ঢাকা ০৬:৪৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ডিআইজির স্ত্রী ৬ হাজার কোটির মালিক

রূপপুর প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন শেখ হাসিনা

আজকের প্রত্রিকা গুলোর প্রধান প্রধান সংবাদ

নয়াদিগন্ত:

রূপপুর প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন শেখ হাসিনা
রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করে পাচার করেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। বাংলাদেশী অর্থে যার পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসেবে)। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। প্রতিবেদনে তারা জানায়, মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে অর্থ-আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাট্রম। আর এর মধ্যস্থতা করেন তার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। সম্প্রতি এ বিষয়ে নিজস্ব অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ডিফেন্স করপোরেশন নামে এই পোর্টাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ, শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য। ২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের সময় সঙ্গী হয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের দাবি, সে সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতাও করেন তিনি।

গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। যাতে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা-রোসাট্রম।
২০০৯ সালে ‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি চালু করেন টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা শেখ রেহানা ও চাচা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। যুক্তরাষ্ট্রেও জুমানা ইনভেস্টমেন্ট নামে তাদের একটি কোম্পানি রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের দাবি, এ কোম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থপাচার করতেন শেখ হাসিনা। তাদের এ কোম্পানিটি ডেসটিনি গ্রুপ নামে একটি চিটিং ফান্ড কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে।
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদন আরো বলছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র ক্রমেই দুর্নীতিতে জর্জরিত স্বৈরাচারের কবলে পড়ে জিম্মি হয়ে যায়। ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জার্মান থিংকট্যাংক বেরটেলসম্যান স্টিফটুং বাংলাদেশকে ‘স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর’ তালিকায় তালিকাভুক্ত করে। স্বৈরাচারী শাসকদের কঠোর হস্তক্ষেপের কারণে বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিছক হাতের পুতুল হয়ে যায়।

দৈনিক সংগ্রাম:

শেখ হাসিনা পুরো দেশকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন: ড. ইউনূস
সংগ্রাম অনলাইন: শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন পুরো দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশে নিযুক্ত বি‌ভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইক‌মিশনারসহ জা‌তিসংঘ এবং বি‌ভিন্ন সংস্থার প্রধানদের ব্রিফিং করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন পুরো দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে।’

বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে কৃতজ্ঞ, তারা আমাদের সহায়তা করেছে। বর্তমানে একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি। দুই সপ্তাহ হলো বাংলাদেশে দ্বিতীয় বিপ্লব সাধিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।

ছাত্রদের অনুরোধে তিনি প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনে যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।’

কালের কন্ঠ:

ডিআইজির স্ত্রী ৬ হাজার কোটির মালিক
পূর্বাচলের পাশে বিস্তীর্ণ জমিজুড়ে গড়ে উঠছে ‘আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটি’। এই প্রকল্পের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর সম্পৃক্ততা নেই। স্থানীয়দের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে, ভয় দেখিয়ে কিংবা রিমান্ডে নিয়ে জমি লিখে নেওয়া হয়েছে। আবার কারো জমি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে নামমাত্র মূল্যে। এই অপকর্মের মূল হোতা অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মো. মোজাম্মেল হক। রূপগঞ্জ ছাড়াও কুমিল্লার মেঘনা ও সুনামগঞ্জে অন্তত তিন হাজার ৫৩০ বিঘা জমির মালিক। সম্পদের প্রায় সবই কৌশলে মালিকানা দিয়েছেন স্ত্রীকে। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে মিলেছে তাঁদের দুর্নীতির আদ্যোপান্ত
পুলিশের সহকারী কমিশনার পদে ১৭তম বিসিএসে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ১৯৯৭ সালে চাকরিজীবন শুরু করেন গাজী মো. মোজাম্মেল হক। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে কর্মরত। পাশাপাশি নিযুক্ত রয়েছেন একটি আবাসন প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে। ‘আনন্দ পুলিশ পরিবার বহুমুখী সমবায় সমিতির’ নাম প্রচার করে গড়ে তোলা আবাসন প্রকল্পটির বর্তমান বিক্রয়যোগ্য সম্পদের পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।

প্রথম আলো:

আহ্‌নাফের পরীক্ষা দিতে আসা হয়নি, শূন্য আসনে ফুল
রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির স্থগিত পরীক্ষা গতকাল রোববার আবার শুরু হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা এসেছে। শুধু একটি আসন ফাঁকা। সেখানে রাখা একটি ফুলের তোড়া।

আসনটি শাফিক উদ্দিন আহ্‌ম্মেদ আহ্‌নাফের (১৭)। সে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৪ আগস্ট নিহত হয়েছে। মিরপুর-১০ নম্বরে সে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলি তার বুকের ডান দিক দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

আহ্‌নাফ একাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও পরে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সহিংসতায় অন্তত ৬২৬ জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৬৮ জন শিশু ও কিশোর। আহ্‌নাফ তাদেরই একজন।

কলেজের পরীক্ষা হলে শূন্য আসনটিতে এক তোড়া ফুল রাখার মধ্য দিয়ে আহ্‌নাফের শিক্ষক ও সহপাঠীরা তাকে স্মরণ করলেন। তোড়াটির পাশে সাদা কাগজে লেখা ছিল আহ্‌নাফের নাম।

শিক্ষকেরা জানান, গত ২ জুলাই কলেজে একাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়। তিনটি পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে বিক্ষোভ-সংঘাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। স্থগিত পরীক্ষা গতকাল নেওয়া শুরু হয়েছে।

বিএএফ শাহীন কলেজের উপাধ্যক্ষ শাকিলা নার্গিস প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের মনে হয়েছে, আহ্‌নাফের স্মরণে কিছু করা দরকার। তার প্রতি ভালোবাসা থেকে শূন্য আসনটিতে কলেজের পক্ষ থেকে ফুল রাখা হয়েছে। তিনি জানান, গত সপ্তাহে কলেজের প্রাত্যহিক সমাবেশে (অ্যাসেম্বলি) আহ্‌নাফের কথা স্মরণ করে দোয়া পাঠ করা হয়। কলেজের ফটকেও তার নামে ব্যানার ঝোলানো হয়েছে।

শাকিলা নার্গিস আরও বলেন, নিহত আহ্‌নাফসহ এই কলেজের যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিয়ে

যুগান্তর:

প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন করাই সরকারের লক্ষ্য
শেখ হাসিনার নৃশংস স্বৈরশাসন দেশের সব প্রতিষ্ঠান প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে * বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী এবং গণমাধ্যমে বড় সংস্কার জরুরিঅন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই দেশে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। কাজগুলো করে যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেওয়া এই সরকারের লক্ষ্য। সংস্কারের মধ্যে আছে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও গণমাধ্যম। তবে এ মুহূর্তে সরকারের অগ্রাধিকার খাত হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখা এবং অর্থনীতি। রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ব্রিফিং শেষে প্রধান উপদেষ্টার তথ্যসচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন। এ সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম বিদেশিদের কাছে তুলে ধরেন তিনি। এছাড়াও আগামী দিনে দেশ পরিচালনায় বিদেশিদের পাশে থাকার আহ্বান জানান। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই ছিল কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং।

শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতি এবং চরম অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশের শিক্ষার্থীদের এত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়নি। দুনিয়ার কোথাও নাগরিকরা এতটা মানবাধিকারবঞ্চিত হননি।’ তিনি বলেন, ‘এখন অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোই এই সরকারের অগ্রাধিকার। বিগত সরকারের কারণে দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। এটা ঠিক করতে কিছুটা সময় লাগবে।’ তিনি বলেন, ‘আশা করি, নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে সবাই পাশে থাকবেন।’ প্রফেসর ড. ইউনূস বলেন, ‘বিগত নির্বাচনগুলোয় ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে শেখ হাসিনা সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। অনিয়ম আর দুর্নীতি সর্বত্র। সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে।’ যারা এ আন্দোলনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছাত্রদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানান।

কালবেলা:

দেশে-বিদেশে কী নেই হারুনের
টাকা পাচারের পথ সহজ করতে নিজেই চালু করেন মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও আছে তার। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি দখল ও দেখাশোনার জন্য আছে তিন সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি। নামে-বেনামে অন্তত তিনটি রিসোর্টের মালিকানা আছে তার। রয়েছে একাধিক আবাসিক হোটেল। আরও অন্তত ১০টি কোম্পানির মালিক তিনি। শুধু ঢাকায়ই আলিশান বাড়ি করেছেন দুই ডজনেরও বেশি। এর বাইরে আছে অগণিত প্লট ও ফ্ল্যাট। কথিত মামা জাহাঙ্গীর আলমের নামে গড়েছেন এসব সম্পদ। দখল করা সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা দেশের বাইরে পাচার ও বিদেশে গড়ে তোলা সম্পদ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব আলাদা কমিটির। অন্তত ছয়টি দেশে ব্যবসা গড়েছেন অঢেল টাকার। বহুল আলোচিত এই কর্মকর্তার নাম হারুন অর রশীদ। বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা সর্বশেষ ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি)। সরকারি স্কেল অনুযায়ী তৃতীয় গ্রেডের চাকরিজীবী হিসেবে সর্বসাকল্যে বেতন ৮০ হাজার টাকারও কম। অথচ সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন হারুন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চাকরি জীবনের শুরু থেকেই হারুন ছিলেন বেপরোয়া। কখনোই চাকরি

