গাজীপুরের ডুয়েট এলাকায় ডুয়েটের শিক্ষক অধ্যাপক সিরাজুল হক মোল্লা এর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও অফিস ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঐ চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান কর্তৃপক্ষ। চক্রের সদস্যদের নেতৃত্বে ছিলেন- ডুয়েটে অধ্যয়নরত সিভিল ৩য় বর্ষের সাজ্জাদ হোসাইন রিফাত ( পিতা: জাহাঙ্গীর আলম, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী), মেকানিকাল ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী তাওহীদুল ইসলাম (চকরিয়া, কক্সবাজার), আইপি ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইরফান (পিতা: ফরহাদ হোসেন, সন্দীপ, চট্টগ্রাম) , এম এম ই, ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী রমেশ দাস (পিতা: রঞ্জিত কুমার দাশ), মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (মেকানিকাল, ২য় বর্ষ), বিপ্লব চন্দ্র সর্দার (কম্পিউটার সায়েন্স,১ম বর্ষ), জীবন বড়ুয়া (মেকানিকাল, ১ম বর্ষ), মাইনুল ইসলাম (মেকানিকাল, ২য় বর্ষ),আমির (মেকানিকাল, ১ম বর্ষ), লিখন (মেকানিকাল, ১ম বর্ষ), সামির উদ্দিন (এমএমই, ১ম বর্ষ), নাহিদসহ আরও ৩০/৪০ জন।
হামলাকারীরা সবাই গাজীপুরের ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ডুয়েট) এর শিক্ষার্থী এবং ডুয়েটস্থ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন, “গাংচিল” ও গাংচিল পরিচালিত “ইন্টারনেট কোচিং”-এর সদস্য বলে জানা যায়। যাদের অনেকেই ইতিপূর্বে বিভিন্ন ধরনের চাঁদাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত।
হামলাকারীরা চাঁদা না পেয়ে অফিস থেকে ১টি ডেস্কটপ, নগদ অর্থ ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস নিয়ে যায় এবং উক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ২ জন শিক্ষককে জোরপূর্বক তুলে এনে ডুয়েটের গেস্ট রুমে নিয়ে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। যাদের মধ্যে একজনকে রাত ২:০০ টার পর এবং অপর জনকে সারারাত আটকে রাখার পর পরেরদিন সকাল ১০:০০ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সহায়তায় ছাড়িয়ে আনা হয়।
প্রফেসর সিরাজুল হক মোল্লার কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে জানান, এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছেন বলে জানান।
কয়েকজন স্থানীয় বাড়ির মালিক জানান, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রায়শ আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়। অন্য একজন বাড়ির মালিক জানান, ছাত্ররা যেহেতু আমাদের এখানে ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠে, তাই তাদের সাথে আমাদের বেশ ভালো সম্পর্ক থাকলেও কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছাত্ররা আমাদের সামান্য ত্রুটিতেই বড় ধরনের ঝামেলা করে। অনেক সময় অন্যান্য বাড়ির মালিকদের সামনে অপমানিত করে এমনকি অনেকেরই তাদের ক্যাম্পাসে নিয়ে হুমকি দেওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
বিষয়টির সত্যতা জানতে, অফিস পরিচালকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এরকম ঘটনা এবারই প্রথম নয়, প্রতি বছরই এরকম ঘটনা ঘটে এবং তাদের চাহিদা মতো টাকা দিতে অসম্মতি জানালে তারা আমাদের কাউকে ধরে নিয়ে রাতভর নির্যাতন চালায়। তিনি আরও বলেন, গতবছর একজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। পরবর্তীতে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তিনি আরও জানান, হামলাকারীরা ডুয়েটস্থ চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন, “গাংচিল” এর উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং গাংচিল পরিচালিত “ইন্টারনেট কোচিং”-এর সদস্য বলে জানা যায়।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “এটা নতুন কিছু নয়। তারা বিভিন্ন কোচিং এ হামলা এবং ছাত্রদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে বিভিন্ন কোচিং থেকে ভর্তি বাতিল করে নিজেদের কোচিং এ ভর্তি করতে প্রায়ই এমন সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে। এতে ডুয়েট ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মাঝেও আতঙ্ক দেখা যায়।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডুয়েট এডমিশনে থাকা কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তারা গাজীপুর আসার পর থেকে তাদের আঞ্চলিক সংগঠনের নিয়ন্ত্রণে থাকা কোচিং সেন্টারে ভর্তি হওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি এমনকি আঞ্চলিক বড় ভাই পরিচয়ে বাইরে ডেকে নিয়ে মানসিক নির্যাতন করা হয়েছে।
চতুর্থ বর্ষের একজন শিক্ষার্থী বলেন, গতবছর আমার এলাকার ছোট ভাই ডুয়েট এডমিশনে এসেছিল। কিন্তু চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন গাংচিল পরিচালিত ইন্টারনেট কোচিং এ ভর্তি না হওয়ায় কোচিং অফিসে ডেকে তাকে প্রকাশ্যে নির্যাতন চালানো হয়েছিল যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল।
সূত্র:দৈনিক নয়াদিগন্ত