গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে বন্দীদের চিকিৎসার জন্য ১৮ বছর আগে কারাগার-২ এর অভ্যন্তরে গড়ে তোলা হয় ৩ তলাবিশিষ্ট ২০০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল। হাসপাতালে বন্দীদের সেবার জন্য অত্যাধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী থাকলেও আজ পর্যন্ত কোনো চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এতে যেমন বন্দীরা চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনি নষ্ট হচ্ছে সরকারি সম্পদ।
কাশিমপুরের ৪টি কারাগারে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ জন বন্দীর মৃত্যু হয়েছে। গত সোমবার এক দিনেই মৃত্যু হয়েছে দুই বন্দীর। গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মাজহারুল ইসলাম বলেন, কারাগারে প্রায়ই মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ময়নাতদন্ত করে দেখা যায়, বেশির ভাগই হৃদ্রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসকদের দেওয়া মৃত্যুসনদেও তাই দেখা যায়। চিকিৎসকদের মতে, কেউ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে না পারলে রোগীকে বাঁচানো কঠিন হয়ে পড়ে।
যেসব বন্দীর অবস্থা গুরুতর হয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাঁদের নেওয়া হয় গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, যা কাশিমপুর কারাগার থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে। যানজটের কারণে অনেক সময় হাসপাতালটিতে পৌঁছাতে এক ঘণ্টা লেগে যায়। অনেক সময় পথে মারা যান অসুস্থ বন্দী। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও রয়েছে সমস্যা। সেখানে বন্দী রোগীদের জন্য নেই প্রিজন সেল বা প্রিজন ওয়ার্ড।
গাজীপুর তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই কারাগার থেকে রোগী আসেন। তাঁদের মধ্যে হৃদ্রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি। মাসে ৩০ থেকে ৩৫ জন রোগী আসেন হাসপাতালে। প্রিজন ওয়ার্ডের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, সিভিল সার্জন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
কারা হাসপাতালের বিষয়ে জানতে চাইলে কাশিমপুর হাই সিকিউরিট কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুব্রত কুমার বালা বলেন, দেশের অন্যান্য কারাগার থেকে রোগীদের হাসপাতালে নিতে পাঁচ-সাত মিনিট লাগলেও কাশিমপুর থেকে নিতে সময় লাগে এক ঘণ্টা। ফলে অনেক সময় রোগীদের নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। কারা হাসপাতালে যদি প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া যেত, তাহলে বন্দী রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া অনেক সহজ হতো।
কারা কর্মকর্তারা বলছেন, কারা হাসপাতালে চিকিৎসক না থাকায় বন্দী রোগীদের চিকিৎসা কঠিনই হচ্ছে না, পাশাপাশি অধিক ঝুঁকি নিয়ে দামি আসামিদের বাইরের হাসপাতালে নিতে হচ্ছে। প্রতিটি বিভাগীয় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কারাগারের প্রিজন সেল রয়েছে। গাজীপুরে তা নেই।
ঢাকা ভয়েস/টিআই