ঢাকা ০৬:৪৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
‘দফা’ ‘দাবি’ আর ‘আল্টিমেটামের’ হিড়িক

পাপুয়া নিউগিনির শীর্ষ ধনী সাবেক এমপি ওয়াহেদ

আজকের প্রত্রিকার প্রধান প্রধান খবর:

কালবেলা:

পাপুয়া নিউগিনির শীর্ষ ধনী সাবেক এমপি ওয়াহেদ
বাংলাদেশে রাজনীতি করলেও তিনি পাপুয়া নিউগিনির শীর্ষ ধনী। বড় ব্যবসায়ী হিসেবে সেখানকার নাগরিকত্ব পেয়েছেন অনেক আগেই। ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশটিতে তার মালিকানায় আছে বড় বড় দেড় ডজন কোম্পানি। প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি দেশেও এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিস্তৃত।

‘মহাসম্পদশালী’ এই ব্যক্তির নাম এম এ ওয়াহেদ। তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। দ্বাদশ সংসদের বিতর্কিত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ময়মনসিংহ-১১ আসনের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

শুধু পাপুয়া নিউগিনি নয়, বাংলাদেশেও অঢেল সম্পদের মালিক এই ওয়াহেদ। দখল করেছেন বন বিভাগসহ সরকারের বিপুল পরিমাণ জমি। সব মিলিয়ে দেশ-বিদেশে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক তিনি।

তথ্য বলছে, এক দশক ধরে পাপুয়া নিউগিনিতে একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন ওয়াহেদ। কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসায় শীর্ষে অবস্থান করছেন তিনি। এ ছাড়া বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করছেন নতুন নতুন খাতে। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী নানা পণ্য, নির্মাণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতও রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পাপুয়া নিউগিনিতে ওয়াহেদের মূল কোম্পানির নাম দেশ বেশ এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড (ঠিকানা-পোস্ট বক্স ২৬২, বোরোকো, ন্যাশনাল ক্যাডর্টাএল ডিস্ট্রিক্ট, পাপুয়া নিউগিনি)। এই প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায়, এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গর্ডনস-সেন্ট্রাল সুপার মার্কেটে ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি, সার্ভিস স্টেশন, টু এক্স বেকারি, টু এক্স ফাস্ট ফুড; গর্ডনসে গর্ডন হোলস অ্যান্ড ডেলিভারি ডিপো; দেশ বেশ হোলসেল অ্যান্ড রিটেইল ফাস্ট ফুড বেকারি এবং ফ্রিজার ডিপার্টমেন্ট স্টোর; লয়েস রোডে হোলসেল অ্যান্ড রিটেইল ফাস্ট ফুড, বেকারি অ্যান্ড ফ্রিজার ডিপার্টমেন্ট স্টোর, কৌরা ওয়ে টোকাররায় ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি, ফাস্ট ফুড এবং বেকারি; ফ্রিজার, কনটেইনার ইয়ার্ড, পরিবহন, লজিস্টিক এবং ওয়ার্কশপ; সোগেরি রোডে নতুন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পোলট্রি মাংস প্রক্রিয়াকরণ, ফিড মিল, সার প্যাকেজিং, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, এগ্রো-সুপার মার্কেট, সবজি ও ফলচাষ এবং মাছচাষসহ কৃষিকাজ।

এ ছাড়া বি পি এক্সপার্ট লিমিটেড, কনকর্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, দেশ বেশ এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেড, গর্ডনস হোলসেল লিমিটেড, রিগস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন (পিএনজি) লিমিটেড, দেশ বেশ ফার্মেসি লিমিটেড এবং কেসি দ্য স্নেক পিট লাউঞ্জ নামে প্রতিষ্ঠানের মালিকও এম এ ওয়াহেদ।

তথ্য বলছে, পাপুয়া নিউগিনির রাজধানী পোর্ট মোর্সবি ছাড়াও দেশের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম রয়েছে। এ ছাড়া পাপুয়া নিউগিনির পার্শ্ববর্তী দেশ অষ্ট্রেলিয়ায়ও ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন ওয়াহেদ।

পাপুয়া নিউগিনিতে ওয়াহেদের কোম্পানিতে কাজ করেন—এমন একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হয় কালবেলার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, পাপুয়া নিউগিনির অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি দেশ বেশ এন্টারপ্রাইজ। নানা খাতে এই কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। বর্তমানে শুধু পাপুয়া নিউগিনিতেই এক হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন।

জানা গেছে, ওয়াহেদ অনেক আগেই পাপুয়া নিউগিনির নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সে দেশের পাসপোর্টও রয়েছে তার, যার নম্বর ই-২২৯৫২৩। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার পাসপোর্টও রয়েছে তার। তবে সেসব তথ্য গোপন করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। হলফনামায় তিনি নিজেকে শুধু বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৮৬৭২৩৬৯৫৫৩। পাসপোর্ট নম্বর এ-০৩৩০৭৬৩২।

দৈনিক সংগ্রাম:

দফা’ ‘দাবি’ আর ‘আল্টিমেটামের’ হিড়িক
রাজধানীতে ‘অসহনীয়’ যানজট
পর্যবেক্ষক মহলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

তোফাজ্জল হোসাইন কামাল : চারদিকে ‘দফা’ ‘দাবি’ আর ‘আল্টিমেটাম’- এর হিড়িক পড়েছে। নানান পেশার মানুষ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের নানা ধরনের দাবি নিয়ে ব্যনার, পোস্টার, ফেস্টুন নিয়ে কোমর বেঁধে রাস্তায় রাস্তায় নেমে পড়েছে। তবে এসব কর্মসূচি ঘিরে কোথাও পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি গত কয়েকদিনে। বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ বিক্ষোভসহ মিছিল হলেও কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সব ধরনের কর্মসূচীই শান্তিপূর্ণভাবে চলে আসছে। এসব কর্মসূচী চলাকালে রাজধানী ঢাকায় ‘অসহনীয়’ যানজট নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন কোন স্থানে মিছিল সমাবেশ করে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে দেশের প্রশাসনিক প্রানকেন্দ্র সচিবালয়ের সামনে সভা সমাবেশ মিছিল করে যান চলাচলসহ জনগনের চলাচলের পথও রুদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সচিবালয়ে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যঘাত ঘটছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নানা দাবি নিয়ে ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় নেমেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, যাদের কারণে যানজটের এই শহরে ভোগান্তির মাত্রা আরও তীব্র হয়। কারও দাবি বেতন বৈষম্য দূর করা, কারও চাকরি জাতীয়করণ, কেউ নেমেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে, কারওবা দাবি পরীক্ষা বাতিলের, কেই এসেছেন শেখ হাসিনার বিচার চাইতে।

ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগষ্ট সোমবার শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। ৮ আগষ্ট বৃহস্পতিবার রাতে শপথ নেয় নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। পরপর দু‘দিন শুক্র ও শনিবার। ১১ আগষ্ট রোববার থেকে অফিস আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। সরকার তার স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু এবং গোছানোর আগেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা পেশার মানুষ মাঠে নেমে পড়েন নানা দাবি দাওয়া নিয়ে। আস্তে আস্তে এসব দাবি দাওয়াসহ চাওয়া পাওয়া পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। গত ১৮ আগষ্ট রোববার থেকে তা তীব্র আকার ধারণ করে।

মানবজমিন:

