আজকের প্রত্রিকাগুলোর সংবাদ
কালের কন্ঠ:
হেফাজতের সমাবেশ: তাণ্ডবের মাস্টারমাইন্ড বেনজীর ও জিয়াউল
আবারও আলোচনায় ‘অপারেশন সিকিউর শাপলা’
► ১৩ বছর পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি
► যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুলসংখ্যক হতাহতের অভিযোগ
কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ২০১৩ সালের ৫ মের মহাসমাবেশে যৌথ বাহিনীর রাতের অভিযান ‘অপারেশন সিকিউর শাপলা’ আবারও আলোচনায় উঠে এসেছে। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর মুখ খুলতে শুরু করেছেন হেফাজত নেতারা। তাঁরা বলছেন, ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান কর্মসূচি পালনের সময় রাতের অন্ধকারে কার্যত গণহত্যা চালানো হয়েছিল। ওই ঘটনার প্রধান দুই কুশীলব ছিলেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান।
এ বিষয়ে সংগঠনের পাশাপাশি নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকেও একাধিক মামলার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।
বেনজীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির খবর প্রকাশের পর দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানের মধ্যেই তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। অন্যদিকে সরকার পতনের পর বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হন জিয়া।
তিনি বর্তমানে রিমান্ডে আছেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সেই রাতে শাপলা চত্বরে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তাতে যৌথভাবে কুশীলব ছিলেন বেনজীর ও জিয়া। মতিঝিলকে কেন্দ্র করে চারপাশের এলাকা পরিণত হয় রণক্ষেত্রে। ভোর ৫টার দিকে পুরো এলাকা খালি হয়ে যায়।
তার আগে সেখানে সৃষ্ট গণহত্যার ঘটনায় নিহতদের মরদেহ অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগও তুলেছিলেন হেফাজত নেতারা। সে সময় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার ছিলেন বেনজীর আহমেদ।
২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে সারা দেশে সহিংসতায় ২৮ জন নিহতের কথা বলেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তবে হেফাজতের পক্ষ থেকে পুলিশের এই দাবি বরাবরই নাকচ করা হয়। তাদের দাবি, ওই রাতে যৌথ বাহিনীর অভিযানে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন।
প্রথম আলো:
আহতদের চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকছেই
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থান
অনেকের পরিবার বলছে, অনেক ক্ষেত্রে বিনা মূল্যের ওষুধের বন্দোবস্ত হচ্ছে না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও ব্যয় হচ্ছে।
রাজধানীর মধ্য বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা জাকির সিকদার গত ১৮ জুলাই রাতে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন। ২১ জুলাই অস্ত্রোপচারে তাঁর বাঁ পা কেটে ফেলা হয়। ছেলের শুশ্রূষা করছেন মা।
● আহত ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেবে সরকার। ● চিকিৎসায় বিশেষ ইউনিট করে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত। ● এই ইউনিটের জন্য পৃথক চিকিৎসক ও নার্স থাকবে। ● বেসরকারি হাসপাতালকেও কম মূল্যে অথবা বিনা মূল্যে আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেওয়ার আহ্বান।
আহত রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। বিনা মূল্যের চিকিৎসা হলে তা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যেই হতে হবে। ওই রোগীর জীবনে যতবার প্রয়োজন হয়, ততবারই তাঁকে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে যথাযথ চিকিৎসা দিতে হবে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ এবং পরবর্তীকালে সরকার পতনের আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় আহত ব্যক্তিদের বিনা মূল্যে চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এখনো যাঁরা হাসপাতালে আছেন, তাঁদের জন্য বিশেষ ইউনিট তৈরি করে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল শনিবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি সভায় এই বিশেষ ইউনিট করার সিদ্ধান্ত হয়।
যদিও আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার ব্যয় নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অনেকেই। তাঁদের পরিবারগুলো বলছে, অনেক ক্ষেত্রে বিনা মূল্যের ওষুধের বন্দোবস্ত হচ্ছে না। বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্যও ব্যয় হচ্ছে। একাধিক চিকিৎসক জানিয়েছেন, অনেকেই গুরুতর আহত। তাঁদের দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা দরকার।
