ঢাকা ০১:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

লাশ দাফনেও ট্যাক্স নিয়েছেন তাপস

ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের জন্য দুই সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কবরস্থান আছে মাত্র ৯টি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তিনটি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আছে ছয়টি। এসব কবরস্থানে নতুন করে আর জায়গা বাড়ানোর সুযোগ নেই। মানুষ অনুযায়ী কবরের সংকট এই শহরে। তবুও দাফনে কর বসিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। মূলত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্দেশেই এই করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল দক্ষিণ সিটি এলাকায় বসবাসকারীদের ওপর।

একসময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন কবরস্থানগুলোতে বিনামূল্যে কবর দেওয়া যেত। পরে মেয়র তাপস প্রতি কবরের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করে দেন। তারপর থেকে প্রতি কবরের জন্য আলাদা ফি পরিশোধ করতে হয় মৃত ব্যক্তির স্বজনদের। ডিএসসিসির নীতিমালার আলোকে কবর সংরক্ষণ করার অনুমতি নিতেও ফি প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া প্রতি কবরের বাঁশ, চাটাই ও কবর খননের ফি নিজ খরচে বহন করতে হবে।

ডিএসসিসির নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতি কবরের সাধারণ রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০০ টাকা এবং সংরক্ষিত কবরে পুনঃকবর ফি ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে কবরস্থান, শ্মশানঘাট থেকে তারা ১১ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এর আগের অর্থবছরে এটি ছিল ৯ কোটি টাকা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন তিনটি কবরস্থান রয়েছে। সেগুলো হলো– আজিমপুর, জুরাইন (ধলপুর ও মুরাদপুর) ও খিলগাঁও কবরস্থান। আজিমপুর কবরস্থান ৩৫ একর জায়গার ওপর। তবে নতুন করে পাশে আড়াই একর জায়গা নিয়ে আয়তন বাড়ানো হয়েছে। এখানে কবরের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার। সংরক্ষিত কবর দুই হাজার ৬০০টি। নতুন অংশে সংরক্ষিত কবর দুই হাজার ৫০টি।

জুরাইন কবরস্থান (ধলপুর ও মুরাদপুর) ১৭ দশমিক ২৬ একর জায়গার ওপর। এখানে কবরের ধারণক্ষমতা ১২ হাজার। সংরক্ষিত কবর দুই হাজার ৭০০টি। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনটি লাইনে প্রায় ২০০টি কবর সংরক্ষিত আছে। মুরাদপুর অংশে বর্তমানে ৪৮ শতাংশ জায়গা রয়েছে, কবর রয়েছে ৪০০টি। এখানে সংরক্ষিত কবরের জায়গা নেই। ধলপুর অংশে ৪৯ শতাংশ জায়গায় কবর রয়েছে ৫০০টি। এখানেও সংরক্ষিত কবরের কোনো জায়গা নেই।

অন্যদিকে, খিলগাঁও কবরস্থানটি পাঁচ একর জায়গার ওপর। এখানে কবরের ধারণক্ষমতা প্রায় চার হাজার। এখানেও সংরক্ষিত কবরের স্থান নেই।

জানা গেছে, ঢাকার কবরস্থানগুলোতে প্রতিটি কবরের জন্য বাঁশ, চাটাই ও খননের ফি স্বজনদের বহন করতে হয়। এ ছাড়া প্রতি কবরের সাধারণ রেজিস্ট্রেশন ফি ১ হাজার টাকা এবং সংরক্ষিত কবরে পুনঃকবর ফি ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। ইজারাদারকে পরিশোধের জন্য ফি চার্ট করে দেওয়া থাকলেও নতুন কবর দিতে নির্ধারিত খরচের চেয়ে ছয় থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হয় মৃত ব্যক্তির স্বজনদের।

