আজকের প্রত্রিকাগুলোর প্রধান প্রধান খবর:
নয়াদিগন্ত:
সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে নিয়ন্ত্রণে আসবে না মূল্যস্ফীতি
সুশাসনের অভাবে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে দেশ থেকে টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। সিন্ডিকেটের হাতে বাজার। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। আর দেবপ্রিয় ভট্টচার্য বলেছেন, অর্থনীতিতে সমস্যার ত্রিযোগ ঘটেছে। সবার আগে অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি। যা মানুষের জীবনমানকে সরাসরি আঘাত করছে। পৃথিবীতে অন্যান্য দেশে মূল্যস্ফীতির হ্রাস ঘটলেও তার সুফল বাংলাদেশ পাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত দেশী-বিদেশী মিলিয়ে ঋণ এখন ৪২ শতাংশ। যার প্রভাবে বিনিময় হারে টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে। এ ছাড়া দেশ বিদেশী ঋণে কখনো খেলাপি হয়নি। এখন সেই বিশ্বাসেও চিড় ধরছে। আর তৃতীয় হচ্ছে প্রবৃদ্ধির শ্লোথগতি। নাগরিকসমাজ বলছেন, সুশাসনের অভাবে অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে দেশ থেকে টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। সুশাসন না থাকলে বাজেট বাড়িয়ে কোনো লাভ হবে না। এ দিকে সিপিডির জরিপে প্রকাশ পেয়েছে, আগামী বাজেট নিয়ে দেশের ৬৪ শতাংশ বা দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের কোনো প্রত্যাশা নেই।
রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) উদ্যোগে এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের সহযোগিতায় ‘নতুন সরকার, জাতীয় বাজেট ও জনমানুষের প্রত্যাশা’ শীর্ষক গতকাল এক নীতি সংলাপে এসব কথা বলেন রাজনীতিবিদ, সংসদ সদস্য এবং দেশের সাধারণ নাগরিকসমাজ। সংলাপটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতায় চলমান জনসম্পৃক্ত সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ও নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য সংলাপে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় উপনেতা ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, নাগরিক প্লাটফর্মের কোর সদস্য ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী, সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বক্তব্য রাখেন।
উপস্থাপনায় ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, খুবই জটিল রাজনৈতিক ও আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বিরাজমান। ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিও জটিল। বাজেটকে সামনে রেখে আমরা সামাজিক ও সরেজমিন মতামত নিয়েছি। অর্থনীতিতে সমস্যার ত্রিযোগ ঘটেছে। যার মধ্যে বড় সমস্যা হচ্ছে উচ্চমুদ্রাস্ফীতি। অর্থনীতিতে এখনো অতি মাত্রায় মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে চলেছে। এটা গ্রাম কিংবা শহর এবং খাদ্য ও খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের জন্য সত্য। সেহেতু প্রথম সমস্যা হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত মূল্যস্ফীতি, যা মানুষের জীবনমানকে আঘাত করছে। তিনি বলেন, দ্বিতীয়ত ঋণের পরিস্থিতি। সরকার বিদেশি উৎস থেকে যে টাকা নেয়, তার চেয়ে দেশীয় উৎস থেকে দ্বিগুণ টাকা ঋণ নেয়। এটার দায়-দেনা পরিস্থিতি ভিন্ন একটা ইঙ্গিত বহন করছে। তৃতীয় সমস্যা হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে প্রবৃদ্ধির যে ধারা ছিল, সেই ধারায় শ্লোথকরণ হয়েছে। এর সাথে সাথে কর আহরণ সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে।
মানবজমিন:
সওজের ৯০ বিঘা জমি স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার কব্জায়
নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক। মাঝে চক্রবর্তী বাসস্ট্যান্ড। একটু হেঁটেই কাশিমপুর নবী টেক্সটাইল এলাকা। ৫ মিনিটের পথ। হাতের বাম পাশে বিশাল ময়লার ভাগাড়। ডান পাশে শত শত স্থাপনা। পদ্মা হাউজিং প্রকল্প। জ্যোতি ফিলিং স্টেশন। আরও কতো কি। দক্ষিণ কোণে অল্প কিছু ফাঁকা জায়গা।
বিজ্ঞাপন
টিনের প্রাচীরঘেরা। আশপাশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে গোডাউন। দোকানপাট। ইজিবাইক ও ট্রাক স্ট্যান্ড। হাটবাজার। প্লট বিক্রির অফিস। ইটে ঘেরা খণ্ড খণ্ড প্লট। জমি বিক্রির বিজ্ঞাপন। সবই আছে। এসবের ফাঁকে ফাঁকে সড়ক বিভাগের বড় বড় সীমানা পিলার। লাল চিহ্নে লেখা এই জমিটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের। খটকা লাগে এখানেই! চোখ আটকে যায় সীমানা পিলারে। নানা প্রশ্ন। কেন এই সীমানা পিলার? বসত বাড়িঘরের মধ্যে সওজ এসব খুঁটি পুঁতেছে কেন? সওজের উদ্দেশ্যই বা কি? জবাব খোঁজার চেষ্টা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আশপাশের যত জমি আছে সবই সড়ক ও জনপদ বিভাগের। গাজীপুর কাশিমপুর পানিশাইল মৌজার ২৬টি দাগের প্রায় ৩৬ একর জমির বৈধ মালিকানা রয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের। ১৯৬৭ সালে এই জমি অধিগ্রহণ করে সড়ক বিভাগ। তবে দীর্ঘদিন জমির খোঁজ না নেয়ায় তা বেদখল হয়ে যায়। দখলের পরে এই জমির মধ্যেই যে যার মতো বাড়িঘর, গ্যারেজ, মিনি কারখানা নির্মাণ করেছেন। এখনো নতুন নতুন বাড়ির নির্মাণকাজ চলছে। কেউ কেউ আবার টুকরো টুকরো প্লট করে জমি বিক্রি করছেন। এখানে শত শত মানুষের বাস। সরজমিন ঘুরে ওই জমির দখল ও বেদখল নিয়ে নানা তথ্য মিলেছে। কারা দখল করেছে এই সরকারি জমি? কীভাবে দখল হলো? এর পেছনে থেকে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সওজের উদ্ধার কাজে কারা বাধা দিচ্ছেন। স্থানীয়রা বলেন, প্রথমে এই জমি দখল শুরু করেন ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ- সভাপতি আব্দুর রউফ আরিফ। আরিফ প্রথম ধাপে মহাসড়কের পশ্চিম পাশে প্রায় ৩ একর জমি দখলে নেন। এতে তার চাচাতো ভাইয়েরাও সহায়তা করেন। তারাও ভাগ পান। দখলের পরে সেখানে মার্কেট করেন। বাড়িঘর করে ভাড়া দেন। রাস্তার পাশ দিয়ে শতাধিক দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। ২০০০ সালে ঢাকার মিরপুরের এক ব্যাংকারকে এনে রাস্তার পূর্ব পাশে পদ্মা হাউজিং নামে একটি সমিতি করে প্রায় ৬ একর জমি দখলে নেন। সেখানেও তার একাধিক প্লট, বাড়ি আছে। পরে কৌশলে তিনি বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে জমিটি পদ্মা হাউজিংয়ের কাছে হস্তান্তর করেন।
কালের কন্ঠ:
বনের জমিতে দেড় শতাধিক কারখানা
ব্যক্তিগত প্রভাব এবং অসাধু বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে ব্যক্তিগত জমির সঙ্গে থাকা বনের জমি দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান
গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকের দোকানপার এলাকায় গড়ে উঠেছে মনট্রিমস লিমিটেড নামের কারখানা। ছবি : কালের কণ্ঠ
গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি এলাকার বাংলাদেশ বিল্ডিং সিস্টেম লিমিটেড (বিবিএস) কেবলের বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ এক হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি। ২০১৭ সালে কারখানা নির্মাণের জন্য গাছপালা কেটে সাতখামাইর ফরেস্ট বিটের তেলিহাটি মৌজার আরএস ২৯২৩, ২৯২৪ ও ২৯২৫ দাগের ১.৬১ একর সংরক্ষিত বনের জমি দখল করে নামি এই কেবল প্রতিষ্ঠানটি। দখল করা ওই জমির বর্তমান বাজারমূল্য অন্তত আড়াই কোটি টাকা। বন বিভাগ দখল করা ওই জমি এখনো উদ্ধার করতে পারেনি।
এরই মধ্যে নতুন করে কারখানার মূল ফটকের সামনে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হাসনাইন ওরফে হাসান বনের জমি দখল করে নির্মাণ করেছেন মার্কেট। ওই মার্কেট থেকে মাসে ভাড়া তুলছেন ৩০ হাজার টাকা।
অন্যদিকে গাজীপুর সদরের নলজানী এলাকার অভিজাত ভাওয়াল রিসোর্ট অ্যান্ড স্পার মাসিক আয় কোটি টাকার বেশি। শীত, গ্রীষ্ম এমনকি হরতাল-অবরোধেও এই রিসোর্টের ভিলা খালি থাকে না।
৯-১০ বছর আগে নির্মাণের সময় ভাওয়াল রিসোর্টের পাশে থাকা সংরক্ষিত বনের বাড়ইপাড়া মৌজার এসএ সিএস ৩, ২৭৯ ও ২৭১ দাগের ৩.৬৮ একর জমি দখল করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এ ঘটনায় বন বিভাগ গ্রিনটেক রিসোর্টের দখল থেকে জমি উদ্ধারের জন্য গাজীপুরের জেলা প্রশাসকের কাছে উচ্ছেদ মামলা করে। কিন্তু সেই জমি এখনো উদ্ধার হয়নি।
