আওয়ামী লীগের টিকিটে সাংসদ হয়েছিলেন। দেশে যখন অসংখ্য প্রাণ ঝরে যাচ্ছিল, সাকিব তখন বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলার পাশাপাশি পরিবার নিয়ে জম্পেশ সময় কাটাচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, প্রবাসী দর্শকরা আন্দোলনে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুললে তিনি পাল্টা বলেছিলেন ‘দেশের জন্য আপনি কী করেছেন?’
অবশেষে ছাত্র-জনতার গণ আন্দোলনের মুখে পতন হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের। গতকাল মঙ্গলবার সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাই সাকিব আল হাসান এখন আর সাংসদ নন। কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে খেলতে নেমেও তাকে শুনতে হচ্ছে দর্শকদের দুয়ো। সাকিবও পাল্টা জবাব দিচ্ছেন দর্শকদের। এতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠছে। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রী-এমপিরা বেশিরভাগই দেশ ছেড়েছেন। তাই সাকিব আর দেশে ফিরতে পারবেন কিনা- সেটা নিয়ে তৈরি হয়েছে সন্দেহ।
গত বছরের ওয়ানডে বিশ্বকাপ থেকেই সাকিবের পারফর্মেন্সে তলানিতে। ব্যাপক সমালোচনা হলেও তিনি কোনো ফরম্যাট থেকে অবসর নেননি। বরং নিজেকে যাচাই করতে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে গেছেন। সেসব লিগে তার পারফরমেন্সও করুণ। চলতি মাসেই বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফর আছে। সেই সফর সময়মতো হোক বা না হোক- সাকিবের জাতীয় দলে ফেরা এখন পুরোপুরি অনিশ্চিত। তিনি এবং তার স্ত্রী-সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। তাই দেশে ফেরার বাধ্যবাধকতা নেই। তবে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার এখন স্পষ্টতই হুমকির মুখে। দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে বড় প্রশ্ন- সাকিব কি আর কখনো জাতীয় দলে ফিরতে পারবেন?
বাংলাদেশের ক্রিকেটে মহা ক্ষমতাধর ছিলেন সাকিব। বিসিবি প্রেসিডেন্টও তার বিরুদ্ধে সচরাচর মুখ খুলতেন না। তার ইচ্ছে হলে জাতীয় দলের হয়ে খেলতেন, নাহলে চলে যেতেন ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলতে কিংবা শো রুম উদ্বোধনের মতো বাণিজ্যিক কাজে। এসব কারণে একাধিকবার দলীয় ফটোশ্যুটে আসতেও দেরি করেছেন। এখন সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে বিসিবিতেও লেগেছে বদলের হাওয়া। সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের পদত্যাগ এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই সাকিবের সেই রাজনৈতিক ক্ষমতাও এখন আর নেই।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় দলের সঙ্গে সফরে না গিয়ে দুবাই হয়ে পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ছিল সাকিবের। সেই পরিকল্পনা ঠিক আছে কিনা, তা দল ঘোষণার আগে বলা মুশকিল। যদি সেই পরিকল্পনা ঠিকও থাকে, তাহলেও সাকিব কি খেলতে পারবেন? শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন না দেওয়ায় সাকিব জাতীয় দলে অনেকটাই একা হয়ে গেছেন। জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের। তারা রক্তপাত বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। সরকার পতনের পর অনেকে উচ্ছাসও করেছেন। সাকিব যদি জাতীয় দলে ফিরেনও, তাহলে সদ্য পতন হওয়া সরকারের একজন হিসেবে সতীর্থদের থেকে তিনি কি সেই মর্যাদা পাবেন? নাকি সতীর্থরা তাকে গ্রহণ করবে? আপাতদৃষ্টিতে এমন সম্ভাবনা খুবই কম মনে হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে একটা বিষয় স্পষ্ট যে, রাজনৈতিক কারণে হোক আর পারফর্মেন্সের কারণেই হোক, সাকিবের জাতীয় দলে ফেরাটা খুবই কঠিন।