তিনি তো বলে যেতে পারতেন
ফুলবাড়ীয়ার ফিনিক্স রোড। পুলিশ হেডকোয়ার্টার। শীর্ষ কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন, ঘামছেন। বিশেষ টেলিফোনের পাশেই বসে আছেন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। ৫ই আগস্ট দুপুরের দিকের কথা। সকাল থেকে দুপুর। বিশেষ টেলিফোন কয়েকবার বেজেছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফোন নয়। বেলা যখন আড়াইটা তখন টেলিভিশনের পর্দায় নতুন খবর ভেসে উঠলো। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।

তার হেলিকপ্টার বঙ্গভবন হয়ে আগরতলার পথে। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, আতিকুল ইসলাম, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ ও প্রভাবশালী পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার।
তখন অফিসাররা বলাবলি করছিলেন, তিনি তো আমাদেরকে বলে যেতে পারতেন। অথচ আমরা তার শেষ নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
রাস্তায় তখন লাখ লাখ মানুষ। ভয়ে কাঁপছেন এই অফিসাররা। কোনদিকে যাবেন, কীভাবে যাবেন? কারণ চারদিকে মানুষ আর মানুষ। ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মিছিল রূপ নিয়েছে বিজয় মিছিলে। মানুষের বাঁধভাঙা স্রোতে নগরের কোথাও নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবছে না পুলিশ। ইতিমধ্যে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। তাই আইজিপি সিদ্ধান্ত নিলেন হেলিকপ্টার এনে সদর দপ্তর ত্যাগ করবেন। হেলিকপ্টার এলো। উল্লিখিত অফিসারদের মধ্যে দু’জন ছাড়া বাকিরা হেলিকপ্টারে চড়ে তেজগাঁও বিমানবন্দরে চলে গেলেন। এর মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল ইসলাম রিকশায় করে বাড়ি গেলেন। আলোচিত গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ দেয়াল টপকে আগেই হেডকোয়ার্টার ত্যাগ করেন।

বনিক বার্তা:

ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ ২৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের বেশির ভাগই ফলপ্রসূ হয়নি
ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। ওই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি খাতকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ও এর মাধ্যমে খাতগুলোর ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত করার কথা। এ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১০ সাল থেকে একের পর এক প্রকল্প নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। এরপর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ স্লোগান পাল্টে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ ধারণা সামনে আনেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ স্লোগানের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের সব সেবা ও মাধ্যম ডিজিটালে রূপান্তর, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এর আওতায় নেয়া হয় আরো নতুন নতুন প্রকল্প।

সব মিলিয়ে ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। যদিও এসব উদ্যোগের বেশির ভাগই ফলপ্রসূ হয়নি। প্রকল্পগুলোয় মোট ব্যয়ের সিংহভাগই হয়েছে অবকাঠামো উন্নয়নে। কিন্তু এত বিপুল ব্যয়ের বিপরীতে উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে পারেনি প্রকল্পগুলো। আবার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতেও বেশকিছু প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানেও প্রশিক্ষণার্থীদের পরে আইসিটি শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়নি।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবকাঠামো উন্নয়ন বাবদ নিষ্ফল বিনিয়োগের বড় একটি উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের নেয়া প্রকল্পগুলোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সারা দেশে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে গড়ে তোলা হচ্ছে হাই-টেক পার্ক, আইটি পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর সেন্টার, ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। হাই-টেক শিল্পের বিকাশে দেশব্যাপী এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও তা প্রত্যাশা অনুযায়ী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারেনি। কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে। এছাড়া সিলেট ও রাজশাহীতে নির্মিত হাই-টেক পার্কে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিসরে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। এসব পার্কে খুব সামান্য পরিমাণে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে।

দেশ রুপান্তর:

একে প্রশাসন দুইয়ে পুলিশ
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন পেশাজীবীদের যারা বৈষম্যের অভিযোগ তুলে দাবিদাওয়া আদায়ে আন্দোলন করছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাবি পূরণ হচ্ছে প্রশাসনের কর্মকর্তা বা আমলাদের। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

গত এক সপ্তাহে যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে অন্তত ৩৪০ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যে তারিখ থেকে এ কর্মকর্তাদের কনিষ্ঠ কর্মকর্তারা তাদের ছাড়িয়ে যান, সেই তারিখ থেকে তাদের পদোন্নতি কার্যকর হবে এবং তারা বকেয়া আর্থিক সুবিধা পাবেন।

এদিকে অবসরপ্রাপ্ত পাঁচজন অতিরিক্ত সচিবকে দুই বছরের জন্য সিনিয়র সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি শিগগির আরও প্রায় ১০০ জনকে অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ারও কথা শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে এ সময়ে পদোন্নতি পেয়েছেন পুলিশের ১০৩ কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার পদোন্নতির এ সুযোগে অনেক অযোগ্যও সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন। এমনকি কারও কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকারও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি পদ না থাকার পরও পদোন্নতি দেওয়ার ফলে মাথাভারী হচ্ছে প্রশাসন। আবার পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংখ্যা বেশি। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্যেষ্ঠতা ও মেধা অনুযায়ী অবশ্যই পদোন্নতি দেওয়া জরুরি। কিন্তু গত দেড় দশকে পুলিশ, জনপ্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কিংবা পদায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতার চেয়ে দলীয় বিবেচনা অগ্রাধিকার পাওয়ার ফলে বৈষম্যের পাহাড় তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির পাশাপাশি পুলিশ ও জনপ্রশাসনে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এমন অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে পরিবর্তন কিংবা সংস্কার করা হলে এ নিয়ে সংকট তৈরি হবে কি না, সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমান সময়ে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত বঞ্চিতরাই যাতে সুবিধা পান, সেই বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ারও দাবি উঠেছে।

প্রথম আলো:

দুর্বল স্বাস্থ্য খাতে অস্থিরতা

দলীয় রাজনীতি স্বাস্থ্য খাতকে দুর্বল করেছে। সেবার মান উন্নত করার চেয়ে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন ক্ষমতাসীনেরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই সরকারি হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্য খাতে রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরি করবে, নাকি যোগ্য লোক দিয়ে স্বাস্থ্য খাত চালাবে—এ প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগপর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রগুলো প্রবল শক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। নিয়োগ-বদলিতে প্রভাব রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে ব্যবসাও করেছেন স্বাচিপের নেতারা।

শুধু তা–ই নয়, বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সদস্যদের নানাভাবে বঞ্চিত করেছে স্বাচিপ। সব ধরনের যোগ্যতা থাকার পরও বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের যথাসময়ে পদোন্নতি হয়নি। তাঁদের কোনো প্রকল্পপ্রধান করা হয়নি। স্বাচিপ বা ড্যাবের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, অর্থাৎ স্বতন্ত্র চিকিৎসকেরাও বঞ্চিত হয়েছেন। নজির আছে, যোগ্যতার মূল্যায়ন না হওয়ায় অপমানে, হতাশায় অনেকে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।

ঠিক বিপরীত চিত্র ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। স্বাস্থ্য খাতের সব ক্ষেত্রে ছিল ড্যাবের একচ্ছত্র আধিপত্য। ড্যাবের নেতা-কর্মীদের দাপটে তখন স্বাচিপ ছিল কোণঠাসা। স্বতন্ত্রদের একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেই আমলেও। স্বাচিপ ও ড্যাবের দাপটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা খাত ও চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থা। এদের গোষ্ঠীস্বার্থ স্বাস্থ্য খাতের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় রাজনীতি সেবা খাতকেদলবাজি

