। তাদের অধিকাংশই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। টানা বৃষ্টি ও ডাকাতিয়া নদীর পানি বেড়ে গ্রামটি ডুবে যায়। গ্রামটির বহু বাসিন্দা আশপাশে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না পেয়ে পাশের গ্রামের মসজিদে অবস্থান করছেন। আর কিছু লোক বিভিন্ন বাড়ির ছাদে রয়েছেন। সরকারি কোনো সহায়তা এখনো পাননি তারা।

ওই গ্রামের বাসিন্দা গীতা রানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডাকাতিয়া নদীতে পানি বাড়ে আবার চলে যায়। গ্রামে রাস্তা সমান পানি হয়। কিন্তু কখনো ঘরে পানি ঢোকেনি। এবার পুরো গ্রাম ডুবে গেছে। কোনোরকম জীবন নিয়ে মসজিদে অবস্থান করছি। আশপাশের কয়েকজন মানুষ শুকনো কিছু খাবার দিয়েছে। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগ থেকে আমাদের গ্রাম অবহেলিত। রাস্তাঘাট ভালো না। কিছুই ঘর থেকে বের করতে পারিনি। সব পানিতে ডুবে গেছে।’

কালের কন্ঠ:

মহাসড়কে আটকা হাজারো মানুষ মহাদুর্ভোগে

কুমিল্লার বাসিন্দা মো. সামছুল আলম গত বুধবার কক্সবাজার গিয়েছিলেন। মহাসড়কে পানি ওঠার খবর পেয়ে বেড়ানো অসমাপ্ত রেখেই বৃহস্পতিবার সকালে বাসে করে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পথে মহাসড়কের কয়েকটি জলমগ্ন অংশ পেরিয়ে বিকেল ৩টায় তাঁদের বাসটি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার লেমুয়ায় পৌঁছে। পানির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়ায় বাসের যাত্রা সেখানেই শেষ হয়।
সারা রাত না খেয়ে পরদিন শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত সেখানেই আটকে থাকার পর হেঁটেই সামনে এগোতে থাকেন সামছুল আলম। ক্রমেই পানি হাঁটু ও কোমর ছাড়িয়ে বুক পর্যন্ত ওঠে। সেই সঙ্গে ছিল তীব্র স্রোত। প্রায় চার ঘণ্টা এভাবে পানি ভেঙে ফেনী সদরের মহিপাল পৌঁছেন সামছুল।
এরপর বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লায় পৌঁছেন। বিকেলে খবর নিয়ে জানেন তাঁকে বহনকারী বাসটি তখনো আগের জায়গায়ই দাঁড়িয়ে আছে!ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার লেমুয়া থেকে মহিপালের দূরত্ব প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার। এর মধ্যে অন্তত ছয় কিলোমিটার মহাসড়কই বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে ডুবে গেছে। বন্ধ রয়েছে মহাসড়কের যান চলাচল।
কুমিল্লার বাসিন্দা সামছুল আলমের মতো কয়েক হাজার মানুষ মহাসড়কে চলতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য—এমন ভয়াবহ দুর্ভোগে আগে আর পড়েননি। আর স্থানীয়রা বলছে, মহাসড়কে এমন পানি উঠতে আগে কখনো দেখেনি তারা।শুক্রবার দুপুরে ভুক্তভোগী মো. সামছুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে হাজারো যাত্রী বিপদের মধ্যে পড়ে

জনপ্রিয় সংবাদ

দিনাজপুরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের উদ্যোগে নবীন বরণ অনুষ্ঠিত

গণত্রাণ কার্যক্রমে মানুষের ঢল

আপডেট সময় ০৭:৩৩:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৪ অগাস্ট ২০২৪

আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর:

যুপান্তর:

গণত্রাণ কার্যক্রমে মানুষের ঢল
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে স্বেচ্ছাশ্রম
দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যাকবলিতদের জন্য আয়োজিত ‘গণত্রাণ’ কার্যক্রমে মানুষের ঢল নেমেছে। শুক্রবার নানা শ্রেণিপেশার মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দলে দলে আসেন। ত্রাণ সংগ্রহ করে মাঠপর্যায়ে পৌঁছাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। দেশের বন্যা পরিস্থিতিতে বুধবার গণত্রাণ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

সরেজমিন শুক্রবার বিকালে দেখা যায়, ঢাবির টিএসসির প্রবেশপথে একের পর এক ট্রাক, বাইক, রিকশা, প্রাইভেটকার জড়ো হচ্ছে। আর এসব যানবাহনে যে যার সাধ্যমতো সাহায্য নিয়ে আসছেন। গাড়িগুলো থামার সঙ্গে সঙ্গেই নামানো হচ্ছে শুকনো খাবার, খেজুর, ওষুধ, স্যানিটারি ন্যাপকিন, খাবার পানিসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী। এসব সংগ্রহ করে ভেতরের ক্যাফেটেরিয়া, অডিটরিয়াম আর গেমস রুমে জড়ো করা হচ্ছে। টিএসসির গেট থেকে ভেতরের রুমে ত্রাণসামগ্রী প্যাকেট করছে আলাদা আলাদা গ্রুপ। কথা হয় ত্রাণ দিতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও কর কমিশনার মোনালিসা শাহরিন সুস্মিতার সঙ্গে।

