আজকের প্রত্রিকার প্রধান প্রধান খবর:
যুগান্তর:
রাবি ছাত্রলীগে সংঘর্ষ অস্ত্রের মহড়া
নেতাকর্মীরা লাঠি, রড, রামদা, চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র হাতে তাতে অংশ নেয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) গেস্টরুমে বসাকে কেন্দ্র করে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। শনিবার রাত ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে রাত ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ সেখানে গিয়ে দুই পক্ষকে সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত ৯টার দিকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের গেস্টরুমে বসে সাংগঠনিক আলোচনা করছিলেন ওই হল শাখার সহসভাপতি ও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আতিকুর রহমানসহ প্রায় ২০ জন নেতাকর্মী। তিনি রাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। আলোচনাকালে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদ কয়েকজন অনুসারীকে নিয়ে এসে কিছুক্ষণের জন্য তাদেরকে গেস্টরুম ছেড়ে দিতে বলেন। এ নিয়ে দুপক্ষের মাঝে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে সেটি সংঘর্ষে রূপ নেয়।
সরেজমিন দেখা যায়, সংঘর্ষ শুরু হলে বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা লাঠি, রড, রামদা, চাপাতিসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র হাতে তাতে অংশ নেয়। এ সময় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক নিয়াজ মোর্শেদের অনুসারীরা হলের ভেতরে এবং বর্তমান কমিটির নেতাকর্মীরা হলের বাইরে অবস্থান নিয়ে এক পক্ষ অন্য পক্ষকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। এ সময় ৬-৭টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। দফায় দফায় এ সংঘর্ষ চলার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম (প্রশাসন) এবং উপ-উপাচার্য অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর (শিক্ষা), প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাঊদ, হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, মতিহার থানার ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মধুসূদন রায়সহ বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনের অন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। তারা পরিস্থিতি শান্ত করে রাত ৩টার দিকে হলের ভেতরে অভিযান পরিচালনা করেন।
সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা চেষ্টা করেছি প্রতিটি কক্ষে প্রবেশ করে তল্লাশি করার। হলে কোনো দেশীয় অস্ত্র পাইনি। কোনো বহিরাগত পাওয়া যায়নি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে। যেখানে দেশীয় অস্ত্রের কথাও শুনেছি। কিন্তু আমরা যখন হলের বিভিন্ন কক্ষে প্রবেশ করি, তখন কোনো অস্ত্রের নমুনা পাইনি। আমরা উপস্থিত হওয়ার পর দুর্ঘটনা এড়াতে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মানবজমিন:
বিদেশি ঋণ পরিশোধে চাপে সরকার
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পেতে বিভিন্ন শর্ত মানতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার করতে হচ্ছে। এসব শর্ত অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ আরও বাড়িয়ে তুলছে। সর্বশেষ একদিনে ডলারের দাম ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। এতে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে ৬.৩৬ শতাংশ। ডলারের এই দর বৃদ্ধিতে চাপ তৈরি হবে বিদেশি ঋণ পরিশোধে। পাশাপাশি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ১৮ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসায় আরেক চাপ তৈরি হয়েছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ব্যয়ে বড় অংশের জোগান আসে বিদেশি ঋণ সহায়তায়। এ ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে সরকারের ব্যয় এখন ক্রমেই বাড়ছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে সুদহার বেড়ে যাবে। বাড়বে সংকট।
সরকারি-বেসরকারি বিদেশি ঋণ আরও ব্যয়বহুল হবে। পুঁজিবাজার থেকে বিদেশি বিনিয়োগ প্রত্যাহার বেড়ে যাবে।
বিদেশি ঋণের সুদ এবং আসল পরিশোধ বাবদ চলতি অর্থবছরের গত ৯ মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৭ শতাংশ বেশি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, ডলারের হিসাবে যা ৪৮ শতাংশ বেশি। ডলারের দাম নতুন করে আরেক দফা বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি ঋণ পরিশোধে বড় ধরনের চাপ তৈরি হলো। শুধু মুদ্রার অবমূল্যায়নের কারণেই সমপরিমাণ সুদাসল পরিশোধে বেশি টাকা দরকার হবে।
বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে সরকারের ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশ ও দাতা সংস্থা চলতি অর্থবছরের (২০২৩-২৪) প্রথম ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণের অর্থ ছাড় করেছে ৫৬৩ কোটি ডলার। এ সময় সরকারকে বিদেশি ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ করতে হয়েছে ২৫৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার। সে হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাংলাদেশের অনুকূলে ঋণ হিসেবে ছাড়কৃত অর্থের অর্ধেকের কাছাকাছি (প্রায় ৪৬ শতাংশ) ব্যয় হয়েছে ঋণের কিস্তি (সুদ ও আসল) পরিশোধে। এর আগে ২০২২-২৩ অর্থবছরে একই সময়ে (জুলাই-মার্চ) দেশে বিদেশি ঋণের অর্থছাড় হয় ৫৩৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। আর ওই সময়ে ঋণ পরিশোধে (আসল ও সুদ) ব্যয় হয় ১৭৩ কোটি ৩ লাখ ডলার, যা ছাড়কৃত অর্থের ৩২.২৬ শতাংশ। গত ৯ মাসে শুধু সুদ পরিশোধের পরিমাণ ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ ডলার, গত অর্থবছরের একই সময়ে, যা ছিল ৪৮ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। গত ৯ মাসে আসল পরিশোধ হয় ১৫২ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময় ছিল প্রায় ১২৪ কোটি ডলার।
কালের কন্ঠ:
ডলার উধাও
ডলার সংকট
বাজার থেকে হঠাৎ করে উধাও হয়ে গেছে ডলার। আমদানিকারকরা এলসি খুলতে ব্যাংকের কাছে ধরনা দিলেও ডলার পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে খোলাবাজার থেকে ডলার কিনে দেনা পরিশোধ করছেন কোনো কোনো আমদানিকারক। ডলারের এই সংকট তৈরির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতির দুর্বলতাকে দায়ী করছেন অনেকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৮ মে ডলারের দাম ও ঋণের সুদের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পালনের অংশ হিসেবে ডলারের দাম ১১০ টাকা থেকে একলাফে সাত টাকা বাড়িয়ে ১১৭ টাকা করা হয়। এতে সরাসরি প্রভাব পড়েছে ব্যাংক ও খোলাবাজারে। ফলে এলসি খোলার ক্ষেত্রে ১২০ টাকা এবং খোলাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ১২৫ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।
ডলারের দাম একলাফে ৬.৩৬ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় জ্বালানি আমদানির খরচ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। এতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই চাপ মোকাবেলায় সরকারকে ভিন্ন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রাহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমদানিতে সরাসরি ডলারের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে।
এত কিছুর পরও অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহুল পণ্য আমদানি বন্ধ করা যাচ্ছে না। কিন্তু ব্যাংকগুলো ডলার সংকটের অজুহাতে প্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খুলছে না। এমনকি রপ্তানিমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রেও ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়ে আমরা খোলাবাজার থেকে ডলার কিনছি। এ ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম পড়ছে ১২৪ টাকা পর্যন্ত।
’
তিনি আরো বলেন, ‘আমদানিকারকরা ডলারের বেশি দাম নিয়ে চিন্তা করছেন না, যেকোনো মূল্যে তাঁদের ডলার চাই। অথচ বেশি দাম নিয়েও ডলার দিতে পারছে না ব্যাংকগুলো। বেশি খরচ দিয়ে পণ্য আমদানি করে উৎপাদন করতে চাইলেও তা করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। কারণ ব্যবসায়ীরা ডলার পাচ্ছেন না।’ উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় অপ্রয়োজনীয় বিলাস পণ্য আমদানি পুরোপুরি বন্ধ এবং ডলার ছাড়াও অন্য দেশের সঙ্গে মুদ্রাচুক্তিতে (কারেন্সি সোয়াপ) যাওয়ার পরমর্শ দিয়েছেন এই ব্যবাসী।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি বেসরকারি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের প্রধান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ব্যাংকগুলো এলসি খোলার গতি কমিয়ে দিয়েছে। যেসব রপ্তানিকারকের ডলার অ্যাকাউন্টে জমা আছে, বর্তমানে শুধু তাঁরাই আমদানির দায় পরিশোধ করতে পারছেন। এর বাইরে যাঁরা ব্যাংক থেকে ডলার কিনে আমদানি বিল পরিশোধের চিন্তা করছেন, তাঁরা সবাই ফিরে যাচ্ছেন। কারণ বেশির ভাগ ব্যাংকের কাছেই ডলার জমা নেই। আবার যাঁদের কাছে আছে তাঁরা ভবিষ্যৎ আমদানি পেমেন্টের কথা চিন্তা করে ডলার খরচ করছেন না।’