বিধিমালার তোয়াক্কা করেননি। যখন যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই নানান অনিয়মে জড়িয়েছেন। প্রতিটি ধাপে প্রতারণা ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়ালেও তাকে কখনো শাস্তি পেতে হয়নি। বরং পদায়ন করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব ইউনিটে। ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, জিম্মি করে অর্থ আদায়, মারধর, জমি দখল, বাড়ি দখল, প্লট দখল, ফ্ল্যাট দখল, গুম, খুন, হত্যা, অর্থ পাচার, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, আটকে রেখে নির্যাতন, নিয়োগ বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারিসহ এহেন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে জড়াননি হারুন। তবুও বছর বছর পেয়েছেন পদোন্নতি। এসব অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জ ঘুরে ডিবি হারুনের অন্তত হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার সাবেক প্রধান হারুনের দেশে থাকা হাজার হাজার কোটি টাকার সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক ছিলেন তার কথিত মামা জাহাঙ্গীর হোসেন এবং তার সহযোগী জহির। মূলত মামার মাধ্যমে সব অপকর্ম করতেন হারুন। জায়গা, জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি রিসোর্ট সব সম্পদেই তার মামা জাহাঙ্গীরের নামে করেছেন। আবার এসব সম্পদ দেখিয়ে ব্যাংক থেকে হাতিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

আবার মানুষের সম্পত্তি দখলের পর তা বিক্রি এবং সেই টাকা দেশের বাইরে পাঠানোর দায়িত্ব পালন করতেন ডিবির খিলগাঁও জোনের এডিসি সাইফুল। বিদেশে অর্থ পাচারের সুবিধার জন্য গড়ে তোলা হয় নিজস্ব মানি এক্সচেঞ্জ। ঢাকায় এই প্রতিষ্ঠানের অফিস পুরানা পল্টনের আজাদ প্রোডাক্টসের গলিতে। কার্যক্রম পরিচালনায় দুবাইয়ে আছে আরেকটি অফিস। এই মানি এক্সচেঞ্জ পরিচালনা করেন এডিসি সাইফুল ইসলামের দুই ভাই। একজন থাকেন দেশে। আর আরেক ভাই রিফাত অবস্থান করেন দুবাই।

মানবজমিন:

শেখ হাসিনার পতনের যত কারণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে নতুন বাংলাদেশের। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতন হয়েছে চরম ক্ষমতাধর শেখ হাসিনার। অনেক দিন ধরে কিছু একটা লিখবো বলে ভাবছিলাম কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না কোনোভাবেই। কখন যে আবার কার বিরাগভাজন হয়ে যাই, কে জানে? আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিষয়ে আমার বেশ সরব উপস্থিতি থাকলেও বন্ধুরা প্রায়ই খোঁচায় আমি কেন চুপ এখন। যেহেতু আমি একজন শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাই তাড়াহুড়ো করে কোনো মন্তব্য করা যে সমীচীন হবে না এটা আমি বুঝি। যাই হোক শেষমেষ লিখেই ফেললাম সাত পাঁচ না ভেবেই শেখ হাসিনার পতনের চূড়ান্ত খতিয়ান।
এখন মোটামুটি সবাই বুঝতে পেরেছে শেখ হাসিনা কেন এভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন? কী কী অপরাধ তিনি করেছেন যার দরুণ তাকে এই শাস্তি পেতে হলো। এক-দুই করে তা লিখতে গেলে, প্রথম কারণ হবে চূড়ান্ত ঔদ্ধত্য। অনেক দিন ধরেই কারও কোনো পরামর্শ তিনি শুনতেন না। তার সম্পর্কে এমনও শোনা যেতো গাছের পাতাও নাকি তার ইশারা ছাড়া নড়তো না। নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতেন প্রশাসনকে।

তিনিই ছিলেন নাকি সবকিছুর অধিকর্তা। রাস্তার ড্রেনেজের স্লাব মেরামত হোক কিংবা মন্ত্রণালয়ের হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের অনুমোদনই হোক তিনি ছিলেন সবার শেষ কথা।
দ্বিতীয় কারণ হলো নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে গণতন্ত্রের কফিনের শেষ পেরেক গেঁথে দেয়া। বিরোধী দল ও ভোটারবিহীন পাতানো নির্বাচন দিয়ে তিনি পেয়েছেন গণতন্ত্র হত্যাকারীর তকমা। যদিও প্রচার মাধ্যমে বিশ্বকে তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন তিনিই হলেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত তিনি অন্ধ অনুগত আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত করে রেখেছিলেন। বানিয়েছিলেন নির্লিপ্ত, অকার্যকর ও দলদাসে।

তৃতীয়, বিচার বিভাগকে নিজের ও দলের সুবিধামতো পরিচালনা করা। চতুর্থ, আইনের শাসনের অবলুপ্তি ঘটানো। পঞ্চম, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি রোধে চরম ব্যর্থতা, যার দরুন সর্বত্র হাহাকার সৃষ্টি হওয়া। ষষ্ঠ, ছাত্রলীগের অতি সক্রিয়তা ও অবাধ্য রাজনীতি। সপ্তম, আর্থিক খাতে চরম লুটপাট। ব্যাংকিং ও শেয়ার বাজারকে পুরোপুরি ধ্বংস করা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লুণ্ঠনরাজ ও বড় বড় লুণ্ঠনকারী (আর্থিক দেউলিয়া) সৃষ্টি করা।

অষ্টম, সংখ্যালঘুর সুরক্ষার নামে তাদের জমি, বাড়ি ও ঘর দখল নেয়া। আর শারদীয় দুর্গাপূজা আসলে অনুভূতি সন্ত্রাসের নামে সংখ্যালঘুদের পাশবিক নির্যাতন করা। জনমনে বিভেদ ও রাজনৈতিক ধুম্রজাল তৈরি করে প্রকাশ করা যে, হিন্দু মানে আওয়ামী লীগের সমর্থক। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় আওয়ামী লীগের শাসনকালে হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। বরং হিন্দুদের ব্যবহার করে অপকৌশলে ছিনিয়ে নিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সহযোগিতা ও সহমর্মিতা।

নবম, নেতা মন্ত্রীদের বেফাস ও আলটপ্পা মন্তব্য। সঙ্গে কুকথার রাজনীতির মিশ্রণ করে প্রচ্ছন্ন হুমকি ও সাম্রাজ্যবাদী প্রভুত্ব বিস্তার। এসব বে-লাগাম কুট মন্তব্যে জনগণ অত্যন্ত বিরক্ত ছিল। গুজবের মতো সস্তা রাজনৈতিক কৌশল ও নেতাদের রাশভারি শব্দ চয়ন ও ছিল পুরো দলকে খাদের কিনারায় টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।

শেষ কারণ হলো দুর্নীতির বহরে বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর সংযুক্তি। মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো তথ্য আসবে পরিসংখ্যান ঘাটলে। রীতিমতো চোখ ছানাবড়া হবে। ছোটবেলায় ‘পুকুর চুরি’-র অর্থ জেনেছিলাম, গত ১৫ বছর ধরে তা দেখেছি সযত্নে। সমাজের মাথা যারা, সেসব রাঘব বোয়াল খাল-বিল, নদী, সাগর, পাহাড়, জঙ্গল এমন কি বালি সব হাপিশ করে দিয়েছে গোগ্রাসে। গণমাধ্যমে তাদের নাম শুনলেই কেমন জানি নিঃস্ব মনে হয় নিজেকে। এক-একজনের চুরির বহর হাজার-হাজার কোটি টাকা। আজিজ, বেনজীর কিংবা আবেদ আলীর দুর্নীতির পসরা মগের মুল্লুককেও পরাস্ত করবে। চুরির টাকার বেশিটাই নাকি বিদেশে পাচার করেছে তারা। বছর দুয়েক আগে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন, অর্থ পাচার কি করে রোখা যায়? কি করে বিদেশে গচ্ছিত টাকা দেশে ফেরানো যায়, তা তার জানা নেই। এসব দায়িত্ব জ্ঞানহীন বক্তব্যে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। জনগণ বুঝতে পেরেছে এসব আষাঢ়ে গল্প বলে তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তারা।

সহ্যের সীমা না-পেরোলে নাকি বিপ্লব হয় না। শেখ হাসিনার উপর আপামর সাধারণ মানুষ থেকে ছাত্র-জনতা কতোটা বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে, এই বিপ্লব তার প্রমাণ। নাহলে শুধু একটা কোটা আন্দোলনে সরকার পড়ে যায়? ছাত্র-জনতার অহিংস আন্দোলনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগে গুলি মেরে প্রাণ কেড়ে নেয়ার বাড়াবাড়ি সহজভাবে নেয়নি জনগণ। তাই তো রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে তারা প্রমাণ করতে চেয়েছেন বিজয় অর্জিত হবে তাদের একদিন। রবীন্দ্রনাথের একটি কথা এখন বেশ মনে পড়ছে আমার। তার ছোট গল্প জীবিত ও মৃতের একটি লাইন ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই।’ আবু সাঈদ মরে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এটা সুনিশ্চিত লক্ষ কোটি বিপ্লবীদের তিনি রসদ জুগিয়েছেন তার এই আত্মত্যাগের মাধ্যমে। আমাদের ছাত্র-জনতার তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা, নতুন বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখবে অনন্তকাল। এই আন্দোলন শুধু এমফিল কিংবা পিএইচডি থিসিসের গবেষণার খোরাক হবে না বরং এটি রচনা করবে গণজাগরণের বীজমন্ত্র। সামনের দিনে আর কোনো শাসক ছাত্রদের উপর আঘাত করতে সাহস করবে না, ভাববে দশবার।