তিনি যুগান্তরকে বলেন, বন্যাকবলিত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার সক্ষমতা আমার নেই। ফলে এখানে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শামিল হতে কিছু সাহায্য নিয়ে এসেছি। এসএ ট্রেডলিং নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগের সাইফুল ইসলাম পলাশ বলেন, আমি মিরপুর থেকে এসেছি। আর্থিকভাবে তেমন সচ্ছল নই। তার পরও আমার সামর্থ্য অনুযায়ী পাঁচটি কাপড় নিয়ে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিয়েছি।

এদিকে শিক্ষার্থীরা সাহায্য সংগ্রহ করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন বুথ তৈরি করেন যাতে কোনো বিশৃঙ্খলা না হয়। টিএসসির প্রধান প্রবেশপথের পাশেই একটি বুথে নগদ টাকা সংগ্রহ করছেন কয়েকজন। তারই পাশে আরেকটি বুথে কাপড় সংগ্রহ করছেন আরেক দল শিক্ষার্থী। রাজধানীর তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী মিনার হোসেন বলেন, আমার পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা ও কাপড় সংগ্রহ করে এখানে দিয়েছি। ১২ হাজার টাকা দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন আগেই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজপথে ছিলাম। ফলে তাদের ওপর আস্থা আছে। অন্যদিকে টিএসসি বাদেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল, বিভাগের শিক্ষার্থীরাও নিজেদের মতো করে ত্রাণ সংগ্রহ করছেন। শুক্রবার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের সামনে শিক্ষার্থীরা কয়েকটি বক্স ও প্লাকার্ড নিয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছেন। এসএম হলের শিক্ষার্থী মাইনুল ইসলাম নওশাদ বলেন, আমাদের হলে বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সাহায্য সংগ্রহ করেছি

নয়াদিগন্ত:

দিশেহারা বন্যার্ত মানুষ
– ১৭ জনের মৃত্যু, ক্ষতিগ্রস্ত ৪৫ লাখ
– প্লাবিত হচ্ছে নতুন এলাকা
– উদ্ধার তৎপরতায় সেনা মোতায়েন
– ১১ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন
– পদ্মা ও গড়াই নদীর পানিও বাড়ছে

বন্যায় বিধ্বস্ত ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লাসহ ১২ জেলায় বিপর্যয়ের কবলে লাখ লাখ পানিবন্দী মানুষ। খাদ্য, খাবার পানি ও আশ্রয়ের অভাবে দুর্গত মানুষ এখন দিশেহারা। গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে অন্যান্য সূত্রে মৃতের সংখ্যা কয়েক শতাধিক হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ঢলের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন অন্তত ৫০ লাখ মানুষ। এ দিকে টানা ভারীবর্ষণ ও উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলের পানিতে সৃষ্ট উদ্ধার অভিযান ও ত্রাণতৎপরতা জোরদার হয়েছে। গতকাল অনেক এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় বানের পানি কমতে শুরু করেছে। সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কোনো কোনো স্থানে পানি কিছুটা কমলেও ফেনী, নোয়াখালী, কুমিল্লায় বন্যাপরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। বিভিন্ন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। গোমতি নদীর বাঁধ ভেঙে ছয় লাখ মানুষ নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বানের পানি বঙ্গোপসাগরমুখী হওয়ায় কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুরসহ এখনো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার, ত্রাণতৎপরতা, চিকিৎসা ও খাদ্যসামগ্রী নিয়ে সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের উপদেষ্টারা দুর্গত এলাকায় যাচ্ছেন এবং ত্রাণতৎপরতায় যোগ দিচ্ছেন।

গোমতি নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৬০ হাজার পরিবার : হাবিবুর রহমান চৌধুরী কুমিল্লা থেকে জানান, কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার ষোলনল ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে বুড়িচং উপজেলার সাত ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গোমতির বাঁধ ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। ৬০ হাজার পরিবার বন্যা আক্রান্ত হয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১২টায় এ ঘটনা ঘটে। ভাঙন এলাকার পাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে রাতে বাঁধ ভাঙার কারণে অধিকাংশ লোকজন ঘরবাড়িতে আটকা পড়েছে। জেলা সদরের সাথে উপজেলা সদরের প্রধান সড়কের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জমান। জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে ওই স্থানের নিচ দিয়ে পানি বের হচ্ছিল। স্থানীয় লোকজন বালুর বস্তা ফেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু রাত পৌনে ১২টার দিকে বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকতে শুরু করে। শুক্রবার সকালে প্রায় ৬০ ফুটের মতো বাঁধ ভেঙে যায়, তবে পানি বের হওয়ার সাথে সাথে ভাঙার পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
তিনি আরো বলেন, পানি এখনো বিপদসীমার ওপরে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় ছিল ১৩৪ সেন্টিমিটার উপরে, শুক্রবার সকালে বিপদসীমার ১২৯ সেন্টিমিটার ওপরে।

