ঢাকা ১১:১৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo মৌলভীবাজারে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্রজনতার পাশে শিবির Logo ১০০০ ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিকে সেনাবাহিনী থেকে সরিয়ে দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র Logo কেরানীগঞ্জে আওয়ামী নেতা ইকবাল ও ছাত্রলীগ নেতা ইয়ামিন গ্রেপ্তার Logo পাকিস্তান ৩০০-৪০০ ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে: ভারত Logo কুষ্টিয়ায় আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ Logo ‘আমার বিরুদ্ধে কিছু মানুষ মিথ্যাচার ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য প্রচার করছে’ Logo গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় নোসক শিবিরের সহযোগিতা Logo এআই হ্যাকাথন ২০২৫: রুয়েটের ‘বুরাক’ টিমের চ্যাম্পিয়নশিপ অর্জন Logo আমিরাতে আইপিএলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান, পিএসএল পেল অগ্রাধিকার Logo আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ

নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা শিক্ষার্থীদের

  • ফখরুল ইসলাম
  • আপডেট সময় ০৭:৫৮:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৪
  • 97

নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা শিক্ষার্থীদের

দেশ সংস্কারের জন্য নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠনের কথা বিবেচনা করছেন বিক্ষোভকারী ছাত্রসংগঠকরা। চার সংগঠকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। শুক্রবারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পতনের পর দ্রুত নির্বাচনের জন্য দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের আহ্বানকেও প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তি এড়াতেই নতুন দল গঠনের আশা তাদের।

শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেল শান্তি বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস। এ সরকারের দুটি সিনিয়র উপদেষ্টা পদে রয়েছেন দুই ছাত্রনেতা। গত তিন দশকের বেশির ভাগ সময়েই বাংলাদেশ শাসন করেছে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দুজনই বয়সে বয়োবৃদ্ধ।

তাই নতুন দল গঠনের আশা তরুণদের। সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে লিঁয়াজোর একটি কমিটির প্রধান মাহফুজ আলম বলেন, ছাত্রনেতারা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছেন, যাতে বড় দুই দলের আধিপত্যের অবসান ঘটে।

২৬ বছর বয়সী আইনের এক ছাত্র রয়টার্সকে বলেন, এক মাসের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ছাত্রনেতারা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার আগে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে পরামর্শ করতে চান। যদিও এই আন্দোলনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা ছাত্রদের এর আগে বিশদভাবে জানানো হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ফটকে তিনি বলেন, ‘দুই রাজনৈতিক দলের প্রতি মানুষ সত্যিই ক্লান্ত। আমাদের ওপর দেশের মানুষের আস্থা আছে। তাহমিদ চৌধুরী নামের আরেক সমন্বয়ক বলেন, তাদের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার সম্ভাবনা আছে। তারা এখনো তাদের কর্মসূচী নিয়ে কাজ করছে।

এই দলের মূলে থাকবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাকস্বাধীনতা। সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের চেতনা ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা। যেখানে কোনো ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচারী ফিরে আসতে পারবে না। এটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। এর জন্য অবশ্যই কিছু সময় প্রয়োজন।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত নতুন নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আহ্বান বিবেচনা করবে না বলেও জানান নাহিদ ইসলাম। প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়নের তদারকিকারী পুলিশ প্রধানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের পদচ্যুতির মাধ্যমে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ড. ইউনূসের একজন মুখপাত্র কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন রয়টার্সকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এখনো টেকনোক্র্যাটদের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেনি। তবে রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে চলেছে। কারণ আমরা মূলত তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতি থেকে বাদ দিয়েছি। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৪ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস যদিও নৈতিক কর্তৃত্ব বজায় রাখেন কিন্তু তার প্রশাসন কী অর্জন করতে পারে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, ‘আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে আমরা সম্পূর্ণরূপে অজানা জলে ভাসছি। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা সম্পর্কে কোনো সাংবিধানিক ব্যাখ্যা নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণ এবং নতুন সরকারের সম্ভাবনার কথা জানতে প্রধান ছাত্রনেতা, শেখ হাসিনার ছেলে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ, বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং সেনা কর্মকর্তাসহ ৩০ জনেরও বেশি লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে রয়টার্স।

সজীব ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রয়টার্সকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো কোথাও যাচ্ছে না। আপনি আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবেন না। শীঘ্রই আওয়ামী লীগ বা বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে। আমাদের সাহায্য ও সমর্থন ছাড়া আপনারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনতে পারবেন না।’

গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, গত জুনে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন বাতিলের পরপরই শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ আন্দোলনকারীদের অধিকাংশই ছিলেন ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী। কয়েক দিনের মধ্যে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে হাসিনার সরকার তাদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে। ওই সহিংসতায় কমপক্ষে ৩০০ আন্দোলনকারী নিহত হয়েছে। যা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় নিহতের ঘটনা।

বছরের পর বছর বেকারত্বের বৃদ্ধি, দুর্নীতির অভিযোগ ও নাগরিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ফলে তরুণ বাংলাদেশিদের মধ্যে এ ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। এই আন্দোলনকে ‘জেন জেড’ বিপ্লব হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রিয় সংবাদ

মৌলভীবাজারে আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্রজনতার পাশে শিবির

নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা শিক্ষার্থীদের

আপডেট সময় ০৭:৫৮:১৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৪

দেশ সংস্কারের জন্য নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠনের কথা বিবেচনা করছেন বিক্ষোভকারী ছাত্রসংগঠকরা। চার সংগঠকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পর এমন তথ্য জানিয়েছে রয়টার্স। শুক্রবারের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার পতনের পর দ্রুত নির্বাচনের জন্য দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের আহ্বানকেও প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা। শেখ হাসিনার ১৫ বছরের স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তি এড়াতেই নতুন দল গঠনের আশা তাদের।

শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন নোবেল শান্তি বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূস। এ সরকারের দুটি সিনিয়র উপদেষ্টা পদে রয়েছেন দুই ছাত্রনেতা। গত তিন দশকের বেশির ভাগ সময়েই বাংলাদেশ শাসন করেছে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ও তার প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দুজনই বয়সে বয়োবৃদ্ধ।

তাই নতুন দল গঠনের আশা তরুণদের। সরকার ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে লিঁয়াজোর একটি কমিটির প্রধান মাহফুজ আলম বলেন, ছাত্রনেতারা একটি রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে আলোচনা করছেন, যাতে বড় দুই দলের আধিপত্যের অবসান ঘটে।

২৬ বছর বয়সী আইনের এক ছাত্র রয়টার্সকে বলেন, এক মাসের মধ্যে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ছাত্রনেতারা একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার আগে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে পরামর্শ করতে চান। যদিও এই আন্দোলনের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা ছাত্রদের এর আগে বিশদভাবে জানানো হয়নি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ফটকে তিনি বলেন, ‘দুই রাজনৈতিক দলের প্রতি মানুষ সত্যিই ক্লান্ত। আমাদের ওপর দেশের মানুষের আস্থা আছে। তাহমিদ চৌধুরী নামের আরেক সমন্বয়ক বলেন, তাদের একটি রাজনৈতিক দল গঠন করার সম্ভাবনা আছে। তারা এখনো তাদের কর্মসূচী নিয়ে কাজ করছে।

এই দলের মূলে থাকবে ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাকস্বাধীনতা। সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনের চেতনা ছিল একটি নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা। যেখানে কোনো ফ্যাসিবাদী বা স্বৈরাচারী ফিরে আসতে পারবে না। এটি নিশ্চিত করার জন্য আমাদের কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন। এর জন্য অবশ্যই কিছু সময় প্রয়োজন।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দ্রুত নতুন নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির আহ্বান বিবেচনা করবে না বলেও জানান নাহিদ ইসলাম। প্রধান বিচারপতি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও ছাত্রদের ওপর দমন-পীড়নের তদারকিকারী পুলিশ প্রধানসহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের পদচ্যুতির মাধ্যমে শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন আনা হয়েছে।

ড. ইউনূসের একজন মুখপাত্র কূটনীতিক তৌহিদ হোসেন রয়টার্সকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা এখনো টেকনোক্র্যাটদের সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেনি। তবে রাজনৈতিক দৃশ্যপট পরিবর্তন হতে চলেছে। কারণ আমরা মূলত তরুণ প্রজন্মকে রাজনীতি থেকে বাদ দিয়েছি। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৮৪ বছর বয়সী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূস যদিও নৈতিক কর্তৃত্ব বজায় রাখেন কিন্তু তার প্রশাসন কী অর্জন করতে পারে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, ‘আইনগত ও রাজনৈতিকভাবে আমরা সম্পূর্ণরূপে অজানা জলে ভাসছি। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ক্ষমতা সম্পর্কে কোনো সাংবিধানিক ব্যাখ্যা নেই। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণ এবং নতুন সরকারের সম্ভাবনার কথা জানতে প্রধান ছাত্রনেতা, শেখ হাসিনার ছেলে ও উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ, বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং সেনা কর্মকর্তাসহ ৩০ জনেরও বেশি লোকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে রয়টার্স।

সজীব ওয়াজেদ যুক্তরাষ্ট্র থেকে রয়টার্সকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলো কোথাও যাচ্ছে না। আপনি আমাদের নিশ্চিহ্ন করতে পারবেন না। শীঘ্রই আওয়ামী লীগ বা বিএনপি আবার ক্ষমতায় আসবে। আমাদের সাহায্য ও সমর্থন ছাড়া আপনারা বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা আনতে পারবেন না।’

গণমাধ্যমের তথ্যানুসারে, গত জুনে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপন বাতিলের পরপরই শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এ আন্দোলনকারীদের অধিকাংশই ছিলেন ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সী। কয়েক দিনের মধ্যে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়তে থাকলে হাসিনার সরকার তাদের ওপর দমন-পীড়ন শুরু করে। ওই সহিংসতায় কমপক্ষে ৩০০ আন্দোলনকারী নিহত হয়েছে। যা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় নিহতের ঘটনা।

বছরের পর বছর বেকারত্বের বৃদ্ধি, দুর্নীতির অভিযোগ ও নাগরিক স্বাধীনতা লঙ্ঘনের ফলে তরুণ বাংলাদেশিদের মধ্যে এ ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল। এই আন্দোলনকে ‘জেন জেড’ বিপ্লব হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে।