ঢাকা ০৮:৩৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গুলিতে ঝাঁঝরা আবু সাঈদের বুক, উল্টো কথা বলছে পুলিশ

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বুক ও পেট পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। তাঁর গলা থেকে ঊরু পর্যন্ত ছিল ছররা গুলির আঘাত। অথচ পুলিশের করা মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের ছোড়া গুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।

ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।

সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, আবু সাঈদের বুক ও পেট ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। লুকোচুরির কিছু নেই। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। কয়েক দিনের মধ্যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

তবে মামলার এফআইআরে আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পরদিন ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় একটি মামলা হয়। মামলার বাদী ওই থানার উপপরিদর্শক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়।

মামলার এফআইআরে বলা হয়েছে, ‘বেলা ২টা ১৫ মিনিটের দিকে ছাত্র নামধারী সুবিধাভোগী রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তগণ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র হতে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও এপিসি গাড়ির মধ্য হতে কং/ ১১৮৬ সোহেল তার নামীয় সরকারি ইস্যুকৃত শটগান হইতে ১৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।’

সাঈদের মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়, ‘বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সহপাঠীরা ধরাধরি করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২/৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী বিভূতি ভূষণ রায় এজাহার দায়েরের কথা নিশ্চিত করেন। তবে তিনি এর বেশি কিছু বলতে চাননি।

যোগাযোগ করা হলে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়। বিবরণীতে সাঈদের মৃত্যুর বিষয়টি আছে; কিন্তু এটা চূড়ান্ত কিছু নয়। অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন ও চিকিৎসকের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং ঘটনার আশপাশের ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে তদন্তে পুরো বিষয়টি উঠে আসবে।

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ঘটনার দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের ছররা গুলি ব্যবহার করেছিল পুলিশ। পুলিশের কাউকে গুলি করার অনুমোদন দেওয়া হয়নি বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। বিস্তারিত তদন্তে পুলিশের কোনো সদস্যের গুলি করার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ছিলেন। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়া বাবরপুর গ্রামে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা বলেন, আবু সাঈদ আহত হয়ে পড়ে গেলেও পুলিশ নির্বিচার গুলি ছোড়ে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবিনা আক্তার বলেন, সাঈদকে ‘টার্গেট’ করে হত্যা করা হয়েছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাঈদ গুলিতে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যেতে থাকলে তার কাছে দৌড়ে ছুটে যান সহপাঠীরা। তাঁরা আবু সাঈদকে রিকশায় তুলে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওনা হন।

সূত্র: প্রথম আলো

জনপ্রিয় সংবাদ

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ চালু করলো পাকিস্তান

গুলিতে ঝাঁঝরা আবু সাঈদের বুক, উল্টো কথা বলছে পুলিশ

আপডেট সময় ০২:৩০:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জুলাই ২০২৪

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বুক ও পেট পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। তাঁর গলা থেকে ঊরু পর্যন্ত ছিল ছররা গুলির আঘাত। অথচ পুলিশের করা মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে (এফআইআর) বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীদের ছোড়া গুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে আবু সাঈদের মৃত্যু হয়।

ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।

সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, আবু সাঈদের বুক ও পেট ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। লুকোচুরির কিছু নেই। অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। কয়েক দিনের মধ্যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

তবে মামলার এফআইআরে আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ নেই। আবু সাঈদ নিহত হওয়ার পরদিন ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় একটি মামলা হয়। মামলার বাদী ওই থানার উপপরিদর্শক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়।

মামলার এফআইআরে বলা হয়েছে, ‘বেলা ২টা ১৫ মিনিটের দিকে ছাত্র নামধারী সুবিধাভোগী রাষ্ট্রবিরোধী আন্দোলনরত দুর্বৃত্তগণ বিভিন্ন দিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ও তাদের নিকটে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র হতে এলোপাতাড়ি গুলি শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার লক্ষ্যে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশও এপিসি গাড়ির মধ্য হতে কং/ ১১৮৬ সোহেল তার নামীয় সরকারি ইস্যুকৃত শটগান হইতে ১৬৯ রাউন্ড রাবার বুলেট ফায়ার করে। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।’

সাঈদের মৃত্যুর বিষয়ে বলা হয়, ‘বিভিন্ন দিক থেকে আন্দোলনকারীদের ছোড়া গোলাগুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের এক পর্যায়ে একজন শিক্ষার্থীকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। সহপাঠীরা ধরাধরি করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ২/৩ হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী বিভূতি ভূষণ রায় এজাহার দায়েরের কথা নিশ্চিত করেন। তবে তিনি এর বেশি কিছু বলতে চাননি।

যোগাযোগ করা হলে রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, প্রাথমিক তথ্য বিবরণীতে ঘটনার বিবরণ দেওয়া হয়। বিবরণীতে সাঈদের মৃত্যুর বিষয়টি আছে; কিন্তু এটা চূড়ান্ত কিছু নয়। অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন ও চিকিৎসকের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এবং ঘটনার আশপাশের ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে তদন্তে পুরো বিষয়টি উঠে আসবে।

পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ঘটনার দিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও শটগানের ছররা গুলি ব্যবহার করেছিল পুলিশ। পুলিশের কাউকে গুলি করার অনুমোদন দেওয়া হয়নি বা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। বিস্তারিত তদন্তে পুলিশের কোনো সদস্যের গুলি করার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সমন্বয়ক ছিলেন। তার বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের জাফরপাড়া বাবরপুর গ্রামে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা বলেন, আবু সাঈদ আহত হয়ে পড়ে গেলেও পুলিশ নির্বিচার গুলি ছোড়ে। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবিনা আক্তার বলেন, সাঈদকে ‘টার্গেট’ করে হত্যা করা হয়েছে।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সাঈদ গুলিতে আহত হয়ে রাস্তায় পড়ে যেতে থাকলে তার কাছে দৌড়ে ছুটে যান সহপাঠীরা। তাঁরা আবু সাঈদকে রিকশায় তুলে নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দিকে রওনা হন।

সূত্র: প্রথম আলো