বুড়িচং উপজেলার প্লাবিত গ্রামগুলো হলো বুড়বুড়িয়া, খাড়াতাইয়া, নানুয়ার বাজার, কিং বাজেহুরা, মিথিলাপুর, শিকারপুর, মহিষমারা, ইছাপুরা, পয়াত, গাজীপুর, কণ্ঠনগর, মাওরা, গোপীনাথপুর, জগৎপুর ও গোসাইপুর।
মহিষমারা উচ্চবিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে তিন শতাধিক মানুষ আশ্রয় নেন। স্কুলটির নিচতলা পানিতে ডুবে যায়। রোটারিয়ান আবদুল্লাহিল বাকী তার সাথে স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে স্পিডবোটের মাধ্যমে আটকা পড়া লোকজনকে উদ্ধারের কাজ করছেন। বুড়বুড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী গোলাম কিবরিয়া জানান, তার বাড়িঘর সব পানিতে তলিয়ে গেছে।
বাঁধ ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত দুই লক্ষাধিক মানুষ
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার বুড়বুড়িয়ায় গোমতীর বাঁধ ভাঙায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন দুই লক্ষাধিক মানুষ। ভাঙা অংশ দিয়ে এখনো পানি ঢুকছে লোকালয়ে। এতে বুড়িচং উপজেলার সাথে আদর্শ সদর উপজেলার একাংশ, ব্রাহ্মণপাড়া ও দেবিদ্বার উপজেলাও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বুড়িচং উপজেলার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন আশ্রয় নিয়েছেন।

বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিতে ডুবে আছে
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে অবিরাম বৃষ্টি ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। উপজেলার একটি পৌরসভাসহ ১৬টি ইউনিয়নের ২৯১টি গ্রামের মধ্যে প্রায় ২৫০টি গ্রামের তিন লক্ষাধিক মানুষের বাড়িঘর পানিতে ভেসে গিয়ে বন্যা আক্রান্ত হয়ে বাড়িঘর ছেড়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়িঘর, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশ্রয়কেন্দ্রসহ বিভিন্ন অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে তারা আশ্রয় নিয়েছেন। বিশেষ করে ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী বাঙ্গড্ডা, রায়কোট উত্তর, দক্ষিণ ইউনিয়ন, মৌকরা, ঢালুয়া, বক্সগঞ্জ, সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামের মানুষ বন্যাকবলিত অবস্থায় রয়েছেন। এ ছাড়া আদ্রা, উত্তর দক্ষিণ, জোড্ডা পূর্ব, পশ্চিম, দৌলখাঁড়, হেসাখাল, পেড়িয়া, মক্রবপুর ইউনিয়নের শতকরা ৮০ ভাগ গ্রাম বন্যাকবলিত অবস্থায় বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। এ পর্যন্ত মাছ ধরতে গিয়ে বন্যায় পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে নাঙ্গলকোট পৌরসভার দাউদপুর গ্রামের কেরামত আলী (৪৫) নিহত হয়েছেন।

ভয়াবহ বন্যায় রোপা আমন, আউশ ধান, আমন বীজতলা ও শাকসবজির ক্ষেত ডুবে গিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে কয়েক শ’ মাছের প্রজেক্ট ভেসে গিয়ে কোটি কোটি টাকার বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভেসে গেছে। মৎস্যচাষিদের চোখে-মুখে কান্নার রোল বিরাজ করছে।
গত বৃহস্পতিবার বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য ছিল সর্বোচ্চ ভয়াবহ দিন। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বন্যাদুর্গত এলাকার বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে পানি ওঠায় কোমর সমান পানি ভেঙে মানুষজনকে নিরাপদে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছাতে যুদ্ধ করতে হয়েছে। বৃষ্টির মধ্যে কেউ নৌকায় করে, আবার কেউ কোমর সমান পানি মাড়িয়ে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে পৌঁছান। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুও আশ্রয় নিতে দেখা যায়। উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান, উপজেলা জামায়াতে ইসলামী, উপজেলা বিএনপি বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে শুকনা ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশ্রয়কেন্দ্রের মাঠে পানি ওঠায় বন্যাদুর্গতের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

প্রথম আলো:

মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, এখন পর্যন্ত ৭৫৭
ছাত্র–জনতার আন্দোলন

গুলি, সংঘাত ও সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শিক্ষার্থী, নারী, শিশু, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।

আহমদুল হাসান, ঢাকা

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হওয়া আরও একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