এভাবে গাজীপুরে সংরক্ষিত বনের জমিতে কারখানা, খামার, আলিশান রিসোর্ট, পিকনিক ও শুটিং স্পট নির্মাণ করে বছরে শতকোটি টাকার বাণিজ্য করছে পৌনে দুই শতাধিক প্রতিষ্ঠান।
যুগান্তর:
ইভিএম ধ্বংস না মেরামত
শুরুতে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কেনা হয়েছিল ১ লাখ ৫০ হাজার সেট ইলেকট্রনিক ভেটিং মেশিন (ইভিএম)। ক্রটিপূর্ণ ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) কারণে এই মেশিন এখন নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ এগুলো সংরক্ষণে কোনো গুদাম তৈরি বা ভাড়ার কথা চিন্তাই করা হয়নি। ফলে বরাদ্দ না থাকলেও এখন বাধ্য হয়েই রাজস্ব খাত থেকে দিতে হবে ৫৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকার ওয়্যারহাউজ ভাড়া। পাশাপাশি আগামীতে এগুলো কোথায় রাখা হবে তা নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া ইতোমধ্যেই ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৬০ কোটি টাকা খরচের অনুমতি চাওয়া হলেও বৈদেশিক মুদ্রার কথা চিন্তা করে সেটি দেয়নি অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই মুহূর্তে ৪০ হাজার ইভিএম নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। যেগুলোর অধিকাংশই অমেরামতযোগ্য। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার মেশিন নিষ্ক্রিয় হওয়ার পথে। এগুলো মেরামত করা না হলে নষ্ট হয়ে পড়বে। এ ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে ভবিষ্যতে নির্বাচনে এসব মেশিন ব্যবহার করা না হলে নষ্টগুলো ধ্বংস করা যেতে পারে-এমন অভিমত দায়িত্বপ্রাপ্তদের। সবমিলিয়ে এই ইভিএম ধ্বংস না মেরামত করা হবে-তা নিয়ে বেশ সিদ্ধান্তহীনতায় আছে ইসি।
এসব দিক বিবেচনা করে আবার মেয়াদ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্পের। এটি নিয়ে গত ২৫ মার্চ অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির (পিআইসি) নবম সভা। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
সূত্র জানায়, ওই সভায় সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এই ইভিএমের আয়ুষ্কাল ১০ বছর বিবেচনায় নিয়ে মেরামতযোগ্য ইভিএম যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করা গেলে আরও ৩-৫ বছর বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে। অথবা ভবিষ্যৎ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত না নেওয়া হলে নষ্ট ইভিএমগুলো ধ্বংস করা যেতে পারে। মেরামত ও নষ্ট উভয় ক্ষেত্রেই অর্থের সংশ্লেষ আছে। এ অবস্থায় মেরামতের সিদ্ধান্ত হলে প্রকল্পের মেয়াদ ৬ থেকে ১২ মাস বৃদ্ধি করা প্রয়োজন হবে।
ইভিএম প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) সৈয়দ রাকিবুল হাসান রোববার যুগান্তরকে বলেন, ডিপিপিতে ওয়্যারহাউজ ভাড়া বাবদ কোনো অর্থই ধরা ছিল না। যেটি মনে হয় প্রকল্প প্রস্তাব থেকে ব্যয় কেটে দেওয়া হয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনের সুপারিশেই। পরবর্তী সময়ে আর যুক্ত করা হয়নি। ফলে এখন এ অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইভিএম রাখার জন্য টাকা যে দিতে হবে সে বিষয়ে মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির সঙ্গে কোনো চুক্তি হয়নি। পরে এই প্রতিষ্ঠানটি ওয়্যারহাউজের ভাড়া বাবদ টাকা দাবি করছে। একটা জায়গা ব্যবহার করলে তো এমনিতেই ভাড়া দেওয়া উচিত। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এগুলোতে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস আছে। সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ করা না গেলে এমনিতেই নষ্ট হয়ে যাবে। এখন পর্যন্ত ইভিএম মেরামত বা ধ্বংস করার কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে নির্বাচন কমিশন থেকে বলা হয়েছে, যতদিন ব্যবহার করা যায় ততদিন করতে হবে। তবে এগুলো যদি মেরামত করা না হয় তাহলে অবশ্যই বোঝা হয়ে যাবে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, এটা অবশ্যই রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়। এ কথা পরিষ্কার যে, ইভিএম নিয়ে একটা বাণিজ্য হয়েছিল। কেননা আমাদের দেশের আবহাওয়ায় অনুপযোগী এবং কারিগরি দিক থেকে অত্যন্ত দুর্বল ও নিম্নমানের এসব ইভিএম মেশিন কেনা হয়েছিল। এসব মেশিন দিয়ে সহজেই জালিয়াতি করা সম্ভব। ইভিএম কেনার ক্ষেত্রে ওই সময় গঠিত কারিগরি কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর সুপারিশও মানা হয়নি। তাই যারা ইভিএম কেনার সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এছাড়া সংরক্ষণের অভাবে বা অবহেলায় যদি এই যন্ত্রগুলো নষ্ট হয়ে যায় তাহলে হাজার হাজার কোটি টাকার অপচয় ছাড়া কিছুই হবে না।
বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এক্ষেত্রে বলা যায় অবশ্যই ডিপিপিটি ত্রুটিপূর্ণ ছিল। তবে এই ত্রুটি অনিচ্ছাকৃতভাবে যে করা হয়েছে তা নয়। ইভিএম ছাড়াও অনেক প্রকল্পে এ রকম ত্রুটি রেখে দেওয়া হয় কৌশল হিসাবে। কারণ যাতে মোট প্রকল্পের ব্যয় বেশি দেখা না যায়, এতে অনুমোদনে সুবিধা হয়। পরবর্তী সময়ে আবার যেসব অপরিহার্য ব্যয় বাদ দেওয়া হয়েছিল সেগুলোর জন্য আলাদা বরাদ্দ নেওয়া হয়। ইভিএম কিনলে যে সংরক্ষণ করতে হবে এটা বোঝা তো কঠিন কিছু নয়। কিন্তু এখানে এ ব্যয় ধরা হয়নি। এর মানে হলো মেশিন কিনলে তো পরে বাধ্য হয়েই সংরক্ষণ ও মেরামত ব্যয় বরাদ্দ দিতে হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ প্রকল্পের আওতায় খরচ হয়েছে ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। ডিপিপি অনুসারে আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৯৬ দশমিক ০২ শতাংশ এবং বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ইতোমধ্যেই ১ লাখ ৫০ হাজার ইভিএম সেট ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, ৬টি সফটওয়্যার, ৫টি যানবাহন এবং ৯ হাজার ২০০টি রেক কেনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ইভিএমের মাধ্যমে গত ২৫ মার্চ পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩৯৪টি নির্বাচন পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় সংসদের ৩১ আসনে (উপনির্বাচনসহ), জেলা পরিষদ ও উপনির্বাচন করা হয়েছে ৬৬টি এবং ২৪টি সিটি করপোরেশন নির্বাচন করা হয়েছে। আরও আছে ২৩৫টি পৌরসভা নির্বাচন, ৩৪টি উপজেলা নির্বাচন এবং ১ হাজার ৪টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে।
গত ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশব্যাপী কোয়ালিটি চেকিং করে (কিউসি) কার্যক্রম শেষে বর্তমান ইভিএমের স্থিতির পরিমাণ হয়েছে বিএমটিএফ ১ লাখ ১ হাজার ৩৫টি, মাঠ পর্যায়ে ৪৮ হাজার ২৬৭টি এবং প্রকল্প কার্যালয়ে ৬৯৮টি। মোট ১ লাখ ৫০ হাজার সেট। কিন্তু এই ইভিএম সংরক্ষণের জন্য আগে থেকেই কোনো ব্যবস্থা না থাকায় নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেডের (বিএমটিএফ) লিমিটেডের সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউজে রাখা হয়। এরপর সংস্থাটি ওয়্যারহাউজ ভাড়া বাবদ বকেয়া ৫৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) ওয়্যারহাউজ ভাড়া বাবদ কোনো বরাদ্দ না থাকায় বিএমটিএফের চাহিদা করা অর্থ পরিশোধ সম্ভব হয়নি। তবে ২৭তম নির্বাচন কমিশন সভায় বিষয়টি আলোচনায় আসে। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, রাজস্ব খাত থেকে ওই ওয়্যারহাউজ ভাড়ার বকেয়া অর্থ একসঙ্গে পরিশোধ না করে একটি দ্বিপক্ষীয় সভা করে কিস্তিতে পরিশোধ দেওয়া যেতে পারে।
