মহিউদ্দিন রাব্বানি: ঈদ ঘিরে মসলার বাজারে আবারও লাগামছাড়া ঊর্ধ্বগতি । অসাধু ব্যবসায়ী ও সিন্ডিকেট চক্রের কারণে মসলার বাজারে আগুন। লবঙ্গ, দারচিনি, জায়ফল, এলাচসহ প্রায় সব ধরনের মসলার দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে অনেক পণ্যের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলার সংকট ও আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে ভোক্তারা অভিযোগ করছেন, প্রকৃত কারণ হল বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা ও সক্রিয় সিন্ডিকেট চক্রের কারসাজি।
রাজধানীর কয়েকটি বাজার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, খুচরা বিক্রেতারা মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজি এলাচে দাম বাড়িয়েছে ৪শ’ টাকা। আর কেজিতে লবঙ্গ ও জিরায় দাম বাড়িয়েছে ২শ’ টাকা। এছাড়া অন্যান্য মসলার দাম গড়ে ৫০-১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, রোজা ও ঈদের কারণে মসলার চাহিদা বাড়ায় অসাধুরা অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে। তাই তদারকির মাধ্যমে দাম স্বাভাবিক করতে হবে।
সব ধরনের মসলার দাম বাড়ার চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার মূল্য তালিকায়ও দেখা গেছে, সেখানে বলা হয়েছে এক মাসের ব্যবধানে প্রতিকেজি তেজপাতার দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ। মাসে কেজিতে জিরার দাম বেড়েছে ৪৮ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এক মাসে কেজিতে ধনে গুঁড়ার দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এলাচের দাম বেড়েছে ৪ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে দারুচিনির দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৩ শতাংশ, দেশি আদার দাম বেড়েছে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, দেশি হলুদের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। মাসের ব্যবধানে দেশি শুকনা মরিচ ২২ দশমিক ২২ শতাংশ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া আমদানি করা শুকনা মরিচের দাম এক মাসে ৮ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিকেজি লবঙ্গ বিক্রি হয় ১৪শ’ টাকা; যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১২শ’ টাকা। প্রতি কেজি জিরা বিক্রি হয় ৬শ’ টাকা; যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪শ’ টাকা। প্রতি কেজি এলাচ বিক্রি হয় ৪ হাজার টাকা; যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৩৬শ’ টাকা। প্রতি কেজি হলুদ বিক্রি হয় ২০০-২২০ টাকা; যা এক মাস আগে ১৪০-১৮০ টাকা বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হয় ৪৫০-৫০০ টাকা; যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৪০০-৪৫০ টাকা।
এছাড়া প্রতি কেজি দেশি আদা বিক্রি হয় ১৬০-২০০ টাকা; যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১২০-১৫০ টাকা। প্রতি কেজি ধনেগুঁড়া বিক্রি হয় ১৪০ টাকা; যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ৯০-১০০ টাকা। প্রতি কেজি শুকনা মরিচ বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকা; যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ২০০-২৫০ টাকা। প্রতিকেজি তেজপাতা বিক্রি হয় ১২০-১৫০ টাকা; যা এক মাস আগে বিক্রি হয়েছে ১০০-১৩০ টাকা।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশে যে ক’টি প্রতিষ্ঠান মসলা আমদানি করে, তাদের মধ্যেই গড়ে উঠেছে এক ধরনের অঘোষিত সিন্ডিকেট। তারা একযোগে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে। সরকার বা নিয়ন্ত্রণ সংস্থার নজরদারির ঘাটতির সুযোগে বারবার এই সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে ওঠে।
যাত্রাবাড়ী এলাকার পাইকারি ব্যবসায়ী শাহজাহান বলেন, আমাদের ইচ্ছায় নয়, বড় আমদানিকারকেরা যেভাবে দাম নির্ধারণ করে, আমরা সেভাবেই বিক্রি করতে বাধ্য হই। না হলে পণ্যই পাব না।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বলছে, তারা নিয়মিত বাজার তদারকি করছে। তবে জনবল সংকট ও তথ্য ঘাটতির কারণে অনেক ক্ষেত্রেই আগেভাগে সিন্ডিকেট শনাক্ত করা সম্ভব হয় না। এছাড়া প্রশাসনিকভাবে কঠোর নজরদারি ছাড়া কৃত্রিম সংকট রোধ করা সম্ভব নয় বলেও তারা স্বীকার করছে।
মসলার বাজার দর সম্পর্কে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, আমাদের দেশে বাজার মনিটরিংয়ের অভাবে ভোক্তারা ঠকে যায়। দেশে দুই ঈদ ঘিরে মসলার বাজারে যে সিন্ডিকেট হয়, তাতেই দাম বাড়ে। সরকারের বাজার তদারকি সংস্থার উচিত এসব সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে দামের বিষয়ে নজর রাখা।