নিহত শিক্ষার্থীর নাম মো. সুমন মিয়া। তিনি নরসিংদীর মাধবদী এলাকার একটি মাদ্রাসায় পড়তেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর থেকে সুমন নিয়মিত বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নিতেন। আন্দোলন চলাকালে গত ২০ জুলাই মাধবদী এলাকায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন। তাঁর পেটে গুলি লেগেছিল। সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকায় আনা হয়। এক মাসের বেশি সময় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচানো যায়নি।

এ নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুলি, সংঘর্ষ ও বিভিন্ন ধরনের সহিংসতায় গত ১৬ জুলাই থেকে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে কমপক্ষে ৭৫৭ জনের মৃত্যু হলো। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে

দৈনিক সংগ্রাম:

শহীদদের রক্তের বিনিময়ে দেশে একটি ইনসাফপূর্ণ সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে ———-ডা. শফিকুর রহমান
স্টাফ রিপোর্টার : বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এক ফ্যাসিস্ট সরকারের বিদায় হয়েছে। দেশের মানুষ মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস ফেলছে। সরকারের দীর্ঘ অপশাসনে দেশের মানুষ ক্লান্ত ছিল। আজ তারা মুক্তি পেয়েছে। এই মুক্তির পেছনে দেশের তরুণ সমাজ দ্বিধাহীন চিত্তে রক্ত ঢেলে দিয়েছে। জীবনকে মূল্যহীন করে দেশের জন্য লড়ছে। তাদের মূল্য আমরা দিতে পারবো না। তবে তাদের রক্তের বিনিময়েই এই দেশে একটি ইনসাফপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। যেখানে প্রত্যেকের অধিকার স্বীকার করা হবে। যেখানে কোনো হাহাকার থাকবে না। শোষণ থাকবে না। দুর্নীতি, লুটপাটের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না।

গতকাল শুক্রবার সকালে নরসিংদীতে স্থানীয় কমিউনিটি সেন্টারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শাহাদাত বরণকারী নরসিংদীর ১৯ শহীদ পরিবারের সম্মানে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। নরসিংদী জেলা জামায়াত আয়োজিত জেলা আমীর মাওলানা মোছলেহুদ্দীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন। উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর আমীর মাওলানা আব্দুল জব্বার, নরসিংদী জেলা সেক্রটারি অধ্যাপক মকবুল হোসেন, সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামি ছাত্রশিবির নরসিংদী জেলা শাখার সভাপতি তাওহীদুল ইসলাম, শহর শাখার সভাপতি রুহুল আমিন প্রমুখ।

আমীরে জামায়াত বলেন, যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে, এই তরুণদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। যে মা-বাবা এই তরুণদের জন্ম দিয়েছেন তারাও সৌভাগ্যবান। তাদের কারণেই আজ দেশের পটপরিবর্তন হয়েছে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করব। এখন এসেছি, পরেও আমরা তাদের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জামায়াতে ইসলামী সবসময়ই সোচ্চার। আজকে বিপ্লবোত্তর ষড়যন্ত্র হচ্ছে। ষড়যন্ত্র হচ্ছে দেশের বিরুদ্ধে। দেশের তরুণদের অর্জিত বিপ্লবের বিরুদ্ধে। জনগণকে সজাগ থেকে অর্জিত বিপ্লর সুফল না পাওয়া পর্যন্ত যার যার জায়গা থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। বানভাসি মানুষের জন্য তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের পানিতে আজকে আমরা ডুবে মরতেছি। হু হু করে পানি বাড়ছে। বানভাসীদের রক্ষায় প্রত্যেককেই মানবিকতার দিক থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।

মানবজমিন:

৪ঠা আগস্ট রাতেই হাসিনা বুঝতে পারেন সময় শেষ
শেখ হাসিনা কখন, কীভাবে পদত্যাগ করেন তা নিয়ে অন্তহীন জল্পনা-কল্পনা। সরকারের তরফে এখনো কিছু বলা হয়নি। শেখ হাসিনাও নিশ্চুপ। তবে নানা সূত্রে জানা যায়, ৪ঠা আগস্ট রাতেই শেখ হাসিনা জানতে পারেন- ছাত্র আন্দোলন এমন একপর্যায়ে পৌঁছেছে যা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। কিন্তু শেখ হাসিনা কোনো অবস্থাতেই পদত্যাগে রাজি হচ্ছিলেন না। বরং তিনি আরও কড়া অ্যাকশনের পক্ষে অনড় ছিলেন। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটছিল। কয়েক ঘণ্টা আগে ঢাকায় ফেরা ছোটবোন শেখ রেহানাও তাকে বোঝাতে ব্যর্থ তখন। একপর্যায়ে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে। শুরুতে জয় ছিলেন ক্ষিপ্ত, উত্তেজিত।