নয়াদিগন্ত:
গাজায় যুদ্ধবিরতি আদেশ জারি করতে পারে আইসিজে
– রাফাসহ গাজার বিভিন্ন অংশে হামলা
– ইসরাইলে সরকার পতনের ডাক
– অবিলম্বে গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি আদেশ জারি করতে পারে আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে)। ইসরাইলি গণমাধ্যমের খবরে এমনটি দাবি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানি সংবাদ সংস্থা ইরনা। বৈরুতভিত্তিক আল-মায়াদিন নিউজ নেটওয়ার্ক জানিয়েছে, দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধে আইসিজে ওই নির্দেশ জারি করতে যাচ্ছে বলে ইসরাইলি গণমাধ্যমগুলো ধারণা করছে।
ইসরাইলি বাহিনী যখন গাজা উপত্যকার সর্বদক্ষিণের শহর রাফায় আগ্রাসন জোরদার করেছে তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরাইলের বিরুদ্ধে আরো কঠোর নির্দেশ জারির অনুরোধ জানিয়েছে। আইসিজেকে দক্ষিণ আফ্রিকা বলেছে, রাফা শহরে প্রায় ১৫ লাখ ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছে। সেই সাথে ওই শহর দিয়ে মিসর হয়ে গাজা উপত্যকার জন্য ত্রাণের সবচেয়ে বড় চালান প্রবেশ করে। এ অবস্থায় রাফায় ইসরাইলি আগ্রাসন গাজাবাসীর জন্য ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনবে।
ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে বলে গত ৮ জানুয়ারি আইসিজেতে অভিযোগ জানায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ওই অভিযোগের শুনানি শেষে আন্তর্জাতিক আদালত ইসরাইলকে গাজায় গণহত্যার মতো অপরাধ বন্ধ করতে এবং মানবিক ত্রাণের চালান অবাধে প্রবেশ করতে দেয়ার নির্দেশ জারি করে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা জানিয়েছে, তেল আবিব আইসিজের জারি করা নির্দেশ পালন করছে না। এ দিকে ইসরাইল ও হামাস কয়েক দফা আলোচনায় বসার পরও এখনো যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, হামাস যদি নিজেদের কব্জায় থাকা বন্দীদের সবাইকে আজ মুক্তি দেয়, তা হলে আগামীকাল থেকেই যুদ্ধবিরতি সম্ভব গাজায়। শুক্রবার রাজধানী ওয়াশিংটনের সিয়াটলে এক জনসভায় এ কথা বলেছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক প্রচেষ্টায় গত ২৫ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর গাজায় অস্থায়ী বিরতি ঘোষণা করেছিল হামাস এবং ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সে সময় ইসরাইলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দী দেড় শ’ ফিলিস্তিনির বিপরীতে বন্দীদের মধ্যে থেকে ১০৮ জনকে মুক্তি দিয়েছিল হামাস। বিরতির পর ফের পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ শুরু হয় হামাস ও আইডিএফের মধ্যে। এই যুদ্ধের তিন মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র কয়েক মাস ধরে বেশ কয়েক বার চেষ্টার পরও এখন পর্যন্ত গাজায় দ্বিতীয় দফা যুদ্ধবিরতি আনতে সফল হতে পারেনি। তাই বাকি ১৩২ জন বন্দীর ভাগ্যে কী ঘটছে বা তাদের মধ্যে কয়জন এখন পর্যন্ত বেঁচে আছেন- তা এখনো অজানা। বন্দীদের ফিরিয়ে আনতে কয়েক দিন ধরে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়েছে ইসরাইলে। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন বাইডেন। কিন্তু ইসরাইলের যুদ্ধকালীন সরকার তাতে কর্ণপাত না করে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাফায় অভিযান শুরু করে। এই নিয়ে টানাপড়েনের জেরে সম্প্রতি ইসরাইলে অস্ত্র সরবরাহ পাঠানোয় স্থগিতাদেশ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
বাংলাদেশ প্রতিদিন:
ঘুরে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জে সরকার
টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রিসভা গঠনের পাঁচ মাস পার হয়েছে। নবীন-প্রবীণদের নিয়ে গঠিত সরকারের সামনে অনেক বিষয়ে সতর্কতা রয়েছে। এর মধ্যে মোটা দাগে রয়েছে, ডলার সংকট কাটিয়ে ওঠা, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ফেরানো। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরা। নানা অনিয়ম, দুর্নীতি রোধ করা। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা। অন্যদিকে রপ্তানি আয়, বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সৃষ্ট টানাপোড়েন তথা সম্পর্কের বরফ গলানোর মতো বিষয়গুলো নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তৎপর হতে হবে। বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে সরকারবিরোধী অপপ্রচার রোধ করাসহ ঘরে-বাইরের এসব চ্যালেঞ্জের উত্তরণ ঘটাতে হবে বর্তমান সরকারকে। গত ২০০৯ সাল থেকে টানা ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ। বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদ থেকে গেল ১৫ বছরের বেশি সময়ে নতুন মাত্রা পেয়েছে দেশের অর্থনীতি। মাথাপিছু আয়, প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ, রপ্তানি-রেমিট্যান্স রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু মহামারি করোনা, আর ইউক্রেন যুদ্ধ সবকিছু ওলটপালট করে দেয়। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে গেছে। সংকট দেখা দিয়েছে ডলারের। অর্থনৈতিক সংকট প্রকট। এর বাইরে নানা অব্যবস্থাপনা, দ্রব্যমূলের চড়া দাম মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। তাই সরকারকে নানা দিক ভেবেচিন্তে পা ফেলার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
দেড় দশকে অর্থনীতিতে নতুন গতি সঞ্চার করে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় ইশতেহার ঘোষণার সময় এই স্বপ্ন দেখান তিনি। সে পথেই হাঁটছে বর্তমান সরকার। বর্তমানে যেসব সংকট রয়েছে, সেগুলো সমাধানের জন্য সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করে সামনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন রাজনীতি ও সমাজ ও অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ প্রকাশ্য রূপ নিতে পারে। সে কারণে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনাকে সরকারের অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক। বিশেষত রিজার্ভ সংকট ও মূল্যস্ফীতি অর্থনীতির জন্য বড় সংকট সৃষ্টি করেছে। দ্রব্যমূল্য কমিয়ে জনমনে স্বস্তি ফিরিয়ে দেওয়া নতুন সরকারের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। এখন ডলার সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ব্যবসায়ীরা ঠিকমতো এলসি খুলতে পারছেন না। কাজেই দ্রুতই এ সংকট সমাধান করতে হবে। ব্যাংক খাতেও নানা সংকট চলছে। খেলাপি ঋণ আদায় হচ্ছে না। অনেকে সঠিক কাগজপত্র দিয়েও ব্যাংকের ঋণ পায় না। আবার অনেকে ভুয়া কাগজ দেখিয়ে কোটি কোটি ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন। সেগুলোও উদ্ধারে সঠিক পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। এ প্রসঙ্গে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডলার সংকট নিয়ে আমরা আগে থেকেই বলে আসছি, অনেক দেরিতে হলেও সরকার সে পথেই হাঁটছে। ডলারের বিনিময় হার বাজার ভিত্তিক করে দিচ্ছে। যদিও এতে টাকার অনেক অবমূল্যায়ন হয়েছে। এতে মাকের্টটা কিছুটা হলেও স্থিতিশীল হবে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে একটু সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই নীতি ধরে রাখলে কিছুদিন পর মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করবে, ছেড়ে দিলে হবে না। ব্যাংকিং খাতের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করা প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতের অনিয়ম দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার হচ্ছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। এই সমস্যা আইন করে সমাধান করা যাবে না। রাজনৈতিকভাবেই করতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করে অনিয়ম থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ব্যাংক একীভূত করণের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, সেটাও বাস্তবায়ন করতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপচার্য ড. মীজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অর্থনীতিতে সংকট আছেই। রিজার্ভ বাড়ানো দরকার। মুদ্রাস্ফীতির হার মানুষকে কষ্ট দিচ্ছে। ব্যাংক থেকে যেসব টাকা চলে গেছে, সেগুলো উদ্ধারে উদ্যোগ নিতে হবে। ঋণ খেলাপি বা অর্থ পাচারকারীদের শুধু জেল দিলেই সমস্যার সমাধান হবে না। জেল দেওয়ার পাশাপাশি অর্থ উদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে সেগুলো বন্ধ করতে হবে। বিএনপিসহ তাদের মিত্ররা সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে চাইবে। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। এ ছাড়াও সরকারবিরোধী সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচার রোধে শক্ত অবস্থানে থাকতে হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। তারা এখন পর্যন্ত এই নির্বাচন মেনে নেয়নি। তারা নির্বাচনের বিরুদ্ধে এবং নতুন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। এই আন্দোলনে তারা কতটুকু সফল হতে পারে সেটি পরের বিষয়। কিন্তু বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা করার জন্য আওয়ামী লীগকে সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী হতে হবে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবে চরম দুর্বল। এই দুর্বল সংগঠন নিয়ে কতটা রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবে সেই প্রশ্ন থেকে যায়। গত জাতীয় নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের নেতিবাচক মনোভাব ছিল। এর ফলে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে নতুন মেরুকরণ হয়েছে। এক্ষেত্রে জোরদার কূটনীতি দরকার। সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। কূটনৈতিকরা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা এখন নেই। নির্বাচন প্রায় সব দেশ মেনে নিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের সামনে সব সময়ই চ্যালেঞ্জ ছিল। এখনো আছে। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন তো সব দেশ মেনে নিয়েছে। সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে। কাজেই খুব বেশি চ্যালেঞ্জ আমি দেখছি না।’ এখন সারা দেশে উপজেলা নির্বাচন চলছে। এই নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি হচ্ছে। সরকারদলীয় এমপি-মন্ত্রীদের আধিপত্ত বিস্তারের কারণে তৃণমূলে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। উপজেলা ভোটকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন স্থানে হামলা-সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। অন্যদিকে নানা সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটার শঙ্কা করা হচ্ছে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা দরকার বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। আওয়ামী লীগ সরকারই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলছে। সেই ডিজিটালের সুবিধা নিয়ে সরকার বিরোধীরা দেশ-বিদেশে বসে নানা মিথ্যাচার করে চলছে। সরকার এগুলো শক্তহাতে মোকাবিলা করতে পারছে না। শুধু সরকারের বিরুদ্ধেই নয়, সমাজের আলোকিত ও পরিচিত বা আওয়ামী লীগের জন্য যারা নানা ভাবে ভূমিকা রাখছেন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে চলেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারকে এগুলো দ্রুত সমাধান করতে হবে। মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য তুলে ধরে জবাব দিতে হবে।
প্রথম আলো:
মুখের কথায় বাজার থামছে না
বছরের এই সময় আলু সাধারণত সস্তা থাকে। সরকারি সংস্থা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের ২০২১, ২০২২ ও ২০২৩ সালের ৯ মে তারিখে বাজারদরের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, আলুর কেজি সর্বনিম্ন ২২ থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ টাকার মধ্যে ছিল। এবার সেই আলুর দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। গত বছরের তুলনায় মূল্যবৃদ্ধি ৫৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ আলু আমদানি করে না। সরকারি
হিসাবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি। প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মতে, বাজারে যৌক্তিক মূল্য হওয়া উচিত ২৮ টাকা ৫৫ পয়সা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। মূল্য নিয়ন্ত্রণের বদলে সরকার আলু রপ্তানিকে উৎসাহিত করছে। নগদ ১৫ শতাংশ ভর্তুকিও দেওয়া হচ্ছে।
আলুর মতো বাজারে নতুন করে পেঁয়াজ, রসুন, ডিম, মুরগি, গরুর মাংস, সবজি, মসলাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। আগে থেকেই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আটাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে নতুন করে মূল্যবৃদ্ধি নিম্ন আয়ের মানুষের সংকট বাড়িয়েছে। যদিও গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর গঠিত নতুন সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকারের কথা বলেছিল। নতুন মন্ত্রিসভা আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আশাবাদের কথা শুনিয়েছিল। এরপর রোজায় ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরে কিছু শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য রোজার পরই তেলের করছাড় তুলে নেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন লিটারে ৪ টাকা।