একটি নির্মোহ সত্যি হলো, একদা জনপ্রিয় ও দেশবাসীর ‘চোখের মণি’ শেখ হাসিনা কোনো এক গভীর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে রাতারাতি ‘চোখের বালি’ হয়ে যাননি। তার এই বিবর্তন ঘটেছে ধীরে-ধীরে। এখন যে-বিশ্লেষণে তিনি ভূষিত, প্রবল সমালোচিত ও জনগণের একাংশের কাছে ঘৃণিত, সেই ‘স্বৈরতন্ত্রী’ তকমা পাওয়ার পিছনে ভারতের অবদান কম নয় এটা সবাই বুঝে। ভারত সরকারের প্রবল সহযোগিতায় তার ক্ষমতার চরিত্রটি তিনি পোক্ত করেছেন বেশ দানবীয়ভাবে। তবে এটা ঠিক ভারতের নরেন্দ্র মোদী যদি আগামীবার ক্ষমতায় না আসে শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেয়াও একপ্রকার কঠিন হবে তা কি তিনি জানেন?
তার শাসন আমলে একের-পর-এক নির্বাচনকে তিনি প্রহসনে পরিণত করেছেন। ভূ-রাজনৈতিক কারণে ভারত নীরবই শুধু থাকেনি, সমর্থনের ডালি নিয়ে দৃঢ়ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রধানত এই কারণে গণতন্ত্রপ্রিয় বাংলাদেশের এক বিরাট অংশের কাছে ভারত অ-জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পরপর ৩টি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর ‘বন্ধু’ থেকে ‘শত্রু’-তে পরিণত হওয়া অস্বাভাবিক ছিল না। অগণতন্ত্রী হাসিনার অধঃপতনের দায় ভারত এড়াতে পারে না। এখন সময় এসেছে নতুনভাবে নিজেদের মেলে ধরার। নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করার।

এখন প্রশ্ন শেখ হাসিনা কেন পালালেন? অনেকে বলবে জনরোষে কিংবা গণভবন ঘেরাও এর আশঙ্কায়। তবে এটা ঠিক জনমত যেভাবে তৈরি হয়েছে পুলিশ কিংবা অন্য কোনো বাহিনী দিয়ে এটি আর দমিয়ে রাখা তার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। অন্য একটি কারণ হতে পারে শেখ হাসিনা জানতেন তার বাবার চরম পরিণতির কথা। তাইতো তিনি আর ঝুঁকি নিতে চাননি। ১৫ই আগস্ট এর মতন আরেকটি ইতিহাসের তাইতো তিনি পুনরাবৃত্তি হতে দেননি। গণমাধ্যমে যে খবর এসেছে তার হাতে সময় ছিল মাত্র ৪৫ মিনিট। এত কম সময়ে আসলে তার আর অন্য কিছু করার উপায় ছিল না?

শেখ হাসিনার শাসন আমলে আসলেই কী তিনি কোনো ভালো কাজ করেননি? পদ্মা সেতু হোক, ফ্লাইওভার হোক কিংবা মাথাপিছু জিডিপি বৃদ্ধি হোক। জনগণ কি ভুলে গেছে এসব? আসলে আন্দোলন দমনের নামে তিনি যে নৈরাজ্য ও রক্তের বন্যার ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তার এসব ভালো কাজের ফিরিস্তি তখন আর ধোপে টেকে না হয়ে যায় অমূলক। মানুষ তখন এসব ডিজিটাল উন্নয়নের কথা ভুলে যায় এক নিমেষে। মনে রাখে ঘাত-প্রতিঘাত, সংগ্রাম ও হরিলুটের কথা। অতিরিক্ত ক্ষমতার মোহ ও দম্ভ মানুষকে যে উন্মাদ ও বীভৎস করে তোলে তার প্রমাণ তিনি স্বয়ং নিজে। তিনি চাইলে সবকিছুর একটা সুন্দর পরিসমাপ্তি করতে পারতেন। কিন্তু করলেন না তার কিছু চাটুকার, সুবিধাবাজ ও ধুরন্ধর সহযোগীদের কথায়। তিনি যে ভুল এটা তো এখন প্রমাণিত। তাকে যে অন্ধ করে রাখা হয়েছে এটাও সত্য। যে পাপ করে তাকে তো শাস্তি ভোগ করতেই হবে। প্রাকৃতিক আইন তো এটির হেরফের করে না। ইতিহাস কিন্তু কোনো পাপীকে ক্ষমা করে না। এখন দেখা যাক তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোনদিকে যায়। তিনি পালিয়ে কি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব কিংবা প্রাজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছেন এটি হয়তো সময়েই বলে দেবে।

বনিক বার্তা:

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় পরিমার্জন করে পুরনোতে ফিরে যাব —শিক্ষা উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘মূল্যায়ন পদ্ধতির দিক থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। যতদূর পারি আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাব। তবে এমনভাবে এটা করা হবে, যাতে যেসব শিক্ষার্থী নতুন শিক্ষাক্রমে আছে তাদের কোনো অস্বস্তি না হয়, এজন্য পরিমার্জন করা হবে।’

 

সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর গতকাল প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘একটা নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছিল ২০২১ সালে, এতদিন ধরে মাঠপর্যায়ে, সব জায়গায় এগুলো নিয়ে গবেষণা, তথ্য তৈরি হয়েছে। সেগুলো আমার কাছে আছে। শিক্ষা পাঠ্যক্রম উন্নত তো করতেই হবে, সময় তো বদলাচ্ছে। কিন্তু যেটা তৈরি হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন বর্তমান পর্যায়ে আমাদের যে শিক্ষক আছে তা দিয়ে। এটা যে আমাদের দেশের জন্য সর্বক্ষেত্রে উপযোগী তাও আমরা মনে করছি না। কাজেই এ শিক্ষাক্রমকে কার্যকর করা সম্ভব বলে আমি দেখছি না। এটার বাস্তবায়ন খুব ভালো হচ্ছেও না, বিশেষ করে পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে।’

বর্তমান শিক্ষক দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা কঠিন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই এ নতুন শিক্ষাক্রম আমাদের দেশের জন্য উপযুক্তও নয়। নতুন শিক্ষাক্রম থেকে পুরনো শিক্ষাক্রমে রূপান্তরটিও জটিল কাজ। কারণ অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই নতুন বই পৌঁছে গেছে। এখন আমরা যদি নতুন শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করি এবং পুরনোতে ফিরে যাই, তাহলে নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সংযোগ রাখব।’

নতুন শিক্ষাক্রমে শিখন ও মূল্যায়নে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু এ শিক্ষাক্রম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে বেশ বিতর্ক। সরকার পরিবর্তনের পর এখন এ শিক্ষাক্রমের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে গত বছর। আর চলতি বছর চালু হয়েছে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে। এ বছর যারা নবম শ্রেণীতে পড়ছে, তাদেরই নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা। তাই ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীতে এটা চালু হওয়ার কথা ছিল। দেশে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্যান্য দেশে যেভাবে চলে সে রকম পরিবেশ তৈরি করতে ‌আমরা চেষ্টা করব। সে জন্য সবার সহযোগিতা দরকার হবে।’

সমকাল:

বিএনপির ১১৭ নেতাকর্মী নিহত, জামায়াতের ৮৭

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের অন্তত ১১৭ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৮৭ নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীও জীবন দিয়েছেন শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসন উৎখাতে।

অভ্যুত্থানকে রাজনৈতিক রূপ না দিতে হতাহত নেতাকর্মীর তালিকা গোপন রাখার কৌশল নিয়েছে দলগুলো। অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা আন্দোলনের সূত্রপাতকারী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বিরোধে না জড়াতেই এ কৌশল বলে জানা গেছে।

তবে সমকাল দলগুলোর সূত্রে নিহত নেতাকর্মীর বড় অংশের পরিচয় পেয়েছে। বিএনপি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ছাত্রদলের ৩৪, যুবদলের ৩৫, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৯, শ্রমিক দলের ১৪, কৃষক দলের ৪, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ৬, দক্ষিণ বিএনপির ১২, মৎস্যজীবী দলের ২, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের এক নেতাকর্মীর প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। বহু নেতাকর্মী চিকিৎসাধীন থাকায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, শিবিরের নিহত নেতাকর্মীর সংখ্যা অন্তত ৫৩। জামায়াতের ৩৪ জনের প্রাণ গেছে। তীব্র আন্দোলনের প্রথম দিন গত ১৬ জুলাই শিবিরের দুই নেতা নিহত হন। ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার পর ৪ ও ৫ আগস্ট জামায়াত-শিবিরের ৬০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। যদিও দলটি কেউ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানায়নি।

বিএনপি এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের নিহত নেতাকর্মীর বেশির ভাগের প্রাণ গেছে ৪ ও ৫ আগস্ট। যদিও সংখ্যা নিরূপণ করতে পারেনি দলটি। নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের ৯ নেতাকর্মীর জীবন গেছে এই আন্দোলনে।