সংঘাত-সহিংসতায় কত মানুষ আহত হয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের ধারণা, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে পাঁচ শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত শুক্রবার পর্যন্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি হাসপাতালে ৪৩৯ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁদের ১০ জনের পা কাটা গেছে, ১ জনের এক হাত কাটা গেছে। অনেকের হাতে, পায়ে বা শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর ক্ষত আছে। ৩২ জনের চোখে আছে ছররা গুলির আঘাত।
গত ১৮ জুলাই রাত নয়টার দিকে মেরুল বাড্ডা এলাকায় ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় গুলিবিদ্ধ হন জাকির সিকদার (৩৩)। তিনি গুলশানের একটি পোশাকের দোকানে চাকরি করেন। তিনি জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন।
গত বৃহস্পতিবার সকালে পঙ্গু হাসপাতালে কথা হয় জাকির সিকদারের মা ও তাঁর ছোট ভাইয়ের সঙ্গে। তাঁরা জানান, ২১ জুলাই অস্ত্রোপচারে জাকিরের বাঁ হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলা হয়। এরপর আরও তিনবার অস্ত্রোপচার হয়েছে। তাঁরা ঠিক জানেন না, কবে হাসপাতাল থেকে জাকিরকে ছাড়া হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে সংঘর্ষ-সহিংসতায় আহত ১৪৪ জন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
নয়াদিগন্ত:
আন্দোলনে হতাহত সম্পর্কে জাতিসঙ্ঘের তথ্য
প্রথমে কোটা এবং তারপর সরকার পতনের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত জুলাই ও আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডকে ‘জুলাই গণহত্যা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। এই সময়ে অন্তত ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনে এক হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে বলে ভারতীয় গণমাধ্যমে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেছেন সদ্য সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময়ে নিহতদের সংখ্যা নিয়ে বাংলাদেশের একেকটি গণমাধ্যমে একেক রকম সংখ্যা তুলে ধরা হচ্ছে।
মোটা দাগে, আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা নিয়ে নানা আলাপ হলেও এর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, নিহতদের সংখ্যা জানার জন্য তালিকা তৈরির কোনো বিকল্প নেই। একইসাথে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্যও নিহতদের তালিকা করা প্রয়োজন।
সাম্প্রতিক বিক্ষোভ ও অস্থিরতা নিয়ে গত শুক্রবার জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দফতর থেকে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
১৬ জুলাই থেকে ১১ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে কমপক্ষে ৬৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, এদের মধ্যে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪০০ কাছাকাছি এবং বাকি প্রায় ২৫০ জন পরের দুই দিনে প্রাণ হারিয়েছেন।
আর জুন থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে ৩২ শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
একই দিন ভারতের অনলাইনভিত্তিক গণমাধ্যম নর্থইস্ট নিউজকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এম সাখাওয়াত হোসেন জানান, এই সময়ে নিহত হয়েছে সহস্রাধিক মানুষ। তিনি বলেন, ঢাকার কিছু জায়গায় এবং অন্যান্য জেলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুলিশ বাহিনী মানুষকে প্রাণঘাতী অস্ত্র দিয়ে আঘাত ও গুলি করে, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন ছাত্র ও তরুণ।
যা বলছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন : নির্দিষ্ট কোনো তালিকা করা না হলেও সংঘাতে মৃতের সংখ্যা অন্তত দেড় হাজার হতে পারে বলে মনে করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা।
প্রথমে তো ভেবেছিলাম অন্তত ৫০০ হবে। কিন্তু হাসপাতালের ডাটা (উপাত্ত), মানুষের মুখের কথা শুনে এখন মনে হচ্ছে এটা কোনোভাবেই এক থেকে দেড় হাজারের নিচে হবে না। বিশেষ করে যেদিন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করল, সেদিনও ২০০-২৫০ ওপর লাশ পড়েছে। এর আগে, কোটা আন্দোলনের সময় ১৬ থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ২৬৬ জনের মৃত্যুর তথ্য প্রকাশ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর আর নিহতদের নিয়ে নতুন তালিকা করার কোনো কাজ শুরু হয়নি বলে জানান ফাতেমা।
এই সমন্বয়ক বলছেন, নিহতদের অনেকের মৃত্যু হার্ট এটাক, স্ট্রোক, সড়ক দুর্ঘটনা বলে নথিভুক্ত করা হয়েছে। আবার অনেকের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে কিংবা বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়েছে।
এদিকে হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন ১৯৭৩ অনুযায়ী বিচার করা হবে বলে গণমাধ্যমে জানান আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।
তবে এই আন্দোলনে কত মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে, সে বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে এখনো কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি।
প্রকৃত সংখ্যা কি জানা সম্ভব?