এদিকে নতুন বছরে বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। গত মার্চে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়। জ্বালানি তেল ডিজেলের দাম লিটারে ৩ টাকা কমিয়ে পরে ১ টাকা বাড়ানো হয়। যদিও এতে পরিবহন ভাড়া কমেনি। ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ায় ডলারের ওপর চাপ কমেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্য নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি (ক্রলিং পেগ) চালু করার কারণে ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে গেছে, যা মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সময়মতো ও সুনির্দিষ্ট পণ্যভিত্তিক ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু বৈঠক করা, দাম নির্ধারণ করে দেওয়া ও মুখের কথা দিয়ে বাজারকে থামানো যাবে না। আলুর দাম নিয়ে সে কথাই বলেন হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মার্চে নতুন মৌসুমের আলু ওঠার পর হু হু করে দাম বেড়ে যায়। সেই দামে আলু হিমাগারে রেখে এখন কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। তখনই বাজারে হস্তক্ষেপ করা দরকার ছিল। তিনি বলেন, গত এপ্রিলের শেষ দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে গত মৌসুমে ১ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। হিমাগারমালিকদের হিসাবে, এটা ৭০ লাখ টনের বেশি নয়। দেশে আলু দরকার ৯০ লাখ টন। ফলে বিপুল ঘাটতি আছে। এ কারণেই দাম বাড়ছে।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী আরও বলেন, চাহিদা ও উৎপাদনের হিসাবে ঘাপলা আছে। এই পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।হিসাবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন বেশি। প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১৩ টাকা ৯০ পয়সা। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মতে, বাজারে যৌক্তিক মূল্য হওয়া উচিত ২৮ টাকা ৫৫ পয়সা। কিন্তু বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। মূল্য নিয়ন্ত্রণের বদলে সরকার আলু রপ্তানিকে উৎসাহিত করছে। নগদ ১৫ শতাংশ ভর্তুকিও দেওয়া হচ্ছে।
আলুর মতো বাজারে নতুন করে পেঁয়াজ, রসুন, ডিম, মুরগি, গরুর মাংস, সবজি, মসলাসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে। আগে থেকেই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, আটাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য।
উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যে নতুন করে মূল্যবৃদ্ধি নিম্ন আয়ের মানুষের সংকট বাড়িয়েছে। যদিও গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর গঠিত নতুন সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রাধিকারের কথা বলেছিল। নতুন মন্ত্রিসভা আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আশাবাদের কথা শুনিয়েছিল। এরপর রোজায় ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরে কিছু শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছিল। অবশ্য রোজার পরই তেলের করছাড় তুলে নেওয়া হয়। ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন লিটারে ৪ টাকা।
এদিকে নতুন বছরে বেড়েছে বিদ্যুতের দাম। গত মার্চে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ৮ শতাংশ বাড়ানো হয়। জ্বালানি তেল ডিজেলের দাম লিটারে ৩ টাকা কমিয়ে পরে ১ টাকা বাড়ানো হয়। যদিও এতে পরিবহন ভাড়া কমেনি। ব্যাংকঋণের সুদের হার বাড়ায় ডলারের ওপর চাপ কমেছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্য নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি (ক্রলিং পেগ) চালু করার কারণে ডলারের দাম এক লাফে ৭ টাকা বেড়ে গেছে, যা মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে সময়মতো ও সুনির্দিষ্ট পণ্যভিত্তিক ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু বৈঠক করা, দাম নির্ধারণ করে দেওয়া ও মুখের কথা দিয়ে বাজারকে থামানো যাবে না। আলুর দাম নিয়ে সে কথাই বলেন হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি এবং বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মার্চে নতুন মৌসুমের আলু ওঠার পর হু হু করে দাম বেড়ে যায়। সেই দামে আলু হিমাগারে রেখে এখন কম দামে বিক্রি করা সম্ভব নয়। তখনই বাজারে হস্তক্ষেপ করা দরকার ছিল। তিনি বলেন, গত এপ্রিলের শেষ দিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে গত মৌসুমে ১ কোটি ৪ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। হিমাগারমালিকদের হিসাবে, এটা ৭০ লাখ টনের বেশি নয়। দেশে আলু দরকার ৯০ লাখ টন। ফলে বিপুল ঘাটতি আছে। এ কারণেই দাম বাড়ছে।
