ঢাকা ১১:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
Logo সভাপতির পর এবার প্রকাশ্যে ববি শিবিরের দপ্তর সম্পাদক Logo রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে আমরা এই পুলিশকে বিএনপির পুলিশ বানাবো না: জি কে গউছ Logo চট্টগ্রামে কর্ণফুলীতে চেয়ারম্যান অপসারণের দাবিতে ফের মানববন্ধন Logo চট্টগ্রামে পুলিশের উপর হামলাকারী শাকিল অস্ত্রসহ গ্রেফতার Logo খালেদা জিয়ার ৮০তম জন্মদিন, ছাত্রদল নেতার উদ্যোগে দোয়া ও উপহার বিতরণ Logo চট্টগ্রামে পুকুরে ডুবে চবি ছাত্রীসহ প্রাণ গেল ২ জনের Logo চিকিৎসা পেশা নিয়ে আসিফ নজরুলের মন্তব্য রাষ্ট্রবিরোধী: এনসিপি Logo মাই টিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথী গ্রেপ্তার Logo বিএনপি নেতা দুলুর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন নাটোর জেলা জামায়াত Logo গাজাবাসীদের জন্য ভিসা স্থগিত করল যুক্তরাষ্ট্র
পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা

বেড়েছে ঝাঁঝ ;পেঁয়াজের‘ডাবল’সেঞ্চুরি

  • Staff Reporter
  • আপডেট সময় ০৫:৫৩:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৯
  • 159

অসীম আল ইমরান : পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। খাবারে পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়েছে অধিকাংশ পরিবার। এবার পেঁয়াজের যে দর উঠেছে, এ রকম অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি সাম্প্রতিক সময়ে দেখেনি বাংলাদেশের মানুষ। এরপর নিত্যপণ্যের বাজারে এবারই প্রথম পেঁয়াজ সঙ্কট ও মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারের মন্ত্রীরাও রান্নায় তার ব্যবহার কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

পেঁয়াজের ঝাঁঝ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক মূল্যস্ফীতিও বাড়িয়ে দিয়েছে। ৩০ টাকার পেঁয়াজ আড়াইশ টাকা হওয়া নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপ হয়েছে প্রচুর। ক্ষেপে গিয়ে অনেকে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও চাইছেন। পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার জন্য আমলারা প্রথম দিকে দায়ী করেছেন ‘অসাধু’ ব্যবসায়ী-আমদানিকারক আর আড়ৎদারদের। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সরবরাহ ঘাটতি নিয়ে সরকারকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল, সময়ের কাজ সময়ে করলে পরিস্থিতি এত খারাপ হত না। দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ বার বার হোঁচট খাওয়ার পর সঙ্কট সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজকে চড়াতে হয় বিমানে; স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উড়োজাহাজে চড়ে দেশে পেঁয়াজ এসেছে। কিন্তু তাতেও গড়পড়তায় ৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজকে আড়াইশ টাকার ঘর থেকে খুব বেশি একটা নামানো যায়নি।

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি এবং সরবরাহ ঘাটতির কারণে মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পেঁয়াজের দাম এতটাই বেড়েছে, সাধারণ মানুষের জন্য এটি কেনা কঠিন এবং পেঁয়াজ নিয়ে রীতিমতো হাহাকার। পেঁয়াজের এই সঙ্কটের জন্য খুচরা ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, সরবরাহকারী, আড়তদার এমনকি সরকারের দায় রয়েছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন, এটি এই অঞ্চলের বাজার সঙ্কটের কারণে হয়েছে। আর বাংলাদেশ বেশি বেকায়দায় পড়েছে ভারত আশ্বাস দিয়ে তা ভঙ্গ করার কারণে।

পেঁয়াজের সঙ্কট শুধু বাংলাদেশে নয়, আশপাশের দেশগুলোতেও এই খাদ্যপণ্যের দাম কয়েক গুণে বেড়েছে। মূলত বাংলাদেশে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় যোগানদার ভারতে মওসুমে বৈরী আহ্বাওয়ায় দুই দফায় পেঁয়াজের ফলন মার খাওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে অস্থিরতার শুরু সেপ্টেম্বর থেকে । প্রথমে ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত রপ্তানি মূল্য দ্বিগুণ করে প্রতি টন ৮৫০ ডলার করার পরের সকালেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় ঢাকার বাজারে। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম।