আন্দোলন চলাকালীন নিহত অনেকের তথ্যই হাসপাতালে নথিভুক্ত করা হয়নি। আবার ময়নাতদন্ত ছাড়াই অনেকের লাশ নিয়ে গেছেন স্বজনরা। থানাগুলোতেও নেই প্রকৃত মৃতের সংখ্যা। এমন প্রেক্ষাপটে কেবল নথিবদ্ধ তথ্যগুলোই প্রকাশিত হচ্ছে। সেক্ষেত্রে মৃতের প্রকৃত সংখ্যা পাওয়া যাওয়ার সুযোগ কম বলেই মনে করছেন মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন।
প্রথম দিকে পাখির মতো মানুষ মেরেছে, হাসিনা সরকারের বাহিনী ও আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগ।
এছাড়াও ঢাকায় ভাসমান জনগোষ্ঠী আছে। তাদের শনাক্ত করতে সময় লাগবে। ফলে প্রকাশিত কোনো সংখ্যাই হয়তো বা সঠিক না হতে পারে বলে মনে করেন এই মানবাধিকারকর্মী।
যুগান্তর:
আয়নাঘর ও বিডিআর বিদ্রোহে জড়িতদের বিচার দাবি
রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর হত্যার ঘটনায় পুনঃতদন্ত ও নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা এবং আয়নাঘর পরিচালনার সঙ্গে যুক্তদের বিচার দাবি করেছেন সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা। একই সঙ্গে তারা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সশস্ত্র বাহিনীর যেসব সদস্য বৈষম্য, নির্যাতন ও গুমের শিকার হয়েছেন তাদের প্রতিকার দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (রাওয়া) হেলমেট হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব দাবি জানান। ‘অবসরপ্রাপ্ত সামরিক বাহিনীর অফিসারগণ’ ব্যানারে ‘৫ আগস্টের সফল বিপ্লব : আমাদের ভাবনা ও আমাদের প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় বক্তারা ভারতসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে স্বার্থবিরোধী চুক্তি বাতিল, সংবিধান সংশোধন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল, জাতীয় সংগীত পরিবর্তন ও র্যাব বিলুপ্ত করার দাবি জানান। তারা সশস্ত্র বাহিনীর ভেতরে শৃঙ্খলা ভঙ্গের ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিককে মাস্টারমাইন্ড উল্লেখ করে তার বিচার দাবি করেন। সেনাবাহিনীর সুনাম রক্ষায় তাদের হেফাজতে থাকা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ ও তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করারও দাবি জানান। বসুন্ধরা গ্রুপকে মাফিয়াতন্ত্র উল্লেখ করে এর কার্যক্রম রাষ্ট্রের আওতায় নেওয়ারও দাবি উঠে।
সাম্প্রতিক গণঅভ্যুত্থান নিয়ে বক্তারা বলেন, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্বাধীনতা লাভ করেছে। এ আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে বেসামরিক সর্বোচ্চ খেতাবে ভূষিত কতে হবে। ছাত্র-জনতার আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে পদক্ষেপ নেওয়ায় সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানকে ধন্যবাদ দেন সাবেক কর্মকর্তারা।