তার জবাব ছিল ‘আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। আপনাদেরকে কীভাবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তা ভুলে গেছেন।’ নিরাপত্তাবাহিনীর অনড় ভূমিকায় শেষ পর্যন্ত জয় তার মা শেখ হাসিনার পদত্যাগের পক্ষে সায় দেন। উপায়ান্তর না দেখে শেখ হাসিনা দ্বিতীয় চিন্তা বাদ দিয়ে অবশেষে পদত্যাগে রাজি হন।
সূত্র বলছে, ৪ঠা আগস্ট রাতেই শেখ হাসিনার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। কিন্তু তিনি তা মানতে রাজি ছিলেন না। দফায় দফায় বৈঠক, আলোচনা, পদত্যাগে সম্মতি আদায় এবং সর্বশেষ পদত্যাগপত্র প্রস্তুতিতে দ্রুত সময় ফুরিয়ে যায়। পরিস্থিতির বিষয়ে শেখ হাসিনাকে বাস্তব অবস্থা থেকে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছিল মর্মে অভিযোগ উঠেছে। এর জন্য বিভিন্ন মাধ্যম নানাজনের প্রতি অভিযোগের আঙ্গুল তুলছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতন ও দেশত্যাগের পেছনে ৪ জনের একটি চক্র বা ‘গ্যাং অব ফোর’- দায়ী বলে আওয়ামী লীগের এক নেতার বরাতে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম রিপোর্ট করেছে। যা নিয়ে ঢাকায় রীতিমতো তোলপাড় চলছে। তাছাড়া বার্তা সংস্থা এএফপি’র বরাতে তাৎক্ষণিক দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর রটে ৫ই আগস্ট আড়াইটায় বঙ্গভবন থেকে সামরিক হেলিকপ্টারে চড়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ভারতের আগরতলা গেছেন, পরে দিল্লি। দেশ ছাড়ার আগে হাসিনা একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই সুযোগ পাননি। ওইদিন সকালে ছোটবোনকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে বঙ্গভবনে গিয়ে পদত্যাগ করেন বলেও খবর রটে। এসব খবরের সত্যতা নিশ্চিতে অবিরাম চেষ্টা চলছে। যদিও এখনো ধোঁয়াশা কাটছে না। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার ৩ সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চলেছে। মানবজমিনের অনুসন্ধান বলছে, শেখ হাসিনাকে ধারাবাহিকভাবে দেশের অবস্থা সম্পর্কে নানাভাবে জানানো হচ্ছিল। তিনি কারও কথাই কানে তুলছিলেন না।

বনিক র্বাতা:

ওবায়দুল কাদের পলাতক নাকি সেনা হেফাজতে?
তীব্র আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। সেদিনই দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যান দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিরা গা ঢাকা দেন। কেউ কেউ আশ্রয় নেন সেনা হেফাজতে। সম্প্রতি বিগত সরকারের প্রভাবশালী নীতিনির্ধারকদের কয়েকজন গ্রেফতার হলেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী কি সেনা হেফাজতে নাকি আত্মগোপনে রয়েছেন, সে বিষয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।

 

আওয়ামী লীগ সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির আগে-পরে দলটির বেশকিছু দায়িত্বশীল নেতা বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যান। এর মধ্যে একটি অংশ ভারতে অবস্থান করছেন। আবার কেউ কেউ সিঙ্গাপুর, কানাডাসহ পশ্চিমের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছেন। তবে ভারতে অবস্থানরত একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ভারতে বা অন্য কোনো দেশে যেতে পারেননি।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অন্যতম প্রভাবশালীদের একজন ছিলেন ওবায়দুল কাদের। হয়েছেন টানা তিন মেয়াদে দলটির সাধারণ সম্পাদক। সড়ক পরিবহন ও সেতু বিভাগের মতো দপ্তরও সামলেছেন তিনি। তবে বিভিন্ন সময়ে তার নানা মন্তব্য বিরোধীদের পাশাপাশি নিজ দলের কর্মী ও জনসাধারণের মধ্যে বেশ আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এসব কারণে নিজ দলের নেতাকর্মীদের তোপের মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে।

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সেনা হেফাজতে নেয়াসংক্রান্ত বিষয়ে ১৩ আগস্ট রাজশাহী সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানকে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, ‘কারো যদি জীবন বিপন্ন হয়, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে, অবশ্যই আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। তাদের প্রতি যদি কোনো অভিযোগ থাকে, মামলা হয়, অবশ্যই তারা শাস্তির আওতায় যাবেন। কিন্তু অবশ্যই আমরা চাইব না যে বিচারবহির্ভূত কোনো কাজ হোক, হামলা হোক। তাদের জীবনের যে হুমকি আছে, সেটার জন্য আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। যে দলেরই হোক, যে মতেরই হোক, যে ধর্মের হোক, সেটা আমরা করব।’

এ নিয়ে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) ১৮ আগস্ট এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রাণ রক্ষার্থে রাজনৈতিক নেতা, বিচারক, পুলিশ সদস্যসহ মোট ৬২৬ নাগরিক বিভিন্ন সেনানিবাসে আশ্রয় নেন। এর মধ্যে ৬১৫ জন স্ব-উদ্যোগে সেনানিবাস ছাড়েন। চারজনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেয়া হয়। সাতজন সেনানিবাসে অবস্থান করছেন। সেখানে ওবায়দুল কাদের কিংবা অন্য কে কে আশ্রয় নিয়েছেন, সেটি সেনা সদর স্পষ্ট করে কিছু বলেনি।