সমকালের হিসাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৬২৩ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা অন্তত ৬৫০। সরকারি হাসপাতালগুলো ৪০৮ জনের লাশ পাওয়ার তথ্য জানিয়েছে। সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছিলেন, নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে।

দেশরুপান্তর:

পিলখানা হত্যায় শেখ হাসিনাকে দায়ী করলেন স্বজনরা
আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহে পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস ও শেখ সেলিমসহ শেখ পরিবার জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন নিহত সেনা সদস্যদের পরিবার ও স্বজনরা। বিদ্রোহকে কথিত উল্লেখ করে পুরো ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আখ্যা দিয়েছেন তৎকালীন বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) নিহত মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ।

গতকাল শনিবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসার ও ১৭ সিভিলিয়ান হত্যার বিচার চাই’ শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন দাবি করেন। রাকিন বলেন, ‘এক আওয়ামী লীগ নেতা ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, ওনার নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমার বাবা-মাকে জবাই দিয়েছেন। যদি বেশি বাড়াবাড়ি করি তাহলে বাবা-মার মতো আমাকেও জবাই দিয়ে দেবে।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই, যেখানে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) অন্য একটা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রাজধানীতে ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করে।’

রাকিন আহমেদ বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার বা তদন্ত আমরা মানি না। কারণ প্রধান যে হত্যাকারী, নির্দেশদাতা তিনি তখন ক্ষমতায় ছিলেন। খুনি কি তার নিজের বিচার করবেন? মুখ বন্ধ করে দেখতে হয়েছে, কেমন করে তদন্ত, ট্রায়াল প্রভাবিত করল, ডাল-ভাতের কথা বলল। নীরবতায় সহ্য করতে হয়েছে।’

রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) বিদ্রোহের সময় হত্যাকাণ্ডের মামলায় যেসব তদন্ত হয়েছে, সেসব তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন নিহত সেনা সদস্যদের স্বজনরা। এ ছাড়া ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তও দোষীদের বিচার করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

নিহত মেজর কাজী মোসাদ্দেক হোসেনের মেয়ে নাজিয়া বলেন, ‘আমাদের কষ্টের কথা যদি বলি, একই পরিস্থিতিতে এখনো যাচ্ছি। কষ্ট দূর হয়ে যায়নি। এর পেছনে অনেক ঘটনা ছিল। আমরা তো আমাদের স্বজনদের হারিয়ে ফেলেছি। মানুষ জানুক, এই হত্যাকাণ্ড কারা করেছে। কেন এত বছর পরও আমাদের মুভমেন্টে বাধা দেওয়া হয়।’

নিহত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এনায়েতুল হকের মেয়ে নাবিলা বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক চক্রের কাজ। আন্তর্জাতিক শক্তির দ্বারাই কাজটি করা হয়েছে। আপনারা বের করবেন আসল কারণ। এটা বিদ্রোহ নয়, এটা হত্যাকাণ্ড, পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। আমার বাবা মারা যাননি। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কিছু অপপ্রচারের জন্য আমরা হেনস্তা হয়েছি। এত দিন ভয়ে কথা বলিনি, আজ নির্ভয়ে কথা বলছি।’

দ্য ডেইলি স্টার:

আমার ছেলেটাকে পুলিশ সবার সামনে গুলি করে মেরে ফেলেছে’

জলকামানের পানিতে পা পিছলে রাস্তায় পড়ে যায় শুভ। রাস্তা থেকে উঠার সময় তার সারা শরীরে পুলিশের ছররা গুলি লাগে।

পুরোনো প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে দিন কাটত বগুড়ার হাড্ডিপট্টি এলাকার ১৬ বছরের কিশোর মো. সিয়াম শুভর। বাবা-মার খোঁজ জানা ছিল না, ৭ বছর বয়সে স্থানীয় আশিক ও শাপলা খাতুন দম্পতি তাকে দত্তক নিয়েছিলেন। তাদের কাছেই বড় হচ্ছিল সে।

গত ১৯ জুলাই বিকেল ৩টার পর কাজ শেষে নানার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। আর ঘরে ফেরেনি সে।

শুভর মা শাপলা খাতুন ও প্রতক্ষ্যদর্শী সাকিব জানান, ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার সময় বগুড়া সেউজগাড়ী আমতলা মোড় আন্দোলনকারীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। বিকেল ৫টার পরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে পুলিশ সেখানে জলকামান দিয়ে গরম পানি ছিটিয়ে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

এরপর পুলিশ এপিসি থেকে নেমে শটগান থেকে অসংখ্য গুলি করে বলে জানান সেখানে উপস্থিত থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বগুড়ার সমন্বয়ক সৈকত আলী।

এই সময় দৌড়ে সেখান থেকে সরে যাওয়ার সময় জলকামানের পানিতে পা পিছলে রাস্তায় পড়ে যায় শুভ। রাস্তা থেকে উঠার সময় তার সারা শরীরে পুলিশের ছররা গুলি লাগে বলে জানায় তার সঙ্গে আন্দোলনে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী। পরে তাকে কাছেই অবস্থিত বগুড়া নার্সিং হোমে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার মো. মশিহুর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ডাক্তার মশিহুরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছররা গুলি সিয়ামের দুই চোখ, মাথা এবং সারা শরীরে ঢুকেছে। সেইসঙ্গে সে পড়ে গিয়ে মাথায় তীব্র আঘাত পেয়েছে।

এরপরে আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজন মিছিল করতে করতে শুভর মরদেহ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) নিয়ে যায়। সেখানেও ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই সময় জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার মো. সালেহর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছররা গুলি শুভর সারা শরীরে ঢুকে যাওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।

রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তখন নিহত শুভর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। পরে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সে হাড্ডিপট্টি এলাকার বাসচালক আশিক ও শাপলা খাতুনের দত্তক ছেলে।

শুভর বাবা আশিক জানান, ৭ বছর বয়স থেকে শুভ তাদের সঙ্গে।

মা শাপলা খাতুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি নিজেও আগে বোতল কুড়াতাম। ৯ বছর আগে একদিন বগুড়া রেলস্টেশন বোতল কুড়ানোর সময় শুভকে পাই। সে আমাকে মা বলে জড়িয়ে ধরে। সেই থেকে শুভ আমাদের সঙ্গে থাকত আর বোতল কুড়ানোর কাজ করত।’

‘আমার আরও চার সন্তান রয়েছে। শুভও আরেক সন্তান, তাকে আমি নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসতাম। আমার ছেলেটাকে পুলিশ সবার সামনে গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই’, বলেন তিনি।

হাড্ডিপট্টি বাসস্ট্যান্ডের নৈশ্য প্রহরী ফারুক হোসেন বলেন, ‘শনিবার শুভর মরদেহ নিয়ে এসে যখন আমরা এখানে গোসল করিয়ে দিচ্ছিলাম, সেই দিনও পুলিশ এসে এখানে গুলি করে যায়। মরদেহ রেখে কিছু সময়ের জন্য আমাদের দৌড়াতে হয়েছিল।’

 

জনপ্রিয় সংবাদ

ডিআইজির স্ত্রী ৬ হাজার কোটির মালিক

রূপপুর প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন শেখ হাসিনা

আপডেট সময় ০৭:১৮:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৪

আজকের প্রত্রিকা গুলোর প্রধান প্রধান সংবাদ

নয়াদিগন্ত:

রূপপুর প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন শেখ হাসিনা
রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি অর্থ আত্মসাৎ করে পাচার করেন স্বৈরাচার শেখ হাসিনা। বাংলাদেশী অর্থে যার পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসেবে)। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য। প্রতিবেদনে তারা জানায়, মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে অর্থ-আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রোসাট্রম। আর এর মধ্যস্থতা করেন তার ভাগ্নি ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিক। সম্প্রতি এ বিষয়ে নিজস্ব অনুসন্ধানের ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে গ্লোবাল ডিফেন্স করপোরেশন নামে এই পোর্টাল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই মধ্যস্থতার বিনিময়ে পাচার করা অর্থের ৩০ শতাংশ পেয়েছেন টিউলিপ, শেখ রেহানা ও পরিবারের কয়েকজন সদস্য। ২০১৩ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে শেখ হাসিনার সাক্ষাতের সময় সঙ্গী হয়েছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের দাবি, সে সময় ঢাকা-মস্কোর বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতাও করেন তিনি।

গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, রাশিয়ার সহযোগিতায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নির্মাণে খরচ ধরা হয় এক হাজার ২৬৫ কোটি ডলার। প্রয়োজনের তুলনায় যা অনেক বেশি। যাতে মালয়েশিয়ার একটি ব্যাংকের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে এই বাজেট থেকে ৫০০ কোটি ডলার আত্মসাতের সুযোগ করে দেয় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা-রোসাট্রম।
২০০৯ সালে ‘প্রচ্ছায়া লিমিটেড’ নামে একটি ভুয়া কোম্পানি চালু করেন টিউলিপ সিদ্দিক, তার মা শেখ রেহানা ও চাচা তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক। যুক্তরাষ্ট্রেও জুমানা ইনভেস্টমেন্ট নামে তাদের একটি কোম্পানি রয়েছে বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের দাবি, এ কোম্পানির মাধ্যমেই বিভিন্ন দেশের অফশোর অ্যাকাউন্টে অর্থপাচার করতেন শেখ হাসিনা। তাদের এ কোম্পানিটি ডেসটিনি গ্রুপ নামে একটি চিটিং ফান্ড কোম্পানির সাথে যুক্ত হয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন ডলার পাচার করেছে।
গ্লোবাল ডিফেন্স কর্পের প্রতিবেদন আরো বলছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে গণতন্ত্র ক্রমেই দুর্নীতিতে জর্জরিত স্বৈরাচারের কবলে পড়ে জিম্মি হয়ে যায়। ২০১৮ সালের ২৩ মার্চ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে জার্মান থিংকট্যাংক বেরটেলসম্যান স্টিফটুং বাংলাদেশকে ‘স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর’ তালিকায় তালিকাভুক্ত করে। স্বৈরাচারী শাসকদের কঠোর হস্তক্ষেপের কারণে বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিছক হাতের পুতুল হয়ে যায়।