মুহাম্মদ লুৎফুল হকের উপস্থাপনায় এ মতবিনিময় সভায় গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। তাদের রুহের মাগফিরাত ও আহতদের সুস্থতার জন্য দোয়া করা হয়। এতে সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কয়েকশ কর্মকর্তা অংশ নেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল (অব.) মানিষ দেওয়ান বলেন, সদ্য বিদায়ি স্বৈরাচারী শাসক শেখ হাসিনা কুমতলব ও দুরভিসন্ধি নিয়ে এ জাতিকে দুভাগে বিভক্ত করে ২০৪১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ শাসন করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি স্বাধীনতার চেতনার সপক্ষের শক্তি ও বিপক্ষের শক্তি আখ্যায়িত করে জাতিকে বিভক্ত করেছেন। তার অনুসারীদের যারা তার গুণগান গাইবে, তার সরকারের তল্পিবাহক, যারা তার পদলেহন করবে তারাই স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি। আর যারা তার বিরোধিতা করেছেন তাদেরকে পাকিস্তানের দালাল আখ্যায়িত করেছেন। তবে দুঃখজনক হলো তিনি যাদের রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছিলেন তাদেরই আন্দোলনের ফলে তিনি শুধু ক্ষমতাচ্যুত হননি, দেশত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা জীবিত আছেন। কিন্তু এ দেশের মানুষের কাছে আজ তিনি ক্লিনিক্যালি ডেড।
সভায় মানিষ দেওয়ান বলেন, শেখ হাসিনা দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে নির্বাচন করে নিজেকে ক্ষমতায় বসিয়েছেন। কীভাবে নির্বাচন ও সংসদ গঠিত হয়েছে তা সবাই জানেন। আমরা প্রস্তাব রাখতে চাই, সংবিধানে আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও গণভোটের বিধান সংযোজিত হোক।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) ও চুক্তি সই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব আবার যাচাই করতে হবে। যেসব চুক্তি আমাদের দেশ, সার্বভৌমত্ব ও জনগণের বিরোধী সেগুলো বাতিল করতে হবে। বিশেষ করে ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে সেগুলো সব বাতিল করতে হবে। সে দেশের সঙ্গে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বাতিল করতে হবে।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা প্রসঙ্গে মানিষ দেওয়ান বলেন, ২০০৯ সালে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অনেক সংস্থা তদন্ত করেছে। কোনো তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। আমরা চাই, ওই বিষয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হোক। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ চুরি হয়েছে। ওই ঘটনায় শেখ হাসিনা কোনো শব্দ করেননি। ওই টাকা ফেরত আনার ঘটনা মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হয়। ঘটনার পরম্পরায় জানা যায়, ওই টাকা পাচারের সঙ্গে স্বয়ং শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় জড়িত। এ ঘটনারও শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে হবে।
বনিক বার্তা:
জনবিমুখ অর্থনৈতিক পদক্ষেপের কী হবে?