সমকাল:

ডুবন্ত জনপদে স্বজনের সন্ধানে
সম্পদ, স্বপ্ন– সবকিছু তলিয়ে রয়েছে, ভেসেও গেছে বহু। কারও সঙ্গে নেই যোগাযোগ। বিভীষিকার রাত পেরিয়ে গতকাল শুক্রবার উঁকি দেয় সূর্য। দিনভর থেমে থেমে ছিল রোদ। সেই আলোতেই ভেসে ওঠে বিস্তীর্ণ ডুবন্ত জনপদ। যতদূর চোখ যায় বসতভিটার কোনো অস্তিত্ব নেই।

স্মরণকালের ভয়াবহ বানের তোড়ে ফেনীর লাখ লাখ মানুষ আশ্রয়হীন। তাদের চোখেমুখে এখনও সেই রাতের ভয়াবহতা। ধু-ধু জলের প্রান্তরে এখন শুধুই ক্ষুধা, কান্না, আহাজারি আর আর্তনাদ। চারদিকে মানুষের বাঁচার অদম্য আকুতি। কেউ টিনের চালে, গাছে কিংবা ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়ার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ। আটকে পড়াদের উদ্ধারে যাবে, সে উপায় হাতে নেই স্বজনের। খোঁজ না পাওয়ায় বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। পানির তোড়ে সেসব এলাকায় যাওয়া যেমন ঝুঁকির, তেমনি মিলছে না উপযুক্ত বাহন। ফলে আফসোস, আক্ষেপ ও ক্ষোভের শেষ নেই। মোবাইল নেটওয়ার্ক কিংবা ইন্টারনেট সব যোগাযোগই বিচ্ছিন্ন দুর্গত অঞ্চলে। বাঁচা-মরার খবর পাওয়াও এখন হয়ে উঠেছে দুষ্কর। সেই সঙ্গে উদ্ধার তৎপরতা ও ত্রাণ বিতরণ নিয়েও রয়েছে ক্ষোভ।

ফেনীর ফুলগাজীর নতুন মুন্সিরহাট ইউনিয়নের জগতপুর গ্রাম থেকে নৌকায় পাঁচজনকে উদ্ধার করে শহরে এনেছেন খালেদুর রহমান। তাঁর চোখেমুখে উদ্বেগ। মানুষের কষ্ট দেখে আসা যুবক বলেন, পানি ছাড়া কিছুই দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে দু-একটা বাসার ছাদ ও টিনের চাল থেকে ভেসে আসছে কান্না-চিৎকার। কিন্তু তাদের উদ্ধার করার মতো নৌযান নেই। ক্ষুধার্ত শিশুর কান্না দেখে নিজেকে ধরে রাখা কঠিন।
সাজানো আবাস এখন রীতিমতো মৃত্যুপুরী। কত প্রাণহানি, কত দেহ ভেসে গেছে, তার ইয়ত্তা নেই। মারা গেলেও তো কবর দেওয়া যাচ্ছে না।

রাতভর উদ্ধারের অভিজ্ঞতার বিষয়ে খালেদুর বলেন, যে ধ্বংসলীলা, চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া উপায় নেই। দৃষ্টিসীমায় অসহায় মানুষ, কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘নেই’ হয়ে যাচ্ছে। দু’দিন আটকে আছে। ক্ষুধায় শিশুরা কাঁদছে। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কিন্তু চিকিৎসা বা সহায়তা করার কোনো পরিস্থিতি নেই। চারদিকে পানি। অথচ খাবার পানি নেই এক ফোঁটা। এ মুহূর্তে ত্রাণের চেয়ে যে কোনো উপায়ে মানুষগুলোকে উদ্ধার দরকার।

বন্যা যে এমন প্রলয়ঙ্করী হবে, তা কল্পনাও করেনি ফেনীর মানুষ। সম্পদ যা যাওয়ার গেছে। এখন জেলার চার উপজেলার ৪ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচানো নিয়েই দেখা দিয়েছে সংশয়। উজানে অতি ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ি ঢলে আকস্মিক এ বন্যায় ফেনীর মতো দেশের অন্তত ১১ জেলা প্লাবিত হয়েছে। ফেনীর ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলার প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকা ডুবে গেছে। বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ, নেই বিদ্যুৎ সংযোগ। মোবাইল নেটওয়ার্কও বিচ্ছিন্ন।

গতকাল সন্ধ্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানায়, বিভিন্ন জেলায় বন্যায় এ পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের মধ্যে পুরুষ ১৩ ও নারী ২ জন। তাদের মধ্যে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় ৪ জন করে, কক্সবাজারে ৩ এবং ফেনী, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও লক্ষ্মীপুরে একজন করে রয়েছে।