দৈনিক সংগ্রাম:

শেখ হাসিনা পুরো দেশকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন: ড. ইউনূস
সংগ্রাম অনলাইন: শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন পুরো দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশে নিযুক্ত বি‌ভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইক‌মিশনারসহ জা‌তিসংঘ এবং বি‌ভিন্ন সংস্থার প্রধানদের ব্রিফিং করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসন পুরো দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করা হয়েছে।’

বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ড. ইউনূস বলেন, বাংলাদেশ বন্ধুরাষ্ট্রের কাছে কৃতজ্ঞ, তারা আমাদের সহায়তা করেছে। বর্তমানে একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছি। দুই সপ্তাহ হলো বাংলাদেশে দ্বিতীয় বিপ্লব সাধিত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তিনি দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন।

ছাত্রদের অনুরোধে তিনি প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘শেখ হাসিনার পতনে যারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।’

কালের কন্ঠ:

ডিআইজির স্ত্রী ৬ হাজার কোটির মালিক
পূর্বাচলের পাশে বিস্তীর্ণ জমিজুড়ে গড়ে উঠছে ‘আনন্দ পুলিশ হাউজিং সোসাইটি’। এই প্রকল্পের সঙ্গে পুলিশ বাহিনীর সম্পৃক্ততা নেই। স্থানীয়দের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে, ভয় দেখিয়ে কিংবা রিমান্ডে নিয়ে জমি লিখে নেওয়া হয়েছে। আবার কারো জমি হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে নামমাত্র মূল্যে। এই অপকর্মের মূল হোতা অতিরিক্ত ডিআইজি গাজী মো. মোজাম্মেল হক। রূপগঞ্জ ছাড়াও কুমিল্লার মেঘনা ও সুনামগঞ্জে অন্তত তিন হাজার ৫৩০ বিঘা জমির মালিক। সম্পদের প্রায় সবই কৌশলে মালিকানা দিয়েছেন স্ত্রীকে। কালের কণ্ঠ’র অনুসন্ধানে মিলেছে তাঁদের দুর্নীতির আদ্যোপান্ত
পুলিশের সহকারী কমিশনার পদে ১৭তম বিসিএসে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ১৯৯৭ সালে চাকরিজীবন শুরু করেন গাজী মো. মোজাম্মেল হক। বর্তমানে তিনি পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে কর্মরত। পাশাপাশি নিযুক্ত রয়েছেন একটি আবাসন প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে। ‘আনন্দ পুলিশ পরিবার বহুমুখী সমবায় সমিতির’ নাম প্রচার করে গড়ে তোলা আবাসন প্রকল্পটির বর্তমান বিক্রয়যোগ্য সম্পদের পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার ৬৫০ কোটি টাকা।

প্রথম আলো:

আহ্‌নাফের পরীক্ষা দিতে আসা হয়নি, শূন্য আসনে ফুল
রাজধানীর বিএএফ শাহীন কলেজের একাদশ শ্রেণির স্থগিত পরীক্ষা গতকাল রোববার আবার শুরু হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা এসেছে। শুধু একটি আসন ফাঁকা। সেখানে রাখা একটি ফুলের তোড়া।

আসনটি শাফিক উদ্দিন আহ্‌ম্মেদ আহ্‌নাফের (১৭)। সে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৪ আগস্ট নিহত হয়েছে। মিরপুর-১০ নম্বরে সে গুলিবিদ্ধ হয়। গুলি তার বুকের ডান দিক দিয়ে ঢুকে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।

আহ্‌নাফ একাদশ শ্রেণির ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও পরে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সহিংসতায় অন্তত ৬২৬ জন নিহত হন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৬৮ জন শিশু ও কিশোর। আহ্‌নাফ তাদেরই একজন।

কলেজের পরীক্ষা হলে শূন্য আসনটিতে এক তোড়া ফুল রাখার মধ্য দিয়ে আহ্‌নাফের শিক্ষক ও সহপাঠীরা তাকে স্মরণ করলেন। তোড়াটির পাশে সাদা কাগজে লেখা ছিল আহ্‌নাফের নাম।

শিক্ষকেরা জানান, গত ২ জুলাই কলেজে একাদশ শ্রেণির চূড়ান্ত পরীক্ষা শুরু হয়। তিনটি পরীক্ষা হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সময়ে বিক্ষোভ-সংঘাতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। স্থগিত পরীক্ষা গতকাল নেওয়া শুরু হয়েছে।

বিএএফ শাহীন কলেজের উপাধ্যক্ষ শাকিলা নার্গিস প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষকদের মনে হয়েছে, আহ্‌নাফের স্মরণে কিছু করা দরকার। তার প্রতি ভালোবাসা থেকে শূন্য আসনটিতে কলেজের পক্ষ থেকে ফুল রাখা হয়েছে। তিনি জানান, গত সপ্তাহে কলেজের প্রাত্যহিক সমাবেশে (অ্যাসেম্বলি) আহ্‌নাফের কথা স্মরণ করে দোয়া পাঠ করা হয়। কলেজের ফটকেও তার নামে ব্যানার ঝোলানো হয়েছে।

শাকিলা নার্গিস আরও বলেন, নিহত আহ্‌নাফসহ এই কলেজের যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে অংশ নিয়ে

যুগান্তর:

প্রয়োজনীয় সংস্কারের পর নির্বাচন করাই সরকারের লক্ষ্য
শেখ হাসিনার নৃশংস স্বৈরশাসন দেশের সব প্রতিষ্ঠান প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে * বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী এবং গণমাধ্যমে বড় সংস্কার জরুরিঅন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় সংস্কারের পরই দেশে নির্বাচনের আয়োজন করা হবে। কাজগুলো করে যত দ্রুত সম্ভব একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেওয়া এই সরকারের লক্ষ্য। সংস্কারের মধ্যে আছে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, বেসামরিক প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনী ও গণমাধ্যম। তবে এ মুহূর্তে সরকারের অগ্রাধিকার খাত হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, সরবরাহব্যবস্থা ঠিক রাখা এবং অর্থনীতি। রোববার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। ব্রিফিং শেষে প্রধান উপদেষ্টার তথ্যসচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের এসব কথা বলেছেন। এ সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম বিদেশিদের কাছে তুলে ধরেন তিনি। এছাড়াও আগামী দিনে দেশ পরিচালনায় বিদেশিদের পাশে থাকার আহ্বান জানান। দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই ছিল কূটনীতিকদের সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক ব্রিফিং।

শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতি এবং চরম অব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো তুলে ধরে ড. ইউনূস বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশের শিক্ষার্থীদের এত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়নি। দুনিয়ার কোথাও নাগরিকরা এতটা মানবাধিকারবঞ্চিত হননি।’ তিনি বলেন, ‘এখন অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। পুরোপুরি স্বাভাবিক অবস্থা ফেরানোই এই সরকারের অগ্রাধিকার। বিগত সরকারের কারণে দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে। এটা ঠিক করতে কিছুটা সময় লাগবে।’ তিনি বলেন, ‘আশা করি, নতুন বাংলাদেশ তৈরিতে সবাই পাশে থাকবেন।’ প্রফেসর ড. ইউনূস বলেন, ‘বিগত নির্বাচনগুলোয় ব্যাপক কারচুপি হয়েছে। ক্ষমতা ধরে রাখতে শেখ হাসিনা সরকার সব প্রতিষ্ঠানকে প্রায় ধ্বংস করে দিয়েছে। অনিয়ম আর দুর্নীতি সর্বত্র। সবকিছু নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে।’ যারা এ আন্দোলনে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছাত্রদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি দায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানান।

কালবেলা:

দেশে-বিদেশে কী নেই হারুনের
টাকা পাচারের পথ সহজ করতে নিজেই চালু করেন মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠান। সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্বও আছে তার। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি দখল ও দেখাশোনার জন্য আছে তিন সদস্যের স্টিয়ারিং কমিটি। নামে-বেনামে অন্তত তিনটি রিসোর্টের মালিকানা আছে তার। রয়েছে একাধিক আবাসিক হোটেল। আরও অন্তত ১০টি কোম্পানির মালিক তিনি। শুধু ঢাকায়ই আলিশান বাড়ি করেছেন দুই ডজনেরও বেশি। এর বাইরে আছে অগণিত প্লট ও ফ্ল্যাট। কথিত মামা জাহাঙ্গীর আলমের নামে গড়েছেন এসব সম্পদ। দখল করা সম্পত্তি বিক্রি করে সেই টাকা দেশের বাইরে পাচার ও বিদেশে গড়ে তোলা সম্পদ তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব আলাদা কমিটির। অন্তত ছয়টি দেশে ব্যবসা গড়েছেন অঢেল টাকার। বহুল আলোচিত এই কর্মকর্তার নাম হারুন অর রশীদ। বাংলাদেশ পুলিশের ডিআইজি পদমর্যাদার এই কর্মকর্তা সর্বশেষ ছিলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি)। সরকারি স্কেল অনুযায়ী তৃতীয় গ্রেডের চাকরিজীবী হিসেবে সর্বসাকল্যে বেতন ৮০ হাজার টাকারও কম। অথচ সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে নামে-বেনামে কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন হারুন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চাকরি জীবনের শুরু থেকেই হারুন ছিলেন বেপরোয়া। কখনোই চাকরি