এদিকে প্রকল্পটির প্রথম সংশোধিত প্রস্তাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের এডিপিতে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার সংশ্লেষের বিষয়টি উল্লেখ করে ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রস্তাবটি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি (সিসিইএ) অনুমোদন করেনি। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পের আরডিপিপিতে (সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) বরাদ্দ আছে। এছাড়া ডিপিপি অনুযায়ী বিএসটিএফকে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কোনো অর্থ বৈদেশিক মুদ্রা বা বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারে পরিশোধ করতে হয় না। এ নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা।
ওই সভায় আরও জানানো হয়, আগামী ৩০ জুন প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। ইভিএমগুলো তিন স্থানে রয়েছে। মাঠ, বিএমটিএফ এবং নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের মাস্টমাইজেশন সেন্টারে। এছাড়া ইভিএম রেক মাঠ পর্যায়ে এবং বিএমটিএফের ওয়্যারহাউজে সংরক্ষিত আছে। এ অবস্থায় বিপুলসংখ্যক ইভিএম ও রেক কীভাবে হস্তান্তর করা যায়, তার একটি সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা এক্সিট প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশনকে এসব ইভিএম সরবরাহ করেছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড (বিএমটিএফ)। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে এই সংস্থা ইসিকে জানিয়েছিল, প্রায় ৪০ হাজার যন্ত্র নষ্ট। বাকি ১ লাখ ১০ হাজার ইভিএমেরও মেরামত প্রয়োজন। এজন্য লাগবে ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় তখন ইসিকে এই অর্থ বরাদ্দ করেনি। বিভিন্ন সূত্র জানায়, এখন দেড় লাখ ইভিএমের মধ্যে অন্তত ১ লাখ ৫ হাজার ইভিএম অকেজো বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ৩০-৪০ হাজার ইভিএম একেবারেই নষ্ট বা মেরামত অনুপযোগী। মূলত মাঠপর্যায়ে ইভিএমগুলো সংরক্ষণ করা এবং মেরামতের জন্য বরাদ্দ না থাকায় বেশির ভাগ ইভিএম আংশিক নষ্ট হয়ে গেছে।
ইভিএমগুলোর এ অবস্থার পরও গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও নতুন করে দুই লাখ ইভিএম কিনতে চেয়েছিল বর্তমান কমিশন। এজন্য তারা ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠায় পরিকল্পনা কমিশনে। তবে অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় এই প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
বাংলাদেশ প্রতিদিন:
ঋণের বোঝা নিয়ে উড়ছে বিমান
ঋণের বোঝা কাঁধে নিয়ে উড়ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) ও পদ্মা অয়েল কোম্পানির কাছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের রয়েছে বিপুল পরিমাণ দেনা। এর মধ্যে গত বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বেবিচকে বিমানের দেনা ছিল ৫ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। আয়-ব্যয় বিবরণীতে লাভ দেখালেও গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিমানের কাছে পদ্মা অয়েলের পাওনা ছিল ১ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে ৩১ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। আগের অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ২২ লাখ। সে হিসাবে ৯ লাখ বেশি যাত্রী পরিবহন করলেও এর প্রতিফলন নেই বিমানের নিট মুনাফায়। ২০২১-২২ অর্থবছরে যেখানে ৪৩৭ কোটি টাকা মুনাফা হয়েছিল, সেখানে গত অর্থবছরে সংস্থাটি লাভ করেছে কেবল ২৮ কোটি টাকা। এজন্য বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের ক্ষেত্রে ডলারের বিপরীতে টাকার অবনমনকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিমানের কর্মকর্তারা বলছেন, পরিচালন বাবদ গত অর্থবছরে বিমানের মোট লাভ ছিল ১ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। তবে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমায় বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ে সংস্থাটির ১ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। ফলে গত অর্থবছরে মুনাফা নেমে এসেছে ২৮ কোটি টাকায়।
