ঢাকা ০১:০৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo গুজরাটে আতশবাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, ১৮ জনের মৃত্যু Logo চীনে সেভেন সিস্টার্স নিয়ে যা বলেছিলেন ড. ইউনূস? যেজন্য হতভম্ব ভারত Logo জামায়াতের ঈদ উপলক্ষে প্রীতি ভোজের ঘটনায় বিএনপি – যুবলীগের হামলা Logo শহীদ নাসিব হাসান রিহান-এর পরিবারের সদস্যদের সাথে আমীরে জামায়াতের ঈদ কুশল বিনিময় Logo ড. ইউনূসকে শেহবাজের ফোন, পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ Logo মিয়ানমারে ভূমিকম্প: ২ হাজার ছাড়াল নিহতের সংখ্যা Logo গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: খালেদা জিয়া Logo ইসরায়েলি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোট্রিচের পদত্যাগ Logo ঈদের নামাজ শেষে ‘জয় বাংলা’স্লোগান, বিএনপির সাথে সংঘর্ষ গুলিবিদ্ধ ১ Logo আইপিএলসহ টিভিতে যা দেকবেন আজ

শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লবিং করেছে ভারত

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনে মার্কিন ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে থাকায়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ ইস্যুতে শিথিলতা প্রদর্শন করার জন্য চাপ দিয়েছিল ভারত।

ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছেন, একের পর এক বৈঠকে ভারতীয় কর্মকর্তারা দাবি করেছে যে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেন তাদের গণতন্ত্রপন্থী বক্তব্য কমিয়ে দেয়। যদি একটি উন্মুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে বিরোধীরা ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশ ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হবে। এটি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেবে বলে দাবি করেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।

ভারতীয় সরকারের একজন উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আপনারা বিষয়টি গণতন্ত্রের দিক থেকে দেখবেন। তবে আমাদের জন্য এসব ইস্যু অনেক অনেক বেশি গুরুতর এবং অস্তিত্বের।

তিনি বলেছেন, আমেরিকানদের সঙ্গে আমাদের অনেক আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমরা বলেছিলাম, এটি আমাদের জন্য একটি মূল উদ্বেগের বিষয়। আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের কৌশলগত ঐক্যমত্য না থাকলে আপনি আমাদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে নিতে পারবেন না।

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ নিয়ে সুর নরম করে বাইডেন প্রশাসন। এমনকি হাসিনা সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি স্থগিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের অনেকে হতাশ হন। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা হিসাব-নিকাষ করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে ভারতীয় চাপের খুব একটা সম্পর্ক নেই।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মার্কিন কূটনীতিকরা এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের এবং সমালোচকদের গ্রেফতার করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সমালোচনা করেছিলেন। বাইডেন প্রশাসন বিচারবহির্ভূত অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার হুমকি দেয়।

গত ৫ আগস্ট যখন বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীর কারফিউ অমান্য করে শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনের দিকে এগিয়ে যায়, তখন শেখ হাসিনা ভারতে পালাতে বাধ্য হন। এরপর ভারত ও ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশ পরিস্থিতি সঠিকভাবে মোকাবিলা করেছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মার্কিন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে সবসময় ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। অনেক জায়গায় পরিস্থিতি জটিল এবং অংশীদারদের সঙ্গে এমনভাবে কাজ করতে হয়, যা সব সময় মার্কিন জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে মেলে না।’

জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে তা নিয়ে মার্কিন সরকারের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। তৎকালীন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেন। তবে কিছু মার্কিন কর্মকর্তা মনে করতেন, শেখ হাসিনাকে বিচ্ছিন্ন করা খুব একটা লাভজনক হবে না।

ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নেতিবাচক দিকও বিবেচনা করা হয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং নভেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে এই বিষয়টি আলোচনা হয়। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও ওয়াশিংটন সফরকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মার্কিন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, সবসময় উভয় দেশের মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বাস্তবতাও বুঝি। বাংলাদেশে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং সেখানে অনেক স্বার্থ জড়িত।’