কতটা দুর্বল করতে পারে, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ স্বাস্থ্য খাত। অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় স্বাস্থ্য খাতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি থাকা উচিত। স্বাচিপ ও ড্যাবকে সক্রিয় রেখে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার করা সম্ভব হবে না।ওপিতে বড়-মেজ-ছোট ভাই

স্বাস্থ্য খাতের সিংহভাগ কাজ বাস্তবায়িত হয় মূলত স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির মাধ্যমে। কর্মসূচিটি পাঁচ বছর মেয়াদি। চতুর্থ কর্মসূচি শেষ হয়েছে বছর দুয়েক আগে। পঞ্চম কর্মসূচি এ বছরের জুলাই মাসে শুরু হওয়ার কথা ছিল। এতে মূল টাকা দেয় সরকার, একটি অংশ দেয় উন্নয়ন–সহযোগীরা।

স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচি চলে ৩১টি অপারেশন প্ল্যান (ওপি) বা বিষয়ভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে। যেমন: পুষ্টি, সংক্রামক রোগ, অসংক্রামক রোগ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য, বিকল্প চিকিৎসা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য—এ ধরনের বিষয়ের জন্য পৃথক পৃথক ওপি। ওপিতে পাঁচ বছরের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকে।

প্রতিটি ওপিতে লোভনীয় তিনটি পদ আছে: লাইন ডিরেক্টর, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার। লাইন ডিরেক্টর থাকেন একজন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার থাকেন এক বা দুজন এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার থাকেন ২ থেকে ১০–১২ জন পর্যন্ত। বর্তমানে প্রায় সব পদ দখল করে আছেন স্বাচিপের সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে মেধা বা যোগ্যতা দেখা হয়নি। তাঁরা ছাত্রজীবনে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। সাধারণত সাবেক ছাত্রলীগের বড় ভাই লাইন ডিরেক্টর, বয়সে কিছু ছোট প্রোগ্রাম অফিসার এবং ছোট ভাই ডেপুটি প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কাজ করেন। অভিযোগ আছে, ভাইয়েরা এক জোট হয়ে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, বিদেশ সফর ও প্রশিক্ষণে দুর্নীতি করেন।ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার করেছিলেন অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর কিছুদিন পর দুর্নীতির অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। প্রশাসন পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও তখন মহাপরিচালকের আসনে বসানো হয় অধ্যাপক খুরশীদ আলমকে। তাঁর সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে তাঁর চাকরির মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

১১টি প্রতিষ্ঠান ও মেডিকেল কলেজের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন অধ্যাপকের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে একই প্রক্রিয়ায়। তবে বিএনপিপন্থী কোনো চিকিৎসক এই সুবিধা পাননি

কালের কন্ঠ:

আন্দোলনের মুখে পরীক্ষা বাতিল
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়েছে। সিলেট বোর্ড, মাদরাসা বোর্ড ও কারিগরি বোর্ড বাদে অন্য আটটি শিক্ষা বোর্ডে কোনো শিক্ষার্থীর সাতটি, আবার কোনো শিক্ষার্থীর আটটি পত্রের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছিল। স্থগিত থাকা বিষয়গুলোতে এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ম্যাপিং করে নম্বর দেওয়া হতে পারে বলে আন্ত শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

আন্দোলনের মুখে পরীক্ষা বাতিলআন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের বাকি বিষয়গুলো বাতিল করা হয়েছে।

অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের আর বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা দিতে হবে না। তবে এখন বাকি বিষয়গুলো কিভাবে মূল্যায়ন করব সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
অধ্যাপক তপন কুমার সরকার আরো বলেন, ‘করোনার সময়ও আমরা এইচএসসির সব বিষয়ের পরীক্ষা নিতে পারিনি। তখন এসএসসির বিষয় ম্যাপিং করে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

এবারও সে পদ্ধতি অনুসরণ করার সুযোগ রয়েছে। তবে আটটি বোর্ডের শিক্ষার্থীরা কিন্তু আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষাগুলো দিয়েছে। আর ঐচ্ছিক বিষয়ের দুই-তিনটা পরীক্ষা দিয়েছে। ফলে এসএসসির ফলাফল ও এইচএসসির নেওয়া পরীক্ষাগুলো মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করলে তেমন সমস্যায় পড়তে হবে না।

নয়াদিগন্ত:

টানাবর্ষণে তলিয়ে গেছে ৭ জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল
– নোয়াখালী ও নাঙ্গলকোটে ৬০ লাখ লোক পানিবন্দী
– চট্টগ্রামের অলিগলি ও বাসাবাড়িতে পানি
– কুশিয়ারা, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে

লঘুচাপ সুস্পষ্ট হওয়ায় ভারীবর্ষণ তীব্র হয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা ও প্রবল বৃষ্টিপাতের সাথে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি ও মৌলভীবাজার নিম্নাঞ্চল, রাস্তা, অলিগলি, বীজতলা তলিয়ে গেছে। বরগুনা ঝালকাঠির নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আমন ধানের চারা নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে পুকুর ও চাষকরা প্রজেক্টের মাছ। এ দিকে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কুশিয়ারা, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে মানুষের চরম ভোগান্তি শুরু হয়েছে। মানুষ অভুক্ত থাকছে রান্না করতে না পেরে। আবহাওয়া অফিস বলেছে, ভারীবর্ষণ আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ভারী বর্ষণের সাথে জোয়ারের পানি একাকার হয়ে আবারো ডুবল বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস গত সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। একই সাথে বুধবারও বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে। গত দুই দিন ধরে নগরীর সড়ক-অলি-গলি পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় মানুষের বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগের অন্ত নেই।

গত রোববার রাত থেকেই লঘুচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। যা অব্যাহত থাকে এবং সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার সকালেও ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সকাল থেকে থেমে থেমে ভারী বর্ষণের পাশাপাশি একই সময়ে জোয়ার থাকায় নগরীর বিস্তীর্ণ সড়ক অলিগলি, বাজার, বিভিন্ন বাসাবাড়ির নিচতলা এবং বিভিন্ন মার্কেট ও দোকান পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এ সময় কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর সমান পানি মাড়িয়েই অফিসগামী মানুষকে বিশেষ করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের পথ চলতে হয়েছে চরম ভোগান্তি সঙ্গী করে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। এর কারণেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে চট্টগ্রামে। আরো দুই দিন এমন বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।

এ দিকে ভারী বৃষ্টিতে নগরীর কাপাসগোলা, বাদুরতলা, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, ইপিজেড, সল্টগোলা, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, জিইসি, পাহাড়তলী, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, বাকলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডিসি রোড, সিরাজউদ্দৌলা সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সড়ক-অলি-গলি পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এ সময় নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার এবং দোকানপাট পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ে।

যুগান্তর:

পুলিশ পদোন্নতিতে দুর্নীতি
১৯৯৭-তে নিয়োগ হলেও দেখানো হয় ১৯৯১ সাল
পদত্যাগী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশের পদোন্নতিতে নজিরবিহীন দুর্নীতি হয়েছে। ১৭১ কর্মকর্তা ১৯৯৭ সালে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু ছয় বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯১ সালে তাদের চাকরিতে যোগদান দেখিয়ে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ ৭৫০ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে (সুপারিসড) কনিষ্ঠ ১৭১ জনকে পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরে তাদের অনেকেই পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপারও (এএসপি) হয়েছেন।

রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া এই পদোন্নতিতে সব মিলে বঞ্চিত হয়েছেন ২২৫০ কর্মকর্তা। এর নেপথ্যে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৎকালীন সংস্থাপন ও প্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম।
বিধিবহির্ভূতভাবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ওই ১৭১ কর্মকর্তার জ্যেষ্ঠতা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বঞ্চিতরা। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও আইজিপি ময়নুল ইসলামের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সোমবার তারা উপদেষ্টা ও আইজিপির সঙ্গে দেখা করে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন এবং বাংলাদেশ পুলিশ প্রবিধান (পিআরবি) অনুসারে পুলিশ বিভাগে পদোন্নতিসহ সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৭১ জনের পদোন্নতির নির্বাহী আদেশ পুলিশ বিভাগের অভ্যন্তরীণ নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। এটি অবাস্তব ও বিভাগীয় নিয়মনীতির পরিপন্থি। দুর্নীতির মাধ্যমে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাই আদেশটি বাতিলযোগ্য। এ আদেশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, এই মুহূর্তে আমি একটু বাসায় বিশ্রামে আছি। বিষয়টি নিয়ে পরে অফিস টাইমে কথা বলা যাবে।

এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় ১৭১ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে সেটা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি। এক্ষেত্রে দলীয় রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে প্রকারান্তরে এটা যে দুর্নীতি তা অস্বীকার করার উপায় নেই। যেসব অনিয়মের কারণে ১৯৯১ সালে তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়, সেগুলো সুষ্ঠু তদন্ত হয়েছে কি না, তা একটি বড় বিষয়। যদি না হয়ে থাকে তবে সেটা আরও একদফা স্বজনপ্রীতি। তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

সমকাল:

বেনামে শেয়ার ব্যবসা ও কারসাজিতে শিবলী
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে বসে বেআইনিভাবে শেয়ার ব্যবসা করেছেন সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি শেয়ার ব্যবসা করেছেন বেনামে। বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে শেয়ার লেনদেনের বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। শেয়ার ব্যবসা করতে গিয়ে শিবলী রুবাইয়াত শেয়ার কারসাজির অন্যতম হোতা আবুল খায়ের হিরোর কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। হিরোর তথাকথিত ‘হট আইটেম’, অর্থাৎ কারসাজির মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পাওয়া বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারই শিবলীর বেনামি অ্যাকাউন্টে ক্রমাগত কেনাবেচা হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ক্ষমতার দাপটে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এলআর গ্লোবালকে একের পর এক বিতর্কিত সুবিধা দিয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী। এলআর গ্লোবালের সিইও রিয়াজ ইসলামের সঙ্গে দুবাইয়ে সিগমা ম্যানেজমেন্ট নামে যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। ওই কোম্পানির পার্টনার শিবলীর বড় ছেলে যুহায়ের ইসলাম।
সমকালের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০ সালের মে মাসে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার সময়ই অধ্যাপক শিবলী ঋণখেলাপি ছিলেন। অর্থঋণ আদালতে মামলায় ২০০৭ সাল থেকেই টানা প্রায় ১৬ বছর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ঘুরছিলেন তিনি। চেয়ারম্যান পদে চার বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালনের প্রথম দুই বছর চার মাস পর্যন্ত তিনি ঋণখেলাপি ছিলেন এবং তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল ছিল।

সমকালের অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জাবেদ এ মতিনের হংকংয়ের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার হাতিয়ে নেওয়া, প্রতারণার অর্থ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পাচার করে আনা এবং এ ক্ষেত্রে অধ্যাপক শিবলীর প্রত্যক্ষ সহায়তার তথ্য পাওয়া গেছে। পাচার করা অর্থ দেশে আনার সহযোগিতার অংশ হিসেবে শিবলী এর ভাগ নিয়েছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১২ কোটি টাকা নেওয়ার প্রমাণ পায় সমকাল। অর্থ পাচারকারী জাবেদ এ মতিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পর প্রথম চার মাস শিবলী রুবাইয়াতের ধানমন্ডির বাসায় ছিলেন।
আইপিও অনুমোদন, মন্দ কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্ত এবং স্বার্থান্বেষী মহলকে নানা সুবিধা দিয়ে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন অধ্যাপক শিবলী। বিএসইসির তদন্তে কারও বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ বা বড় ধরনের আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পেলে, অনেক ক্ষেত্রে তা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি আটকে দিতেন। দোষীদের নাম বাদ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানে চাপ দেওয়া বা প্রতিবেদনে নাম আসার পর নামমাত্র জরিমানা দিয়ে দায়মুক্তি দেওয়ার অনেক অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, আলোচিত সোনালী পেপার কোম্পানিটিকে অধুনালুপ্ত ওটিসি বাজার থেকে মূল শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্তির সুযোগ করে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ হিসেবে অধ্যাপক শিবলী ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকার শেয়ার নেন নিজের বেনামি বিও অ্যাকাউন্টে।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

‘দফা’ ‘দাবি’ আর ‘আল্টিমেটামের’ হিড়িক

পাপুয়া নিউগিনির শীর্ষ ধনী সাবেক এমপি ওয়াহেদ

আপডেট সময় ০৮:০২:৩১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০২৪

আজকের প্রত্রিকার প্রধান প্রধান খবর:

কালবেলা:

পাপুয়া নিউগিনির শীর্ষ ধনী সাবেক এমপি ওয়াহেদ
বাংলাদেশে রাজনীতি করলেও তিনি পাপুয়া নিউগিনির শীর্ষ ধনী। বড় ব্যবসায়ী হিসেবে সেখানকার নাগরিকত্ব পেয়েছেন অনেক আগেই। ওশেনিয়া অঞ্চলের দেশটিতে তার মালিকানায় আছে বড় বড় দেড় ডজন কোম্পানি। প্রতিবেশী অস্ট্রেলিয়াসহ আশপাশের কয়েকটি দেশেও এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বিস্তৃত।

‘মহাসম্পদশালী’ এই ব্যক্তির নাম এম এ ওয়াহেদ। তিনি ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। দ্বাদশ সংসদের বিতর্কিত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে ময়মনসিংহ-১১ আসনের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

শুধু পাপুয়া নিউগিনি নয়, বাংলাদেশেও অঢেল সম্পদের মালিক এই ওয়াহেদ। দখল করেছেন বন বিভাগসহ সরকারের বিপুল পরিমাণ জমি। সব মিলিয়ে দেশ-বিদেশে কয়েক হাজার কোটি টাকার মালিক তিনি।