বিধিমালার তোয়াক্কা করেননি। যখন যেখানে দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই নানান অনিয়মে জড়িয়েছেন। প্রতিটি ধাপে প্রতারণা ও উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডে জড়ালেও তাকে কখনো শাস্তি পেতে হয়নি। বরং পদায়ন করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ সব ইউনিটে। ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, জিম্মি করে অর্থ আদায়, মারধর, জমি দখল, বাড়ি দখল, প্লট দখল, ফ্ল্যাট দখল, গুম, খুন, হত্যা, অর্থ পাচার, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, আটকে রেখে নির্যাতন, নিয়োগ বাণিজ্য, নারী কেলেঙ্কারিসহ এহেন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে জড়াননি হারুন। তবুও বছর বছর পেয়েছেন পদোন্নতি। এসব অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়েছেন হাজার হাজার কোটি টাকা। রাজধানীর উত্তরা, গাজীপুর ও কিশোরগঞ্জ ঘুরে ডিবি হারুনের অন্তত হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার সাবেক প্রধান হারুনের দেশে থাকা হাজার হাজার কোটি টাকার সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক ছিলেন তার কথিত মামা জাহাঙ্গীর হোসেন এবং তার সহযোগী জহির। মূলত মামার মাধ্যমে সব অপকর্ম করতেন হারুন। জায়গা, জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি রিসোর্ট সব সম্পদেই তার মামা জাহাঙ্গীরের নামে করেছেন। আবার এসব সম্পদ দেখিয়ে ব্যাংক থেকে হাতিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা।

আবার মানুষের সম্পত্তি দখলের পর তা বিক্রি এবং সেই টাকা দেশের বাইরে পাঠানোর দায়িত্ব পালন করতেন ডিবির খিলগাঁও জোনের এডিসি সাইফুল। বিদেশে অর্থ পাচারের সুবিধার জন্য গড়ে তোলা হয় নিজস্ব মানি এক্সচেঞ্জ। ঢাকায় এই প্রতিষ্ঠানের অফিস পুরানা পল্টনের আজাদ প্রোডাক্টসের গলিতে। কার্যক্রম পরিচালনায় দুবাইয়ে আছে আরেকটি অফিস। এই মানি এক্সচেঞ্জ পরিচালনা করেন এডিসি সাইফুল ইসলামের দুই ভাই। একজন থাকেন দেশে। আর আরেক ভাই রিফাত অবস্থান করেন দুবাই।

মানবজমিন:

শেখ হাসিনার পতনের যত কারণ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে নতুন বাংলাদেশের। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতন হয়েছে চরম ক্ষমতাধর শেখ হাসিনার। অনেক দিন ধরে কিছু একটা লিখবো বলে ভাবছিলাম কিন্তু সাহস পাচ্ছিলাম না কোনোভাবেই। কখন যে আবার কার বিরাগভাজন হয়ে যাই, কে জানে? আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিষয়ে আমার বেশ সরব উপস্থিতি থাকলেও বন্ধুরা প্রায়ই খোঁচায় আমি কেন চুপ এখন। যেহেতু আমি একজন শিক্ষক ও আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক তাই তাড়াহুড়ো করে কোনো মন্তব্য করা যে সমীচীন হবে না এটা আমি বুঝি। যাই হোক শেষমেষ লিখেই ফেললাম সাত পাঁচ না ভেবেই শেখ হাসিনার পতনের চূড়ান্ত খতিয়ান।
এখন মোটামুটি সবাই বুঝতে পেরেছে শেখ হাসিনা কেন এভাবে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন? কী কী অপরাধ তিনি করেছেন যার দরুণ তাকে এই শাস্তি পেতে হলো। এক-দুই করে তা লিখতে গেলে, প্রথম কারণ হবে চূড়ান্ত ঔদ্ধত্য। অনেক দিন ধরেই কারও কোনো পরামর্শ তিনি শুনতেন না। তার সম্পর্কে এমনও শোনা যেতো গাছের পাতাও নাকি তার ইশারা ছাড়া নড়তো না। নিজের ইচ্ছামতো ব্যবহার করতেন প্রশাসনকে।

তিনিই ছিলেন নাকি সবকিছুর অধিকর্তা। রাস্তার ড্রেনেজের স্লাব মেরামত হোক কিংবা মন্ত্রণালয়ের হাজার কোটি টাকা প্রকল্পের অনুমোদনই হোক তিনি ছিলেন সবার শেষ কথা।
দ্বিতীয় কারণ হলো নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে গণতন্ত্রের কফিনের শেষ পেরেক গেঁথে দেয়া। বিরোধী দল ও ভোটারবিহীন পাতানো নির্বাচন দিয়ে তিনি পেয়েছেন গণতন্ত্র হত্যাকারীর তকমা। যদিও প্রচার মাধ্যমে বিশ্বকে তিনি বুঝাতে চেয়েছিলেন তিনিই হলেন গণতন্ত্রের মানসকন্যা। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘদিন পর্যন্ত তিনি অন্ধ অনুগত আজ্ঞাবহ দাসে পরিণত করে রেখেছিলেন। বানিয়েছিলেন নির্লিপ্ত, অকার্যকর ও দলদাসে।

তৃতীয়, বিচার বিভাগকে নিজের ও দলের সুবিধামতো পরিচালনা করা। চতুর্থ, আইনের শাসনের অবলুপ্তি ঘটানো। পঞ্চম, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধি রোধে চরম ব্যর্থতা, যার দরুন সর্বত্র হাহাকার সৃষ্টি হওয়া। ষষ্ঠ, ছাত্রলীগের অতি সক্রিয়তা ও অবাধ্য রাজনীতি। সপ্তম, আর্থিক খাতে চরম লুটপাট। ব্যাংকিং ও শেয়ার বাজারকে পুরোপুরি ধ্বংস করা। আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লুণ্ঠনরাজ ও বড় বড় লুণ্ঠনকারী (আর্থিক দেউলিয়া) সৃষ্টি করা।

অষ্টম, সংখ্যালঘুর সুরক্ষার নামে তাদের জমি, বাড়ি ও ঘর দখল নেয়া। আর শারদীয় দুর্গাপূজা আসলে অনুভূতি সন্ত্রাসের নামে সংখ্যালঘুদের পাশবিক নির্যাতন করা। জনমনে বিভেদ ও রাজনৈতিক ধুম্রজাল তৈরি করে প্রকাশ করা যে, হিন্দু মানে আওয়ামী লীগের সমর্থক। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় আওয়ামী লীগের শাসনকালে হিন্দুরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে। বরং হিন্দুদের ব্যবহার করে অপকৌশলে ছিনিয়ে নিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সহযোগিতা ও সহমর্মিতা।

নবম, নেতা মন্ত্রীদের বেফাস ও আলটপ্পা মন্তব্য। সঙ্গে কুকথার রাজনীতির মিশ্রণ করে প্রচ্ছন্ন হুমকি ও সাম্রাজ্যবাদী প্রভুত্ব বিস্তার। এসব বে-লাগাম কুট মন্তব্যে জনগণ অত্যন্ত বিরক্ত ছিল। গুজবের মতো সস্তা রাজনৈতিক কৌশল ও নেতাদের রাশভারি শব্দ চয়ন ও ছিল পুরো দলকে খাদের কিনারায় টেনে নিয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।

শেষ কারণ হলো দুর্নীতির বহরে বাংলাদেশে ভয়ঙ্কর সংযুক্তি। মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মতো তথ্য আসবে পরিসংখ্যান ঘাটলে। রীতিমতো চোখ ছানাবড়া হবে। ছোটবেলায় ‘পুকুর চুরি’-র অর্থ জেনেছিলাম, গত ১৫ বছর ধরে তা দেখেছি সযত্নে। সমাজের মাথা যারা, সেসব রাঘব বোয়াল খাল-বিল, নদী, সাগর, পাহাড়, জঙ্গল এমন কি বালি সব হাপিশ করে দিয়েছে গোগ্রাসে। গণমাধ্যমে তাদের নাম শুনলেই কেমন জানি নিঃস্ব মনে হয় নিজেকে। এক-একজনের চুরির বহর হাজার-হাজার কোটি টাকা। আজিজ, বেনজীর কিংবা আবেদ আলীর দুর্নীতির পসরা মগের মুল্লুককেও পরাস্ত করবে। চুরির টাকার বেশিটাই নাকি বিদেশে পাচার করেছে তারা। বছর দুয়েক আগে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী সংসদে বলেছিলেন, অর্থ পাচার কি করে রোখা যায়? কি করে বিদেশে গচ্ছিত টাকা দেশে ফেরানো যায়, তা তার জানা নেই। এসব দায়িত্ব জ্ঞানহীন বক্তব্যে জনগণের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। জনগণ বুঝতে পেরেছে এসব আষাঢ়ে গল্প বলে তাদের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তারা।

