বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা খ্যাপ খেলতে পাড়ার মাঠের গেলে কিনারে দর্শক দাঁড়ানোর জায়গা থাকবে না। সেখানে আনকোরা, গ্যালারি-দর্শকহীন মাঠে বিশ্বকাপের আয়োজক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ বাংলাদেশের! যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেট দল, উইকেট-কন্ডিশন জানা-বোঝার ভার যেন পড়েছে লিটন-শান্তদের কাঁধে। ওই বোঝা-পড়ার শুরুতে ফেল করেছে বাংলাদেশ। টি-২০ বিশ্বকাপের অন্যতম স্বাগতিক যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজের প্রথটিতে ৫ উইকেটের বড় ব্যবধানে হেরেছে শান্তরা।
প্রেইরি ভিউতে রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে শেষ ওভারে বাংলাদেশকে ৫ উইকেট আর ৩ বল হাতে রেখে হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে তারা এগিয়ে গেছে ১-০তে।
১৫৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে যুক্তরাষ্ট্র। স্টিভেন টেলর আর মোনাক প্যাটেল ১৯ বলে তুলে দেন ২৭ রান। শরিফুল ইসলামের বলে টেলর শট খেললে হাতে লেগে ননস্ট্রাইকের স্টাম্প ভেঙে যায়। ভাগ্যগুণে মোনাকের (১০ বলে ১২) উইকেট নিয়ে জুটি ভাঙে বাংলাদেশ।
তবে টেলর আর আন্দ্রেস গুস দ্বিতীয় উইকেটে আবার ভয় ধরান। ৩২ বলে তারা যোগ করেন ৩৮ রান। এক উইকেটেই ৬৫ রান তুলে ফেলেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেখান থেকে বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান বোলাররা। ১৩ রানের মধ্যে ৩ উইকেট তুলে নেয় টাইগাররা। এর মধ্যে দুটি উইকেট মোস্তাফিজুর রহমানের, একটি নেন রিশাদ হোসেন।
১৮ বলে ২৩ করে গুস হন রিশাদের শিকার। মোস্তাফিজ সাজঘরে ফেরান টেলর (২৯ বলে ২৮) আর অ্যারন জোনসকে (১২ বলে ৪)। ১০ বলে ১০ করে নিতিশ কুমার উইকেট দেন শরিফুলকে। একশর আগে (৯৪ রানে) ৫ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। মাথার ওপর রানের চাপ বাড়তে থাকে।
সেখান থেকে রান তাড়ায় দারুণভাবে ছুটেছে যুক্তরাষ্ট্র। মোস্তাফিজ-শরিফুলদের পিটিয়ে ২৮ বলে ম্যাচ জেতানো ৬২ রানের জুটিতে হারমিত সিং আর কোরি অ্যান্ডারসন ম্যাচটা বের করে নিয়ে আসেন। হারমিত ১৩ বলে ৩৩ আর অ্যান্ডারসন ২৫ বলে অপরাজিত থাকেন ৩৪ রানে।
মোস্তাফিজ ২ উইকেট পেলেও ৪ ওভারে খরচ করেন ৪১ রান। শেষ দুই ওভারে যুক্তরাষ্ট্রের দরকার ছিল ২৪। ১৯তম ওভারে মোস্তাফিজ ১৫ রান দিলে বাংলাদেশের সব আশা শেষ হয়ে যায়। শরিফুল ৪ ওভারে ৩১ রানে একটি, রিশাদ ২ ওভারে ১৬ রানে নেন দুটি উইকেট। সাকিব ৩ ওভারে ১৬ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।
এর আগে তরুণ তাওহিদ হৃদয়ের হাফ সেঞ্চুরিতে ভর করে ৬ উইকেটে ১৫৩ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। ৪৭ বলে ৫৮ রান করে ইনিংসের শেষ বলে আউট হন হৃদয়। চার বাউন্ডারির সঙ্গে ২টি ছক্কার মার মারেন তিনি।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে প্রথম থেকেই ধুঁকতে দেখা যায় দুই ওপেনারকে। বিশেষ করে লিটন দাসকে। যুক্তরাষ্ট্র বোলারদের মোকাবিলা করতে পারছিলেন না তিনি। দেখে মনে হচ্ছিল যেন ব্যাটিংই ভুলে বসেছেন দেশের অন্যতম সেরা এই ব্যাটার।
শেষ পর্যন্ত ১৫ বলে ১৪ রান করে আউট হন লিটন। এর মাঝে আবার একটি জীবনও পেয়েছিলেন তিনি। সৌম্য সরকারকে একটু স্বাচ্ছন্দ্য মনে হচ্ছিল। কিন্তু ১৩ বলে ২০ রান করে তিনিও আউট হয়ে যান।
জিম্বাবুয়ে সিরিজে যারপরনাই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। তার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেও। ১১ বল খেলে ৩ রান করে আউট হন শান্ত।
দুর্ভাগ্য ভর করে বাংলাদেশের ব্যাটারদের ওপর। ১২ বল খেলে ৬ রান করে রানআউট হয়ে যান সাকিব আল হাসানও। ৬৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে যখন ধুঁকছিলো টাইগাররা, তখন বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং তাওহিদ হৃদয়।
দুই নবীন-প্রবীণের জুটিতে ৬৮ রান ওঠে। ২২ বলে ৩১ রান করে দলীয় ১৩৫ রানের মাথায় আউট হন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তাওহিদ হৃদয় শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে দলীয় রান ১৫০ এর গণ্ডি পার করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে স্টিভেন টেলর উইকেট নেন ২টি। একটি করে উইকেট নেন সৌরভ নেত্রভাকার, আলি খান এবং জেসি সিং।