দুই বছর ধরে নিত্যপণ্যের চড়া দামের চাপে থাকা মধ্যবিত্তের জীবন আরও কঠিন হলো। চলতি বাজেটে বিভিন্নভাবে মধ্যবিত্তের খরচ বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার তাদের আয় বাড়ার আশাও কম।
বাজেটে শুল্ক ও কর বাড়ানোর ফলে মুঠোফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার, রেফ্রিজারেটর বা ফ্রিজ, শীতাতপনিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি), বৈদ্যুতিক বাতি কেনা এবং কোমল পানীয়, ফলের রস ও আইসক্রিম খাওয়ার খরচ বাড়বে। বিনোদন ও ভ্রমণ থেকেও বাড়তি কর আদায়ের পদক্ষেপ নিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
অবশ্য দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির পরও মানুষের করমুক্ত আয়সীমা বাড়েনি। অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী বছরও করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হবে না। করহারেও কোনো ছাড় নেই। যারা একটু সচ্ছল, তাদের ব্যাংকে রাখা টাকায়ও দিতে হবে আবগারি শুল্ক। কোনো ক্ষেত্রে তা বেড়েছে, কোনো ক্ষেত্রে হারটি কমেছে।
বেশি সমালোচনা হচ্ছে মুঠোফোন সেবায় উচ্চ হারে কর নিয়ে। বাজেটে (২০২৪-২৫) কথা বলা ও ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে, যা কার্যকর হয়ে গেছে। মোট করভার দাঁড়িয়েছে ৩৯ শতাংশের বেশি। ফলে ১০০ টাকা সেবা পেতে এখন ১৩৯ টাকা খরচ হচ্ছে।
ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব, টিকটক এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মধ্যবিত্তের জীবন ছাপিয়ে নিম্নমধ্যবিত্তের জীবনেও বিনোদনের অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরাও।
বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) হিসাবে, প্রতি মাসে কোনো ব্যক্তির করযোগ্য আয় সাড়ে ৩৭ হাজার টাকা হলেই ন্যূনতম ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে।
দেশে ১৫ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি আছে। এখন যার আয় মাসে ৩৭ হাজার টাকা, এক বছর পরে তার ক্রয়ক্ষমতা অনেকটাই কমে যাবে মূল্যস্ফীতির কারণে। কিন্তু করের ক্ষেত্রে ছাড় নেই।
সরকার বাজেটের আকার এবার খুব একটা বাড়ায়নি। বিনিয়োগ ও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রেও আশা করার মতো খবর নেই। ফলে খুব বেশি নতুন কারখানা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হবে, অনেক কর্মসংস্থান হবে, বাড়তি সংখ্যক বেকার চাকরি পাবেন, চাকরির বাজারে চাহিদার কারণে পুরোনোদের বেতন বেশি হারে বাড়বে এসব আশা করা যাচ্ছে না। মধ্যবিত্ত পরিবারে যে তরুণ বেকার, তার জন্য সুখবর নেই।
বেসরকারি সংস্থা আঁচল ফাউন্ডেশন গতকাল শুক্রবারই বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণদের নিয়ে করা একটি জরিপে জানিয়েছে, দেশের ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ পেশাজীবন নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।
বাজেটে বিভিন্ন নিত্যপণ্য সরবরাহে উৎসে আয়কর কমানো হয়েছে। ২ শতাংশ থেকে করা হয়েছে ১ শতাংশ। এতে খরচ কমতে পারে ১০০ টাকায় এক টাকা। সুফলটি মূলত পাবেন আমদানিকারকেরা। ওদিকে আমদানি পর্যায়ে মার্কিন ডলারের দাম ১১৩ টাকা ধরে শুল্কায়ন শুরু হয়েছে। এতে নিত্যপণ্যসহ সব পণ্য থেকে বাড়তি কর পাওয়া শুরু করেছে সরকার। আগামী মাসে ডলারের দাম আরও বাড়িয়ে ধরা হতে পারে। কারণ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতিতে ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ১১৭ টাকার বেশি।
বাজেটে শুল্ক কমানোর তালিকায় রয়েছে উল্লেখযোগ্য গুঁড়া দুধ। এর দাম কিছুটা কমতে পারে। কিন্তু ভোজ্যতেল, চিনি, জ্বালানি তেল ইত্যাদি পণ্যের শুল্ককর কমানোর কোনো ঘোষণা নেই বাজেটে। আলু, পেঁয়াজ, ডিম, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, মাছ ইত্যাদির চড়া দাম কীভাবে কমবে, সে কথাও বাজেটে নেই। গতকাল শুক্রবার বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলামও স্পষ্ট করে কিছু বললেন না।
বাজেটের বাইরের খবর হলো, ঢাকা ওয়াসা পানির দাম ১০ শতাংশ বাড়িয়েছে, যা বাজেট কার্যকরের দিন ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হবে। বিদ্যুতের দাম আগামী তিন বছর সমন্বয়ের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে সরকার, যা কার্যত বৃদ্ধি।