প্রতি কেজি ৩০ টাকা থেকে বাড়তে থাকা পেঁয়াজের মূল্য মাস শেষে শতকের ঘর অতিক্রম করে। অক্টোবর মাসজুড়ে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি দেড়শ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। ওই মাসের শেষ দিকে সরকার মিয়ানমার থেকে আমদানি বাড়িয়ে দাম আবার একশ টাকার কাছাকাছি নিয়ে আসে। তবে নভেম্বরের ৯ তারিখে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে নিয়ন্ত্রণের সেই চেষ্টাও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। নভেম্বরের ১৪ তারিখে ২০০ টাকার ঘর অতিক্রম করে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম। আর এতেই অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়ে যায়। পরে সেই পেঁয়াজের দাম পৌঁছে যায় আড়াইশ টাকায়। এর আগে ২০১৭ সালে মওসুমের শেষ দিকে সঙ্কট শুরু হলে পেঁয়াজের দাম ১৭০ টাকায় পৌঁছেছিল। আর এবার নভেম্বরের শেষে পেঁয়াজের দাম আড়াইশ টাকার ঘরে চলে যায়।

নিত্যপণ্য পেঁয়াজের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিও বাড়িয়ে তুলেছে। গত নভেম্বর মাসে দেশে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ; আগের বছরের নভেম্বর মাসে তা ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির এই বৃদ্ধির পেছনে পেঁয়াজই মূল ভূমিকা রেখেছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন।

পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে এককভাবে কোনো পক্ষকে এখন আর দায়ী করছেন না বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

নানামুখী উদ্যোগেও যখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “পেঁয়াজের সমস্যাটা সাপ্লাইয়ের সমস্যা। সাপ্লাই কম তাই দাম বাড়ছে। সাপ্লাইতে যখন সমস্যা দেখা দেয় তখন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু সুযোগ সন্ধানি তার সুযোগটা নেয়। আমরা যদি সাপ্লাইটা ঠিকমতো রাখতে পারতাম তাহলে তারা এই সুযোগটি নিতে পারত না।”

দেশে পেঁয়াজের এই সঙ্কটের পেছনে ভারতেরও ভূমিকা রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘২৯ সেপ্টেম্বর তারা রপ্তানি বন্ধ করলেও ২৪ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর তা আবার চালু হবে বলেই আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসায়ীরা দূরের বিকল্প পথ মিশর কিংবা তুরস্ক থেকেও বড় চালান আনতে সাহস করেনি। ২৮ অক্টোবরও যখন তারা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলল না তখন আমরা বড় বিকল্প খুঁজতে শুরু করলাম।

মন্ত্রীর এই কথা মেনে নিয়েই পেঁয়াজ বাজারে অস্থিরতার জন্য সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ঘাটতিকে দুষছেন বাজার বিশ্লেষকরা।পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে কমিটির এক সভার পর সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বর্তমানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, “ভারত গরু বন্ধ করে দিল। আমাদের দেশের মানুষ গরু পালতে শুরু করল, আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ল। আমরা মনে করি, আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ বাড়ির খোলা জায়গায় পেঁয়াজ চাষ করবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ইনশাল্লাহ পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করব।

তার মতো আশাবাদী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে চাইছেন। টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “কখনও কখনও বিপদ সম্পদে রূপান্তর করা যায়। এই বিপদ আমাদের সম্পদে রূপান্তরিত হবে। আগামী বছর থেকে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিকল্পনা করতে হবে। এজন্য পেঁয়াজের ক্ষেত্রে শূন্য সুদে ঋণ দেওয়া যায় কি না চিন্তা করছি। এখন ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। যেভাবেই হোক কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। সংরক্ষণ ক্যাপাসিটিও বাড়াতে হিমাগার তৈরির তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি মওসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখে কৃষকদের জন্য ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বর্তমানে দেশে বছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৮ লাখ টন। চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হয় ১০-১১ লাখ টনের মতো।