বিগত আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১৮৮ শতাংশ। ওয়াসার পানির দাম বেড়েছে ২০০ শতাংশের কাছাকাছি। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১৩ বছরে সর্বোচ্চ। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে আনুপাতিক হারে বরাদ্দ কমেছে। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয়ের বড় অংশই যায় পেনশনে। আবার সামাজিক নিরাপত্তাভোগীদের বড় অংশই ভুয়া ও অস্তিত্ববিহীন। সড়ক ও রেলসহ বড় বড় অবকাঠামো খাতে যে ব্যয় হয়েছে, তা-ও কিলোমিটারপ্রতি ব্যয়ে বিশ্বে অন্যতম সর্বোচ্চ। ১৫ বছরের শাসনামলে সরকারের ঋণ বেড়েছে ১৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। ফলে বাজেটের বড় অংশই ব্যয় হচ্ছে ঋণের দায় পরিশোধে। এভাবেই চলেছে সরকারের বড় আকারের বাজেট, যার একটি বড় অংশই চুরি ও দুর্নীতির মাধ্যমে চলে গেছে সমাজের একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠীর কাছে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটেছে। দায়িত্ব নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়েছেন। তবে এখনো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের কর, শুল্ক ও ব্যয় কাঠামো একই আছে। এখনো আছে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ। নতুন অন্তর্বর্তী সরকার জনবিমুখ এ বাজেটের সংস্কার ও পরিবর্তন করবে বলে অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ। রাষ্ট্রপতির অনুমোদন সাপেক্ষে চলতি অর্থবছরের বাকি মেয়াদের জন্য একটি জনমুখী বাজেট ঘোষণারও সুযোগ রয়েছে। এ বাজেটে কী কী জনমুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়, তার অপেক্ষায় মানুষ। নতুন পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতি কমবে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে সরকারের ব্যয় বাড়বে। জনগণের ওপর পরোক্ষ করের বোঝা কমবে। বিদ্যুৎ-পানিসহ যাতায়াত ব্যবস্থা আরো সাশ্রয়ী হবে—এমন ধরনের পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
গত দেড় দশকে ঘোষিত বাজেটে ঋণনির্ভরতা দেখা গেছে বেশি। যদিও কোনো অর্থবছরেই বাজেটের পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, আওয়ামী লীগের ২০০৮-০৯ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত বাজেট বাস্তবায়নের গড় হার ছিল ৮৬ শতাংশ। অর্থাৎ, অর্থবছরের শুরুতে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছিল, বছর শেষে এর ১৪-১৫ শতাংশ অবাস্তবায়িত থেকে গেছে। পরে এ অবাস্তবায়িত বাজেটের অংশ আরো বড় হয়েছে।
মানবজমিন:
বিপ্লব কেন ব্যর্থ হয়?
বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লব নতুন কোনো ঘটনা নয়। দেশে দেশে বারবার এমনটাই ঘটেছে। কোথাও সফল, কোথাও বা ব্যর্থ। বাংলাদেশের বিপ্লবের সঙ্গে বিশ্বের অন্যান্য বিপ্লবের সময়গুলোর অনেকখানি মিল রয়েছে। ল্যাতিন আমেরিকা থেকে আরব বিশ্ব ও পূর্ব ইউরোপের বিপ্লব পর্যালোচনা করলে এমনটাই দেখা যায়। বিপ্লবের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। বিপ্লব পরবর্তী মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড আশাবাদ তৈরি হয়। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যেও এমনটা দেখা যায়। কিন্তু ইতিহাস দেখায় যে, এসব প্রত্যাশা কখনো বাস্তবসম্মত হয় না। পরিবর্তন আসতে সময় লাগে।
কিন্তু অল্পতেই মানুষ বিগড়ে যায়। আরব বিশ্বের উদাহরণ তাই। তিউনিশিয়া ও মিশরের শাসকদের পতন হলেও প্রচণ্ড রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দেয়। তিউনিশিয়ার বিপ্লব একটি দুর্বল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে। যা এখনো অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মিশরে অল্পদিন পরেই সেনাশাসন ফিরে আসে। ভেঙে খান খান হয়ে যায় বিপ্লবের আশাগুলো। বিপ্লবের সাফল্য একটি কঠিন পথ। বাংলাদেশেও একই ধরনের সংকট সৃষ্টি হতে চলেছে। স্থিতিশীল শাসন না হলে মানুষ নানাভাবে অঙ্ক মেলাতে শুরু করবে। বিপ্লব সাধারণত বিভিন্ন শ্রেণি-গোষ্ঠীর মিলন ঘটিয়ে থাকে। যারা পরিবর্তনের জন্য একতাবদ্ধ হয়। শক্তিশালী শাসকদের চ্যালেঞ্জ করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে। বিপ্লব ব্যর্থ করার অন্যতম হাতিয়ার হচ্ছে গুজব। ভুয়া ভিডিও ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি করে। যেমনটা বিরামহীনভাবে চলছে বাংলাদেশে। এক কোটি হিন্দু দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন এই গুজবের কোনো ভিত্তি নেই। এই কার্ড খেলার পেছনে একটি সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য রয়েছে। ভারতীয় গণমাধ্যম অনবরত মিথ্যা প্রচার করে বিভাজন উস্কে দিচ্ছে।