রুটভিত্তিক লাভ-লোকসানের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিমান সবচেয়ে বেশি লোকসান করে ঢাকা-ম্যানচেস্টার রুটে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১৫১টি ফ্লাইট পরিচালনা করে এই এক রুটেই বিমান লোকসান করেছে প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা। যদিও ২০১২ সালে লোকসান ও এয়ারক্রাফট স্বল্পতায় বন্ধ রাখা হয়েছিল ম্যানচেস্টার রুটের ফ্লাইট। ম্যানচেস্টার রুটে বিমান চালুর পর থেকে কখনো লাভের মুখ দেখেনি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফায় ফ্লাইট চালুর পর আবারও বিপুল পরিমাণ লোকসানের মুখে পড়ে সংস্থাটি। প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কিলোমিটার দূরত্বের বিরতিহীন ১৭ ঘণ্টার, ঢাকা-টরন্টো রুটে গত অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১৩০ কোটি টাকা। মধ্যপ্রাচ্যকে বলা হয় বিমানের রেভিনিউ জেনারেটিং রুট। প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটা বড় অংশ থাকে এখানে। অথচ কুয়েত, আবুধাবি, দুবাই এর মতো জনপ্রিয় রুটেও বিমানকে লোকসান করতে হয় বছরে প্রায় ৩৮০ কোটি টাকা।
বিমানের সবচেয়ে ব্যবসাসফল রুট ঢাকা-জেদ্দা। গত এক বছরের হিসাবে দেখা যায়- এই রুটে ৫ শতাধিক ফ্লাইট পরিচালনা করে লাভ হয়েছে ১০০ কোটি টাকা। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানের এই লাভজনক রুটগুলো এখন প্রবল ঝুঁকিতে। কারণ কাতার, কুয়েত, ইথিওপিয়ান ও ইজিপ্ট এয়ারের মতো অন্তত ১০টি জনপ্রিয় এয়ারলাইনস যাত্রীদের নানা সুযোগ সুবিধা নিয়ে এখন বাংলাদেশে আসছে। ছোট-বড় ২১টি এয়ারক্রাফট নিয়ে, ২২টি আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এই ২২ রুটের ১৬টিতে লোকসান গুনছে প্রতিষ্ঠানটি। ৬টি রুটে লাভের পরিমাণ ৩৭৫ কোটি টাকা হলেও বাকি ১৬ রুটে পরিচালনগত লোকসানের পরিমাণ প্রায় ১২০০ কোটি টাকা। বিমান প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে গত ৫১ বছরে লোকসানের পরিমাণ প্রায় একই।
প্রথম আলো:
ক্ষতিপূরণ থেকে বাদ পড়ছেন গরিবেরা
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর নির্মাণশ্রমিক আল আমিনসহ চার ব্যক্তি গত ৩১ মার্চ একটি ভটভটিতে করে কাজ থেকে ফিরছিলেন। রূপগঞ্জের কাঞ্চন এলাকায় মহাসড়কে ভটভটিটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। ঘটনাস্থলেই আল আমিন প্রাণ হারান। অন্য তিন যাত্রী গুরুতর আহত হন।
নিহত আল আমিনের পরিবারে তাঁর স্ত্রী ও ১৪ বছরের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে। গত শনিবার আল আমিনের স্ত্রী আয়েশা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, সড়কে মৃত্যু হলে যে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায়, সেটি তাঁরা জানতেন না। পরে জানতে পেরে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তত দিনে আবেদনের সময় পেরিয়ে গেছে।
অসহায়ত্ব প্রকাশ করে আয়েশা বলেন, মেয়ে ছাড়া তাঁর আর কেউ নেই। মেয়েটির এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথা। স্বামী মারা যাওয়ার পর সংসার চালানোই কঠিন। মেয়ের পরীক্ষা দেওয়া হবে কি না, তা অনিশ্চিত।
সড়ক পরিবহন আইন ও বিধিমালা অনুসারে, সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত প্রত্যেকের ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সরকার এর জন্য তহবিলও গঠন করেছে। কিন্তু প্রচারের অভাবে তা জানতে পারছেন না ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। ফলে আবেদন কম পড়ছে। সরকারি হিসাবে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে পরের ১৫ মাসে যত মানুষ হতাহত হয়েছেন, তার মাত্র ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করেছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র বলছে, বড় দুর্ঘটনা, হতাহত বেশি হলে তা সারা দেশে আলোচিত হয়। এসব ঘটনায় বিআরটিএ বা কিছু কিছু বেসরকারি সংস্থা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের অবহিত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ছোটখাটো এবং গ্রামগঞ্জে ঘটা দুর্ঘটনার খবর আড়ালে থেকে যায়। আর ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা ক্ষতিপূরণের বিষয়টি সম্পর্কে জানেন না বলে এই সুবিধা থেকে তাঁরা বঞ্চিত হচ্ছেন। বঞ্চিত ব্যক্তিরা মূলত দরিদ্র, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাহীন বা স্বল্পশিক্ষিত এবং সমাজের প্রান্তিক মানুষ।