মোস্তফা আজাদ চৌধুরী আরও বলেন, চাহিদা ও উৎপাদনের হিসাবে ঘাপলা আছে। এই পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
বনিক বার্তা:
দুই সংস্থার দুই তথ্যে বিড়ম্বনায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভুক্তভোগী ভোক্তারা
পেঁয়াজ উৎপাদনের তথ্য নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) সঙ্গে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) বিস্তর ফারাক দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য কৃষিপণ্যের উৎপাদনের হিসাব নিয়ে সংস্থা দুটির মধ্যে সমন্বয় থাকলেও পেঁয়াজের ক্ষেত্রে রয়েছে ভিন্নতা। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির চাহিদা নিরূপণ এবং সরবরাহ নিশ্চিত করতে সমস্যায় পড়ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর তথ্যের এমন ফারাকের সুযোগ নিচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরাও। ফলে বিপাকে পড়ছে ভোক্তারা।
গত কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের আকস্মিক মূল্যবৃদ্ধি ভোক্তাদের জন্য বড় বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠেছে। গত এক মাসের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি। কেজিতে বেড়েছে ১০-১৫ টাকা। বছরে পণ্যটির চাহিদা ২৬ লাখ টন। তবে উৎপাদনের সঠিক হিসাব নিয়ে দেখা দিয়েছে ভিন্নতা। সরকারের দুটি সংস্থার মধ্যে উৎপাদনের তফাৎ দেখা যাচ্ছে নয় লাখ টনের বেশি, যা মোট চাহিদার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। তথ্যের এমন বিস্তর ফারাক পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা তৈরির পেছনে বড় ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাষ্ট্রের অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট তথ্য থাকা উচিত। দুই ধরনের তথ্যের কারণে চাহিদা-জোগানের পার্থক্য দেখা দেয়, যা নীতি গ্রহণের ক্ষেত্রে ও বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা তৈরি করে। তথ্যের এমন গরমিল থাকলে দামে প্রায়ই উত্থান-পতন দেখা দেয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও ভুল বার্তা যায়। ফলে সময়মতো আমদানি না করায় বাজারে হঠাৎ সংকট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে ক্রেতা সাধারণ, বাড়ে মূল্যস্ফীতিও।
ডিএইর তথ্যমতে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছিল ৩৪ লাখ ৫৬ হাজার ৫০০ টন। তবে বিবিএস বলছে, একই অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছিল ২৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯৯৪ টন। ফলে পেঁয়াজের উৎপাদন নিয়ে ডিএইর তুলনায় বিবিএসের তথ্যে পার্থক্য দেখা যাচ্ছে ৯ লাখ ৯ হাজার ৫০৬ টন।
তবে নিজেদের হিসাবকে ‘পরিষ্কার ও স্বচ্ছ’ বলে দাবি করছেন ডিএইর মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘হিসাব নিয়ে আমরা বিবিএসের সঙ্গে ঝগড়া করতে চাই না। তারা কীভাবে হিসাব করে তা আমরা জানি না। আমরা মাঠের তথ্য যা পাই, তা হিসাবে নিয়ে আসি। কিন্তু পেঁয়াজ শুকানোর পর এবং নষ্ট হওয়ায় ছয়-আট লাখ টন কমে যায়। যেটি আমরা আমদানির মাধ্যমে পূরণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু বিবিএসের হিসাব ধরলে উৎপাদন ও সংরক্ষণ পর্যায়ে নষ্ট হওয়ার পর পেঁয়াজ উৎপাদন ২০ লাখ টনের নিচে নেমে যেত। তখন আমাদের বছরে ১৫-১৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হতো। কিন্তু দেশে এমন কোনো রেকর্ড নেই। গত ছয় বছর আমরা ছয়-আট লাখ টন আমদানি করছি।’
এ বিষয়ে বিবিএসের কৃষি উইংয়ের পরিচালক আলাউদ্দিন আল আজাদ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরা আমাদের পদ্ধতি অনুসরণ করে হিসাব করে থাকি। ডিইএ কীভাবে হিসাব করে, তা নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’
পেঁয়াজ নিয়ে সবচেয়ে বড় ভোগান্তি ঘটে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে। ওই সময় ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। তখন বেশ নাজুক পরিস্থিতি তৈরি হয় দেশের বাজারে। চাহিদা ও সরবরাহের ঘাটতিজনিত কারণে তাৎক্ষণিক পেঁয়াজ আমদানিতে বেশ বেগ পেতে হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে। তখন পাকিস্তান, মিয়ানমার, তুরস্ক, চীন ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় মন্ত্রণালয়। নৌ ও স্থলপথের পাশাপাশি আকাশপথেও পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল। এর পরও সেবার খুচরা বাজারে ২৫০-৩০০ টাকা ছুঁয়েছিল পেঁয়াজের দাম।