বিষয়টির সমালোচনা করে পুরান ঢাকার এক বাসিন্দা বলেন, কিছুদিন আগে আমার এক ছোট ভাইয়ের কবর দিলাম আজিমপুর কবরস্থানে। সেখানে সিটি কর্পোরেশনের রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হলো ১ হাজার টাকা। আরও নানা খরচসহ প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হলো কবর দিতে। আগে আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেওয়া ফ্রি ছিল। সাঈদ খোকন যখন দক্ষিণ সিটির মেয়র ছিল তখন কবরে দাফন ফ্রি করে দিয়েছিল। তারপর মেয়র তাপস কবর দেওয়াতেও কর বসিয়ে দেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকা এক সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একসময় ফ্রি ছিল কবরে দাফন করানো। কিন্তু কয়েক বছর হলো মেয়র তাপস কবরে দাফনের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তারপর থেকে প্রতি কবরের জন্য ১ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করতে হয় মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের।

তিনি আরও বলেন, একটি সাধারণ কবর ১৮ থেকে ২০ মাস পর্যন্ত থাকে। এরপর সেখানে পুনরায় কবর দেওয়া হয়। আসলে কবরের জায়গার সংকট থাকায় এমনটি করা হয়। এসময়ের জন্য কবরের রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করা আছে এক হাজার টাকা।

বিষয়টি নিয়ে সবসময় সমালোচনা করে আসছিলেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, আমি এই শহরে লাশ দাফন ফ্রি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়র তাপসের সময় ঢাকা শহরে দাফন-কাফন করতে ১২/১৪ হাজার টাকা লাগে। আজ আজিমপুর গোরস্থানে গিয়ে দেখেন লাশ নামানোর আগে টিকিট লাগে। এই শহরের মোড়ে মোড়ে মানুষ এখন স্লিপ দিয়ে চাঁদা তোলে। ঢাকার মরা লাশের ওপর পর্যন্ত ট্যাক্স বসিয়ে দিয়েছেন তিনি।

চট্টগ্রামে চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় ব্যবসায়ী খুন

লাশ দাফনেও ট্যাক্স নিয়েছেন তাপস

আপডেট সময় ১২:৩০:২৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

ঢাকায় প্রায় দুই কোটি মানুষের জন্য দুই সিটি কর্পোরেশনের অধীনে কবরস্থান আছে মাত্র ৯টি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় তিনটি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আছে ছয়টি। এসব কবরস্থানে নতুন করে আর জায়গা বাড়ানোর সুযোগ নেই। মানুষ অনুযায়ী কবরের সংকট এই শহরে। তবুও দাফনে কর বসিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। মূলত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্দেশেই এই করের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল দক্ষিণ সিটি এলাকায় বসবাসকারীদের ওপর।

একসময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন কবরস্থানগুলোতে বিনামূল্যে কবর দেওয়া যেত। পরে মেয়র তাপস প্রতি কবরের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করে দেন। তারপর থেকে প্রতি কবরের জন্য আলাদা ফি পরিশোধ করতে হয় মৃত ব্যক্তির স্বজনদের। ডিএসসিসির নীতিমালার আলোকে কবর সংরক্ষণ করার অনুমতি নিতেও ফি প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া প্রতি কবরের বাঁশ, চাটাই ও কবর খননের ফি নিজ খরচে বহন করতে হবে।

ডিএসসিসির নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতি কবরের সাধারণ রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০০ টাকা এবং সংরক্ষিত কবরে পুনঃকবর ফি ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে কবরস্থান, শ্মশানঘাট থেকে তারা ১১ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন। এর আগের অর্থবছরে এটি ছিল ৯ কোটি টাকা।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন তিনটি কবরস্থান রয়েছে। সেগুলো হলো– আজিমপুর, জুরাইন (ধলপুর ও মুরাদপুর) ও খিলগাঁও কবরস্থান। আজিমপুর কবরস্থান ৩৫ একর জায়গার ওপর। তবে নতুন করে পাশে আড়াই একর জায়গা নিয়ে আয়তন বাড়ানো হয়েছে। এখানে কবরের ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার। সংরক্ষিত কবর দুই হাজার ৬০০টি। নতুন অংশে সংরক্ষিত কবর দুই হাজার ৫০টি।