ভারতের জন্য শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক কঠিন সমস্যা তৈরি করেছে। যদিও শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী ও অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, ভারতের সমর্থন অব্যাহত থাকায় দেশটি বেকায়দায় পড়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট উল্লেখ করেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেশকে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর হস্তক্ষেপকারী ও কট্টর জাতীয়তাবাদী দেশ হিসেবে দেখা হয়।

জানুয়ারিতে শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠান বা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করেন এবং একতরফাভাবে নির্বাচন আয়োজন করেন। নির্বাচনে তার দল বর ব্যাধানে জয় পাওয়ার দাবি করে। ভারতের কর্মকর্তারা এই নির্বাচনের ফলাফল সমর্থন দেন, যা বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন বাড়িয়ে দেয় এবং মালদ্বীপ ও শ্রীলংকার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের প্রভাবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি চিফ অব মিশন জন ড্যানিলোভিজ মন্তব্য করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে গিয়ে এই অঞ্চলে নিজেদের স্বার্থের প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা করা ভুল ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনকে নমনীয়তা দেখাতে হবে এবং স্বীকার করতে হবে, তারা বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার পাশে না থেকে ভুল করেছে।’

মার্কিন কর্মকর্তারা ভারতের প্রভাবের সমালোচনা করেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সহিংসতা হ্রাস ও অবাধ নির্বাচনের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিতর্কিত নির্বাচনের পর বাংলাদেশের ওপর আরও বিধিনিষেধ না আরোপ করায় কেউ কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছিলেন।

বিক্ষোভের ফলে অনেক প্রাণহানির পর, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। ভারতীয় কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে কৌশল পরিবর্তন করে জানান যে, বাংলাদেশের যে কোনো নতুন সরকারের সাথে কাজ করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ড. ইউনূসকে সমর্থন দিয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হওয়ার পর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে অভিনন্দন জানান। ইউনূস আগে শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন জানানোয় ভারতের সমালোচনা করেছিলেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

সূত্র:ওয়াশিংটন পোস্ট

জনপ্রিয় সংবাদ

গুজরাটে আতশবাজি কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ, ১৮ জনের মৃত্যু

শেখ হাসিনার ওপর চাপ প্রয়োগ বন্ধ করতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে লবিং করেছে ভারত

আপডেট সময় ০৯:৫৭:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৪

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের একটি প্রতিবেদনে মার্কিন ও ভারতীয় কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়তে থাকায়, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ ইস্যুতে শিথিলতা প্রদর্শন করার জন্য চাপ দিয়েছিল ভারত।

ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছেন, একের পর এক বৈঠকে ভারতীয় কর্মকর্তারা দাবি করেছে যে বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেন তাদের গণতন্ত্রপন্থী বক্তব্য কমিয়ে দেয়। যদি একটি উন্মুক্ত নির্বাচনের মাধ্যমে বিরোধীরা ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশ ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলোর প্রজননক্ষেত্রে পরিণত হবে। এটি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেবে বলে দাবি করেন ভারতীয় কর্মকর্তারা।

ভারতীয় সরকারের একজন উপদেষ্টা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আপনারা বিষয়টি গণতন্ত্রের দিক থেকে দেখবেন। তবে আমাদের জন্য এসব ইস্যু অনেক অনেক বেশি গুরুতর এবং অস্তিত্বের।

তিনি বলেছেন, আমেরিকানদের সঙ্গে আমাদের অনেক আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমরা বলেছিলাম, এটি আমাদের জন্য একটি মূল উদ্বেগের বিষয়। আমাদের মধ্যে কোনো ধরনের কৌশলগত ঐক্যমত্য না থাকলে আপনি আমাদের কৌশলগত অংশীদার হিসেবে নিতে পারবেন না।

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ নিয়ে সুর নরম করে বাইডেন প্রশাসন। এমনকি হাসিনা সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞার হুমকি স্থগিত করে। যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের অনেকে হতাশ হন। তবে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, তারা হিসাব-নিকাষ করেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতে ভারতীয় চাপের খুব একটা সম্পর্ক নেই।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মার্কিন কূটনীতিকরা এ বছরের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের এবং সমালোচকদের গ্রেফতার করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনার সমালোচনা করেছিলেন। বাইডেন প্রশাসন বিচারবহির্ভূত অপহরণ ও হত্যার অভিযোগে হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পুলিশের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং গণতন্ত্রকে ক্ষুণ্ন করা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার হুমকি দেয়।