উৎপাদন এত বেশি হলে পেঁয়াজের দাম এত বাড়ত না বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘তথ্য দেয়ার সময় নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন কিছুটা বাড়িয়ে দেখানোর একটা প্রবণতা থাকে। তাই দুই সংস্থার তথ্যে গরমিল থাকে। বিবিএস অনেক দেরিতে তথ্য দেয়। ফলে সময়মতো আমদানি করা যায় না। আর ভারত পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ করলে বাজারে হৈচৈ পড়ে যায়। উৎপাদনের পরই বিবিএস তথ্য দিলে সেটা কাজে লাগত। কিন্তু মৌসুম চলে গেলে তথ্য দিলে তা বইয়ের মধ্যেই শোভা পায়। বাজার ব্যবস্থাপনায় সেই তথ্য কোনো কাজে আসে না। আমাদের পেঁয়াজের প্রকৃত চাহিদা ২৯-৩০ লাখ টন। কিন্তু উৎপাদনের পর কিছু পেঁয়াজ নষ্ট হওয়ায় নিট উৎপাদন দাঁড়ায় ২২ লাখ টনের মতো। ফলে চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর আমাদের ছয়-সাত লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি করতে হয়।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজের উৎপাদন ছিল ২৫ লাখ ৬১ হাজার টন, যা গত অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৩৪ লাখ টনে। অর্থাৎ তিন বছরের ব্যবধানে দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন বেড়েছে ৩৬ শতাংশের বেশি। দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনা, ফরিদপুর ও রাজবাড়ী জেলায়। কিন্তু স্থানীয় উৎপাদন বাড়লেও এখনো পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না।
দেশের মধ্যে একেক সংস্থা উৎপাদনের একেক তথ্য দেয়, যা অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখা যায় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সংস্থাগুলোর তথ্যে আবার অনেক বেশি তফাৎ থাকে, যা উচিত না বলে মনে করছেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্লান্ট প্যাথলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বিতভাবে হিসাব করা উচিত। রাষ্ট্রের যেকোনো ডাটা একই হওয়া উচিত। একেক প্রতিষ্ঠান একেক ডাটা দেবে এটা হতে পারে না। এতে বাজার ব্যবস্থাপনায় সমস্যা তৈরি হয়। চাহিদা নিরূপণে সমস্যা হওয়ায় সার্বিক নীতি গ্রহণেও সমস্যা হতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ‘পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ফসলোত্তর ক্ষতি (উৎপাদনের পর সংগ্রহ ও সংরক্ষণ পর্যায়ে) অনেক বেশি। এটা ২০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। যদি ২০ ভাগও ধরি, তাহলে পেঁয়াজের নিট উৎপাদন অনেক কমে যায়। বিষয়টিকে অনেক সময় বিবেচনায় নেয়া হয় না। ফলে ঘাটতি তৈরি হয়।’
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বাজারে দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬৫-৮০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে যা ৭৫ টাকার মধ্যে ছিল। এক মাস আগে দাম ছিল প্রতি কেজিতে ৫৫-৬৫ টাকার মধ্যে। সে হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম বেড়েছে ২০ শতাংশের বেশি।
সার্বিক বিষয়ে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘চাহিদার চেয়ে পেঁয়াজের উৎপাদন বেশি হলে দাম কম হতো। কিন্তু নানা প্রচেষ্টার পরও দাম কমছে না। ডিএইর তথ্য ঠিক থাকলে এত উচ্চ দাম হতো না। তথ্যের হেরফের থাকলেই মূল্য ওঠানামা করে। নিজেদের কর্মকাণ্ড ভালো দেখানোর জন্য অনেক সময় সংস্থাগুলো ফলাফল বেশি দেখায়। কিন্তু দুই ধরনের তথ্যে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়। ব্যবসায়ীদের মধ্যেও ভুল বার্তা যায়। উৎপাদন বেশি বলা হলে ব্যবসায়ীরা আমদানির জন্য প্রস্তুত থাকে না। পরে দাম বেড়ে গেলে আমদানির সিদ্ধান্ত হলেও পণ্য আসতে দেরি হয়। এতে দাম আরো বেড়ে গিয়ে ভোগান্তি তৈরি হয়, যা মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। যা একটি রাজনৈতিক সরকারের জন্যও বিড়ম্বনা সৃষ্টি করে।’
দুই সংস্থার মধ্যে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে এ কৃষি অর্থনীতিবিদ আরো বলেন, ‘তথ্য সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার জন্য জাতীয়ভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বিবিএস। তাদের এ বিষয়ে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ রয়েছে। আইনগতভাবেও তাদের তথ্য গ্রহণযোগ্য। ডিইএ যদি নিজেদের ব্যবহারের জন্য তথ্য সংগ্রহ করেও থাকে, তা প্রচার করা ঠিক না। কারণ, তারা সেভাবে প্রশিক্ষিত নয়। এতে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।’