বিআরটিএর হিসাবে, গত বছর জানুয়ারি থেকে চলতি মার্চ পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫০১ জন মারা গেছেন। এ সময় আহত হয়েছেন ৯ হাজার ৪১৫ জন। অর্থাৎ দুর্ঘটনায় হতাহত হয়েছেন মোট ১৫ হাজার ৯১৬ জন। আইন অনুসারে, নিহত প্রত্যেকের
দৈনিক সংগ্রাম:
যুক্তরাষ্ট্র পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন দেশে
সংগ্রাম ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনবিরোধী যে আন্দোলন চলছে, তা ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের পর ইসরাইলবিরোধী ক্যাম্প যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, লেবানন, মেক্সিকো, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ছে।
এসব বিক্ষোভ থেকে অবিলম্বে গাজায় ইসরাইলের হামলা বন্ধের দাবি জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি ইসরাইল ও গাজা যুদ্ধকে সমর্থন করে, এমন সব কোম্পানির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার দাবি তোলা হচ্ছে। খবর সিএনএন, বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরার
বিক্ষোভকারীদের হটাতে যে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, সেটাও তাদের প্রতিবাদে শামিল হতে উৎসাহিত করছে বলে বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন। দেশে দেশে এমন বিক্ষোভকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের তথ্যমতে, গত ১৮ এপ্রিলের পর থেকে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে অন্তত অর্ধশত গ্রেফতার অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে ২ হাজার ২০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারীকে। গত ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় সাড়ে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ইসরাইলের এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে গত ১৮ এপ্রিল বিক্ষোভ শুরু করেন নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের এ বিক্ষোভ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে মার্কিন সরকার। এর মধ্যে ইউরোপ, এশিয়া, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।
যুক্তরাজ্য : সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবি ও ভিডিওতে দেখা যায়, যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকটি ভবনের চত্বরে তাঁবু খাটিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। একই অবস্থা লিডস, ব্রিস্টল ও ওয়ারউইকের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ইলা ওয়ার্ড এনবিসি নিউজকে বলেন, ‘কলাম্বিয়াসহ যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছেন, তা দেখে আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি।’
লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জনের মতো শিক্ষার্থী বুধবার তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নেন বলে জানান ‘ইয়ু ডিমান্ড’ নামের শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপের সদস্য ইলা। তারা ইসরাইলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি তুলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ফিলিস্তিন আমাদের অনেককে জাগিয়ে তুলেছে।’
ফ্রান্স : ফ্রান্সের সবচেয়ে নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে অন্যতম প্যারিসের সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে শিক্ষার্থীরা গাজায় গণহত্যা বন্ধ এবং ইসরাইলি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বর্জনের আহ্বান সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এটা ছাড়াও প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্রিলের শেষ দিকে গাজা যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়।
