রাজপথে যত আন্দোলন-সংগ্রাম করা হোক না কেন, কোটা সংস্কারের বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকার কিছুই করবে না বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক।
তিনি বলেন, কোটা রাখা না রাখা নিয়ে একটা প্রশ্ন সামনে এসেছে যে, বলা হচ্ছে এটা তো সরকারের ব্যাপার, আদালতের নয়। মূলত, এ বিষয়ে আদালতকে পাশ কাটিয়ে সরকারের কিছু করার নেই। বরং, আমরা আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। আমরা সর্বোচ্চ আদালতকে সম্মান করবো এবং বাস্তবায়ন করবো। যতই আন্দোলন হোক, সর্বোচ্চ আদালতকে পাশ কাটাবো না, কিছু করবোও না। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
‘বিচারহীনতায় বাংলাদেশ: বেআইনি আইন ইনডেমনিটি ও কারারুদ্ধ জননেত্রী’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য তারানা হালিম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ।
এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাস। সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী, রাষ্ট্রপতির সহকারী একান্ত সচিব ও কলামিস্ট হায়দার মোহাম্মদ জিতু প্রমুখ।
আনিসুল হক বলেন, আমরা মনে করি, বিষয়টি (কোটা সংস্কার) যেহেতু আদালতে গেছে এবং সেটা এখনো বিচারাধীন। সরকার এমন মুহূর্তে কী করতে পারে? হ্যাঁ, অপেক্ষা করতে পারে যে, আদালত থেকে কী পরামর্শ বা রায় আসে, সেটার জানার জন্যই অপেক্ষা। সেটাই আমরা এখন করছি।
‘আমার মনে হয়, একটা বিষয় পরিষ্কার করা উচিত। সেটা হলো— যৌক্তিক কথা জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার অবশ্যই শুনবে। জনগণের জন্য যেটা ভালো হয়, সেটা শেখ হাসিনার সরকার অবশ্যই করবে। তবে এটার মনে রাখবেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবে না। সেই আদর্শটা কী? বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কেউ নষ্ট করতে পারবে না। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ অসম্মান করতে পারবে না’- যোগ করেন আইনমন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, কোটা বাতিল হলো। সেটা নিয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা কোর্টে গেলেন। দীর্ঘদিন শুনানির পর হাইকোর্ট একটা রায় দিলেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ফাইল হলো। এর মধ্যেই শুরু হলো প্রতিবাদ। আদালত তখন ছাত্র-ছাত্রীদের নিজ নিজ কাজে অর্থাৎ, পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে বললেন। একই সঙ্গে আশ্বস্তও করলেন।
‘সেই আশ্বাসে বলা হলো—স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকারী ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের বক্তব্য আদালতে তুলে ধরতে পারেন। আদালত মূল দরখাস্তটি নিষ্পত্তিকালে তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেবে। সর্বোচ্চ আদালত তাদের এ আশ্বাস দেওয়ার পরও কী আর আন্দোলন করার প্রয়োজনীয়তা থাকে? তারপর যে স্লোগানে দেওয়া হয়েছে, তার প্রয়োজনীয়তাও তো নেই’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।