বগুড়ায় সরকারি হাসপাতালে রেজাউল করিম নামে এক রোগী বাঁকা দাঁত তুলে নিতে গিয়ে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন। বাঁকার বদলে তোলা হয় তার ভালো দাঁত। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করতে গেলেও তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার অভিযোগ গ্রহণ করেনি।
অভিযোগ রয়েছে, ভালো দাঁত হারানোর পরেও রেজাউলকে হয়রানি করা হয়। এমনকি ক্ষীপ্ত হয়ে তাকে বলা হয় সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে এলে এমনই হবে। পরে তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার সময় চিকিৎসক বলেন, মনে করেন যে আপনার ওই দাঁত পোকা খেয়ে ফেলেছে!
এমন ঘটনা ঘটেছে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে।
এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার (১৪ মে) দুপুরে বগুড়ার সিভিল সার্জন কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন রেজাউল করিম।
এর আগে, সোমবার (১৩ মে) দুপুরে লিখিত অভিযোগ করতে শজিমেক হাসপাতালে যান রেজাউল। ওই সময় তাকে দেখে চিকিৎসকরা ভুল স্বীকার করলেও তার অভিযোগ নেওয়া হয়নি।
রেজাউল বলেন, ‘অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালের উপপরিচালকের কক্ষে যাই। সেখানে আমাকে বলা হয় তিনমাস পর আমার আমাকে কৃত্রিম দাঁত (ইমপ্ল্যান্ট) লাগিয়ে
দেওয়া হবে। অভিযোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎসকরা যে আমাকে কৃত্রিন দাঁত লাগিয়ে দেবেন-এবিষয়ে আমি লিখিত একটি কাগজ চেয়েছিলাম। তখন শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালকসহ অন্য চিকিৎসকরা বলেন ওই বিষয়ে লিখিত দেওয়া যাবে না। তখন আমি লিখিত অভিযোগটি দিতে যাই। ওই সময় আমাকে বলা হয় আপনার অভিযোগও নেওয়া হবে না। এরপর আমি শজিমেক হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসি।’
গত শনিবার (১১ মে) সকালে শজিমেক হাসপাতালে ভুল চিকিৎসার শিকার হন রেজাউল করিম।
২৬ বছর বয়সী রেজাউল বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ফুলকোট গ্রামের বাসিন্দা।
সম্প্রতি তার আক্কেল দাঁত ওঠে। সেই দাঁতটি বাঁকা হয়ে বেড়ে উঠে। ফলে তার মাড়িতে প্রচণ্ড ব্যথা করতো। একারণে শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসক (ডেন্টাল সার্জন) জাহান সাদিয়া ইভার শরণাপন্ন হন তিনি। তাকে দেখে বাঁকা দাঁতটি তুলে নিতে বলেন চিকিৎসক। শজিমেক হাসপাতালে দায়িত্বরত কয়েকজনের মধ্যে একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক তার দাঁত তুলে দেন। পরবর্তীতে রেজাউল বুঝতে পারেন বাঁকা নয়, তার ভালো দাঁত তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে সেখানে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুলতে গিয়ে হয়রানির শিকারও হন তিনি।
রেজাউল বলেন, ‘আমি কয়েকবার আমার বাঁকা দাত দেখিয়ে দিয়েছি। এছাড়া চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনেও মাড়ির আট নম্বর (বাঁকা) দাঁত তোলার কথা লেখা ছিল। এরপরেও আমার ভালো দাঁত (সাত নম্বর) তুলে ফেলা হয়েছে। এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ তুললে কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক আমাকে বলেন সরকারি হাসপাতালে এলে এমনই হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার সুস্থ দাঁত তুলে নেওয়ার বিষয়টি চিকিৎসক জাহান সাদিয়া ইভাকে জানাই। তিনি দাঁত তোলা সংশ্লিষ্টদের তার কক্ষে ডেকে নেন। ওই সময় আমার সামনে তাদেরকে বকাঝকা করেন তিনি। পরবর্তীকে চিকিৎসক ইভা আমাকে বলেন বিষয়টি ভুল করে ঘটে গেছে। এসময় তিনি আমাকে বলেন মনে করেন আপনার ওই দাঁতটি পোকা খেয়ে ফেলেছে।’
ওই সময় সপ্তাহখানেক পর রেজাউলকে আবারও হাসপাতালে এসে সেই বাঁকা দাঁতটি তুলে নিয়ে যেতে বলেন চিকিৎসক জাহান সাদিয়া ইভা।
এ বিষয়ে চিকিৎসক জাহান সাদিয়া ইভার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তাকে পাওয়া না গেলেও তার স্বামী চিকিৎসক শাইখ আহমেদ রিংকু মুঠোফোনে জানান, সাদিয়া জাহান ইভা শুধু প্রেসক্রিপশনে বাঁকা দাঁতটি তুলে নিতে বলেছেন। হাসপাতালে দাঁত তোলার দায়িত্ব অন্যদের।
জানতে চাইলে শজিমেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘রেজাউলের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তার চিকিৎসার দায়িত্ব আমি নিজেই নিবো। তিনমাস পর তাকে কৃত্রিম দাঁত লাগিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো লিখিত দেওয়া যাবে না।’
অন্যদিকে রেজাউল বলেন, ‘চিকিৎসকরা আমার সঙ্গে যে আচরণ করেছেন-এতে আমি সরকারি হাসপাতালের ওপর আস্থা পাচ্ছি না। এ কারণে আমি অভিযোগই দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমার অভিযোগ নেওয়া হলো না। এ বিষয়ে আমি বগুড়ার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে অভিযোগ করেছি।’
বগুড়ার সিভিল সার্জন মোহাম্মদ শফিউল আজম জানান, শজিমেক হাসপাতালে রোগী ভুল চিকিৎসা ও দুর্ব্যবহারের শিকার হওয়া বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। রেজাউলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।