বন্যা আক্রান্ত ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারের ৭৭ উপজেলা প্লাবিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন-পৌরসভা ৫৮৯টি। মোট ৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৯ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ৪৮ লাখ ৬৯ হাজার ২৯৯। দুর্গতদের জন্য ৩ হাজার ১৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং সেখানে মোট ১ লাখ ১৫ হাজার ৩০ জন ও ১৮ হাজার ৯৬টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান বলেন, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে ধীরগতিতে। দুর্গত এলাকায় এ পর্যন্ত ৩ কোটি ৫২ লাখ নগদ টাকা, ২০ হাজার ১৫০ টন চাল ও ১৫ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্বেচ্ছাসেবীরা উদ্ধার এবং ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

কালবেলা:

ওষুধ কোম্পানির ফাঁদে চিকিৎসা গবেষণা
ওষুধের বাজার ধরতে উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো এখন আর কমিশন বা দামি উপহার দিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না। চিকিৎসকদের নামে গবেষণাপত্র তৈরি ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করে দেওয়ার ফাঁদে ফেলছে তারা। অর্থের বিনিময়ে এসব কাজ করে দিতে গড়ে উঠেছে কিছু প্রতিষ্ঠানও। এতে গবেষণায় ন্যূনতম সম্পৃক্ত না হয়ে, গবেষণা সম্পর্কে না জেনেই কিছু চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ ও গবেষক বনে যাচ্ছেন। এ ধরনের অনৈতিক চর্চার কারণে দেশের স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা গবেষণা কার্যক্রম দুর্বল হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বাংলাদেশি চিকিৎসকদের গবেষণাকর্মের গ্রহণযোগ্যতা কমছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কয়েকজন অধ্যাপক কালবেলাকে জানান, কয়েকটি বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি মূলত চিকিৎসকদের এ ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকে। এসব ওষুধ কোম্পানির সহযোগিতা এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ের মেডিকেল ও পাবলিক হেলথ শিক্ষার্থীদের টাকার বিনিময়ে গবেষণার নামে কপি পেস্ট সুবিধা দিতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রমিস, রাইটিং এক্সপার্ট কনসালট্যান্সি ফার্ম, ‘রিসার্চ একাডেমি’ ‘দ্য স্পিয়ার’ ইত্যাদি। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে চিকিৎসকদের মোবাইল, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ এবং ইমেইলে নিয়মিত বিজ্ঞাপন পাঠানো হয়।

বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানির এ ধরনের প্রবণতার কারণ জানতে চাইলে তারা বলেন, দেশি ওষুধ কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী বিপণন ব্যবস্থার কারণে বেশ কিছু বিদেশি কোম্পানিকে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়েছে। আইনি বাধ্যবাধকতায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো দেশীয় কোম্পানির মতো তৈজসপত্র, বিমান টিকিট, নগদ টাকা বা যে কোনো উপহার দিতে পারে না; কিন্তু গবেষণায় ব্যয় করতে পারে। যেহেতু এদেশীয় চিকিৎসকরা নগদ কমিশন বা উপহার ছাড়া ব্যবস্থাপত্রে ওষুধ লেখেন না, তাই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বহুজাতিকরা এই কৌশল অবলম্বন করছে।

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, ‘ওষুধ কোম্পানির এ ধরনের সুবিধা দেওয়া এবং চিকিৎসকদের নেওয়া এক ধরনের অপরাধ। তবে এটা এড়ানো কঠিন নয়। মনে রাখতে হবে, যে কোনো গবেষণামূলক ডিগ্রি দেওয়া হয় একজন সুপারভাইজারের সুপারিশে। কারণ গবেষণা করা হয় সুপারভাইজারের অধীনে। সুপারভাইজার হিসেবে যিনি থাকেন তিনি সহজেই শিক্ষার্থীর জালিয়াতি শনাক্ত করতে পারেন, যদি তিনি আন্তরিক হন। তাই এ ধরনের অপরাধ প্রবণতার দায় অধ্যাপকরাও এড়াতে পারেন না।’

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা বলেন, এভাবে থিসিস লেখানো বা প্রকাশ করা সম্পূর্ণ অনৈতিক। আমরা জেনেছি, সম্প্রতি কিছু চিকিৎসক ও কিছু একাডেমিশিয়ান এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছেন। এ কারণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষাগুলোতে রিসার্চ পেপার ও থিসিস পেপার কঠোরভাবে বিচার বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এই অনৈতিক কাজের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় পাস করবেন, একাডেমিশিয়ানরা পদোন্নতি পাবেন। কিন্তু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চিকিৎসক, গবেষক ও গবেষণা মান হারাবে।’