২৯ এপ্রিল সরবন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। এ সময় দুই বিক্ষোভকারীকে তাঁবু থেকে টেনেহিঁচড়ে বের করতে দেখা যায়। এরপর গতকাল সায়েন্সেস পো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয় দাঙ্গা পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ‘শেম’ ও ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। লুইস নামের এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, কলাম্বিয়া, হার্ভার্ড, ইয়েলসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভে অনুপ্রাণিত হয়ে তাঁরা এ বিক্ষোভ করছেন।
অস্ট্রেলিয়া : অস্ট্রেলিয়ার অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা। এ নিয়ে ক্যাম্পাসগুলোতে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। ব্রিসবেনে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকিউ) বিক্ষোভের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এই ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থীদের ১০০ মিটার দূরত্বে ইসরাইল-সমর্থক বিক্ষোভকারীরাও অবস্থান নিয়েছেন।
সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়েও প্রায় ৫০টি তাঁবু টাঙিয়ে অবস্থান নিয়েছেন যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। সেখানে ১০০ জনের মতো বিক্ষোভকারী রাতেও অবস্থান করছেন। গতকাল শুক্রবার সেখানে পাল্টা বিক্ষোভের আয়োজন করে ইহুদি গোষ্ঠীগুলো। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিরোধিতা করে ইহুদি গোষ্ঠীগুলো, এতে ক্যাম্পাসে অহেতুক উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভকে ‘বর্ণবাদী’ ও ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ বলে মন্তব্য করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা পিটার ডুটন।
কানাডা : যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের আঁচ পড়েছে প্রতিবেশী কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও। মন্ট্রিলের উপকণ্ঠে ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে তাঁবু টাঙিয়ে বিক্ষোভ করছেন ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকেও বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভ্যাঙ্কুভারের ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।
লেবানন : বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এপ্রিলের শেষের দিকে লেবাননে শত শত শিক্ষার্থী ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ করে। ইসরাইলে ব্যবসা করে এমন কোম্পানি বয়কট করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি দাবি জানান তারা। রাজধানী বৈরুতের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ফটকের বাইরে গাজা যুদ্ধের প্রতিবাদ করতে দেখা যায়। গত ৩০ এপ্রিল বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে শিক্ষার্থী-জনতা সংহতি সমাবেশ করে। মার্কিন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের অনুপ্রাণিত হন বলে বিক্ষোভকারীরা জানান।
১৯ বছর বয়সী আলী আল-মুসলেম রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা পুরো বিশ্বকে দেখাতে চাই যে আমরা ফিলিস্তিনিদের যন্ত্রণা ভুলে যাইনি এবং সচেতন ও সংস্কৃতিবান তরুণ প্রজন্ম এখনও ফিলিস্তিনিদের দাবির সঙ্গে রয়েছে।’
মেক্সিকো : স্থানীয় গণমাধ্যম এল পাইসকে উদ্ধৃত করে টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মেক্সিকোর বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিদাদ ন্যাসিওনাল অটোনোমা ডি মেক্সিকোতে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ করছেন শিক্ষার্থীরা। তারা ‘গাজায় সাম্রাজ্যবাদী গণহত্যা’ বন্ধ করার দাবি জানান। গত বৃহস্পতিবার থেকে কমপক্ষে ৪০টি তাঁবু খাটানো হয়েছে। এসব বিক্ষোভে আরবের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইহুদি শিক্ষার্থীরাও অংশ নিচ্ছে।