রাতজুড়ে তাণ্ডবের পর প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল উত্তর দিকে অগ্রসর ও দূর্বল হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে যশোরের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ঝড়টি। বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিস বলছে, এটি আরো উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে স্থল নিম্নচাপে পরিণত হবে।
গভীর নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় মোংলা, পায়রা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরের মহাবিপদ সংকেত নামিয়ে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
তবে এখনো মাছ ধরা ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে তাণ্ডব চালায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল। মধ্যরাতে ঝড়ের সাথে জলোচ্ছ্বাসে তলিয়েছে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, পিরোজপুরের বেশ বিস্তীর্ণ অঞ্চল।
ঝড়ের তাণ্ডবে ভেঙ্গেছে গাছ পালা, বাড়িঘর, বেড়িবাঁধ। দক্ষিণ অঞ্চলের অনেক মাছের ঘের তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি বাংলার সংবাদদাতা ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
বতর্মান ঘূর্ণিঝড় রিমাল খুলনা ও কয়রার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এটি আরও উত্তরদিকে অগ্রসর হচ্ছে।
সোমবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষ বুলেটিনে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় রিমাল সকাল আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে ক্রমশ: বৃষ্টিপাত ঝড়িয়ে সকাল ১১টা নাগাদ দুর্বল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
রোববার মধ্যরাতে থেকে ভোররাত পর্যন্ত দক্ষিণ উপকূলে তাণ্ডব শেষে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড়টি। সকাল সাতটার পর থেকে আবারো ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত শুরু হয় বিভিন্ন এলাকায়।
পেশাগত কাজে বাগেরহাটের মোংলায় অবস্থান করছিলেন বেসরকারি একটি উন্নয়ন সংস্থার কর্মী রামিম হাসান। তিনি জানান, রাত বারোটার পর থেকে জোয়ারের সাথে পানি বাড়তে থাকে, সেই সাথে বাড়ছিলো ঝড়ের তীব্রতা। মোংলার নীচু এলাকার বেশিরভাগ বাড়িঘর-দোকান পাট পানিতে তলিয়ে গেছে। আর সকাল থেকে ঝোড়ো বৃষ্টিতে পানিবন্দি অবস্থায় আছে এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ।
ঝড়ের তীব্রতা এখনো না কমায় মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরের ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের ৯ নম্বর মহাবিপদ সংকেত জারি রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভোর থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া দেখা যায় রাজধানী ঢাকায়। ভোর ছয়টা থেকে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বাড়তে থাকে বৃষ্টি।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের অগ্রভাগ আঘাত হানা শুরু করে রোববার সন্ধ্যা থেকে। তখন আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছিল মধ্যরাত নাগাদ এটি উপকূল ও স্থলভাগ অতিক্রম করবে।
অনেকেই ভেবেছিল মধ্যরাতের মধ্যে ঝড় থেমে যাবে। কিন্তু মধ্যরাতের পরই শুরু হয় মূল ঝড়।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ তখন ছিল ৯০ কিলোমিটার; যা দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বাড়ছিল।
বাগেরহাটের শরণখোলা থেকে মিঠুন কুমার শিকারী রাতে পোস্ট দিয়ে লেখেন, “এখন রাত ২টা বাজে, সবকিছু লণ্ডভণ্ড হয়ে যাচ্ছে।”
মধ্যরাতে রিমালে তাণ্ডবে খুলনা বাগেরহাট সাতক্ষীরার বেশিরভাগ রাস্তায় ভেঙ্গে পড়ে বড় বড় গাছ। সকালে দেখা যায়, বেশিরভাগ রাস্তায় ভেঙ্গে পড়ে আছে বড় বড় গাছ।
ঝড় ও বৃষ্টির তীব্রতা না কমায় অনেক এলাকার সড়ক থেকে সরানো যাচ্ছে না গাছ। ফলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক এলাকা। গাছের সাথে অনেক জায়গায় বিদ্যুতের খুটি ভেঙ্গে পড়েছে রাস্তায়। বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট ব্যহত হওয়া অনেকেই ঢাকা থেকে পরিবারের সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন না বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিয়ে জানাচ্ছেন।
মাসুদ রায়হান পলাশ নামে এক ব্যক্তি ফেসবুক পোস্টে জানান তার পরিবারের সাতক্ষীরায় থাকে। রোববার রাত থেকে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ফোনে পাচ্ছেন না।