এমিলিয়ানো মার্টিনেজ যেন টাইব্রেকার কিং। প্রায় প্রতি ম্যাচেই টাইব্রেকারে সাক্ষাৎ যমদূত হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছেন তিনি প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের সামনে। কোপা আমেরিকার প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালের খেলোয়াড়দের জন্যও সেটি হলেন তিনি। নিকোলাস ওতামেন্ডির শটটা জালে জড়াতেই উল্লাসে ফেটে পড়লো পুরো গ্যালারি। উল্লাসে ফেটে পড়লেন লিওনেল মেসি। আরেকবার বীরত্ব দেখালেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
শেষ সময়ে ইকুয়েডর গোল করে সমতায় ফিরলেও টাইব্রেকারে মার্টিনেজ বীরত্বে ৪-২ ব্যবধানে জিতলো আর্জেন্টিনা।
ম্যাচে উত্তেজনা ছড়ালো বেশ। প্রথমার্ধে লিসান্দ্রো মার্টিনেজের গোলে এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয়ার্ধে পেনাল্টি পেয়েও কাজে লাগাতে পারলো না ইকুয়েডর। ম্যাচ যখন উন্মাদনার তুঙ্গে, ঠিক তখনই শেষের দিকে দারুণ এক গোল করে ম্যাচ সমতায় নিয়ে আসেন ইকুয়েডরের কেভিন রুদ্রিগেজ। আগেই জানা গিয়েছিল, কোপার এবারের আসরে কোয়ার্টার ও সেমি-ফাইনালে থাকছে না কোনো অতিরিক্ত সময়। ফলে ম্যাচ গড়ালো টাইব্রেকারে। তাতে আরেকবার অভিজ্ঞতার ভেলকি দেখালেন মার্টিনেজ।
মেসি প্রথম শট মিস করতেই আর্জেন্টাইনদের চোখেমুখে হতাশা। কিন্তু আর্জেন্টিনার মার্টিনেজ আছেন যে! ইকুয়েডরের হয়ে প্রথম শটটি নিতে আসেন অ্যাঞ্জেল মেনা। বামদিকে ঝাঁপিয়ে তার শট রুখে দেন মার্টিনেজ। পরের শটে অ্যালান মিন্দার শটও আটকে সমর্থকদের আনন্দে ভাসান এমি।
ইকুয়েডরের মিসের বিপরীতে টানা চার শটে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন জুলিয়ান আলভারেজ, আলেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টার, গনজালো মন্টিয়েল ও ওতামেন্ডি। তাতে একটি শট বাকি থাকতেই উল্লাসে মেতে ওঠে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
এই ম্যাচে মেসির খেলার সম্ভাবনা ছিল না বললেই চলে। তবুও আশার আলো দেখিয়েছিলেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। শেষমেশ মাঠেও নামলেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক। দলকে এগিয়ে নিতেও সাহায্য করলেন। কর্নার থেকে তার ফ্রি-কিকে গোল করে প্রথমার্ধে দলকে এগিয়ে নেন লিসান্দ্রো মার্টিনেজ। ম্যাচের শুরুতেই বল নিজেদের দখলে রেখে খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। তাতে ৫১ শতাংশ সময় বল ছিল মেসিদের পায়ে। তবে গোলপোস্ট লক্ষ্য করে বেশি শট নেওয়ার সুযোগ পায়নি স্কালোনির দল। মাত্র ৮টি শট নিয়ে ২টি লক্ষ্যে রেখে ১ গোল আদায় করে নেয় তারা। বিপরীতে ৪৯ শতাংশ বল পায়ে রেখে ৯টি শট নিয়ে ১টি গোল পায় ইকুয়েডর।
আজ শুক্রবার (৫ জুলাই) টেক্সাসের হিউস্টনের এনআরজি স্টেডিয়ামে বল দখলের লড়াইয়ে আর্জেন্টিনা এগিয়ে থাকলেও প্রথম আক্রমণ করে ইকুয়েডর। ম্যাচের পঞ্চাদশ মিনিটে ময়েসেজ কালসেডোর বাড়ানো পাসে জেরেমি সারমিয়েন্তোর রুখে দেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। পরক্ষণেই লক্ষ্যভেদ হয় কেন্দ্রি পায়েজের আরেকটি শট। আর্জেন্টিনা ছন্দ-ছন্দে খেলে প্রথম আক্রমণটা শাণায় ম্যাচের ২৭তম মিনিটে। তবে নাহুয়েল মলিনার ক্রসে হেড দিয়েও জাল খুঁজে নিতে ব্যর্থ হন এনজো ফার্নান্দেজ। ৩৪তম মিনিটের মাথায় মেসির পাস থেকে শট নিয়েছিলেন এনজো। তবে প্রতিপক্ষের একজন খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে সেটা লক্ষ্যচ্যুত হয়।
অবশেষে ৩৫তম মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। কর্নার থেকে বল উড়িয়ে দিয়েছিলেন মেসি। ডি-বক্সের ভেতরেই মাথা ছুঁইয়ে সেটার দিক বদলে দেন ম্যাক অ্যালিস্টার। একদম মোক্ষম জায়গায় বল পেয়ে মাথার আলতো ছোঁয়ায় জাল খুঁজে নেন লিসান্দ্রো। বাকি সময়ে আর গোল না হওয়ায় এক গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
বিরতির পর ভালো একটি সুযোগ মিস করেন লাউতারো। এদিকে আর্জেন্টিনা বলের দখলই পাচ্ছিলো না। পাসিং ফুটবলের মহড়া সাজিয়ে বসেছিল ইকুয়েডর। নিজেদের পায়ে বল রেখে আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করে তারা। তেমনই একটি আক্রমণ থেকে পেনাল্টি পেয়ে যায় ইকুয়েডর। ফ্রি-কিক থেকে উড়ে আসা বল ঠেকাতে গিয়ে হাতে লাগিয়ে দেন রুদ্রিগো ডি পল। রিপ্লে দেখে পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। তবে সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন ইকুয়েডর অধিনায়ক ইনার ভ্যালেন্সিয়া। তার নেওয়া শট গোলপোস্টে লেগে লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
এরপর এলোমেলো হয়ে খেলতে থাকে আর্জেন্টিনা। এই সুযোগেই একের পর এক আক্রমণ করে যায় ইকুয়েডর। ফলাফল তারা পায় ম্যাচের যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে। ৯১ মিনিটের মাথায় মিন্দার ক্রসে মাথা ছুইয়ে আর্জেন্টিনাকে ভয় পাইয়ে দেয়া গোলটি করেন জর্দি কাইসেডো।
টাইব্রেকারে আবারও সেই এমিলিয়ানো মার্টিনেজ বীরত্বে ম্যাচ জিতলো আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম পেনাল্টি মিস করেন মেসি। কিন্তু এমি মার্টিনেজ টানা দুটি পেনাল্টি রুখে দিয়ে আর্জেন্টিনাকে ম্যাচে ফেরান। শেষ পেনাল্টিতে নিকোলাস ওতামেন্দি আর্জেন্টিনার হয়ে গোল করে দলকে সেমিফাইনালে তোলেন।