ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্র’ নস্যাৎ করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ থাকতে সম্মত হয়েছে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন। অন্তর্বর্তী সরকার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত ‘পাল্টা অভ্যুত্থানের’ যেকোনো প্রচেষ্টা ঠেকাতে তারা একসঙ্গে মাঠে থাকার কথা বলেছে।
সোমবার (১২ আগস্ট) রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাদের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই তরুণ উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বৈঠক করেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই দুই সমন্বয়ক ছাড়াও এর লিয়াজোঁ কমিটির সদস্যরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, খেলাফত ছাত্র মজলিসসহ অন্তত ২০টি ছাত্রসংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
বৈঠক শেষে একাধিক নেতা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একধরনের অঙ্গীকার ছিল, আন্দোলন শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটা (প্ল্যাটফর্ম) ভেঙে দেওয়া হবে। সরকার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারটিকে নিয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে একধরনের দ্বিধা-বিভক্তি তৈরি হয়েছে। তবে যেহেতু এখনো পাল্টা কিছু একটা ঘটানোর চেষ্টা আছে, তাই সবাই এই ব্যানারে আরও কিছুদিন ঐক্যবদ্ধ থাকার পক্ষে সম্মত হয়েছে। ছাত্রসংগঠনগুলো নিজেদের ব্যানারে আলাদা মিছিল বা কর্মসূচি করা থেকে বিরত থাকবে। এই সময়সীমাটা কত হতে পারে, সে বিষয়ে বিভিন্ন সংগঠন ভিন্ন ভিন্ন প্রস্তাব দিয়েছে। কেউ এক মাস, কেউ দুই মাস, কেউ তিন মাসের কথা বলেছে। ছাত্রসংগঠনগুলো একমত হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার স্থিতিশীল হওয়ার আগপর্যন্ত সবাই একসঙ্গে মাঠে থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকার স্থিতিশীল হওয়ার পর যে যার রাজনীতিতে ফেরত যাবে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভেঙে দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা। তারা আরও বলেন, এর আগপর্যন্ত তাদের নিয়মিত বৈঠক হবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু তাঁরা যে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে ছিলেন, তা শেষ হয়নি। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বিজয়ের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তা নস্যাৎ করাই ছিল এই বৈঠকের আলোচনার বিষয়। যেহেতু এখনো ফ্যাসিবাদের একটা ‘সেটআপ’ সব জায়গায় আছে, তারা যেকোনো সময় যেকোনো কিছু ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে। তাই তারা সময়ের প্রয়োজনে একটা সময় পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকবেন। আগামী বেশ কিছুদিন যেকোনো পরিস্থিতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার বিষয়ে একমত হয়েছেন।
বৈঠকে ডানপন্থী, বামপন্থীসহ সব ধারার ছাত্রসংগঠনের নেতাদের সমাবেশ ঘটেছিল। ১৫ আগস্ট কীভাবে পালিত হবে, সেদিন আগের মতো জাতীয় শোক দিবস থাকবে কি না, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয় বলে সূত্র জানায়। বৈঠক সূত্র বলছে, বেশির ভাগ ছাত্রসংগঠন ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালন না করার পক্ষে মত দিয়েছে।
এ ছাড়া আগামী দিনে ছাত্র আন্দোলন কীভাবে পরিচালিত হবে, তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রশ্ন আছে। সবশেষ এই আন্দোলনের পর ছাত্ররাজনীতি নিয়ে নতুন কোনো চুক্তিতে আসা যায় কি না, তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এ নিয়ে সামনে আরও আলোচনা হবে।
ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি করতে পারবে কি না, এ বিষয়েও আলোচনা উঠেছিল বলে বৈঠক সূত্র জানায়। এ বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী সময়ে আলোচনা করার ব্যাপারে সবাই মত দিয়েছেন।
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের বিপরীতে যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সব ছাত্রসংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে। এটি নিয়েই মূলত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।