তথ্য বলছে, এক দশক ধরে পাপুয়া নিউগিনিতে একের পর এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছেন ওয়াহেদ। কৃষি এবং খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবসায় শীর্ষে অবস্থান করছেন তিনি। এ ছাড়া বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত বিনিয়োগ করছেন নতুন নতুন খাতে। এর মধ্যে রপ্তানিমুখী নানা পণ্য, নির্মাণ এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতও রয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, পাপুয়া নিউগিনিতে ওয়াহেদের মূল কোম্পানির নাম দেশ বেশ এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড (ঠিকানা-পোস্ট বক্স ২৬২, বোরোকো, ন্যাশনাল ক্যাডর্টাএল ডিস্ট্রিক্ট, পাপুয়া নিউগিনি)। এই প্রতিষ্ঠানের প্রোফাইল ঘেঁটে দেখা যায়, এর আওতাধীন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে গর্ডনস-সেন্ট্রাল সুপার মার্কেটে ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি, সার্ভিস স্টেশন, টু এক্স বেকারি, টু এক্স ফাস্ট ফুড; গর্ডনসে গর্ডন হোলস অ্যান্ড ডেলিভারি ডিপো; দেশ বেশ হোলসেল অ্যান্ড রিটেইল ফাস্ট ফুড বেকারি এবং ফ্রিজার ডিপার্টমেন্ট স্টোর; লয়েস রোডে হোলসেল অ্যান্ড রিটেইল ফাস্ট ফুড, বেকারি অ্যান্ড ফ্রিজার ডিপার্টমেন্ট স্টোর, কৌরা ওয়ে টোকাররায় ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি, ফাস্ট ফুড এবং বেকারি; ফ্রিজার, কনটেইনার ইয়ার্ড, পরিবহন, লজিস্টিক এবং ওয়ার্কশপ; সোগেরি রোডে নতুন প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে পোলট্রি মাংস প্রক্রিয়াকরণ, ফিড মিল, সার প্যাকেজিং, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, এগ্রো-সুপার মার্কেট, সবজি ও ফলচাষ এবং মাছচাষসহ কৃষিকাজ।

এ ছাড়া বি পি এক্সপার্ট লিমিটেড, কনকর্ড কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, দেশ বেশ এগ্রো কমপ্লেক্স লিমিটেড, গর্ডনস হোলসেল লিমিটেড, রিগস ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন (পিএনজি) লিমিটেড, দেশ বেশ ফার্মেসি লিমিটেড এবং কেসি দ্য স্নেক পিট লাউঞ্জ নামে প্রতিষ্ঠানের মালিকও এম এ ওয়াহেদ।

তথ্য বলছে, পাপুয়া নিউগিনির রাজধানী পোর্ট মোর্সবি ছাড়াও দেশের আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম রয়েছে। এ ছাড়া পাপুয়া নিউগিনির পার্শ্ববর্তী দেশ অষ্ট্রেলিয়ায়ও ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন ওয়াহেদ।

পাপুয়া নিউগিনিতে ওয়াহেদের কোম্পানিতে কাজ করেন—এমন একজন কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ হয় কালবেলার। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জানান, পাপুয়া নিউগিনির অন্যতম শীর্ষ কোম্পানি দেশ বেশ এন্টারপ্রাইজ। নানা খাতে এই কোম্পানির বিনিয়োগ রয়েছে। বর্তমানে শুধু পাপুয়া নিউগিনিতেই এক হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করেন।

জানা গেছে, ওয়াহেদ অনেক আগেই পাপুয়া নিউগিনির নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সে দেশের পাসপোর্টও রয়েছে তার, যার নম্বর ই-২২৯৫২৩। এ ছাড়া ইন্দোনেশিয়ার পাসপোর্টও রয়েছে তার। তবে সেসব তথ্য গোপন করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। হলফনামায় তিনি নিজেকে শুধু বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করেন। তার জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ৮৬৭২৩৬৯৫৫৩। পাসপোর্ট নম্বর এ-০৩৩০৭৬৩২।

দৈনিক সংগ্রাম:

দফা’ ‘দাবি’ আর ‘আল্টিমেটামের’ হিড়িক
রাজধানীতে ‘অসহনীয়’ যানজট
পর্যবেক্ষক মহলের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

তোফাজ্জল হোসাইন কামাল : চারদিকে ‘দফা’ ‘দাবি’ আর ‘আল্টিমেটাম’- এর হিড়িক পড়েছে। নানান পেশার মানুষ রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাদের নানা ধরনের দাবি নিয়ে ব্যনার, পোস্টার, ফেস্টুন নিয়ে কোমর বেঁধে রাস্তায় রাস্তায় নেমে পড়েছে। তবে এসব কর্মসূচি ঘিরে কোথাও পুলিশের উপস্থিতি দেখা যায়নি গত কয়েকদিনে। বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ বিক্ষোভসহ মিছিল হলেও কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। সব ধরনের কর্মসূচীই শান্তিপূর্ণভাবে চলে আসছে। এসব কর্মসূচী চলাকালে রাজধানী ঢাকায় ‘অসহনীয়’ যানজট নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোন কোন স্থানে মিছিল সমাবেশ করে চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। বিশেষ করে গত কয়েকদিন ধরে দেশের প্রশাসনিক প্রানকেন্দ্র সচিবালয়ের সামনে সভা সমাবেশ মিছিল করে যান চলাচলসহ জনগনের চলাচলের পথও রুদ্ধ করে দেয়া হচ্ছে। সচিবালয়ে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যঘাত ঘটছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নানা দাবি নিয়ে ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় নেমেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, যাদের কারণে যানজটের এই শহরে ভোগান্তির মাত্রা আরও তীব্র হয়। কারও দাবি বেতন বৈষম্য দূর করা, কারও চাকরি জাতীয়করণ, কেউ নেমেছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে, কারওবা দাবি পরীক্ষা বাতিলের, কেই এসেছেন শেখ হাসিনার বিচার চাইতে।

ছাত্র জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগষ্ট সোমবার শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটে। ৮ আগষ্ট বৃহস্পতিবার রাতে শপথ নেয় নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার। পরপর দু‘দিন শুক্র ও শনিবার। ১১ আগষ্ট রোববার থেকে অফিস আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। সরকার তার স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু এবং গোছানোর আগেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা পেশার মানুষ মাঠে নেমে পড়েন নানা দাবি দাওয়া নিয়ে। আস্তে আস্তে এসব দাবি দাওয়াসহ চাওয়া পাওয়া পর্যায়ক্রমে বাড়তে থাকে। গত ১৮ আগষ্ট রোববার থেকে তা তীব্র আকার ধারণ করে।

মানবজমিন:

তিনি তো বলে যেতে পারতেন
ফুলবাড়ীয়ার ফিনিক্স রোড। পুলিশ হেডকোয়ার্টার। শীর্ষ কর্মকর্তারা উদ্বিগ্ন, ঘামছেন। বিশেষ টেলিফোনের পাশেই বসে আছেন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। ৫ই আগস্ট দুপুরের দিকের কথা। সকাল থেকে দুপুর। বিশেষ টেলিফোন কয়েকবার বেজেছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত ফোন নয়। বেলা যখন আড়াইটা তখন টেলিভিশনের পর্দায় নতুন খবর ভেসে উঠলো। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন।

তার হেলিকপ্টার বঙ্গভবন হয়ে আগরতলার পথে। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে রইলেন আইজিপি, অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল ইসলাম, মনিরুল ইসলাম, আতিকুল ইসলাম, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপি’র অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ ও প্রভাবশালী পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার।
তখন অফিসাররা বলাবলি করছিলেন, তিনি তো আমাদেরকে বলে যেতে পারতেন। অথচ আমরা তার শেষ নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম।
রাস্তায় তখন লাখ লাখ মানুষ। ভয়ে কাঁপছেন এই অফিসাররা। কোনদিকে যাবেন, কীভাবে যাবেন? কারণ চারদিকে মানুষ আর মানুষ। ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের মিছিল রূপ নিয়েছে বিজয় মিছিলে। মানুষের বাঁধভাঙা স্রোতে নগরের কোথাও নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবছে না পুলিশ। ইতিমধ্যে অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে। তাই আইজিপি সিদ্ধান্ত নিলেন হেলিকপ্টার এনে সদর দপ্তর ত্যাগ করবেন। হেলিকপ্টার এলো। উল্লিখিত অফিসারদের মধ্যে দু’জন ছাড়া বাকিরা হেলিকপ্টারে চড়ে তেজগাঁও বিমানবন্দরে চলে গেলেন। এর মধ্যে অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল ইসলাম রিকশায় করে বাড়ি গেলেন। আলোচিত গোয়েন্দা কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ দেয়াল টপকে আগেই হেডকোয়ার্টার ত্যাগ করেন।