জুরাইন কবরস্থান (ধলপুর ও মুরাদপুর) ১৭ দশমিক ২৬ একর জায়গার ওপর। এখানে কবরের ধারণক্ষমতা ১২ হাজার। সংরক্ষিত কবর দুই হাজার ৭০০টি। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনটি লাইনে প্রায় ২০০টি কবর সংরক্ষিত আছে। মুরাদপুর অংশে বর্তমানে ৪৮ শতাংশ জায়গা রয়েছে, কবর রয়েছে ৪০০টি। এখানে সংরক্ষিত কবরের জায়গা নেই। ধলপুর অংশে ৪৯ শতাংশ জায়গায় কবর রয়েছে ৫০০টি। এখানেও সংরক্ষিত কবরের কোনো জায়গা নেই।

অন্যদিকে, খিলগাঁও কবরস্থানটি পাঁচ একর জায়গার ওপর। এখানে কবরের ধারণক্ষমতা প্রায় চার হাজার। এখানেও সংরক্ষিত কবরের স্থান নেই।

জানা গেছে, ঢাকার কবরস্থানগুলোতে প্রতিটি কবরের জন্য বাঁশ, চাটাই ও খননের ফি স্বজনদের বহন করতে হয়। এ ছাড়া প্রতি কবরের সাধারণ রেজিস্ট্রেশন ফি ১ হাজার টাকা এবং সংরক্ষিত কবরে পুনঃকবর ফি ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। ইজারাদারকে পরিশোধের জন্য ফি চার্ট করে দেওয়া থাকলেও নতুন কবর দিতে নির্ধারিত খরচের চেয়ে ছয় থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হয় মৃত ব্যক্তির স্বজনদের।

বিষয়টির সমালোচনা করে পুরান ঢাকার এক বাসিন্দা বলেন, কিছুদিন আগে আমার এক ছোট ভাইয়ের কবর দিলাম আজিমপুর কবরস্থানে। সেখানে সিটি কর্পোরেশনের রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হলো ১ হাজার টাকা। আরও নানা খরচসহ প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হলো কবর দিতে। আগে আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেওয়া ফ্রি ছিল। সাঈদ খোকন যখন দক্ষিণ সিটির মেয়র ছিল তখন কবরে দাফন ফ্রি করে দিয়েছিল। তারপর মেয়র তাপস কবর দেওয়াতেও কর বসিয়ে দেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্বে থাকা এক সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, একসময় ফ্রি ছিল কবরে দাফন করানো। কিন্তু কয়েক বছর হলো মেয়র তাপস কবরে দাফনের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তারপর থেকে প্রতি কবরের জন্য ১ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করতে হয় মৃত ব্যক্তিদের স্বজনদের।

তিনি আরও বলেন, একটি সাধারণ কবর ১৮ থেকে ২০ মাস পর্যন্ত থাকে। এরপর সেখানে পুনরায় কবর দেওয়া হয়। আসলে কবরের জায়গার সংকট থাকায় এমনটি করা হয়। এসময়ের জন্য কবরের রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করা আছে এক হাজার টাকা।

বিষয়টি নিয়ে সবসময় সমালোচনা করে আসছিলেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, আমি এই শহরে লাশ দাফন ফ্রি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়র তাপসের সময় ঢাকা শহরে দাফন-কাফন করতে ১২/১৪ হাজার টাকা লাগে। আজ আজিমপুর গোরস্থানে গিয়ে দেখেন লাশ নামানোর আগে টিকিট লাগে। এই শহরের মোড়ে মোড়ে মানুষ এখন স্লিপ দিয়ে চাঁদা তোলে। ঢাকার মরা লাশের ওপর পর্যন্ত ট্যাক্স বসিয়ে দিয়েছেন তিনি।