সহ্যের সীমা না-পেরোলে নাকি বিপ্লব হয় না। শেখ হাসিনার উপর আপামর সাধারণ মানুষ থেকে ছাত্র-জনতা কতোটা বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছে, এই বিপ্লব তার প্রমাণ। নাহলে শুধু একটা কোটা আন্দোলনে সরকার পড়ে যায়? ছাত্র-জনতার অহিংস আন্দোলনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগে গুলি মেরে প্রাণ কেড়ে নেয়ার বাড়াবাড়ি সহজভাবে নেয়নি জনগণ। তাই তো রক্তের শেষ বিন্দু দিয়ে তারা প্রমাণ করতে চেয়েছেন বিজয় অর্জিত হবে তাদের একদিন। রবীন্দ্রনাথের একটি কথা এখন বেশ মনে পড়ছে আমার। তার ছোট গল্প জীবিত ও মৃতের একটি লাইন ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই।’ আবু সাঈদ মরে যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে এটা সুনিশ্চিত লক্ষ কোটি বিপ্লবীদের তিনি রসদ জুগিয়েছেন তার এই আত্মত্যাগের মাধ্যমে। আমাদের ছাত্র-জনতার তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতা, নতুন বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখবে অনন্তকাল। এই আন্দোলন শুধু এমফিল কিংবা পিএইচডি থিসিসের গবেষণার খোরাক হবে না বরং এটি রচনা করবে গণজাগরণের বীজমন্ত্র। সামনের দিনে আর কোনো শাসক ছাত্রদের উপর আঘাত করতে সাহস করবে না, ভাববে দশবার।

একটি নির্মোহ সত্যি হলো, একদা জনপ্রিয় ও দেশবাসীর ‘চোখের মণি’ শেখ হাসিনা কোনো এক গভীর আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে রাতারাতি ‘চোখের বালি’ হয়ে যাননি। তার এই বিবর্তন ঘটেছে ধীরে-ধীরে। এখন যে-বিশ্লেষণে তিনি ভূষিত, প্রবল সমালোচিত ও জনগণের একাংশের কাছে ঘৃণিত, সেই ‘স্বৈরতন্ত্রী’ তকমা পাওয়ার পিছনে ভারতের অবদান কম নয় এটা সবাই বুঝে। ভারত সরকারের প্রবল সহযোগিতায় তার ক্ষমতার চরিত্রটি তিনি পোক্ত করেছেন বেশ দানবীয়ভাবে। তবে এটা ঠিক ভারতের নরেন্দ্র মোদী যদি আগামীবার ক্ষমতায় না আসে শেখ হাসিনার ভারতে আশ্রয় নেয়াও একপ্রকার কঠিন হবে তা কি তিনি জানেন?
তার শাসন আমলে একের-পর-এক নির্বাচনকে তিনি প্রহসনে পরিণত করেছেন। ভূ-রাজনৈতিক কারণে ভারত নীরবই শুধু থাকেনি, সমর্থনের ডালি নিয়ে দৃঢ়ভাবে পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রধানত এই কারণে গণতন্ত্রপ্রিয় বাংলাদেশের এক বিরাট অংশের কাছে ভারত অ-জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পরপর ৩টি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পর ‘বন্ধু’ থেকে ‘শত্রু’-তে পরিণত হওয়া অস্বাভাবিক ছিল না। অগণতন্ত্রী হাসিনার অধঃপতনের দায় ভারত এড়াতে পারে না। এখন সময় এসেছে নতুনভাবে নিজেদের মেলে ধরার। নিজেদের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে চুলচেড়া বিশ্লেষণ করার।

এখন প্রশ্ন শেখ হাসিনা কেন পালালেন? অনেকে বলবে জনরোষে কিংবা গণভবন ঘেরাও এর আশঙ্কায়। তবে এটা ঠিক জনমত যেভাবে তৈরি হয়েছে পুলিশ কিংবা অন্য কোনো বাহিনী দিয়ে এটি আর দমিয়ে রাখা তার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। অন্য একটি কারণ হতে পারে শেখ হাসিনা জানতেন তার বাবার চরম পরিণতির কথা। তাইতো তিনি আর ঝুঁকি নিতে চাননি। ১৫ই আগস্ট এর মতন আরেকটি ইতিহাসের তাইতো তিনি পুনরাবৃত্তি হতে দেননি। গণমাধ্যমে যে খবর এসেছে তার হাতে সময় ছিল মাত্র ৪৫ মিনিট। এত কম সময়ে আসলে তার আর অন্য কিছু করার উপায় ছিল না?

শেখ হাসিনার শাসন আমলে আসলেই কী তিনি কোনো ভালো কাজ করেননি? পদ্মা সেতু হোক, ফ্লাইওভার হোক কিংবা মাথাপিছু জিডিপি বৃদ্ধি হোক। জনগণ কি ভুলে গেছে এসব? আসলে আন্দোলন দমনের নামে তিনি যে নৈরাজ্য ও রক্তের বন্যার ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তার এসব ভালো কাজের ফিরিস্তি তখন আর ধোপে টেকে না হয়ে যায় অমূলক। মানুষ তখন এসব ডিজিটাল উন্নয়নের কথা ভুলে যায় এক নিমেষে। মনে রাখে ঘাত-প্রতিঘাত, সংগ্রাম ও হরিলুটের কথা। অতিরিক্ত ক্ষমতার মোহ ও দম্ভ মানুষকে যে উন্মাদ ও বীভৎস করে তোলে তার প্রমাণ তিনি স্বয়ং নিজে। তিনি চাইলে সবকিছুর একটা সুন্দর পরিসমাপ্তি করতে পারতেন। কিন্তু করলেন না তার কিছু চাটুকার, সুবিধাবাজ ও ধুরন্ধর সহযোগীদের কথায়। তিনি যে ভুল এটা তো এখন প্রমাণিত। তাকে যে অন্ধ করে রাখা হয়েছে এটাও সত্য। যে পাপ করে তাকে তো শাস্তি ভোগ করতেই হবে। প্রাকৃতিক আইন তো এটির হেরফের করে না। ইতিহাস কিন্তু কোনো পাপীকে ক্ষমা করে না। এখন দেখা যাক তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কোনদিকে যায়। তিনি পালিয়ে কি রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব কিংবা প্রাজ্ঞতার পরিচয় দিচ্ছেন এটি হয়তো সময়েই বলে দেবে।

বনিক বার্তা:

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয় পরিমার্জন করে পুরনোতে ফিরে যাব —শিক্ষা উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘মূল্যায়ন পদ্ধতির দিক থেকে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়। যতদূর পারি আগের শিক্ষাক্রমে ফিরে যাব। তবে এমনভাবে এটা করা হবে, যাতে যেসব শিক্ষার্থী নতুন শিক্ষাক্রমে আছে তাদের কোনো অস্বস্তি না হয়, এজন্য পরিমার্জন করা হবে।’

 

সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেয়ার পর গতকাল প্রথমবারের মতো সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যান ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘একটা নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছিল ২০২১ সালে, এতদিন ধরে মাঠপর্যায়ে, সব জায়গায় এগুলো নিয়ে গবেষণা, তথ্য তৈরি হয়েছে। সেগুলো আমার কাছে আছে। শিক্ষা পাঠ্যক্রম উন্নত তো করতেই হবে, সময় তো বদলাচ্ছে। কিন্তু যেটা তৈরি হয়েছে সেটা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন বর্তমান পর্যায়ে আমাদের যে শিক্ষক আছে তা দিয়ে। এটা যে আমাদের দেশের জন্য সর্বক্ষেত্রে উপযোগী তাও আমরা মনে করছি না। কাজেই এ শিক্ষাক্রমকে কার্যকর করা সম্ভব বলে আমি দেখছি না। এটার বাস্তবায়ন খুব ভালো হচ্ছেও না, বিশেষ করে পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতিতে।’

বর্তমান শিক্ষক দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা কঠিন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রেই এ নতুন শিক্ষাক্রম আমাদের দেশের জন্য উপযুক্তও নয়। নতুন শিক্ষাক্রম থেকে পুরনো শিক্ষাক্রমে রূপান্তরটিও জটিল কাজ। কারণ অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই নতুন বই পৌঁছে গেছে। এখন আমরা যদি নতুন শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করি এবং পুরনোতে ফিরে যাই, তাহলে নতুন শিক্ষাক্রমের সঙ্গে সংযোগ রাখব।’

নতুন শিক্ষাক্রমে শিখন ও মূল্যায়নে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। কিন্তু এ শিক্ষাক্রম নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে রয়েছে বেশ বিতর্ক। সরকার পরিবর্তনের পর এখন এ শিক্ষাক্রমের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে আলোচনা চলছে।

প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে গত বছর। আর চলতি বছর চালু হয়েছে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে। এ বছর যারা নবম শ্রেণীতে পড়ছে, তাদেরই নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা দেয়ার কথা। তাই ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীতে এটা চালু হওয়ার কথা ছিল। দেশে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অন্যান্য দেশে যেভাবে চলে সে রকম পরিবেশ তৈরি করতে ‌আমরা চেষ্টা করব। সে জন্য সবার সহযোগিতা দরকার হবে।’

সমকাল:

বিএনপির ১১৭ নেতাকর্মী নিহত, জামায়াতের ৮৭

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বিএনপি ও দলটির অঙ্গসংগঠনের অন্তত ১১৭ নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৮৭ নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যান্য কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীও জীবন দিয়েছেন শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসন উৎখাতে।

অভ্যুত্থানকে রাজনৈতিক রূপ না দিতে হতাহত নেতাকর্মীর তালিকা গোপন রাখার কৌশল নিয়েছে দলগুলো। অভ্যুত্থানের কৃতিত্ব নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা আন্দোলনের সূত্রপাতকারী ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বিরোধে না জড়াতেই এ কৌশল বলে জানা গেছে।

তবে সমকাল দলগুলোর সূত্রে নিহত নেতাকর্মীর বড় অংশের পরিচয় পেয়েছে। বিএনপি সূত্র নিশ্চিত করেছে, ছাত্রদলের ৩৪, যুবদলের ৩৫, স্বেচ্ছাসেবক দলের ৯, শ্রমিক দলের ১৪, কৃষক দলের ৪, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির ৬, দক্ষিণ বিএনপির ১২, মৎস্যজীবী দলের ২, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের এক নেতাকর্মীর প্রাণহানির তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে। বহু নেতাকর্মী চিকিৎসাধীন থাকায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।

জামায়াত সূত্রে জানা গেছে, শিবিরের নিহত নেতাকর্মীর সংখ্যা অন্তত ৫৩। জামায়াতের ৩৪ জনের প্রাণ গেছে। তীব্র আন্দোলনের প্রথম দিন গত ১৬ জুলাই শিবিরের দুই নেতা নিহত হন। ১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ হওয়ার পর ৪ ও ৫ আগস্ট জামায়াত-শিবিরের ৬০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। যদিও দলটি কেউ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানায়নি।

বিএনপি এবং দলটির অঙ্গসংগঠনের নিহত নেতাকর্মীর বেশির ভাগের প্রাণ গেছে ৪ ও ৫ আগস্ট। যদিও সংখ্যা নিরূপণ করতে পারেনি দলটি। নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদের ৯ নেতাকর্মীর জীবন গেছে এই আন্দোলনে।

সমকালের হিসাবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ৬২৩ জন নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে নিহতের সংখ্যা অন্তত ৬৫০। সরকারি হাসপাতালগুলো ৪০৮ জনের লাশ পাওয়ার তথ্য জানিয়েছে। সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন জানিয়েছিলেন, নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়াতে পারে।

দেশরুপান্তর:

পিলখানা হত্যায় শেখ হাসিনাকে দায়ী করলেন স্বজনরা
আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহে পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস ও শেখ সেলিমসহ শেখ পরিবার জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন নিহত সেনা সদস্যদের পরিবার ও স্বজনরা। বিদ্রোহকে কথিত উল্লেখ করে পুরো ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আখ্যা দিয়েছেন তৎকালীন বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) নিহত মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ।

গতকাল শনিবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসার ও ১৭ সিভিলিয়ান হত্যার বিচার চাই’ শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন দাবি করেন। রাকিন বলেন, ‘এক আওয়ামী লীগ নেতা ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, ওনার নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমার বাবা-মাকে জবাই দিয়েছেন। যদি বেশি বাড়াবাড়ি করি তাহলে বাবা-মার মতো আমাকেও জবাই দিয়ে দেবে।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই, যেখানে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) অন্য একটা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রাজধানীতে ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করে।’

রাকিন আহমেদ বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার বা তদন্ত আমরা মানি না। কারণ প্রধান যে হত্যাকারী, নির্দেশদাতা তিনি তখন ক্ষমতায় ছিলেন। খুনি কি তার নিজের বিচার করবেন? মুখ বন্ধ করে দেখতে হয়েছে, কেমন করে তদন্ত, ট্রায়াল প্রভাবিত করল, ডাল-ভাতের কথা বলল। নীরবতায় সহ্য করতে হয়েছে।’

রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) বিদ্রোহের সময় হত্যাকাণ্ডের মামলায় যেসব তদন্ত হয়েছে, সেসব তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন নিহত সেনা সদস্যদের স্বজনরা। এ ছাড়া ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তও দোষীদের বিচার করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

নিহত মেজর কাজী মোসাদ্দেক হোসেনের মেয়ে নাজিয়া বলেন, ‘আমাদের কষ্টের কথা যদি বলি, একই পরিস্থিতিতে এখনো যাচ্ছি। কষ্ট দূর হয়ে যায়নি। এর পেছনে অনেক ঘটনা ছিল। আমরা তো আমাদের স্বজনদের হারিয়ে ফেলেছি। মানুষ জানুক, এই হত্যাকাণ্ড কারা করেছে। কেন এত বছর পরও আমাদের মুভমেন্টে বাধা দেওয়া হয়।’

নিহত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এনায়েতুল হকের মেয়ে নাবিলা বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক চক্রের কাজ। আন্তর্জাতিক শক্তির দ্বারাই কাজটি করা হয়েছে। আপনারা বের করবেন আসল কারণ। এটা বিদ্রোহ নয়, এটা হত্যাকাণ্ড, পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। আমার বাবা মারা যাননি। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কিছু অপপ্রচারের জন্য আমরা হেনস্তা হয়েছি। এত দিন ভয়ে কথা বলিনি, আজ নির্ভয়ে কথা বলছি।’

দ্য ডেইলি স্টার:

আমার ছেলেটাকে পুলিশ সবার সামনে গুলি করে মেরে ফেলেছে’

জলকামানের পানিতে পা পিছলে রাস্তায় পড়ে যায় শুভ। রাস্তা থেকে উঠার সময় তার সারা শরীরে পুলিশের ছররা গুলি লাগে।

পুরোনো প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে বিক্রি করে দিন কাটত বগুড়ার হাড্ডিপট্টি এলাকার ১৬ বছরের কিশোর মো. সিয়াম শুভর। বাবা-মার খোঁজ জানা ছিল না, ৭ বছর বয়সে স্থানীয় আশিক ও শাপলা খাতুন দম্পতি তাকে দত্তক নিয়েছিলেন। তাদের কাছেই বড় হচ্ছিল সে।

গত ১৯ জুলাই বিকেল ৩টার পর কাজ শেষে নানার কাছ থেকে ১০০ টাকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। আর ঘরে ফেরেনি সে।

শুভর মা শাপলা খাতুন ও প্রতক্ষ্যদর্শী সাকিব জানান, ১৯ জুলাই বিকেল ৪টার সময় বগুড়া সেউজগাড়ী আমতলা মোড় আন্দোলনকারীরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। বিকেল ৫টার পরে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে পুলিশ সেখানে জলকামান দিয়ে গরম পানি ছিটিয়ে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

এরপর পুলিশ এপিসি থেকে নেমে শটগান থেকে অসংখ্য গুলি করে বলে জানান সেখানে উপস্থিত থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বগুড়ার সমন্বয়ক সৈকত আলী।

এই সময় দৌড়ে সেখান থেকে সরে যাওয়ার সময় জলকামানের পানিতে পা পিছলে রাস্তায় পড়ে যায় শুভ। রাস্তা থেকে উঠার সময় তার সারা শরীরে পুলিশের ছররা গুলি লাগে বলে জানায় তার সঙ্গে আন্দোলনে থাকা একাধিক শিক্ষার্থী। পরে তাকে কাছেই অবস্থিত বগুড়া নার্সিং হোমে নেওয়া হলে কর্তব্যরত ডাক্তার মো. মশিহুর তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওইদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ডাক্তার মশিহুরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছররা গুলি সিয়ামের দুই চোখ, মাথা এবং সারা শরীরে ঢুকেছে। সেইসঙ্গে সে পড়ে গিয়ে মাথায় তীব্র আঘাত পেয়েছে।

এরপরে আন্দোলনকারীদের বেশ কয়েকজন মিছিল করতে করতে শুভর মরদেহ বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শজিমেক) নিয়ে যায়। সেখানেও ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এই সময় জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার মো. সালেহর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ছররা গুলি শুভর সারা শরীরে ঢুকে যাওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।

রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তখন নিহত শুভর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না। পরে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সে হাড্ডিপট্টি এলাকার বাসচালক আশিক ও শাপলা খাতুনের দত্তক ছেলে।

শুভর বাবা আশিক জানান, ৭ বছর বয়স থেকে শুভ তাদের সঙ্গে।

মা শাপলা খাতুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি নিজেও আগে বোতল কুড়াতাম। ৯ বছর আগে একদিন বগুড়া রেলস্টেশন বোতল কুড়ানোর সময় শুভকে পাই। সে আমাকে মা বলে জড়িয়ে ধরে। সেই থেকে শুভ আমাদের সঙ্গে থাকত আর বোতল কুড়ানোর কাজ করত।’

‘আমার আরও চার সন্তান রয়েছে। শুভও আরেক সন্তান, তাকে আমি নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসতাম। আমার ছেলেটাকে পুলিশ সবার সামনে গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই’, বলেন তিনি।

হাড্ডিপট্টি বাসস্ট্যান্ডের নৈশ্য প্রহরী ফারুক হোসেন বলেন, ‘শনিবার শুভর মরদেহ নিয়ে এসে যখন আমরা এখানে গোসল করিয়ে দিচ্ছিলাম, সেই দিনও পুলিশ এসে এখানে গুলি করে যায়। মরদেহ রেখে কিছু সময়ের জন্য আমাদের দৌড়াতে হয়েছিল।’