বনিক বার্তা:

ডিজিটাল থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ ২৯ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের বেশির ভাগই ফলপ্রসূ হয়নি
ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। ওই প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি খাতকে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ও এর মাধ্যমে খাতগুলোর ডিজিটাল রূপান্তর নিশ্চিত করার কথা। এ স্লোগানকে সামনে রেখে ২০১০ সাল থেকে একের পর এক প্রকল্প নিয়েছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। এরপর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ স্লোগান পাল্টে ‘স্মার্ট বাংলাদেশের’ ধারণা সামনে আনেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ স্লোগানের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশের সব সেবা ও মাধ্যম ডিজিটালে রূপান্তর, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। এর আওতায় নেয়া হয় আরো নতুন নতুন প্রকল্প।

সব মিলিয়ে ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগ পর্যন্ত আইসিটি বিভাগের মাধ্যমে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। যদিও এসব উদ্যোগের বেশির ভাগই ফলপ্রসূ হয়নি। প্রকল্পগুলোয় মোট ব্যয়ের সিংহভাগই হয়েছে অবকাঠামো উন্নয়নে। কিন্তু এত বিপুল ব্যয়ের বিপরীতে উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করতে পারেনি প্রকল্পগুলো। আবার প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী গড়ে তুলতেও বেশকিছু প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কিন্তু সেখানেও প্রশিক্ষণার্থীদের পরে আইসিটি শিল্পের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায়নি।

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবকাঠামো উন্নয়ন বাবদ নিষ্ফল বিনিয়োগের বড় একটি উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের নেয়া প্রকল্পগুলোর কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। সারা দেশে হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের অধীনে গড়ে তোলা হচ্ছে হাই-টেক পার্ক, আইটি পার্ক, সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর সেন্টার, ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। হাই-টেক শিল্পের বিকাশে দেশব্যাপী এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও তা প্রত্যাশা অনুযায়ী বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারেনি। কয়েক বছর ধরে প্রযুক্তি খাতের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু হাই-টেক সিটিতে। এছাড়া সিলেট ও রাজশাহীতে নির্মিত হাই-টেক পার্কে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্বল্প পরিসরে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। এসব পার্কে খুব সামান্য পরিমাণে বিদেশী বিনিয়োগ এসেছে।

দেশ রুপান্তর:

একে প্রশাসন দুইয়ে পুলিশ
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকেই বিভিন্ন পেশাজীবীদের যারা বৈষম্যের অভিযোগ তুলে দাবিদাওয়া আদায়ে আন্দোলন করছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাবি পূরণ হচ্ছে প্রশাসনের কর্মকর্তা বা আমলাদের। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।

গত এক সপ্তাহে যুগ্ম সচিব ও উপসচিব পদে অন্তত ৩৪০ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ যে তারিখ থেকে এ কর্মকর্তাদের কনিষ্ঠ কর্মকর্তারা তাদের ছাড়িয়ে যান, সেই তারিখ থেকে তাদের পদোন্নতি কার্যকর হবে এবং তারা বকেয়া আর্থিক সুবিধা পাবেন।

এদিকে অবসরপ্রাপ্ত পাঁচজন অতিরিক্ত সচিবকে দুই বছরের জন্য সিনিয়র সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি শিগগির আরও প্রায় ১০০ জনকে অতিরিক্ত সচিব এবং সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়ারও কথা শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে এ সময়ে পদোন্নতি পেয়েছেন পুলিশের ১০৩ কর্মকর্তা। দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার বিপুলসংখ্যক কর্মকর্তার পদোন্নতির এ সুযোগে অনেক অযোগ্যও সুবিধা বাগিয়ে নিয়েছেন। এমনকি কারও কারও বিরুদ্ধে মামলা থাকারও অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি পদ না থাকার পরও পদোন্নতি দেওয়ার ফলে মাথাভারী হচ্ছে প্রশাসন। আবার পদোন্নতির ক্ষেত্রে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংখ্যা বেশি। অন্য ক্যাডারের কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, জ্যেষ্ঠতা ও মেধা অনুযায়ী অবশ্যই পদোন্নতি দেওয়া জরুরি। কিন্তু গত দেড় দশকে পুলিশ, জনপ্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কিংবা পদায়নের ক্ষেত্রে যোগ্যতার চেয়ে দলীয় বিবেচনা অগ্রাধিকার পাওয়ার ফলে বৈষম্যের পাহাড় তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এতে এক ধরনের বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির পাশাপাশি পুলিশ ও জনপ্রশাসনে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।

এমন অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে পরিবর্তন কিংবা সংস্কার করা হলে এ নিয়ে সংকট তৈরি হবে কি না, সেটি নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমান সময়ে প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানোই বড় চ্যালেঞ্জ। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত বঞ্চিতরাই যাতে সুবিধা পান, সেই বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ারও দাবি উঠেছে।

প্রথম আলো:

দুর্বল স্বাস্থ্য খাতে অস্থিরতা

দলীয় রাজনীতি স্বাস্থ্য খাতকে দুর্বল করেছে। সেবার মান উন্নত করার চেয়ে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছেন ক্ষমতাসীনেরা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরপরই সরকারি হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার স্বাস্থ্য খাতে রাজনৈতিক ভারসাম্য তৈরি করবে, নাকি যোগ্য লোক দিয়ে স্বাস্থ্য খাত চালাবে—এ প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আগপর্যন্ত স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রগুলো প্রবল শক্তি দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। নিয়োগ-বদলিতে প্রভাব রাখার পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে ব্যবসাও করেছেন স্বাচিপের নেতারা।

শুধু তা–ই নয়, বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সদস্যদের নানাভাবে বঞ্চিত করেছে স্বাচিপ। সব ধরনের যোগ্যতা থাকার পরও বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের যথাসময়ে পদোন্নতি হয়নি। তাঁদের কোনো প্রকল্পপ্রধান করা হয়নি। স্বাচিপ বা ড্যাবের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, অর্থাৎ স্বতন্ত্র চিকিৎসকেরাও বঞ্চিত হয়েছেন। নজির আছে, যোগ্যতার মূল্যায়ন না হওয়ায় অপমানে, হতাশায় অনেকে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।

ঠিক বিপরীত চিত্র ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। তখন ক্ষমতায় ছিল বিএনপি। স্বাস্থ্য খাতের সব ক্ষেত্রে ছিল ড্যাবের একচ্ছত্র আধিপত্য। ড্যাবের নেতা-কর্মীদের দাপটে তখন স্বাচিপ ছিল কোণঠাসা। স্বতন্ত্রদের একই অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেই আমলেও। স্বাচিপ ও ড্যাবের দাপটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা খাত ও চিকিৎসা শিক্ষাব্যবস্থা। এদের গোষ্ঠীস্বার্থ স্বাস্থ্য খাতের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
জনস্বাস্থ্যবিদ আবু জামিল ফয়সাল প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় রাজনীতি সেবা খাতকেদলবাজি

কতটা দুর্বল করতে পারে, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ স্বাস্থ্য খাত। অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় স্বাস্থ্য খাতে দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়টি থাকা উচিত। স্বাচিপ ও ড্যাবকে সক্রিয় রেখে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার করা সম্ভব হবে না।ওপিতে বড়-মেজ-ছোট ভাই