গত ৫ আগস্ট যখন বিক্ষোভকারীরা সেনাবাহিনীর কারফিউ অমান্য করে শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনের দিকে এগিয়ে যায়, তখন শেখ হাসিনা ভারতে পালাতে বাধ্য হন। এরপর ভারত ও ওয়াশিংটনের নীতিনির্ধারকরা বাংলাদেশ পরিস্থিতি সঠিকভাবে মোকাবিলা করেছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

মার্কিন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে সবসময় ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়। অনেক জায়গায় পরিস্থিতি জটিল এবং অংশীদারদের সঙ্গে এমনভাবে কাজ করতে হয়, যা সব সময় মার্কিন জনগণের প্রত্যাশার সঙ্গে মেলে না।’

জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে তা নিয়ে মার্কিন সরকারের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। তৎকালীন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার পক্ষে যুক্তি দেন। তবে কিছু মার্কিন কর্মকর্তা মনে করতেন, শেখ হাসিনাকে বিচ্ছিন্ন করা খুব একটা লাভজনক হবে না।

ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নেতিবাচক দিকও বিবেচনা করা হয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং নভেম্বরে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেন, যেখানে এই বিষয়টি আলোচনা হয়। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালও ওয়াশিংটন সফরকালে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মার্কিন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী, সবসময় উভয় দেশের মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বাস্তবতাও বুঝি। বাংলাদেশে পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং সেখানে অনেক স্বার্থ জড়িত।’

ভারতের জন্য শেখ হাসিনার দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক কঠিন সমস্যা তৈরি করেছে। যদিও শেখ হাসিনা স্বৈরাচারী ও অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল, ভারতের সমর্থন অব্যাহত থাকায় দেশটি বেকায়দায় পড়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট উল্লেখ করেছে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দেশকে দক্ষিণ এশিয়ার ছোট প্রতিবেশী দেশগুলোর ওপর হস্তক্ষেপকারী ও কট্টর জাতীয়তাবাদী দেশ হিসেবে দেখা হয়।

জানুয়ারিতে শেখ হাসিনা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কারাগারে পাঠান বা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য করেন এবং একতরফাভাবে নির্বাচন আয়োজন করেন। নির্বাচনে তার দল বর ব্যাধানে জয় পাওয়ার দাবি করে। ভারতের কর্মকর্তারা এই নির্বাচনের ফলাফল সমর্থন দেন, যা বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলন বাড়িয়ে দেয় এবং মালদ্বীপ ও শ্রীলংকার মতো প্রতিবেশী দেশগুলোতে ভারতের প্রভাবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি করে।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের ডেপুটি চিফ অব মিশন জন ড্যানিলোভিজ মন্তব্য করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে গিয়ে এই অঞ্চলে নিজেদের স্বার্থের প্রতি মনোযোগ কমিয়ে দিয়েছে। তবে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা করা ভুল ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘নয়াদিল্লি ও ওয়াশিংটনকে নমনীয়তা দেখাতে হবে এবং স্বীকার করতে হবে, তারা বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার পাশে না থেকে ভুল করেছে।’

মার্কিন কর্মকর্তারা ভারতের প্রভাবের সমালোচনা করেন। পররাষ্ট্র দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন, অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সহিংসতা হ্রাস ও অবাধ নির্বাচনের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। বিতর্কিত নির্বাচনের পর বাংলাদেশের ওপর আরও বিধিনিষেধ না আরোপ করায় কেউ কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছিলেন।

বিক্ষোভের ফলে অনেক প্রাণহানির পর, শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। ভারতীয় কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে কৌশল পরিবর্তন করে জানান যে, বাংলাদেশের যে কোনো নতুন সরকারের সাথে কাজ করবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও ড. ইউনূসকে সমর্থন দিয়েছে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হওয়ার পর, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাকে অভিনন্দন জানান। ইউনূস আগে শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন জানানোয় ভারতের সমালোচনা করেছিলেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও ইউনূসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।

সূত্র:ওয়াশিংটন পোস্ট