অধ্যাপক রেজা চিকিৎসকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে গবেষণাপত্রের সংখ্যার চেয়ে মানের দিকে গুরুত্ব প্রদানের পরামর্শ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানকালে হাতে আসা ‘প্রমিস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, তারা রিসার্চ, ট্রেনিং ও কনসালট্যান্সি সার্ভিস দেয়। এর মধ্যে বিশেষভাবে কেস রিপোর্ট, অরিজিনাল আর্টিক্যাল, রিভিউ আর্টিকেল, থিসিস পেপার, প্রটোকল সিনপসিস, পিএইচডি সাপোর্ট, র-ডাটা এন্ট্রি, রাইটিং সাপোর্ট, পাবলিকেশন সাপোর্টের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে প্রমিস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মো. জিয়াউদ্দিন মানিক বলেন, তারা শুধু চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণাপত্র তৈরি ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশের ব্যবস্থা করে দেন। এর বিনিময়ে কত টাকা নেওয়া হবে, তা বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে।

দেশরুপান্তর:

মসজিদে আশ্রয় দুর্গত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত গ্রাম চান্দেরবাগ। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার সীমান্তবর্তী ডাকাতিয়া নদী তীরবর্তী এ গ্রামে বসবাস ২৩০-২৫০ জন মানুষের, যাদের মধ্যে শুধু দুটি পরিবারের সদস্যরা মুসলমান। গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে পুরো গ্রামটি ডুবে যায়। আশপাশে আশ্রয়কেন্দ্র না থাকায় গ্রামটির হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পাশের পিপড্ডা গ্রামের মসজিদে আশ্রয় নিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা সদর থেকে দূরে হওয়ায় চান্দেরবাগ গ্রামের বাসিন্দারা উন্নয়ন থেকে অনেকটা অবহেলিত। তাদের অধিকাংশই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। টানা বৃষ্টি ও ডাকাতিয়া নদীর পানি বেড়ে গ্রামটি ডুবে যায়। গ্রামটির বহু বাসিন্দা আশপাশে কোনো আশ্রয়কেন্দ্র না পেয়ে পাশের গ্রামের মসজিদে অবস্থান করছেন। আর কিছু লোক বিভিন্ন বাড়ির ছাদে রয়েছেন। সরকারি কোনো সহায়তা এখনো পাননি তারা।

ওই গ্রামের বাসিন্দা গীতা রানী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘ডাকাতিয়া নদীতে পানি বাড়ে আবার চলে যায়। গ্রামে রাস্তা সমান পানি হয়। কিন্তু কখনো ঘরে পানি ঢোকেনি। এবার পুরো গ্রাম ডুবে গেছে। কোনোরকম জীবন নিয়ে মসজিদে অবস্থান করছি। আশপাশের কয়েকজন মানুষ শুকনো কিছু খাবার দিয়েছে। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পাইনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগ থেকে আমাদের গ্রাম অবহেলিত। রাস্তাঘাট ভালো না। কিছুই ঘর থেকে বের করতে পারিনি। সব পানিতে ডুবে গেছে।’

কালের কন্ঠ:

মহাসড়কে আটকা হাজারো মানুষ মহাদুর্ভোগে

কুমিল্লার বাসিন্দা মো. সামছুল আলম গত বুধবার কক্সবাজার গিয়েছিলেন। মহাসড়কে পানি ওঠার খবর পেয়ে বেড়ানো অসমাপ্ত রেখেই বৃহস্পতিবার সকালে বাসে করে কুমিল্লার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি। পথে মহাসড়কের কয়েকটি জলমগ্ন অংশ পেরিয়ে বিকেল ৩টায় তাঁদের বাসটি ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার লেমুয়ায় পৌঁছে। পানির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়ায় বাসের যাত্রা সেখানেই শেষ হয়।
সারা রাত না খেয়ে পরদিন শুক্রবার সকাল ৭টা পর্যন্ত সেখানেই আটকে থাকার পর হেঁটেই সামনে এগোতে থাকেন সামছুল আলম। ক্রমেই পানি হাঁটু ও কোমর ছাড়িয়ে বুক পর্যন্ত ওঠে। সেই সঙ্গে ছিল তীব্র স্রোত। প্রায় চার ঘণ্টা এভাবে পানি ভেঙে ফেনী সদরের মহিপাল পৌঁছেন সামছুল।
এরপর বিভিন্ন যানবাহনে ভেঙে ভেঙে শুক্রবার দুপুরে কুমিল্লায় পৌঁছেন। বিকেলে খবর নিয়ে জানেন তাঁকে বহনকারী বাসটি তখনো আগের জায়গায়ই দাঁড়িয়ে আছে!ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার লেমুয়া থেকে মহিপালের দূরত্ব প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার। এর মধ্যে অন্তত ছয় কিলোমিটার মহাসড়কই বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে ডুবে গেছে। বন্ধ রয়েছে মহাসড়কের যান চলাচল।
কুমিল্লার বাসিন্দা সামছুল আলমের মতো কয়েক হাজার মানুষ মহাসড়কে চলতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য—এমন ভয়াবহ দুর্ভোগে আগে আর পড়েননি। আর স্থানীয়রা বলছে, মহাসড়কে এমন পানি উঠতে আগে কখনো দেখেনি তারা।শুক্রবার দুপুরে ভুক্তভোগী মো. সামছুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে হাজারো যাত্রী বিপদের মধ্যে পড়ে