স্বাস্থ্য খাতের সিংহভাগ কাজ বাস্তবায়িত হয় মূলত স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচির মাধ্যমে। কর্মসূচিটি পাঁচ বছর মেয়াদি। চতুর্থ কর্মসূচি শেষ হয়েছে বছর দুয়েক আগে। পঞ্চম কর্মসূচি এ বছরের জুলাই মাসে শুরু হওয়ার কথা ছিল। এতে মূল টাকা দেয় সরকার, একটি অংশ দেয় উন্নয়ন–সহযোগীরা।

স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচি চলে ৩১টি অপারেশন প্ল্যান (ওপি) বা বিষয়ভিত্তিক পরিকল্পনার মাধ্যমে। যেমন: পুষ্টি, সংক্রামক রোগ, অসংক্রামক রোগ, প্রাথমিক স্বাস্থ্য, বিকল্প চিকিৎসা, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য—এ ধরনের বিষয়ের জন্য পৃথক পৃথক ওপি। ওপিতে পাঁচ বছরের জন্য অর্থ বরাদ্দ থাকে।

প্রতিটি ওপিতে লোভনীয় তিনটি পদ আছে: লাইন ডিরেক্টর, প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার। লাইন ডিরেক্টর থাকেন একজন, প্রোগ্রাম ম্যানেজার থাকেন এক বা দুজন এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার থাকেন ২ থেকে ১০–১২ জন পর্যন্ত। বর্তমানে প্রায় সব পদ দখল করে আছেন স্বাচিপের সদস্যরা। এ ক্ষেত্রে মেধা বা যোগ্যতা দেখা হয়নি। তাঁরা ছাত্রজীবনে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতি করতেন। সাধারণত সাবেক ছাত্রলীগের বড় ভাই লাইন ডিরেক্টর, বয়সে কিছু ছোট প্রোগ্রাম অফিসার এবং ছোট ভাই ডেপুটি প্রোগ্রাম অফিসার হিসেবে কাজ করেন। অভিযোগ আছে, ভাইয়েরা এক জোট হয়ে স্বাস্থ্য খাতে কেনাকাটা, বিদেশ সফর ও প্রশিক্ষণে দুর্নীতি করেন।ব্যক্তি বা গোষ্ঠীস্বার্থ

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রোপচার করেছিলেন অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম। ২০২০ সালে করোনা মহামারি শুরুর কিছুদিন পর দুর্নীতির অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন। প্রশাসন পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও তখন মহাপরিচালকের আসনে বসানো হয় অধ্যাপক খুরশীদ আলমকে। তাঁর সরকারি চাকরির মেয়াদ শেষ হয় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে তাঁর চাকরির মেয়াদ ২০২৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

১১টি প্রতিষ্ঠান ও মেডিকেল কলেজের শীর্ষ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ আছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন অধ্যাপকের চাকরির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে একই প্রক্রিয়ায়। তবে বিএনপিপন্থী কোনো চিকিৎসক এই সুবিধা পাননি

কালের কন্ঠ:

আন্দোলনের মুখে পরীক্ষা বাতিল
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়েছে। সিলেট বোর্ড, মাদরাসা বোর্ড ও কারিগরি বোর্ড বাদে অন্য আটটি শিক্ষা বোর্ডে কোনো শিক্ষার্থীর সাতটি, আবার কোনো শিক্ষার্থীর আটটি পত্রের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছিল। স্থগিত থাকা বিষয়গুলোতে এসএসসির সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ম্যাপিং করে নম্বর দেওয়া হতে পারে বলে আন্ত শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।

আন্দোলনের মুখে পরীক্ষা বাতিলআন্ত শিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গতকাল সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘স্থগিত থাকা এইচএসসি ও সমমানের বাকি বিষয়গুলো বাতিল করা হয়েছে।

অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের আর বাকি বিষয়গুলোর পরীক্ষা দিতে হবে না। তবে এখন বাকি বিষয়গুলো কিভাবে মূল্যায়ন করব সে ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
অধ্যাপক তপন কুমার সরকার আরো বলেন, ‘করোনার সময়ও আমরা এইচএসসির সব বিষয়ের পরীক্ষা নিতে পারিনি। তখন এসএসসির বিষয় ম্যাপিং করে মূল্যায়ন করা হয়েছে।

এবারও সে পদ্ধতি অনুসরণ করার সুযোগ রয়েছে। তবে আটটি বোর্ডের শিক্ষার্থীরা কিন্তু আবশ্যিক বিষয়ের পরীক্ষাগুলো দিয়েছে। আর ঐচ্ছিক বিষয়ের দুই-তিনটা পরীক্ষা দিয়েছে। ফলে এসএসসির ফলাফল ও এইচএসসির নেওয়া পরীক্ষাগুলো মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করলে তেমন সমস্যায় পড়তে হবে না।

নয়াদিগন্ত:

টানাবর্ষণে তলিয়ে গেছে ৭ জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল
– নোয়াখালী ও নাঙ্গলকোটে ৬০ লাখ লোক পানিবন্দী
– চট্টগ্রামের অলিগলি ও বাসাবাড়িতে পানি
– কুশিয়ারা, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ওপরে

লঘুচাপ সুস্পষ্ট হওয়ায় ভারীবর্ষণ তীব্র হয়েছে। গত কয়েক দিনের টানা ও প্রবল বৃষ্টিপাতের সাথে উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি ও মৌলভীবাজার নিম্নাঞ্চল, রাস্তা, অলিগলি, বীজতলা তলিয়ে গেছে। বরগুনা ঝালকাঠির নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় আমন ধানের চারা নিয়ে কৃষকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ৪০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভেসে গেছে পুকুর ও চাষকরা প্রজেক্টের মাছ। এ দিকে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলাসহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। কুশিয়ারা, ধলাই ও জুড়ী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে মানুষের চরম ভোগান্তি শুরু হয়েছে। মানুষ অভুক্ত থাকছে রান্না করতে না পেরে। আবহাওয়া অফিস বলেছে, ভারীবর্ষণ আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে ভারী বর্ষণের সাথে জোয়ারের পানি একাকার হয়ে আবারো ডুবল বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস গত সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। একই সাথে বুধবারও বৃষ্টি অব্যাহত থাকার কথা জানিয়েছে। গত দুই দিন ধরে নগরীর সড়ক-অলি-গলি পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ায় মানুষের বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দুর্ভোগের অন্ত নেই।

গত রোববার রাত থেকেই লঘুচাপের প্রভাবে চট্টগ্রামে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। যা অব্যাহত থাকে এবং সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরীর বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে যায়। গতকাল মঙ্গলবার সকালেও ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় সকাল থেকে থেমে থেমে ভারী বর্ষণের পাশাপাশি একই সময়ে জোয়ার থাকায় নগরীর বিস্তীর্ণ সড়ক অলিগলি, বাজার, বিভিন্ন বাসাবাড়ির নিচতলা এবং বিভিন্ন মার্কেট ও দোকান পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এ সময় কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর সমান পানি মাড়িয়েই অফিসগামী মানুষকে বিশেষ করে গার্মেন্ট শ্রমিকদের পথ চলতে হয়েছে চরম ভোগান্তি সঙ্গী করে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি জানান, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা তৈরি অব্যাহত রয়েছে। এর কারণেই মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে চট্টগ্রামে। আরো দুই দিন এমন বৃষ্টি অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।