জনপ্রিয় সংবাদ

সভাপতির পর এবার প্রকাশ্যে ববি শিবিরের দপ্তর সম্পাদক

পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা

বেড়েছে ঝাঁঝ ;পেঁয়াজের‘ডাবল’সেঞ্চুরি

আপডেট সময় ০৫:৫৩:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

অসীম আল ইমরান : পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। খাবারে পেঁয়াজের ব্যবহার কমিয়েছে অধিকাংশ পরিবার। এবার পেঁয়াজের যে দর উঠেছে, এ রকম অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি সাম্প্রতিক সময়ে দেখেনি বাংলাদেশের মানুষ। এরপর নিত্যপণ্যের বাজারে এবারই প্রথম পেঁয়াজ সঙ্কট ও মূল্যবৃদ্ধিতে সরকারের মন্ত্রীরাও রান্নায় তার ব্যবহার কমানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

পেঁয়াজের ঝাঁঝ অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক মূল্যস্ফীতিও বাড়িয়ে দিয়েছে। ৩০ টাকার পেঁয়াজ আড়াইশ টাকা হওয়া নিয়ে পারস্পরিক দোষারোপ হয়েছে প্রচুর। ক্ষেপে গিয়ে অনেকে বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও চাইছেন। পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতার জন্য আমলারা প্রথম দিকে দায়ী করেছেন ‘অসাধু’ ব্যবসায়ী-আমদানিকারক আর আড়ৎদারদের। অপরদিকে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, সরবরাহ ঘাটতি নিয়ে সরকারকে আগেই সতর্ক করা হয়েছিল, সময়ের কাজ সময়ে করলে পরিস্থিতি এত খারাপ হত না। দাম নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ বার বার হোঁচট খাওয়ার পর সঙ্কট সামাল দিতে শেষ পর্যন্ত পেঁয়াজকে চড়াতে হয় বিমানে; স্বাধীনতার পর এই প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উড়োজাহাজে চড়ে দেশে পেঁয়াজ এসেছে। কিন্তু তাতেও গড়পড়তায় ৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজকে আড়াইশ টাকার ঘর থেকে খুব বেশি একটা নামানো যায়নি।

পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি এবং সরবরাহ ঘাটতির কারণে মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। পেঁয়াজের দাম এতটাই বেড়েছে, সাধারণ মানুষের জন্য এটি কেনা কঠিন এবং পেঁয়াজ নিয়ে রীতিমতো হাহাকার। পেঁয়াজের এই সঙ্কটের জন্য খুচরা ব্যবসায়ী, আমদানিকারক, সরবরাহকারী, আড়তদার এমনকি সরকারের দায় রয়েছে বলে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন। তবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন, এটি এই অঞ্চলের বাজার সঙ্কটের কারণে হয়েছে। আর বাংলাদেশ বেশি বেকায়দায় পড়েছে ভারত আশ্বাস দিয়ে তা ভঙ্গ করার কারণে।

পেঁয়াজের সঙ্কট শুধু বাংলাদেশে নয়, আশপাশের দেশগুলোতেও এই খাদ্যপণ্যের দাম কয়েক গুণে বেড়েছে। মূলত বাংলাদেশে পেঁয়াজের সবচেয়ে বড় যোগানদার ভারতে মওসুমে বৈরী আহ্বাওয়ায় দুই দফায় পেঁয়াজের ফলন মার খাওয়ায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশের বাজারে পেঁয়াজের দামে অস্থিরতার শুরু সেপ্টেম্বর থেকে । প্রথমে ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত রপ্তানি মূল্য দ্বিগুণ করে প্রতি টন ৮৫০ ডলার করার পরের সকালেই পেঁয়াজের দাম বেড়ে যায় ঢাকার বাজারে। এরপর ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিলে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম।