উত্তর আফ্রিকার তিউনিশিয়াই একমাত্র দেশ যার উত্তরণ ঘটেছে অনেক নাটকীয়তার মধ্যদিয়ে। ২০১০ সনের ১৭ই ডিসেম্বর বিদ্রোহের জন্ম। রাস্তার এক ফলবিক্রেতা যুবকের কাছে ঘুষ চেয়ে পুলিশ তাকে অতিষ্ঠ করে তোলে। সরকারি দুর্নীতি আর নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে নিজেকে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে বিক্ষোভের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। কারণ লোকেরা চাকরি, উন্নত জীবনযাত্রা এবং বৃহত্তর স্বাধীনতা দাবি করেছিল। এই ঘটনার পর তিউনিশিয়ার পুলিশ শতাধিক মানুষকে হত্যা করে। প্রেসিডেন্ট জাইন আল আবিদিন বেন আলীর সংস্কারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও অনাস্থা বাড়তেই থাকে। ২০১১ সনের ১৪ই জানুয়ারি বেন আলী তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সৌদি আরবে পালিয়ে যান। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও তিউনিশিয়ার সঙ্গে অনেকটা মিল রয়েছে। কোটা আন্দোলন থেকে শুরু। হাসিনার পদত্যাগে শেষ। গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। এখানেও পুলিশ শত শত মানুষকে হত্যা করে। দেশি-বিদেশি নানা শক্তি তাকে ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা করেও চরমভাবে ব্যর্থ হয়। নিজের দেশের লোকদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি করায় মানুষের মনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। যা কিনা এই অঞ্চলে নজিরবিহীন। সফল বিপ্লবের পর দুই সপ্তাহ কেটেছে অনেক ষড়যন্ত্র আর চ্যালেঞ্জের মধ্যদিয়ে।
দেশ রুপান্তর:
পিলখানা হত্যায় শেখ হাসিনাকে দায়ী করলেন স্বজনরা
আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহে পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস ও শেখ সেলিমসহ শেখ পরিবার জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন নিহত সেনা সদস্যদের পরিবার ও স্বজনরা। বিদ্রোহকে কথিত উল্লেখ করে পুরো ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড আখ্যা দিয়েছেন তৎকালীন বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) নিহত মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ।
গতকাল শনিবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসার ও ১৭ সিভিলিয়ান হত্যার বিচার চাই’ শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন দাবি করেন। রাকিন বলেন, ‘এক আওয়ামী লীগ নেতা ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, ওনার নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমার বাবা-মাকে জবাই দিয়েছেন। যদি বেশি বাড়াবাড়ি করি তাহলে বাবা-মার মতো আমাকেও জবাই দিয়ে দেবে।’
তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই, যেখানে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) অন্য একটা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রাজধানীতে ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করে।’
রাকিন আহমেদ বলেন, ‘গত ১৫ বছরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচার বা তদন্ত আমরা মানি না। কারণ প্রধান যে হত্যাকারী, নির্দেশদাতা তিনি তখন ক্ষমতায় ছিলেন। খুনি কি তার নিজের বিচার করবেন? মুখ বন্ধ করে দেখতে হয়েছে, কেমন করে তদন্ত, ট্রায়াল প্রভাবিত করল, ডাল-ভাতের কথা বলল। নীরবতায় সহ্য করতে হয়েছে।’
রাজধানীর পিলখানায় ২০০৯ সালে তৎকালীন বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) বিদ্রোহের সময় হত্যাকাণ্ডের মামলায় যেসব তদন্ত হয়েছে, সেসব তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছেন নিহত সেনা সদস্যদের স্বজনরা। এ ছাড়া ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণা, ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তও দোষীদের বিচার করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
নিহত মেজর কাজী মোসাদ্দেক হোসেনের মেয়ে নাজিয়া বলেন, ‘আমাদের কষ্টের কথা যদি বলি, একই পরিস্থিতিতে এখনো যাচ্ছি। কষ্ট দূর হয়ে যায়নি। এর পেছনে অনেক ঘটনা ছিল। আমরা তো আমাদের স্বজনদের হারিয়ে ফেলেছি। মানুষ জানুক, এই হত্যাকাণ্ড কারা করেছে। কেন এত বছর পরও আমাদের মুভমেন্টে বাধা দেওয়া হয়।’
নিহত লেফটেন্যান্ট কর্নেল এনায়েতুল হকের মেয়ে নাবিলা বলেন, ‘এটা আন্তর্জাতিক চক্রের কাজ। আন্তর্জাতিক শক্তির দ্বারাই কাজটি করা হয়েছে। আপনারা বের করবেন আসল কারণ। এটা বিদ্রোহ নয়, এটা হত্যাকাণ্ড, পরিষ্কার হত্যাকাণ্ড। আমার বাবা মারা যাননি। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কিছু অপপ্রচারের জন্য আমরা হেনস্তা হয়েছি। এত দিন ভয়ে কথা বলিনি, আজ নির্ভয়ে কথা বলছি।’
পিলখানায় তখন কী ঘটেছিল, সেসবের সত্য উদঘাটনের ক্ষেত্রে আগে যেসব তদন্ত হয়েছে, সেসব তদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ করাসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরেন বিডিআর বিদ্রোহে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান।
কালবেলা:
আতঙ্কে সেই পুলিশ কর্তারা
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে টানা ১৫ বছর পুলিশ বাহিনীতে মহাক্ষমতায় থাকা অতি-দলবাজ হিসেবে চিহ্নিত কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। চাকরি হারানো ছাড়াও মামলা, গ্রেপ্তার ও জনরোষের ভয়েও রয়েছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার সব পুলিশ সদস্যকে কাজে যোগ দিতে বলা হলেও চিহ্নিত বেশ কিছু কর্মকর্তাকে কর্মস্থলে দেখা যায়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন শেষ সময় পর্যন্ত এসব কর্মকর্তার কেউ কেউ অতি-উৎসাহী ভূমিকায় ছিলেন। ছাত্র-জনতাকে ঠেকাতে মাঠ পুলিশকে নানা নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। তবে ৫ আগস্ট দুপুরের পর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার খবরে তারা আত্মগোপনে চলে যান। এরপর থানাগুলো জনরোষে পড়লে থানা পুলিশ নিজেদের আত্মরক্ষায় কোথাও কোথাও ৫ আগস্ট রাতেও গুলি ছুড়তে থাকে।
পুলিশ সূত্র বলছে, দলবাজ এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মনিরুল ইসলাম ও ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমানকে চাকরিচ্যুত (বাধ্যতামূলক অবসর) করা হয়েছে। এ ছাড়া রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন ও রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামানকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আভাস মিলেছে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে পুলিশের সব সদস্যকে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হলেও ওই দিন পর্যন্ত অনেক কর্মকর্তা কর্মস্থলে যোগ দেননি বলে জানা গেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপারেশন্স) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ ও ডিবির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার কর্মস্থলে যোগ দেননি। পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি মর্যাদার কয়েক কর্মকর্তা কর্মস্থলে যোগ দেননি বলে জানা গেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র পুলিশ সুপার (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগর গতকাল শুক্রবার কালবেলাকে জানিয়েছেন, নির্দেশনা মেনে বেশির ভাগ পুলিশ সদস্যই কাজে যোগ দিয়েছেন। হয়তো অনেকে অসুস্থতাসহ নানা কারণে যোগ দিতে পারেননি।
দ্য ডেইলি স্টার:
নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনা, শামীম ওসমানসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা
কুশিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাশার অনিক বাদী হয়ে শনিবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে৷
নারায়ণগঞ্জের কুশিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাশার অনিক বাদী হয়ে শনিবার দিবাগত রাতে নারায়ণগঞ্জ মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
গত ৫ আগস্ট চাষাঢ়ায় এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে তার ছোট ভাই আবুল হাসান স্বজন নিহত হন।
এই মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন—নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, শ্যালক বিসিবি পরিচালক তানভীর আহমেদ টিটু, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ছোটভাই মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল৷
এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও অন্তত ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে৷
শনিবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টায় নারায়ণগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সাত্তার দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন৷
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টা আগে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়৷
সে সময় বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা গ্রামের আবুল হাসান স্বজন গুলিবিদ্ধ হন৷ পরদিন ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়৷
দৈনিক সংগ্রাম:
নতুন বিশ্ব গড়ার কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণদের রাখার আহ্বান ড. ইউনূসের
টেকসই ভবিষ্যত বিনির্মাণ ও নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে গ্লোবাল সাউথ এর কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে তরুণ ও ছাত্রদের রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, তরুণরা নতুন বিশ্ব গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি গ্লোবাল সাউথ নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্য বলেন, আমাদের কৌশলগুলোর কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই তরুণ এবং ছাত্রদের রাখতে হবে, যারা গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য অংশ। আমাদের জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশ তরুণ এবং তারা সমাজের সবচেয়ে শক্তিশালী অংশ।
গতকাল শনিবার ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত ‘থার্ড ভয়েস অব গ্লোবাল সাউথ সামিট-২০২৪’ এর ইনঅগারাল লিডার্স অধিবেশনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস একথা বলেন। তিনি ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি সম্মেলনে যুক্ত হন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসাবে শপথ নেয়ার পর এটিই ড. ইউনূসের প্রথম বহুপক্ষীয় কোন অনুষ্ঠানে যোগদান। আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা, এশিয়া ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দেশ গ্লোবাল সাউথের অন্তর্ভুক্ত। মূলত এসব দেশে মাথাপিছু আয় উন্নত দেশের তুলনায় কম।
প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশের তরুণদের প্রশংসা করে বলেন, ‘বীর ছাত্রদের নেতৃত্বে বাংলাদেশে গত ৫ আগস্ট দ্বিতীয় বিপ্লব সংগঠিত হয়েছে। আর জনগণের যোগদানের মাধ্যমে এই বিপ্লব গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়। যার ফলস্বরূপ গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ গ্রহণ করে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বৈপ্লবিক পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে তরুণরা আন্দোলন করেছে এবং তাদের আকাক্সক্ষা দেশবাসীকে প্রভাবিত করেছে। এখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে অর্থবহ সংস্কার জরুরি। যার মাধ্যমে ভঙ্গুর হয়ে পড়া রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানকে পুনরুদ্ধার করা হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং একটি পরিবেশ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যার মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশে নানা পরিবর্তন ঘটছে উল্লেখ করে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্লোবাল সাউথের নেতৃবৃন্দকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, ‘তরুণ ছাত্র এবং ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুরা ৪০০ বছরের শহরের দেয়ালে একটি নতুন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের ছবি আঁকছে। এর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বা নির্দেশনা তাঁদের নেই। কারোর পক্ষ থেকে বাজেট সমর্থনও নেই। এটি দ্বিতীয় বিপ্লবের আকাঙ্খার প্রতি তাদের আবেগ এবং অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণদের দেয়ালের লেখা পড়ে যেকেউ বুঝবেন, তারা কী স্বপ্ন দেখছে। তরুণদের স্বপ্ন পূরণ করাই আমাদের প্রধান কাজ বলে তিনি দৃঢ়তার সাথে উল্লেখ করেন