ঢাকা ০৩:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্রলীগ থামাতে ব্যর্থ প্রশাসন

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) কোনোভাবেই ছাত্রলীগের লাগাম টানা যাচ্ছে না। একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে তারা। গত দেড় বছরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরির জন্য পরীক্ষা দিতে আসা অনেককে নির্যাতন ও নাজেহাল হতে হয়েছে। প্রতিবেদন করতে গিয়ে সাংবাদিকেরাও তাঁদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।

এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবল তদন্ত কমিটি করেই দায় সেরেছে। ফলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের লাগাম টানা যাচ্ছে না কেন—এমন প্রশ্নে উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা শিক্ষকেরা লাগাম টানতে পারব না। সেটা সম্ভবও না। কারণ, এটা রাজনৈতিক বিষয়। রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান করতে হবে। ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে—এটা রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে।’

২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘স্টুডেন্ট কোড অব কনডাক্ট’ অনুযায়ী ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের মে মাসে ছাত্রলীগ সেই নিয়ম ভেঙে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের রাজনৈতিক সহিংসতার প্রথম বলি হন শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম রিয়াদ। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। এখনো সেই মামলার বিচার হয়নি। সেই ধারাবাহিকতায় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত দেড় বছরে এমন ১০টি ঘটনা ঘটে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ৪ জুন রাতে আবাসিক শিক্ষার্থী শাহরীন রহমান প্রলয়কে (২৪) তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। শহীদ মসিয়ূর রহমান ছাত্রাবাসে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার (৩০৬ নম্বর) কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। সভাপতির উপস্থিতিতে রাতভর নির্যাতনের পর ওই শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। শুধু ওই শিক্ষার্থী নন, এ ঘটনা চেপে যেতে তার মাকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বাড়িতে বোমা মারা হবে বলে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্রাবাসের ভেতরে ছাত্রলীগ সভাপতিকে সালাম না দেওয়ায় এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। গত ৭ ডিসেম্বর লিফট অপারেটর পদে চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে ১১ জন প্রার্থী ছাত্রলীগের নির্যাতন ও নাজেহালের শিকার হন। গত বছরের এপ্রিলে ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।

এ ছাড়া ১৪ অক্টোবর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সলের অনুসারীদের মধ্যে মারামারিতে পাঁচজন আহত হন। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় কমিটি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে। ১১ নভেম্বর সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

এ বিষয়ে তানভীর বলেন, ‘সেদিন বহিরাগত কিছু লোক ক্যাম্পাসে এসে ঝামেলা করেছিল। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সেটা তদন্ত করে দেখেছে। সত্যতা মেলায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে।’

ছাত্রলীগের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘সারা বছর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে নিউজ হয়েছে, এটা সত্য। কিন্তু ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগকে নিয়ে সংবাদ হয়। ওসব ঘটনা তদন্ত হচ্ছে, তদন্ত ঝুলে আছে। তদন্ত কমিটি যদি জড়িত থাকার কথা না বলে, তাহলে ছাত্রলীগের দোষ বলা যাবে না।’

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একটি বর্ধনশীল বিশ্ববিদ্যালয়। সারা দিনই ক্যাম্পাসে থাকি। তার মধ্যে ছাত্রলীগ নানা ধরনের সহিংস ও অস্থিরতা ঘটায়। এটা খুবই দুঃখজনক। তারা ক্যাম্পাসের বাইরের রাজনৈতিক প্রভাবে এসব ঘটনা ঘটায়। যারা বারবার এসব ঘটনা ঘটায়, তারা চিহ্নিত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও রাজনৈতিক প্রভাবে রক্ষা পেয়ে যায়। বহিষ্কার করলেও তারা ক্যাম্পাস ছাত্রাবাসে অবস্থান করে। বাইরের রাজনীতির শেল্টারে তারা এখানে অবস্থান করে।’

ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ

ইকুয়েডরকে ৭ গোল দিল আর্জেন্টিনা

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্রলীগ থামাতে ব্যর্থ প্রশাসন

আপডেট সময় ০৬:২১:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ জুন ২০২৪

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) কোনোভাবেই ছাত্রলীগের লাগাম টানা যাচ্ছে না। একের পর এক ঘটনা ঘটিয়েই চলেছে তারা। গত দেড় বছরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হাতে শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থী ও চাকরির জন্য পরীক্ষা দিতে আসা অনেককে নির্যাতন ও নাজেহাল হতে হয়েছে। প্রতিবেদন করতে গিয়ে সাংবাদিকেরাও তাঁদের টার্গেটে পরিণত হয়েছেন।

এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কেবল তদন্ত কমিটি করেই দায় সেরেছে। ফলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের লাগাম টানা যাচ্ছে না কেন—এমন প্রশ্নে উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা শিক্ষকেরা লাগাম টানতে পারব না। সেটা সম্ভবও না। কারণ, এটা রাজনৈতিক বিষয়। রাজনৈতিকভাবেই এর সমাধান করতে হবে। ছাত্ররাজনীতি ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে—এটা রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে।’

২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। ‘স্টুডেন্ট কোড অব কনডাক্ট’ অনুযায়ী ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক মিছিল-সমাবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের মে মাসে ছাত্রলীগ সেই নিয়ম ভেঙে রাজনৈতিক কার্যক্রম শুরু করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের রাজনৈতিক সহিংসতার প্রথম বলি হন শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলাম রিয়াদ। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। এখনো সেই মামলার বিচার হয়নি। সেই ধারাবাহিকতায় রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত দেড় বছরে এমন ১০টি ঘটনা ঘটে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ৪ জুন রাতে আবাসিক শিক্ষার্থী শাহরীন রহমান প্রলয়কে (২৪) তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। শহীদ মসিয়ূর রহমান ছাত্রাবাসে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার (৩০৬ নম্বর) কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। সভাপতির উপস্থিতিতে রাতভর নির্যাতনের পর ওই শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়। শুধু ওই শিক্ষার্থী নন, এ ঘটনা চেপে যেতে তার মাকে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বাড়িতে বোমা মারা হবে বলে মুঠোফোনে হুমকি দেওয়া হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় ওই শিক্ষার্থী বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ছাত্রাবাসের ভেতরে ছাত্রলীগ সভাপতিকে সালাম না দেওয়ায় এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। গত ৭ ডিসেম্বর লিফট অপারেটর পদে চাকরির পরীক্ষা দিতে গিয়ে ১১ জন প্রার্থী ছাত্রলীগের নির্যাতন ও নাজেহালের শিকার হন। গত বছরের এপ্রিলে ছাত্রলীগের দুই কর্মীর বিরুদ্ধে এক সাধারণ শিক্ষার্থীকে পাঁচ ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে।

এ ছাড়া ১৪ অক্টোবর ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সলের অনুসারীদের মধ্যে মারামারিতে পাঁচজন আহত হন। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় কমিটি শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করে। ১১ নভেম্বর সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।

এ বিষয়ে তানভীর বলেন, ‘সেদিন বহিরাগত কিছু লোক ক্যাম্পাসে এসে ঝামেলা করেছিল। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সেটা তদন্ত করে দেখেছে। সত্যতা মেলায় স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে।’

ছাত্রলীগের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ‘সারা বছর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে নিউজ হয়েছে, এটা সত্য। কিন্তু ঘটনার পরপরই ছাত্রলীগকে নিয়ে সংবাদ হয়। ওসব ঘটনা তদন্ত হচ্ছে, তদন্ত ঝুলে আছে। তদন্ত কমিটি যদি জড়িত থাকার কথা না বলে, তাহলে ছাত্রলীগের দোষ বলা যাবে না।’

সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একটি বর্ধনশীল বিশ্ববিদ্যালয়। সারা দিনই ক্যাম্পাসে থাকি। তার মধ্যে ছাত্রলীগ নানা ধরনের সহিংস ও অস্থিরতা ঘটায়। এটা খুবই দুঃখজনক। তারা ক্যাম্পাসের বাইরের রাজনৈতিক প্রভাবে এসব ঘটনা ঘটায়। যারা বারবার এসব ঘটনা ঘটায়, তারা চিহ্নিত। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও রাজনৈতিক প্রভাবে রক্ষা পেয়ে যায়। বহিষ্কার করলেও তারা ক্যাম্পাস ছাত্রাবাসে অবস্থান করে। বাইরের রাজনীতির শেল্টারে তারা এখানে অবস্থান করে।’