এ দিকে ভারী বৃষ্টিতে নগরীর কাপাসগোলা, বাদুরতলা, পাঁচলাইশ, কাতালগঞ্জ, ইপিজেড, সল্টগোলা, আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ এলাকা, জিইসি, পাহাড়তলী, ২ নম্বর গেট, মুরাদপুর, বহদ্দারহাট, চকবাজার, বাকলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল এলাকা, ডিসি রোড, সিরাজউদ্দৌলা সড়কসহ বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে সড়ক-অলি-গলি পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এ সময় নগরীর চকবাজার, বহদ্দারহাটসহ বিভিন্ন কাঁচাবাজার এবং দোকানপাট পানি নিমজ্জিত হয়ে পড়ে।

যুগান্তর:

পুলিশ পদোন্নতিতে দুর্নীতি
১৯৯৭-তে নিয়োগ হলেও দেখানো হয় ১৯৯১ সাল
পদত্যাগী আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশের পদোন্নতিতে নজিরবিহীন দুর্নীতি হয়েছে। ১৭১ কর্মকর্তা ১৯৯৭ সালে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু ছয় বছর আগে অর্থাৎ ১৯৯১ সালে তাদের চাকরিতে যোগদান দেখিয়ে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ ৭৫০ কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে (সুপারিসড) কনিষ্ঠ ১৭১ জনকে পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পরে তাদের অনেকেই পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপারও (এএসপি) হয়েছেন।

রাজনৈতিক বিবেচনায় দেওয়া এই পদোন্নতিতে সব মিলে বঞ্চিত হয়েছেন ২২৫০ কর্মকর্তা। এর নেপথ্যে ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৎকালীন সংস্থাপন ও প্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম।
বিধিবহির্ভূতভাবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত ওই ১৭১ কর্মকর্তার জ্যেষ্ঠতা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন বঞ্চিতরা। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও আইজিপি ময়নুল ইসলামের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সোমবার তারা উপদেষ্টা ও আইজিপির সঙ্গে দেখা করে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ১৮৬১ সালের পুলিশ আইন এবং বাংলাদেশ পুলিশ প্রবিধান (পিআরবি) অনুসারে পুলিশ বিভাগে পদোন্নতিসহ সব কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৭১ জনের পদোন্নতির নির্বাহী আদেশ পুলিশ বিভাগের অভ্যন্তরীণ নীতিমালার সম্পূর্ণ পরিপন্থি। এটি অবাস্তব ও বিভাগীয় নিয়মনীতির পরিপন্থি। দুর্নীতির মাধ্যমে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাই আদেশটি বাতিলযোগ্য। এ আদেশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, এই মুহূর্তে আমি একটু বাসায় বিশ্রামে আছি। বিষয়টি নিয়ে পরে অফিস টাইমে কথা বলা যাবে।

এ প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, যে প্রক্রিয়ায় ১৭১ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে সেটা ক্ষমতার অপব্যবহার এবং দুর্নীতি। এক্ষেত্রে দলীয় রাজনীতির ওপর ভিত্তি করে যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া হয়েছে প্রকারান্তরে এটা যে দুর্নীতি তা অস্বীকার করার উপায় নেই। যেসব অনিয়মের কারণে ১৯৯১ সালে তাদের নিয়োগ বাতিল করা হয়, সেগুলো সুষ্ঠু তদন্ত হয়েছে কি না, তা একটি বড় বিষয়। যদি না হয়ে থাকে তবে সেটা আরও একদফা স্বজনপ্রীতি। তিনি বলেন, পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

সমকাল:

বেনামে শেয়ার ব্যবসা ও কারসাজিতে শিবলী
শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদে বসে বেআইনিভাবে শেয়ার ব্যবসা করেছেন সদ্য সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। তিনি শেয়ার ব্যবসা করেছেন বেনামে। বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র তিন মাসের মধ্যে শেয়ার লেনদেনের বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন তিনি। শেয়ার ব্যবসা করতে গিয়ে শিবলী রুবাইয়াত শেয়ার কারসাজির অন্যতম হোতা আবুল খায়ের হিরোর কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা নিয়েছেন। হিরোর তথাকথিত ‘হট আইটেম’, অর্থাৎ কারসাজির মাধ্যমে অতি অল্প সময়ে অস্বাভাবিক দর বৃদ্ধি পাওয়া বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারই শিবলীর বেনামি অ্যাকাউন্টে ক্রমাগত কেনাবেচা হয়েছে।

এখানেই শেষ নয়। নিয়ন্ত্রক সংস্থায় ক্ষমতার দাপটে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি এলআর গ্লোবালকে একের পর এক বিতর্কিত সুবিধা দিয়েছেন সম্প্রতি পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী। এলআর গ্লোবালের সিইও রিয়াজ ইসলামের সঙ্গে দুবাইয়ে সিগমা ম্যানেজমেন্ট নামে যৌথ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। ওই কোম্পানির পার্টনার শিবলীর বড় ছেলে যুহায়ের ইসলাম।
সমকালের দীর্ঘ অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০ সালের মে মাসে বিএসইসির চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার সময়ই অধ্যাপক শিবলী ঋণখেলাপি ছিলেন। অর্থঋণ আদালতে মামলায় ২০০৭ সাল থেকেই টানা প্রায় ১৬ বছর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে ঘুরছিলেন তিনি। চেয়ারম্যান পদে চার বছর মেয়াদে দায়িত্ব পালনের প্রথম দুই বছর চার মাস পর্যন্ত তিনি ঋণখেলাপি ছিলেন এবং তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল ছিল।

সমকালের অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী জাবেদ এ মতিনের হংকংয়ের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার হাতিয়ে নেওয়া, প্রতারণার অর্থ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পাচার করে আনা এবং এ ক্ষেত্রে অধ্যাপক শিবলীর প্রত্যক্ষ সহায়তার তথ্য পাওয়া গেছে। পাচার করা অর্থ দেশে আনার সহযোগিতার অংশ হিসেবে শিবলী এর ভাগ নিয়েছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টে প্রায় ১২ কোটি টাকা নেওয়ার প্রমাণ পায় সমকাল। অর্থ পাচারকারী জাবেদ এ মতিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার পর প্রথম চার মাস শিবলী রুবাইয়াতের ধানমন্ডির বাসায় ছিলেন।
আইপিও অনুমোদন, মন্দ কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্ত এবং স্বার্থান্বেষী মহলকে নানা সুবিধা দিয়ে বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন অধ্যাপক শিবলী। বিএসইসির তদন্তে কারও বিরুদ্ধে শেয়ার কারসাজির প্রমাণ বা বড় ধরনের আইন লঙ্ঘনের প্রমাণ পেলে, অনেক ক্ষেত্রে তা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি আটকে দিতেন। দোষীদের নাম বাদ দিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন প্রদানে চাপ দেওয়া বা প্রতিবেদনে নাম আসার পর নামমাত্র জরিমানা দিয়ে দায়মুক্তি দেওয়ার অনেক অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, আলোচিত সোনালী পেপার কোম্পানিটিকে অধুনালুপ্ত ওটিসি বাজার থেকে মূল শেয়ারবাজারে পুনঃতালিকাভুক্তির সুযোগ করে দেওয়ার বিনিময়ে ঘুষ হিসেবে অধ্যাপক শিবলী ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকার শেয়ার নেন নিজের বেনামি বিও অ্যাকাউন্টে।