প্রতি কেজি ৩০ টাকা থেকে বাড়তে থাকা পেঁয়াজের মূল্য মাস শেষে শতকের ঘর অতিক্রম করে। অক্টোবর মাসজুড়ে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি দেড়শ থেকে ১৭০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করে। ওই মাসের শেষ দিকে সরকার মিয়ানমার থেকে আমদানি বাড়িয়ে দাম আবার একশ টাকার কাছাকাছি নিয়ে আসে। তবে নভেম্বরের ৯ তারিখে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে নিয়ন্ত্রণের সেই চেষ্টাও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। নভেম্বরের ১৪ তারিখে ২০০ টাকার ঘর অতিক্রম করে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দাম। আর এতেই অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ হয়ে যায়। পরে সেই পেঁয়াজের দাম পৌঁছে যায় আড়াইশ টাকায়। এর আগে ২০১৭ সালে মওসুমের শেষ দিকে সঙ্কট শুরু হলে পেঁয়াজের দাম ১৭০ টাকায় পৌঁছেছিল। আর এবার নভেম্বরের শেষে পেঁয়াজের দাম আড়াইশ টাকার ঘরে চলে যায়।

নিত্যপণ্য পেঁয়াজের দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিও বাড়িয়ে তুলেছে। গত নভেম্বর মাসে দেশে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ; আগের বছরের নভেম্বর মাসে তা ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ। অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির এই বৃদ্ধির পেছনে পেঁয়াজই মূল ভূমিকা রেখেছে বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন।

পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা নিয়ে এককভাবে কোনো পক্ষকে এখন আর দায়ী করছেন না বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

নানামুখী উদ্যোগেও যখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না, টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “পেঁয়াজের সমস্যাটা সাপ্লাইয়ের সমস্যা। সাপ্লাই কম তাই দাম বাড়ছে। সাপ্লাইতে যখন সমস্যা দেখা দেয় তখন এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু সুযোগ সন্ধানি তার সুযোগটা নেয়। আমরা যদি সাপ্লাইটা ঠিকমতো রাখতে পারতাম তাহলে তারা এই সুযোগটি নিতে পারত না।”

দেশে পেঁয়াজের এই সঙ্কটের পেছনে ভারতেরও ভূমিকা রয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘২৯ সেপ্টেম্বর তারা রপ্তানি বন্ধ করলেও ২৪ অক্টোবর মহারাষ্ট্রের নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর তা আবার চালু হবে বলেই আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে দেশের ব্যবসায়ীরা দূরের বিকল্প পথ মিশর কিংবা তুরস্ক থেকেও বড় চালান আনতে সাহস করেনি। ২৮ অক্টোবরও যখন তারা রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলল না তখন আমরা বড় বিকল্প খুঁজতে শুরু করলাম।

মন্ত্রীর এই কথা মেনে নিয়েই পেঁয়াজ বাজারে অস্থিরতার জন্য সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্তের ঘাটতিকে দুষছেন বাজার বিশ্লেষকরা।পেঁয়াজ নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে কমিটির এক সভার পর সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ও বর্তমানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, “ভারত গরু বন্ধ করে দিল। আমাদের দেশের মানুষ গরু পালতে শুরু করল, আমরা এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন পেঁয়াজের দাম বাড়ল। আমরা মনে করি, আমাদের দেশে সাধারণ মানুষ বাড়ির খোলা জায়গায় পেঁয়াজ চাষ করবে। আগামী দুই বছরের মধ্যে ইনশাল্লাহ পেঁয়াজ রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করব।

তার মতো আশাবাদী বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিও সংকট থেকে শিক্ষা নিয়ে সমস্যাকে সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে চাইছেন। টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “কখনও কখনও বিপদ সম্পদে রূপান্তর করা যায়। এই বিপদ আমাদের সম্পদে রূপান্তরিত হবে। আগামী বছর থেকে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিকল্পনা করতে হবে। এজন্য পেঁয়াজের ক্ষেত্রে শূন্য সুদে ঋণ দেওয়া যায় কি না চিন্তা করছি। এখন ৪ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া হয়। যেভাবেই হোক কৃষকের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে হবে। সংরক্ষণ ক্যাপাসিটিও বাড়াতে হিমাগার তৈরির তড়িৎ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পাশাপাশি মওসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখে কৃষকদের জন্য ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা হবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে বর্তমানে দেশে বছরে পেঁয়াজ উৎপাদন হয় ১৮ লাখ টন। চাহিদা মেটাতে আমদানি করতে হয় ১০-১১ লাখ টনের মতো।